চিন্তালহরী। শ্রীচন্দ্রোদয় বিদ্যাবিনোদ প্রণীত ।
শামুক যেমন তাহার নিজের বাসভবনটি পিঠে করিয়া লইয়া উপস্থিত হয় এ গ্রন্থখানিও তেমনি আপনার সমালোচনা আপনি বহন করিয়া বাহির হইয়াছে। গ্রন্থসম্পাদক শ্রীযু্ক্তবাবু অবিনাশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বিজ্ঞাপনে গ্রন্থ সম্বন্ধে নিজের অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন। তিনি স্পষ্টই জানাইয়াছেন চিন্তালহরী পাঠ করিয়া পরিতৃপ্ত না হইলে তিনি ইহার প্রচারকার্যে হস্তক্ষেপ করিতেন না; এবং ইহাও বলিয়াছেন “ইহার প্রতি প্রবন্ধে ভাবুকমাত্রেরই মর্মের কথার– প্রাণের ব্যথার পরিস্ফুট ছায়া পড়িয়াছে।” অবিনাশবাবু জানেন না, ওই মর্মের কথা এবং প্রাণের ব্যথার অবতারণাকে ভাবুকেরা যত ভয় করেন এমন আর কাহাকেও নহে; ও জিনিসটা মর্মের মধ্যে প্রাণের মধ্যে থাকিয়া গেলেই ভালো হয়– এবং যদি উহাকে বাহিরে আসিতেই হয় তবে অপরিমিত প্রগল্ভতা ও ভাবভঙ্গিমার অবারিত, আড়ম্বর পরিহার করিয়া সরল সংযত সুন্দর বেশে আসাই তাহার পক্ষে শ্রেয়।
ইংরাজিতে যাহাকে বলে সেন্টিমেন্টালিজ্ম অর্থাৎ ভাবুকগিরি ফলানো, সহৃদয়তার ভড়ং করা, তাহার একটা বাংলা কথা থাকা উচিত ছিল। কিন্তু কথা না থাকিলেও জিনিসটা যে থাকে বাংলা সাহিত্যে এই ভাবুকতাবিকারে, কৃত্রিম হৃদয়োচ্ছ্বাসের উদ্ভ্রান্ত তাণ্ডব নৃত্যে তাহার প্রমাণ প্রতিদিন বাড়িয়া উঠিতেছে। এবং বর্তমান গ্রন্থখানি তাহার একটি অদ্ভুত দৃষ্টান্ত।
ভূমিকম্প। শ্রীবিপিনবিহারী ঘটক প্রণীত। মূল্য ছয় আনা।
ইহারও আরম্ভে বন্ধু-কর্তৃক এই কাব্যগ্রন্থের সমালোচনা ও প্রশংসাবাক্য সন্নিবিষ্ট হইয়াছে। গদ্যে উচ্ছৃঙ্খল ভাবাবেগের উচ্ছ্বাস এক সম্প্রদায় পাঠকের রুচিকর; এবং তাহার রচনা সহজসাধ্য ও অহমিকাগর্ভ হওয়ায় অনেক লেখক তাহাতে আকৃষ্ট হইয়া পড়েন। এই কারণে সেই-সকল অশোভন অশ্রুজলার্দ্র বিলাপ প্রলাপ ও কাকূক্তির আক্রমণ হইতে গদ্যকে রক্ষা করিবার চেষ্টা সমালোচকমাত্রেই করা কর্তব্য। কিন্তু পদ্যে অমিত্রাক্ষরছন্দে গত বর্ষের ভূমিকম্পমূলক ইতিহাস, বর্ণনা ও তত্ত্বোপদেশ কবিসাধারণের নিকট অনুকরণযোগ্য বলিয়া গণ্য হইবে না।
ভারতী , শ্রাবন, ১৩০৫