খুনে মার্শাল – ৫

পাঁচ

শব্দ তুলে হাসল বেভিন। ‘আমি জানতাম তোমাকে বেছে নিয়ে ভুল করিনি,

টেড।

‘অর্থাৎ আমি একজন ঠাণ্ডা মাথার খুনী?’

‘না, ঠিক তা নয়,’ নিজেকে সংযত করে বলল মিলার। ‘আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম তোমার বেলায় কথা পাড়ার আগে ধানাই-পানাই না করে সোজা কাজের কথায় আসা যায়।’

মাথা নাড়ল টেড। ‘আমি তোমার সাথে এখনও কোন চুক্তিতে আসিনি। কাজটা কি তার ওপর সব নির্ভর করছে।’

‘কাজটার জন্যে তোমাকে এক হাজার ডলারের সোনার মুদ্রা দেব আমি। তারপর তুমি টাকা নিয়ে কোথায় যাও বা কি করো সেটা তোমার খুশি। ইচ্ছে করলে তুমি টেক্সাসে আমার র‍্যাঞ্চেও কাজ করতে পারো।’

‘তোমার ওখানে থেকে গেলে বেতন কত হবে?’

‘মাসে একশো ডলার। থাকা, খাওয়া ফ্রী।’

‘আমার কাজটা কি হবে?’

‘এখানে তুমি যা করছিলে তাই। র‍্যাঞ্চটাকে গরু চোর, গুণ্ডা আর বদমায়েশের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। কেবল ব্যাজটা থাকবে না-এটাই তফাত।’

‘অর্থাৎ সহজ কথায় খুন।’ মুখ তুলে সরাসরি মিলারের দিকে তাকাল টেড। ‘তোমাকে আমি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আমি যত মানুষ মেরেছি তাদের প্রত্যেকেই ছিল আউটল। এবং নেহাত বাধ্য না হলে আমি গুলি করিনি।’

‘কেবল একটাই ব্যতিক্রম। আজ যাদের তুমি মেরেছ তাদের একজন মহিলা।’

মুখ কুঁচকে চোখ সরিয়ে নিল টেড। কথাটা কি করে সে ভুলবে? ‘হ্যাঁ,’ বিড়বিড় করে বলল সে, ‘কিন্তু পুরুষের পোশাক ছিল ওর পরনে।’

‘ভাবনার কিছু নেই, টেড। আমার হয়ে যাকে তোমার সরাতে হবে সে একজন আউটল। আচ্ছা, এম্পোরিয়ামে গিয়ে আমাদের বাকি কথা শেষ করলে কেমন হয়? গরমে আমার গলা একেবারে শুকিয়ে উঠেছে।’

একটু হেসে কাঁধ উঁচিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল টেড। ‘চমৎকার প্রস্তাব। চলো, ওখানেই যাওয়া যাক।’

দরজার দিকে এগোতে এগোতে পিছন ফিরে তাকাল মিলার। ‘তাহলে আমার প্রস্তাবে তুমি আগ্রহী?’

কোমরের পিস্তলটা ডান উরুতে জায়গা মত বসিয়ে নিয়ে টেড জবাব দিল, ‘ক্ষতি কি?’ র‍্যাঞ্চারের পিছু নিয়ে রাস্তায় নামল মার্শাল।

এম্পোরিয়ামের দিকে যেতে যেতে রাস্তায় লোকগুলোর জটলা আড়চোখে খেয়াল করল টেড। রাস্তায়, ফুটপাথে, কোনটা আবার দোকানের দরজার সামনে।

আরও একটু সামনে গ্রেট প্লেইন্স হোটেলের সামনে মেয়র মায়ার্স, টোনি রস, জেরি ট্যানার, জন শেপার্ড আর ডক সেলবি গভীর আলোচনায় ব্যস্ত। আর কোনদিকে ওদের খেয়াল নেই

বাঁকা একটা হাসি ফুটে উঠল টেডের ঠোঁটে। সে ভাবল, তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ওদের বেগ পেতে হচ্ছে না তো?

‘মনে হচ্ছে শহরের মাথারা প্রকাশ্যেই আলোচনা চালাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ওরা যদি তোমাকে বরখাস্ত না করে, তাহলে তুমি কি করবে?’

‘হাহ! তুমি ভুল বুঝেছ, মিলার। ওরা হয়তো আমাকে শহর থেকে দাবড়ে বের করার ফন্দিই আঁটছে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে দাঁড়াবার মত সাহস ওদের কারও নেই। ওই চটকদার টুপি পরা লোকটাই এখানকার মেয়র।’

‘বুঝতে পারছি, লোকটা তোমার বন্ধু নয়।’

‘না, আমার বন্ধু সে কোনকালেই ছিল না।’

এমপোরিয়ামের কাছে এসে পৌঁছল ওরা। সামনের সাইন বোর্ডে লেখা আছে, বিভিন্ন প্রকার উৎকৃষ্ট মদ, জুয়া, আর পছন্দ মত মেয়েমানুষ!

সেলুনের সামনে জনা ছয়েকের একটা জটলা। টেড আর বেভিন এগোতেই ওদের আলাপ একেবারে থেমে গেল।

অতীতে ওদের জন্যে টেড যা করেছে তা ভুলতে ওদের সময় লাগেনি। একজন লম্যান তাকে যা বলেছিল সেটাই হয়তো ঠিক। সে বলেছিল তুমি ওদের মত অনুযায়ী যতদিন চলো ততদিনই ওদের ভালবাসা পাবে, একটু ব্যতিক্রম হলেই ওরা তোমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করবে না।

কথাটা সে হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিল। ভেবেছিল তার জীবনে এটা কোনদিনই ঘটবে না। সৎভাবে তার কাজ করে গেলে তাকে সবাই সম্মান করবে।

এটা বছরখানেক আগের কথা। কিন্তু এর পর থেকে দেখেছে কেউ তাকে সমর্থন করেনি। তার সব চেষ্টাই বৃথা গেছে। কেবল মিথ্যে সমালোচনা আর অবজ্ঞার পাত্রই হয়েছে ও।

ওরা এম্পোরিয়ামের বারান্দায় উঠে ভিতরে ঢুকল। একজন কাউপাঞ্চার ওকে দেখে সামান্য নড করে বেরিয়ে শহরের জটলার সাথে যোগ দিল।

একটু ইতস্তত করে আড়চোখে মার্শের দিকে তাকাল মিলার। ‘তোমার স্টার কেড়ে না নিলে তুমি কি করবে তা কিন্তু তুমি বলোনি।’

কঠিন একটা হাসি ফুটে উঠল টেডের মুখে। কাউন্সিলের কিছু লোককে বারে ঢুকতে দেখা গেল। ডান হাত তুলে ওদের থামাল টেড। ‘তোমরা ওখানেই থামো,’ বলল সে। ‘এই গরমের মধ্যে কারও ঘেমে ওঠার দরকার নেই।’

‘মিস্টার মার্শ,’ বলল মেয়র মায়ার্স, ‘আজকে যা ঘটেছে সেটা নিয়ে কাউন্সিল মীটিঙে অনেক আলাপ আলোচনা হয়েছে, এবং আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি…’

‘বৃথা কথা খরচ করে লাভ নেই, মিস্টার মেয়র। আমি নিজে থেকেই কাজে ইস্তফা দিচ্ছি।’ বুক থেকে স্টারটা খুলে ওদের দিকে ছুঁড়ে দিল সে। তারপর মিলারকে বলল, ‘চলো, ড্রিঙ্ক নিয়ে কাজের কথায় বসি। এই মুহূর্ত থেকে আমি তোমার হয়ে কাজ করছি।’

ছয়

একটা সন্তোষের হাসি ছড়িয়ে পড়ল মিলারের চেহারায়। ‘শুনে খুশি হলাম, টেড,’ বলে কোনায় একটা খালি টেবিলের দিকে এগোল।

বাইরে শহরবাসীর মৃদু গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কাউন্সিলমেন এম্পোরিয়ামের থেকে বাইরে থাকাই ভাল বলে মনে করছে। টেডের মোকাবিলা করতে কেউ রাজি নয়। ওকে ওরা ভয় পায়।

‘তুমি কোন্ আউটলকে শেষ করার জন্যে আমাকে লাগাচ্ছ, মিলার?’ খালি চেয়ার টেনে বসে প্রশ্ন করল টেড। একটু অসহিষ্ণুভাবেই বারটেণ্ডারকে হাতের ইশারায় ডাকল। ওর মূড এখন খিঁচড়ে আছে-স্বটা তিক্ত। ব্যবহারও একটু রূঢ়।

ওর উলটো পাশের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসল মিলার। হ্যাটটা নামিয়ে রুমাল বের করে ঘামে ভেজা কপাল মুছল। তারপর সামনে ঝুঁকে সোজা মার্শের চোখে চোখ রাখল।

‘যাকে মারতে হবে সেই আউটলর নাম রেক্স বিলিঙ,’ বলল সে। ‘লোকটা খুব নিষ্ঠুর। নরকের আগুনে পুড়ে কঠিন হয়েছে। তাই কাজটা খুব সহজ হবে মনে কোর না। তাছাড়া পিস্তলেও ওর হাত খুব চালু।’

‘কোন কাজই আমি হালকাভাবে নিই না.’ শুষ্ক স্বরে জবাব দিল টেড। ‘এই বিলিঙ লোকটা কি ওয়ানটেড ক্রিমিন্যাল?’

‘অবশ্যই! তবে আমি জানি না ওর বিরুদ্ধে অভিযোগটা কি।’ চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে বসল র‍্যাঞ্চার। বারটেণ্ডার দুটো গ্লাস আর একটা বোতল দিয়ে গেল। ‘আসলে কথা হচ্ছে কোন লম্যান ওর মোকাবিলা করতে সাহস পায় না, কারণ কাজটা রিস্কি।’

মিলারের জন্যে অপেক্ষা না করে নিজের গ্লাসটা ভরে এক চুমুকেই পুরোটা শেষ করল মার্শ। ‘হ্যাঁ, কিছু-কিছু সময়ে এমন ঘটে বটে,’ বলে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখ মুছল সে।

‘কিন্তু তোমার জন্যে নয়,’ বলল মিলার। ‘আমি জানি যত বড় খুনীই হোক, তুমি তাকে সামলাতে পারবে।’

প্রশংসাটা মাঠেই মারা গেল। ‘এই বিলিঙ লোকটা…সে তোমার কি ক্ষতি করেছে যে তুমি ওর মৃত্যু চাইছ?’

‘কি ক্ষতি করেছে? সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ওই কথা না তুললেই আমি খুশি হব। যাক, আমার যা ক্ষতি করেছে তা তো করেছেই, অন্যান্য আরও মানুষের অনেক ক্ষতি সে করেছে। ছোট র‍্যাঞ্চার, ব্যবসায়ী, এদের।’

‘মানে হোল্ডআপ, ডাকাতি?’

‘সাথে কিছু খুনও করেছে।’

মুখ বাঁকা করে একটু ভেবে নিয়ে মার্শ বলল, ‘তোমাদের লম্যানের এতদিনে ওর বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল।’

বিষণ্ণভাবে হাসল মিলার। ‘এই রেক্স বিলিঙ লোকটা নিজের ট্র্যাক কিভাবে লুকাতে হয় তা ভাল করেই জানে। আমরা মাত্র কয়েকজন ছাড়া কেউ জানে না ও কি ধরনের মানুষ।’

কাঁধ উঁচিয়ে আবার নিজের গ্লাসটা ভরে নিল মার্শ। ওপাশ থেকে কোন মহিলার প্রাণখোলা হাসির শব্দ ভেসে এল।

‘তুমি নিজেই এর একটা সমাধান করতে পারতে, মিলার,’ অল্পক্ষণ চুপ করে থেকে বলল মার্শ। ‘তুমি একটা পাসি নিয়ে-’

টেক্সানের চেহারা গম্ভীর হলো। ‘তুমি যা বলছ আমাদের তা করতে না পারার যথেষ্ট কারণ আছে। প্রতিশোধ নিতে আগ্রহী আত্মীয়-স্বজন- না, সেটা আমরা চাই না,’ একটু অস্থির স্বরেই বলল মিলার। ‘সবকিছুর জন্যেই একটা ব্যাখ্যা দরকার হলে কাজটা তোমার না নেয়াই ভাল।’

‘শোনো, মিলার,’ কঠিন স্বরে বলল মার্শ। ‘আমি যদি কাউকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বেরোই, আমার জানতে হবে কারণটা কি।’

নীরবতার মধ্যে কাটল কিছুক্ষণ। দুজনেই দুজনের দিকে চেয়ে আছে— চোখের পলক ফেলছে না কেউ। একটু নড়ছেও না। শেষে মিলার মুখ খুলল, ‘তুমি কাজটা নিচ্ছ, কি না?’

ধীরে দ্বিতীয় গ্লাস হুইস্কি গলায় ঢেলে আবার নিজের গ্লাস ভরল মার্শ।

মিলারের প্রস্তাব গ্রহণ করলে সে ভাড়াটে পিস্তলবাজের পর্যায়ে পড়বে তা বুঝতে পারছে মার্শ। মানুষ হিসেবে ভাড়াটে খুনী তার চোখে খুব নিচু স্তরের মানুষ। তাকেও তাই হতে হবে, এটা মেনে নিতে পারছে না। ওর মন প্রতিবাদ করছে।

কিন্তু পিস্তলবাজিই তার ব্যবসা, পেশা। নিজেকে বোঝাল টেড। এছাড়া সে কেবল র‍্যাঞ্চের কাজ জানে। এবং বর্তমানে এই এলাকায় কেউ তাকে র‍্যাঞ্চের কাজে নিতে রাজি হবে না। তাহলে প্রস্তাবটা গ্রহণ করতে দোষ কোথায়?

আজ পর্যন্ত যাদের সে হত্যা করেছে তাদের সবাই ছিল আউটল। তাকে মারতে চেষ্টা করেনি এমন কাউকে সে মারেনি। যুক্তিসঙ্গতভাবে বিচার করে দেখলে এতে কোন বাধা নেই। মিলারের প্রস্তাব সে গ্রহণ করতে পারে।

সন্দেহ নেই বিলিঙ একজন আউটল। এবং মিলার তার মৃত্যু চায়-এটাই স্বাভাবিক। অনেক ভেবে-চিন্তেই এই কাজের জন্যে ওকে উপযুক্ত মনে করে মিলার টেক্সাস ছেড়ে এতদূর এসেছে। কি আছে? সে তো এখন এই শহরে অচ্ছুৎ।

মিলারের প্রস্তাবে সম্মত হতে যাচ্ছে, এই সময়ে তিনজন মাতাল ওর টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াল। মার্শ ওদের ভাল করেই চেনে। পুবের একটা র‍্যাঞ্চের লোক। শহরে কিছু অশান্তি সৃষ্টি করায় টেড ওদের একবার জেলে ভরেছিল।

‘চমৎকার! তুমি আর এখানে থাকছ না জেনে খুশি হলাম,’ ওদের একজন বলল। লোকটার মুখে দাড়ি আর গোঁফ দুটোই আছে। মাঝারি গড়ন।

‘তাই নাকি, ডেভ? তোমাদের মত জীবের সাথে আর বাস করতে হবে না বলে আমিও খুশি।’

‘তোমার সাথে আমাদের কিছু বোঝাপড়া বাকি আছে। আমাদের অনেক জ্বালাতন করেছ, মার্শাল। কিন্তু কথা হচ্ছে, তুমি এখন আর মার্শাল নেই,’ লম্বা লোকটা বলল।

‘তোমার কাছে আমাদের অনেক দেনা রয়ে গেছে, মার্শাল, আমরা তার কিছু শোধ দিতে চাই,’ বলে উঠল ডেভ।

‘তাতে আমার কোন আপত্তি নেই,’ জানাল মার্শ। বেভিনের দিকে চেয়ে হাসল সে। ‘আমার কিছু তথাকথিত বন্ধু,’ বলে হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে ডেভের বুকের শার্ট আঁকড়ে ধরে বাকি দুজনের দিকে ওকে ছুঁড়ে দিল মার্শ।

‘আমাকে উত্ত্যক্ত করার ফল ভাল হয় না,’ বিষাক্ত স্বরে বলল মার্শ। ‘এখন আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যাও-নইলে অবস্থা খারাপ হবে।‘

সেলুনের সবাই থ হয়ে গেছে। এখন সবার দৃষ্টি তিনজন কাউবয় আর মার্শের ওপর।

কাউবয় তিনজন বার ছেড়ে টলমল পায়ে বেরিয়ে গেলে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হলো।

আবার একটা ড্রিঙ্ক নিয়ে গলায় ঢালল মার্শ। মিলার ওকে কিছুক্ষণ লক্ষ করে বলল, ‘তোমাকে আগামীতে ওই তিনজনের মত আরও অনেকেরই মোকাবিলা করতে হবে। এবং স্টারের আড়াল তুমি আর পাবে না।’

‘ওসব কথা থাক, এখন বলো ওই রেক্স বিলিঙকে কোথায় পাওয়া যাবে?’

সাত

একটা আধো হাসি ফুটল মিলারের মুখে। ডান হাত দিয়ে গোঁফ হাতিয়ে বোতলটা মার্শের গ্লাসের কাছে এগিয়ে দিয়ে সে বলল, ‘আমি অনেকটা আশ্বস্ত বোধ করছি, মার্শ। তুমি কাজটা নেবে কিনা এসম্পর্কে আমি অনিশ্চিত হয়ে উঠছিলাম। তাহলে এখন আমাদের ডীলটা চালু আছে, তাই না?’

‘হ্যাঁ, তা তুমি বলতে পারো,’ জবাব দিল টেড। ওর স্বরটা একটু ভারি শোনাল। মূডটা এখনও বদলায়নি।

‘রেক্সকে খুঁজে পাওয়া মোটেও কঠিন হবে না, টেড।’ গ্লাসে মদ ভরে গলায় ঢালল বেভিন। তারপর গ্লাসটা টেবিলের ওপর নামিয়ে আঙুল দিয়ে ঘোরাতে শুরু করল। ‘কোমাঞ্চি ওয়েল্স নামে একটা ছোট শহরে তুমি ওকে পাবে। বর্ডার পার হয়ে টেক্সাসে ঢুকে একটু দক্ষিণে। সব মিলিয়ে এখান থেকে তিনদিনের পথ। আগে কখনও ওই শহরে গেছ?’

মাথা নাড়ল টেড। টেক্সাসের অনেক শহরেই সে গেছে, কিন্তু কোমাঞ্চি ওয়েলসে কখনও যায়নি।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এম্পোরিয়ামের ব্যবসা এখন বেশ জমে উঠেছে।

‘না, গেছি বলে মনে পড়ে না।’

‘শহরটা ছোট,’ বলে চলল বেভিন। ‘না গেলেও কিছু মিস করোনি। শহরে ডজনখানেক সেলুন, গোটা চারেক স্টোর, কিছু ক্যাফে আর কয়েকঘর বেশ্যাবাড়ি আছে।

‘আইনের মানুষ?’

‘না। মাঝেমধ্যে কাউন্টি শেরিফ ওখানে গিয়ে খোঁজ-খবর নেয়। কিন্তু কোন সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা শেরিফের নেই।’

‘তোমার র‍্যাঞ্চটা ওখান থেকে কতদূর?’

‘কোমাঞ্চি ওয়েলস থেকে প্রায় দশ মাইল উত্তর-পুবে। কিন্তু আমি চাই তুমি আগে রেক্স বিলিঙের মোকাবিলা করো, তারপর র‍্যাঞ্চে আসো। আমার রাইডাররা হয়তো তোমাকে বাধা দেবে। তুমি কে, তা আমি ওদের জানিয়ে রাখব। তোমার কোন ঝামেলা হবে না।’

‘কোমাঞ্চি ওয়েলসের লোকজন রেক্স বিলিঙ সম্পর্কে জানে?’

ছোট কোরে ছাঁটা দাড়িটা চুলকাল বেভিন। ‘হ্যাঁ, কোমাঞ্চি ওয়েলসের প্রত্যেকেই বিলিঙের কথা জানে। কিন্তু ওদের কিছু করার নেই। ওর মোকাবিলা করার কথা কেউ ভাবতেও পারে না।’

মুখ কুঁচকাল টেড। ‘ওর ব্যাপারে শেরিফের একটা কিছু ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ওখান থেকে শেরিফ কত দূরে থাকে?

‘প্রায় বিশ মাইল, মিডল্যাণ্ডে।’

টেডের চেহারা আরও কুঁচকে উঠল। ‘এই বিলিঙ, ও কি কোমাঞ্চি ওয়েলসেই বাস করে?’

‘হ্যাঁ, শহরে নয়, তবে শহরের কাছেই। তুমি ওখানে পৌঁছে ডাণ্ডি সেলুনে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবে ওকে কোথায় পাওয়া যাবে।’

‘বারের মালিকের নাম কি?’

‘ওর নাম ক্লাইড ডোটি। তুমি কবে কাজ শুরু করছ?’

বোতলের দিকে হাত বাড়াল টেড, কিন্তু পরক্ষণেই ওটা আবার ঠেলে সরিয়ে দিল। ‘শহরে আমার কিছু কাজ রয়েছে। ওটা সেরেই তোমার কাজ ধরব।

‘নিশ্চয়, তোমার কাজ শেষ করেই আমার কাজে নেমো। কাউকে বিদায় জানাতে যাচ্ছ?’

‘না, তেমন কিছু নয়, আস্তাবলে আমার কিছু বাকি আছে, দেনা শোধ করে দিয়েই ফিরব। একটু অপেক্ষা করো, দুজনে একসাথেই যাওয়া যাবে।’

‘না, এল পেসোতে আমার একটু দরকারী কাজ আছে। পরে তোমার সাথে আবার দেখা হবে। এল পেসোতে আমার দুদিন থাকতে হতে পারে। কোমাঞ্চি ওয়েলসের কাজ সেরে এলে তুমি আমাকে র‍্যাঞ্চেই পাবে।’

‘তাই হবে,’ শান্ত স্বরে বলল টেড। ‘তবে কোমাঞ্চি ওয়েলসের কাজ সেরে আমি খালি র‍্যাঞ্চে পৌছতে চাই না।’

‘কোন চিন্তা কোরো না, টেড। সময় মত আমি র‍্যাঞ্চেই থাকব। পুরো টাকাই তুমি বুঝে পাবে। যদি চাও আমি তোমাকে কিছু অগ্রিমও দিয়ে যেতে পারি।’

হাত উঁচিয়ে বাধা দিল টেড। ‘কোন দরকার নেই। আমার টাকা মেরে পৃথিবীর কোথাও তুমি লুকাবার জায়গা পাবে না। আমি ঠিকই তোমাকে খুঁজে

বের করব।’

হাসল বেভিন। ‘টেক্সাসে আমাকে খুঁজে পাওয়া খুব সহজ।’ হাত মেলাবার জন্যে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিল সে। ‘তাহলে আপাতত বিদায় নিচ্ছি।’ টুপি পরে উঠে দাঁড়াল মিলার। ‘দু’তিন দিন পরে আমার র‍্যাঞ্চে তোমার সাথে আবার দেখা হবে।’

আন্তরিকতার সাথেই হাত মেলাল টেড। ‘তুমি কি আজ রাতেই এল পেসো রওনা হচ্ছ?’

‘ঘণ্টা দুই বিশ্রাম নেয়ার পর যদি একটু চাঙ্গা বোধ করি তাহলে আজ রাতেই রওনা হব, আর তা না হলে আগামীকাল সকালেই যাব।’

‘তাহলে অ্যাডিয়স্, আমিগো।’

‘গুড নাইট, টেড। এবং…গুড লাক!’

লম্বা টেক্সানের হাত ছেড়ে ওকে দরজা দিয়ে বেরিয়ে রাতের আঁধারে অদৃশ্য হতে দেখল টেড।

আরও কয়েক গ্লাস মদ খাওয়ার পর অফিসে ফিরে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। কিছু জিনিস সে সেসিলার কাছে পাঠিয়ে দেবে দেখেশুনে রাখার জন্যে, বাকি তার বেডরোল আর স্যাডলব্যাগেই থাকবে। উঠে দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল টেড। চমৎকার একটা সন্ধ্যা-দিনের সেই গরম আর এখন নেই। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদটা নতুন রূপার ডলারের মতই চিকচিক করছে। চাঁদের কোমল আলোয় ধুয়ে যাচ্ছে শিপরক।

সেলুনের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ানো তিনজনকে উপেক্ষা করে রাস্তা ধরে নিজের অফিসের দিকে এগোল টেড। কেন যেন বেশ অস্থির বোধ করছে, বুঝতে পারছে না কি করবে, শহরের শেষ প্রান্তে এমা আর তার মেয়েদের বিদায় জানাতে যাবে, নাকি শেষবারের মত গ্রেট প্লেইন্স হোটেলে গিয়ে ভাল ডিনার খাবে?

‘মার্শাল…’

এম্পোরিয়াম আর হার্পারের স্যাডল শপের মাঝখানে অন্ধকার গলি থেকে নিচু স্বরে ডাক শুনে থমকে দাঁড়াল সে।

‘টোনি রস তোমার সাথে কথা বলতে চায়,’ অন্ধকারের আড়াল থেকে লোকটা বলল।

শহরের এটর্নি ওকে কি বলতে চায়? অন্ধকার গলি ধরে এগোল সে। হয়তো লোকটা তাকে জানাতে চায় ওর স্টার কেড়ে নেয়ার বিরুদ্ধেই সে ভোট দিয়েছে। ওর চিন্তাধারা মেয়র বা অন্যান্য কাউন্সিলমেনের মত নয়।

অবশ্য এখন আর এতে কিছুই আসে যায় না। ভাবল টেড। শিপরক ছেড়ে সে চলে যাচ্ছে, তাই এখন মেয়র আর ওই আইনের লোক তাকে নিয়ে কি ভাবে তা অবান্তর।

দালানের শেষে অন্ধকারে একজনকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখে ঝটকা দিয়ে সরে গেল টেড। বুঝতে পারছে অসাবধানে একটা ফাঁদে ধরা দিয়েছে।

ঘুরে পিস্তল বের করার চেষ্টা করল সে। কিন্তু তার আগেই পিস্তলের নলের আঘাতে ওর হাঁটু ভাঁজ হলো।

আট

আঘাতে কিছুটা হতবুদ্ধি হলেও জিদের বশে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল টেড। অন্ধকারেই সামনের মানুষটাকে ডান হাতে প্রচণ্ড একটা ঘুসি মারল। লোকটা পড়ে গেল।

‘ধরো! মারো হারামজাদাকে!’

টেড টের পাচ্ছে আরও একটা আঘাত আসছে। হাত তুলে আঘাত ঠেকাবার চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না, আঘাতটা ওর কাঁধের ওপর পড়ল। ওই মুহূর্তে সে টের পেল কয়েকজন ওকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে। একটা প্রচণ্ড ঘুসিতে ওর মাথাটা পাশের দিকে সরে গেল। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। মুখে নিজের রক্তের স্বাদ। মাথার পাশে আরও একটা ঘুসি লাগল। ওর পেশীগুলো যেন অবশ হয়ে আসছে।

‘পেয়েছি! শয়তানটাকে এবার আমরা বাগে পেয়েছি!’

‘ওর পিস্তলটা কেড়ে নাও!’ আর একজন কেউ বলে উঠল। ‘আমি সাধ মিটিয়ে ওকে শায়েস্তা করব!’

ঘোরের মধ্যে টেড টের পেল খাপ থেকে ওর পিস্তলটা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। ওটা ছুঁড়ে ফেলায় দালানের সাথে আঘাত খাওয়ার শব্দও ওর কানে পৌছল।

‘ঠিক আছে, ডেভ, ও এখন তোমার!’

ডেভ…ঝাড়া দিয়ে মাথাটা পরিষ্কার কোরে নিল টেড। হ্যাঁ, বারে অপমানিত হওয়ার প্রতিশোধ নিতেই ওরা তাকে এই ফাঁদে ফেলেছে।

‘কিছু করার আগে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবো।’ চোয়াল ব্যথা করলেও কথাটা সে বলল। ‘পরে পস্তাতে হবে এমন কাজ কোরো না!’

‘মিথ্যে হুমকিতে কাজ হবে না, টেড,’ বলল রেড। ‘এখন আর তোমার ব্যাজের আড়াল নেই!’

‘তা নেই,’ শান্ত স্বরে বলল টেড। ‘কিন্তু তবু আবার ভেবে দেখো।

‘মার্শ, এই মুহূর্তে তুমি কিছুই না,’ উদ্ধতভাবে বলল ডেভ। ‘তোমাকে পিটিয়ে জেলে যাওয়ার ভয় আর নেই। ‘

‘পিছিয়ে যাও! ব্যাজ থাক, আর না থাক, তোমাদের মত দুর্বৃত্তের দলকে শায়েস্তা করার ক্ষমতা আমার আছে!’

‘কাঁচকলা আছে!’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়ল ডেভ। আরও দুজন সাহায্য করল। ওকে ধরে এক ফালি চাঁদের আলোয় দাঁড় করাল ওরা।

‘নাও, ডেভ, এখন তুমি যা খুশি করো!’

মাথাটা একবার ভালভাবে ঝাঁকিয়ে পরিষ্কার করে নিল টেড। এই তিনজনই এম্পোরিয়ামে তার সামনে দাঁড়িয়েছিল। ডেভ, চার্লস আর রেড। আক্রমণ ওরাই করেছে। আরও কয়েকজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে তাকে আটকেছে।

‘এখনও ভাল করে ভেবে দেখো!’ চোয়ালের ব্যথা ভুলে চিৎকার করল টেড। ‘যা হজম করতে পারবে না তাতে কামড় দিয়ো না!’

‘এখন তুমি সাধারণ মানুষ। মার্শাল নও। আমাদের ভয় কিসের?

‘সেটা সময় এলেই টের পাবে, বাছা,’ কঠিন স্বরে বলল টেড। ‘ব্যাজ না থাকলেও আমি টেড মার্শ! সুতরাং সাবধান!

‘কচু করবে তুমি!’ বলে ডেভ আবার ওর দিকে ঝাঁপ দিল।

সংঘর্ষ এড়াতে বাম পাশে সরে গিয়ে ডেভের চিবুকে প্রচণ্ড একটা ঘুসি মারতে চেয়েছিল মার্শ, কিন্তু তা হলো না।

ডেভের লম্বা হাত দুটো ওর কোমর জড়িয়ে ধরল। দুজনেই আছাড় খেয়ে মাটিতে পড়ল।

আছাড় খাওয়ার ঝাঁকিতে ছুটে গেল ডেভের হাত। লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল মার্শ। বিকেলে মেয়র মায়ার্সের সাথে কথা কাটাকাটি, আর ওই দিনের সমস্ত ঘটনাবলীর রাগ টেডের মনে ফুঁসে উঠল।

বড় শ্বাস নিয়ে ডেভ ওঠার মাঝেই বাম হাতে প্রচণ্ড একটা হুক মারল ওর মাথায়। হাতে ব্যথা পেয়ে মুখ কুঁচকাল টেড। এই কারণেই সে হাতাহাতি ফাইট পছন্দ করে না। এতে সহজেই হাত বা একটা আঙুল ভেঙে যেতে পারে। ওর পেশার জন্যে এটা মোটেও ভাল নয়। চোট পাওয়া বাম হাতটাকে আড়াল করে ডান হাতে একটা ঘুসি চালাল সে। হাতের তোয়াক্কা রাখল না। পড়ে গেল ডেভ। ওর পেটে বুটের লাথি মারল টেড। মুহূর্তে দুপাশ থেকে দুজন ওকে আঁকড়ে ধরল।

‘ওঠো, ডেভ। আমরা ওকে তোমার জন্যে ধরে রেখেছি।’

একটা গালি দিয়ে উঠে দাঁড়াল ডেভ। নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করল মার্শাল। কিন্তু বৃথা…ওরা অনেকজন। পারল না। পেটে ডেভের প্রচণ্ড ঘুসি খেয়ে ফুঁপিয়ে উঠল। মাথায় একটা জোরাল ঘুসি খেয়ে ককিয়ে উঠল সে।

মরিয়া হয়ে লাফিয়ে ডান দিকে সরে গেল টেড। নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ডেভের সামনে দাঁড়াল। সামনা সামনি দাঁড়িয়ে ওরা দুজন ঘুসাঘুসি করল কিছুক্ষণ। তারপর ডেভ পড়ে গেল।

কিন্তু পর মুহূর্তেই একটা লাঠি বা পিস্তলের বাড়ি পড়ল ওর মাথায়। চিত হয়ে মাটিতে পড়ল টেড। টের পেল মাথার কাছে আরও কয়েকজন লোক রয়েছে। ওঠার চেষ্টা করল, কিন্তু একজন বুট দিয়ে ওর হাত চেপে ধরল।

‘এটা করা কি ঠিক হবে?’ প্রশ্ন তুলল একজন।

‘নিশ্চয়, আমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছে ও। এখন আমরা তার শোধ তুলব।’ মাটি ছেড়ে উঠে টেডের পেটে একটা ঘুসি মারল ডেভ।

নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করল টেড। কিন্তু পারল না। ওরা সংখ্যায় অনেক। ওকে আঁকড়ে ধরে আছে। পেটের ওপর আরও দুটো শক্ত মার হজম করল টেড। কে যেন আবার মাথায় আঘাত করল।

জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল মার্শাল। কিছুক্ষণ পরে একটু নড়ে উঠতেই একজন চেঁচিয়ে বলল, ‘দেখো, ও জেগে উঠছে!’

‘ডেভ!’ আরেকজনের স্বর শোনা গেল। ‘এভাবে একটা লোকের আঙুল বুটের তলায় পিষে ফেলা মোটেও ঠিক হবে না।’

‘আলবৎ হবে!’ ডেভ খেঁকিয়ে উঠল। ‘এই ব্যাটা আমাদের অনেক জ্বালিয়েছে-আর সহ্য করব না! এখন সবকিছুর শোধ তুলব!’

‘কিন্তু মানুষকে কিছু না কিছু করে খেতে হবে, হাতের আঙুলই যদি না থাকে…।’

আরেকজন বলল, ‘একটা কথা আমি পরিষ্কার বলে রাখছি, ও যখন উঠবে তখন আমি আশপাশে কোথাও থাকতে চাই না!’

‘ওই পাথরটা গেল কোথায়?’ সঙ্গীদের কথার কোন তোয়াক্কা না রেখেই বলল ডেভ।

নড়ে উঠে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করল মার্শাল। স্পষ্ট বুঝতে পারছে ডেভের মতলব।

‘ডেভ!’ প্রতিবাদ করল সে, ‘আমার হাত যদি ছেঁচো কোথাও পালিয়ে তুমি বাঁচবে না। আমি তোমাকে শেষ করব।’ থুতুর সাথে কিছু ধুলো বেরোল ওর মুখ থেকে।

‘তুমি কিছুই করতে পারবে না, মিস্টার এক্স মার্শাল,’ বিদ্রূপ করে বলল ডেভ। ‘কারণ তোমার হাতের বারোটা আমি বাজাব-ওই হাতে তোমাকে আর কোনদিন পিস্তল ধরতে হবে না! রেড! ওর হাত পাথরটার ওপর রাখো!’

যথাসাধ্য সংগ্রাম করছে টেড। কিন্তু ওর পিঠের ওপর একজন পা দিয়ে চেপে ধরে থাকায় বিশেষ সুবিধা করতে পারল না। একটা গালি দিয়ে আবার চেষ্টা করল।

ডেভ যা করতে চলেছে তাতে জীবনে আর পিস্তল ধরতে পারবে না টেড। সে জানে মানুষের আঙুলের ওপর বুটের গোড়ালি পড়লে কি অবস্থা হতে পারে। প্রাণপণ চেষ্টায় নিজের হাতটাকে শেষে সামনে ঠেলে দিল।

লাথিটা কব্জির একটু উপরে পড়ল। ব্যথায় চিৎকার করে গালি দিয়ে উঠল টেড।

‘অনেক হয়েছে, ডেভ, চলো এবার কেটে পড়ি,’ কেউ একজন বলল।

দ্রুত ছুটে পালাবার আওয়াজ শোনা গেল।

নয়

ককিয়ে উঠে চিত হয়ে শুলো টেড। আকাশের পাণ্ডুর চাঁদটাকে কিছুক্ষণ দেখল। তারপর চেষ্টা কোরে সিধে হয়ে বসল। বাম হাতের ব্যথাটা ভুলে গেল সে, বর্তমানে ওর ডান হাতটা ব্যথায় দপদপ করছে। টলতে টলতে উঠে চাঁদের আলোয় হাতের কতটা ক্ষতি হয়েছে পরীক্ষা করে দেখল।

হাতটা অবশ হয়ে আছে, ক্ষতি কতটা হয়েছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। আঙুল নড়াবার চেষ্টা করে ব্যথায় ওর মুখ কুঁচকে উঠল। আঙুলের কোন ক্ষতি হয়নি দেখে সে আশ্বস্ত হলো। শেষ চেষ্টায় হাত পিছিয়ে না এনে সামনে ঠেলায় ওর আঙুলগুলো বেঁচে গেছে। হাতের চোট কতটা মারাত্মক তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। শুধু এইটুকু বুঝছে, ডাক্তার দেখানো এখন একান্ত জরুরী।

ডান হাতটা চেপে ধরে ঝুঁকে নিজের পিস্তলটা খুঁজল টেড। পেয়েও গেল। ধুলো ঝেড়ে ওটাকে খাপে ভরে রাখল।

প্রথমে ডক সেলবির কাছে যাবে। তারপর ডেভকে খুঁজে বের করে সাজা দেবে। এমন দুর্বৃত্তের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।

বড় রাস্তায় বেরিয়ে ডাক্তার সেলবির অফিসের দিকে তাকাল মার্শ। অন্ধকার। গ্রেট প্লেইন্স হোটেলের পাশে ছোট ক্যাফের দিকে ওর চোখ গেল।

আইরিস! ওর কথা আগে কেন তার মনে পড়েনি? মেয়েটা জখম সারাতে ডাক্তার সেলবির থেকে কোন অংশে কম নয়। এর আগেও ডাক্তারের অবর্তমানে কয়েকবার আইরিসের সেবা নিয়ে সুস্থ হয়েছে টেড।

বিধবা আইরিসের বয়স তিরিশের কোঠায়। অফিশিয়ালি সে ওই ছোট ক্যাফেটার ম্যানেজার হলেও ঠেকায় পড়লে নার্সিঙের কাজ চমৎকার চালিয়ে নিতে পারে।

ক্যাফের পিছনদিকে এসে দাঁড়াল টেড। শেইড টানা জানালার রিম থেকে আলোর আভাস দেখে বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা ঘরেই আছে।

দরজায় নক করল মার্শ। দরজা খুলে ওর চেহারা দেখে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল আইরিস।

‘তোমার একি চেহারা হয়েছে, মার্শাল!’ ওর রক্তমাখা ধুলোময় মুখ আর জামাকাপড় দেখে মনে হচ্ছে কেউ যেন ওকে ঘোড়ার পিছনে বেঁধে শহরের রাস্তায় হিঁচড়ে টেনে নিয়ে বেড়িয়েছে।

তাড়াতাড়ি দরজা ছেড়ে সরে মার্শালকে ভিতরে ঢোকার জায়গা করে দিল আইরিস। ‘এসো, ঘরে এসো।’

ভিতরে ঢুকে টেবিলে বসল টেড। ওখানে বসে অনেকদিনই গরম কফি আর পাই উপভোগ করেছে।

‘ইশ! একি চেহারা হয়েছে তোমার?’

‘খারাপ অবস্থা,’ বলে ডান হাতটা দেখাল টেড। ‘এটা একেবারে অবশ হয়ে আছে।’

হাতটা পরীক্ষা করে গম্ভীর হলো আইরিস। ‘আমি দেখছি কি করা যায়।’ পানি গরম করতে আগুনে কেতলি চাপাল সে। ‘তোমার হাত খারাপভাবে থেঁতলে গেছে, কিন্তু ভেঙেছে বলে মনে হচ্ছে না। কিভাবে চোট লাগল?’

‘ডেভ নামে একটা লোক কিছু বন্ধুবান্ধব নিয়ে পুরোনো দিনের ঝাল মেটাতে চেয়েছিল। আমার ব্যাজ না থাকায় এখন এই শহরের অনেকের মাথাতেই শিঙ গজিয়েছে।’

‘কাউন্সিলমেন তোমার প্রতি যে অবিচার করেছে সেকথা আমি শুনেছি। তোমার মত লম্যান এই শহরের লোক আর পাবে না।’

হেসে কাঁধ উঁচাল টেড। কামরার অন্যপাশে ট্রাঙ্ক থেকে একটা সুতির কাপড় বের করে আইরিস ওটাকে ফালিফালি করে টুকরো করল।

‘আমার পক্ষে যতটা সম্ভব তা আমি করছি, কিন্তু আগামীকাল ডক সেলবিকে দিয়ে জখমটা একবার পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভাল।’

একটা গামলায় গরম পানি ঢেলে টেবিলের ওপর এনে রাখল আইরিস। ‘একটু ঠাণ্ডা হতে দাও, তারপর দুটো হাতই গরম পানিতে ডুবাতে হবে।’

কামরা ছেড়ে কয়েক মুহূর্তের জন্যে বেরিয়ে নীল তরল পদার্থ ভরা একটা বোতল হাতে ফিরে এল। বোতল থেকে ওষুধটা গামলায় ঢেলে একটু অপেক্ষা করে মাথা ঝাঁকাল।

‘এবার চেষ্টা করে দেখো সহ্য করতে পারো কিনা। যত বেশি গরম থাকে ততই ভাল।’

হাত দুটো তুলে ধীরে পানিতে ডুবাল টেড। মুখ কুঁচকে গরম ছেঁকাটা কোনমতে সহ্য করল।

‘তোমার কপাল ভাল, টেড। আঙুলগুলো ফুলে উঠেছে কিন্তু ভাঙেনি।’ উঠে গিয়ে দুকাপ গরম কফি তৈরি করে নিয়ে এল আইরিস। ‘তোমার হাতের কি অবস্থা এখন? একটু ভাল বোধ করছ?’

‘অনেক ভাল, আইরিস, ধন্যবাদ। ডেভকে আমি সাবধান করেছিলাম হাতে ছেঁচা দিলে ওকে আমি খুন করব-কিন্তু আমার কথায় কান দেয়নি। শয়তানটাকে আমি ছাড়ব না।’

আইরিসের চোখ দুটো বিস্ফারিত হলো। ‘তুমি কি সত্যিই ওকে হত্যা করবে? সভ্য মানুষের মত ওর সাথে কথা বলে বিরোধ মেটাতে পারো না?’

‘তুমিও এখন জন শেপার্ড আর মেয়র মায়ার্সের মত কথা বলছ! আইন আমি সৃষ্টি করিনি, কেবল তা রক্ষা করার চেষ্টা করি-যেভাবে ভাল বুঝি সেইভাবে-পিস্তলের সাহায্যে! তুমি আমার হাতের সেবা করার জন্যে ধন্যবাদ।’

একটা ভুরু উঁচাল আইরিস। ‘খবরদার! তুমি একটুও নড়বে না, টেড মার্শ। তোমার ওপর আমার ডাক্তারি এখনও শেষ হয়নি!’ ধমকের সুরে বলল সে। ‘শেপার্ড আর মায়ার্স যে ঠিকও হতে পারে, এই কথাটা কখনও ভেৰে দেখেছ?’

‘তাহলে কি তুমি বলতে চাও আমিই ভুল করছি?’

‘না, তা বলছি না। তবে আমি বিশ্বাস করি মানুষ হত্যা করে কোন সমস্যার সমাধান হয় না। কিন্তু আমি এটাও জানি লম্যানদের মাঝেমাঝে পিস্তল ব্যবহার করা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। তখন মারা বা মরা ছাড়া উপায় থাকে না।

‘ব্যাপারটা সবসময়েই ওইরকম,’ নড়েচড়ে সুস্থির হয়ে বলল টেড। ‘আমাকে মারার জন্যে পিস্তল না তুললে আমি কারও জীবন নাশ করিনি। আজকে মেয়েটাকে গুলি করতে হয়েছে বলে আমি খুব দুঃখিত। পিস্তল ফেলে ওদের বেরিয়ে আসতে বলেছিলাম-কিন্তু দুজনেই গুলি ছুঁড়তে-ছুঁড়তে এল। কি করব?’

‘আমি সেটা বুঝি, টেড, কিন্তু…মানে তোমার বেলায় এমন ঘটনা এতবার ঘটেছে—’

বিরক্ত হয়ে চলে যাওয়ার জন্যে উঠতে গেল টেড। ওর কাঁধে একটা হাত রেখে বাধা দিল আইরিস।

‘মাফ করো, টেড,’ বলল সে। ‘আমি ওই বিষয়ে আর কোন কথা বলব না। আচ্ছা, তুমি সাপার খেয়েছ?’

এক মুহূর্ত ইতস্তত করে হাসল টেড। ‘না। আমার বেশ খিদেও পেয়েছে। খাবার সুযোগ আজ আর হয়ে ওঠেনি।’

‘তাহলে তুমি চেয়ারে আরাম করে বসে বিশ্রাম নাও, আর হাত দুটো গামলায় ভিজিয়ে রাখো। ততক্ষণে আমি তোমার জন্যে কিছু খাবার গরম করে দিচ্ছি।’

‘খাওয়ার পরই আমি আমার কাজ শেষ করতে বেরোব।’

ওর দিকে ফিরে তাকাল আইরিস। ‘মানে…ডেভ?’

‘হ্যাঁ, ডেভ।’

কোমরে হাত রেখে দাঁড়াল আইরিস। ‘তাহলে শুনে রাখো, তোমার আঙুলগুলো বেঁচেছে বটে, কিন্তু তোমার ডান হাত দিন দুই আড়ষ্ট থাকৰে ব্যথাও করবে। ওই হাতে পিস্তল ছোঁড়া তোমার পক্ষে সম্ভব হবে না।’

‘তাহলে তো ডেভের ব্যাপারটা আপাতত স্থগিত রাখতে হবে। কিন্তু কাজটা আমি শেষ করব। শিপরকে ফিরে আসাটা পছন্দ না করলেও আবার আসব।’

‘কোথায় যাচ্ছ তুমি?’

‘টেক্সাসে একটা বড় র‍্যাঞ্চে কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছি।’

‘কবে যাচ্ছ?’

‘আগামীকাল ভোরেই রওনা হব।’

‘তাহলে আজকের রাতটা তোমার এখানেই কাটানো উচিত। আমি তোমার ওপর নজর রাখতে পারব। আজ রাতেই আরও কয়েকবার গরম পানিতে হাত। ভেজালে তুমি কাল লাগাম ধরতে পারবে না।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *