উপন্যাস
গল্প
নাটিকা

কাক-কাহিনী

কাক-কাহিনী

বাড়ির সামনে রকে বসে একটু করে ডালমুট খাচ্ছি, আর একটা কাক আমাকে লক্ষ করছে। শুধু লক্ষই করছে না, দিব্যি নাচের ভঙ্গিতে এগিয়ে আসছে, আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে, হঠাৎ কী ভেবে একটু উড়ে যাচ্ছে আবার নাচতে নাচতে চলে আসছে। কক্‌ কু বলে মিহি সুরে একবার ডাকলও একটুখানি।

ঠোঙাটা শেষ করে আমি ওর দিকে ছুড়ে দিলুম। বললুম, ছুঁচো, পালা।

আর ঠিক তক্ষুনি আমাদের পটলডাঙার টেনিদা এসে হাজির।

কাকটা ঠোঙাটা মুখে নিয়ে উধাও হয়েছে, টেনিদা ধপাৎ করে আমার পাশে বসে পড়ল।

মোটা গলায় জিজ্ঞেস করলে, তুই কাকটাকে ছুঁচো বললি নাকি?

বললুম বই কি।

বলিসনি, কক্ষনো বলিসনি। ওদের ওতে খুব অপমান হয়।

অপমান হয় তো বয়েই গেল আমার। আমি বিরক্ত হয়ে বললুম, কাকের মতো এমন নচ্ছার, এমন বিশ্ববকাটে জীব দুনিয়ায় আর নেই।

বলতে নেই রে প্যালা, বলতে নেই।—টেনিদার গলার কেমন যেন উদাস-উদাস হয়ে গেল :

তুই জানিসনে ওরা কত মহৎ-কত উদার! তোদের কত বায়নাক্কা—এটা খাব না, ওটা খাব না, সেটা খেতে বিচ্ছিরি কিন্তু কাকদের দিকে তাকিয়ে দ্যাখযা দিচ্ছিস তাই খাচ্ছে, যা দিচ্ছিস না তা-ও খেয়ে নিচ্ছে। মনে কিছুতে নাটি নেই। একবার চিন্তা করে দ্যাখ প্যালা, মন কত দরাজ হলে–

আমি বললুম, থামো। কাকের হয়ে তোমাকে আর ওকালতি করতে হবে না। আমি যাচ্ছি।

টেনিদা অমনি তার লম্বা হাতখানা বাড়িয়ে কঁাক করে ধরে ফেলল আমাকে। বললে, যাবি কোথায়? হতচ্ছাড়া হাবুল সেনের বাড়িতে গিয়ে আড্ডা দিবি, নইলে ক্যাবলার ওখানে গিয়ে ক্যারম খেলবি—এই তো? খবরদার চুপ করে বসে থাক। আজ আমি তোকে কাক সম্পর্কে জ্ঞান-মানে সাধুভাষায় আলোকদান করতে চাই।

অগত্যা বসে যেতে হল। টেনিদার পাল্লায় একবার পড়লে সহজে আর নিস্তার নেই।

টেনিদা খুব গম্ভীর হয়ে কিছুক্ষণ নাক-টাক চুলকে নিলে। তারপর বললে, আমার মোক্ষদা মাসিকে চিনিস?

বললুম, না।

-না চিনে ভালোই করেছিস। যাক গে, মোক্ষদা মাসি তো তেলিনীপাড়ায় থাকে। মাসির আর সব ভালো বুঝলি, কিন্তু এন্তার তিলের নাড় তৈরি করে আর কেউ গেলেই তাকে খেতে দেয়।

—সে তো বেশ কথা।—আমি শুনে অত্যন্ত উৎসাহ বোধ করলুম : তিলের নাড় খেতে তো ভালোই।

—ভালোই?—টেনিদা মুখটাকে বেগুনভাজার মতো করে বললে, মোক্ষদা মাসির নাড়ু একবার খেলে বুঝতে পারছিস। কী করে যে বানায় তা মাসিই বলতে পারে। মার্বেলের চাইতেও শক্ত কামড় দিলে দাঁত একেবারে ঝনঝন করে ওঠে। সকালবেলায় একটা মুখে পুরে নিয়ে চুষতে থাকসন্ধেবেলা দেখবি ঠিক তেমনটিই বেরিয়ে এসেছে।

জানলি, ওই তিলের নাড়র ভয়েই আমি তেলিনীপাড়ায় যেতে সাহস পাই না। কিন্তু কী বলে—এই বিজয়া-টিজয়া তো আছে, প্রণাম করতে দু-একবার যেতেই হয়। আর তক্ষুনি তিলের নাড়। গোটা আষ্টেক দিয়ে বসিয়ে দেবে। তার ওপর পাহারাওয়ালার মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে—এক-আধটা যে এদিক-ওদিক পাচার করে দিবি, তারও জো-টি নেই। আর তোর মনে হবে, সারাদিন বসে স্রেফ লোহার গোলা চিবুচ্ছিস।

সেবারও আমার ঠিক এই দশা হয়েছে। মাসি আমাকে তিলের নাড় খেতে দিয়েছে, দু-দুটো ট্রেন ফেল হয়ে গেল–আধখানা নাড় কেবল খেতে পেরেছি। মাসি সমানে গল্প করছে—ছাগলের চারটে বাচ্চা হয়েছে, ভোঁদড় এসে রোজ পুকুরের মাছ খেয়ে যাচ্ছে—এই সব। এমনি সময় কী কাজে মাসি উঠে গেল আর উঠনে হাঁ করে বসে থাকা একটা কাকের দিকে তক্ষুনি একটা তিলের নাড় আমি ছুঁড়ে দিলুম। কাক সেটাকে মুখে করে সামনের জামরুল গাছটায় উড়ে বসল।

মোক্ষদা মাসি ফিরে এসে আবার ভোঁদড়ের গল্প আরম্ভ করেছে, আর ঠিক এমনি সময় মেসোমশাই ফিরছেন সেই জামরুল গাছের তলা দিয়ে। আর তখন

টপাৎ করে একটি আওয়াজ আর হাঁইমাই চিৎকার করে হাত তিনেক লাফিয়ে উঠলেন মেসোমশাই, তারপর স্রেফ শিবনেত্র হয়ে জামরুলতলায় বসে গেলেন।

আমরা ছুটে গিয়ে দেখি, মেসোমশাইয়ের টাকের ওপরটা ঠিক একটা টোম্যাটোর মতো ফুলে উঠেছে। তখন আন জল—আন পাখা—সে এক হইচই ব্যাপার।

কী হল বুঝেছিস তো? সেই তিলের নাড়! আরে, করাত দিয়ে যা কাটা যায় না, সে চিজ ম্যানেজ করবে কাকে? ঠিক যেন তাক করেই মেসোমশাইয়ের টাকে ফেলে দিয়েছে—একেবারে মোক্ষম ফেলা যাকে বলে। একটু সামলে নিয়েই মেসোমশাই মাসিকে নিয়ে পড়লেন। সোজা বাংলায় বললেন, তুমি যদি আর কোনও দিন তিলের নাড়ু বানিয়েছ, তা হলে তক্ষুনি আমি দাড়ি রেখে সন্নিসি হয়ে চলে যাব!

বুঝলি প্যালা, এইভাবে একটা মহাপ্রাণ কাক মোদা মাসির সেই মারাত্মক তিলের নাড় চিরকালের মতো বন্ধ করে দিলে। তাই তো তোকে বলছিলুম, কাককে কক্ষনো অছেদ্দা করতে নেই।

টেনিদার এই বাজে-মাকা গল্প শুনে আমি বললুম, বোগাস! সব বানিয়ে বলছ।

তাতে দারুণ চটে গেল টেনিদা। আমাকে বিচ্ছিরিভাবে দাঁত খিঁচিয়ে বললে, বোগাস? তুই এসব কী বুঝবি র‍্যা? তোর মগজে গোবর আছে বললে– গোবরেরও প্রেস্টিজ নষ্ট হয়। তেলিনীপাড়ার কাকের গল্প এখনও তো কিছু শুনিসইনি। জানিস, ওই কাকের জন্যেই মেসোমশাই আর তাঁর খুড়তুতো ভাই যদুবাবুর মধ্যে এখন গলায়-গলায় ভাব?

আমার কৌতুহল হল।

আগে বুঝি খুব ঝগড়া ছিল?

ঝগড়া মানে? রামঝগড়া যাকে বলে। সেই কোক্কালে দুজনের ভেতরে কী হয়েছিল কে জানে, সেই থেকে কেউ আর কারও মুখ পর্যন্ত দেখেন না। যদুবাবু খুব রসগোল্লা খেতে ভালোবাসেন বলে মেসোমশাই মিষ্টি খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছেন—সকালে বিকেলে স্রেফ দু বাটি করে নিমপাতা বাটা খান। আর মেসোমশাই কোঁচা দুলিয়ে ফিনফিনে ধুতি পরেন বলে যদুবাবু মানে যদু মেসো, মোটা মোটা খাকি হাফ প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়ান।

আমি বললুম, ব্যাপার তো খুব সাংঘাতিক।

সাংঘাতিক বলে সাংঘাতিক! একেবারে পরিস্থিতি বলতে পারিস। শেষ পর্যন্ত এমন একটা কাণ্ড ঘটে গেল যে দুজনে লাঠালাঠি হওয়ার জো।

হয়েছিল কি, মেসোমশাই আর যদু মেশোর দুই বাড়ির সীমানার ঠিক মাঝবরাবর একটা কয়েতবেলের গাছ। এদিকে বেল পড়লে এরা কুড়োয়, ওদিকে পড়লে ওরা। একদিন সেই গাছে কোত্থেকে একটা চাঁদিয়াল ঘুড়ি এসে লটকে গেল।

যদু মেসোর ছেলে পল্টন তো তক্ষুনি কাঠবেড়ালীর মতো গাছে উঠে পড়েছে। আর গাছে কাকের বাসানতুন বাচ্চা হয়েছে তাদের, পল্টনকে দেখেই তারা খা-খা করে তেড়ে এল। পল্টন হাঁ-হাঁ করে ওঠবার আগেই তাকে গোটা দশেক রাম ঠোক্কর।

চাঁদিয়াল ঘুড়ি মাথায় উঠল, বাবা রে মা-রে বলতে বলতে পল্টন গাছ থেকে কাটাকুমড়োর মতো ধপাৎ! ভাগ্যিস গাছের নীচে যদুমেসোর একটা খড়ের গাদা ছিল—তাতে পড়ে বেঁচে গেল পল্টননইলে হাত-পা আর আস্ত থাকত না।

মনে রাগ থাকলে—জানিসই তো, বাতাসের গলায় দড়ি দিয়েও ঝগড়া পাকানো যায়। পল্টন ভ্য-ভা করে কাঁদতে কাঁদতে ছুটল বাড়ির দিকে আর লাফাতে লাফাতে বেরিয়ে এলেন যদু মেসো। রাগ হলে তাঁর মুখ দিয়ে হিন্দী বেরোয়, চিৎকার করে তিনি বলতে লাগলেন : এই, তুমারা কাগ কাহে হামারা ছেলেকে ঠোকরায় দিয়া?

মেসোমশাই-ই বা ছাড়বেন কেন? তিনিও চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন, ও কাগ হামারা নেহি, তুমারা হ্যায়। তুমি উসকো পুষা হ্যায়।

তুমি পুষা হ্যায়।

তোম্ পুষা যায়।

শেষে দুজনেই তাল ঠুকে বললেন, আচ্ছা-আচ্ছা, দেখ লেঙ্গা।

ওরা আর কী দেখবেন, মজা দেখতে লাগল কাকেরাই। মানে নতুন বাচ্চা হয়েছে, তাদের দুটো ভালোমন্দ খাওয়াতে কোন্ বাপ-মার ইচ্ছে হয় না তাই বল? তার ওপর কাগের ছা রাত্তির-দিন হাঁ করেই রয়েছে, তাদের রাক্ষুসে পেট ভরানোই কি চারটিখানি কথা? কাজেই পোকামাকড়ে আর শানায় না বাধ্য হয়েই কী বলে না বলিয়া পরের দ্রব্য গ্রহণ করতে হয় তাদের। ধর—সারা সকাল খেটেখুটে মোক্ষদা মাসি এক থালা বড়ি দিয়েছেন, কাকেরা এসে পাঁচ মিনিটে তার থ্রি-ফোর্থ ভ্যানিশ করে দিলে। ওদিকে আবার যদু মেসোর মেয়ে—মানে আমার বঁচিদি মাছ কুটে পুকুরে ধুতে যাচ্ছে—ঝপাট–ঝপাট-খান দুই মাছ তুলে নিয়ে চম্পট!

কাজেই ঝগড়াটা বেশ পাকিয়ে উঠল। কাক নিশ্চিন্ত কাজ গুছিয়ে যাচ্ছে আর দুই মেসো সমানে এ ওকে শাসাছেন : দেখ লেঙ্গা-দেখ লেঙ্গা!

শেষে আমার রিয়্যাল মেসোমশাই ভাবলেন, একবার সরেজমিনে তদন্ত করা যাক। মানে, কয়েতবেল গাছে যে-ডালে কাকের বাসা সেটা তাঁর দিকে না যদু মেশোর দিকে। গুটি গুটি গিয়ে যেই গাছতলায় দাঁড়িয়েছেন, ব্যস!

অমনি খা-খা করে আওয়াজ, আর টকাস টকাস! মেসোমশাইয়ের মাথায় টাক আছে। আগেই বলেছি, সেখানে কয়েকটা ঠোকর পড়তেই ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে পালালেন তিনি। আর চিৎকার করে বলতে লাগলেন : কিকো কাক, এখন আমি বুঝতে পারা হ্যায়।

ওদিকে যদু মেসোও ভেবেছেন, কাকের বাসাটা কার দিকে পড়েছে দেখে আসি। যদু মেসো রোগা আর চটপটে, তায় হাফপ্যান্ট পরেন, তিনি সোজা গাছে উঠতে লেগে গেলেন। যেই একটুখানি উঠেছেন—অমনি কাকদের আক্রমণ! মেরে ফেললে–মেরে ফেললে–বলে যদু মেসোও খড়ের গাদায় পড়ে গেলেন, আর চেঁচিয়ে উঠলেন : কিকা কাক, এখুনি প্রমাণ হো গিয়া।

মেসোমশাই সোজা গিয়ে থানায় হাজির। দারোগাকে বললেন, যদু চাটুজ্যের পেট ক্রো আমার ফ্যামিলিকে ঠোকরাচ্ছে, আমার সম্পত্তি নষ্ট করে ফেলছে। আপনি এর বিহিত করুন।

—পেট ক্রো। কিছু বুঝতে না পেরে দারোগা একটা বিষম খেলেন।

—আজ্ঞে হ্যাঁ, পোষা কাক। যদু চাটুজ্জের পোষা কাক।

দারোগা বললেন, ইমপসিবল! কাক কখনও পোষ মানে? কাক কারও পোষা হতে পারে?

মেসোমশাই বললেন, পারে স্যার। আপনি ওই ধড়িবাজ যদু চাটুজ্যেকে জানেন না। ওর অসাধ্য কাজ নেই।

দারোগা তখন কান পেতে সব শুনলেন। তারপর মুচকে হেসে বললেন, আচ্ছা, আপনি এখন বাড়ি যান। আমি বিকেলে আপনার ওখানে যাব তদন্ত করতে।

মেসোমশাই বেরিয়ে যেতে না যেতেই যদু মেসে গিয়ে দারোগার কাছে হাজির।

স্যার, মধু চাটুজ্যে কয়েতবেল গাছে কাক পুষেছে আমার সঙ্গে শত্রুতা করবার জন্যে। সেই কাকের উপদ্রবে আমি ধনে-প্রাণে মারা গেলুম।

দারোগা ভুরু কুঁচকে বললেন, পেট ক্রো?

নির্ঘাত।

দারোগা যদু মেসোর কথাও সব শুনলেন। তারপর বললেন, ঠিক আছে। আমি বিকেলে যাব আপনার ওখানে তদন্ত করতে।

বাড়ি ফিরে দুই মেসোই সমানে এ-ওকে শাসাতে লাগলেন : আজ বিকালে পুলিশ আয়েগা, তখন বোঝা যাবে কৌন কাক পুষা হ্যায়।

দাবোগা এসে প্রথমেই মেসোমশাই—অর্থাৎ মধু চাটুজ্যের বাড়িতে ঢুকলেন। মেসোমশাই তাঁকে আদর করে বলেন, খুব করে চা আর ওমলেট খাওয়ালেন, কাকের বিশদ বিবরণ দিলেন। তারপর বললেন, ও সব যদু চাটুজ্যের শয়তানি। দেখুন না, দুপুরবেলা ছাতে আমার গিন্নি শুকনো লঙ্কা রোদে দিয়েছিলেন, তার অদ্ধেক ওর কাকে নিয়ে গেছে।

দারোগা বললেন, চলুন, ছাতে যাই।

কিন্তু ছাতে যেতেই দেখা গেল, তার এক কোণে ছোট একটা রুপোর ঝিনুক চিকচিক করছে।

দারোগা সেটা কুড়িয়ে নিয়ে বললেন, এ ঝিনুক কার? আপনার বাড়িতে তো কোনও বাচ্চা ছেলেপুলে নেই।

মোক্ষদা মাসি ঝাঁ করে বলে ফেললেন, ওটা ঠাকুরপোর ছোট ছেলে লোটনের, মুখপোড়া কাগে নিয়ে এসেছে।

শুনেই, দারোগা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। বটে! ওবাড়ি থেকে রূপোর ঝিনুক এনে আপনার ছাতে ফেলেছে। তবে তো এ কাক আপনার। দাঁড়ান—দেখাচ্ছি আপনাকে।

মেসোমশাই হাউমাউ করে উঠলেন, কিন্তু দারোগা কোনও কথা শুনলেন না। তক্ষুনি হনহনিয়ে চলে গেলেন যদু মেসোর বাড়িতে।

ওবাড়ির মাসি পুলিপিঠে তৈরি করে রেখেছিলেন, আদর করে দারোগাকে খেতে দিলেন। আর সেই ফাঁকে যদু মেসো সবিস্তারে বলে যেতে লাগলেন, মধু চাটুজ্যের কাকের জ্বালায় তিনি আর তিষ্ঠোতে পারছেন না।

তক্ষুনি—ঠন–ঠনাৎ! দারোগার সামনেই যেন আকাশ থেকে একটা চামচে এসে পড়ল।

দারোগা বললেন, এ কার চামচে?

যদু মেসো বলতে যাচ্ছিলেন, আমারই স্যার—কিন্তু পেল্লায় এক ধমকে দারোগা থামিয়ে দিলেন তাঁকে। বললেন, শাট আপ—আমার সঙ্গে চালাকি? ওই চামচে দিয়ে আমি মধুবাবুর ওখানে ওমলেট খেয়ে এলুম—এখনও লেগে রয়েছে। তা হলে কাক তো আপনারই—আপনিই তো তাকে চুরি করতে পাঠান। দাঁড়ান—দেখাচ্ছি–

যদু মেশোর দাঁতকপাটি লাগার উপক্রম! দারোগা হনহনিয়ে চলে গেলেন। তারপর পুলিশ পাঠিয়ে দুই মেসোকে থানায় নিয়ে গেলেন। বলির পাঁঠার মতো দাঁড়িয়ে রইলেন দুজন।

দারোগা চোখ পাকিয়ে বললেন, এ ওর নামে নালিশ করবেন আর?

দুই ভাই একসঙ্গে বললেন, না–না।

কোনওদিন আর ঝগড়া-ঝাঁটি করবেন?

না স্যার, কক্ষনো না।

তা হলে বলুন, ভাই-ভাই এক ঠাঁই।

ওঁরা বললেন, ভাই-ভাই এক ঠাঁই।

এ ওকে আলিঙ্গন করুন।

দুজনে পরস্পরকে জাপটে ধরলেন—প্রাণের দায়েই ধরলেন। আর মোটা মেসোমশাইয়ের চাপে রোগা যদু মেশোর চোখ কপালে উঠে গেল।

তারপর? তারপর থেকে দুভাই প্রাণের প্রাণ। কী যে ভালোবাসা—সে আর তোকে কী বলব প্যালা! তাই বলছিলুম, কাক অতি মহৎ-হৃদয় প্রাণী, পৃথিবীর অনেক ভালো সে করে থাকে—তাকে ছুঁচো-টুচো বলতে নেই!

গল্প শেষ করে টেনিদা আমাকে দিয়ে দু আনার আলুর চপ আনাল। একটু ভেঙে যেই মুখে দিয়েছে, অমনি–

অমনি ঝপাট!

কাক এসে ঠোঙা থেকে একখানা আলুর চপ তুলে নিয়ে চম্পট।

অতি মহৎ-হৃদয় প্রাণীসন্দেহ কী!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *