ঈশ্বরের চিঠি – ৩
এর পর কী হল? আদিত আর স্মাহির মিল হল কি? তিজুর সঙ্গে দেখা হল মুকুর? আর অভিনব! তিনি কি সত্যি সেই মানুষ যাকে খুঁজতে এসেছে তিজু! বাইক এগিয়ে যাচ্ছে। আর আমি ওই দূরের উলটে পড়া বাইকের সামনে বসে দেখছি ক্রমশ কুয়াশায় মিশে যাওয়া গাড়ির টেল লাইট! হ্যাঁ, আমি কুয়াশাতেও সব দেখতে পাই! কারণ আমি ঈশ্বর! আমি এসে আচমকা রাস্তা পার করার নামে ওদের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই ওই খারাপ লোকগুলো বাইক উলটে পড়ে আছে এখন! তিজু, স্মাহি আর আদিত বেঁচে পালিয়ে গিয়েছে! কিন্তু তারপর! পালিয়ে ওরা গেলটা কোথায়? শেষে কী হল ওদের? গল্পটা কি সম্পূর্ণ হল না?
সম্পূর্ণ, একটা অদ্ভুত শব্দ! এই পৃথিবীতে কোনটা সম্পূর্ণ? আমাদের নিজেদের জীবনের সবকটা গল্পই তো অসম্পূর্ণ। তাহলে কেমন করে আমি একটা নিটোল ভাবে শেষ হওয়া গল্প লিখব? যে মানুষ মারা যাবে বিকেলে বা সন্ধেবেলা বা রাতে, সে কি কোনও পরিকল্পনা নিয়ে সকাল শুরু করে না! সে কি পরিকল্পনা করে রাখে না কাল কী করবে! পরশু কী করবে! বা পরের সপ্তাহে কোন দিন যাবে বন্ধুর বাড়ি! তাহলে? সে তার মৃত্যু দিনটাও তো শুরু করে বিশ্বাস নিয়ে! বিশ্বাস, আমাদের এক মাত্র অ্যালবেট্রস! সেই পুরোনো বৃদ্ধ নাবিকের থেমে থাকা জাহাজকে যে নিয়ে যাচ্ছিল তার গন্তব্যের দিকে! বিশ্বাস এমন একটা জিনিস যা সব কিছুর মধ্যে থেকে আমাদের বের করে নিয়ে যায়, এগিয়ে নিয়ে যায়! আমাদের আবারও বাঁচার কথা বলে। তাই আমিও বিশ্বাস রাখি যে আদিতের সঙ্গে জীবন শুরু করবে স্মাহি। বিশ্বাস রাখি দেশপ্রিয় পার্কের পেট্রোল পাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মুকু আবার ফিরে যাবে তিজুর কাছে। আর বিশ্বাস রাখি তিজু অভিনবের মধ্যে পেয়ে যাবে ওর বাবাকে! আমি বিশ্বাস রাখি একটা আবছায়া পৃথিবীতে আমরা ঠিক আরও আরও বেঁচে থাকব! আরও আরও হাতে হাত বেঁধে রুখে দেব সব মনখারাপ আর কষ্ট! বিশ্বাস রাখি আমি পারব, আর তুমিও ঠিক পারবে আবার বেঁচে উঠতে! পারবে অন্যকে বাঁচিয়ে তুলতে। কারণ, আমি বিশ্বাস রাখি তোমার ওপর। আমি বিশ্বাস রাখি, আজও…
(রঙ্গন ফুলের পাপড়ির মতো ঠোঁট, অলিভ মোটর বাইক আর বাইশে ডিসেম্বরের কুয়াশা ছাড়া এই গল্পের আর সব কিছু কাল্পনিক!)