হত্যা-শাস্ত্র – অভিজ্ঞান গাঙ্গুলী
হত্যা-শাস্ত্র – অভিজ্ঞান গাঙ্গুলী
চাণক্য সিরিজ – ১
বুক ফার্ম
প্রথম প্রকাশ : ডিসেম্বর ২০২১
প্রচ্ছদ : সপ্তদীপ দে সরকার
অলংকরণ : গৌতম কর্মকার
.
সেই সকল পাঠককে
যারা পড়ার বইয়ের মধ্যে গল্পের বই লুকিয়ে পড়েছেন।
.
ভূমিকা
সময়সরণি ধরে তেইশ-শো বছর পিছিয়ে যান। ভাবুন সেই সময়ের কথা যখন ‘ফিঙ্গার প্রিন্টিং’ অথবা ‘ফরেনসিক সায়েন্স’ উন্নত হয়নি। সেই সময়ে তবে কীসের ওপর ভিত্তি করে একজন গোয়েন্দা তদন্ত করতেন?
এই চিন্তাটাই ছিল আমার লেখার মূল বীজ। ঠিক করি এই সময়টা ভিত্তি করে গোয়েন্দা কাহিনি লিখব। যেখানে সত্যান্বেষীর একমাত্র অস্ত্র হবে তার চিন্তাশক্তি এবং সব গল্পে রহস্য সমাধানের সমস্ত সূত্র পাঠকের সামনে থাকবে। গোয়েন্দার সঙ্গেসঙ্গে পাঠকরাও মস্তিষ্ক লাগিয়ে চেষ্টা করবে রহস্য সমাধানের।
এরপর ভাবনা এল কে হবে আমার গোয়েন্দা? উত্তরটা সহজ ছিল। ইতিহাসের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তিকে সহজেই এই চরিত্রে মানিয়ে যায়। আচার্য বিষ্ণুগুপ্ত চাণক্য ‘কৌটিল্য’। তাঁর চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি আর কেই-বা হতে পারে?
আচার্য চাণক্যর কথা উঠলেই প্রথম মনে আসে তাঁর সৃষ্টি ‘অর্থশাস্ত্র’-র কথা। এই বইটা শুধুমাত্র অর্থনীতির বই নয়। এটা সম্ভবত পৃথিবীর প্রথম অপরাধ-বিজ্ঞানের বইও বটে। ‘অর্থশাস্ত্র’ পড়তে গিয়ে আমি ভারি অবাক হয়েছিলাম। সেই যুগে আচার্য কৌটিল্য এই বইয়ে লিখে গেছেন, ‘বডি ল্যাঙ্গোয়েজ’ থেকে অপরাধী চেনার উপায়, বিভিন্ন ধরনের বিষ প্রয়োগ পদ্ধতি এবং সেই বিষ শনাক্ত করার উপায়। মৃতদেহ দেখে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে বা আদৌ সেটা হত্যা কি না সেটা একজন তদন্তকারী কীভাবে বুঝবে, তার ব্যাখ্যাও করেছেন চাণক্য। অপরাধের তদন্ত করতে কী কী পদ্ধতি একজন গোয়েন্দার অবলম্বন করা উচিত তারও বিশদ বর্ণনা লিখে গেছেন তিনি অর্থশাস্ত্রে। তাই এই অসম্ভব বুদ্ধিমান ঐতিহাসিক চরিত্রটির প্রতি সম্মান জানিয়েই এই কাহিনিগুলো লেখা।
এই বইয়ের কাহিনি কখনোই ঐতিহাসিক সত্য নয়। বরং বলা চলে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা কাল্পনিক কাহিনি মাত্র। অতএব পাঠকদের কাছে অনুরোধ যে এই গল্পগুলো ঐতিহাসিক কাহিনি না মনে করে, গোয়েন্দা কাহিনি হিসেবেই পড়বেন। এতে কিছু তথ্য ঐতিহাসিক, বাকি সবটাই কাল্পনিক। বহু তথ্য আমার অজান্তে অথবা গল্পের স্বার্থে হয়তো ইতিহাসের থেকে আলাদা হয়ে গেছে। পাঠকদের অনুরোধ সেগুলো গল্পের স্বার্থে ক্ষমা করবেন। চন্দ্রগুপ্তর গুরু বিষ্ণুগুপ্ত চাণক্য এবং অর্থশাস্ত্রের লেখক বিষ্ণুগুপ্ত কৌটিল্য একই ব্যক্তি কি না সেই নিয়ে নানা ইতিহাসবিদের নানা মত আছে। আমি সেই বিতর্কে না গিয়ে তাঁদের অভিন্ন ব্যক্তি ধরে নিয়েই কাহিনি লিখেছি। মূল কয়েকটা চরিত্র যেমন চন্দ্রগুপ্ত, জীবসিদ্ধি এবং স্বয়ং চাণক্য বাদে বাকি বেশিরভাগ চরিত্রই কাল্পনিক। প্রতিটা গল্পের শেষে টীকার মাধ্যমে আমি তথ্যসূত্র লিখে দেয়ার চেষ্টা করেছি।
পাঠকদের অনেকদিনের দাবি ছিল চাণক্যকে দুই মলাটে আনার। উৎসাহ দেয়ার জন্যে তাঁদের ধন্যবাদ। এই বইয়ের শেষে যে উপন্যাসটা আছে সেটা প্রায় ছ-মাসের গবেষণা আর তিন মাস লেখালেখির ফল। ধন্যবাদ দিতে চাই আমার বন্ধু শুভ্রজিৎ চক্রবর্তীকে, যে আমার সব গল্পের প্রথম পাঠক ধন্যবাদ আমার অন্য দেশের বোনটিকে শ্রাবন্তী, যে প্রথম দফা ভুলভ্রান্তি দেখে দেয়। ইতিহাসের তথ্য খুঁজে পেতে এবং গল্পটা আরও বাস্তবভিত্তিক করতে সাহায্য করেছে সুশোভন। ধন্যবাদ দেব সুমিতদা আর সোনালদাকে। তাদের জন্যেই এই বই পাঠকদের হাতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। যত্ন করে প্রুফরিড করার জন্যে অনমিত্রবাবুকেও ধন্যবাদ।
সবশেষে ধন্যবাদ পাঠকদের, যাদের উৎসাহই সাহস জোগায়।
অভিজ্ঞান গাঙ্গুলী
Saikat mukherjee er kichu new book deoyar anurodh roilo
ঋজু গাঙ্গুলী সম্পাদিত বৃশ্চিক সিরিজের বইগুলো দেওয়ার অনুরোধ রইল।