সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার
অলংকরণ – গৌতম কর্মকার
প্রথম প্রকাশ : জুন ২০২০
প্রচ্ছদ : কামিল দাস
প্রচ্ছদ পরিকল্পনা : কৌশিক মজুমদার
নামাঙ্কন : স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়
অলংকরণ : গৌতম কর্মকার
বুক ফার্ম-এর পক্ষে শান্তনু ঘোষ ও কৌশিক দত্ত কর্তৃক প্রকাশিত
.
‘কোথাও পাখির শব্দ শুনি;
কোনো দিকে সমুদ্রের সুর;
কোথাও ভোরের বেলা র’য়ে গেছে— তবে।
অগণন মানুষের মৃত্যু হ’লে— অন্ধকারে জীবিত ও মৃতের হৃদয়
বিস্মিতের মতো চেয়ে আছে;
এ কোন্ সিন্ধুর স্বর:
মরণের— জীবনের?
এ কি ভোর?
অনন্ত রাত্রির মতো মনে হয় তবু।
একটি রাত্রির ব্যথা স’য়ে—
সময় কি অবশেষে এ-রকম ভোরবেলা হ’য়ে
আগামী রাতের কালপুরুষের শস্য বুকে ক’রে জেগে ওঠে।’
‘সূর্যতামসী’, সাতটি তারার তিমির, জীবনানন্দ দাশ
.
অরুন্ধতী মজুমদার, অনির্বান চক্রবর্তী, অনির্বান ভৌমিক, কামিল দাস, গৌতম
কর্মকার, জীবনানন্দ দাশ, দেবাশীষ গুপ্ত, মুহিত হাসান,
প্রদীপ গরাই, রনিতা চট্টোপাধ্যায়, স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়
.
প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের জার্নাল (১)
১৫ মে, ১৯১১, রাত্রি ১০ ঘটিকা
যে সকল রোমহর্ষণকারী হত্যাকাণ্ডের নায়ক স্থির হয় না, অথবা যে সকল মোকদ্দমার হত্যাকারী পলায়িত অথবা লুক্কায়িত থাকেন, ঈশ্বর জানেন কেন সেই সকল মোকদ্দমা সন্ধানের ভার আমারই হস্তে পতিত হয়। ভুল বলিলাম। পতিত হইত। দীর্ঘ তেত্রিশ বৎসর সুনামের সহিত কলিকাতা ডিটেকটিভ পুলিশের কার্য সুষ্ঠুভাবে নির্বাহ করিয়াছি। আজই আমি কর্ম হইতে অবসর গ্রহণ করিলাম। এতকাল যে সকল মোকদ্দমার কিনারা করিতে সমর্থ বা সময় সময় অকৃতকার্য হইয়াছি, তাহা অনেক সময় দারোগার দপ্তরে প্রকাশ করিতাম। কিন্তু এই বুড়া বয়সে মন বড়ো অস্থির হইয়া উঠিয়াছে। আমার অবকাশরঞ্জনীখানি লইয়া যাহা লিখিতে প্রবৃত্ত হইয়াছি, তাহা সর্বসমক্ষে প্রকাশের অধিকার বা সাহস কিছুই আমার নাই। যে ভয়ানক ঘটনাবলি ও বীভৎস ষড়যন্ত্রের জাল একদা কলিকাতা নগরীর ভিত্তিমূল কাঁপাইয়া দিয়াছিল, তাহার কোনও লিখিত নথি বা প্রমাণ রাখা হয় নাই। চিফ ম্যাজিস্ট্রেট টমসন সাহেবের অনুরোধ ও একপ্রকার আদেশে ঘটনার সহিত সংযুক্ত সকল প্রমাণ ধংস করা হইয়াছে। একমাত্র যে সকল হতভাগ্য মনুষ্য সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হইবার সুযোগ পাইয়াছিল, তাহাদের স্মৃতি ব্যতীত এই ভয়াবহ, অদ্ভুত এবং ঘৃণ্য ঘটনাবলির অস্তিত্ব অন্য কোথাও অনুপস্থিত। সাহেবের বিশ্বাস এই ঘটনাক্রমের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত সর্বজনসমক্ষে প্রকাশ পাইলে নাকি মাননীয় ইংরাজ বাহাদুরের অটল সিংহাসনও টলিয়া যাইবার সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান।
আজ ভাবিতে বসিলে মনে হয় যেন কোন দূরতর অতীতে এক দুঃস্বপ্নের ন্যায় এইসব অভাবনীয় কীর্তিকলাপ সংঘটিত হইয়াছিল। জানি, রায়বাহাদুর খেতাব আমার হস্তপদকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করিয়াছে, কিন্তু তাহা সত্ত্বেও সেই অভূতপূর্ব ঘটনাবলি লিপিবদ্ধ না করিয়া গেলে ইতিহাস আমাকে ক্ষমা করিবে না। ইহা যে প্রকাশযোগ্য নহে, তাহা আমি সম্যকরূপে জ্ঞাত আছি। উক্ত অনুসন্ধানের নানা দিক আজও আমার নিকট অন্ধকারে নিমজ্জিত, যাহার সম্যক গুরুত্ব নির্ধারণ আমার পক্ষে অসম্ভব। যাহা আমার জ্ঞানবুদ্ধি মতে সত্য, আমি তাহার সমস্তটাই এই জার্নালে লিপিবদ্ধ করিয়া যাইতেছি।
আমার জীবৎকালে ইহা প্রকাশ পাইবে না। এক গোপন স্থানে যোগ্য ব্যক্তির হস্তে এই পাণ্ডুলিপি লুক্কায়িত থাকিবে। কতদিন? তাহা একমাত্র মহাকালই জানেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কেহ বা কাহারা এই লিপির সন্ধান পাইয়া যদি পাঠ করেন, তবেই কলিকাতার অন্ধকারময় ইতিহাসের এক অজানা অধ্যায় তাঁহাদের সম্মুখে উন্মোচিত হইবে— নচেৎ নহে। আমি অবশ্য সেই সময় ইংরাজ বাহাদুরের আইনের বাহিরে, টমসন সাহেবের আদেশের বাহিরে চিরশান্তির এক নিশ্চিত রাজত্বে অবস্থান করিব। তাই ভবিষ্যতের পাঠক, যিনি এই মুহূর্তে এই লেখাটি পাঠ করিতেছেন, তাঁহাদের উদ্দেশে একটিই সতর্কবাণী। এই কাহিনি আপনার পরিচিত সকল বিশ্বাসের মর্মমূলে আঘাত হানিতে পারে, যেমন আমার ক্ষেত্রে হইয়াছিল। আর সেই কারণেই পরবর্তী অংশে অগ্রসর হইবার পূর্বে আরও একবার ভাবিয়া লউন।
এই সাইটে বই অনুলিপি সংক্রান্ত কাজ করতে চাই একটু যোগাযোগ করে জানাবেন দয়া করে ।
শরীফুল হাসান – ছায়া সময়
মাশুদুল হক – অসচরাচর ১, ২
এই দুইটি বইয়ের জন্যে অনুরোধ করা হচ্ছে।
Hi