মিসির আলি অমনিবাস ২ – দ্বিতীয় খণ্ড – হুমায়ূন আহমেদ
প্রথম প্রকাশ : বইমেলা ২০০৬
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
প্রিয় মানুষ ও প্রিয় অভিনেতা
মিসির আলির কথা
আমি একবার এক বিয়ের দাওয়াতে গেছি। বিয়ের দাওয়াত মানে খাসির রেজালা, রোস্ট-পোলাও নিয়ে হৈচৈ। এতবড় একটা অনুষ্ঠান কী করে শুধুমাত্র খাওয়া-নির্ভর হয় আমি জানি না। নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। যাই হোক আমি বসে আছি এক কোনায়; নিমন্ত্রিত অতিথিরা আসছেন, দ্রুত টেবিলের দিকে ছুটে যাচ্ছেন। সে এক দৃশ্য। এক পর্যায়ে আমিও ছুটে গেলাম। ‘যস্মিন দেশে যদাচার’। খেতে বসে মেজাজ খুব খারাপ হল। পোলাও ঠাণ্ডা, রোস্ট ঠাণ্ডা, খাসির রেজালায় সরের মতো চর্বি জমে আছে। ঠাণ্ডা খাবার দেখে নিমন্ত্রিতরা কেউ বিচলিত হলেন না। প্লেটের পর প্লেট নেমে যেতে লাগল। এর মধ্যে শুরু হল আরেক ঝামেলা; নিমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে দু’জন মিসির আলিকে নিয়ে বিরাট তর্কযুদ্ধে নেমে গেলেন। (তাদের উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই আমাকে শুনানো তবে তারা কেউই আমাকে চিনেছেন এমন ভাব দেখালেন না)। একজন বলছেন মিসির আলিকে যতটা বুদ্ধিমান মনে হয় ততটা বুদ্ধিমান তিনি না। অন্য জন বলছেন তিনি যথেষ্টই বুদ্ধিমান তবে তিনি আবেগ-নির্ভর মানুষ বলেই বুদ্ধিটা স্পষ্ট হয় না। আমি অপেক্ষা করছি কখন তাঁরা আমাকে সালিশ মানবেন তার জন্যে। উত্তরে কী বলব ভেবে রাখা দরকার। মাথায় কিছু আসছে না। তখন একটা ঘটনা ঘটল, নতুন রেজালার বাটি নিয়ে উর্দি পরা বয় এসে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ আলোচনা শুনল এবং আমাকে বিস্মিত করে ঘোষণা করল, মিসির আলি সাহেবের বুদ্ধির কোনো তুলনা নাই।
মুহূর্তের মধ্যে আমার মন ভালো হয়ে গেল। বিয়ে বাড়ির কোলাহল সংগীতের মতো মনে হল। ঠাণ্ডা খাবার যথেষ্ট আনন্দ নিয়ে খেলাম। মিসির আলি নামের মানুষটার প্রতি খানিকটা ঈর্ষাও বোধ করলাম।
মিসির আলি অমনিবাসের দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হচ্ছে। অভিনন্দন মিসির আলিকে, অভিনন্দন প্রতীক প্রকাশনীকে।
হুমায়ূন আহমেদ
দখিন হাওয়া, ধানমন্ডি
১৮-১২-২০০৫
সূচিপত্র
Leave a Reply