ব্রহ্ম সত্য জগৎ সত্য : উপনিষদ বিজ্ঞান রবীন্দ্রনাথ – ড. মণি ভৌমিক
অনুলিখন: রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রথম সংস্করণ: জানুয়ারি ২০১২
প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড
প্রচ্ছদ: সুদীপ্ত দত্ত
বইটি উৎসর্গ করলাম প্রাচীন ভারতের সেইসব
প্রাজ্ঞ ধীময় গভীরপ্রসারী মানুষকে যাঁরা
জগতের ইতিহাসে প্রথম দেখেছিলেন স্রষ্টা ও সৃষ্টির
সত্যতর রূপ
.
“The fanatical atheists are like slaves who are still feeling the weight of their chains which they have thrown off after hard struggle. They are creatures who—in their grudge against traditional religion as the ‘opium of the masses’—cannot hear the music of the spheres.
—Albert Einstein
যাঁরা বিশ্বাস করেন ‘ব্রহ্ম মিথ্যা জগৎ সত্য’
সেই সব অতি জাগতিক মানুষের ভাবনার
জন্য অ্যালবার্ট আইনস্টাইন পরিবেশিত
কিছু ‘অশন’।
.
এ জীবন পুণ্য করো দহন দানে
সমকালীন প্রগতির বৈশিষ্ট্য এই ভাবনার মধ্যে, আমরা সবাই এক আন্তর্জাতিক টেকনোলজিকাল সমাজের সতীর্থ। আমরা বিশ্বায়ন ও সভ্যতার এই উজ্জ্বল পর্যায়ে পৌঁছেছি বিজ্ঞানের সৌজন্যে। আজকের জগতের যে ঐশ্বর্য, বৈভব ও পর্যাপ্তি তা আমাদের পূর্বপুরুষেরা স্বপ্নেও ভাবতে পারতেন না। সারা বিশ্বব্যাপী চলছে উন্নয়নের প্রচেষ্টা। যে-উন্নয়ন ক্রমশ দূর করছে দারিদ্র্য, বাড়াচ্ছে আমাদের আয়ু। তাই বিজ্ঞানের পদ্ধতির উপর আমাদের যে-বিশ্বাস তৈরি হয়েছে সেই বিশ্বাসকে একই গ্লোবাল ভিলেজে আমরা সমবেতভাবে ভাগ করে নিচ্ছি।
আমরা যতই বুঝতে পারছি প্রাকৃতিক পদ্ধতির অন্তরজগৎ, ততই আমরা সুর মেলাচ্ছি সেইসব কিছুর সঙ্গে, মানিয়ে নিচ্ছি পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে— যা একসময়ে হয়তো মনে হয়েছিল আমাদের স্বাভাবিক ভাবনার বিপ্রতীপ। এমন কিছুর কাছে আমরা স্বপ্নেও ফিরে যাওয়ার কথা ভাবি না, যা বৈজ্ঞানিক যুক্তি, দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন।
সেইসব ঋষিরা যাঁরা প্রাচীন ভারতে পৌঁছেছিলেন বৈদিক প্রজ্ঞায়, তাঁদের বুদ্ধিমত্তা, মৌলিক মনন ও ভাবনার উচ্ছ্বলতা যে-পর্যায়েরই হোক না কেন, তাঁরা কিন্তু আজকের বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার ও অবদানের চোখ-ধাঁধানো আলো থেকে ছিলেন বঞ্চিত। যেমন এক সময়ে তো ভাবা হত পৃথিবীটা চ্যাপটা, গোল নয়, এবং এই পৃথিবীই মহাজগতের গতিহীন কেন্দ্র! মহাজগৎ ঘুরছে তার চারপাশে। কিন্তু এখনও যদি এই বিশ্বাসে কেউ অটল থাকেন, তা হলে তিনি তো হবেন হাসির পাত্র। নিশ্চয় ভাবতে পারছেন, বিজ্ঞান যত এগিয়েছে, যত নতুন নতুন আবিষ্কার হয়েছে, ততই কত কঠিন হয়ে পড়েছে এইসব পুরনো ধারণাকে আঁকড়ে থাকা। প্রগতিশীল বৈজ্ঞানিক বিশ্ববোধকে আমরা ক্রমশ মেনে নিতে স্বাগত জানাতে বাধ্য হচ্ছি। সুতরাং বৈদিক ঋষিদের প্রাচীন প্রজ্ঞার সঙ্গে আজকের বিজ্ঞানের মেলবন্ধন যদি করতে পারি, তবে সেই মিলিত আলো আমাদের দেবে নব বিশ্বচেতনা। যখন প্রাচীন প্রজ্ঞার সঙ্গে মিলিত হয় আজকের বিজ্ঞান, তখন ঘটে এক বিস্ময়কর ইনটেলেকচুয়াল রসায়ন— খুলে যায় মনন ও বোধের নতুন জানলা।
আমার এই বইয়ে আমি ঘটাতে চেষ্টা করেছি সেই বিরল রসায়ন— একদিকে বেদ ও উপনিষদের ধ্যানলব্ধ প্রজ্ঞা, অন্যদিকে বিজ্ঞানের যুক্তি-সমর্থিত বিশ্ববোধ— এই দুয়ের মধ্যে আছে অনেক আশ্চর্য সাদৃশ্য— এই দুই আপাত বিপরীত মেরুস্রোত এসে মিশেছে আমার ভাবনায়, আমার বইয়ে। এই বইয়ের ব্যাপ্তি, প্রাচীন ভারতের ঋষিবাণী থেকে এ-যুগের কোয়ান্টাম ফিজিক্স— যে কোয়ান্টাম ফিজিক্স কাজ করছে আপনার সেলফোনে, কম্পিউটারে, ই-মেলে। উপনিষদ ও বিজ্ঞান একই সঙ্গে বলছে, এই মহাবিশ্বের আদি উৎস এক ও অদ্বিতীয় এবং সেই আদি উৎস সর্বত্র বিরাজমান। বেদ, উপনিষদ, কোয়ান্টাম ফিজিক্স যেন মিশে আছে এক সমবেত ও সমকালীন বিশ্ববোধের অপূর্ব রসায়নে। এই বার্তাই এই বইয়ের কোরক। এমন হিরণ্ময় মিশ্রণের দহন-দানে পুণ্য হোক আমাদের জীবন। এই জগতের কাজের মধ্যে এবং নিরাসক্ত ভোগের মধ্যে আমরা যেন হতে পারি অমৃততীর্থযাত্রী।
Arkhamox
watch “Science Journey” Youtube channel.