• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

বৈশেষিক দর্শন – মহর্ষি কণাদ

লাইব্রেরি » বৈশেষিক দর্শন – মহর্ষি কণাদ
বৈশেষিক দর্শন মহর্ষি কণাদ

বৈশেষিক দর্শন – মহর্ষি কণাদ

মহামহোপাধ্যায় শ্রীশঙ্করমিশ্র কৃত উপস্কার টীকা সহ
এবং
শ্রীপঞ্চানন তর্করত্ন ভট্টাচার্য রচিত অনুবাদ ও ব্যাখ্যা সহ

সম্পাদনা – অধ্যাপক অমিত ভট্টাচার্য

সংস্কৃত অংশ প্রুফরীড করা হয়নি

.

মূল সংস্করণের ভূমিকা

যে দর্শনশাস্ত্রসমূহের প্রভাবে ভারতবর্ষ এখনও পৃথিবীর সমুচ্চ আসনে আসীন,—বৈশেষিকদর্শন সেই ষড়দর্শনের অন্যতম প্রধান দর্শন শাস্ত্র। এই দর্শনশাস্ত্র- প্রণেতা কশ্যপবংশীয় মহর্ষি উলূক। ইনি তণ্ডুলকণিকা মাত্র (মতান্তরে তুষ) ভক্ষণ করিয়া দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন ও সেই সিদ্ধিফলে এই অপূৰ্ব্ব শাস্ত্র প্রণয়ন করেন বলিয়া দর্শন-শাস্ত্রে ইনি ‘কণাদ’ নামেই প্রসিদ্ধ। কণাদের নামান্তর উলূক বলিয়াই সর্ব্বশাস্ত্রপারদর্শী মাধবাচার্য্য বৈশেষিক দর্শনকে ঔলুক্য দর্শন নামে অভিহিত করিয়া স্বকৃত সৰ্ব্বদর্শনসংগ্রহমধ্যে সন্নিবিষ্ট করিয়াছেন। উলূক ঋষির নাম মহাভারত শান্তিপর্ব ৪৭শ অধ্যায়ে আছে “উলূকঃ পরমো বিপ্রো মার্কণ্ডেয়ো মহামুনিঃ” (১১শ শ্লোক)।

আমাদের দেশের শিক্ষিত সমাজ অল্পায়ুঃ হইয়া পড়িতেছেন। যুগের সুদীর্ঘ পরিমাণ তাঁহাদের জ্ঞানের আয়ত্ত হয় না, তাই তাঁহারা দীর্ঘজীবী মহর্ষিগণের সত্য নিদ্ধারিত কাল পরিত্যাগ করিয়া বিদেশীয় পণ্ডিতপ্রদর্শিত অল্পকালকে সহজে আয়ত্ত করিতে ভালবাসেন; আমরাও বলি তথাস্তু; তাহা হইলেও বৈশেষিক দর্শন তিনসহস্র বৎসর পূর্ব্বের রচিত হইবে। অনেকে বলেন, বৈশেষিক দর্শনই সৰ্ব্বপ্ৰথম দৰ্শন। তাঁহাদের যুক্তি বিচার না করিয়াও বলা যায়, এই দর্শন যদিও সর্ব্বপ্রথম না হয়, তাহা হইলেও সৰ্ব্বপ্রথম দর্শনের অধিক পরবর্ত্তী নহে। কেন না ২৫০০ বৎসর যে বৌদ্ধমত উজ্জ্বন্তিত হইয়া দর্শন-জগতের তুমুল পরিবর্তন সাধন করিয়াছে, বৌদ্ধমতের সেই প্রবল আক্রমণের তরঙ্গ-ক্ষোভ বৈশেষিক দর্শনে নাই। যে যৎকিঞ্চিৎ বৌদ্ধমতের আলোচনা আছে, তাহা উপনিষদাদির অন্তর্নিহিত বীজাকার বৌদ্ধমতের ভাবিচ্ছায়া মাত্র; অথবা তাহা টীকাকারগণের কল্পনাপ্রসূতও হইতে পারে। ফলতঃ বৌদ্ধদর্শনের মত খণ্ডনের জন্য ঘোরতর জেদ বৈশেষিকসূত্রের অভ্যন্তরে খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। বেদান্ত দর্শনের মতচ্ছায়াও বৈশেষিকসূত্রে নাই। ন্যায়দর্শনের মত শোধন বা আংশিক মতবীজ বৈশেষিকে নিহিত, তাহা নিঃসন্দেহে বলিতে না পারিলেও–ন্যায়দর্শন অপেক্ষা বৈশেষিক যে অধিক পরবর্ত্তী নহে ইহা নিঃসন্দেহে বলিতে পারি। বৈশেষিকের সূত্রোক্ত মত যদি পূর্ব্বপ্রচলিত মতের নিষ্কর্ষ না হয়, তাহা হইলে, বৈশেষিককে ন্যায়সূত্রের পূর্ব্ববর্ত্তীই বলিতে হয়। বৈশেষিকদর্শনে বৌদ্ধমতের বিশেষ ভাবে উল্লেখ ও বেদান্তমতের উল্লেখ না থাকায় এবং মহাভারত প্রভৃতি গ্রন্থে উলূক ঋষির নাম থাকায় উলূক-প্রণীত বৈশেষিককে ইংরাজি হিসাবেও তিনসহস্র বৎসরের পূর্ব্ববর্ত্তী বলিতে হয়। ফলতঃ গৌতম অক্ষপাদ (ন্যায়দর্শনপ্রণেতা) এবং উলূক উভয়ে সমসাময়িক। উভয়েই শিবাবতার সোমশম্মার শিষ্য, অক্ষপাদ প্রথম শিষ্য এবং উলূক তৃতীয় শিষ্য। প্রমাণ লিঙ্গপুরাণে আছে, যথা—

“জাতুকণো যদা ব্যাসো ভবিষ্যতি তপোধনঃ।
তদাপ্যহং ভবিষ্যামি সোমশৰ্ম্মা দ্বিজোত্তমঃ।।
অক্ষপাদঃ কুমারশ্চ উলূকো বৎস এব চ।
তত্রাপি মম তে শিষ্যা ভবিষ্যন্তি তপোধনাঃ।।” ২৪শ অঃ।

এ পর্য্যন্ত বৈশেষিক-সূত্রাবলম্বনে যে কত ভাষ্য, টীকা, টিপ্পনী হইয়াছে, তাহার ইয়ত্তা নাই, নামে তাহাদিগের সাময়িক সত্তা অনুভূত হইলেও এক্ষণে অনেক গ্রন্থই দুর্লভ। ন্যায়কন্দলী বঙ্গীয় ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতের সম্ভবতঃ প্রথম দার্শনিক গ্রন্থ, তাহা এই বৈশেষিক আশ্রয় করিয়াই হয়,—শঙ্করমিশ্রকৃত বৈশেষিকের উপস্কার টীকা ন্যায়কন্দলীর পরে বিরচিত। শঙ্করমিশ্র চিন্তামণিপ্রণেতা গঙ্গেশোপাধ্যায়ের পরবর্ত্তী এবং পক্ষধর মিশ্রাদির পূর্ব্ববর্ত্তী; চিন্তামণিমতে শঙ্কর যে দোষ দিয়াছেন, তাহা পক্ষধর মিশ্রের টীকার বা তচ্ছাত্র রুচিদত্তের প্রকাশনাম্নী টীকার কোথাও উদ্ধৃত হইয়াছে, রঘুনাথ শিরোমণির অধ্যাপক পক্ষধর মিশ্র গৌরাঙ্গদেবের সমকালিক; সুতরাং কিঞ্চিদধিক ৪০০ বৎসরের পূর্ব্ববর্ত্তী। শঙ্করের সময় আনুমানিক ৫০০ বৎসর। উপস্কার-রচয়িতা মহামহোপাধ্যায় শঙ্করমিশ্র বহু-গ্রন্থ-প্রণেতা। এই উপস্কারনাম্নী টীকা এক্ষণে গবর্ণমেণ্টস্থাপিত প্রাচীন ন্যায়ের উপাধি পরীক্ষায় পাঠ্যগ্রন্থ। বৈশেষিক-দর্শনের ব্যাখ্যাগ্রন্থের মধ্যে এই টীকার বিশেষ আদর আছে। পরন্তু এই টীকাও স্থানে স্থানে বিশেষ দুরূহ এবং প্রচুর-ভাবগর্ভ অথচ সংক্ষিপ্ত। বিশেষতঃ পূৰ্ব্বতন আচার্য্যগণের সিদ্ধান্ত এবং শিরোমণি সম্প্রদায়ের সিদ্ধান্ত এক নহে। স্বয়ং শিরোমণি এক স্থানে গৰ্ব্ব করিয়া বলিয়াছেন-

“বিদুষাং নিবহৈৰ্যদৈকমত্যাদ্যদদুষ্টং নিরণায়ি যচ্চ দুষ্টম্।
ময়ি জল্পতি কল্পনাধিনাথে রঘুনাথে মনুতাং তদন্যথৈব।।”

অর্থাৎ পণ্ডিতমণ্ডলী একবাক্যে যে মত ভ্রান্ত এবং যে মত অভ্রান্ত বলিয়া মানিয়া আসিয়াছেন, এই কল্পনারাজ্যের অধীশ্বর রঘুনাথশর্ম্মা বিচার-প্রবৃত্ত হওয়ায় ভ্রান্ত মত, অভ্রান্ত এবং অভ্রান্ত মত, ভ্রান্ত বলিয়া প্রতিপন্ন হইয়াছে।

অতএব বর্ত্তমান সময়ের নৈয়ায়িকগণের অনেকেই পূৰ্ব্বর্তন বিরুদ্ধ পদার্থ গ্রহণে ভীত হইয়া শঙ্করটীকা—স্থানে স্থানে হৃদয়ঙ্গম করিতে অক্ষম হন। আমি অক্ষম হইলেও শ্রী শ্রী ভগবানের এবং শ্রী শ্রী গুরুসম্প্রদায়ের কৃপার উপর নির্ভর করিয়া শঙ্করমিশ্রকৃত উপস্কার-টীকার পরিষ্কার-নাম্নী ব্যাখ্যা লিখিয়াছি। কঠিন ও জটিল অংশসমূহ-পরিষ্কারই এই টীকার উদ্দেশ্য। শঙ্করমিশ্রকৃত টীকোপরি যে সকল অযথা দোষ অর্পিত হইয়া থাকে, তাহার উদ্ধারার্থ এবং শঙ্কর-মিশ্রপ্রদত্ত চিন্তামণি-মতোপরি দোষের উদ্ধারার্থ আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছি। কেবল প্রথম কতিপয় স্থানে সুপ্রসিদ্ধ চিন্তামণি- মতোদ্ধারে,—বিশেষ আবশ্যক বোধ না হওয়ায়—বিরত হইয়াছি। নৈয়ায়িকগণ এই পরিষ্কার-সাহায্যে উপস্কার-চর্চ্চা করিয়া যদি আংশিক উপকার প্রাপ্ত হন, তাহা হইলে আমি আমাকে চরিতার্থ জ্ঞান করিব।

সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্য বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা প্রদত্ত হইয়াছে। এই অনুবাদ ও ব্যাখ্যা নিয়মতঃ কোন প্রাচীন টীকাবিশেষের অনুসারে প্রণীত হয় নাই। মহর্ষি কণাদের সরল সূত্রের ভাব সহজে যেরূপ হৃদয়ঙ্গম হয়—তাহাই অনুবাদ ও ব্যাখ্যায় গৃহীত হইয়াছে। তবে অনেক স্থলে পৃথকভাবেও উপস্কার-মত প্রদর্শিত হইয়াছে। আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে সূত্রের যে সরলার্থ প্রতিভাত হইয়াছে, পরিষ্কার টীকাতেও অনেক স্থানেই তাহার উল্লেখ করিয়াছি। সূত্রস্থিত পদের অর্থ ব্যতীত পূরণীয় অর্থ গ্রহণ করিবার প্রয়োজন হইলে অনুবাদমধ্যে ( ) চিহ্ন ব্যবহার করিয়া তন্মধ্যে পূরণীয় অংশ সন্নিবেশিত করিয়াছি। কোন স্থলে বা সূত্রস্থ পদার্থ সরল করিবার জন্য ( ) চিহ্নমধ্যে বিশদার্থ সন্নিবেশিত করিয়াছি। ব্যাখ্যায় বিচার ও ভাব বর্ণনাদি আছে। বহু পরিশ্রমে কিন্তু অতি সত্বরতায় সৰ্ব্ব-সাকল্যে কিঞ্চিদধিক ৩ মাসের মধ্যে এই দুরূহ গ্রন্থের ব্যাখ্যা প্রণয়ন ও সম্পাদন করিলাম। সহৃদয় পাঠকগণ যদি কোন দোষ প্রাপ্ত হন, তাহা হইলে অনুগ্রহপূৰ্ব্বক তাহা আমাকে জানাইলে বাধিত হইব।

বৈশেষিক দর্শন দশ অধ্যায়ে বিভক্ত; প্রত্যেক অধ্যায়ে দুইটি করিয়া আহ্নিকনামক পরিচ্ছেদ। সমগ্র গ্রন্থের উদ্দেশ্য ধর্মফল-তত্ত্বজ্ঞান, তত্ত্বজ্ঞানের ফল— মুক্তি। বৈশেষিক-প্রণেতার মতে জড়পদার্থের তত্ত্বজ্ঞানও তত্ত্বজ্ঞান, আত্মতত্ত্ব— জ্ঞান ও তত্ত্বজ্ঞান—যাহা সত্যজ্ঞান তাহাই তত্ত্বজ্ঞান। সৰ্ব্বত্র তত্ত্বজ্ঞান না হইলে মুক্তি হয় না। কেন না জড়পদার্থের তত্ত্বজ্ঞান ব্যতীত আত্মতত্ত্ব-জ্ঞান হয় না, আর আত্মজ্ঞান ব্যতীত যে মুক্তি হয় না, ইহা সকলেই স্বীকার করেন।

বেদান্ত-দর্শনে জড়তত্ত্ব উপেক্ষিত; বৈশেষিকে আদৃত; এই জন্য বৈশেষিক বিবিধ জড়তত্ত্ব শিক্ষা প্রদান করিয়াছেন। সে সমস্ত উল্লেখ এই স্থলে নিষ্প্রয়োজন। প্রথমে সংক্ষেপে বিষয়জ্ঞান করিতে ইচ্ছা হয়, সূচীপত্র পাঠ করুন।

অপর বিশেষ বক্তব্য এই—শীর্ষদেশে অধ্যায়নির্দেশাদির ত্রুটি যথেষ্ট আছে। যথা—৬৮ পৃঃ ১৭পং ‘দ্বিতীয়াধ্যায়ে দ্বিতীয়াহ্নিকম্’ আছে, তাহা ‘প্রথমাধ্যায়ে দ্বিতীয়াহ্নিকম্’ হইবে। তাহার পর ৯৮ পৃঃ পর্য্যন্ত পত্রের শীর্ষদেশে ‘দ্বিতীয়াধ্যায়ে দ্বিতীয়াহ্নিকম্’ বা ‘প্রথমাধ্যায়ে প্রথমাহ্নিকম্’ যাহাই কেন থাকুক না ‘প্রথমাধ্যায়ে দ্বিতীয়াহ্নিকম্’ হইবে। এতভিন্ন ১১২ পৃঃ ২ পং “নায়নমিতি চামীকরস্থাদ্যুপলক্ষকম্’ আছে; তাহা উঠিয়া যাইবে। ২১৫ পৃঃ ১৭ পং এবং ২১৭ পৃঃ ৪ পং প্রভৃতি স্থানে ‘তর্কাভাসা’ আছে। ‘তর্কাভাবা’ হইবে। এইরূপ পত্রাঙ্কে ৩৬২ পর ৬৩৩ আছে—পরন্তু ৩৬৩ হইবে, এবং ৩৮৪ পত্রের পরেই ৬৮৫ আছে এ স্থলে ৩৮৫ হইবে। এইরূপ স্থূল প্রমাদ পাঠকগণ পাঠকালে অনুগ্রহপূর্ব্বক সংশোধন করিয়া লইবেন। এইরূপ ভ্রমসংশোধন যাঁহাদের কর্তব্য, তাঁহাদের ত্রুটি দর্শনে আমিই দুঃখ প্রকাশ করিতেছি।

আজ আমার কল্যাণভাজন পরমসহায় “যোগেন্দ্রচন্দ্র নাই। তাঁহার সমাদরের দর্শনগ্রন্থ, তাঁহার জীবিতকালে, শ্রাবণ মাসে আরব্ধ এই মহাগ্রন্থ তাঁহার অকালমরণে ভাদ্র মাস হইতে ফাল্গুন মাস পৰ্য্যন্ত ব্যাহত হইয়াছিল। আজ সেই ক্ষোভ দূর করিবার জন্য তাঁহার সুযোগ্য পুত্র পরমকল্যাণীয় শ্রীমান্ বরদাপ্রসাদ বসু সহস্র বাধা-বিঘ্ন সহ্য করিয়াও অদম্য উৎসাহে বহু ব্যয়ে এই দর্শনশাস্ত্র দুই মাসের মধ্যে প্রকাশ করিলেন। এ ঘটনা অরুন্তুদ দুঃখ এবং সাময়িক আনন্দের পরিচায়ক। আশীর্ব্বাদ করি, শ্রীমান্ বরদাপ্রসাদ তাঁহার স্বর্গীয় পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া এমনই সোৎসাহে শাস্ত্রগ্রন্থাদি- প্রকাশে ও বিবিধ কীৰ্ত্তি অর্জ্জনে সক্ষম হউন। ইতি। শকাব্দাঃ ১৮২৮। ৩১শে বৈশাখ।

সম্পাদক
শ্রীপঞ্চানন তর্করত্ন
ভট্টপল্লী (ভাটপাড়া), ২৪ পরগণা।

.

সম্পাদকীয় প্রস্তাবনা

বিভিন্ন মত ও পথকে অবলম্বন করে বিভিন্ন দর্শনশাস্ত্র প্রচারিত হয়েছে। বিভিন্নতার মূলে আছে বহুমুখী উপলব্ধি। উপলব্ধির স্বাতন্ত্র্যে এবং মননের উৎকর্ষে সকল দর্শনসম্প্রদায় আপন-আপন বিভায় সমুজ্জ্বল। ভারতীয় দর্শনের বিবিধ সম্প্রদায়কে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে—(ক) আস্তিক ও (খ) নাস্তিক। আস্তিক ও নাস্তিক শব্দ দুটি সাধারণ অর্থে প্রযুক্ত হয়নি। আমরা সাধারণত আস্তিক বলতে বুঝি ঈশ্বরে বিশ্বাসী এবং নাস্তিক বলতে বুঝি ঈশ্বরে অবিশ্বাসী। দর্শনশাস্ত্রে কিন্তু শব্দ দুটি এই অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। ভারতীয় দর্শনে আস্তিক বলতে তাঁদেরকেই বোঝায় যাঁরা বেদকে প্রমাণ বলে স্বীকার করেন। পক্ষান্তরে যাঁরা বেদের প্রামাণ্যে অবিশ্বাসী তাঁরা হলেন নাস্তিক ‘নাস্তি বেদোদিতো লোক ইতি যেষাং মতিঃ স্থিরা/নাস্তিকাস্তে তথাস্তীতি মতিঘেঁষাং ত আস্তিকাঃ’ (সর্বদর্শনসংগ্রহ, দর্শনাঙ্কুর টীকা)। এখানে ঈশ্বর বিশ্বাসের সঙ্গে আস্তিক ও নাস্তিক শব্দের যোগ নেই। এজন্য সাংখ্য ও মীমাংসাদর্শনে ঈশ্বর স্বীকৃত না হলেও বেদের প্রামাণ্য স্বীকৃত হওয়ায় আস্তিক ষড়দর্শনের মধ্যে এই দুটি দর্শন স্থান পেয়েছে। ভারতীয় দর্শনে আস্তিক দর্শনসম্প্রদায় ছয়টি যথা— ন্যায়, বৈশেষিক, সাংখ্য, যোগ, মীমাংসা ও বেদান্ত। ছয়টি আস্তিক দর্শনের মধ্যে অন্যতম মহর্ষি কণাদ-কৃত বৈশেষিক দর্শনের সূত্রগ্রন্থটিকে শ্রীশঙ্করমিশ্রকৃত উপস্কার টীকা সহ সম্পাদনার শিবসঙ্কল্প গৃহীত হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য শ্রীপঞ্চানন তর্করত্ন ভট্টাচার্য উপস্কার টীকার কঠিন ও জটিল অংশসমূহকে পাঠকের দরবারে সরলভাবে তুলে ধরতে সংস্কৃত ভাষায় ‘পরিষ্কার’ নামক ব্যাখ্যা রচনা করেছিলেন। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় হল, গ্রন্থের আয়তন বৃদ্ধি, অর্থাভাব এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্তির অভাববশত উক্ত ব্যাখ্যাগ্রন্থ পাঠকের দরবারে উপস্থাপিত করা গেল না। এজন্য সম্পাদক ক্ষমাপ্রার্থী।

শোনা যায়, সূত্রগ্রন্থকার মহর্ষি কণাদ শস্যকণা সংগ্রহ করে জীবনধারণ করতেন— তাই তাঁর নাম কণাদ ‘তস্মৈ কণভুজে নমঃ’। কণাদ যে কণভক্ষণকারী আচার্য শঙ্কর বেদান্তসূত্রের ব্যাখ্যায় তা ব্যক্ত করেছেন ‘ইতি হি কাণভুজানি সূত্রাণি’ (শারীরক ভাষ্য, ২।২।১১)। এই প্রসঙ্গে আচার্য গুণরত্ন তাঁর তর্করহস্যদীপিকায় বলেছেন “ মুনিবিশেষস্য কাপোতী বৃত্তিমনুষ্ঠিতবতো রথ্যানিপতিতাংস্তণ্ডুল- কণানাদায়াদায় কৃতাহারস্যাহারনিমিত্তাৎ কণাদ ইতি সংজ্ঞাজনি’ (পৃঃ ২৬৬)। কণাদের নামান্তর কণভক্ষ, কণভুক্, কাশ্যপ, উলূক। কণাদ পরমাণুর বিষয়ে বিশেষ আলোচনা করেছিলেন বলেই প্রতিবাদিগণ তাঁকে কণাদ বলে উপহাস করতেন—এরকম জনশ্রুতিও রয়েছে। অণু বা কণ যে বৈশেষিক দর্শনের বিশেষত্ব তা বাদরায়ণসূত্রে এবং ধর্মোত্তর রচিত ন্যায়বিন্দুর টীকার (পৃঃ ৮৬) প্রামাণ্যে সমর্থিত হয়। অনুসন্ধিৎসু বিদ্যার্থী ‘পরমাণুজগৎকারণত্বাধিকরণম্’ (২।২। ১২-১৭) সূত্র ও ভাষ্যে দৃষ্টি দিলে উপকৃত হন। শঙ্কর তো জানিয়েই দিয়েছেন বৈশেষিকের অভিপ্রায় ‘ন চ অকারণেন কার্য্যেণ ভবিতব্যম্ ইতি অতঃ পরমাণবঃ জগতঃ কারণম্ ইতি কণভুগভিপ্রায়ঃ” (শারীরক ভাষ্য, ২।২।১২)।

অপর মতানুসারে শিবোপাসক উচ্চস্তরের এই যোগীর তপস্যায় প্রীত হয়ে স্বয়ং শিব উলূক রূপে আবির্ভূত হয়ে তাঁকে বৈশেষিক সূত্র রচনার জন্য আদেশ করেন ‘তস্য কণাদস্য মুনেঃ পুরঃ শিবেনোলূকরূপেণ মতমেতৎ প্রকাশিতম্’ (তর্করহস্যদীপিকা টীকা, পৃঃ ২৬৬)। সর্বদর্শনসংগ্রহে মাধবাচার্য বৈশেষিক দর্শনকে ‘ঔলূক্যদর্শন’ বলেছেন। পাঠক দর্শনাঙ্কুর টীকায় নজর দিতে পারেন ‘তপস্বিনে কণাদমুনয়ে স্বয়মীশ্বর উলূকরূপধারী প্রত্যক্ষীভূয় পদার্থমুপদিদেশেত্যপ্যৈতিহ্যং শ্রয়তে। ততোহপ্যস্য দর্শনস্যৌলুক্যদর্শনমিতি প্রসিদ্ধিঃ’ (পৃঃ ৩৩৩, ভারতীয়কলা প্রকাশন)। কণাদ ছিলেন কশ্যপগোত্রজাত ‘কশ্যপগোত্রোৎপন্নোহয়মিত্যাহুঃ’। আবার অনেকের ধারণা, বিশেষ নামক পদার্থ গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হওয়ায় এই দর্শনকে বৈশেষিক দর্শন বলা হয়। এ প্রসঙ্গে শ্রীপঞ্চানন ভট্টাচার্য তর্করত্ন কৃত ১।২।৬ বৈশেষিক সূত্র ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য। আবার অনেকের মতে, সূত্রকার যেহেতু পশুপতির ভক্ত ছিলেন সেহেতু তাঁর সূত্রিত মতকে পাশুপতও বলা যেতে পারে ‘পশুপতিভক্তত্বেন পাশুপতং প্রোচ্যতে (তর্করহস্যদীপিকা, পৃঃ ২৬৬)।

কণাদ-কৃত বৈশেষিকসূত্র গ্রন্থের রচনাকাল নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থাকলেও গ্রন্থটিকে প্রাক্-বৌদ্ধযুগের বলে অনেকে মনে করেন। ড. সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের মতে, বৈশেষিক সূত্রগুলি চরকেরও পূর্বে রচিত হয়েছিল। আত্মার নাস্তিত্ব বিষয়ে সূত্রে কোন উল্লেখ না থাকায় সূত্রগুলি বৌদ্ধদর্শনের পূর্ববর্তী বলে মনে করা হয় ‘These considerations as well as the general style of the work and the methods of discus- sion lead me to think that these sūtras are probably the oldest that we have and in all probability are pre-Buddhistic’ (A History of Indian Philosophy p. 2৪2).

অনেকে আবার ন্যায় ও বৈশেষিকসূত্রের ভাষাবন্ধন ও গ্রন্থনা পারিপাট্য পর্যালোচনা করে বৈশেষিক সূত্রকে পূর্ববর্তী বলেছেন। বৈশেষিকের অনুমানপ্রাণালী সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে। পক্ষান্তরে ন্যায়দর্শনে এ ব্যাপারে বিস্তৃত আলোচনা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বৈশেষিকসূত্রে হেত্বাভাসের সংখ্যা তিন যথা অপ্রসিদ্ধ, অসৎ এবং সন্দিগ্ধ ‘অপ্রসিদ্ধোহনপদেশোঽসন্ সন্দিগ্ধশ্চানপদেশঃ’ (বৈশেষিকসূত্র ৩।১।১৫)। পক্ষান্তরে ন্যায়দর্শনে হেত্বাভাসের সংখ্যাধিক্য নজরে আসে। চন্দ্রকান্ততর্কালঙ্কার বলেন, যদি ন্যায়দর্শনের পরে বৈশেষিক প্রচারিত হত তবে অবশ্যই নৈয়ায়িক সমর্থিত হেত্বাভাসের সংখ্যাধিক্য খণ্ডনপূর্বক ত্রিত্ব প্রতিষ্ঠিত হত। মহাভারতে ভীষ্মের স্তবকালে উলূক নামক মুনির উল্লেখ আছে। আবার ‘ন বয়ং ষট্‌পদার্থবাদিনো বৈশেষিকাদিবৎ’ এই সাংখ্যসূত্র হতেও বৈশেষিকদর্শন যে সাংখ্য অপেক্ষা প্রাচীন তা উপলব্ধ হয়। সঠিক কালনির্ণয় সম্ভব না হলেও বৈশেষিকসূত্র গ্রন্থের প্রাচীনত্ব সংশয়াতীত। অনুতাপের বিষয় হল, সূত্রগ্রন্থের উপর রচিত ভরদ্বাজের বৃত্তিগ্রন্থ এবং রাবণকৃত রাবণভাষ্য কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে।

অক্ষপাদসূত্রের ন্যায় কণাদের বৈশেষিকসূত্রের নির্দিষ্টভাবে তালিকাকরণে বাচস্পতি মিশ্র (১) বা বাচস্পতি মিশ্র (২) সদৃশ আচার্যবৃন্দ কেউই কোন ভূমিকা নেন নি। ফলে ন্যায়সূত্রে সংগ্রাহকের কাজ যেভাবে ন্যায়সূচীনিবন্ধে বা ন্যায়সূত্রোদ্ধারে লক্ষ্য করা গিয়েছে সেভাবে সুনির্দিষ্ট পন্থায় এখানে কাজ না হওয়ার জন্য সমস্যা থেকেই গিয়েছে। আধুনিক পণ্ডিতেরা সূত্রপাঠে বিভিন্ন সময় পরিবর্তন এবং পদবর্জনের আশঙ্কা করেছেন। বিশেষত মহামহোপাধ্যায় ড. কবিরাজ এবং পণ্ডিত টি. বীররাঘবাচার্য এ ব্যাপারে বহু অনিয়মের তথ্য পরিবেশন করেছেন বলে শোনা যায়। সোমদেবের যশস্তিলকচম্পূ অনুসারে বৈশেষিকেরা দুটি শ্রেণীতে বিন্যস্ত ছিল যথা (ক) সিদ্ধান্তিক ও (খ) তার্কিক। মোক্ষ প্রসঙ্গে এদের বৈমত্য ছিল। সাংখ্যগ্রন্থ যুক্তিদীপিকার মতে, বৈশেষিকশাস্ত্রে জগন্নিয়ন্তা পরমেশ্বরের কল্পনা পাশুপত প্রভাবকেই সূচিত করে। উক্ত আলোচনা থেকে প্রাচীন বৈশেষিক দর্শনের মধ্যে সম্প্রদায়ভিন্নতা প্রতিপাদিত হলেও সূত্রধারার কোন ভিন্নতা ছিল কিনা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।

মহামহোপাধ্যায় অনন্তলালঠাকুর তাঁর সম্পাদিত বৈশেষিকদর্শন-এর ভূমিকায় (১৯৫৭) জানিয়েছেন “The Sutrapātha must have been Vitiated in course of time. Interpolations and omissions have been detected in the current Vaisesika sūtra tradition.’ গায়কোয়াড় ওরিয়েন্টাল গ্রন্থমালার ১৩৬তম সংখ্যায় কণাদ-কৃত বৈশেষিকসূত্রগ্রন্থের চন্দ্রানন্দ বিরচিত প্রাচীন বৃত্তি সম্পাদিত হয়েছে। উক্ত গ্রন্থের ভূমিকায় মহামহোপাধ্যায় অনন্তলালঠাকুর পাঠককে মনে করিয়ে দিয়েছেন কণাদ-কৃত সূত্রসমূহ দীর্ঘদিন অবহেলিত হয়েছে। বিভিন্ন সংগৃহীত উপাদান থেকে মনে করা চলে যে, শঙ্করমিশ্রও সূত্র বিশ্লেষণের বেলায় যথাযথভাবে বৈশেষিক পরম্পরা অক্ষুণ্ন রাখেন নি। ফলে শঙ্করের সূত্রবিন্যাস ও ত্রুটিমুক্ত নয় ‘The materials available from various sources now point out that Śankara does not always preserve the ancient Vaiśeṣika tradition and his Sūtrapātha is also defective.’

উল্লেখ্য হল, শঙ্কর মিশ্র চন্দ্রানন্দের বৃত্তিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। উপস্কার টীকার সূচনাতেই তিনি জানিয়েছেন যে, তিনি কেবল সূত্রকে উপজীব্য করেই টীকা রচনায় ব্রতী হয়েছেন ‘সূত্রমাত্রাবলম্বেন নিরালম্বেঽপি গচ্ছতঃ/ খে খেলবন্মমাপ্যত্র সাহস সিদ্ধিমেষ্যতি’।। বৃত্তিকার চন্দ্রানন্দ এবং ব্যাখ্যাকার ভট্টবাদীন্দ্রের সঙ্গে শঙ্করমিশ্রের পারস্পরিক পাঠান্তর অনুসন্ধিৎসু বিদ্যার্থী পূর্বকথিত গায়কোয়াড় ওরিয়েন্টাল গ্রন্থমালার সংস্করণে মনোযোগ দিলেই জানতে সক্ষম হন।

আমরা জানি বৈশেষিকসূত্রগুলি সাকুল্যে দশটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত এবং এগুলির প্রত্যেকটি অধ্যায়ে আবার দুটি করে আহ্নিক বর্তমান। কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, চন্দ্রানন্দকৃত বৃত্তির প্রথম থেকে সপ্তম অধ্যায় দুটি করে আহ্নিকে বিভক্ত হলেও অষ্টম- দশম অধ্যায়গুলিতে উক্ত বিভাজন নেই। তবে বর্তমান সম্পাদিত গ্রন্থে পঞ্চাননতর্করত্ন মশাইয়ের প্রদর্শিত মার্গ অনুসৃত হয়েছে। একারণে গ্রন্থের শেষে পরিবেশিত অকারাদি বর্ণানুক্রমে সূত্র নির্দেশনায় এই গ্রন্থই অবলম্বিত হয়েছে।

নব্যবৈশেষিক শঙ্করমিশ্র দ্বারভাঙ্গার কৃতী সন্তান। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগকে এই মহান আচার্যের সময়কাল বলে প্রাচ্যতত্ত্ববিৎ সতীশচন্দ্রবিদ্যাভূষণ মনে করেছেন ‘He lived towards the close of the fifteenth century’ (A History of Indian Logic, p. 459). পিতা ভবনাথমিশ্রের উপদেশ তিনি তাঁর বিবিধ গ্রন্থের উপস্থাপনায় সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেছেন। উপস্কারটীকার সূচনায় তিনি জানিয়েছেন—

যাভ্যাং বৈশেষিকে তন্ত্রে সম্যগ্ ব্যুৎপাদিতোহস্ম্যহম্।
কণাদভবনাথাভ্যাং তাভ্যাং মম নমঃ সদা।।

ন্যায়বৈশেষিক দর্শনের টীকাকার রূপে তাঁর ব্যুৎপত্তি দর্শনচর্চায় নিবিষ্ট গবেষকমাত্রেই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হল (১) পণ্ডিতবিজয় (২) আত্মতত্ত্ববিবেককল্পলতা (৩) আনন্দবর্ধন (৪) তত্ত্বচিন্তামণিময়ূখ (৫) ত্রিসূত্রীনিবন্ধব্যাখ্যা (৬) ন্যায়লীলাবতীকণ্ঠাভরণ (৭) ভেদপ্ৰকাশ (৮) গৌরীদিগম্বরপ্রহসন (৯) বৈশেষিকসূত্রোপস্কার (১০) বাদিবিনোদ (১১) বৌদ্ধধিক্কারটীকা (১২) অভেদধিক্কার। উক্ত গ্রন্থগুলি ছাড়াও তিনি স্মৃতিশাস্ত্রকে উপজীব্য করে তিনটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন বলে শোনা যায় ( A History of Indian Logic. p. 459 )।

বৈশেষিকদর্শনের উপস্কারটীকায় শঙ্করমিশ্র ধর্মকীর্তি ও দিনাগের উল্লেখ করেছেন। সবিকল্পকজ্ঞানের প্রামাণ্য বৌদ্ধসম্প্রদায়ের আচার্যদ্বয় যে স্বীকার করেননি সেই প্রসঙ্গে আলোকপাত করতে গিয়ে বলা হয়েছে ‘সবিকল্পকং জ্ঞানং ন প্রমাণমিতি কীর্তি-দিঙ্কাগাদয়ঃ’ (৮।১।২) দিাগের অনেক পরবর্তী ধর্মকীর্তিই যে এখানে কীর্তি নামে উল্লিখিত হয়েছেন। তা আমরা পণ্ডিত ফণিভূষণতর্কবাগীশ সম্পাদিত ন্যায়দর্শন গ্রন্থে জেনেছি।

নীতিবিজ্ঞানের চর্চায় ব্রতী অধ্যেতা ষষ্ঠ অধ্যায়ের প্রথম আহ্নিকে ৬।১।১৩-১৬ সূত্র এবং তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে দৃষ্টি দিলে উপকৃত হন। এখানে সমাজশুদ্ধির তাগিদে বৃহত্তর স্বার্থে অশাস্ত্রীয় নিন্দিত কর্মানুষ্ঠানকারী ব্যক্তি একই পরিবারভুক্ত হলেও তার সংসর্গ পরিহারের জন্য উদাত্ত আহ্বান ঘোষিত হয়েছে তথা বিরুদ্ধানাং ত্যাগঃ’ ‘হীনে পরে ত্যাগঃ’ ‘সমে আত্মত্যাগঃ পরত্যাগো বা’ (৬। ১। ১৩-১৫ সূত্র ও টীকা দ্রষ্টব্য)। উক্ত সকল ক্ষেত্রে পরিষ্কার জানানো হয়েছে, দুর্জনকে পরিত্যাগ করতেই হবে। ভারতীয়দর্শনের চিরন্তনী শিক্ষা হল ‘সংযম’। যোগদর্শন-বর্ণিত যমাদির শিক্ষা সুবিদিত। বৈশেষিকসূত্রকার কণাদ সেই চিরন্তনমার্গ নির্দেশ করেছেন ষষ্ঠ অধ্যায়ে ৬। ২। ৮ সূত্রে। শঙ্করমিশ্র মনে করিয়েছেন ‘যমরহিতস্যাসংযতস্য’ দুর্গতি অপ্রতিরোধ্য।

দ্বিত্বসংখ্যার উৎপত্তি প্রক্রিয়ায়, পাকজগুণের উৎপত্তি প্রক্রিয়ায় ও বিভাগজন্য বিভাগের উৎপত্তি প্রক্রিয়ায় বৈশেষিকের অভিনিবেশ লক্ষ্য করা যায় সপ্তম অধ্যায়ের প্রথম ও দ্বিতীয় আহ্নিকে। যেমন শঙ্করমিশ্র তাঁর উপস্কারটীকায় ৭।১।৬ সূত্রব্যাখ্যায় ‘পাকজপ্রক্রিয়া’র দীর্ঘ চর্চা করেছেন ‘ইদানীং প্রসঙ্গাৎ পাকজপ্রক্রিয়া চিন্ত্যতে’। পিঠরপাকবাদী এবং পীলুপাকবাদীর স্বাতন্ত্র্যচিন্তন পরিবেশিত হয়েছে “ত কার্যকারণসমুদায় এব পচ্যতে ইতি পিঠরপাকবাদিনঃ। পীলবঃ পরমাণব এব স্বতন্ত্রাঃ পচ্যন্তে। তত্রৈব পূর্বরূপনাশাগ্রিমরূপাদ্যুৎপত্তিঃ কারণগুণপ্রক্রমেণ চাবয় বিনি রূপাদ্যুৎপদ্যতে ইতি পীলুপাকবাদিনঃ’ (উপস্কারটীকা, পৃঃ ২০৯ দ্রষ্টব্য)। সাংখ্যসম্মত সৎকার্যবাদ নিরাকৃত হয়েছে ‘কার্য্যকারণয়োরেকত্বৈক…… ন বিদ্যতে (৭।২।৭)। উপস্কারটীকায় শঙ্করমিশ্র সাংখ্যমত উল্লেখপূর্বক খন্ডন করেছেন এবং স্বসিদ্ধান্ত জ্ঞাপন করেছেন।

প্রসঙ্গত মহামহোপাধ্যায় পঞ্চাননতর্করত্ন-কৃত ব্যাখ্যা বিষয়ে কিছু কথাও আবশ্যক, হয়ে পড়ে। তাঁর মননসমৃদ্ধ উপস্থাপনা আমাদের আজও বিস্মিত করে। তিনি বিরুদ্ধবাদীর সঙ্গে শব্দের অনিত্যতা নিয়ে আলোচনায় প্রতিপক্ষীকে কোনঠাসা করতে ‘আক্রমণ’ শব্দটিও প্রয়োগ করতে দ্বিধা করেননি। যেমন— ‘এই হইল, যাহারা শব্দ নিত্য বলেন, তাহাদের উপর প্রথম আক্রমণ’ (২।২।৩০ দ্রষ্টব্য)। আক্রান্ত মীমাংসক আত্মরক্ষার উপায় অন্বেষণে তৎপর। শতাব্দী-প্রাচীন ঐতিহ্যের এই চাপান-উতোর আমাদের অনুসন্ধিৎসাকে উজ্জীবিত করে।

দর্শনের আলোচনাতেও লোকব্যবহার নিয়ে দৃষ্টান্ত দেবার চিরন্তনী রীতি পঞ্চানন-তর্করত্নের ব্যাখ্যায় পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সুখদায়ক কাজে জীবের প্রবৃত্তি এবং দুঃখদায়ক কাজে জীবের নিবৃত্তির সপক্ষে তর্করত্নমশাই যখন বলেন ‘চাকুরে ডেলিপ্যাসেঞ্জারের ভাত মুখে দিয়া গাড়ির জন্য দৌড়াদৌড়ি, আর পাওনাদারের দোকানের পথে গা-ঢাকা দেওয়া দেখিলেই প্রবৃত্তি, নিবৃত্তি বুঝা যায়’। তখন পাঠক সহজেই আত্মার অনুমাপক উলপব্ধিতে সক্ষম হন (৩।১।১৯ ব্যাখ্যা)। চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম আহ্নিকে তৃতীয় সূত্রের ব্যাখ্যায় প্রতিপক্ষী বৌদ্ধকে উপস্থাপন করে পরবর্তীকালে (৪।১।৫) খণ্ডন চিরাচরিত দর্শনরীতিকেই মর্যাদাদান। আকস্মিকত্ববাদী যাতে মাথা তুলতে না পারেন সেজন্য তর্করত্নমশাই চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি (৪।১।১০)।

পাশ্চাত্যজ্ঞাননির্ভর আত্মসংস্কৃতিবিমুখ সম্প্রদায়কে ক্ষেত্রবিশেষে তিনি একহাত নিয়েছেন। যারা বলে থাকেন প্রাচীন মহর্ষি সম্প্রদায় বাহ্যজগতের তত্ত্বনির্ণয়ে উদাসীন এবং অসমর্থ, যারা বলেন প্রাচীন মহর্ষিগণ কল্পনাবিলাসী এবং মিথ্যাবাদী তাদের অজ্ঞতা ধিক্-কৃত হয়েছে (পৃঃ ১৭৪ দ্রষ্টব্য)। ‘অপাং সংযোগাদ্বিভাগাচ্চ স্তনয়িত্নোঃ’ (৫।২।১১) সূত্রব্যাখ্যায় ব্রতী মহামহোপাধ্যায় বজ্রনির্ঘোষের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে হৃদয়ের চাপা আনন্দ গোপন রাখতে পারেননি। ক্ষেত্রবিশেষে তিনি জানিয়েছেন, কার্যকারণবাদের তত্ত্বে বিশ্বাসী যারা, তারা স্বভাববাদে বিশ্বাসী তাত্ত্বিকদের অপেক্ষা উন্নততর।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.ফিল (সংস্কৃত) শ্রেণীতে ন্যায়-বৈশেষিক দর্শনশাস্ত্রের বিশেষ বিভাগে কণাদ-কৃত বৈশেষিকসূত্র গ্রন্থটি উপস্কারটীকা সহ পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এম.ফিলের সূচনা থেকেই আমার ওপরে এই বিশেষ গ্রন্থটি পড়ানোর দায়িত্ব অর্পিত হওয়ায় এবং মুদ্রিত গ্রন্থ না থাকায় যে অবর্ণনীয় কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে তা বলাই বাহুল্য।

গ্রন্থের শেষে পরিশিষ্ট (ক) অংশে কণাদ-কৃত সূত্রগুলি অকারাদি বর্ণানুক্রমে নির্দেশিত হয়েছে। পরিশিষ্ট (খ) অংশে উপস্কারটীকায় উল্লিখিত গ্রন্থকার ও গ্রন্থের সূচী সন্নিবিষ্ট হয়েছে। পরিশিষ্ট (গ) অংশে শ্রীপঞ্চাননতর্করত্নভট্টাচার্য-কৃত ব্যাখ্যায় উল্লিখিত গ্রন্থকার ও গ্রন্থের নির্বাচিত সূচী প্রদত্ত হয়েছে।

অথ ঋণ স্বীকার। প্রথমেই নাম করতে হয়, আমার আচার্যদেব দণ্ডিস্বামী ব্রহ্মচারী মেধাচৈতন্যের। তিনি অশক্ত শরীরেও কক্ষান্তরে সুরক্ষিত ব্যক্তিগত গ্রন্থটি কাজের দ্রুত অগ্রগতির জন্য ব্যবহার করতে দিয়েছেন। তাঁর শ্রীচরণে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই। এছাড়া দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ সম্পাদনের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলেই যিনি সোৎসাহে অগ্রণী ভূমিকা নেন, যাঁর ইতিবাচক ভূমিকায় আমার বহু সঙ্কল্প বাস্তবায়িত হয় এবং অন্তরে স্বস্তি অনুভব করি তিনি হলেন সংস্কৃত কলেজের অগ্রজপ্রতিম অধ্যাপক ড. বিদ্যুৎত্বরণ ঘোষ। সংস্কৃত কলেজের মহামূল্যবান গ্রন্থাগার থেকে কেবল আমারই জন্য একাধিক সংস্করণ এনে দিয়ে তিনি আমায় চিরঋণী করেছেন। তাঁকে আমার অন্তরের শ্রদ্ধা জানাই।

সংস্কৃত কলেজের অপর ভ্রাতৃপ্রতিম অধ্যাপক ড. লোকনাথ চক্রবর্তীর অনুপ্রেরণা অবশ্যস্বীকার্য। অধ্যাপক ড. বিদ্যুৎত্বরণ ঘোষের অবসরের পরে আমাকে প্রদত্ত গ্রন্থগুলি ব্যবহারের জন্য ড. চক্রবর্তী স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের নামের অন্তর্ভুক্ত করেন। নতুবা সম্পাদিত গ্রন্থের আত্মপ্রকাশ অসম্ভব হত। তাঁকে আমার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।

সংস্কৃত বুক ডিপোর সত্ত্বাধিকারী শ্রীঅভয় বর্মন সহযোগিতার হাত প্রসারিত না করলে প্রায় একশ পাঁচ বছর পরে এই গ্রন্থের পুনর্মুদ্রণ সম্ভব হত না। শ্রীনটবর চক্রবর্তী কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত গ্রন্থের কাল অস্পষ্ট জীর্ণ প্রচ্ছদে উল্লিখিত আছে—‘সন ১৩১৩ সাল’। সুতরাং প্রকাশক শ্রীঅভয় বর্মন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ওঁর দীর্ঘজীবন কামনা করি।

অমিত ভট্টাচার্য
রথযাত্রা
৬ আষাঢ়, ১৪১৯

.

সূচীপত্র

প্রথমাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক

ধর্ম্মব্যাখ্যার প্রতিজ্ঞা, ধর্ম্মের লক্ষণ, বেদের প্রামাণ্যসংস্থাপন, ধৰ্ম্মফলে দ্রব্যাদি-তত্ত্বজ্ঞান, দ্রব্যাদি পদার্থ নিরূপণ, দ্রব্যাদির সাধর্ম্মনিরূপণ, দ্রব্যলক্ষণ, গুণলক্ষণ, কৰ্ম্মলক্ষণ, দ্রব্যাদিত্রয়ের সামান্য লক্ষণ, দ্রব্যাদিদ্বয়ের সামান্য লক্ষণ, কর্ম্মের সহিত দ্রব্যাদির বৈলক্ষণ্য, গুণ ও কর্ম্মের সামান্য লক্ষণ, দ্রব্য ও কর্ম্মের সামান্য লক্ষণ।

প্রথমাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক

কার্য্যকারণভাব বিচার, সত্তা প্রভৃতি জাতি কথন, দ্রব্যাদি হইতে জাতির পার্থক্য সংস্থাপন, সত্তার একত্ব সংস্থাপন।

দ্বিতীয়াধ্যায়—প্রথমাহ্নিক

পৃথিবীর লক্ষণ, জলের লক্ষণ, তেজের লক্ষণ, বায়ুর লক্ষণ, জলাদি লক্ষণের দোষোদ্ধার, অনুমান প্রমাণের দৃষ্টান্ত, বায়ুর অনুমান, বায়ুর দ্রব্যত্ব সংস্থাপন, বায়ুপরমাণুর নিত্যত্ব সংস্থাপন, বায়ুর নানাত্ব, বায়ুর অনুমান ব্যাপ্তির অপ্রত্যক্ষ, বায়ুর নাম শাস্ত্রসিদ্ধ, ঈশ্বরানুমান, আকাশানুমানে মতান্তর খণ্ডন, শব্দ দ্বারা আকাশের অনুমান, আকাশের নিত্যত্ব এবং একত্বাদি সংস্থাপন।

দ্বিতীয়াধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক

গন্ধাদির স্বাভাবিকত্ব ও ঔপাধিকত্ব সংস্থাপন, কাল নিরূপণ, কালের নিত্যত্ব ও একত্ব সংস্থাপন, কালের কারণত্বসংস্থাপন, দিক-নিরূপণ, দিকের দ্রব্যত্ব নিত্যত্ব এবং একত্ব প্রভৃতি সংস্থাপন, পূৰ্ব্ব পশ্চিম প্রভৃতি দিগ্বিশেষের হেতু কথন, সংশয়ের হেতুকথন, সংশয়ের অবান্তর ভেদ, শব্দের লক্ষণ, শব্দের গুণত্ব সংস্থাপন, শব্দের অনিত্যত্ব সংস্থাপন।

তৃতীয়াধ্যায়—প্রথমাহ্নিক

আত্মার অনুমান, বাধকযুক্তির খণ্ডন, সংযোগি প্রভৃতি হেতু দ্বারা অনুমান, অনুমানে ব্যাপ্তিনিশ্চয়ের আবশ্যকতা, হেত্বাভাস ও তাহার ভেদ, হেত্বাভাসের উদাহরণ, আত্মানুমাপক হেতুর সদ্ধেতুত্ব কথন, পরকীয় আত্মার অনুমান।

তৃতীয়াধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক

মনোনিরূপণ, আত্মার প্রকারান্তরে অনুমান, আত্মার দ্রব্যত্ব ও নিত্যত্ব সংস্থাপন, আত্মার অনুমানে পূৰ্ব্বপক্ষ, পূর্ব্বপক্ষের উত্তর প্রদান, আত্মার প্রত্যক্ষ কথন, শরীরাদিতে যে আত্মা বলিয়া জ্ঞান হয় তাহার ভ্রমত্ব কথন, আত্মনানাত্ব সংস্থাপন

চতুর্থাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক

পরমাণুর মূল কারণত্ব স্থাপন, বাধকযুক্তির খণ্ডন, প্রত্যক্ষের হেতু কথন, রূপাদি প্রত্যক্ষের কথা, চাক্ষুষ ভিন্ন প্রত্যক্ষ, সত্তা ও গুণত্বের সর্ব্ববিধ প্ৰত্যক্ষ।

চতুর্থাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক

অনিত্যদ্রব্যবিভাগ ও শরীরাদি কথন।

পঞ্চমাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক

কর্ম্মবিচার, বিবিধ কর্ম্মের বিবিধ হেতু, লৌহের চুম্বকাভিমুখে গমনাদিহেতু নিৰ্দ্দেশে উপস্কার মত, লৌহের চুম্বকাদি আকর্ষণে প্রকৃত হেতু।

পঞ্চমাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক

ভূমিকম্প প্রভৃতির হেতু, বৃষ্টিপাতের হেতু, জলবিন্দুসমূহের একত্র মিলনে অধিক জলের সৃষ্টি, জল হইতে বাষ্পের উৎপত্তি, জল হইতে করকা ও বরফের উৎপত্তি ও দ্রবীভাব, মেঘ গর্জ্জনের হেতু, দিগ্‌দাহাদির হেতুনিদেশ, ঊর্দ্ধজ্বলন এবং বায়ুসঞ্চারের বিশেষ হেতু কথন, মনঃস্থৈর্য্য সম্পাদনের উপায়, মরণ সময়ে মনের এক দেহ এবং অন্য দেহ প্রবেশে হেতুনিদেশ, অন্ধকার নিরূপণ, আকাশাদির নিষ্ক্রিয়ত্ব।

ষষ্ঠাধ্যায় — প্রথমাহ্নিক

বেদপ্রামাণ্যবিচারে বেদের ঈশ্বরকৃতত্ব সংস্থাপন

ষষ্ঠাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক

বৈধকৰ্ম্মফল, অধৰ্ম্ম হেতু, শুচি ও অশুচি, আচার ও সংযম, রাগদ্বেষ, ধর্ম্মাধর্ম্মের হেতু, পুনৰ্জ্জন্ম, মোক্ষের উপায়।

সপ্তমাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক

নিত্য ও অনিত্য রূপাদি কথন, কারণগুণজনিত রূপাদি ও পাকজ রূপাদির নিৰ্দ্দেশ, পরিমাণ বিচার, মনের পরিমাণ, দিক্ প্রভৃতির পরিমাণ।

সপ্তমাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক

সংখ্যা প্রভৃতির বিচার, অবয়ব অবয়বীর অভেদ মত খণ্ডন, সংযোগবিচার, বিভাগ- বিচার, পদ-পদার্থের সম্বন্ধ বিচার, পরত্ব ও অপরত্বের বিচার, সমবায় বিচার।

অষ্টমাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক

জ্ঞান প্রকরণ আরম্ভ, প্রত্যক্ষের হেতু নির্দ্দেশ।

অষ্টমাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক

বিশিষ্ট প্রত্যক্ষের হেতু, কোন্ বস্তু হইতে কোন্ ইন্দ্রিয়ের উৎপত্তি হইয়াছে যুক্তিদ্বারা তাহার সংস্থাপন।

নবমাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক

অভাব প্রত্যক্ষ প্রকরণ, যোগবলে প্রত্যক্ষ।

নবমাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক

অনুমান, শাব্দবোধ প্রভৃতির অনুমানত্ব সংস্থাপন, স্মরণ, স্বপ্ন, স্বপ্নান্তিক, ভ্রম জ্ঞানের হেতু কথন, অবিদ্যা, বিদ্যা, আর্যজ্ঞানের হেতু।

দশমাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক

সুখদুঃখের ভেদ, সুখ দুঃখ পৃথক্ বস্তু, উহা জ্ঞানবিশেষ নহে এই বিষয়ে বিচার।

দশমাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক

কারণত্রয় সম্বন্ধে বিশেষ উপদেশ, বেদপ্রামাণ্যের দৃঢ়তা সম্পাদন।

Book Content

প্রথমাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক : ধর্ম্মব্যাখ্যা
প্রথমাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক : কার্য্যকারণভাব বিচার
দ্বিতীয়াধ্যায়—প্রথমাহ্নিক : পৃথিবীর লক্ষণ
দ্বিতীয়াধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক : গন্ধাদির স্বাভাবিকত্ব
তৃতীয়াধ্যায়—প্রথমাহ্নিক : আত্মার অনুমান
তৃতীয়াধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক : মনোনিরূপণ
চতুর্থাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক : পরমাণুর মূল কারণত্ব স্থাপন
চতুর্থাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক : অনিত্যদ্রব্যবিভাগ ও শরীরাদি কথন
পঞ্চমাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক : কর্ম্মবিচার
পঞ্চমাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক : ভূমিকম্প প্রভৃতির হেতু
ষষ্ঠাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক : বেদপ্রামাণ্যবিচারে বেদের ঈশ্বরকৃতত্ব সংস্থাপন
ষষ্ঠাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক : বৈধকৰ্ম্মফল
সপ্তমাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক : নিত্য ও অনিত্য রূপাদি কথন
সপ্তমাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক : সংখ্যা প্রভৃতির বিচার
অষ্টমাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক : জ্ঞান প্রকরণ আরম্ভ
অষ্টমাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক : বিশিষ্ট প্রত্যক্ষের হেতু
নবমাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক : অভাব প্রত্যক্ষ প্রকরণ
নবমাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক : অনুমান
দশমাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক : সুখদুঃখের ভেদ
দশমাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক : কারণত্রয় সম্বন্ধে বিশেষ উপদেশ
বইয়ের ধরন: ধর্ম ও দর্শন

সেই এরফান (পার্ট ১) – কাজী মাহবুব হোসেন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও বাঙালি বুদ্ধিজীবী

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও বাঙালি বুদ্ধিজীবী – অমলেন্দু দে

বাংলার বিদ্বৎসমাজ – বিনয় ঘোষ

বাংলার বিদ্বৎসমাজ – বিনয় ঘোষ

৩০. এক নিউ ওয়ার্ল্ড – সাইমুম সিরিজ #৩০

Reader Interactions

Comments

  1. S.r

    June 6, 2025 at 10:27 am

    “বিষ্ণু লোকে সন্ধ্যা নামে।”
    হিমাদ্রি কিশোর দাশগুপ্ত এর এই বইটি দেওয়া যাবে।

    Reply

Leave a Reply to S.r Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.