পদ্মজা – ইলমা বেহরোজ
প্রকাশকাল : অমর একুশে বইমেলা ২০২৪
প্রচ্ছদ – ফাইজা ইসলাম
উৎসর্গ
শান্ত, মেধাবী, লাজুক মেয়েটির বিয়ে হয় রাগী, নিরক্ষর একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সঙ্গে। অনেক পড়াশোনার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু পরিবারে সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্ত বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন কন্যার বিয়ে দেয়ার।
মেয়েটি বই, খাতা তুলে রেখে আঁচলে বেঁধে নেয় সংসারের দায়িত্ব। বাড়ির বড় বউ হওয়াতে শুরু থেকে সবাই অপেক্ষায় ছিল সন্তানের। বছর পেরোয়, কোনো সুখবর আসে না! এক…দুই… তিন করে ছয়টি বছর পার হয় তাও সন্তানের মুখ কেউ দেখে না।
সমাজ ও পরিবারের নানারকম নিন্দে কথায় মেয়েটির বুকের যন্ত্রণা, দহনের মাত্রা দিনকে দিন বাড়তে থাকে। কুসংস্কারে পূর্ণ সমাজ ও পরিবার থেকে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে প্রতিধ্বনিত হতো, আঁটকুড়ী…আঁটকুড়ী… আঁটকুড়ী-বাচ্চা যেহেতু নেই সেহেতু তার বেঁচে থাকার কোনো কারণও নেই।
মেয়েটির স্বামীর পুনরায় বিবাহ হবে, হবে; ঠিক তখনই মেয়েটিকে একঘরে থেকে বাঁচাতে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ছুটে আসে একটি ভ্রূণ!
এক শ্রাবণের গোধূলি লগ্নে জন্ম হয় ফুটফুটে কন্যা সন্তানের।
মেয়েটির জীবন পূর্ণ হয় ওঠে।
সেই মেয়েটি এখন মধ্যবয়স্ক, সংসারের মহারানি। স্বামী, মেয়ে ও দুটি পুত্র নিয়ে তার রাজত্ব।
সেই মহারানি…আমার যোদ্ধা মায়ের জন্য এই উৎসর্গপত্র।
.
ভূমিকা
ছোটো থেকে সবসময় চাইতাম, সবাই আমাকে ভালোবাসুক, কেউ অপছন্দ না করুক; অনেক অনেক মানুষ আমাকে ভালোবাসুক। কিন্তু জানতাম না, কীভাবে ভালোবাসা পেতে হয়!
.
তখন সবেমাত্র এসএসসি দিয়েছি।
স্কুলের একটা ছোট ঘটনাকে ঘিরে মানসিক ট্রমায় ছিলাম। তখন হঠাৎ জানতে পারি সোশ্যাল মিডিয়ায় গল্প-উপন্যাস লেখা যায়। ফেসবুকে লেখা যায় শুনে অতিরিক্ত ভাবনা থেকে বাঁচার জন্য সময় কাটাতে একটা ছোট গল্প লিখি। সেখানে পরিচিত কয়জন ভালো মন্তব্য করে, উৎসাহিত করে। অনুপ্রাণিত হয়ে একটা ত্রিশ পর্বের থ্রিলার গল্প লিখি। গল্পটি লিখতে গিয়ে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হই। চরিত্রদের নিয়ে ভেবেই কূল পাই না, আবার অন্যকিছু ভাবব কখন?
তখন ফেসবুকে রোমান্টিক গল্প লেখার ট্রেন্ড ছিল। আমিও ট্রেন্ডে ভেসে দুটি রোমান্টিক গল্প লিখি।
লিখতে গিয়ে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করি।
ভাবি, আর ট্রেন্ড নয়! এইবার নিজের মতো লিখব। সেই ভাবনা থেকেই সৃষ্ট ‘পদ্মজা।’
পদ্মজা লিখতে গিয়ে প্রচুর সাড়া পেতে থাকি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় নতুন পর্ব পোস্ট করতেই পাঠকদের হই-হুল্লোর লেগে যেত। আমার প্রাইভেট গ্রুপে (Elma’s manuscript’s) প্রতিদিন চলত পাঠকদের আগাম ধারণার পোস্ট।
তারপর কী হবে? সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে হতো প্রচুর আলোচনা। একদিন পৰ্ব না দিলে কমেন্টবক্স, ইনবক্স, গ্রুপ ভেসে যেত পাঠকদের অনুরোধ এবং হুমকিতে।
তখন আমি ছিলাম ষোড়শী কিশোরী, কলেজে ভর্তি হয়েছি কিন্তু করোনা থাকায় কলেজে যেতে হতো না। তাই সারাক্ষণ পদ্মজা ও পাঠকদের নিয়ে মেতে থাকতাম।
আমার কাছে সোনালি দিন মানে পদ্মজা লেখার মুহূর্তগুলো। আমি বারবার বহুবার সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে চাইব।
পদ্মজায় আমি কী লিখেছি, কতটা ভালো অথবা খারাপ লিখেছি তা জানি না। শুধু জানি, এই উপন্যাস আমাকে বিশাল পাঠকসমাজ উপহার দিয়েছে। আমার ছোটোবেলার সেই কাঙ্ক্ষিত ‘অনেক মানুষের ভালোবাসা’ অর্জন করতে সাহায্য করেছে। যখন বাস্তব জীবনের বেড়াজালে পড়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় আমি এই পাঠক সমাবেশে নিঃশ্বাস নিতে আসি।
আমি ব্যাকরণ জানি না,
আমি সাহিত্যের সব গণ্ডি চিনি না,
বুঝি না কীভাবে টিকে থাকতে হয়,
শুধু উপলব্ধি করি, মাঝেমধ্যে আমার মাথার ভেতর অনেক চরিত্র, কাহিনি কিলবিল করে। সেই অসহ্যরকম যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে আমি তাদের নিয়ে লিখতে শুরু করি। মন যেভাবে চায় সেভাবে লিখি। কোনো নিয়ম মানি না।
নিয়ম-নীতিবিহীন একটি লেখাকে বইরূপে পাবার জন্য পাঠকদের প্রতিদিনকার আবদার আমাকে প্রতিনিয়ত বিস্মিত করেছে। পদ্মজা লেখার সময় ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি, কখনো পদ্মজা বই হবে। এরকম একটা ভাবনা অসম্ভবের মতো ছিল। আজ পদ্মজার বইরূপে আসার একমাত্র কারণ পাঠকরা। পদ্মজা উপন্যাসের জন্ম আমার জন্য হলেও পদ্মজা বইয়ের জন্ম পাঠকদের জন্য। তাদের আবদারে, তাদের অনুরোধে পদ্মজা বইয়ে পরিণত হয়েছে।
যারা বইটি সংগ্রহ করবে বেশির ভাগই এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় উপন্যাসটি পড়ে ফেলেছে। শুধু ভালোলাগা থেকে বইটি সংগ্রহ করতে আগ্রহী! তাদের প্রতি আমার এক আকাশ ভালোবাসা এবং ভালোবাসা দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা।
ইলমা বেহরোজ
উপশহর, সিলেট
সামি ব্রো
ব্রো । আপনার সাথে যোগাযোগ কিভাবে করব?
বাংলা লাইব্রেরি
মামলার নোটিস পাঠাবেন না তো আবার? 🙂
Nasir
Valoi