নীলাম্বরের খিদে – দেবারতি মুখোপাধ্যায়
হরর ক্লাসিকস সিরিজ ১
প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারি ২০২০
প্রচ্ছদ : সুমন
প্রকাশক: শংকর মণ্ডল
.
উৎসর্গ
ঐতিহ্য,
সবে আটমাস হল তুমি এই সুন্দর পৃথিবীতে এসেছ।
এখনও এই লেখাগুলো পড়ার মতো বড়ো তুমি হওনি, সোনা।
তুমি এখনও দাঁড়াতেই শেখোনি, আমার হাত দুটো ধরে
টলমল করো আর বড়ো বড়ো চোখ দুটো মেলে হাসো।
কিন্তু তুমি যখন বড়ো হবে, তখন প্রচুর গল্পের বই পড়বে।
মায়ের এই গল্পগুলোও তখনই পড়ো
আমি অপেক্ষা করব।
.
ভূমিকা
‘ছেলেভুলানো ছড়া’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘ভালো করিয়া দেখিতে গেলে শিশুর মতো পুরাতন আর কিছুই নাই। দেশ কাল শিক্ষা প্রথম অনুসারে বয়স্ক মানবের কত নতুন পরিবর্তন হইয়াছে, কিন্তু শিশু শতসহস্র বছর পূর্বে যেমন ছিল আজও তেমনি আছে।’ এই ‘অপরিবর্তনীয়’ প্রকৃতির কারণটি চিহ্নিত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, ‘শিশু প্রকৃতির সৃজন। কিন্তু বয়স্ক মানুষ বহুল পরিমাণে মানুষের নিজকৃত রচনা।’
চার বা পাঁচ থেকে আট, বড়োজোর ন—বছর বয়সি মানুষদের আমরা ‘শিশু’ বলে মানি। তাদের জন্য রচিত সাহিত্যের মধ্যে সেজন্যই একটা শাশ্বত ঔজ্জ্বল্য থেকে যায়, যাতে নীতি, মূল্যবোধ, আনন্দ—এমন জিনিসগুলোর উপস্থিতি বেশি করে দেখা যায়।
কিন্তু সারল্যের সেই লক্ষ্মণরেখা পেরিয়ে বাইরের বড়ো, অনেকটাই কালো পৃথিবীতে যারা পা দিয়েছে, সেই কিশোরদের জন্য কেমন সাহিত্য রচিত হয়? কেতকী কুশারী ডাইসন—এর ভাষা ধার নিলে বলতে হয়, তাদের জন্য লিখতে গিয়ে সাহিত্যিক ইচ্ছে থাকলেও আর ‘সংস অফ ইনোসেন্স’ রচনা করতে পারেন না। তাঁর হাতে জন্ম নেয় ‘সংস অফ এক্সপিরিয়েন্স।’
এই বইয়ের তিনটি লেখাও তার ব্যতিক্রম নয়।
দেবারতি মুখোপাধ্যায় শুধুই এই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের একজন নন। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে পাঠকদের কাছে পৌঁছে যাওয়া, নতুন পাঠকদের খুঁজে নেওয়া, রহস্যকাহিনির ধারায় নুতন এক অভিমুখ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা, অবলীলায় সাহিত্যের নানাধারায় বিচরণ, অভিনব প্লট পরিশ্রমলব্ধ লেখনি—এমন নানা কারণে সমকাল তাঁকে একটু আলাদা চোখে দেখে। হয়তো সেজন্যই তাঁর লেখার ভালোমন্দ বিচারের জন্য প্রযুক্ত হয় অন্যরকম মানদণ্ড।
এই ভৌতিক সংকলনে রয়েছে তিনটি কাহিনি। প্রথমটি উপন্যাস, নাম ‘নীলাম্বরের খিদে’। প্রথম প্রকাশ ‘শারদীয়া শুকতারা ২০১৯’—এ। দ্বিতীয় উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ‘শারদীয়া মায়াকানন ২০১৯’—এ। এবং সর্বশেষ বড়োগল্পটির প্রথম প্রকাশ ‘শারদীয়া কিশোরভারতী ২০১৯’—এ। তিনটি লেখাই প্রকাশের পর পাঠকের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত হয়।
শিশু সাহিত্যের আঙিনাতে দেবারতি—র পদসঞ্চার প্রথম থেকেই পাঠকের কাছে আকর্ষণ ও কৌতূহলের বিষয় হয়ে উঠেছিল। তাঁর এই বইয়ের তিনটি লেখা উদ্দিষ্ট পাঠক মূলত কিশোর—কিশোরীরা।
তাদের জন্য লিখতে বসেও তিনি স্বকীয়তা দেখিয়েছেন। কোনো গল্পে চিরাচরিত হ্যাপি—এন্ডিং—এর তোয়াক্কা না করে ঘটনাক্রম এগিয়ে গেছে অমোঘ, অলঙ্ঘ্য এক অন্ধকারের দিকে।
কোথাও অতীত অপরাধের দীর্ঘ ছায়ায় প্রথমে কালো, তারপরে ঘোর লাল হয়ে উঠেছে বর্তমান।
আবার কোথাও ব্যথিত ইতিহাসের দীর্ঘশ্বাস বদলে গেছে অঙ্কের আলোয়, যা দেখিয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ।
স্বল্প পরিসরে, অল্প কথায় দেবারতি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন তাঁর ভুবনটিকে। সেখানে দুঃখ আছে, মৃত্যুও আছে। আছে হারানোর যন্ত্রণা আর ভয়। কিন্তু সেসব ছাপিয়ে উঠে এসেছে সত্য।
একঝলকের জন্য হলেও ওই শব্দ—বাক্য—সংলাপের মধ্য থেকে জেগে উঠেছে গল্পের অনন্ত।
তার সন্ধান পাওয়ার জন্য আপনাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না। পাতা ওলটান— ব্যস!
ঋজু গাঙ্গুলী
Leave a Reply