• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

দুই বাংলার বাউল আখড়া – সোমব্রত সরকার

লাইব্রেরি » সোমব্রত সরকার » দুই বাংলার বাউল আখড়া – সোমব্রত সরকার
দুই বাংলার বাউল আখড়া

দুই বাংলার বাউল আখড়া – সোমব্রত সরকার

দুই বাংলার বাউল আখড়া–সোমব্রত সরকার।

প্রথম প্রকাশ – জানুয়ারি ২০১৮।

উৎসর্গ – লালনের আখড়াবাড়ি, কুষ্টিয়ার ফকিরানি রুমানা আফরোজ।

.

আমার কথা

ষোলো বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের বাউল সমাজে আমার অবস্থান। ঠাকুরদাদার বাড়ি ছিল ময়মনসিংহের নেত্রকোনায়। বাবার জন্ম কোলকাতায়। আমার জন্ম শহরে হলেও পরবর্তীতে আমাদের বসবাস নদিয়ার চাকদহে। এখানেই আমার বেড়ে ওঠা, বয়ঃসন্ধি, এখনকার মধ্য যৌবন। এখানকার পুরনো বাসিন্দারা অবশ্য এখনও গম্ভীরভাবে উচ্চারণ করেন, চক্ৰদহ। গঙ্গা সরে গিয়ে চক্রাকারে এক দহ উপহার দিয়ে গিয়েছিল বলেই আদতে জায়গাটির নাম হয়েছিল চক্ৰদহ। পরবর্তীতে মানুষের মুখের ভাষায় ক্রমশই তা বদলিয়ে চাকদহ, চাকদা হয়ে ওঠে। এটাই চাকদহ নামের আসল পুরাণ। তবে লোকশ্রুতি ধর্মাবহ টেনে অন্য কথা বলে। ভারতীয় আধ্যাত্মবাদে গঙ্গা হলেন গিয়ে আবার দেবী। গঙ্গার উপাখ্যান বাল্মীকি লিখে গিয়েছেন। সেখানেই রামচন্দ্রের পূর্বপুরুষ সগর রাজার কথা আছে আর এই সগরের অধস্তন পঞ্চম পুরুষ ভগীরথই নাকি গঙ্গাকে মর্তে এনেছিলেন,গল্প সেরকমই বলে। তা মর্ত্যে গঙ্গা আনয়নের সময় ভগীরথের রথের চাকায় আমার বাসভূমিতে গভীর খাতের সৃষ্টি হয়, তারপরে গঙ্গাজলে পূর্ণ হয়ে জমিটির নাম চক্ৰদহ হয়ে ওঠে। নামকরণ নিয়ে আরেক কিংবদন্তি বলছে সম্পূর্ণ অন্য কথা। শ্রীকৃষ্ণনন্দন প্রদ্যুম্ন ছিলেন বীর যোদ্ধা। তিনি বহু যুদ্ধে বাবা কৃষ্ণকে সাহায্য করেছিলেন। পুরাণ মতে সমস্ত অসুরেরাই শ্রীকৃষ্ণের ছেলের হাতে মারা গিয়েছিল। সম্বরাসুরের সঙ্গে যুদ্ধের সময় তাঁর রথের চাকা পৃথিবী গ্রাস করে। স্বভাবতই আমার বসবাসের ভূখণ্ডটির নিস্তার নেই কোনও প্রদ্যুম্নের রথের চাকায় ডেবে এখানেও নাকি সুবিশাল দহ হয়। আর সেই দহ থেকেই এতদঞ্চলের নাম চক্ৰদহ হয়ে ওঠে। তবে পুরাণকল্প তো আবার কিছু ঐতিহাসিক সত্যে নিহিত, সেই সত্য নিয়েই বোধহয় তাই প্রাচীন দলিলে প্রদ্যুম্ননগরের। উল্লেখ রয়েছে।

সে যাই হোক, আমার বাসজমিটি আবার অখণ্ড নদিয়ারই অন্তর্গত। তাঁর কুষ্টিয়াতেই ফকির সাঁইয়ের আস্তানা। তাঁর আগে এ অবশ্য চৈতন্যদেবেরও জন্মভূমি। স্বভাবতই নদিয়া তাই বাউল-বোরেগীর দেশ। আবার চৈতন্যদেবের সমসাময়িক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ মশাই এই নদিয়ার নবদ্বীপে বসেই মা কালীর রূপ ও তন্ত্র সাধনার সংকলন গ্রন্থটি পর্যন্ত রচনা করে ফেলেন। ফলত আমার নদিয়া বোরেগী-বাউল তান্ত্রিক গুরু ভৈরবী মায়েরও দেশ বটে। আর এর শেষ হাতায় একসময় সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন শ্যামাসঙ্গীত রচনা করে কৃষ্ণনগরের রাজার বদান্যতায় শোরগোল তুলে দেন। পারস্য থেকে আসা সুফি সাধনার ঘরানা বাংলার গুরু পীরের মহিমাকে বাড়িয়ে ধরে যে ফকির সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘাটাললা; দরবেশী ভাবপ্রবণতার ভাণ্ডার খুলে দিল, সেখানেও নদিয়া সংযুক্ত হল। লৌকিক ইসলাম বা দেল কোরানের মতাদর্শে বিকশিত হয়ে উঠল আমারই নদিয়া।

আঠারো শতকের শেষ থেকে উনিশ শতকের প্রথমার্ধের সময়সীমায় বাংলায়। লোকায়ত সাধনার বিকাশ ও প্রসারের ক্ষেত্র হিসেবে যেন উঠে এল এই নদিয়াই। ঘোষপাড়ায় গড়ে উঠল কর্তাভজা ধর্ম, কুষ্টিয়ায় লালনশাহী মত, বৃত্তিহুদতে সাহেবধনী ক্ষেত্র, ভাগা গ্রামে খুশি বিশ্বাসী স্রোত, মেহেরপুরে বলাহাড়ি সম্প্রদায়। সেই সঙ্গে চৈতন্যদেবের তিরোধানের পর বাংলার বৃন্দাবনকেন্দ্রিক উচ্চকোটির বৈষ্ণবধর্মের বাইরে সহজিয়া কায়া সাধনার একটা স্রোত তো এই নদিয়ায় বহমান ছিলই। সময় পরিস্থিতির চাপে খণ্ড নদিয়াতেও উঠে এল কুষ্টিয়ার হেঁউড়িয়ার ধর্ম, ভীমপুর-আসাননগর দিয়ে তার বিস্তার শুরু হল। মেহেরপুরের বলরামভজার স্থান হল তেহট্ট পেরিয়ে মোনাকষার নিশ্চিতপুর। দেবগ্রামের ভাগায় খুশি বিশ্বাসের ধর্ম এখন মরা সোঁতা হলেও কল্যানীর ঘোষপাড়ার কর্তাভজা, চাপড়ার বৃত্তিহুদার সাহেবধনী তাঁর ছেউরিয়ার লালন ফকিরের স্রোত এখানে বেশ জায়মান। নিশ্চিতপুরের বলরামীরা হেজেমজে না গেলেও এঁদের ধর্মমতে মানুষের স্রোত ক্ষীণ। বর্ধমানের অগ্রদ্বীপ ও পাটুলি কাটোয়ার সহজিয়া স্রোতের জোয়ার নদিয়াতেও এখন রমরমা। সব মিলিয়ে নদিয়া দেহবাদী কায়া সাধনা, যুগল ভজনা নিয়ে বেশ মশগুল, আর এই পরিবেশের ভেতরই আমার ছোটবেলা থেকে মধ্য যৌবনের জীবন।

বেশ মনে আছে আমার কৈশোর বয়সে আমাদের বাড়ির নিকটস্থ হাজরাতলার ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার করে বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীর আখড়া তৈরি করে নেওয়ার কথা প্রতি সন্ধ্যায় তাঁদের খোলের আওয়াজ ভেসে আসত আমার পড়ার ঘরে, আর সারা বৈশাখ মাস জুড়ে এই দুই কৃষ্ণনামে মাতোয়ারা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কাকভোরে গেয়ে ফিরতেন প্রভাতী। রাই জাগানোর সেই সুর এখনও আমার কানে লেগে। বাড়ির কাছের সেই আখড়াবাড়ি আর নেই, বৈষ্ণবীকে সাপে কাটার পর বৈষ্ণব সেই যে কাউকে না বলে কয়ে গেলেন। আখড়াবাড়ি ছেড়ে আর ফিরে এলেন না। বৈষ্ণবীর নিথর দেহ ছুঁয়ে বৈষ্ণবের সেই কান্নার ধ্বনি আমি যেন আজও শুনতে পাই। খোলের আওয়াজ, কর্তালের শব্দ আজও যখন বৈষ্ণবদের আখড়াবাড়িতে পাই তখন আমার এই দুইজন সুজনের কথা মনে আসে। মাধুকরী করতে এসে কখন যেন এঁরা আমার ঠাকুরদাদা-ঠাকুমা হয়ে উঠেছিলেন। বৈষ্ণবী আমাকে গাল ছুঁয়ে আদর করতেন। তাঁর স্নেহাশিষে আমি আমার ঠাকুমাকে পেতাম, যিনি আমার জন্মের আগেই চলে গিয়েছিলেন।

বয়ঃসন্ধির সময় শরীরে আমার এসে ঢুকল বাড়ি থেকে শ্মশানে পালিয়ে যাওয়ার রোগ ভৈরবী মায়ের আস্তানায় সামনে আমার তখন অপার রহস্যের জগৎ। নিত্য নতুন হরেক কিসিমের সাধু দর্শন। তারপর একসময় গোটা পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রত্যন্ত শ্মশানই হয়ে উঠল আমার শ্বাস নেওয়ার জায়গা। তন্ত্র বোঝা, যুগল মিলন দেখা, শবের। ওপর বসে অঘোরী সাধুর নানা ক্রিয়াকরণের আমি সাক্ষ্মী। শাস্ত্রিক বিচক্ষণতার বাইরে প্রায় প্রান্তিক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা এই সমাজবৃত্তান্তই এক সময় বই হয়ে উঠল প্রকাশকের তৎপরতায়। বাজারে এল ‘ভৈরব ভৈরবীর সঙ্গে তন্ত্র জিজ্ঞাসায়’ বইখানি। সাড়া মিলল পাঠকের। তার আগে অবশ্য আমার ‘বাউল গানের কথকতা’ বেরিয়ে গেছে। আমাদের এখানকার সর্বমান্য পত্রিকা ‘আনন্দবাজার’এ তার প্রশংসাধ্বনি বেজে উঠল বাউলের আখড়াবাড়িতে একতারা, খমক বেজে উঠবারই মতো। এরপর এল বাউল, তন্ত্র, সহজিয়া সাধনার যুগল মন্ত্রটি লেখার অনুরোধ। কেননা তখন আমার বাংলার বাউল-ফকির তান্ত্রিকগুরু-ভৈরবী মা-সাধু-বাউলানি ভৈরব-ফকিরানি-সহজিয়া-বৈষ্ণব-কায়াবাদী সাধক বৈষ্ণবী-অঘোরীদের সঙ্গে আখড়া শ্মশান বাসের এক যুগ অতিবাহিত। লিখে ফেললাম ‘দেহ সাধনায় যৌনতা’। এক বছরের মাথায় ফুরিয়ে গেল বই। বেরোলো দ্বিতীয় সংস্করণ। আমার মতো নতুন লেখকের কাছে এ যে কত আনন্দ ও সম্মানের। আমি উৎসাহ পেলাম। আমার সঙ্গে ২০১২ সালে দেখা করতে এলেন ফারহাদ মাজহার। ঘোষপাড়ায় সতীমায়ের বাড়িতে তাঁকে নিয়ে বসালাম বাউল গানের আসর। তারপরই আমার বৃত্তিহুদায়, নিশ্চিতপুর, দৈকিয়ারি, শালুনিতে ছোটাছুটি বাড়লো। লিখলাম কর্তাভজা, সাহেবধনী, বলাহাড়ি, লালনশাহী ধর্মের ইতিবৃত্ত ‘নারী সাধনার ভাষা’। মনে খেদ কুষ্টিয়া তথা বাংলাদেশের পীর-ফকির-বাউলের আস্তানা দেখা হলো না। হলো না আমার একবারও বাংলাদেশ ভ্রমণ।

তবু আমি স্বপ্নে এখনও চলে যাই আমার ঠাকুরদাদার দেশে। ময়মনসিংহে পাগলাপন্থী সাধকদের ভদ্রাসন ঘুরে দেখি, নেত্রকোনায় বাউল উকিল মুনশির বাড়ি পৌঁছে যাই, মালজোড়া গানের কথাও মনে আসে যে আমার; আবদুস সাত্তার, জালালউদ্দীন খাঁয়ের স্মৃতিধন্য নেত্রকোনার মাটি স্পর্শ করি; ওখানে যে আমারও পূর্ব পুরুষের অস্তিত্ব লেগে! বড় আনন্দ হয় আমার চলে যাই রতিরাম দাস, করিম শাহ, লালন শাহ, শিতালং শাহ, পাগলা কানাই, দুদ্দু শাহ, পাঞ্জু শাহের দেশে। সিলেট যেতে গেলেই মনে পড়ে হাসন রাজার কথা। আমি শাহ আবদুল করিমের কবরে গিয়ে বসি, রাধারমণের সমাধি মন্দিরে বসে বসে ভাবি এই গান ও ভাটির দেশ তো আমারও মাতামহের ভূমি, এখানে যে আমারও অস্তিত্ব নিয়ে অদেখা অথচ স্বপ্নে চেনা কালনী নদীর বুকে মেঘ ওঠে, বৃষ্টি নয়ে আমি ঝরি সিলেট নামের দেশে। সুনামগঞ্জের নোয়ারাই চলে যাই দুর্বিন শাহের বাড়ি। এভাবেই বাংলাদেশের গান ও বাউলের রাজত্বে আমি প্রবেশ করি।

যৌবনের একেবারে সন্ধিক্ষণে সদর্থক বাউল পাঠ শুরু হয় আমার। প্রথম যাই আমি ঘোষপাড়ার মেলায় বাউল গান শুনতে, সেবারই এ গানের মধ্যে আবিষ্কার করি কৈশোরে ফেলে আসা বৈষ্ণবীর গাওয়া কৃষ্ণময়তার প্রতীক। কৃষ্ণা দাসী যখন গান; মীরা মা যখন সুর ধরেন; সুমিত্রা দাসী মঞ্চে ওঠেন; ভাবি, তাঁদের গলা থেকে বৈষ্ণবীরই আওয়াজ বেরোচ্ছে। ষষ্ঠী খ্যাপা, নবকুমার, নটবর, দয়াল সরকার, নরোত্তম দাসের গলা বৈষ্ণবের সুর নিয়ে গমগম করে। মজলিশপুরের আখড়ায় বসে যখন প্রবৃদ্ধ শশাঙ্কশেখর দাস বৈরাগ্য কথা বলেন তখন আমার বাড়ির কাছে পরিত্যক্ত হাজরাতলার ধূসর আখড়ার কবেকার সেই বৈষ্ণবের মুখ জ্বলজ্বল করে। আমি বেশ বুঝতে পারি কৈশোরে গড়ে ওঠা এই বৈষ্ণব–বৈষ্ণবীর সঙ্গে আমার সখ্য এখন আজীবনের। সেই স্নেহ সখ্য বুকে করে আমি পাক খাই নদিয়ায়। আসাননগরে গিয়ে সুবল দাস বৈরাগ্যের আখড়ায় বসি; তিনিই আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যান মুড়াগাছার সুমিত্রা দাসীর কাছে। বৈষ্ণবপাড়া, ঘূর্ণীর কালিদাসী অধিকারীর বয়স ও রূপে আবার বৈষ্ণবী ধরা দেন। আসাননগরে তুলিকা মণ্ডল, ভীমপুরের অনিল ক্ষ্যাপা, মাটিয়ারীর মীরা মোহন্ত–এভাবে গোটা নদিয়া চক্রাকারে ঘুরে বর্ধমান ফুঁড়ে উঠি বীরভূমে, হাটগোবিন্দপুরের সাধন দাস বৈরাগ্যের আখড়ায় সময় কাটে, এখানেই দেখা হয় আমার ওসাকার কানসাই ইউনিভার্সিটির দর্শনের ছাত্রী মাকি কাজুমির সঙ্গে। ১৯৯১ সালে সাধন দাস ভারত উৎসবে যখন জাপান সফররত তখনই ওঁর গান শুনে মাকি চলে আসেন এ দেশে। সাধন দাসের তত্ত্বাবধানে বাংলা শিখে এরপর সাধনায় ডুবে মাকি হয়ে ওঠেন বাংলারই বাউলানি। এক সময় পৌঁষমেলায় শান্তিনিকেতনের মূল মঞ্চে তিনি প্রবেশাধিকারই পাননি বিদেশিনী বলে। কিন্তু আজ তিনি বিশ্বের দরবারে পশ্চিমবঙ্গের বাউল সমাজেরই উজ্জ্বল প্রতিনিধি। ওসাকায়ও মাকি বাউল। চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরই টানে প্রতি বছর জাপানি বাউলরা আসেন পশ্চিমবঙ্গে জয়দেবে কেঁদুলির মেলায়। সাধন দাস বৈরাগ্যের ‘মনের মানুষ’ আখড়া সাজে জাপানি বাউলদের সমাহারে। সাদা পোশাকে এঁরা সকলেই তখন বাংলার বাউল। হাটগোবিন্দ পুরের আখড়া তথা এখানকার বাউল সমাজে মাকি কাজুমি এখন মাকি মা; আশ্রম চালান, দীক্ষা দেন, তত্ত্বকথা বলেন। পশ্চিমবঙ্গে নারী বাউল বা বাউলানির তিনি তো এখন উজ্জ্বল প্রতিনিধি।

মাকির বেড়ে দেওয়া ভাত খেয়ে হাটগোবিন্দপুর ছেড়ে আমি রওনা দিই বাঁকুড়ার নবাসনে। সেখানে নির্মলা মা দেখি আশ্রম সামলাচ্ছেন। তাঁর সাধনসঙ্গী হরিপদ গোঁসাই বাউল সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। হটযোগ ও প্রাণায়ামে দক্ষ এই বাউল প্যারিসে যান যুবক-যুবতীদের যোগ শেখাতে। শীতকালে নবাসনে উঠে আসে টুকরো প্যারিস। ফরাসি সহায়তায় হরিপদ গোঁসাইয়ের মাটির বাড়ির আখড়ায় পাকা ঘর ওঠে, স্যানিটারি পায়খানা, পাতকুয়ো, টিউবওয়েল। এসব দেখে কোথাও যেন আমি সাজুয্য খুঁজে পাই সাধন দাস বৈরাগ্যের আখড়াবাড়ির। ফরাসি-জাপানি সহায়তায় স্বচ্ছল হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গে বাউলের সংসার। নির্মলা মা আমাকে প্যারিস থেকে প্রকাশিত সিডি উপহার দেন। পৃথুল চেহারার পান-দোক্তা খাওয়া কালো দাঁতের, গেরুয়া বসন পরিহিতা হাসিখানা আজও যে আমার বুক কাঁপায়!

এদিকে নরম বীরভূম। আহমেদপুরের ভাঙা পরিত্যক্ত রেল কোয়ার্টারে ফুলমালা দাসীর আস্তানাতে দুপুর দুপুর উঠি। ওঁর অশক্ত শরীরে মাধুকরী করে পাওয়া নানা সাইজের জড়ো করা চালের ভাত খেয়ে মরমে মরে যাই। আমি যদি না খাই তাহলে কাল হয়তো তাঁকে ভিক্ষাতে বের হতে হতো না, কিন্তু এ সমাজ এমনই অতিথি পরায়ন কোনও বারণই শোনে না। মহম্মদবাজারে চলে যাই গৌর ক্ষ্যাপার আস্তানায়। সাধনার সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। আমি দেখে চমকে যাই মোটা থানের শাড়ি পরা এই মেয়েই আগে অভাবের তাড়নায় শরীর বেচতেন সিউড়ির লজে লজে। বাউলের নারীর এও এক রূপ। সাধন সঙ্গিনীর আগমন এই জায়গা থেকেই। অসহায়, নির্যাতিতা, স্বামীহারা। মেয়েদের গুরুপাঠই যে ভরসা। সেখানেও জায়গা নিরিখে অনেকেরই পূর্বতন অভিজ্ঞতাগুলো কাজ করে। তথাপি এ সমাজে গৌর ক্ষ্যাপার মতো সাধকেরা রয়েছেন। সাধনা, নির্মলারা খেয়ে-পড়ে সম্মানের সঙ্গে বাঁচেন। বাউল সাধনার এও এক দিক। অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া মেয়ে মানুষদের দেখা মেলে এখানে। কোথায় যেন এসে সাধনা ও যৌনতা এক হয়ে ওঠে। সাধন সঙ্গিনীর থাকা ও চলে চলে যাওয়া, সাধক বাউলের সঙ্গিনী বদলানোর তরঙ্গেও দুলতে থাকে পশ্চিমবঙ্গের বাউল সমাজ। জয়দেবে বসে প্রখ্যাত বাউল পূর্ণচন্দ্র দাসের দিদি রাধারানি অভিযোগ করেন, কেউ তাঁকে আর গাইতে ডাকে না এখন; জানান বৃদ্ধ বয়সেও ওকে এখনও মাধুকরীতে বেরোতে হয়। গোপালনগরে গিয়ে আমি তাঁর হতশ্রী দশা দেখে আসি। ছোট ভাই চক্ৰধরের পোলিও রোগে দুটি পা পঙ্গু হয়ে যাওয়া ছেলে নিয়েই যে তাঁর সংসার। ওরই জন্য গান গাওয়া, মাধুকরী। পূণ্যর দিদির এই করুণ কাহিনী শুনে আমি আসি কেন্দুয়াতে ওদেরই ভাই লক্ষ্মণ দাস বাউলের বাড়ি। দেখি নবনী দাস বাউলের সমাধি। আমার সারা শরীরে তখন ঝড় ওঠে। আমি দেখি শান্তিনিকেতনের আশ্রমে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথকে গান শোনাচ্ছেন নবনী দাস বাউল!

আসি মুর্শিদাবাদ। থাকতে শুরু করি মজলিশপুরে শশাঙ্ক দাস বৈরাগ্যেরই ওখানে। আলাপ হয় ওঁর শিষ্য বেলডাঙ্গার সোমেন বিশ্বাসের সঙ্গে,চলে যাই সাটুই। প্রখ্যাত বাউল মনোমোহন দাসের সমাধি বাড়িতে। সুলক্ষনার সঙ্গে আলাপ হয় আমার। এভাবেই বাউল বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকে আমার জীবন, ফাল্গুনে ঘোষপাড়া, চৈত্রে অগ্রদ্বীপ, শেষচৈত্রে পাথরচাপুড়ি, জৈষ্ঠ্যে আড়ংঘাটার যুগলকিশোর–বাৎসরিক মেলার সুবাদে আমার বাউল সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্টতা বেড়ে চলে। এইসব মেলায় আমি খুঁজে পাই সাহেবধনী, কর্তাভজা, বলরামভজা, জাতবৈষ্ণব, পাটুলি স্রোতের সহজিয়া, রাধাবল্লভী, বৈরাগী, ন্যাড়া, সাঁই, আউল, দরবেশ, খুশি বিশ্বাসী, গৌরবাদী, মতুয়াপন্থীদের–যারা সকলেই বাউলের সমাজে ঢুকে পড়েছেন। সেই সমাজে, মেলায়, দিবসী, মচ্ছবে দেখা হয়ে যায় তান্ত্রিক ভৈরবী মা, অঘোরী সাধুদের সঙ্গেও। বুঝি লোকায়ত সাধকদের মধ্যে আড়াআড়ি নেই। বৈষ্ণবতীর্থ কেঁদুলি তাই পশ্চিমবঙ্গের বাউলদের প্রধান আখড়া। বাৎসরিক সমাবেশে এখানে সবচেয়ে বড় বাউল সমাগম হয়। ফরাসি, জাপানিদের পাশাপাশি কুষ্টিয়া থেকেও সাধক বাউলেরা আসেন। সাধকদের পাশাপাশি পাকা প্রোফেশনাল পূর্ণচন্দ্র দাস, পবন দাসেরা পর্যন্ত এ সময় জয়দেবে গান করেন। থাকেন খয়েরবুনির সনাতন দাস বাউলের মতো প্রবীন সাধক বাউল; দেশবিদেশ ঘুরে উল্লেখযোগ্য সরকারী খেতাবও তাঁর ঝুলিতে; ঋত্বিক ঘটকের পুত্র ঋতবান তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র পর্যন্ত নির্মান করেন, এখনকার পাকা আরেক প্রোফেশনাল শিল্পী পার্বতী দাস বাউলও সনাতনের শিষ্যা। গৌর ক্ষ্যাপা সনাতনের মতো অতখানি উঁচু পর্যায়ে না পৌঁছলেও বাউল সমাজে ওরও যথেষ্ট সম্মান আছে। তিনিও বহুবার বিদেশ গেছেন। এখনকার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যচিত্র নির্মাতা ল্যাডলী মুখোপাধ্যায়ও ওঁর ওপর একটি তথ্যচিত্র তৈরী করেছেন। তা এই গৌর ক্ষ্যাপাও মেলার জয়দেবে আকর্ষনের। বাঁকুড়ার সোনামুখীর বাউল সমাবেশ বৈষ্ণব সাধক মনোহর ক্ষ্যাপার প্রসিদ্ধিতে। একইভাবে বর্ধমানের অগ্রদ্বীপও বৈষ্ণব প্রসিদ্ধিতে জুড়ে। বীরভূমের কোটাসুরের আশ্রম ও মেলা নারায়নচাঁদ গোঁসাই ও তাঁর সাধন সঙ্গিনী ক্ষ্যাপা মা’র প্রসিদ্ধিতেই। বর্ধমানের দধিয়ার বোরেগীতলার মেলা, বেনালীপুরের মেলা, মালদহের রামকেলীর মেলা সবই কায়াবাদী বৈষ্ণব সহজিয়াদের মিলনক্ষেত্র। কিন্তু এগুলো সব এখন বাউল সমাবেশে পূর্ণ। আসলে বৈষ্ণব বাউল মিল-অমিলের ব্যাপার নয়, আসল ব্যাপারটি হল গিয়ে আরোপ সাধনার। অনুমানের পথ ছেড়ে বর্তমানের পথে, দেহভাণ্ডের মশগুল রসে নিমজ্জিত মানুষজনের মিলনক্ষেত্র হল গিয়ে এইসব গ্রাম বাংলার পুরনো মেলা, দিবসী, সাধু সমাগমের অনুষ্ঠান। আচরণবাদীদের সেই ভিড়ের আমিও তো একজন। আমি সাধক নই, সাধনসঙ্গে মিশে মিশে সাধকদেরই ‘মনের মানুষ’। সাধকেরা সব কৃপা করে, ভালোবেসে, স্নেহ দিয়ে আমাকে জায়গা দিয়েছেন তাঁদেরই আখড়াবাড়িতে। আমি সেখানেই থেকে দেখেছি সাধনস্রোতকে। গানে মজে প্রতীকী ভাষার আলোকসম্পাত খুঁজতে সখ্য বাড়িয়েছি এঁদের সঙ্গে। এঁরা দেহতত্ত্ব, সাধনরীতি, স্থলন, ব্যভিচার, সাধনের উচ্চদশা কখন কেমনভাবে যে খুলে দিয়েছেন আমার সম্মুখে নিজেরাও জানেন না।

সেইসব বৃত্তান্ত কোনওদিন লিখব এও আমি স্বপ্নে ভাবিনি। রক্তে লোকায়ত সাধনার বীজ থাকলেও লিখতাম তো কবিতা। এখনও লিখি না যে তাও নয়। তবে আমার গবেষণাকেন্দ্রিক নানা বিষয়ে লেখালেখির চাপে মূলত সে লেখা ‘দেশ’ পত্রিকা কেন্দ্রিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বাংলা কবিতার মান্য কবি রমেন্দ্রকুমার আচার্য চৌধুরী হলেন মুক্তাগাছার বিখ্যাত জমিদার বংশের সন্তান। ওঁর বাড়িটি ছিল আমার আখড়া শশান বাদে সময় কাটানোর আরেক জায়গা। আমার কলেজে পড়ার বয়সে নৈহাটির সেই বনানী বাড়িতেই আমি তাবড় তাবড় সব কবিদের পেয়েছি। তাই সেই বৃত্তেও মেলামেশাটাও আমার সহজ হয়ে উঠেছে। একদিকে কবিতা লেখা, কবিতা বিষয়ক গদ্য লেখা, কবিদের সঙ্গে সময় কাটানো অপরদিকে আমার সেই লুক্কায়িত জগতে মেলামেশা–এভাবেই কাটছিল দিন। কিন্তু একসময় লুকনো জগত্তার কথা জেনে ফেললেন  ‘পত্রলেখা’র কর্ণধার গুনেন শীল। ডেকে পাঠালেন আমাকে। বাউলদের নিয়ে লিখবার কথা শুনে কলমে আমার আড়ষ্টতা, অথচ এ জগতের অজস্র গান আমার টেপ রেকর্ডারে বন্দী আর কথা নিয়ম করে আমার ডায়েরী লেখার খাতায়। প্রকাশক তাড়া দিচ্ছেন। লিখতে পারছি না আমি। সেই অস্বস্তির সময় গুরু আমাকে বললেন, তুমি লেখ এ জগতের কথা; বেষ্টিত আড়াল ভেঙে ভাবসাধনার আসল সত্যটুকু তুলে ধর।

গুরুর কৃপাতে আপনাআপনিই লেখা হয়ে উঠল। এক তীব্র নেশায় লিখে ফেললাম বই। প্রকাশকের ঘর থেকে ২০১১ সালের বইমেলায় বেরোলো বাউল গানের। কথকতা। আমি দেখলাম আমার মতো লেখকের বইও বিকোচ্ছে, সংবাদ পত্রে আলোচনা হচ্ছে। এরপর একের পর এক লিখতে শুরু করলাম লোকায়ত সাধকদের কথা। আমাদের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনীর তথাকথিত উচ্চকোটির সংস্কৃতির ভেতর এই যুগল সাধনা নিয়ে বেশ কিছু প্রচলিত ধারণা আছে। বহমান ধারণার ভেতর রয়েছে অবশ্য সাধনবৃত্তেরই কিছু ব্যভিচার ও যৌনবিকৃতি। যা দেখেছি, যেভাবে দেখেছি, বুঝেছি, রপ্ত করেছি সবই দিয়ে আমি আজও লিখে চলেছি প্রান্তিক এই সমাজ কাহিনী। শাস্ত্রবিধিকে উপেক্ষা করে আলাদা অধিষ্ঠানের এই জগৎ আমাকে শিখিয়েছে অল্পে তুষ্ট হয়ে বেঁচে থাকা। আখড়া-শ্মশানে আমার সেই সামান্য বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতার খবর যে এ দেশ ছেড়ে প্রাণাধিক বাংলাদেশে পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছবে এও তো আমি স্বপ্নে ভাবিনি।

আখড়া শ্মশানে থাকতে থাকতে কবে যেন তৈরি হয়ে গিয়েছে আমার একটা মাটির মন। তথাকথিত আমার উচ্চশিক্ষা ও উচ্চবৃত্তের সংস্কৃতির বাইরে আমি দাঁড়াতে চেয়েছি হয়তো বা নদিয়া-ময়মনসিংহের মরমিয়াবাদের বীজ আমার শরীরে ঢুকে পড়ার কারণে। এরকমই যে আমার বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস থেকেই শিক্ষিত হয়েও আধুনিক যান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমার তীব্র অনীহা। যদিও বিশ শতকের প্রথমেই হাটগোবিন্দপুরে বাউলের আখড়ায় টেলিফোন, ক্রমে ক্রমে মোবাইল, ফেসবুকে পর্যন্ত বাউলের আইডি। বিশ্বজোড়া বাউল এখন, আধুনিক জীবনে অভ্যস্থ; নানা দেশ দেখার অভিজ্ঞতাও তাঁর তাপ্পি মারা পোশাকে লেগে। তবে এতে আমি কিছু দোষ দেখি না। ধূলিতল অন্তরে রেখেও বিশ্ববোধের সঙ্গে লোকায়নের মেলবন্ধন ঘটানোটাই বুদ্ধিমানের। তাহলে আমাদের প্রাচীন শেকড়গুলো। ধরে রাখা সম্ভব। সেই সম্ভাবনা পশ্চিমবঙ্গের বাউল সমাজেও এসেছে কিছু শিক্ষিত সংস্কৃতিবান মানুষের সহায়তায়। এখানকার কিছু বাউল তাই তাঁদের দৈন্যতা ও মাটির জড়তা কাটিয়ে আধুনিক হতে পেরেছেন। তাছাড়া এখন লোকশিল্পীদের ভাতারও ব্যবস্থা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের সরকার। সরকারী মেলা-অনুষ্ঠানে গান গেয়ে উপার্জনের পথে গিয়েছেন বাউল। সামান্য শ্রী ফিরেছে বাউলের জীবনে।

আমিও আমার জড়তা কাটিয়েছি অনেক। মোবাইল ব্যবহার করি। যদিও অনেক লেখকের মতো কম্পিউটারে বসে লিখতে পারি না। এখনও হাতে লিখতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করি। বছরখানেক হলো ফেসবুক ব্যবহার করি আমার বন্ধু ও প্রকাশকদের বকাবকিতে। আর এই ফেসবুকে এসে যেটা হল, আমার পূর্বপুরুষের দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বেড়ে গেল। আস্তে-ধীরে জানতে পারলাম এখানকারও কিছু মানুষ আমার বইপত্র পড়েছেন। আমার মতো সামান্য লেখকের বই কোলকাতা উজিয়ে বাংলাদেশ পৌঁছেছে এতেই আমার আনন্দ।

সিলেটের বাসিন্দা লোকসংস্কৃতি গবেষক সুমনকুমার দাশ আমার অনীহার সেই ফেসবুকের দৌলতেই এখন প্রাণের বন্ধু। যদিও ওকে সামনাসামনি কখনো দেখিনি। ও একদিন আমাকে চমকিত করে বলে বসল, আমার বইগুলো ও পড়েছে এবং রেফারেন্সের কাজে লাগিয়েছে কিছু, আর সে আমাকে ‘বাউল গানের কথকতা’ বেরোবার পর হতে খুঁজছে। আমার তো তখন পিলে থমকে যাওয়ার জোগাড়। তা সেই সুমনই একদিন প্রস্তাব দিয়ে বসল বইয়ের। ওরই ব্যবস্থাপনায় বই করতে এগিয়ে এলেন ঢাকার উৎস প্রকাশনার কর্ণধার। আমি এত সম্মানিত ও বিস্মিত যে মোস্তফা সেলিম কোলকাতা এসে আমার সঙ্গে দেখা করে গেলেন। সুফিবাদ, মরমিবাদ, পুঁথি সাহিত্যের নানা বিষয় নিয়ে রীতিমতো পাণ্ডিত্যপূর্ণ এই মানুষটির সঙ্গে আমি সময় কাটিয়ে নিজেকেই ধন্য মনে করি। তিনিও এখন আমার বন্ধু। আমার আশা অন্যান্য প্রকাশকদের মতোই তাঁর সঙ্গে আমার প্রকাশক–লেখক সম্পর্ক কখনোই হবে না। চিরকালই আমার বন্ধু ভাগ্য ভালো। বন্ধুরাই সবসময়। এগিয়ে এসে আমাকে তুলে ধরেছেন, আমি শুধু ওদের সঙ্গে সেঁটে থাকতে চেয়েছি। এছাড়া আমার যে আর কোনও যোগ্যতা নেই।

‘পশ্চিমবঙ্গের বাউল’ অমর একুশে গ্রন্থমেলাতে রমরম করে চলল। চক্ৰতীর্থে বসেই সে সংবাদ এলো। এরপর ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ছড়িয়ে পড়ল বই। বন্ধুরা জানাতে থাকলেন ফেসবুকে। ওখানকার মান্য সংবাদপত্র ও পত্রিকাতে আদৃত হল। বই। এর পাশাপাশি বহিবঙ্গ ত্রিপুরা থেকেও বের হল বই ‘বাউল বাউলানির দেহসাধনা’। স্রোত প্রকাশনার গোবিন্দ ধর যত্ন নিয়ে ছাপলেন বই। ত্রিপুরা থেকে অসম ছড়িয়ে পড়ল বই। সেখানকার বাঙালি পাঠকদের কাছ থেকেও খবর আসতে থাকলো। এইসব বার্তার ভেতরই আবার নতুন কাজ, নতুন বই, দুই বাংলার বাউল আখড়ার আখ্যান। বাংলাদেশ, ত্রিপুরা, অসম, পশ্চিমবঙ্গ–বাংলাভাষার পাঠকদের কাছে এভাবে যে ছড়িয়ে পড়ব কোনওদিন ভাবিনি। গুরুকৃপা না হলে এমন উজানে ভাঁটির নাও বাওয়া কখনো কি সম্ভব? তন্নো ধিয়ঃ প্রচোদ্দয়াৎ।

এবারের ছড়িয়ে পড়ার দায়িত্ব নিয়েছে বন্ধু অরুণাভ। ওদের আত্মজা পাবলিশার্স এর তৎপরতায় নতুন বই পাঠক আদৃত হলে দীর্ঘদিনের আমার এই ঘোরাফেরাটা আরও একটু পূর্ণতার দিকে যেতে পারে। সাঁইজি বলেন, ‘মুর্শিদ পথের দাঁড়া যাবে কোথায় তারে ছাড়া।’

Book Content

০১.১ প্রতিপদে পূর্ণিমা যার তিন ধারাতে জনম তার
০১.২ দেহের খবর জান গে রে মন
০১.৩ ত্রিকোণ যন্ত্র পাতালভেদী মধ্যে আছে মহা ঔষধি
০১.৪ ফুলের লাগি কতজন হল বিরাগী
০১.৫ জীব দেহে শুক্ররূপে এ ব্রহ্মাণ্ড আছে ব্যেপে
০২.১ বাউল আবদুল করিম বলে
০২.২ দুর্বিন শাহ কয়
০২.৩ দীন প্রশান্ত বলছে ডেকে
০২.৪ আপন সাধন কথা না কহিও যথাতথা
০২.৫ সাধনসঙ্গিনী
০২.৬ আখড়ানামা
লেখক: সোমব্রত সরকারবইয়ের ধরন: প্রবন্ধ ও গবেষণা
ফকির বাউল তন্ত্রের ডায়েরি - সোমব্রত সরকার

ফকির বাউল তন্ত্রের ডায়েরি – সোমব্রত সরকার

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.