ডাইনিবুড়ি ও অন্যান্য – অভীক সরকার
প্রথম প্রকাশ অক্টোবর ২০২৪
মূল প্রচ্ছদ চিত্র আরাত্রিকা ঘোষ
ক্যালিগ্রাফি এবং সামগ্রিক বিন্যাস কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল
অলংকরণ আরাত্রিকা ঘোষ
প্রকাশক শংকর মণ্ডল
.
উৎসর্গ
অগ্রজ সাহিত্যিক শ্রী সৈকত মুখোপাধ্যায়ের করকমলে৷
.
কবে এবং কী ভাবে যে এই তন্ত্র সম্বন্ধীয় লেখালিখির জগতে প্রবেশ করলাম, সে আমার কাছেও রহস্যময়৷ বস্তুতপক্ষে কোনও একটি ওয়েবজিনের জনৈক সম্পাদিকা আমাকে দিয়ে প্রায় জোর করে ‘শোধ’ গল্পটি না লেখালে এই ধরনের লেখালিখির জগতে আমার আসাই হত না৷ কিন্তু ত্রিগুণাত্মিকা জগন্ময়ীর মনে কী ইচ্ছা ছিল কে জানে৷ আজ অবধি আমি রম্যরচনা, প্রবন্ধ, ইতিহাসাশ্রয়ী, গোয়েন্দা কাহিনী, সব ধরনের লেখাই লিখেছি৷ কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য যে এদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় আমার তন্ত্র মন্ত্র সংক্রান্ত গল্প উপন্যাসগুলিই৷
এই গল্পগুলি লেখার সময়েই আমি কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের চরিত্রটিকে আমার গল্পে আনি৷ ইনি একজন ঐতিহাসিক চরিত্র, ‘বৃহৎ তন্ত্রসার’ গ্রন্থের প্রণেতা এবং বাংলার শাক্তসাধনার ইতিহাসে একজন অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি৷ আমি শুধু তাঁর নাম, এবং বাংলার তন্ত্রসাধনার ইতিহাসে তাঁর খ্যাতির অংশটুকু নিয়েছি৷ গল্প উপন্যাসের প্রয়োজনে তাঁর চরিত্রনির্মাণ একেবারেই আমার স্বকপোলকল্পিত৷
আরেকটি চরিত্র আমাকে এই ধরনের গল্পের প্রয়োজনে সৃজন করতে হয়েছে৷ তিনি হচ্ছেন ভবতারণ চট্টোপাধ্যায়৷ বাংলা সাহিত্যে বিখ্যাত সব গল্প বলিয়েরা আছেন, তারিণীখুড়ো, ঘনাদা থেকে শুরু করে বরদা অবধি৷ ভবতারণও তেমনই একজন গল্পবলিয়ে৷ তিনি ক্লাবে আসেন, ছেলে ছোকরাদের সঙ্গে আড্ডা দেন, আর মাঝে মাঝে তাঁর ঝুলি থেকে আশ্চর্য সব গল্প শোনান৷
এই তান্ত্রিক অ্যাডভেঞ্চার কাম হরর স্টোরি সংক্রান্ত লেখালিখির কারণেই আমার প্রবেশ তন্ত্র-মন্ত্র-ধর্মের ইতিহাসের জটিল এবং আকর্ষক পরিসরে৷ এই বিষয়ে যত পড়েছি, তাতে আমার আগ্রহ বেড়েছে বই কমেনি৷ মা ভবতারিণীর কৃপা হলে দশমহাবিদ্যার প্রতিটি দেবীকে নিয়ে একটি সিরিজ লেখার আশা রাখি৷
‘ডাইনিবুড়ি ও অন্যান্য’ বইটিতে দুটি উপন্যাস এবং দুটি গল্প রয়েছে৷ যে বড়গল্পটির নামে বইটির নাম, সেই ‘ডাইনিবুড়ি’ গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিল একটি বহুবিখ্যাত কিশোর পত্রিকায়৷ বাঁকুড়া জেলার টেরাকোটার মন্দির এবং অন্যান্য শিল্পকর্ম প্রভূত বিখ্যাত৷ কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রিয় ওখানকার জঙ্গল৷ সেই পটভূমিতেই ডাইনিপ্রথার কুসংস্কার এবং তার বিরুদ্ধে আদিম মাতৃস্নেহের জয়, এই হচ্ছে গল্পটির উপজীব্য৷
এমনই আরেকটি গল্প ‘দেওয়ানগঞ্জের রাস্তা’টা৷ এটিই এই বইয়ের সবচেয়ে ছোট গল্প৷ এখানে কোন তন্ত্রক্রিয়া নয়, প্রাধান্য পেয়েছে শুধুমাত্র ভয়ের আবহ৷
‘গৌরী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম একটি কিশোর পত্রিকার জন্য৷ পাহাড়ি আরণ্যক পরিবেশ চিরকালই আমার মনে এক আশ্চর্য সম্ভ্রমমিশ্রিত ভালোবাসার উদ্যেক করে৷ মনে হয় ওই আদিম গহীন অন্ধকারের মধ্যে প্রকৃতি যেন এক অজানা রহস্য লুকিয়ে রেখেছে৷ তাকে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না, শুধু অনুভব করা যায়৷ সেখানেই এক নিষ্পাপ বালিকার দেহে মনে বাসা বাঁধে এক অতৃপ্ত প্রেতিনী৷ সেই কাহিনী নিয়েই ‘গৌরী৷’
শেষের উপন্যাসটির নাম ‘দ্রৌলমার খড়্গ৷’ এটি পূর্বে কোথাও প্রকাশিত হয়নি, সরাসরি পাণ্ডুলিপি থেকেই ছাপা হচ্ছে৷ এমন কী এটিই আমার প্রথম উপন্যাস যেটি প্রকাশিত হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একটি বহুল প্রচারিত এবং বহু বিখ্যাত অডিও স্টোরি চ্যানেলে পঠিত হবে৷ আমি ‘গপ্পোমীরের ঠেক’, মীর আফসার আলি এবং গোধূলি শর্মার কাছে সবিশেষ কৃতজ্ঞ৷
‘দ্রৌলমার খড়্গ’র পটভূমি হচ্ছে মধ্যযুগের বাংলা৷ এবং এই প্রথমবারের জন্য আগমবাগীশ কোনও গল্পে তাঁর নিজের সমকালীন সময়েই উপস্থিত থাকবেন৷ এর আগে প্রতিটি গল্পে তিনি একজন টাইম ট্রাভেলার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন৷ আর এই অভিযানে তাঁর সঙ্গী তাঁর অভিন্নহৃদয় বন্ধু জাটিয়া জাদু৷ ইনিও ঐতিহাসিক চরিত্র, কৃষ্ণানন্দের সমসাময়িক একজন বিখ্যাত শাক্তসাধক৷
এই কাহিনীতে আমি একজন ডাকাতসর্দারের চরিত্রকে এঁকেছি গল্পের অ্যান্টাগনিস্ট হিসেবে৷ তন্ত্রশক্তিতে সে মহাবলী, অথচ পার্থিব কামনার বন্ধন জয় করতে পারেনি৷ এর সঙ্গে মিশেছে এক কন্যাস্নেহে অন্ধ পিতার অসহায়তা, ছায়াপিশাচের দল, এক মাতৃহীন শিশুর ভালোবাসার আকাঙ্খা, দুটি কিশোর প্রাণের সদ্যোস্ফূট প্রণয় আর সর্বোপরি অসমা মর্যাদাবতী মা দ্রৌলমার রুদ্ররূপের অবতারণা৷ গল্পটি লিখে প্রভূত আনন্দ পেয়েছি বললে কম বলা হয়৷
দ্রৌলমার খড়্গ লেখার সময় ভগিনীসমা কোয়েল ভট্টাচার্য কিছু তথ্য দিয়ে অনেক সাহায্য করেছেন৷ বইটির মূল প্রচ্ছদচিত্রটি’র জন্য আমি কন্যাসমা আরাত্রিকা ঘোষের কাছে সবিশেষ কৃতজ্ঞ৷ বইটির প্রতিটি অলঙ্করণও তারই করা৷ মা ভবতারিণীর কাছে কল্যাণীয়া আরাত্রিকার দীর্ঘ, নীরোগ, নিরুপদ্রব এবং সফল জীবন কামনা করি৷
বইটির নামাঙ্কণ এবং প্রচ্ছদের সামগ্রিক বিন্যাস করেছেন অনুজপ্রতিম কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল৷ কৃষ্ণেন্দু এই নিয়ে আমার পাঁচটি বইয়ের প্রচ্ছদ প্রস্তুত করলেন৷ তাঁকে অশেষ ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা জানাই৷
‘ডাইনিবুড়ি ও অন্যান্য’ এই সিরিজের আমার পঞ্চম বই৷ এর আগের চারটি বইই পাঠকের কাছে বহুল পরিমাণে সমাদৃত এবং সমালোচদের আশীর্বাদধন্য হয়েছে৷ আশা করি এই বইটিও আপনাদের আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত হবে না৷ মা ভবতারিণীর কাছে সবার সুস্থ ও নীরোগ জীবন প্রার্থনা করে এখানেই শেষ করছি৷ অলমিতি৷
অভীক সরকার
২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ৷
শারদ পূর্ণিমা৷ লক্ষ্মীপূজা৷
Okk
Good