• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

জোছনা ও জননীর গল্প – হুমায়ূন আহমেদ

লাইব্রেরি » হুমায়ূন আহমেদ » জোছনা ও জননীর গল্প – হুমায়ূন আহমেদ

জোছনা ও জননীর গল্প – হুমায়ূন আহমেদ

পূর্বকথা

মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয়, তখন আমার বয়স তেইশ। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কেমিস্ট্রিতে অনার্স থিয়োরি পরীক্ষা দিয়েছি, প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার জন্যে অপেক্ষা। সুন্দর সময় কাটছে। আর মাত্র এক বৎসর–M.Sc পাশ করে ফেলব। ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে যোগ দেব। পিএইচডি করতে যাব দেশের বাইরে।

গল্প-উপন্যাসে আদর্শ ভালো ছাত্রের কিছু চিত্র আঁকা হয়। আমি ছিলাম। সে রকম একজন। আদর্শ ভালো ছাত্রের বন্ধু-বান্ধব থাকবে না, আমার ছিল না। তাদের সময় কাটবে বই পড়ে – আমারও তাই কাটে। উনসত্ত্বরের গণআন্দোলনের অতি উত্তেজনাময় সময়ে আমি ছিলাম উত্তেজনামুক্ত তরুণ যুবক, যার একমাত্র বিনোদন পাবলিক লাইব্রেরিতে গল্পের বই পড়া। শরিফ মিয়ার ক্যান্টিনে চা খাওয়া, মাঝে-মধ্যে বাংলা একাডেমীতে উঁকি দেয়া। সেখানে প্রায়ই গানের আসর হতো।

যেখানেই থাকি সন্ধ্যার আগে আগে মহসিন হলে নিজের ঘরে ফিরে আসতাম। ভালো ছাত্র হিসেবে সেখানে আমি একটি সিঙ্গেল সিটের রুম পেয়েছিলাম। নানান ধরনের বই দিয়ে রুম ভর্তি করে ফেলেছিলাম। গানের প্রতি আমার প্রবল দুর্বলতা দেখে বাবা আমাকে একটা রেকর্ড প্লেয়ার কিনে দিয়েছিলেন। বাইরে যখন ভয়াবহ আন্দোলন চলছে, তখন আমি দরজা বন্ধ করে গান শুনছি–কেন পান্থ এ চঞ্চলতা?

আমার সাজানো অতি পরিচিত ভুবন পুরোপুরি ভেঙে পড়ল ১৯৭১ সনে। যে পরিস্থিতিতে আমি পড়লাম, তার জন্যে কোনোরকম মানসিক প্ৰস্তুতি আমার ছিল না! ছায়াঘেরা শান্ত দিঘির একটা মাছ কি হঠাৎ যেন নিয়ে যাওয়া হলো চৈত্রের দাবদাহে ঝলসে যাওয়া স্থলভূমিতে। কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা! ভাইবোন নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালাচ্ছি। জীবন বাঁচানোর জন্যে মাদ্রাসার ছাত্র হিসেবে ভর্তি হতে গেছি শর্ষিনার পীর সাহেবের মাদ্রাসায়। পাকিস্তান মিলিটারি মাথায় গুলির বাক্স তুলে দিয়েছে। অকল্পনীয় ওজনের গুলির বাক্স মাথায় নিয়ে সৈন্যদের সঙ্গে বারহাট্টা থেকে হেঁটে হেঁটে এসেছি নেত্রকোনা পর্যন্ত। মিলিটারির বন্দিশিবিরে কাটল কিছু সময়। কী ভয়ঙ্কর অত্যাচার! এক সকালে মিলিটারিদের একজন এসে আমার হাতে বিশাল সাইজের একটা সাগরকলা ধরিয়ে দিয়ে বলল, তোমাকে কাল সকালে গুলি করে মারা হবে। এটা তোমার জন্যে ভালো। তুমি যদি নিরপরাধ হও, সরাসরি বেহেশতে চলে যাবে। আর যদি অপরাধী হও, তাহলে মৃত্যু তোমার প্রাপ্য শাস্তি।

এইসব ঘটনা আমি নানান সময়ে নানান পত্র-পত্রিকায় লিখেছি। মুক্তিযুদ্ধের আনন্দ, বেদনা, হতাশা, গ্লানি নিয়ে বেশ কিছু ছোটগল্প লিখেছি। কয়েকটা উপন্যাসও লিখেছি। একসময় মনে হলো, মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় ধরে রাখার জন্যে একটা উপন্যাস লেখা উচিত। মানুষকে যেমন পিতৃঋণ-মাতৃঋণ শোধ করতে হয়, দেশমাতার ঋণও শোধ করতে হয়। একজন লেখক সেই ঋণ শোধ করেন লেখার মাধ্যমে।

লেখা শুরু করলাম। জোছনা ও জননীর গল্প ধারাবাহিকভাবে ভোরের কাগজে ছাপা হতে লাগল। আমি কখনোই কোনো ধারাবাহিক লেখা শেষ করতে পারি না। এটিও পারলাম না। ছয়-সাত কিস্তি লিখে লেখা বন্ধ করে দিলাম। দুবছর পর আবার শুরু করলাম। আবারো কয়েক কিস্তি লিখে লেখা বন্ধ। আর লেখা হয় না। অন্য লেখা লিখি, নাটক বানাই, সিনেমা বানাই, মুক্তিযুদ্ধের লেখাটা আর ধরা হয় না। মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে–তখন নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দেই যে, লিখব একদিন লিখব। ব্যস্ততা কমলেই লেখা শুরু করব। এখনো সময় আছে। অনেক সময়।

একদিন হঠাৎ টের পেলাম অনেক সময় আমার হাতে নেই। সময় শেষ হয়ে গেছে। জোছনা ও জননীর গল্প আর লেখা হবে না। তখন আমি শুয়ে আছি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালের একটা ট্রলিতে। দুজন নার্সট্রিলি ঠেলে আমাকে অপারেটিং টেবিলে নিয়ে যাচ্ছেন। ওপেন হার্ট সার্জারি হবে। আমাকে একটা ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। চোখের পাতা ভারী হতে শুরু করেছে। হাসপাতালের আলোর তীব্ৰতা দ্রুত কমে যাচ্ছে।

যখন অচেতন হতে শুরু করেছি, তখন মনে হলো জোছনা ও জননীর গল্প তো লেখা হলো না। আমাকে যদি আর একবার পৃথিবীতে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হয়–আমি এই লেখাটি অবশ্যই শেষ করব। অচেতন হবার আগ মুহুর্তে হঠাৎ আনন্দে অভিভূত হলাম। কারণ তখনই প্রথম টের পেলাম আমি আসলেই একজন লেখক। মৃত্যুর খুব কাছাকাছি যাবার আগের মুহূর্তে অসমাপ্ত লেখার চিন্তাই ছিল আমার একমাত্র চিন্তা।

দেশে ফিরে লেখায় হাত দিলাম। শরীর খুব দুর্বল। দিনে দুই তিন পাতার বেশি লিখতে পারি না। এইভাবেই লেখা শেষ করেছি। এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমি দেশমাতার ঋণ শোধ করার চেষ্টা করেছি। এই আনন্দের কোনো সীমা নেই।

জোছনা ও জননীর গল্প কোনো ইতিহাসের বই না, এটা একটা উপন্যাস। তারপরেও ইতিহাসের খুব কাছাকাছি থাকার চেষ্টা আমি করেছি। সেখানেও ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে। হওয়াটাও স্বাভাবিক। উপন্যাস যেহেতু কোনো আসমানী কিতাব না, এইসব ভুল-ভ্ৰান্তি দূর করার উপায় আছে।

উপন্যাসে চরিত্র হিসেবে সেই সময়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু মানুষজন এনেছি। এই স্বাধীনতা একজন ঔপন্যাসিকের আছে। গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের চরিত্র ফুটিয়ে তোলায় কোনো ভুল। যদি করে থাকি, তার জন্যে আগেভাগেই ক্ষমা চাচ্ছি। অতি বিনয়ের সঙ্গে সেই বিখ্যাত উক্তি মনে করিয়ে দিচ্ছি–একজন লেখক যা লিখবেন, সেটাই সত্যি।

সেই সত্য যা রচিবে তুমি, ঘটে যা তা সব সত্য নহে।
কবি, তব মনোভূমি রামের জনম স্থান, অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো।।

উপন্যাসে বর্ণিত প্ৰায় সব ঘটনাই সত্যি। কিছু নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা। কিছু অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে ধার নেয়া। প্রকাশিত হবার আগেই এই উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি অনেককে পড়িয়েছি। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখে নি (এই প্রজন্মের পাঠকদের কথা বলছি)। তারা পড়ার পর বলেছে–উপন্যাসের অনেক ঘটনাই তাদের কাছে কাল্পনিক বলে মনে হচ্ছে, এরকমও কি হয়?

তাদের কাছে আমার একটাই কথা–সে বড় অদ্ভুত সময় ছিল। স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের মিশ্র এক জগৎ। সবই বাস্তব, আবার সবই অবাস্তব। আমি সেই ভয়ঙ্কর সুন্দর সুররিয়েলিস্টিক সময় পার করে এসেছি। তার খানিকটাও যদি ধরে থাকতে পারি, তাহলেই আমার মানবজীবন ধন্য।

জোছনা ও জননীর গল্প বইটি লেখার ব্যাপারে নানান তথ্য দিয়ে যারা আমাকে সাহায্য করেছেন তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। মুক্তিযুদ্ধের উপর প্রকাশিত বইগুলি আমাকে খুব সাহায্য করেছে। বিশেষ করে উল্লেখ করছি। রবীন্দ্রনাথ ত্ৰিবেদীর লেখা ৭০১-এর দশমাস গ্রন্থটি। দীর্ঘ দশমাসের প্রতিদিনের ঘটনা তিনি খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন। লেখকলেখিকাদের ডায়েরির মতো লেখা বইগুলিও আমাকে সাহায্য করেছে। ঢাকা শহরে প্রতিদিন কী ঘটছিল ডায়েরি পড়ে তা বোঝা যাচ্ছিল। তবে এই প্রসঙ্গে ছোট্ট একটা খটকার কথাও বলি। ডায়েরি জাতীয় গ্রন্থগুলি পড়ে আমার মনে হয়েছে সেগুলি তখনকার লেখা না। পরে তারিখ দিয়ে সাজানো হয়েছে। কারণ একজন কোনো একটি বিশেষ দিনে লিখছেন–ঢাকা শহরে সকাল থেকেই প্ৰবল বর্ষণ, আরেকজন একই দিনে লিখছেন–কঠিন রোদ। রোদে ঢাকা শহর ঝলসে যাচ্ছে। একজন লিখছেন–এই মাত্র খবর পেলাম প্ৰবাসী সরকার শপথ নিয়েছে। অথচ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়েছে তার দুদিন পরে। ডায়েরি রচনায় রাজনৈতিক মতাদর্শও কাজ করেছে। কারো কারো ডায়রিতে প্রতিদিনকার সমস্ত খুঁটিনাটি আছে, কিন্তু জিয়াউর রহমান নামের একজন মেজর যিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার যুদ্ধে সবাইকে আহবান করেছেন সেই উল্লেখ নেই। তাঁর নামটিও নেই।

জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের বিখ্যাত ভাষণ প্রসঙ্গেও একই ব্যাপার। জাস্টিস মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সাহেবের বিখ্যাত গ্ৰন্থ বাংলাদেশের তারিখ প্রথম সংস্করণে তিনি উল্লেখ করেছেন ভাষণের শেষে শেখ মুজিবুর রহমান বললেন, জয় বাংলা। জিয়ে পাকিস্তান। দ্বিতীয় সংস্করণে তিনি জিয়ে পাকিস্তান অংশটি বাদ দিলেন। কবি শামসুর রহমানের লেখা আত্মজীবনী যা দৈনিক জনকণ্ঠে কালের ধূলোয় লেখা শিরোনামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে সেখানেও তিনি বলেছেন শেখ মুজিবুর রহমানের শেষ কথা ছিল জিয়ে পাকিস্তান। আরো অনেকের কাছে আমি এ ধরনের কথা শুনেছি, যারা আওয়ামী ভাবধারার মানুষ। সমস্যা হলো আমি নিজে ৮ এবং ৯ মার্চের সমস্ত পত্রিকা খুঁজে এরকম কোনো তথ্য পাই নি। তাহলে একটি ভুল ধারণা কেন প্রবাহিত হচ্ছে?

বঙ্গবন্ধু যদি জিয়ে পাকিস্তান বলে থাকেন তাহলে তাতে দোষের কিছু নেই। তিনি যা বলেছেন। অবশ্যই ভেবে চিন্তেই বলেছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁর আলোচনার পথ খোলা রাখতে হবে। তাকে সময় নিতে হবে। ৭ই মার্চে যুদ্ধ ঘোষণার মতো অবস্থা তাঁর ছিল না। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ গেটেসবার্গ এড্রেসের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। এখানে কোনো অস্পষ্টতা থাকা বাঞ্ছনীয় না।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের দলিলের পনেরো খণ্ডের মধ্যে সাতটি খণ্ড আমি মন দিয়ে পড়েছি। আমার উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের দলিল থেকে সরাসরি অনেক অংশ ব্যবহার করেছি। এই দলিল নিয়েও আমার কিছু খটকা আছে। একটি শুধু বলি–রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বন্দি তরুণীদের উপরে নির্যাতনের সাক্ষ্য গ্রন্থাবদ্ধ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে তাদেরকে পায়ে দড়ি বেঁধে বুলিয়ে রাখা হতো। যে তরুণীদের রাখা হয়েছে ভোগের জন্যে তাদেরকে এভাবে বুলিয়ে রাখার পেছনের যুক্তি আমার কাছে পরিষ্কার না। তারপরেও ধরে নিলাম। তাই করা হয়েছে। যা আমার কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য না। তা হলো সাক্ষ্যদানকারী বলছেন এইসব তরুণীদের সঙ্গে বই-খাতা-কলম ছিল। অর্থাৎ স্কুল বা কলেজে যাবার পথে তাদের ধরা হয়েছে। যে ভয়ঙ্কর সময়ের কথা বলা হচ্ছে সে-সময় স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি সবই বন্ধ। বইখাতা নিয়ে কারো বাইরে যাবার প্রশ্নই উঠে না। আমার ধারণা সাক্ষ্যপ্রমাণমূলক তথ্যগুলি ভালোমতো যাচাই করা হয় নি। তাছাড়া জাতিগতভাবেও আমরা অতিকথন পছন্দ করি।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম ছোট করে দেখানোর একটি প্রবণতাও আমাদের আছে। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পর কেউ যদি বাংলাদেশে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস এবং ছোটগল্প পড়ে যুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা করতে চায় তাহলে তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিষয়ে কিছুই জানবে না। আমাদের গল্প উপন্যাসে বিদেশী সৈন্যবাহিনীর বিষয় সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। লেখকরা হয়তো ভেবেছেন এতে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবের হানি হবে।

ঋণ স্বীকারে অগৌরবের কিছু নেই। মহান জাতি এবং মহান মানুষরাই ঋণ স্বীকার করেন। আমি আমার বইটিতে আমাদের দেশের স্বাধীনতার জন্যে যেসব ভারতীয় সৈন্য প্ৰাণ দিয়েছিল তাদেরে একটি তালিকা দিতে চেয়েছিলাম, যাতে পাঠকরা এই দীর্ঘ তালিকা পড়ে একবার শুধু বলেন–আহারে!

তালিকা শেষপর্যন্ত দিলাম না, কারণ তাতে বইয়ের পৃষ্ঠাসংখ্যা আরো একশ বাড়ত। তাছাড়া এই তালিকা যুক্ত করলে অবশ্যই যুদ্ধে শহীদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, সেসময়কার ইপিআর (বর্তমান বিডিআর), পুলিশ বাহিনী, আনসার বাহিনী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা দিতে হতো। আপনারা শুনে বিক্ষিত হবেন, পূর্ণাঙ্গ তালিকা আমাদের হাতে নেই। এখনো তৈরি হচ্ছে। তেত্রিশ বছর আগে যুদ্ধ শেষ হয়েছে। তালিকা তৈরির কাজ শেষ হয় নি। কবে শেষ হবে?

বীরশ্ৰেষ্ঠ তালিকার দিকে আমি প্রায়ই তাকাই। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলি। এই তালিকায় একজনও বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা নেই। অথচ আমি জানি এবং খেতাব যারা দিয়েছেন তারাও জানেন, বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই অসাধারণ সাহস দেখিয়েছেন। যুদ্ধের ট্রেনিং বা অভিজ্ঞতা ছাড়াই তারা যা করেছেন তার তুলনা হবে না। অথচ এরা কেউ স্বীকৃতি পান না। কেন না?

আমার এই বইটির অসম্পূর্ণতার মধ্যে একটি হলো আমি পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা অত্যাচারিত নারীদের বিষয়টি আনতে পারি নি। বিষয়টি এতই স্পর্শকাতর এবং এতই কষ্টকর যে কিছুতেই লিখতে পারলাম না। আশা করছি। অন্যরা লিখবেন। তাদের কলমে এইসব হতভাগ্য তরুণীর অশ্রুজল উঠে আসবে।

এখন নিতান্তই ব্যক্তিগত একটি বিষয় উল্লেখ করি, আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগে আমার জন্মদিনে গুলতেকিনে আমাকে একটা খাতা উপহার দিয়েছিল। স্পাইরেল বাইন্ডিং করা পাঁচশ পৃষ্ঠার নীল মলাটের খাতা। তার অনুরোধ ছিল প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা করে হলেও যেন আমি খাতাটায় মুক্তিযুদ্ধের একটা বড় উপন্যাস লিখি।

সারা জীবনই গুলতেকিনকে অসুখী করেছি। মনে হয় আজ সে খুশি হবে। পরম করুণাময় আমাকে এই গ্রন্থটি লেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাঁর প্রতি জানাচ্ছি। আমার অসীম কৃতজ্ঞতা। দল-মত-ধর্ম সবকিছুর উর্ধে একটি সুখী সুন্দর বাংলাদেশের কামনা করে পূর্বকথা শেষ করছি।

হুমায়ূন আহমেদ
নুহাশপল্পী, গাজীপুর

 

দ্বিতীয় সংস্করণের শুদ্ধি অভিযান

জোছনা ও জননীর গল্প নির্ভুল করার চেষ্টা হিসেবে শুদ্ধি অভিযান চালানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাকে সবচে বেশি সাহায্য করেছেন মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক ও লেখক মেজর (অব) কামরুল হাসান ভূইয়া। আমি জানতাম না যে ৩৬তম ডিভিশন হয় না। তম বাদ যাবে, কিংবা আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ান হবে না। ব্যাটেলিয়ান স্বাধীনতার পরে হয়েছে। শুদ্ধ পাঠ হবে আর্মড পুলিশ। মেঘালয়ের বাংলাদেশ হাসপাতাল হবে না। হবে ত্রিপুরায় বাংলাদেশ হাসপাতাল। এই ভুলটি বেশ বড় ভুল। হারুন হাবীবের লেখায় ডা. সিতারা বেগম বীর প্রতীকের আত্মজৈবনিক অংশে তিনি লিখেছেন মেঘালয়ে বাংলাদেশ হাসপাতাল। আমি সরাসরি সেই লেখা উদ্ধৃত করেছি বলে ভুলটি হয়েছে। ৩ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বেতার টেলিভিশনে যে ভাষণ দিয়েছেন বলে আমি লিখেছি সেটাও ভুল। তিনি কোনো ভাষণ দেন নি, তাঁর বিবৃতি পাঠ করা হয়েছে। যদিও রবীন্দ্রনাথ ত্ৰিবেদী তীর বহুল পঠিত গ্রন্থে ভাষণের কথা বলেছেন। সূত্র হিসেবে দৈনিক পাকিস্তান উল্লেখ করেছেন। আমি রবীন্দ্রনাথ ত্ৰিবেদীর ভাষাটাই নিয়েছিলাম।

প্ৰথম দফা শুদ্ধি অভিযানের পর আমি আরো একটি শুদ্ধি অভিযানের জন্যে অপেক্ষা করছি।

আমার ছোটভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বইটিতে বৈজ্ঞানিক তথ্যের একটি ভুল বের করেছে। যে সময়ের কথা বইটিতে আছে সে সময়ে আকাশে কালপুরুষ থাকে না। এই ভুলটি শুদ্ধ করলাম না। কালপুরুষে যে রহস্যময়তা আছে। অন্য তারামণ্ডলীতে সেই রহস্যময়তা নেই।

থাকুক কিছু ভুল। খাদবিহীন গয়নায় অলংকার হয় না। চাঁদের সৌন্দর্যের একটি কারণ তার কলঙ্ক।

হুমায়ূন আহমেদ
নুহাশপল্পী, গাজীপুর

Book Content

০১. মাওলানা ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরী
০২. শাহেদের অফিস মতিঝিলে
০৩. পুলিশ ইন্সপেক্টর মোবারক হোসেন
০৪. নীলগঞ্জ হাইস্কুলের বারান্দা
০৫. কলিমউল্লাহ নামটা
০৬. মোবারক হোসেনের ছুটির দিন
০৭. কবিতা একবার পড়লে
০৮. অনেকক্ষণ কড়া নাড়ার পর
০৯. মরিয়ম কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না
১০. মোবারক হোসেন
১১. চায়ের কাপ নামিয়ে
১২. আকাশে ট্রেসার উড়ছে
১৩. ২৬ মার্চ ভোর আটটায়
১৪. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্ৰ
১৫. ভয়ঙ্কর রাতের পরের যে ভোর
১৬. মাত্র দুঘণ্টার জন্যে কারফিউ-বিরতি
১৭. ভয়ঙ্কর দিন যাচ্ছে
১৮. পিরোজপুর মহকুমার পুলিশপ্রধান ফয়জুর রহমান
১৯. জেনারেল টিক্কা খান
২০. দৈনিক পাকিস্তান-এর সাহিত্যপাতা
২১. শিউলি গাছে আশ্বিন কার্তিক মাসে ফুল ফুটবে
২৩. গৌরাঙ্গ বিরক্ত দাস
২৩. ফাঁকা রাস্তায় ঠেলাগাড়ি
২৪. শাহেদের চেহারায় পাগল পাগল ভাব
২৫. চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই
২৬. দারোগাবাড়ি
২৭. ফজরের নামাজ
২৮. নীলগঞ্জ থানার ওসি ছদারুল আমিন
২৯. সকাল থেকে বিরামহীন বৃষ্টি
৩০. রুনি বলল, মা, আমরা কোথায় যাচ্ছি
৩১. আয়েশা বেগম নৌকায় বসে আছেন
৩২. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মেয়ে বেগম আখতার সোলায়মান
৩৩. পাকিস্তান সরকার স্বীকার করে
৩৪. বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতি
৩৫. জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট
৩৬. গভর্নর টিক্কা খান
৩৭. কবি শামসুর রাহমান
৩৮. ডেইলি পিপল পত্রিকার সাব-এডিটর নির্মলেন্দু গুণ
৩৯. ফজরের ওয়াক্তে
৪০. ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ বাসেতের চিঠি
৪১. দলিলপত্ৰ : অষ্টম খণ্ড
৪২. রাত দশটা
৪৩. একটা সময় পর্যন্ত দেশের মানুষ
৪৪. কাঁদছে আমাদের বাংলাদেশ
৪৫. দুর্ধর্ষ ক্র্যাক প্লাটুন
৪৬. বেগম সুফিয়া কামালের দিনলিপি
৪৭. জেনারেল ইয়াহিয়ার সাক্ষাৎকার
৪৮. লায়ালপুরের জেলের একটি বিশেষ কক্ষ
৪৯. বেগম মুজিবের বিষাদঘন দিনগুলো
৫০. নীলগঞ্জ জামে মসজিদ
1 of 2
লেখক: হুমায়ূন আহমেদবইয়ের ধরন: উপন্যাস

অনন্ত অম্বরে – হুমায়ূন আহমেদ

একজন মায়াবতী – হুমায়ূন আহমেদ

তোমাদের এই নগরে – হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

Reader Interactions

Comments

  1. Khokon

    June 19, 2025 at 8:41 am

    অসংখ্য বানান ভুল। দয়াকরে ঠিক করবেন।

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.