গন্তব্য এখনো এক সভ্যতা দেরি – দেবারতি মুখোপাধ্যায়
রুদ্র-প্রিয়ম সিরিজ
দীপ প্রকাশন
প্রথম প্রকাশ – ডিসেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ – স্বর্ণাভ
অলংকরণ – মৃণাল শীল
প্রকাশক – দীপ্তাংশু মণ্ডল
.
গার্সিয়া দে ওরতা (১৫০১ -১৫৬৮ খ্রিষ্টাব্দ)
যিনি প্রাচ্যের আয়ুর্বেদশাস্ত্রকে পরিচয় করিয়েছিলেন পাশ্চাত্যে, যিনি ভেষজ উদ্ভিদ থেকে আবিষ্কার করেছিলেন অসংখ্য ওষুধ, যিনি জন্মেছিলেন বড় ভুল সময়ে, ইহুদী হওয়ার ‘অপরাধে’ যাকে সপরিবার পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে সারাজীবন, গোয়ানিবাসী প্রখর মেধাসম্পন্ন ষোড়শ শতাব্দীর সেই কিংবদন্তী চিকিৎসক— বিজ্ঞানী গার্সিয়া দে ওরতা-র স্মৃতির উদ্দেশে।
.
গন্তব্য এখনও এক সভ্যতা দেরি কোনো ইতিহাস নয়, একটি কাল্পনিক উপন্যাস। এই কাহিনি কোনো ব্যক্তি, সম্প্রদায়, ধর্ম, প্রতিষ্ঠান অথবা সংগঠনের অনুভূতিতে আঘাত বা কুৎসা করার উদ্দেশ্যে রচিত হয়নি। কোনো রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ বা প্রচারের উদ্দেশ্য এই উপন্যাসের লেখকের বা প্রকাশকের নেই।
গন্তব্য এখনও এক সভ্যতা দেরি উপন্যাসের সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক। জীবিত অথবা মৃত কোনো ব্যক্তির বা তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে এই কাহিনির কোনো মিল পাওয়া গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয়।
এই উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র, ঘটনাবলি এবং পটভূমির কিয়দংশ লেখকের কল্পনাপ্রসূত।
.
লেখকের কৈফিয়ত
রুদ্র প্রিয়ম সিরিজ তথাকথিত গোয়েন্দাকাহিনী নয়, সেই চেষ্টাও কোনদিনও করিনি। এর প্রতিটি উপন্যাসের মত এবারেও ইতিহাসের বিস্মৃত অধ্যায় থেকে তুলে আনতে চেয়েছি এক অসামান্য মানুষকে, গোয়ায় গিয়ে খুঁজেছি তাঁর হারিয়ে যাওয়া চিহ্নদের। আমার সেই গোয়া অন্বেষণপর্বে সঙ্গী ছিল আমার পুত্র।
আমার প্রথম উপন্যাস ‘ঈশ্বর যখন বন্দি’র মাধ্যমে যে দুটি চরিত্রকে পাঠকমহলে উপস্থাপন করেছিলাম, তারা যেন আমারই সঙ্গে পরিণত হয়ে চলেছে। তাদেরও আমারই মত বয়স বাড়ছে, কুড়ি পেরিয়ে ত্রিশের কোঠায় পৌঁছচ্ছে। প্রথম দিকের উপন্যাসগুলো পড়লে নিজেই এখন নিজের লেখার অনেক অপরিণত দিক খুঁজে পাই, ভাবি, ইস, এখানটা এত বিশ্রী কী করে লিখলাম, এই বাক্যগঠনটা কী কাঁচা। কিন্তু তবুও এই সিরিজ আমার কাছে অত্যন্ত স্পেশাল। কারণ এ’কথা অনস্বীকার্য যে এই সিরিজের একটা বিপুল পরিধির পাঠকবেস রয়েছে। দেশবিদেশের যে সাহিত্য সমাবেশেই গিয়েছি, ‘রুদ্র প্রিয়ম আবার কবে আসবে?’ এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি।
প্রথম থেকে খেয়াল রেখেছি এই সিরিজের একটা উপন্যাসও যেন গড়পড়তা গোয়েন্দা /রহস্যোপন্যাস যেন কোনভাবেই না হয়ে যায়। এই সিরিজের ২৫০+ পৃষ্ঠার প্রতিটি উপন্যাসই তাই কোন আঙ্গিক থেকেই গোয়েন্দা গল্প নয়। বরাবর অত্যন্ত সচেতন থেকেছি বিষয় চয়নের ব্যাপারে। ঈশ্বর যখন বন্দির বজ্রযান বৌদ্ধতন্ত্র থেকে গ্লানির্ভবতি ভারতের আমীশ সম্প্রদায়, নজর রেখেছি যেন কোন লঘু রহস্য, কোন হাল্কা ক্রাইম, কোন প্রোপাগান্ডা না তৈরি হয়। চেষ্টা করেছি টুকুই বলতে পারি, সাফল্যের পরিমাপ করবেন পাঠকরা।
কিন্তু এবারের উপন্যাসটি যেন নিংড়ে নিয়েছে একেবারে। গোয়া ইনকুইজিশন নিয়ে বহুদিনের আগ্রহ ছিল, ততোধিক উৎসাহ ছিল ভারতে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাসকারী ইহুদীদের নিয়ে। ‘গন্তব্য এখনো এক সভ্যতা দেরি’ লিখতে গিয়ে সেই কৌতূহল অনেকাংশে মিটেছে। ২০২০ সাল থেকে বইপত্র জোগাড়, পড়াশুনো। তারপর ২০২১ এর ডিসেম্বর মাস থেকে লিখতে শুরু করেছিলাম, কিন্তু এতবার এতভাবে হোঁচট খেয়েছিলাম যে একসময় মনে হচ্ছিল, এত জটিল কাহিনীর গোলকধাঁধায় বুঝি আমি নিজেই হারিয়ে গেছি! অভিমন্যুর মত ব্যুহে ঢুকে গেছি কিন্তু বাইরে বেরোনোর পথ খুঁজে পাইনি। দিশেহারা হয়ে লেখা থামিয়ে দিয়েছি, প্রচণ্ড খিটখিটে হয়ে গিয়েছি, দিনের পর দিন অফিসে বাড়িতে গুম হয়ে থেকেছি। পাগলের মত বই কিনে গেছি, আরো বেশি জড়িয়ে গেছি জালে। প্রায় দেড়শো পৃষ্ঠা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে লিখতে শুরু করেছি, কিন্তু আবার ঠোক্কর খেয়েছি। রাগে দুঃখে মনে হচ্ছিল আর লিখবই না।
কিন্তু ওই যে, দিনের শেষে আমি চূড়ান্ত অপটিমিস্টিক! দুঃখ, হতাশা, রাগ, অবসাদ আসে, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এই বছর প্রচুর পুজোসংখ্যায় ‘না’ বলেছি, খারাপ হয়েছি। পড়াশুনো করেছি, নানা জায়গায় ছুটেছি আর এই উপন্যাসে বুঁদ হয়ে থেকেছি। কেটেছি, লিখেছি, চরিত্র পাল্টেছি, আবার লিখেছি।
অবশেষে উপন্যাসটি শেষ করতে পেরেছিলাম পুজোর আগে। ভাগ্যিস পেরেছিলাম, নাহলে হঠাৎ বাধিয়ে বসা শারীরিক অসুস্থতায় আবার খেই হারিয়ে যেত গোটা কাহিনীর।
Manufactured Orphan- ‘তৈরি করা অনাথ’ দের নিয়ে এবারের উপন্যাস। ভারতবর্ষের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে এভাবেই পাচার হয় দুঃস্থ শিশুরা, মোটা ডলারের বিনিময়ে কিছু অনাথ আশ্রম বা দত্তক দেওয়ার এজেন্সিরা তাদের বিক্রি করে দেয় বিদেশী নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে। এই অবৈধ Inter Country Adoption এ নাম জড়িয়েছে দেশের তাবড় তাবড় সেবাপ্রতিষ্ঠানের। ‘গন্তব্য এখনো এক সভ্যতা দেরি’র পটভূমি পশ্চিম ভারতের গোয়া। সেই গোয়া, যেখানে পাঁচশো বছর আগে ইনকুইজিশনে পুড়ে মরেছিল হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ। কী সম্পর্ক ইনকুইজিশনের সঙ্গে আজকের গোয়ার? ধর্মীয় সংকীর্ণতার সঙ্গে হিংস্রতা যখন মিশে যায়, তখনই জন্ম নেয় বাসের অযোগ্য বিশ্বের। ধ্বংসলীলা চলে অবিরাম। বিজ্ঞান ইতিহাস ও রহস্যের মিশেলে লেখা এই উপন্যাস পাঠকদের আশা করি হতাশ করবে না। উপন্যাসের নামকরণের জন্য কৃতজ্ঞতা রইল সুরজিতের প্রতি।
উৎসাহী পাঠকদের জন্য সহায়ক গ্রন্থের একটি অসম্পূর্ণ তালিকা নীচে দেওয়া হল।
দেবারতি মুখোপাধ্যায়
০১-১২-২০২২
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী
১। The Goa Inquisition: The Terrible Tribunal for the East, Anant KakbaPriolkar
২। The Goa Inquisition: Being a Quatercentenary Commemoration Study of the Inquisition in India, Anant KakbaPriolkar
৩। The Portuguese Inquisition: The History of the Portuguese Empire’s Religious Persecution of Non-Christians in Portugal and Asia, Charles River Editors
৪। History of the Portuguese in Bengal, J.J. Campos
৫। The Jews of Spain and Portugal and the Inquisition, Frederic David 1828-1905 Mocatta
৬। The Marrano Factory, António José Saraiva
৭। Medicine and the Inquisition in the Early Modern World, Maria Pia Donato
৮। Medicine, Trade and Empire: Garcia de Orta’s Colloquies on the Simples and Drugs of India (1563) in Context (The History of Medicine in Context), Palmira Fontes da Costa
৯। The Child Catchers: Rescue, Trafficking, and the New Gospel of Adoption, Kathryn Joyce
১০। Jennifer: One Woman, Two Continents and a Truth Called Child Trafficking, Nandita Puri
১১। PAEDOPHILIA EXPERIENCE V. EXPECTATION, RIGVEDA DATTATRAYA AMONKAR
১২। The Goa Children’s Act, 2003
১৩। CHILD SEXUAL ABUSE, QUEENCY PEREIRA
১৪। Child rights in India, by Asha Bajpai
১৫। Goa Gold Goa Silver, PrajalSakardande
১৬। Moda Goa – History & Style, Rodricks Wendell
১৭। In and Around Old Goa, Heta Pandit
১৮। St. Francis Xavier & Old Goa A Historical Guide, I. P. Newman Fernades
১৯। Old Goa, SubrahmanyaRajagopala
২০। The Jewish Martyrs Of Old Goa: Untold story, Ivan Fjeld
২১। Missionary Position, Christopher Hitchens
২২। Mother Teresa: The Untold Story, Aroup Chatterjee
২৩। Beyond the self, Santa Casa da Misericordia de Goa, Fatima da Silva Gracias
২৪। Feasts, Festivals and Observances of Goa, Maria De Lourdes Bravo Da Costa Rodrigues
২৫। The Many Faces of Sundorem, Women in Goa, Fatima da Silva Gracias
২৬। http://archive.tehelka.com/story_main5.asp?filename= Ne080714Sin_in_Paradise.asp
২৭। https://www.heraldgoa.in/Goa/Perspective/Let%E2%80%99s-not-forget-Goa-had-a-Freddy-Peats/78116
২৮। https://itsgoa.com/goa-freddy-peats/
২৯। Mr Freddy A Peats ( Central Jail, Aguada) Vs State Bombay High Court.
অর্পিতা সরকারের ট্রাফিক সিগন্যাল বইটা পড়তে চাই।