উড়াল – নবনীতা দেবসেন
‘উড়াল’ উপন্যাসে আগাগোড়া জড়িয়ে রয়েছে মৃত্যু ও প্রেম। বিদেশি স্ত্রী পরপুরুষের সঙ্গে চলে যাওয়ার পর প্রবাসে কর্মরত নিঃসঙ্গ বিমলের জীবনে আসে এক আশ্চর্য মেয়ে, কেতকী। কেতকীও নিঃসঙ্গ এবং পারিবারিক ট্র্যাজেডির শিকার। বাবার প্রতারণা সহ্য করতে না পেরে তার মা আত্মহত্যা করেছিল, মাতৃহারা কেতকীকে বাবা ও তার নতুন মা, কেউই আপন করে নিতে পারে নি, একমাত্র গানই ছিল তার জীবনের একমাত্র আশ্রয়। আমেরিকায় উদ্দাম জীবনের পাশাপাশি এই গানকে আশ্রয় করেই বেঁচে ছিল কেতকী। এই মেয়েটিকেই জীবনসঙ্গী করে নেয় সফল ডাক্তার বিমল, কেতকীর মেয়েকে নিজের মেয়ের মতোই মানুষ করতে থাকে তার পিতার পরিচয় না জেনেই। দুটি নিঃসঙ্গ মানুষ যখন একে অপরকে আঁকড়ে ধরেছে, তখনই কেতকীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় অকালমৃত্যু। তার শেষ সময়টুকু প্রেমে—ভালোবাসায় পূর্ণ করে রাখার চেষ্টা করে বিমল, কেতকীর মেয়ে টুবলু আর অপর এক নিঃসঙ্গ নারী মালবিকা। মালবিকাও পারিবারিক ট্র্যাজেডির শিকার, হিন্দু পিতার প্রভুত্ব ও মুসলমান স্বামীর গোঁড়ামির মধ্যে সে শুধুই দেখেছে পুরুষের স্বেচ্ছাচার ও নির্মমতা। কেতকী ও মালবিকা পরস্পরের কাছাকাছি আসে, কেতকীর মৃত্যুর পরও মালবিকা টুবলুকে মা’র মতোই স্নেহচ্ছায়ায় জড়িয়ে রাখে। টুবলু মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছিল মারণব্যাধি, কিন্তু তার স্বল্পায়ু জীবন ভালোবাসায় পূর্ণ করে রাখে বিমল ও তার প্রথম পক্ষের কন্যা রুনু। উপন্যাসের শেষে টুবলু ঠিক মারা যায় না, বরং তার মৃত্যুকে ঘিরে থাকে জাদু বাস্তব, সে ডানা মেলে উড়াল দিয়ে মায়ের কাছে চলে যায়। এভাবেই মৃত্যু ও প্রেমের অবিরাম টানাপোড়েনে শেষপর্যন্ত মৃত্যুরও রূপান্তর ঘটে প্রেমে ও মানবিক মিলনে। মানবিক সম্পর্কের মহিমায় এই আখ্যান আগাগোড়াই ভাস্বর হয়ে থাকে।
Leave a Reply