ইতি নির্ভয়পুর – অর্পিতা সরকার
ফ্ল্যাপের লেখা ১
‘ইতি নির্ভয়পুর’ একটি সামাজিক, প্রেম, মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। নির্ভয়পুর একটি আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। কিন্তু এখানের ভূমিপুত্ররা বাঙালি সংস্কৃতিতেই বড় হয়েছে। কারণ বাঙালিরা এই শান্ত পাহাড়ি জনপদকে কেন্দ্ৰ করে নিজেদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছে। মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে অনুপমা টি এস্টেট, মিত্র টি এস্টেট, ঘোষাল ট্রাভেলস, মল্লিক অ্যান্ড সন্স হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। বাঙালিদের এই কোম্পানিতেই বর্তমানে কর্মরত এখানের ভূমিপুত্ররা। কারণ তাঁদের পূর্বপুরুষরা সামান্য অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে নির্ভয়পুরের ভূমিকে। নিজেদের জমিতে এখন নিজেরাই বেতনভুক কর্মচারী মাত্র।
সেই অসন্তোষ মনের মধ্যে পুষে রেখেই এরা আপন করে নিয়েছে মালিক পক্ষকে। নির্ভয়পুরের ছোট পাহাড় পলাশবনা, সবুজ চা বাগানের ধাপে ধাপে রোজই লেখা হয় অনেক প্রেমের গল্প। কিন্তু কটা গল্প পরিণতি পায়? শৌনক আর নূপুরের প্রেমের গল্পও আঁকা হচ্ছে চা বাগানে, চার্চে, হাসপাতাল মাঠে, কিন্তু এই উত্তাল রাজনৈতিক পরিবেশে, এই চাপা অসন্তোষের আবহাওয়ায় গল্পটি কি আদৌ উপন্যাসের আকার নেবে? নাকি নির্ভয়পুর এদের প্রেমের গল্পকে অসমাপ্ত বলে ঘোষণা করে দেবে? তার উত্তর দেবে ‘ইতি নির্ভয়পুর।’
ফ্ল্যাপের লেখা ২
রাজনৈতিক লড়াই, প্রেম-অপ্রেম, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, সরলতা-বিশ্বাসঘাতকতা, দ্বন্দ্ব-টানাপোড়েন, ব্যবসায়িক উত্থান-পতন সব হিসেব নিকেষের পরে কাকে জয়ের মুকুট পরাবে নির্ভয়পুর? সেটা ঠিক করবে শুধুমাত্র নির্ভয়পুর। তাই নিজের গল্প নিজেই লিখল—‘ইতি নির্ভয়পুর।’
.
আঁচলে যাদের হলুদের দাগ, যারা রান্নাঘরের জানালা দিয়ে
দেখতে চান নিজেদের স্বপ্নগুলোকে, কপালের বিন্দু বিন্দু
ঘামে মিশে থাকে পরিশ্রমের ক্লান্তি এবং ট্রেনে, বাসে,
মেট্রোর ভিড় ঠেলে, অফিস এবং বাড়ির সমস্ত কাজ
সামলে দিনের শেষে যারা ঘুম চোখেও
আমার লেখা পড়ে ঘুমাতে যান
এ বই উৎসর্গ করলাম
তাঁদের।
.
ভূমিকা
আমি কোনো উপন্যাসেই ভূমিকা দীর্ঘায়িত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় উপন্যাসের চরিত্ররাই স্বয়ং আলাপ-পরিচয় সেরে নিক আমার পাঠকদের সঙ্গে। উপন্যাসের নায়ক, নায়িকা, কুশীলবরা নিজেরাই নিজেদের কথা বলুক পরিচয় করুক নিজের ছন্দে। পাঠক-পাঠিকারাই পছন্দ করে নিক এ-উপন্যাসে তাঁদের পছন্দের চরিত্রকে।
এ-উপন্যাসের নির্ভয়পুর একটি কাল্পনিক গ্রাম। যে গ্রামটি পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই। জলপাইগুড়ি আর শিলিগুড়ি এই গ্রামের কাছের সদর শহর। নির্ভয়পুর চা বাগানে ঘেরা একটি গ্রাম। কাঞ্চনজঙ্ঘার মতো গর্বিত পাহাড়চূড়া এখানে অবস্থান না করলেও পলাশবনার মতো ছোট পাহাড়ের উপস্থিতি নির্ভয়পুরকে পাহাড়ি জনপদ বলে পরিচয় দিয়েছে।
একসময় নির্ভরপুর ছিল আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। অনুন্নত এক পাহাড়ি জনপদ। ধীরে ধীরে সেখানে বাঙালি ব্যবসাদারদের রাজত্ব গড়ে ওঠে। স্বল্প দামে ভূমিপুত্রদের জমি কিনে নিয়ে সেখানে গড়ে ওঠে টি এস্টেট, হোটেল, ট্রাভেল কোম্পানি, বাজার। ভূমিপুত্ররা নিজেদের জমিতেই কুলি, শ্রমিকে পরিণত হয়। বাঙালি সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে তারা। কিন্তু তাদের সরলতাকে একদল স্বার্থান্বেষী মানুষ নিজেদের সফলতার সিঁড়ি বানিয়ে নেয়। ঠিক তখনই ভূমিপুত্র সুজয়ের লড়াই শুরু হয়। নির্ভয়পুরে নিজেদের অধিকার ফিরে পাবার লড়াই। শিক্ষিত সুজয় নির্ভয়পুরবাসীকে বোঝাতে চায় তারা বঞ্চিত হচ্ছে।
নির্ভয়পুর হাসপাতালের তরুণ ডাক্তার কেন ভালো ডিগ্রি নিয়ে দিনের পর দিন সাউথ কলকাতার বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে এই নির্ভয়পুরে রয়ে গেছে সেটাই রহস্য। নির্ভয়পুরের মতো ছোট এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানের চেয়ারের লড়াইয়ে কেন পামেলা মিত্রের মতো বিজনেস ওম্যান সক্রিয় হলেন? কী আছে এই নির্ভয়পুরে? নূপুর, অস্মিতা, কুন্তলীর চোখে তো নির্ভয়পুরের বাতাসে প্রেমের আনাগোনা। একমুঠো বেলফুল, হলুদ চুড়িদারের ওড়না, চার্চের মাঠে শৌনক আর নূপুরের প্রেমালাপ। না, শুধু সহজ-সরল প্রেমের বাতাস বয়ে যায় না নির্ভয়পুরে। এ বাতাসে প্রেম যেমন আছে তার সারল্য নিয়ে তেমনই সাম্রাজ্য হাতছাড়া হওয়ার ভয় আছে, জটিলতা আছে, প্রবঞ্চনা আছে।
সব মিলিয়েই নির্ভয়পুর তার নিজের কথা বলবে আপনাদের। প্রেম, সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস ‘ইতি নির্ভয়পুর’। সুজয়, হাসিনি, ডাক্তার শৌনক, নূপুর, সাহেব, কুন্তলী, ফুটবল কোচ সুনীল, পামেলা মিত্র আরও অনেকে আপনাদের অপেক্ষায় কালো অক্ষরে অপেক্ষারত। চলুন বেড়িয়ে আসি নির্ভয়পুরে।
.
লেখক পরিচিতি
জন্ম নবদ্বীপের কাছে সমুদ্রগড়ে। কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। তারপর চাইল্ড ডেভলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টে চাকরি পান। স্কুল ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হলেও লেখালিখির সূচনা ২০১৬ সালের শেষের দিকে। ফেসবুকে নিজস্ব পেজ ‘ArpitaSarkar’-এ নিয়মিত লেখালিখি করেন। এই পেজের অনুসরণকারীর সংখ্যা চার লক্ষের অধিক।
প্রথম বই প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের বইমেলায়। ‘কখনো মেঘ কখনো রোদ্দুর’, ‘নির্বাচিত গল্প-১’, ‘প্রাণের আলাপ’, ‘নীরবে তোমায় দেখি’, ‘সে ছিল অন্তরালে’ ‘চেনা অচেনার ভিড়ে’”নির্বাচিত গল্প-২’, ‘নির্বাচিত গল্প-৩’, ‘অনুভবে তুমি’ ‘খেলাঘরের ডাকে’ ‘আমি চন্দ্রাবলী বলছি’, ‘প্রিয় ২৫’, ‘মর্নিং ওয়াক সিরিজ’, ‘ট্রাফিক সিগন্যাল’, ‘অপেক্ষার বারোমাস’, ‘পটলা ও পাপানের কীর্তিকলাপ’, ‘এসো না অসময়ে’, ‘জীবন স্রোতের আঁকেবাঁকে’, ‘সেই ডায়েরিটা’, ‘মন আয়নায় মেঘ’, ‘সাইলেন্ট কিলার’ প্রতিটা বই-ই পাঠকের মনে জায়গা করে নিয়েছে। ‘ইতি নির্ভয়পুর’ লেখিকার বাইশতম বই।
সামাজিক, প্রেম এবং রহস্য তিনটি ধারায় লেখিকা সমান সাবলীল। ছোটগল্প সংকলন ও উপন্যাস সমানভাবে পাঠকমহলে সমাদৃত।
প্রথম শ্রেণির শারদীয়া সংখ্যায় স্থান পায় লেখিকার লেখা।
লেখিকার গল্প নিয়ে বেশ কিছু শর্ট মুভি হয়েছে। তিনটে গল্প নির্বাচিত হয়েছে ফিচারের জন্য। ভারত সরকারের (পূর্বাঞ্চলীয় শাখা) সংস্কৃতি মন্ত্রক কর্তৃক পুরস্কার প্রাপ্ত – ২০২১ সালে সাহিত্য সম্মান পান। এক্সিলেন্ট বুক মুক্তধারা কর্তৃক টেগোর সম্মান পান। জোশটকের মঞ্চ থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে পরিচিত মুখ লেখিকা অর্পিতা সরকার।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাদেরকে, অবশেষে আপনারা যে অর্পিতা সরকার ম্যাডামের বই এখানে দিয়েছেন তার জন্য। অসম্ভব ভালো লাগে অর্পিতা সরকার ম্যাডামের গল্পগুলো। এতবার অনুরোধ করার পর আপনারা যে অনুরোধ টা রেখেছেন তার জন্য অশেষ অশেষ ধন্যবাদ।
খুব ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে। খুব সুন্দর। অর্পিতা সরকারের আর একটি বই এখানে দেওয়ার অনুরোধ করলাম।
অনেক দিন হয়ে গেল, এবার অর্পিতা সরকারের আর একটা বই দিন, খুব আশা তে রইলাম।