বর্ন আইডেন্টিটি – রবার্ট লুডলাম
অনুবাদ – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
ফ্লাপের লেখা
তার কোনো অতীত নেই। সম্ভবত ভবিষ্যৎও নেই। তার স্মৃতি ভাণ্ডার একেবারেই শূন্য, সে কেবল জানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভূমধ্যসাগর থেকে একদল জেলে তাকে উদ্ধার করেছে। নিজের শরীরে সংযুক্ত থাকা অদ্ভুত একটি ক্লু উদ্ধার হলে সে নিজের পরিচয় উদঘাটনের চেষ্টা করতেই প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী আর হিংস্র একদল লোক তাকে হত্যার জন্যে মরিয়া হয়ে ওঠে—ওদিকে সন্ত্রাসের যুবরাজ কালোর্সও তাকে হত্যা করার জন্যে পিছু নেয়—কিন্তু কেন, কিসের জন্যে, জেসন বর্ন তার কিছুই জানে না। নিজের পরিচয়ের সন্ধান করতে গিয়ে একে একে বদলে যেতে থাকে সমস্ত হিসেব নিকেশ। শেষপর্যন্ত কি জেসন বর্ন কার্লোসের হাত থেকে বাঁচতে পারবে, নিজের সত্যিকারের পরিচয় জানতে পারবে—তার জবাব নিহিত আছে মহাকাব্যিক উপাখ্যান বর্ন আইডেন্টিটিতে।
‘লুডলামের এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু অন্যান্য ধূলার উপন্যাসের চেয়ে ভিন্ন আর স্বকীয়—পাঠক মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে।’—দ্য নিউইয়র্ক টাইমস্
‘জেসন বর্ন রবার্ট লুডলামের অসাধারণ সৃষ্টি। থ্রলার উপন্যাসকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি।’— ওয়াশিংটন পোস্ট
‘বর্ন সিরিজের মধ্যে অসাধারণ… পাঠক জেসন বর্নকে দীর্ঘদিন মনে রাখবে।’—সানডে টাইমস
‘লুডলাম এক মহাকাব্যিক উপাখ্যান নির্মাণ করেছেন আর সেই উপাখ্যানে কার্লোস দি জ্যাকেলও রয়েছে।’—মিরর
***
মুখবন্ধ
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস্
শুক্রবার, ১১ই জুলাই, ১৯৭৫
প্রথম পৃষ্ঠা
কার্লোস নামের এক ফেরারি সন্ত্রাসীর সঙ্গে কূটনীতিকদের সখ্যতা
প্যারিস, ১০ই জুলাই—ফ্রান্স আজ তিনজন কিউবান কূটনীতিককে বরখাস্ত করেছে কার্লোস নামের এক আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসীর সঙ্গে সংযোগ রাখার জন্যে। এই কার্লোসের রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন।
সন্দেহভাজনের আসল নাম ইলিচ রামিরেজ সানচেজ, তাকে দু’জন ফরাসি কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স এজেন্ট এবং ২৭শে জুন লাতিন কোয়ার্টারে এক লেবানিজ ইনফর্মারকে হত্যার অভিযোগে খোঁজা হচ্ছে।
এই তিন খুনের অনুসন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ এখানে এই বৃটেনে, কার্লোসের একটি আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের হদিস পেয়েছে। কার্লোসকে পাকড়াও করার মিশনে জার্মানিতে এক অভিযানে বিপুল পরিমাণের অস্ত্র উদ্ধার করা হলে পুলিশ জানতে পারে কার্লোসের সাথে জার্মানির একটি বড় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। ইউরোপের অনেক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নায়ক এই কার্লোস ব’লে জানা যায়।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস
সোমবার, জুলাই ৭, ১৯৭৫
সিন্ডকেটেড ডিসপ্যাচ
খুনির জন্যে জাল ফেলা হয়েছে
লন্ডন, (এপি) – নারী এবং অস্ত্র, গ্রেনেড আর দামি পোশাক, মোটা মানিব্যাগ, রোমান্টিক সব জায়গায় বিমানের টিকেট আর আধডজন দেশের রাজধানীতে চমৎকার অ্যাপার্টমেন্ট। এ হলো জেট যুগের এক সেলিবৃটি খুনির প্রতিকৃতি যাকে ধরার জন্যে একটি আন্তর্জাতিক ম্যানহান্ট অপারেশন চালানো হচ্ছে।
প্যারিসে দু’জন ফরাসি ইন্টেলিজেন্স আর একজন লেবানিজ ইনফর্মার খুন হলে এই অপারেশনের সূচনা হয়। দুটো রাজধানীতে চার জন মেয়েকে কাস্টডিতে নেয়া হয়েছে এই ঘটনার সূত্র ধরে। খুনি অবশ্য উধাও হয়ে গেছে—ফরাসি পুলিশের বিশ্বাস বর্তমানে সে লোবাননে আছে।
লন্ডনে বিগত কয়েক সপ্তাহে তার পরিচিতজনেরা তাকে একজন সুবেশী, সুশিক্ষিত, ফ্যাশন সচেতন, ধনী আর ভদ্রলোক বলেই উল্লেখ করেছে। কিন্তু তার সহযোগী নারী-পুরুষেরা এ বিশ্বের সবচাইতে বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। কার্লোস জাপানি রেড আর্মি, বিভিন্ন আরব সশস্ত্র সংগঠন, পশ্চিম জার্মানির বাডের মেইনহফ গ্যাং, কুইবেক লিবারেশন ফ্রন্ট, ফ্রান্স আর স্পেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং আইরিশ রিপাবলিক আর্মির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। এই খুনি যখন প্যারিস, হেগ, পশ্চিম বার্লিনে ভ্রমণ করে তখনই সেই সব জায়গায় বোমা বিস্ফোরিত হয়, বন্দুকবাজী হয়, ঘটে অপহরণের মতো ঘটনা।
প্যারিসের ২৭শে জুনের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে এক লেবানিজ সন্ত্রাসী কড়া জেরার মুখে অসাধারণ এক তথ্য দিয়েছে। সে তিন জনকে গুলি ক’রে পালিয়ে গিয়েছিলো। পুলিশ তার অস্ত্র এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মৃত্যু তালিকা’ সংবলিত একটি নোটবুক খুঁজে পেয়েছে।
গতকাল লন্ডনে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছে, পুলিশ ঐ তিনটি হত্যাকাণ্ডের জন্যে এক ভেনেজুয়েলান কমিউনিস্ট উকিলের ছেলেকে খুঁজছে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বলেছে, “আমরা রিপোর্টটা অস্বীকার করছি না,” তবে তারা এও জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। কেবল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ যাকে খুঁজছে সে কারাকাসের ইলিচ রামিরেজ সানচেজ। প্যারিসে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবার স্থান থেকে ফরাসি পুলিশ যে চারটা পাসপোর্ট পেয়েছে সেখানে তার নামে একটা পাসপোর্ট ছিলো।
পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, ইলিচ নামটি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের নাম থেকে রাখা হয়েছে। এই ইলিচ মস্কোতে লেখাপড়া করেছে, রুশ ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারে সে।
কারাকাসে ভেনেজুয়েলান কমিউনিস্ট পার্টির এক মুখপাত্র বলেছে, ইলিচ ৭০ বছর বয়স্ক মার্ক্সিস্ট আইনজীবির ছেলে। কারাকাস থেকে ৪৫০ মাইল পশ্চিমে এক অঞ্চলে তার আবাস। তবে “তার বাবা এবং সে, কেউই আমাদের পার্টির সদস্য নয়।” সে আরো বলেছে বর্তমানে ইলিচ কোথায় আছে সেটা সে জানে না।
Leave a Reply