আমেরিকান গডস – নিল গেইম্যান
রূপান্তর: মো. ফুয়াদ আল ফিদাহ
প্রথম প্রকাশ: অক্টোবর, ২০২১
প্রচ্ছদ ও নামলিপি: সজল চৌধুরি
.
উৎসর্গ
অনুপস্থিত বন্ধু-ক্যাথি অ্যাকার এবং রজার জিলেনি,
আর এই দুজনের মাঝে যারা যারা বিদায় নিয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্যে।
.
আমার মনে প্রায়শই একটা প্রশ্ন জাগে-অভিবাসীরা যখন নতুন কোনো দেশে আসে, তখন পেছনে ফেলে আসা পৌরাণিক চরিত্রদের কী হয়? আইরিশ- আমেরিকানরা সাথে করে নিয়ে এসেছিল ফেয়ারিদের। নরওয়েজিয়ান- আমেরিকানদের সাথে এসেছে নিসার-রা। গ্রিক-আমেরিকানদের হাত ধরে এসেছে ভ্রিকোলাকাস। যখন আমি জানতে চাইলাম: এসব প্রাণিদের কেন আমেরিকায় দেখা যায় না, আমার তথ্যদাতা হাসতে হাসতে বলল, ‘সম্ভবত, সমুদ্র পার হবার সাহস নেই বলে!’ সেই সাথে মনে করিয়ে দিল, যিশু বা তার হাওয়ারিরাও কখনও আমেরিকায় পা রাখেননি।
‘রিচার্ড ডরসন, আ থিওরি অভ আমেরিকান ফোকলোর।
.
লেখকের কথা
যে বইটা এখন আপনারা হাতে ধরে আছেন, সেটার সাথে আগে প্রকাশিত কপিগুলোর কিছুটা পার্থক্য আছে।
আমেরিকান গডস লিখতে দুই বছর সময় লেগেছিল আমার, ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত। এই বইটাকে নিয়ে অনেক আশা ছিল, চেয়েছিলাম এমন একটা বই লিখতে যেটা আকারে বড়ো, অদ্ভুত আর যার গল্পটা সর্পিল। মনে হয়, পেরেছি কাজটা করতে। সময় লাগলেও, অবশেষে শেষ করতে সক্ষম হয়েছি বইটি। পাণ্ডুলিপি জমা দেবার সময় মাথায় একটা প্রবাদ খেলে যাচ্ছিল-উপন্যাস হলো এমন এক গদ্য, যাতে কোনো-না-কোনো সমস্যা আছে। সন্তুষ্ট হয়ে ভেবেছিলাম, ওরকম সমস্যাঅলা একটা উপন্যাস লিখে ফেলেছি! আমার সম্পাদক ভয় পাচ্ছিলেন, লেখাটা সম্ভবত একটু বেশিই বড়ো হয়ে গেছে, প্যাঁচানোও হয়েছে বেশি (তবে আরেকটু অদ্ভুত হলেও সম্ভবত ভদ্রমহিলা আপত্তি করতেন না)। তিনি অনুরোধ করলেন, একটু যেন কাটছাঁট করি। তাই করেছিলাম। তিনি যে ঠিক ছিলেন, তাতে সন্দেহ নেই…বইটার সফলতাই তার প্রমাণ। অনেক কপি বিক্রি হয়েছে, অনেকগুলো পুরষ্কারও পেয়েছি। দ্য নেবুলা আর দ্য হুগো অ্যাওয়ার্ড (যেটা সাধারণত সায়েন্স ফিকশনকে দেওয়া হয়), দ্য ব্রাম স্টোকার অ্যাওয়ার্ড(যেটা পায় হরর উপন্যাস), দ্য লোকাস অ্যাওয়ার্ড (ফ্যান্টাসির জন্য)-যাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য। তাই বুঝতেই পারছেন, উপন্যাসটা অদ্ভুতই বটে। বইটি জনপ্রিয় হলেও, ঠিক কোন ঘরানায় পড়ে তা কেউ বুঝতে পারেনি। হয়তো সেজন্যই পছন্দ হয়েছে সবার।
এদের মাঝে আছেন পিট অ্যাটকিনস আর পিটার স্লাইডার, হিল হাউজের দুই পার্টনার। বইটির আমেরিকান প্রকাশকের সাথে কথা বলে, তারা লিমিটেড এডিশন ছাপাবার ব্যবস্থা করলেন। আগ্রহ নিয়ে যখন আমাকে তাদের পরিকল্পনা জানালেন, তখন খচখচ করতে শুরু করল মন।
গতানুগতিকের চাইতে ভিন্ন পথ ধরে জানতে চাইলাম: তারা কি আমার আসল পাণ্ডুলিপিটা ছাপাবেন?
উত্তরে হ্যাঁ জানালেন দুজন!
সমস্যা শুরু হলো তখনই। প্রথমবার কাটছাঁট করার পর, অনেক পরিবর্তন এসেছে বইটির নানা এডিশনে। তাই আমেরিকান গডসের সেরা পাণ্ডুলিপিটা দাঁড় করাতে হলে আমাকে কাটছাঁট না করা সর্বশেষ পাণ্ডুলিপির সাথে, কাটছাঁট করা সর্বশেষ পাণ্ডুলিপি মিলিয়ে দেখতে হবে। তারপর আবার দেখতে হবে ছাপার অক্ষরে থাকা সর্বশেষ বইটি। অতঃপর সবমিলিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে আমাকে।
লম্বা পরিশ্রমের ব্যাপার। তাই এই পরিস্থিতিতে যেকোনো বুঝবান লোক যা করত, আমিও তাই করলাম। কয়েকটা বড়ো বড়ো কম্পিউটার ফাইল এবং বইটির দুই কপি (আমেরিকান আর ব্রিটিশ, দুটোই) পাঠিয়ে দিলাম পিট অ্যাটকিনসের কাছে। অনুরোধ করলাম, সবকিছু যেন গুছিয়ে ফেলেন তিনি। মানতেই হয়, দারুণ কাজ করেছেন ভদ্রলোক। সর্বশেষ পাণ্ডুলিপি হাতে পাবার পর কাজে নেমে পড়লাম আমি। ভুলগুলো ঠিক করলাম, কোথাও আবার গুছিয়ে লিখলাম কিছু জিনিস। কিছু জায়গা বাদও পড়ল, তবে ওগুলো বইয়ের আকার কমাবার জন্য কাটা পড়েনি। যাই হোক, সবশেষে যেটা পেলাম,
সেটা নিয়ে আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট। তবে লেখকের কাছে উপন্যাস মানেই হলো এমন এক গদ্য, যাতে কোনো-না-কোনো সমস্যা আছে!
হিল হাউজ ছাপাল নতুন পাণ্ডুলিপি। দারুণ সেই লিমিটেড এডিশনে (যার দামটাও বেশ দারুণই ছিল) সাড়ে সাতশ কপি বইয়ের জায়গা হলো। ক্রেতা সবাইকে বিনামূল্যে একটা একটা করে ‘পাঠকের কপি’ও দেওয়া হলো সাথে, যেন লিমিটেড এডিশনের বইটা পড়তে গিয়ে তাতে দাগ না ফেলে দেন!
হেডলাইন যখন সিদ্ধান্ত নিলো, আমার সবগুলো উপন্যাস নতুন করে আবার ছাপাবে, তখন জানতে চাইল কোন বইতে কিছু যোগ করতে চাই কি না। আমেরিকান গডসের ক্ষেত্রে দেখা গেল, নতুন করে বইটা আমি পড়াতে চাইছি পাঠকদের! বইটির এই মুদ্রণে প্রায় বারো হাজার শব্দ বেশি আছে। অন্য মুদ্রণ পুরষ্কার জিতেছে বটে, তবে এই মুদ্রণ নিয়ে আমি সর্বাধিক গর্বিত।
এই বর্ধিত উপন্যাস ছাপাবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য হেডলাইনের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সেই সাথে পাণ্ডুলিপি সাজানোয় সাহায্য করার জন্য পিট অ্যাটকিনসকেও জানাই ধন্যবাদ।
নিল গেইম্যান
সিঙ্গাপুরে যাবার পথে বিমানে, ৩ জুলাই, ২০০৫
Leave a Reply