• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

মনের খেলা

লাইব্রেরি » চিত্তরঞ্জন মাইতি » লালমৃত্যুর মুখোশ - এডগার অ্যালান পো » মনের খেলা

মনের খেলা

হ্যাঁ সত্যি! ভীষণ ভীতু প্রকৃতির মানুষ ছিলাম আমি এবং এখনো তাই। মারাত্মক রকমের ভীতু। কিন্তু তাই বলে আপনি আমাকে উন্মাদ বলবেন? অসুখে ভুগে ভুগে আমার ইন্দ্রিয়গুলো নিষ্ক্রিয় বা নিশ্চিহ্ন তো হয়ইনি, বরং যথেষ্ট পরিমাণে তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে। আর আমার শ্রবণশক্তির তীক্ষ্ণতা তত অকল্পনীয়। স্বর্গ মর্তের সব কথা এমন কি নরকের কথাও আমি সব শুনতে পাই। এর পর আর আমাকে পাগল ভাবা নিশ্চয়ই উচিত হবে না। শুনুন না, কত শান্ত আর নিশ্চিন্তভাবে আমি পুরো কাহিনীটা আপনাকে বলে যেতে পারি।

বলতে পারবো না কখন ঐ ধারণাটা আমার মনের মধ্যে তৈরী হয়েছিল, তবে একবার তৈরি হওয়া মাত্র ওটা দিন-রাত্রি আমাকে জ্বালিয়েছে। ওর মধ্যে আবেগ বা উদ্দেশ্য কোন কিছুই ছিল না। বৃদ্ধকে আমি ভালোই বাসতাম। কোন দিনই কোন ক্ষতি তিনি আমার করেন নি বা অপমানও করেন নি। আমি তার যে বস্তু নিতে চেয়েছিলাম তা সোনা-দানা নয়, তাঁর একটা চোখ। হ্যাঁ, কথাটা ঠিক। ওঁর একটা চোখ দেখতে ছিল হালকা নীল রঙের আর তার ওপর পর্দা পড়েছিল। শকুনদের চোখের মতোই দেখতে লাগত ওটাকে। ওই চোখ দিয়ে তিনি আমার দিকে তাকালেই আমার রক্ত হিম হয়ে যেত। বোধ হয় এই জন্যেই একটু একটু করে মন স্থির করে ফেললাম–আমি এই বৃদ্ধকে হত্যা করব আর চিরদিনের মতো ঐ ভয়ঙ্কর চোখের চাউনী থেকে মুক্তি নেবো।

ব্যাপার এইটুকু। এর জন্যে আপনি আমাকে উন্মাদ ভাবছেন। যারা উন্মাদ তারা ত কিছুই জানে না। কিন্তু আমি? আমাকে তো আপনি দেখছেন। বুঝতে পারছেন না আমি কত বুদ্ধিমানের মত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাবধানী মানুষের মত, মনের সমস্ত চিন্তাকে কত নিপুণতার সঙ্গে গোপন করে অগ্রসর হয়েছিলাম। যেদিন বৃদ্ধকে আমি হত্যা করি তার আগের সাতদিন তাকে আমি ভীষণ ভালো। বেসেছি। প্রতিটি রাতেই, প্রায় বারোটার সময় আমি তার ঘরের দরজা খুব সাবধানে খুলেছি। মাথাটা ঢুকোবার মত ফাঁক করেই আমি দরজার ভেতর চারদিক ঢাকা একটা লণ্ঠন ঢুকিয়ে দিয়েছি। ওটা থেকে এক চিলতে আলোেরও বাইরে বেরিয়ে আসার উপায় ছিল না। তারপর আমি মাথা ঢুকিয়েছি ঘরের মধ্যে। কত সাবধানে আমি ঘরে ঢুকতাম, দেখলে আপনি না হেসে পারতেন না। যাতে বৃদ্ধের ঘুম না ভাঙে সেজন্য আমি খুবই আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকতাম। উনি বিছানায় শুয়ে আছেন এইটুকু শুধু দেখবার মতো মাথাটা দরজার ফাঁক দিয়ে ঢুকোতেই আমার প্রায় এক ঘণ্টা সময় লেগে যেত। বলুন তো, কোন পাগল এত বুদ্ধিমান হয়? ঘরের মধ্যে মাথাটা ঢোকাবার পরেই আমি লণ্ঠনটাকে খুব সাবধানে খুলতে শুরু করতাম। খোলবার সময় লণ্ঠনের কজায় শব্দ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তাই আমি বিশেষ সাবধান হতাম। তারপর লণ্ঠন টাকে একটুখানি ফাঁক করে পাতলা ছোট্ট একটা রশ্মি বৃদ্ধের শকুন চোখটার ওপর ফেলতাম। প্রত্যেক বারই রাত দুপুরের দিকে। আমি সাত সাতটি রাত এভাবে লণ্ঠনের আলো ফেলে দেখেছি আর প্রত্যেকবারই চোখটাকে দেখেছি বন্ধ অবস্থায়। আমি তাই আমার কাজ করতে পারি নি। বৃদ্ধও আমাকে বিচলিত করেন নি, করেছিল তার সেই অলক্ষুনে চোখটা। ভোর হলেই আমি তার ঘরে গিয়েছি, যথেষ্ট সাহসের সঙ্গে কথা বলেছি, নাম ধরে হৃদ্যতার সঙ্গে সম্বোধন করে রাত কেমন কেটেছে তাও জানতে চেয়েছি। তাহলে বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই যে বৃদ্ধ কত ভালোমানুষ ছিলেন। রাতের বেলা তিনি যখন ঘুমিয়ে থাকেন, তখন প্রতি রাতে বারোটা নাগাদ আমি যে তাকে দেখে আসি, এরকম সন্দেহ তিনি একটি বারও করেন নি।

অষ্টম রাতের বেলায়ও আমার সাবধানতার অন্ত ছিল না। দরজা খোলার সময় বরং অন্যান্য রাতের চাইতে বেশী সাবধানীই ছিলাম। আমার কাজের গতি ঘড়ির মিনিটের কার্টার চাইতেও ছিল মন্থর। নিজের শক্তি আর বিচক্ষণতা সম্পর্কে সেই রাতে আমার যে ধারণা হয়েছিল তার আগে কোনদিনই তা আর হয় নি। আমি যে ধীরে ধীরে দরজা খুলে ঘরে ঢুকেছি একটা গোপন চিন্তা আর উদ্দেশ্য নিয়ে তা তার স্বপ্নেরও অগোচর ছিল। এই জন্যেই বিশেষ করে আমার মনের মধ্যে জয়ের আনন্দ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল। আমার মুখে বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠেছিল। উনি হয়ত শুনতে পেয়েছিলেন কিছু তাই ভয় পেয়ে বিছানায় নড়ে উঠলেন। হয়ত আপনি ভাবছেন, ঐ মুহূর্তে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম, তা কিন্তু মোটেই নয়। চোর ডাকাতের ভয়ে উনি দরজা-জানালা বেশ ভালো করে বন্ধ করে দিতেন, তাই ঘরের মধ্যে ঘন কালো অন্ধকার জমাট বেঁধে উঠেছিল। আমার তাই জানা ছিল যে দরজা একটুখানি ফাঁক করলে উনি টের পাবেন না। আমি আস্তে আস্তে ঘরের মধ্যে ঢুকতে লাগলাম।

ঘরের মধ্যে মাথাটা ঢুকিয়ে আমি যেই লণ্ঠনটাকে ঠিক করে নিতে যাচ্ছি অমনি আমার বুড়ো আঙ্গুলটা পিছলে গিয়ে লণ্ঠনের টিনের বন্ধনীটার ওপর পড়ল। • বৃদ্ধ বিছানার ওপর লাফিয়ে বসে চেঁচিয়ে উঠলেন, কে ওখানে?

কিছু না বলে আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। পুরো এক ঘণ্টা আমি ওই ভাবে দাঁড়িয়েছিলাম, শরীরের একটা মাংসপেশীও নড়েনি। উনি যে শুয়ে পড়েছেন এমন কোন শব্দও শুনলাম না কিন্তু। উনি তখনো বিছানার ওপর বসে বসে শুনছিলেন–যেমন আমি রাতের পর রাত ওই ঘরের দেওয়ালে মৃত্যুর পদধ্বনি শুনেছি।

একটা ভয়বিহ্বল মৃদু আর্তনাদ শুনে বুঝলাম এর উৎস বেদনা ৰা দুঃখ নয়, বরং বিস্ময়-বিমূঢ় আত্মার রুদ্ধশ্বাস যন্ত্রণা। এর সঙ্গে পরিচয় ছিল আমার। মধ্যরাতের নিস্তব্ধ নির্জনতার মধ্যে নিদ্রিত পৃথিবীর বুকে যখন একমাত্র আমিই জেগে থেকেছি তখনই এই আর্তনাদ আমার গভীর অন্তর থেকে উঠে এসেছে। এরই প্রতিধ্বনি আমাকে মাঝে মাঝে ভীতিগ্রস্ত করে অন্যমনস্ক করেও তুলেছে।

অসীম ধৈর্য নিয়ে দীর্ঘকাল প্রতীক্ষার পরও ওঁর শুয়ে পড়ার কোন শব্দ শুনতে পেলাম না। স্থির করলাম, আলোর ছোট্ট ফাঁকটাকে খুলে ফেলব। কত সন্তর্পণে, সত্যি বলছি ঠিক কত সন্তর্পণে, আমি কাজ করছিলাম তা আপনি অনুমান করতে পারবেন না। যাই হোক ধীরে ধীরে আমার লণ্ঠন থেকে একটা সূক্ষ্ম আলোর রশ্মি মাকড়শার তৈরী সরু সুতোর মত বৃদ্ধের শকুন চোখের ওপর গিয়ে পড়ল।

চোখটা খোলা ছিল, পুরোপুরি ভোলাই ছিল, আর সেই জন্যই ওটার ওপর আমার দৃষ্টি পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলাম। সেই হাঙ্গা নীল রঙের ঘৃণ্য পর্দাপড়া চোখটাকে আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম। আমার অস্থি-মজ্জার মধ্যে একটা শীতল শিহরণ অনুভব করছিলাম। সেই জঘন্য চোখটা ছাড়া বৃদ্ধের শরীর বা মুখ কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না, কারণ আলোটার সূক্ষ্ম রশ্মি আমি ওঁর চোখের ওপরই নিবদ্ধ রেখেছিলাম।

তবু, আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার শ্বাস-প্রশ্বাসও প্রায় রুদ্ধ হয়েই ছিল। লণ্ঠনটাকে স্থিরভাবে ধরে আমি আলোর রশ্মিটাকে অকম্পিত চোখের ওপর ফেলে রেখেছিলাম। ওদিকে বৃদ্ধের সেই নারকীয় হৃদ্স্পন্দন বেড়েই চলেছিল, আর তার ধ্বনি দ্রুততর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্টতর হয়ে উঠছিল। প্রতিটি মুহূর্তে সেই ধ্বনি উচ্চতর হয়ে উঠছিল হয়ত এইজন্যেই যে বৃদ্ধ নিশ্চয়ই ক্রমশ ভীত হয়ে পড়ছিলেন। আমি তো আগেই স্বীকার করেছি যে, আমি নিতান্তই ভীতু প্রকৃতির মানুষ। গভীর রাত্রে নিস্তব্ধ গৃহের সেই অদ্ভুত শব্দ আমাকে দুর্দমনীয় ভীতিতে উত্তেজিত করে তুলল। তবু আমি নিজেকে সংযত করে স্থির হয়ে পঁড়িয়ে রইলাম। সে শব্দ কিন্তু বেড়েই চলল এবং এক সময় মনে হোল বৃদ্ধের বুকখানা ভেঙে চৌচির হয়ে যাবে। এ-ও মনে হোল এই শব্দ বৃদ্ধের প্রতিবেশীও শুনতে পাবে। ওঁর চরম মুহূর্ত সমাগত। বিকট চীৎকার করে আমি পুরো লণ্ঠনটার আচ্ছাদন খুলে ওঁর ঘরের মধ্যে দৌড়ে গেলাম। উনি একবার হ্যাঁ, মাত্র একবারই ভয়ার্ত চীৎকার করে উঠলেন। পরমুহূর্তে আমি ওঁকে মেঝেয় টেনে ফেলে তার ওপর ভারী বিছানাটা চাপা দিয়ে দিলাম । সব কাজ এ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবেই সম্পাদিত হয়েছে দেখে আমি মৃদু হাসতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু এই ঘটনার পরে অনেকক্ষণ পর্যন্ত সেই হৃদস্পন্দন মৃদুভাবে হলেও শোনা যাচ্ছিল। এতে আমি কিন্তু বিচলিত হই নি। জানতাম এ শব্দ দেওয়ালের ওপারে কেউ শুনতে পাবে না। কিছুক্ষণ পরে সেই ধ্বনি নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মৃত্যু হয়েছে বুঝলাম। বিছানাটা সরিয়ে ফেলে মৃতদেহটাকে পরীক্ষা করে বুঝলাম মৃত্যুর পর তার শরীর পাথরের মত শক্ত হয়ে গেছে। ওঁর বুকের ওপর বেশ কিছুক্ষণ হাত রেখেও স্পন্দন অনুভব করতে পারলাম না। বৃদ্ধের মৃত্যু সম্পর্কে আমার আর কোন সন্দেহ রইল না। নিশ্চিন্ত হলাম, সেই নারকীয় চোখ আর আমাকে কোনদিনই বিচলিত করবে না।

এখনো যদি আপনি আমাকে মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তি মনে করেন, করুন। কিন্তু আমি নিশ্চিত জানি, মৃতদেহটাকে কী পরিমাণ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে আমি লুকিয়ে ফেলেছিলাম তা শুনলে আপনার ধারণার পরিবর্তন হবেই হবে। ভোর হয়ে আসছিল বলে আমি দ্রুততার সঙ্গে কিন্তু নিঃশব্দে কাজ করে চললাম। মৃতদেহটাকে আমি প্রথমে টুকরো টুকরো করে ফেললাম। মাথা, হাত, পা–সব কিছু পৃথক করে নিয়ে মেঝে থেকে তিনখানা তক্তা সরিয়ে তার তলায় সব কিছু চাপা দিয়ে দিলাম। কাজটা এত নিখুঁতভাবে করেছিলাম, যে কোন মানুষের পক্ষেই সন্দেহ করার মত কিছু ছিল না। বৃদ্ধের চোখেও কোন অসঙ্গতি খুঁজে পেত না। কোথাও কোন রক্তের দাগ ছিল না, তাই ধোয়ামোছর প্রশ্নও ছিল না। পুরো কাজটা একটা টবের মধ্যে করেছিলাম কিনা তাই।

আমার কাজ যখন ফুরুল তখন ভোর চারটে। তখনো বেশ অন্ধকার ছিল। ঠিক চারটে যখন বাজল তখন রাস্তার ওপরকার দরজায় কেউ যেন ধাক্কা দিল। আমার তো ভয় করবার মত কিছুই ছিল না তখন, তাই বেশ হাল্কা মনেই দরজা খুলে দিলাম। তিনজন পুলিশ অফিসার যথেষ্ট ভদ্রভাবে নিজেদের পরিচয় জানিয়ে বললেন যে, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে একটা খবর পেয়ে তারা এসেছেন। প্রতিবেশীরা এই বাড়ী থেকে একটা আর্তনাদ শুনেছিল আর এখানে কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেই আশঙ্কা করেছিল। এই খবর পেয়েই ওঁরা এখানে তদন্তের জন্যে এসেছেন।

অফিসারেরা খুবই খুশী হয়েছিলেন। অফিসারেরা কিন্তু তখনো বসে রয়েছেন, আর কথা বলেই চলেছেন। কানের মধ্যেকার সেই ধ্বনিটি ক্রমশ স্পষ্টতর হয়ে উঠল। খুব স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তায় অংশ গ্রহণ করে আমি ঐ অস্বস্তি থেকে রক্ষা পেতে চাইলাম। ওতে কোন লাভ হল না। শব্দটা বেড়ে চলল আর শেষ পর্যন্ত বুঝলাম শব্দটা আমার কানের মধ্যে হচ্ছিল না।

একটু চড়া গলায় বেশ স্বাভাবিক ভাবে কথাবার্তা বললেও আমি কিন্তু পর পর বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছিলাম। শব্দ তখনো বাড়ছে। বলুন, আমার তখন কী কর্তব্য? একটা ঘড়িকে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে নিলে যে ধরণের শব্দ হয়, সেইরকম শব্দ শুনছিলাম আমি। আমার দম নিতে কষ্ট হচ্ছিল। অফিসাররা কিন্তু কিছুই শুনছিলেন না। আমি আরও জোরে আর তাড়াতাড়ি কথা বলে চললাম তবু শব্দটা বাড়তেই থাকল। আমি হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে ছোটখাটো কথার তর্ক জুড়ে দিয়ে উঁচু গলায় কথা বলতে আর নানা রকমের বিকট মুখভঙ্গী করতে আরম্ভ করলাম। অফিসাররা কিন্তু তখনো বসে। এঁদের মন্তব্য শুনে আমি বিরক্ত হয়েছি এই ভাব প্রকাশ করার জন্যে তখন আমি লম্বা লম্বা পা ফেলে মেঝেতে পায়চারী শুরু করেছি, কিন্তু শব্দটা বাড়ছে তোত বাড়ছেই। আমি ক্রোধে উন্মত্তের মত হয়ে নানা ধরণের শপথ উচ্চারণ করতে লাগলাম। তখনো শব্দটা বাড়ছেবাড়ছেবাড়ছে। আপনি বলতে চান, ওরা শব্দটা শুনতে পাচ্ছিল না? ঈশ্বর জানেন, আমার মনে হোল ওরা সব শুনে ও আমার ভয়ার্ত অবস্থাটা দেখে বেশ উপভোগ করছিল। এ কথা তখন আমি ভেবেছিলাম, এখনো সেই কথাই ভাবছি। কিন্তু যে নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা আমি সেই মুহূর্তে ভোগ করছিলাম তার চেয়ে অন্য যে-কোন শাস্তি বোধহয় কাম্য ছিল। এই রকম মর্মান্তিক উপহাসের চেয়ে অন্য সব কিছুই সহ্য করা তখন সহজ মনে হচ্ছিল। আমি ওঁদের ভণ্ডামির হাসি মোটেই সহ্য করতে পারছিলাম না। আমার মনে হোল হয় আমি ভীষণ জোরে চেঁচিয়ে উঠব, নয়ত তখনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ব।

শুনুন সেই শব্দ! শুনতে পাচ্ছেন? শব্দটা বাড়ছে। বাড়ছে! বাড়ছে!

‘শয়তানের দল’, চেঁচিয়ে উঠলাম আমি। আর কপটতার প্রয়োজন নেই। অপরাধ আমি স্বীকার করছি । মেঝের তক্তাগুলো সরিয়ে ফেলুন। হ্যাঁ, এইখানে–এইখানে। শব্দটা বেরুচ্ছে ঐ ঘৃণ্য হৃদযন্ত্র থেকেই।

Category: লালমৃত্যুর মুখোশ - এডগার অ্যালান পো
পূর্ববর্তী:
« জনতার মানুষ
পরবর্তী:
লাফানে ব্যাঙ »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑