• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০৫. প্রথমে বনভূমি, তারপর বিস্তীর্ণ জলাশয়

লাইব্রেরি » শওকত আলী » দুষ্কালের দিবানিশি » ০৫. প্রথমে বনভূমি, তারপর বিস্তীর্ণ জলাশয়

প্রথমে বনভূমি, তারপর বিস্তীর্ণ জলাশয়, তারই পাশে নতুন গ্রাম নবপাটক। এই গ্রামে লীলাবতীরা আশ্রয় নিয়েছে–এখানে নিয়ে এসেছেন মাতুল সিদ্ধপা। মধ্যপথে তারা অবস্থান করেছিলো বিল্বগ্রামে। উজুবট থেকে পলায়ন করে তারা প্রথমে বনভূমিতে প্রবেশ করে। সেখানে দিন দুই অপেক্ষা করে এই আশায়, যে নিজ গ্রামে ফিরতে পারবে। কিন্তু যখন জানা গেলো যে হরিসেনের অনুচরদল একজন যোগী, হরকান্ত এবং এক কুম্ভকারের অনুসন্ধান করছে, তখন তারা গ্রামে যাওয়ার আশা ত্যাগ করে উপনীত হলো কদম্বঘাটে। ঐ স্থানের সূর্যমন্দিরে দিন দুই অবস্থান করে তারা। হয়তো আরও কদিন থাকতো, কিন্তু জনাকয় রাজার চর এমন উপদ্রব আরম্ভ করলো যে সে স্থানে তিষ্ঠানো অসম্ভব হয়ে উঠলো। সে স্থান থেকে শ্যামাঙ্গ তাদের নিয়ে যায় বিশ্বগ্রামে। তার আশা ছিলো, গুরু বসুদেব আছেন, মিত্র নীলাম্বর আছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই দুর্গত পরিবারটির জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করবেন। সর্বাপেক্ষা বড় আশা ছিলো এই যে, গুরু বসুদেব অন্তত সুধীমিত্রকে বোঝাতে সক্ষম হবেন যে, হরকান্ত বা সিদ্ধপা আর যাই হোন, ষড়যন্ত্রকারী নন।

কিন্তু বিল্বগ্রামে উপস্থিত হয়ে সে আশা ত্যাগ করতে হলো। গুরু বসুদেব নেই, নীলাম্বরও নেই। সিদ্ধপা তাঁর এক শিষ্যের জ্ঞাতি সুভদ্ৰদাসের গৃহে আশ্রয় নিলেন। দুর্যোগের উপর দুর্যোগ, হরকান্ত বিল্বগ্রামেই দেহ ত্যাগ করলেন। উজুবটের সেই ভয়াবহ রাত্রিকালে তাঁর মস্তকে তরবারির আঘাত লেগেছিলো। ক্ষতটি নিরাময় হয়নি। প্রায়ই রক্তক্ষরণ হতো। শেষে ওই পরিণতি।

সামন্তপতির চর এখানেও উৎপাত আরম্ভ করলো। তারা প্রায়ই সংবাদ নিতে আসতো। যোগী পুরুষটি কে? কোন স্থান থেকে এদের আগমন? আর যুবাপুরুষটিই বা কেন এদের সঙ্গেইত্যাকার তাদের প্রশ্ন। সুভদ্রদাস বলতেন, যোগী পুরুষটি প্রকৃতপক্ষে যোগী নন–নিতান্তই দরিদ্র ভিক্ষাজীবী–তবে গতায়ু বৃদ্ধটি আমার মাতুল। মাতুলের সঙ্গেই যোগীটি এসেছেন। আর ঐ যুবাপুরুষটি মাতুলের ভ্রাতুষ্পুত্র।

ঐ কথা বলে তাদের বোঝানো গেলেও, সিদ্ধপা যেমন, তেমনি শ্যামাঙ্গও বুঝছিলো যে বিল্বগ্রাম তাদের জন্য নিরাপদ নয়। সুধীমিত্র প্রজাপীড়ক না হলেও ঘোর বৈষ্ণব। ওদিকে পিপ্পলীহাট এবং উজুবটের কাহিনী দুটি ভিন্ন আকারে এ অঞ্চলে প্রচারিত হয়েছে। প্রচারণাটি এইরূপ যে, সদ্ধর্মী ভিক্ষুদের প্ররোচনায় চণ্ডাল ডোম ও নিম্নশূদ্র ক্ষেত্রকররা দ্রোহ উত্থাপন করে গ্রামবাসীদের উপর নির্যাতন আরম্ভ করেছিলো–পরম সৌভাগ্য যে মহাসামন্ত হরিসেন ও তাঁর অনুগামীরা ছিলেন সজাগ, ফলে ঐ দ্রোহ ব্যর্থ করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

কাহিনীটি ঐরূপেই সকলের জানা। সুধীমিত্র ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তি, ধর্মরক্ষার জন্য হেন কাজ নেই যা তিনি করেন না। ভিক্ষু যোগীদের তিনি সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখেন। তাঁর চর প্রায় সর্বত্রই। চণ্ডাল ডোম হড়ডিদের পল্লীগুলিতে তাঁর অনুচরেরা প্রায়ই ভ্রমণ করে। তেমন কোনো সন্দেহের কারণ ঘটলে তারা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। শোনা যায়, ইতোমধ্যে তারা কয়েকজন ভিক্ষুকে বন্দী করে নিয়ে গেছে–ঐ বন্দীদের কী পরিণতি হয়েছে, তা কেউ জানে না।

এসব সংবাদ জ্ঞাত হবার পর ঐ স্থানে কে থাকতে পারে? তাই সিদ্ধপা ভাগিনেয়ীকে নিয়ে এসেছেন এই নবপাটক গ্রামে, শিষ্য শীলনাথের গৃহে। ধীবর ও জালিকদের বাস গ্রামটিতে, সুতরাং গ্রামটি সন্দেহের ঊর্ধ্বে। অন্তত সদ্ধর্মী ভিক্ষুদের গমনাগমন যে ঐ গ্রামে নেই, এ বিষয়ে সামন্তপতির অনুচরেরা নাকি নিশ্চিত–এইরূপ একটি কথা পথিমধ্যেই সিদ্ধপা শুনেছিলেন। সুতরাং নবপাটক গ্রামে লীলাবতীরা দীর্ঘকালই অবস্থান করতে পারবে। সিদ্ধপা শ্যামাঙ্গকে বলেছেন, বৎস, তোমাকেও এই স্থানে থাকতে হবে কিছুকাল, যতোদিন না লীলাবতীর একটি সদ্ব্যবস্থা হচ্ছে।

ব্যবস্থা হয়েছে, লীলাবতী অন্তঃপুরে গৃহস্থের পত্নী কন্যাদের সঙ্গে থাকবে আর শ্যামাঙ্গের স্থান হবে বহির্বাটিতে। এই ব্যবস্থা করে সিদ্ধপা বিদায় নিয়েছেন। কোথায় গন্তব্য, কবে ফিরবেন, কিছুই বলে যাননি।

তবে সমস্যাও কিছু হয়নি। শীলনাথের পরিবারের সকলেই পরমাত্মীয় জ্ঞানে আতিথ্যদান করেছেন। শীলনাথ সম্পন্ন গৃহস্থ। একদিকে তার ক্ষেত্রকর্ম, অন্যদিকে জালিকবৃত্তি। উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর উপার্জন যথেষ্ট। গৃহে কত যে দাসদাসী আত্মীয় পরিজন তা গণনা করা যায় না। শ্যামাঙ্গ কখনও কখনও ক্ষেত্র কর্মে সাহায্য করে। কখনও আবার জালিকদের সঙ্গে নৌকাযোগে মৎস্যাহরণে যায়। যখন কোথাও যায় না, তখন সে বসে বসে পুত্তলি নির্মাণ করে।

লীলাবতীর সঙ্গে কোনোদিন সাক্ষাৎ হয়, কোনোদিন হয় না। তার পিতৃশোক এখনও প্রশমিত হয়নি। যদিও সে পিতৃশোকে অত্যধিক কাতর হয়েছিলো, এমন দেখা যায়নি। পিতার মৃত্যুর পর সে অধিকতর গম্ভীর হয়েছে। কথা বলে কম। তার এই নীরবতার আবরণটি আর কেউ অনুভব করতে পারে না, কেবল শ্যামাঙ্গ অনুভব করে। সে বুঝতে পারে, লীলাবতী এখন হাসে না–তার কথায় এখন বুদ্ধিদীপ্ত বিচ্ছুরণ নেই তার দুচোখের চঞ্চল দৃষ্টিতে পলকে পলকে যে নতুন আলোর চমক দেখা যেতো, সেটি আর দেখা যায় না।

জীবনে চূড়ান্ত বিপর্যয় ঘটে যাবার পর সান্ত্বনার কি কিছু থাকে? শ্যামাঙ্গ মুখপানে দৃষ্টিপাত করলে সেও শ্যামাঙ্গের মুখপানে নিঃসঙ্কোচ দৃষ্টিপাত করে। কী দেখে, শ্যামাঙ্গ জানে না। তবে তার সম্ভবত কোনো প্রশ্ন আছে, এমন মনে হয়। সে জানতে চায়, কিছু বলবে লীলাবতী? লীলাবতী দক্ষিণে বামে মাথা দোলায়।

তোমার কি কথা বলতে ইচ্ছা করে না?

না, আর প্রয়োজনও কি আছে?

এ বড় কঠিন প্রশ্ন। প্রয়োজন কি আছে? সত্যিই তো, কোন প্রয়োজনের কথা সে বলবে? আর থাকলেও সে কথা শ্যামাঙ্গকে কেন বলবে?

উজুবট গ্রামে আক্রান্ত হওয়ার পর সে শ্যামাঙ্গকে হাতে ধরে কুটিরের বাইরে নিয়ে এসেছিলো। বলা যায়, শ্যামাঙ্গের প্রাণ সেদিন সে-ই রক্ষা করেছে।

সেদিনকার সেই প্রজ্বলিত অগ্নিশিখা, ধূম্রকুণ্ডলী, আর্তচিৎকার ও নরহত্যার দৃশ্যগুলির মধ্যে সে লোকটিকে দেখেছিলো তার স্পষ্ট মনে আছে–ওই মুখ বিস্মৃত হওয়া যায় না। মার মার রবে ধাবমান লোকগুলির সঙ্গে ঘাতকরূপী অভিমন্যু দাস ছুটে এসেছিলো। সে জানে না, তার উত্তোলিত তরবারির আঘাতই পিতার মস্তকে এসে পতিত হয়েছিলো কিনা। মৃত্যুশয্যায় শায়িত পিতা বারবার বলেছেন, মা জামাতাকে সংবাদ দিই, সে আসুক, তোকে নিয়ে যাক।

লীলাবতী মাথা কুটেছে পিতার পদপ্রান্তে। বলেছে, পিতা ও কাজ করবেন না। যদি করেন, তাহলে আমি আত্মঘাতিনী হবো।

শ্যামাঙ্গের তখন কিছুই করণীয় ছিলো না। একেবারেই নীরব থাকতো। লীলাবতী প্রশ্ন করতো, আমি কী করবো বলুন? বলুন, আমি কি সেই ঘাতকের গৃহে যাবো?

শ্যামাঙ্গ কোনো উত্তর দিতে পারতো না। তখন তীক্ষ্ণ শাণিত বিদ্রূপ আর অভিযোগে ক্ষতবিক্ষত করতো সে শ্যামাঙ্গকে। বলতো, আপনি কেমন পুরুষ যে একটি রমণীর জীবিত থাকবার পথ করে দিতে পারেন না? তাহলে কেন ফিরে এসেছিলেন আপনি? বলুন, কোন আশা ছিলো আপনার মনে?

এই প্রকার তীব্র আক্রমণ প্রায় প্রতিরাত্রেই হতো। প্রতিরাত্রেই শ্যামাঙ্গ নীরব থাকতো। শেষে হরকান্তের মৃত্যু হলো এবং তখন থেকেই সে নীরব। আর তার কোনো প্রয়োজন নেই। তীক্ষ্ণ বিদ্রূপ নেই তার কথায়–ক্ষোভ নেই, আক্রমণ নেই। সে অন্তঃপুরে সম্ভবত শীলনাথের গৃহিণীকে গৃহকর্মে সাহায্য করে। দিনান্তে বারেক কোনোদিন দেখা হয়, কোনোদিন তাও হয় না। দেখা হলে কেবল নির্বিকার দৃষ্টি বিনিময়টুকু হয়। যেন অপরিচিত লোক দেখছে সে।

শ্যামাঙ্গ জানে না, এই অপেক্ষার শেষ কখন। সে কার জন্য অপেক্ষা করছে, লীলাবতীর জন্য কি? লীলাবতী তাকে কী দেবে, যে তাকে অপেক্ষা করতে হবে? তার মনে প্রশ্ন জাগে একে একে। নাকি সে অরক্ষণীয়া এক রমণীর রক্ষকমাত্র? তার মাতুল এসে যাবে তারপর আর শ্যামাঙ্গের কোনো প্রয়োজন থাকবে না। এই কি প্রকৃত অবস্থা তাহলে? পরস্পরের কাছে পরস্পরের কোনোই ভূমিকা নেই?

সে কিছুই বলতে পারে না। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, ভবিষ্যতে প্রকাণ্ড একটি শূন্যতা ব্যতীত কিছু নেই। তার বলার কিছু নেই, করারও কিছু নেই।

সে ইদানীং প্রায় প্রতিদিনই দুচারটি করে পুত্তলি গড়ে। এবং প্রতিটি পুত্তলিতেই অবিকল লীলাবতী এসে ধরা দেয়। কোথাও লীলাবতী কক্ষে কলসটি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, কোথাও সে কেশ পরিচর্যায় রত, কোথাও বা মেষ শাবকটিকে ক্রোড়ে নিয়ে সে আদর করছে–এই প্রকার নানান ভঙ্গি পুত্তলিগুলিতে। এগুলি সে এখনও কাউকে দিতে পারেনি। রৌদ্রে শুষ্ক করা হয়েছে, এখন প্রজ্বলিত অঙ্গারে দগ্ধ করলেই ব্যবহারের উপযোগী হবে। এই জন্য সে নির্জন আম্রকাননের নিকটে একটি স্থানে অগ্নিকুণ্ড নির্মাণের আয়োজন করছিলো। কোথায় যে সংবাদ পেয়েছিলো বলা কঠিন, দ্বিপ্রহরে লীলাবতীকে সেই বিজন কাননে দেখা গেলো।

তাকে দেখে শ্যামাঙ্গ অবাক। বললো, তুমি?

হ্যাঁ, আমি এখানে অগ্নিকুণ্ড কেন?

কিছু পুত্তলি গড়েছি, সেগুলি পোড়াবো।

কিন্তু এভাবে অগ্নি জ্বালালে গৃহস্থ রুষ্ট হতে পারেন, সে কথা ভেবেছেন?

শ্যামাঙ্গের জানা ছিলো না যে, পল্লীপ্রান্তের আম্রকাননপার্শ্বে, প্রায় সকলের অগোচরে, একটি ক্ষুদ্র অগ্নিকুণ্ড জ্বালালেও তা অন্যের বিরক্তি উৎপাদন করতে পারে।

কাননভূমি নির্জন। লীলাবতী একটি পুত্তলি হাতে তুলে নিলো। দেখলো সেটি, অতঃপর সেটি রেখে পুনরায় অন্য একটি পুত্তলি তুলে নিলো, সেটিও দেখলো। সম্মুখেই শ্যামাঙ্গ অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে–সেদিকেও বার দুয়েক দৃষ্টিপাত করলো। লীলাবতীর অবয়ব ফুটে রয়েছে পুত্তলিগুলিতে, সম্ভবত সেই কারণেই তার দাঁড়ানোর ভঙ্গীতে প্রকাশ পাচ্ছিলো লজ্জা এবং অপরাধ বোধ। শ্যামাঙ্গকে ঐভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার অন্তরাত্মা জ্বলে গেলো। বললো, কী দেখছেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে?

তুমি বড় কৃশা হয়েছে।

কেন, স্থূলা হলে উত্তম হতো? দেখতে আরও আকর্ষণীয়া হতাম? নতুন একটি পুত্তলি গড়তেন?

শ্যামাঙ্গ কিছু বললো না।

আচ্ছা আপনি এখানে কেন রয়েছেন, বলতে পারেন?

এবারও শ্যামাঙ্গ নীরব।

সে তখন রুক্ষকেশী কৃশা রমণী মূর্তিটির মধ্যে সন্ধান করছে সোমপুর বিহারে দেখা সেই যক্ষী মূর্তিটির সাদৃশ্য। কোথায় সেই প্রগল্ভা তরুণীটি যার হাস্যাননে সূর্যালোক চমকিত হতো? যার কথা শুনলে হৃদয় হতো উৎফুল্ল, সে তো সম্মুখে নেই। এমন বিষাদ, এমন নিঃস্বতা কি কোনো নীরব মুখভাবে সে দেখেছে কখনও? তার মনে পড়ে না।

শুনুন, আমি এখানে থাকবো না, হঠাৎ লীলাবতী জানায়।

কেন? কেন থাকবে না?

এখানে থাকা এবং ভাদ্রপাদের পথকুক্কুরী হওয়া একই কথা।

এ তুমি কি বলছো? শ্যামাঙ্গ বিমূঢ় বোধ করে। জানতে চায়, শীলনাথ কিছু বলেছেন?

হ্যাঁ, জিজ্ঞাসা করেছেন, আমি যোগব্রত নিয়েছি কিনা–আমাকে তাঁর সাধনসঙ্গিনী করতে চান। আগামী অমাবস্যায় শীনাথ যোগাচারে প্রবেশ করবেন।

শ্যামাঙ্গ যোগাচারের প্রক্রিয়া কী জানে না। তবে শুনেছে, নানান ক্রিয়াকাণ্ড থাকে ঐ আচারের অনুষ্ঠানাদিতে। নারী–সঙ্গের একটি কুৎসিত ব্যাপারও নাকি ঐ আচারের আবশ্যিক অঙ্গ। সে বললো, লীলা, এবার তোমাকে মনস্থির করতে হবে।

লীলা শ্যামাঙ্গের মুখপানে চায়।

শ্যামাঙ্গ বলে, আমি এযাবৎ কিছুই বলিনি। কেননা আমার বলবার কথা ছিলো না। তোমার পিতা ও মাতুল ছিলেন। আমি যদি কিছু বলতামও, তাহলে তা গ্রাহ্য হতো না আমার কথার ভুল ব্যাখ্যা তুমিও করতে। ভাবতে, আমি লোভ ও বাসনার বশবর্তী হয়ে কথা বলছি। কিন্তু এখন তোমার পশ্চাতে কেউ নেই। এখন তুমি কেবল তোমার। সুতরাং সিদ্ধান্ত তোমাকেই নিতে হবে। আমি তোমার পশ্চাতে পশ্চাতে বহুদূর চলে এসেছি। আমার আর ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। তবে পুরুষ মানুষ বলে আমি হয়তো পথে পথেই থেকে যেতে পারি। তথাপি তোমার সিদ্ধান্তটি আমার জানা প্রয়োজন–কেননা সিদ্ধান্তটি হবে প্রকৃতপক্ষে আমাদের উভয়ের। আজ যদি সিদ্ধান্ত নিতে না পারি আমরা, তাহলে সে ব্যর্থতার দুর্ভার গ্লানি সমস্ত জীবন আমাদের বহন করতে হবে। আমি বলি, তুমি স্বামীর কাছে চলো, আমি নিয়ে যাই। সামাজিক জীবনে তুমি স্থিতা হবে, সংসারে তোমার স্থান হবে, সে এক পথ। নতুবা চলো, আমরা এ স্থান ত্যাগ করে দূর দেশে চলে যাই। আমরা দুজনে যদি একত্র জীবনযাপন করতে চাই তাহলে দূর দেশে গমন ব্যতিরেকে গত্যন্তর নেই–তুমি ভেবে দেখো, অমাবস্যার এখনও বিলম্ব আছে–

হঠাৎ লীলা বাধা দেয়। তখন তার চক্ষু দুটির ভিতরে কোমল একটি আলো ফুটে উঠেছে। বিষাদ–করুণ মুখখানিতে অস্পষ্ট হাসির ছায়া দেখা যাচ্ছে। সে শ্যামাঙ্গের হাত ধরে বলে, অতো কথায় কি প্রয়োজন–তুমি অহেতুক অধিক কথা বলল। আজ রাত্রেই এ স্থান ত্যাগ করলে হয় না? ঐ বনের মধ্যে পথ নেই? ও পথে কি ব্যাঘ ভল্লুকের সংখ্যা অত্যধিক?

ঐ কথা বলেই লীলাবতী প্রস্থান করে। শ্যামাঙ্গ নির্বোধের মতো তার গমনপথে চেয়ে থাকে। এ কী ঘটলো? এ যে কল্পনারও অতীত। লীলাবতী সমাজ সংসারের কথা কি কিছুই চিন্তা করতে চায় না? পথের বিপদ আপদের বিবেচনাও কি তার নেই?

কিন্তু ঐদিন সন্ধ্যাকালেই মাতুল সিদ্ধপা এসে উপস্থিত হলেন। তিনি বহুদূর পর্যন্ত গিয়েছিলেন। বললেন, আমি পুনর্ভবার উভয় তীরের গ্রামগুলি দেখে এলাম। অবস্থা বড় বিপজ্জনক। সর্বত্রই আশঙ্কা এবং ত্রাস। দক্ষিণের এক সামন্তপতি দুখানি গ্রাম ধ্বংস করেছেন–একখানি হড়ডিদের, অন্যখানি ডোমদের। এখন তোমাদের এ স্থানে অবস্থান করাই উত্তম।

শ্যামাঙ্গ লীলাবতীর কথাটি জানালে সিদ্ধপা গম্ভীর হলেন। এবং বললেন, বৎস, আমি তোমার কথা বিশ্বাস করলাম না। কেননা শীলনাথের আমি দীক্ষাগুরু। আমার যোত কঠোর সংযম এবং রিপু শাসনের উপর প্রতিষ্ঠিত। আমি কামাচারী নই– শীলনাথেরও হবার কথা নয়। তবু আমি গোপনে সন্ধান নিয়ে দেখবো। যদি তোমাদের কথা সত্য হয়, তাহলে এ স্থানে আর কোনোক্রমেই থাকা যাবে না। আর যদি তোমাদের কথা সত্য না হয়, তাহলে কিন্তু কঠিন শাস্তি দেবো তোমাকে।

মহাশয়, আমি বলেছি, কথাটি আমার নয়, আপনার ভাগিনেয়ীর, শ্যামাঙ্গ স্মরণ করিয়ে দেয়। বলে, আপনি বরং তাকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন।

লীলাবতী রাত্রে এসে জানায়, যাত্রা স্থগিত রাখতে হবে, মাতুলের উপস্থিতিতে পলায়ন করলে ভবিষ্যতে বিপদ হতে পারে।

শ্যামাঙ্গ হাত ধরে, লীলা, তোমার মত পরিবর্তিত হয়নি তো?

লীলা স্থির হয় মুহূর্তের জন্য। তারপর চোখের মধ্যে দৃষ্টিপাত করে বলে, তুমি কি উন্মাদ হয়েছো? আমার যে আর গত্যন্তর নেই, তুমি বুঝতে পারো না?

সিদ্ধপার মুখে দুশ্চিন্তার ছায়াটি ইদানীং সর্বক্ষণ থাকে। তিনি উজুবটেও গিয়েছিলেন। সেখান থেকে অনেক সংবাদ সংগ্রহ করেছেন। যেমন মহাসামন্ত হরিসেন এখন রাজধানীতে। ওদিকে সামন্তপতিদের উপর আদেশ হয়েছে, যাগযজ্ঞের অনুষ্ঠান করতে হবে। রাজজ্যোতিষেরা নাকি বলেছেন, গ্রহ নক্ষত্রাদির অবস্থান বিপজ্জনক–রাজ্যনাশ অবশ্যম্ভাবী, এবং তা ঘটবে যবনদেরই হাতে। সুতরাং জ্যোতিষীদের বিধান, যজ্ঞ করো, যজ্ঞের মন্ত্রেই যবনের উপদ্রব দূরীভূত হবে।

একদা রাত্রিকালে অকস্মাৎ শ্যামাঙ্গকে শয্যা থেকে ডেকে তুললেন সিদ্ধপা। বললেন, চলো, তোমাকে যোত গ্রহণ করতে হবে। আমি তোমাকে দীক্ষাদান করবো।

শ্যামাঙ্গ কিছুই বলার অবকাশ পেলো না। একটি কক্ষে নিয়ে গেলেন শ্যামাঙ্গকে। সেখানে কক্ষের মধ্যস্থলে ভূমিতে চক্র ও রেখা অঙ্কিত দেখলো শ্যামাঙ্গ। ঐ মধ্যস্থলেই ধূপ জ্বলছে, প্রদীপ জ্বলছে, কয়েকটি পদ্মফুল সেখানে, সেই সঙ্গে আবার জবা ফুলও। ঐ মধ্যস্থলেই দেখলো, বসে আছে লীলাবতী। শীলনাথ দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। সে বললো, গুরুদেব, আজ রাত্রে তো কোনো শুভলগ্ন নেই, উপরন্তু জাতক জাতিকার কায়াশুদ্ধিরও একটি ব্যাপার আছে–অনুষ্ঠানটি পরে করলে হতো না?

সে চিন্তা আমার, সিদ্ধপা জানালেন। বললেন, কালযোগ বলে একটি কথা আছে আর কায়াশুদ্ধির তুমি কী জানো? আমি জানি, আমি কী করছি, আমাকে শুভকার্য সমাধা করতে দাও, বাধা দিও না–এই বলে তিনি দ্বার রুদ্ধ করে দিলেন।

শ্যামাঙ্গের কিছুই বোধগম্য হচ্ছিলো না। উচ্চৈঃস্বরে কয়েকবার মন্ত্র পাঠ করলেন সিদ্ধপা, তারপর নিম্নস্বরে বললেন, এ তোমাদের দীক্ষা নয়–দীক্ষাগ্রহণের জন্য সাধনা প্রয়োজন–তা তোমাদের নেই। আমি লীলাবতীর কথা চিন্তা করে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করলাম। আমাকে এ স্থান ত্যাগ করে দূর দেশে চলে যেতে হচ্ছে। এই রাত্রেই তোমরা এ গ্রাম ত্যাগ করে চলে যাবে, যত দ্রুত সম্ভব, দূরে চলে যেও। পথিমধ্যে কোথাও বিলম্ব করবে না। পুন্ড্রনগরে উপনীত হলে তখন বুঝবে যে, আর ভয় নেই। পথিমধ্যে যদি কোথাও কোনো যবন কেন্দ্র দেখো, তাহলে সেখানে আশ্রয় নেবে।

ঐ পর্যন্ত বলেই তিনি অগ্নিতে ধূপ নিক্ষেপ করলেন। অগ্ন্যায় স্বাহাঃ বললেন কয়েকবার, তাতে কক্ষটি ধূপের গন্ধে এবং ধূমে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো। শেষে দ্বার উন্মুক্ত করে দিলেন। ডাকলেন শীলনাথকে। বললেন, তোমার কে দীক্ষাপ্রার্থী আছে, তাকে ডেকে নিয়ে এসো।

গুরুদেব, সে তো ভিন্ন গ্রামে থাকে।

তবু ডেকে আনো, রাত্রির শেষ যামে তার দীক্ষা হবে।

শীলনাথ চলে গেলে তিনি পুনরায় দ্বার রুদ্ধ করলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই আবার দ্বার উন্মুক্ত করে শ্যামাঙ্গকে ডেকে বললেন, চলো, আমি তোমাদের পথে রেখে আসি।

মধ্যরাত্রির নিঃশব্দতা এবং অন্ধকার। নক্ষত্রখচিত আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে শ্যামাঙ্গ। তার মনে প্রশ্ন জাগে, এ তুমি কোথায় চলেছো শ্যামাঙ্গ? একি তোমার জীবনের পথে যাত্রা? নাকি এই পথেই তোমার মরণ? সে পার্শ্বে সহগামিনী লীলাবতীকে জিজ্ঞাসা করে মৃদুস্বরে, আমরা কোথায় যাচ্ছি লীলা?

লীলা বলে, জানি না।

গ্রাম প্রান্তে উপনীত হলে সিদ্ধপা দাঁড়ালেন। ঊর্ধ্বাকাশের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন, নক্ষত্রমালা সাক্ষী, রাত্রির অন্ধকার সাক্ষী, তোমার আমার নিঃশ্বাস বায়ু সাক্ষী শ্যামাঙ্গ, লীলাবতীকে আমি তোমার হাতে সমর্পণ করলাম, ওকে তুমি রক্ষা করো। তোমাদের বিবাহ হবে না–কেননা শাস্ত্রের কোনো বিধান নেই যে তোমাদের বিবাহ হয়–এ বড় দুষ্কাল বৎস, জানি, তোমাদের সংসার হবে না–তথাপি আমি তোমাদের মিলিত করে দিলাম–পারলে যোব্রত পালন করো, শিব তোমাদের মঙ্গল করুন।

মাতুলকে প্রণাম করে দুজনেই দ্রুত পদক্ষেপে সম্মুখে অগ্রসর হলো। জ্যৈষ্ঠ গত হয়ে আষাঢ়ের আরম্ভ এখন। কিন্তু সৌভাগ্য যে বর্ষা এখনও নামেনি। আকাশের নক্ষত্রমালা দেখতে দেখতে দুজনে পথ অতিক্রম করে চললো। লীলাবতীর মুখে কোনো কথা নেই। বস্ত্রের অঞ্চলটি মাথায় তোলা, তথাপি বোঝা যায়, অবগুণ্ঠনবতী এই রমণী মাথা নীচু করতে জানে না। সঙ্কোচহীন একটি দৃপ্ত ভঙ্গী তার মস্তককে উন্নত করে রেখেছে। শ্যামাঙ্গ লক্ষ্য করলো, ওষ্ঠদ্বয় দৃঢ় সংবদ্ধ, দৃষ্টি দিগন্ত লগ্ন এবং প্রতিটি পদক্ষেপ জড়তাবিহীন। একবার শ্যামাঙ্গ বললো, একটু দ্রুত চলো।

লীলাবতী মৃদু স্বরে জানতে চাইলো, কেন?

শীলনাথের লোক অনুসরণ করতে পারে।

করুক।

ক্ষুদ্র একটি শব্দ। কিন্তু শতকথা যেন সে ঐ একটি শব্দে উচ্চারণ করে।

 শ্যামাঙ্গ পুনরায় বলে, লীলা, আমরা কোথায় চলেছি জানো?

ঐ কথায় মস্তক আন্দোলিত করে লীলাবতী, না। তারপর বলে, সম্ভবত মরতে।

না, কৌতুকের কথা নয় লীলা, শ্যামাঙ্গ গম্ভীর হয়ে বলে, তোমার জানা প্রয়োজন, তুমি কোথায় চলেছো–তোমার মাতুলের কথাগুলি নিশ্চয়ই শুনেছো?

না, আমার প্রয়োজন ছিলো না।

কি কাণ্ড, নারী জাতি দেখছি সত্যিই ভয়ঙ্কর! এবার শ্যামাঙ্গের কণ্ঠে ঈষৎ কৌতুক ধ্বনিত হয়।

লীলা ঐ কথায় মুহূর্তেক দাঁড়ায়। তারপর বলে, এভাবে পথে বিলম্ব করো না তো! সম্মুখে আমাদের দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে হবে।

রাত্রি তখন শেষ হয়ে আসছে। পূর্বাকাশে আলোকোদ্ভাস, বনকুকুট ডাকছে পথিপার্শ্বের ঝোপগুলিতে। একটি গোধিকা বামদিক থেকে দক্ষিণে গেলো। দিগন্তে ঐ সময় মেঘ দেখা গেলো–তবে ঐ মেঘ ঝড়েরও নয়, বৃষ্টিরও নয়। সম্মুখে একটি গ্রাম দেখা যায়। শ্যামাঙ্গ শুধালো, এখানে ক্ষণেক বিশ্রাম নেবে? না, লীলাবতী জানায়, আমি ক্লান্ত নই পরবর্তী কোনো স্থানে বিশ্রামের কথা চিন্তা করবো।

কিন্তু আমি যে বিশ্রাম চাই? শ্যামাঙ্গের স্বরে কি কৌতুক?

তুমি দেখছি নারীরও অধম। ধিক তোমার পুরুষ জীবনে।

এই তো লীলা আবার সহজ হচ্ছে। শ্যামাঙ্গ উৎফুল্ল হয় মনে মনে। লীলাবতীর হাতখানি সে ধরে। বলে, লীলা ক্ষণেক দাঁড়াও, আমি তোমাকে দেখি।

তুমি আমাকে দেখবার কে? লীলার কণ্ঠে শাসন।

শ্যামাঙ্গ অপ্রস্তুত বোধ করে। বলে, আমাদের যে মিলিত করে দিয়েছেন তোমার মাতুল।

সে তো যোগব্রতের মিলন, সংযম আচরণ করতে হবে দুজনকেই।

হঠাৎ লীলাবতী দাঁড়ালো। পূর্বাকাশ এখন পরিষ্কার–পরস্পরের মুখ স্পষ্ট দেখা যায়। বললো, শ্যামাঙ্গ, তুমি কী চাও বলো তো?

আমি তোমাকে চাই, অকপটে দাবি করে শ্যামাঙ্গ।

আমাকে চাও, অর্থ কি আমার এই দেহটিকে চাও। দেহ পেলেই তোমার চলবে?

শ্যামাঙ্গ প্রমাদ গণনা করে। কী বলতে চায় এই নারী? সে বলে, লীলা, বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে ভালোবাসি।

উত্তম কথা, ভালোবাসো বলেই তো আমাকে চাও তুমি, তাই না? তোমার কথা আমার কাছে দুর্বোধ্য নয়। বলো, আমার এই দেহটি চাও? যদি অতীব প্রয়োজনীয় মনে করো, তাহলে নাও।

এই কথা বলে সে উধ্বাঙ্গের বস্ত্র অপসারিত করলো। শ্যামাঙ্গ দেখলো তার গ্রীবা, সুগোল স্কন্ধ দুটি, উন্নত ও মহিমান্বিত স্তন যুগল, ক্ষীণ কটিদেশ–

বলো, আরও দেখতে চাও, তাহলে নিম্নাঙ্গের বস্ত্রও আমি অপসারিত করি।

শ্যামাঙ্গের ভ্রূ কুঞ্চিত হয়ে ওঠে। সে আহত বোধ করে। বলে, তুমি কি আমাকে লম্পট ভেবেছো?

না, তা কেন ভাববো, লীলাবতীর কণ্ঠ অতীব সুস্থির।

তাহলে তুমি ওভাবে কেন নিজেকে অপমানিত করলে?

শ্যামাঙ্গ, তুমি কি কলহ করবে পথে? লীলাবতী বলে, আমি তোমাকে মনে স্থান। দিয়েছি সেই প্রথম সাক্ষাতের দিন থেকে, মনে আছে তোমার, পুনর্ভবা তীরের বটতলের উচ্চ বেদীটির কথা? আমি তারপর থেকে সমগ্র অস্তিত্ব দিয়ে তোমাকে কামনা করেছি। লম্পট মদ্যপ অথবা নির্বোধ লোক নিয়ে রমণীরা সংসার করছে না? আমিও হয়তো একদিন অভিমন্যু দাসের কাছে চলে যেতাম। কিন্তু তুমি এলে আমার সম্মুখে, আর জীবনের অর্থ আমার নিকট অন্যরূপ হয়ে গেলো। এখন আমার পূর্বজীবন বলে কিছু নেই, আমি মনে করি, সেই জীবন উজুবটেই ভস্মীভূত হয়ে গেছে। তুমি ব্যতীত এখন আমার কেউ নেই। আমার দেহ মন আমি সমস্তই তোমাকে দান করে রেখেছি–তবু তুমি কেন লোভী বালকের মতো আচরণ করো, বলো? প্রিয়তমাকে বক্ষলগ্ন করার এই কি সময়? এই কি স্থান?

লীলাবতীর সমস্ত সংযম ঐ কথার পর ধসে পড়ে, তার কণ্ঠ রোদনউদ্বেল হয়ে ওঠে। সে শ্যামাঙ্গের বক্ষে নিজেকে সমর্পণ করে।

এ কি দেখছে শ্যামাঙ্গ, কে এই রমণী, যে তার বক্ষে আকুল কান্নায় ভেঙে পড়লো? সে দুহাতে লীলাবতীকে বক্ষে ধারণ করে রাখে। তারপর ক্ষমা চায়, লীলা, ক্ষমা করো আমি তোমাকে বুঝতে পারিনি–ক্ষমা করে দিও আমাকে।

Category: দুষ্কালের দিবানিশি
পূর্ববর্তী:
« ০৪. নদী এ স্থানে অগভীর
পরবর্তী:
০৬. সোমজিৎ লক্ষ্মণাবতী »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑