• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

১৫. মহত্তর সাধনার দিশা

লাইব্রেরি » সুকুমারী ভট্টাচার্য » আপেক্ষিক মূল্যায়নে রামায়ণ ও মহাভারত » ১৫. মহত্তর সাধনার দিশা

মহত্তর সাধনার দিশা

হোমারের দুটি মহাকাব্যের মধ্যে অডিসি রামায়ণের মতো মোটামুটি পরিবারিক ও কতকটা সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পিত। প্রকৃতির হাতে অডিসিউসের সুদীর্ঘ নিগ্রহ, পথে নানা বাস্তব অবাস্তব সংকটের বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধ করে অবশেষে স্বভূমিতে অবতীর্ণ হয়ে সে আবিষ্কার করে যে, তার স্ত্রী সম্পূর্ণ নিষ্কারণে সুচিরকাল ধরে বিপদে মগ্ন, তরুণ পুত্র টেলিমেকিস এক সে সংকটকে যথাসাধ্য ঠেকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছে মাত্র, কারণ সমাধানের শক্তি তার নেই। অতএব দীর্ঘ নয়। বৎসরের বিপৎসস্কুল পথ-পরিক্রমার পরে অডিসিউসকে শেষ যুদ্ধ করতে হল স্ত্রীর মর্যাদা রক্ষার জন্য এবং নিজের সম্পত্তি রক্ষা করার জন্যে। এই সুদীর্ঘ ক্লেশ সহ্য করার মধ্যে অডিসিউস মহানায়ক হয়ে ওঠেন এবং মহাকাব্যটি গভীর একটি মাত্রা পায়।

ইলিয়াড-এ ঘটনা জটিল, সংকট গুরুতর এবং সংগ্ৰাম কঠিনতর। কারণ এ সংগ্রাম অন্তরে বাহিরে। আকিলিস তুচ্ছ কারণে সমবেত যোদ্ধাদের প্রতি কর্তব্য করতে অসম্মত হয়ে যুদ্ধোদ্যম থেকে সম্পূর্ণ সরে এসে নিজের দলের প্রতি এক ধরনের অবিবেচক বিশ্বাসঘাতকতা করলেন। মেনেলাওসের স্ত্রী হেলেনকে ট্রয়ের রাজকুমার হেলেনের সম্মতিক্রমেই হরণ করে এনেছে। তারই উদ্ধারকল্পে দুস্তর দুঃখের পথ পেরিয়ে মেনেলাওস, আগামেমনন তাঁদের নিজেদের অনুগত সৈন্যদল ও বহুসংখ্যক নৌবাহিনী নিয়ে ট্রয়ের সিন্ধুতটে শিবির নির্মাণ করে যুদ্ধে উদ্যত। এর মধ্যে আকিলিসের যুদ্ধ বিমুখতায় একটা বিপর্যয় সৃষ্টি হল। তবু যুদ্ধ চলল, লোকক্ষয় হতে লাগল। শেষ পর্যন্ত ট্রোজানদের হাতে প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু হলে অসহ্য ক্রোধের বশে আকিলিস অস্ত্রধারণ করলেন, যুদ্ধ ধীরে ধীরে শেষ হল। হেলেনকে নিয়ে গ্রিকরা ফিরলেন স্বদেশে।

এ মহাকাব্যের পরিকল্পনাতেই নানা জটিলতা। যে হেলেন স্বেচ্ছায় গৃহত্যাগ করেছে, তাঁর পুনরুদ্ধারের জন্য অগণ্য গ্রিক সৈন্য মৃত্যুবরণ করল। ট্রয়ের রাজকুমার প্যারিস পর্যন্ত্রীহরণ করেছে সত্য, কিন্তু সেটা হেলেনের সম্মতিক্রমেই, কাজেইট্রয়ের লোকক্ষয় আরও নিষ্কারণ এবং করুণ। যুদ্ধে এসে বীরের পক্ষে অস্ত্রসংবরণ করা অন্যায়, এটা বীরোচিত আচরণ নয়। তবু আকিলিসেব ক্ষোভের, অভিমানের, হেতুটাও যত তুচ্ছই হোক, সত্য। তাই পদে পদে জটিল হয়ে উঠেছে মূল কাহিনির সূত্রগুলি। সাদাকালো বিভাগ এখানে অচল।

সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের নানা সংঘাত এখানে উপস্থিত এবং কোনওটিরই সরলরৈখিক সমাধান বর্ণনা করা হয়নি। তা ছাড়া গ্রিকদের মধ্যে নানা জটিল প্রতিযোগিতা, ট্রোজনদেরও ধর্ম-বিপর্যয়ের অবস্থা, বিভিন্ন বীরের যুদ্ধকালে এবং অন্য সময়েও জীবন মৃত্যু সম্বন্ধে বীরধর্ম, মানবধর্ম সম্বন্ধে নানা বিরুদ্ধ মূল্যবোধের ও চেতনার প্রকাশ এ মহাকাব্যটিকে একটি অসামান্য মানবিক গৌরবে মণ্ডিত করেছে।

পরিশেষে মহাভারত। এর কেন্দ্ৰে যে যুদ্ধ তা যে কবে কোথায় সংঘটিত হয়েছিল ইতিহাসে তার কোনও নজির মেলেনি। কোনও এক সুদূর অতীতে হয়তো ভারতবর্ষে যে যুদ্ধ ঘটেছিল, কিন্তু সে ভারতবর্ষসে দিন কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, এমনকী মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত কিনা, তা আজ কিছু পণ্ডিত গবেষকের চর্চার বিষয়; স্থির সিদ্ধান্তে আসবার মতো উপাদান এখনও পাওয়া যায় না, এ সিদ্ধান্তের সময়ও তাই এখনও আসেনি। কোনও সময়ে কোনও এক জায়গায় যে একটি ব্যাপক দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ হয়েছিল, যার ফল ছিল সুদূর বিস্তৃত, এ সম্বন্ধে কোনও সংশয়ের অবকাশ বোধ হয় নেই। এও সত্য যে, যুদ্ধের পরে লোকমুখে বীর-গাথা, যুদ্ধবৰ্ণনা, বিলাপ, বিজয়বৰ্ণনা, চরিত্রের বিবরণ, ইত্যাদি দীর্ঘকাল ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। হয়তো খ্রিস্টপূর্ব চারশো থেকে খ্রিস্টিয় চারশো সালের মধ্যে–কিছু আগে পরে হতে পারে— এটি মহাকাব্যের রূপ পায়। কোনও মূল সংকলক সম্ভবত পূর্ববতী লোকগাথাগুলিকে সংহত একটি রচনায় সন্নিবিষ্ট করে খ্রিস্টপূর্বপ্রথম শতকের কাছাকাছি এর মূল ‘জয়’ রূপটি নির্মাণ করেন। তার পরে নৈতিক, দার্শনিক, সৰ্বজনিক, সামাজিক মূল্যবোধের দ্বারা প্রণোদিত হয়ে নানা পুরোহিত, পুরাণকার, শাস্ত্রকারীরা–যা তারা তৎকালীন সমাজের পক্ষে হিতকর বা প্রয়োজনীয় মনে করেছিলেন–সেই বিভিন্ন অংশগুলিকে তত দিনে লব্ধপ্রতিষ্ঠ এই মহাকাব্যের সঙ্গে সংযুক্ত করেন। তখন এর নাম হল ‘ভারত’। এর শেষতম অংশ ভার্গব প্রক্ষেপ হল অভি-পৌরাণিক; আজ যা হিন্দু সমাজ বলে পরিচিত তার মূল শাস্ত্রের উদ্ভব এই অংশে। মূল মহাকাব্যের সঙ্গে এই অংশের কাহিনিগত যোগসূত্র নিতান্তই ক্ষীণ, প্রায় নেই বললেই চলে। বরং, মূল অংশের প্রতিপাদ্য বহু মূল্যবোধের বিরুদ্ধ মতাদর্শ এ অংশে বিস্তৃত ভাবে বিবৃত, বহু দুর্বল উপাখ্যানের দ্বারা তার ভাষ্য রচনা করা হয়েছে।

এই আদি মহাকাব্যটিতে কী ছিল যা একে এমন অনন্য মহিমা দিয়েছে? কীসে এর আদি মহাকাব্যত্ব? একটা জাতি যখন তার উপলব্ধি, বেদনা-যন্ত্রণা, তার অভিজ্ঞতার মূল্যবোধের সংঘাত, তার মর্মস্থলে ‘গভীরতম ভূমিতে ধর্মসংকট উদ্বেলিত হয়ে কোনও কাব্যে সে অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করতে চায় তখন সে রচনা হয়ে ওঠে। সে জাতির গভীরতম সত্তর আত্মপ্রকাশ। স্বাভাবিক ভাবেই এই আত্মপ্রকাশ বিবৃত হয় একটি কাহিনিকে অবলম্বন করে। মহাভারতের ক্ষেত্রে কাহিনিটি ঐতিহাসিক হয়ে থাকলেও এর একটি প্রতীকী মূল্য আছে। ধর্মসংকট যেমন শ্রেয় এবং প্রেয়ের দ্বন্দ্ব, তেমনই দ্বন্দ্ব প্রেয়-প্রেয়স্তরের এবং শ্রেয়-শ্রেয়স্তরের; আবার, তেমনই দ্বন্দ্ব সমাজে স্বীকৃত বর্ণধর্মের অথবা আশ্রমধর্মের কোনও বিশেষ তৎকালীন ধর্মের কিংবা এ সকলকে অতিক্রম করে যে মানবধর্ম তার সঙ্গে। এই ধরনের দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হলে মানুষ সহসা বিপর্যন্ত ও উদ্রান্ত বোধ করে; যে নীতিবোধের আকল্পে সে আশৈশব শিক্ষিত, সহসা তার বিরোধী নীতি যদি কোনও সংকটের মুহুর্তে গ্রহণের দাবি জানায়, তা হলে একটিকে বর্জন করে অন্যটিকে অবলম্বন করবার জন্যে কোনও সর্বজনস্বীকৃত নীতি যেহেতু নেই, সেখানে তাই মানুষকে নিজের অন্তরাত্মার মুখোমুহকি দাঁড়িয়ে গ্রহণ-বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। মহাভারত তার বহুচরিত্রকেবারে বারেই এই ধরনের ধর্মসংকটের সামনে টেনে এনেছে; ফলে কাব্যটি ধর্ম সংকটের। অতএব এ-কাব্য বাস্তবজীবনে অনুরূপ সংকটে পথপ্রদর্শনের সংকেত দিতে সমর্থ। এইখানে মহাভারতের মহাকাব্য-গরিমা।

এ-কাব্যের কাব্যগুণ অবিসংবাদিত, যদিও ভার্গবপ্রক্ষেপের শেষ দিকে অনেক অংশই এমন সাম্প্রদায়িক পুরোহিতের রচনা যাঁরা কবি নন। ফলে সেই সব অংশে রচনা ক্লিষ্ট; তালিকা, বিবরণ ও ক্লান্তিকর উপদেশাত্মক উপাখ্যানে পূর্ণ। কিন্তু এ সব ছাড়াও মহাভারতে স্বভাবতই কাব্যগুণবর্জিত অন্য বেশ কিছু অংশ আছে; ইতিহাস, ভূগোল, পুরাকাহিনি, উদ্ভিদ ও প্রাণি জগতের বিবরণ, নানা দর্শনপ্রস্থান ও ধর্মানুষ্ঠানের কথা। এগুলি সংযোজিত হয়। একটি মহাকাব্য কোনও উক্তৃঙ্গ মহিমায় আরোহণ করলে পর। সমাজ তখন সে মহাকাব্যকে ব্যবহার করে গণশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে। কিছু কিছু প্রাথমিক মহাকাব্যেই শুধু এই সব উপাদান আছে, পরবর্তীকালের মহাকাব্যগুলি এ সব পরিহার করে একটি নিটোল কলেবর লাভ করেছে। এর একটা কারণ, ততদিনে ওই সব আগন্তুক বিষয়গুলি স্বতন্ত্র চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে, মহাকাব্যে তাদের সংকলন করবার প্রয়োজন ফুরিয়েছে।

তবু ওই নিটোল কলেবারের শিল্পোন্তীর্ণ রূপ ও ওই বহু আনুষঙ্গিক বিষয়ের দ্বারা ভারাক্রান্ত প্ৰাথমিক মহাকাব্যের মহিমা অর্জন করতে পারেনি। কেন? প্ৰাথমিক জীবনজিজ্ঞাসার যে একটা অকুণ্ঠ ও তীব্র আকুতি তা শুধু ওই আদিকমহাকাব্যগুলিতেই বিধৃত। পরবর্তীর্ণ কাব্যগুলি এই বিষয়ে আদিকাব্যগুলির উত্তরাধিকারী। তাদেরও জীবনজিজ্ঞাসা আছে এবং বিভিন্ন দেশকালের প্রথম মহাকাব্যগুলিতে তার তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা ও মূল্যবোধের সংকট ও ঐকান্তিকতাতেই তাদের মূল্য নিরূপিত হয়। সে মূল্য বহু পরবর্তীকালের মহাকাব্যেই গভীর তাৎপর্য লাভ করেছে এবং সর্বদেশকালে কাব্যগুলিকে সমাদৃত করেছে।

কিন্তু আদি মহাকাব্যগুলির একটা স্বতন্ত্রবৈশিষ্ট্য হল, এগুলিই প্রথমবার পৃথিবীতে উচ্চারণ করেছে মানুষের সংশয়, জীবন সম্বন্ধে অতৃপ্তি, অমরত্বের আকাঙ্ক্ষা, ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পুণ্যের সঙ্গে সুখ দুঃখের সংগতির অভাবের অভিজ্ঞতায় গভীর হতাশা ও বেদনাদীর্ণ উপলব্ধি: জীবনে কোনও আত্যন্তিক মঙ্গলবিধান নেই। তবু এই মহাকাব্যগুলি আত্মিক ঐশ্বর্যের উচ্চশিখরে স্থাপন করেছে সেই মানুষকে যে প্রাকৃতিক ও দৈবগত বিপর্যয়ে প্রতিক্ষণে বিপর্যস্ত, যে শেষ পর্যন্ত জীবনে ঐহিক জন্মলাভ করবে না, শুধুমৰ্মমূলে রক্তক্ষরণের মধ্যে দিয়ে খুঁজে যাবে জীবনের সেই নিরঞ্জন মহিমা, যা লাভক্ষতি, জয়পরাজয়কে অতিক্রম করে গেছে। মানুষের শেষতম শত্ৰু মৃত্যু; গিলগামেশা থেকেই দেখি মানুষ মৃত্যুকে পরাস্ত করে অমরত্বের সন্ধান করে চলেছে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ও কঠিন মূল্যে। মহাভারতেও বক যুধিষ্ঠিরের সংলাপে জীবন ও মৃত্যু, শ্রেয় ও প্রেয়, আপাতবিরোধী নীতির দ্বন্দ্ব, ধর্মের দ্বান্দ্বিক সত্তা এই সমস্ত বিষয় আলোচিত। কাছে থেকে এবং দূর থেকে জীবনকে দেখতে দেখতে, বহু কঙ্করান্তীর্ণ পথ পার হতে হতে এবং পার হয়ে এসেও, সত্য মিথ্যা ধর্মাধৰ্মসম্বন্ধে অভ্যস্ত বিশ্বাস বারবার আঘাতে দীর্ণ হওয়ার পর কী বাকি থাকে যা মানুষের জীবনকে মূল্যবান করে তোলে?

মহাভারত নানা ঘটনা ও উপাখ্যানের মধ্য দিয়ে এ প্রশ্ন তুলেছে এবং নানা ভাবে এর উত্তর দিয়েছে। স্পষ্ট উক্তিতে, উপাখ্যানে, বিবরণে, রূপকে, সংলাপে জটিল জীবনের আকল্প নির্মাণ করে দু-তিনটি সত্য প্রতিপাদন করেছে: মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ নেই, কিছু নেই। এরই অনুকল্প হল, যা কিছু মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত তা সব দর্শন, ধর্ম অনুষ্ঠানকে অতিক্রম করে কোনও ঐকাস্তিক সত্যলোকে হিরকের মতো কঠিন ও উজ্জ্বল ভাস্বরতায় বিরাজ করে। পরবর্তী প্রজন্মের উত্তরণে দীপাবর্তিকার মতো দীপ্তি বিকীর্ণ করে। মানুষের যে কােজ মানবগোষ্ঠীর পক্ষে হানিকর তা-ই পাপ; যে কাজ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর পক্ষে মঙ্গলকর তা-ই পুণ্য। এবং পাপের পথ অর্থ, যশ অর্জনে আপাত ভাবে সমর্থ হলেও শেষ পর্যন্ত মানবসমাজে ধিকৃত। অপর পক্ষে পুণ্যের, সত্যের পথ সুকঠিন, আমৃত্যু সাধনার পথ, বহু দুঃখযন্ত্রণা এবং পদে পদে বিস্তর ব্যর্থতা, অবসাদ এবং হতাশায় আকীর্ণ এ পথ। যে এ সব সহ্য করে সাহসের সঙ্গে দুঃখবরণ করে বৃহত্তর মানব-সমাজের মঙ্গলের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে, আপাতদৃষ্টিতে সে ব্যর্থ, বঞ্চিত ও উপহাসিত হলেও শেষ বিচারে সেই অমরতীয় উত্তীর্ণ হয়। মহাভারত এ কথা স্পষ্ট উচ্চারণ করে বলেনি; বললে তা কাব্য হত না। বলেছে কাহিনি, উপাখ্যান, সংলাপ ও নানা আপাতবিরুদ্ধ মূল্যবোধের সংঘাত বারে বারে উপস্থাপিত করে। কোথাও নায়ক হেরেছে সাধনার উপযুক্ত সাহস, ধৈৰ্য, মূল্যবোধে প্রত্যয় ছিল না। বলে, কোথাও বা দুঃসহ মূল্য দিয়ে ঐহিক বঞ্চনাকে উপেক্ষা করে মনুষ্যত্বকে জয়যুক্ত করেছে। এবং সে জয়কে রেখে গেছে চিরকালের মানুষের আত্মিক উত্তরাধিকার রূপে।

রামের নামে বহু মানুষ ও স্থানের নামে ভারতবর্ষে আছে; তত বেশি নাম–মানুষের ও স্থানের–মহাভারতের নেই। তবু মহাভারত যে ভাবে জীবনের মর্মান্তিক নৈতিক সংকটগুলিকে প্রকাশ্যে এনে চরিত্রগুলির অস্তর-যন্ত্রণা ও তার মধ্যে দিয়ে তাদের নৈতিক উত্তরণ দেখছে, রামায়ণে তেমন সংকট শুধু সীতার জীবনেই দেখিয়েছে এবং এখানে উত্তরণটিও এই অন্যায়কারী অযোধ্যা থেকে জননীর ক্রোড়ে, নিরাপদ ও কাম্য আশ্রয়ের মধ্যে দিয়ে। এক দিক থেকে সীতাই পাঠকের দৃষ্টিতে মহনীয়তর চরিত্র; গ্রন্থটি যার নামে সেই রাম পাঠকের দৃষ্টিতে অনেক নেমে গেলেন।

Category: আপেক্ষিক মূল্যায়নে রামায়ণ ও মহাভারত
পূর্ববর্তী:
« ১৪. রামায়ণ: সহজ পথরেখা

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑