০৯. অতিলৌকিকতা ও মানবিক সংশয়

অতিলৌকিকতা ও মানবিক সংশয়

স্ত্রীপর্বের পরে শান্তিপর্ব, মহাভারতের দীর্ঘতম অংশ। মহাভারতের প্রক্ষিপ্ত অংশের যদি তিনটি স্তম্ভ থাকে তবে সেগুলি হল বনপর্ব, অনুশাসনপর্ব ও শান্তিপর্ব। এখানে ভীষ্মকে সুদীর্ঘকাল শরশয্যায় শুয়ে থাকতে হল: আসল কারণটা সূর্যের উত্তরায়ণে যাওয়া নয়, ততটা সময় না পেলে এতগুলি উপদেশবাণী ভীষ্ম দেবেন কখন? লক্ষণীয়, পাণ্ডব ভ্রাতাদের উদ্দেশ্যে সাধারণ ভাবে বলা হলেও শান্তিপর্বের বাণীর মুখ্য শ্রোতা যুধিষ্ঠির; ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরকে ধর্মশিক্ষা দিচ্ছেন ভীষ্ম। কেন? যুধিষ্ঠির রাজা হবেন, তাই। তা হলে শান্তিপর্বের ‘রাজধর্ম’ অংশটা বোঝা যায়। ধার্মিক রাজা হতে হবে, তাই মোক্ষধর্মও জানা দরকার। এমনি ভাবে নানা আনুষঙ্গিক বিষয় এতে জুড়েছে। কিছু বা তার অতিকথা, যেমন রাজার উৎপত্তি। কিছু বা কাহিনিনিষ্ঠ উপদেশ, যেমন আতিথ্য, দয়া, ইত্যাদি সম্বন্ধে কথা। কিছু বা সাক্ষাৎ সম্বন্ধে প্রযোজ্য, যেমন রাজার কর্তব্য নিরূপণ। এর মধ্যে প্রসঙ্গ ছাড়াও নানা বিষয় জুড়েছে যেমন নারীনিন্দা, শূদ্রের সামাজিক স্থান, জ্যেষ্ঠভক্তি, ইত্যাদি।

এ বিষয়ে পাঠকের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়? তুলনীয় অংশ রামায়ণে নেহাৎ-ই কম। প্রাসঙ্গিকতা সর্বত্রই আছে, দৈর্ঘ্যও স্বল্পতর। এখানে পাঠকের চিন্তাগত একটা বিভ্রান্তি আসে, কারণ বক্তা ভীষ্ম, শ্রোতা যুধিষ্ঠির। দুজনেই যখন ধর্মজ্ঞ, তখন এত বাগ্‌বিস্তার কেন? মৌর্যযুগের কাছাকাছি থেকে গুপ্তযুগের আরম্ভ পর্যন্ত আর্যাবর্তব্যাপী যে রাজ্য-সাম্রাজ্য স্থাপিত হচ্ছে তার নির্দেশক শাস্ত্র তো চাই। এই সেই শাস্ত্র। কাজেই যুধিষ্ঠির পরোক্ষ শ্রোতা, প্রত্যক্ষ শ্রোতা ওই দীর্ঘ আটশ বছরের বিবর্তনের মধ্যবর্তী কালের ও পরবর্তী কালের মানুষ। ফলে বহু পুরাতন ভাব পুনরাবৃত্ত হচ্ছে; বহু বিষয়ে, নির্দেশ কঠোরতর হচ্ছে; শ্রোতা ভেবে পাচ্ছে না এত শাস্ত্রকথা শাস্ত্র ছেড়ে মহাকাব্যে স্থান পায় কেন, মহাকাব্যের ধর্ম যে এতে ক্ষুণ্ণ হয়। বোঝাই যায়, এই সুদীর্ঘ শান্তিপর্ব একজনের রচনা নয়; বহু বিভিন্ন কবি-মনীষী ও অকবি শাস্ত্রকারের সমবেত প্রয়াসে এর সৃষ্টি। এবং এমন ক্ষেত্রে যা হয় তা মাঝে মাঝেই ঘটেছে: সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত কথাও ঢুকিয়ে দিয়েছেন দু-চারজন ব্যতিক্রমী রচয়িতা। তার একটি দুটি বলব।

যুধিষ্ঠিরকে ভীষ্ম বলছেন, তীক্ষ্ণ বিষ কালসাপ, ক্ষুরের তীক্ষ্ণ ধার, বিষ ও নারী একই রকম প্রাণনাশক; আর যা-ই করো, যুধিষ্ঠির, নারীকে কদাপি বিশ্বাস কোরো না।[১] বক্তা চিরকুমার, ব্যক্তিগত ভাবে নারীর বিষাক্ততা বা মাধুর্য কোনওটাই তাঁর জানবার কথা নয় এবং বিপরীতে, শ্রোতা স্ত্রী-অভিজ্ঞ (এক পঞ্চমাংশের হলেও স্বামী এবং তাঁর অন্য স্ত্রী ছিল); এই চিরকুমারের উপদেশ না শুনে নারী সম্বন্ধে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে আসার, দৃঢ়তর ভিত্তি তাঁর থাকার কথা। এ অবস্থায় সমস্ত অংশটা হাস্যকর ও যথার্থই অপ্রযোজ্য, অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। পাঠকের কী প্রতিক্রিয়া হবে? ভীষ্মের প্রতি শ্রদ্ধা টলে যাবে। যুধিষ্ঠিরের নিষ্প্রতিবাদে এ কথা শোনা তো দ্রৌপদীর প্রতি প্রচ্ছন্ন অপমানে পর্যবসিত হয়। সমকালীন ও উত্তরকালীন পুরুষের মনকে নারী সম্বন্ধে বিষিয়ে দেওয়াই এর মুখ্য উদ্দেশ্য বলে প্রতীত হবে। এর কারণ, গুপ্তযুগ থেকে যে সমাজের ভিত্তিস্থাপন হচ্ছে, তার একটি মূলস্তম্ভ নারীর সামাজিক অবনমন এবং পুরুষের দ্বারা অবদমন। কিন্তু উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, শরশয্যায় শুয়ে পিতামহ পরিণত বয়স্ক নাতিকে এই সব শিক্ষা দিচ্ছেন মৃত্যুর অনতিদূর থেকে— এতে একটা উদ্দেশ্য-উপায়ের বিরোধ পাঠককে ভারাক্রান্ত করে তোলে। এমনই বহু শ্লোকে শূদ্রের হীনতা, রাজার প্রতি প্রজার বশ্যতা, গুরুজনের প্রতি কনিষ্ঠের, পুরুষের প্রতি নারীর, দেবতার প্রতি মানুষের, নিয়তির সঙ্গে পুরুষকারের সম্বন্ধ— মৃত্যুপথযাত্রী অশীতিপর বৃদ্ধের এই সব কী পৌত্রের হাতে শেষ উত্তরাধিকার তুলে দেওয়ার যথার্থ নমুনা? উপায় ও উপেয়ের দ্বন্দ্ব থেকেই যায়, পাঠককে অনেকটা ব্যাকুল করে তোলে।

আগেই বলেছি, ভিন্ন ভিন্ন লেখনীর সৃষ্টি ভিন্ন অংশ। তাই এক জায়গায় প্রায় অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই সহসা ভীষ্ম বলেন, ‘গোপন একট রহস্য তোমাকে বলি। যুধিষ্ঠির, মানুষের চেয়ে বড় কোনও কিছুই নেই।’[২] অর্থাৎ? দেবতাদের চেয়ে মানুষই বড়। এবং শুদ্ধ মানুষ হিসাবেই সে বড়। গুণী, জ্ঞানী, বীর, পণ্ডিত, যশস্বী মানুষ নয়, মানুষ বলেই মানুষ বড়। কত বড়? আবিশ্বচরাচরে সবচেয়ে বড়; সবচেয়ে উঁচুতে তার জায়গা। তা হলে এতক্ষণ যে ব্ৰহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গঙ্গার মহিমা কীর্তন করা হল, তাঁদের জায়গা কোথায়? কোথায় আবার? ভীষ্ম তো সরাসরিই বললেন, মানুষের নিচে। কারণ মানুষ সৃষ্টির উন্নততম স্থানে আসীন। স্বভাবত, বলাই বাহুল্য, এই উক্তিতে পাঠক শ্রোতার মনে একটা ধন্ধ লাগে, তার চিরাভ্যস্ত ধারণাগুলি কেমন বিপর্যস্ত হয়ে যায়। সমস্ত রামায়ণে এমন বৈপ্লবিক উক্তি একটিও নেই। সেখানে আদি নায়ক রাম ‘নরচন্দ্রমা’ ছিলেন, যেমন সব মহাকাব্যের নায়করাই হন। কিন্তু মহাকাব্যটির জনপ্রিয়তার পরেই রাম বিষ্ণুর অবতারে পরিণত হন, অর্থাৎ মানুষের মর্যাদার ওপরে প্রতিষ্ঠিত হয় দেবতার মহিমা। মহাভারতের শেষ সংযোজনে কৃষ্ণকেন্দ্রিকতা দেখা যায়; কিন্তু ‘স্ত্রীপর্বে’-তে বিষ্ণুর অবতার সেই কৃষ্ণ, যিনি স্বয়ং ভগবান, এবং ‘যতঃকৃষ্ণস্ততোজয়ঃযতোধর্মস্ততোজয়ঃ’ এই সব বাণীতে যিনি ধর্মের সঙ্গে সমীকৃত, সেই কৃষ্ণকে যখন তাঁর অধার্মিক আচরণের জন্য অভিশাপ দেন মানবী গান্ধারী, তখন স্পষ্টতই কৃষ্ণ মানুষে পরিণত। মথুরার রাজা পাণ্ডবসখা কৃষ্ণ মহাভারতের মূল অংশে মানুষরূপেই ছিলেন; মহাকাব্যটি জনপ্রিয়তা অর্জন করবার পরে বিষ্ণু-কৃষ্ণভক্ত সম্প্রদায়ের পুরোহিত ভক্তরা এটিকে আত্মসাৎ করে এবং সাম্প্রদায়িক ইষ্ট সিদ্ধির জন্যে কৃষ্ণকে এর কেন্দ্রস্থলে বসায় এবং তখনকার কৃষ্ণ ভগবদ্গীতার বক্তা, দেবতা, বিষ্ণুর অবতার। একথা মনে রাখলে কৃষ্ণের দুটি চিত্রের ব্যাখ্যা মেলে। যখন মহাকাব্য পাণ্ডবসখা পার্শ্বচরিত্র, তখন তিনি সম্পূর্ণতই মানুষ; পরবর্তী প্রক্ষিপ্ত অংশে পুরো দেবতা।

এই প্রসঙ্গেই মনে পড়ে আদিপর্বের একটি উপকাহিনি অণীমাণ্ডব্যের কাহিনি। এটি মূল কাহিনির সঙ্গে অসম্পৃক্ত:

ঋষি অণীমাণ্ডব্য মৌন অবলম্বন করে তপস্যা করছিলেন নিজের কুটীরে। কয়েকজন চোরকে নগররক্ষীরা তাড়া করতে তারা নিরুপায় হয়ে চুপি চুপি চোরাই মাল ঋষির কুটীরে রেখে পালিয়ে যায়। রক্ষীরা কুটীরে ঢুকে ঋষিকে জিজ্ঞাসা করে, লোকগুলো কোনদিকে গেল। কিন্তু ঋষি তখন মৌন অবলম্বন করে আছেন তখন, কাজেই উত্তর দিলেন না। রক্ষীরা চোরাই মাল কুটীরে পেয়ে ঋষিকেই চোর সাব্যস্ত করে রাজদ্বারে বিচার চায়। রাজা বলেন তাঁকে শূলে দিতে। শূলে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে অণীমাণ্ডব্য ধর্মকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন করেন, নির্দোষ হলেও কেন তাঁর এই মর্মান্তিক মৃত্যু। ধর্ম বলেন, শৈশবে তিনি একটি কীটের শরীরে একটি কাঁটা প্রবেশ করান, এ তারই প্রায়শ্চিত্ত। তখন অণীমাণ্ডব্য ধর্মকে উদ্দেশ করে অভিশাপ দিয়ে বলেন, অজ্ঞান বালকের লঘু পাপে এই গুরুদণ্ড বিধান করার অপরাধে ধর্মকে মর্তে জন্মাতে হবে শূদ্রযোনিতে। ধর্ম শূদ্ররূপে অবতীর্ণ হলেন, বিদুর রূপে।[৩]

এটি একটি বৈপ্লবিক উপাখ্যান: শ্রোতা পাঠকের আজন্মলালিত বিশ্বাসের মূলে আঘাত করে অভিশাপ। প্রথমত ধর্ম স্বয়ং দেবতা, তাঁর পক্ষে কোনও অন্যায় করাটাই অকল্পনীয়। দ্বিতীয়ত, দেবতা যা-ই করুন না কেন, একজন মানুষ তাঁকে কী ভাবে অপরাধী সাব্যস্ত করে দণ্ড দেবে, অভিশাপ দেবে? এবং আরও বিস্ময়কর কথা, সেই অভিশাপ ফলে যাবে? এখানেও একজন নির্দোষ সৎ মানুষ দেবতার বিচারক ও দণ্ডদাতা হয়ে দেবতার ওপরে উন্নীত হলেন।

এমনই আর একটি উপকাহিনি আছে:

যমরাজের দূতেরা এক ব্যক্তিকে পরলোকে নিয়ে গেল; তাকে দেখে যম বললেন, ‘ভুল হয়ে গেছে। এরা অর্থাৎ যমদূতেরা নামসাদৃশ্যে ভুল লোককে ধরে এনেছে। পরে লোকটির কাছে মার্জনা ভিক্ষা করে তাকে মর্তে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন।[৪]

তা হলে দেবদূতরা ভুল করে মৃত্যু ঘটায়? এ সব কাহিনিতে পাঠকের চিরাচরিত বিশ্বাসগুলি চূর্ণ হয়, তাকে নতুন করে ভাবতে হয়: কেন এ কাহিনি, এর তাৎপর্য কী?

তাৎপর্য আছে বই কী। যে মহাভারতে ভীষ্ম অসংখ্য প্রচলিত কুসংস্কারের প্রশংসা করতে করতে হঠাৎ যুধিষ্ঠিরকে বলে ওঠেন, মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছুই নেই, সেই মহাভারতকারেরই তো বুকের পাটা থাকবে এত বড় একটা প্রকাণ্ড লোকক্ষয়কারী যে পাপ, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, তার সমস্ত দায়িত্ব ধর্মরূপী কৃষ্ণের ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার, এবং সেটা ফলিয়ে দিয়ে এটা প্রতিপন্ন করা যে ওই ধর্ম-কৃষ্ণের স্থান অভিশাপদাত্রী এক মানবীর নিচে। এই মহাভারত যখন দেবতা অণীমাণ্ডব্যকে দিয়ে ধর্মকে অভিশাপ দেওয়ায় মানুষ, তখন সে কি বলে না যে সংসারটা কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন দেবতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, এখানে বহু অনর্জিত তাপ ভোগ করতে হয় মানুষকে, যদি বিধাতা কেউ থাকে তবে সে বিধাতা একান্তই খামখেয়ালি? তাই এমন মৃত্যু প্রায়শই ঘটে, যার ব্যাখ্যা মেলে না; যমদূতের ভ্রান্তি সেই ব্যাখ্যা। এখানে সব সময় ভালর জয় হয় না। দেবতা থেকে থাকলেও নয়, বরং সেই দেবতাই দায়ী শাস্তি-পুরস্কারের বৈষম্যের জন্য। এ বৈষম্য তো মানুষকে প্রতিদিনের অভিজ্ঞতায় এমন মর্মন্তুদ উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে জানতে হচ্ছে যার কোনও ব্যাখ্যা সে কখনও খুঁজে পায়নি; পায় না, পাবেও না। মহাভারত এই সব উপাখ্যানের মধ্যেই বিভ্রান্ত সেই মানুষকে তো বলছে, ‘এভাবে অভিজ্ঞতার অর্থ খুঁজোনা, কোথাও মিলবেনা হিসেব।’ এবং প্রচলিত বিশ্বাসভিত্তি বিদীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরও মানুষ তো এই সব কাহিনির অন্তর্নিহিত তত্ত্বের মধ্যে দিয়েই পৌঁছেছে অর্থ খোঁজা থেকে মুক্তিতে, দেখতে পাচ্ছে সংসারের কোনও ন্যায়নিষ্ঠ অধিকর্তা নেই। কাজেই মানুষেরই ওপরে সেই দায়িত্ব বর্তায়: রূপনারাণের কূলে নিরুত্তর এই জীবনজিজ্ঞাসার সামনে দাঁড়িয়ে অন্যায়ের প্রতিকারের দায়িত্ব আপন হাতে তুলে নেওয়ার।

সমগ্র রামায়ণে এমন কোনও উপাখ্যান নেই যা মানুষের গভীরতম বিশ্বাসের মূলে এমন ধাক্কা দেয়। কাজেই রামায়ণের পাঠক যত তার পূর্ব প্রত্যয়গুলির সমর্থন খুঁজে পায় মহাকাব্যে, ততই কাব্যটি তার সন্তোষ ও প্রশংসা অর্জন করে। সেখানে মহাভারতের পাঠককে প্রত্যয়ের প্রান্তে এসে সম্মুখীন হতে হয় বারংবার। সংশয়ের এক অতল কালো গহ্বরের আতঙ্কের প্রথম পর্যায়ে তার অস্বস্তি ও বিরক্তি জন্মায়, মহাকাব্যটি এ ভাবে তার বিশ্বাসের অবলম্বন কেড়ে নেয় বলে। যদিও যথেষ্ট ধৈর্য ও বিবেচনা নিয়ে যাচাই করলে সে আপাতত প্রত্যয়-ধ্বংসের ওপারে অন্য একটি গভীরতর প্রত্যয়ের ভূমি ধীরে ধীরে খুঁজে পায় ও উপলব্ধিতে পৌঁছতে পারে, যেখানে জীবনের বহু জটিলতার অন্যতর ব্যাখ্যা মেলে।

কৌরবরা নিঃশেষ হলে হস্তিনাপুরের সিংহাসনে যুধিষ্ঠিরের অবিসংবাদিত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হল। কিন্তু তখন যুধিষ্ঠির সিংহাসনে অনীহা প্রকাশ করে কনিষ্ঠদের একে একে রাজা হতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু ভ্রাতৃহত্যা-স্বজনহত্যার দরুন যে অপরাধ-বোধ যুধিষ্ঠিরকে পীড়া দিচ্ছিল তা অন্যেরাও অনুভব করছিলেন। এবং জ্যেষ্ঠ যেখানে বিমুখ, সেখানে অন্যরা তা গ্রহণ করা সমীচীন মনে করলেন না। শেষ পর্যন্ত ব্যাস পরামর্শ দিলেন, পাপবোধ থেকে নিষ্কৃতি পেতে গেলে পাণ্ডবদের অশ্বমেধ যজ্ঞ করা উচিত। তার পরে শুদ্ধচিত্ত যুধিষ্ঠির অভিষিক্ত হয়ে রাজত্ব করতে পারবেন।[৫] পাঠকের অবাক লাগে এই ভেবে, যে, সমস্ত যুদ্ধটা তো সিংহাসনেরই জন্যে। বহু স্বজন-বন্ধু হত্যার পরে সেই সিংহাসনে বসতে পাণ্ডবদের এত দ্বিধা কীসের? তাঁরা ক্ষত্রিয়, যুদ্ধ করে নিজস্ব অধিকার আদায় করাই ক্ষত্রিয় ধর্ম, তবু যুদ্ধের অব্যবহিত পূর্বক্ষণে যুধিষ্ঠিরের কী আকুতি যুদ্ধ বন্ধ করার জন্যে, অর্জুনের কী ঘোর আপত্তি আত্মীয়বন্ধু হত্যায়! ক্ষত্রিয় ক্ষাত্রধর্ম পালন করতে এত দ্বিধা করে কেন? এই দ্বিধারই শেষতম প্রকাশ আশ্বমেধিক পর্বে। ব্যাস উপায় নির্দেশ না করলে কী করতেন পাণ্ডবরা? এত কষ্টে অর্জিত সিংহাসন ছেড়ে বানপ্রস্থে যেতেন? কতকটা যেন অসহিষ্ণু বোধ করে পাঠক। কিন্তু এই দ্বিধার পশ্চাতে আছে ক্ষাত্র-ধর্মেরও ওপরে যার স্থান, সেই মানবধর্ম। গ্রন্থকার দেখাতে চাইছেন, হস্তিনাপুরের সিংহাসনে শেষ পর্যন্ত যাঁরা এলেন তাঁরা শুধু ক্ষত্রিয় নন, পুরোপুরি মানুষও। বর্ণধর্মকে পেরিয়ে তাঁদের দৃষ্টি পৌঁছেছে এমন এক স্তরে যেখানে তাঁদের এই অনুতপ্ত বৈরাগ্যই তাঁদের যথার্থ অধিকার দিচ্ছে রাজত্ব করবার। উপনিষদের সেই, ‘তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথাঃ তাঁরা অনুভব করেছেন বলেই এই মহতী দ্বিধা, যা তাঁদের মহনীয়তায় মণ্ডিত করেছে।

মহা ধূমধাম করে অশ্বমেধযজ্ঞ হয়ে গেল; যুধিষ্ঠিরের অপ্রতিহত প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত হল; বহু দূরদূরান্তের রাজাদের আনুগত্য নিশ্চিত হল; কৌরবদের অনুগতরা বিদ্রোহ করার সাহস হারাল; শুরু হল পাণ্ডব রাজত্ব। রামায়ণে রামের রাজত্ব উত্তরকাণ্ডে খুব ঘটা করে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে রামরাজ্যকে ধর্মরাজ্য বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সে রাজ্যে একটি ব্রাহ্মণ পুত্রের অকাল মৃত্যুর মূল্য শোধ করেছে শূদ্র শম্বুক, এবং নিরপরাধা এক নারী সীতাকে বারংবার অকারণে অপমান ও প্রত্যাখ্যান সহ্য করতে হয়েছে। অবশ্য, উত্তরকাণ্ডে সুর নেমে এসেছে, গতানুগতিক বর্ণনা এবং শূদ্র ও নারীর ওপর অত্যাচার ছাড়া কোনও কিছুই এখানে পাঠকের চিত্তকে প্রভাবিত করতে পারে না। মহাভারতের অশ্বমেধ যজ্ঞের পরেও সুর নেমে এসেছে। আশ্রমবাসিক পর্বে কুন্তি ও বিদুরকে নিয়ে বৃদ্ধ রাজদম্পতি ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারী বনে গেলেন এবং একটি দাবানলে প্রাণ ত্যাগ করলেন।[৬] মৌষল পর্বে আকস্মিক, অর্থাৎ মূল কাহিনির সঙ্গে সম্পূর্ণ ভাবে অসম্পৃক্ত একটি ঘটনা ঘটে, তার আকস্মিকতাই তাকে খানিকটা কাহিনিগত বৈচিত্র দেয়।

এখানে শুনি একদিন বিশ্বামিত্র, নারদ ও কন্বমুনি যদুরাজ্যে বেড়াতে এলেন কৃষ্ণের ভাই সারণ ও আরও দু-চারজনের কী দুর্মতি হল, তারা সাম্বর পেটের ওপরে এক মুষল রেখে কাপড় বেঁধে সেটা অদৃশ্য করে তাকে স্ত্রীবেশে সাজিয়ে মুনিদের সামনে এনে বললে ‘এ কৃষ্ণের এক ভাইয়ের স্ত্রী, সন্তানসম্ভবা। এ কী প্রসব করবে পুত্র না কন্যা, তা আপনারা ধ্যানযোগে জেনে বলে দিন।’ তখন মুনিরা স্পষ্টই বুঝতে পারলেন, তাঁদের ঠকাবার উদ্দেশ্যে এরা এই ছলনার অবতারণা করেছে। অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে, তিন মুনিই অভিসম্পাত দিয়ে বললেন, ‘এ একটি মুষল প্রসব করবে, এবং তার দ্বারা সমগ্র যদুকুল ও বৃষ্ণিকুল ধ্বংস হয়ে যাবে।’ বলে তাঁরা সেখান থেকে চলে গেলেন।

সত্যিই সাম্ব একটি মুষল প্রসব করল। কংসের পিতা রাজা উগ্রসেন সমস্ত ঘটনা শুনে অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে মুষলটিকে বালির মতো চূর্ণ করে সমুদ্রের জলে ফেলে দিতে বললেন এবং রাজ্যের সকলকে সুরাপান করতে নিষেধ করলেন। তখন আকাশে অন্তরীক্ষে ও পৃথিবীতে নানা দুর্নিমিত্ত দেখা দিল। কৃষ্ণের সুদর্শন চক্র আকাশে উঠে মিলিয়ে গেল, তাঁর রথের ঘোড়ারা সমুদ্রের ওপর দিয়ে চলে গেল। তাঁর ও বলরামের ধ্বজা দুটি আকাশে উঠে নিশ্চিহ্ন হল। কৃষ্ণ বললেন কুরুবংশ ধ্বংস হওয়ার আগেও চারদিকে এ ধরনের নানা দুর্লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। কয়েকজন যদু ও বৃষ্ণি বংশীয়েরা অভব্য আচরণ করতে লাগল ও কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের সময়ে ও সৌপ্তিক পর্বে বর্ণিত যে যা অন্যায় করেছেন তাই নিয়ে সাত্যকি ও কৃতবর্মা পরস্পরকে দোষারোপ করতে লাগলেন। উচ্ছিষ্ট বাসন নিয়ে ভোজবংশীয় ও অন্ধকবংশীয়রা পরস্পরকে আক্রমণ করতে লাগলেন। এ ভাবে প্রদ্যুম্ন ও সাত্যকি মারা গেলেন। এদের অশালীন ও হিংস্র আচরণে ক্রুদ্ধ কৃষ্ণ একমুঠো এরকা-তৃণ (নলখাগড়ার মতো) ছিঁড়ে নিলেন সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি লোহার মুষলে পরিণত হল এবং তিনি তা দিয়ে সামনে যাকে পেলেন তাকেই মারতে লাগলেন। তখন অন্যরাও, ভোজ, অন্ধক ও বৃষ্ণি বংশের লোকেরাও লৌহমুষলে পরস্পরকে আঘাত করতে লাগলেন। কৃষ্ণের ছেলে, নাতি সকলে তাঁর সামনেই পরস্পরের এই উন্মত্ত আঘাত প্রত্যাঘাতে মারা গেলেন— সাম্ব, প্রদ্যুম্ন, গদ, চারুদোষ্ণ, অনিরুদ্ধ সকলেই। বহু লোক মারা গেলে পর, কৃষ্ণের সারথির পরামর্শে তাঁরা বলরামের কাছে এলেন; দেখলেন অনন্তনাগ তাঁর শরীর থেকে নিঃসৃত হয়ে সমুদ্রে চলে গেল এবং বলরাম দেহত্যাগ করলেন। দেখে কৃষ্ণ কিছু দূরে গিয়ে যোগাসীন হলেন। দূর থেকে জরা নামক এক ব্যাধ মৃগভ্রমে একটি শর নিক্ষেপ করলে তা কৃষ্ণর পায়ে বিদ্ধ হয় এবং কৃষ্ণ প্ৰাণ ত্যাগ করেন। তাঁর পূর্ব নির্দেশ অনুসারে হস্তিনাপুরে খবর গেল। অর্জুন এলেন যাদব ও বৃষ্ণিবংশের নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে। পথে আভীররা তাঁদের আক্রমণ করলে অর্জুন তাঁর গাণ্ডীবে শরারোপ করলেন, কিন্তু কোনও দিব্যাস্ত্রের কথাই মনে আনতে পারলেন না। ফলে আভীররা নারীদের হরণ করল, বহু নারী নিজের ইচ্ছেতেই অপহারকদের সঙ্গে গেলেন। অল্প ক’জন নারীকে নিয়ে অর্জুন হস্তিনাপুরে ফিরে এলেন।

এই কাহিনি যদি পাঠক অভিনিবেশ নিয়ে পড়েন তবে অনেকগুলো ঘটনায় তাঁর ধোঁকা লাগে। প্রথম ঋষিদের প্রতারণা করার উপাখ্যানটি কাহিনির দিক থেকে সম্পূর্ণ নিষ্প্রয়োজন। ঋষিশাপই যদি এর উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তবে তাও বাহুল্য, কারণ যদু-বৃষ্ণি (কৃষ্ণ বৃষ্ণিবংশের ছিলেন) ধ্বংসের অভিশাপও একাদশ (‘স্ত্রী’) পর্বে গান্ধারীই দিয়েছিলেন, তবে দ্বিতীয়বার এই নেহাৎ শিশুসুলভ কাহিনির দ্বারা কী প্রতিপাদিত হল? নারীর শাপ ফলতে পারে না, তাই কি ঋষির শাপ প্রয়োজন হল? গান্ধারী সমস্ত জীবনই যে কোনও ঋষির মতোই সংযত ও ধর্মপরায়ণ, কিন্তু নারী ঊনমানব, তাই কি পুরুষ অভিশপ্তার প্রয়োজন? পাঠকের কাছে ওই স্ত্রীপর্বের প্রবল গাঢ় সংবেদনাময় পরিস্থিতিতে গান্ধারীর শাপের যে আবেগ-ঘন আবেদন আছে, এ ছেলেখেলায় তা কোথায়? পাঠক কীভাবে গ্রহণ করতে পারেন এ নিষ্কারণ দ্বিরুক্তিকে? তার পর, যে সব অতিলৌকিক ঘটনা এখানে অতি দ্রুত পর পর ঘটে চলেছে সেগুলি মহাকাব্যে গম্ভীর পরিণতির পরে তুঙ্গবিন্দু থেকে একটি করুণ ও হাস্যকর অবপতন। কৃষ্ণের সুদর্শন চক্র ও গরুড়ধ্বজ আকাশে মিলিয়ে যাওয়া এবং বলরাম দেহত্যাগ করলে কৃষ্ণের যোগাসনে বসে দেহত্যাগ এক ধরনের কতর্ব্যচ্যুতি, কারণ অর্জুন না আসা পর্যন্ত তাঁর নিজের ষোলো হাজার স্ত্রী এবং রাজ্যের বহু নারী, শিশু, বৃদ্ধ এদের কোনও ব্যবস্থাই তিনি করলেন না।

আগেই বলেছি শান্তিপর্ব থেকে মহাকাব্যের সুর নেমে এসেছে। প্রক্ষিপ্ত মৌষল পর্বে এই অবক্ষয়ের প্রকৃতি হল যাকে পূর্বেই অনিবার্য ভবিতব্য বলা হয়েছে তাকে এখানে কতকগুলি অতিলৌকিকের মধ্যে দিয়ে ঘটানো হচ্ছে। ধ্বজা, চক্র বাদ দিলেও যে কৃষ্ণ থাকেন তাঁর কি কোনও শক্তিই ছিল না আসন্ন যদুবৃষ্ণি-কুলক্ষয় নিবারণ করবার? তখনও কিন্তু তিনি অলৌকিক বিষ্ণু-অবতার, কারণ জরা’র শরে দেহত্যাগ করবার পর তাঁর চতুর্ভুজ মধুসূদন মূর্তি দেখানো হয়েছে। এ সবে পাঠকের খটকা লাগে এবং এই খটকাকে অতিক্রম করবার কোনও সূত্র মহাকাব্যে নেই। কাজেই ঋষিশাপ থেকে আরম্ভ করে অর্জুনের দিব্যাস্ত্র বিস্মরণ পর্যন্ত একাদিক্রমে যে সব অলৌকিক অনুপুঙ্খ বিবৃত হয়েছে।[৮] তার যোগফল হল কৃষ্ণ, বলরাম ও অর্জুন ধাপে ধাপে নিষ্ক্রিয় ও নিষ্প্রভ হয়ে যাচ্ছেন। শুধু পাঠকের স্বস্তি থাকে কোথাও এক ধরনের ঋণশোধের বোধে। অষ্টাদশ অক্ষৌহিণী সমেত সমগ্র কুরুকুল ও বিস্তর পাণ্ডব ও পাণ্ডবপক্ষীয় বিস্তর বীরের প্রাণহানির এ যেন এক ধরনের প্রতিশোধ। কুরুকুল ও পাণ্ডবকুলের প্রতিশোধে যদু বৃষ্ণি ভোজ অন্ধক কুলের ধ্বংস। এবং এ উপসংহারে সুর এত নেমেছে যে কোথাও শৌর্য, উত্তেজনা, ধর্মযুদ্ধ, ন্যায়-প্রতিষ্ঠা, কোনও বৃহৎ ভাবের আভাসমাত্র নেই, শুধু অত্যন্ত রূপকথা-সুলভ অতিলৌকিকের ব্যবহার একটা অনিবার্য অবক্ষয় ঘটিয়ে তোলার জন্য।

কেমন এমন হল? পাঠক ধীরে ধীরে উপলব্ধি করে মহাকাব্যের সঙ্গে এ অংশের কোনও আত্যন্তিক যোগ নেই। বলরাম, কৃষ্ণ, অর্জুন, সবাই ফুরিয়ে গেছেন; তাই বীরের আর অস্ত্র লাগে না, তৃণই মুষল হয়ে ওঠে এবং নিষ্কারণ পারস্পরিক হত্যাকাণ্ড চলে। বাপ ছেলেকে মারে, ভাই ভাইকে। এ কেমন হননলীলা? বীরের উন্মাদনা এতে নেই। আছে অভিশপ্তের উন্মত্ততা। এ যেন প্রকারান্তরে বলছে, অস্ত্র থাক আর নাই থাক, জিঘাংসা আছে। হঠাৎ যেন মনে হয়, অতবড় আঠারো দিনের ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধটাও এক অর্থে অমনই বিরাট এক ভ্রাতৃহনন পর্ব। মৌষলপর্বে একটা তীব্র জিঘাংসার ফলে ঘটল একটা ব্যাপক অপচয়। ছোট এই পর্বটি সহসা প্রতীকী হয়ে ওঠে: মহাকাব্যের যুদ্ধও তো তাই-ই। এখানে ঋষিদের প্রতারণা দিয়ে শুরু। ধৃতরাষ্ট্র, দুর্যোধন, কর্ণ ও শকুনি মিলে বারবার অক্ষক্রীড়ায় প্ররোচিত করেন যুধিষ্ঠিরকে এবং দ্যূতক্রীড়ায় স্পষ্ট প্রতারণা দিয়ে শকুনি যুধিষ্ঠিরকে পরাজিত করে। সেই প্রতারণাকে অবলম্বন করে নেমে এল ন্যায়ধর্মের অভিশাপ, সমগ্র কুরুকুল প্রায় ধ্বংস হয়ে গেল। মৌষলপর্ব ক্ষুদ্র পরিসরে প্রতিফলিত করেছে বৃহত্তর পরিসরের প্রতারণা ও মহাবিনা যুদ্ধের পূর্বে যতক্ষণ পর্যন্ত মানবিকতা ছিল, যুধিষ্ঠির আচার্যদের পায়ে পড়েছেন যুদ্ধ থামাবার জন্য, অর্জুন গাণ্ডীব ত্যাগ করে যুদ্ধে প্রবল অনীহার যুক্তি দিয়েছেন। কৃষ্ণ ‘যুক্তি’ জালে অর্জুনকে পরাজিত করেছেন। ওর মধ্যে কোথাও একটা গভীরতর অযৌক্তিকতা পাঠক উপলব্ধি করেন। মৌষল পর্ব দুর্বল রচনা হলেও এই বোধটা যুদ্ধ, বর্ণধর্ম ও জীবনধর্ম সম্বন্ধে পাঠককে ক্রমে ক্রমে সচেতন করে একটা অস্থিরতায় পৌঁছে দেয় এবং সেই পরিমাণেই তার সার্থকতা।

***

১. স্ত্রী পর্ব ৫ম ও ৬ষ্ঠ অধ্যায়

২. শান্তিপর্ব; (৪০:১); অনুশাসনপর্ব; (৪৩:২৫)

৩. শান্তিপর্ব; (২৮৮:২০)

৪. আদিপর্ব; (১০১:২৫, ২৭)

৫. আশ্বমেধিকপর্ব; ৭১ অধ্যায়

৬. আশ্বমেধিকপর্ব; (৩:৪, ৯, ১০)

৭. আশ্রমবাসিকপর্ব; (৪৫:৩৪)

৮. মৌষলপর্ব; (৮:৬৫, ৬৬, ৬৮)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *