০২. মহাভারতের দ্বন্দ্ব

মহাভারতের দ্বন্দ্ব

মহাভারতে কিন্তু পারিবারিক সম্পর্কগুলি রামায়ণের মতো আদর্শ ভাবে চিত্রিত নয়। অযোধ্যায় প্রাসাদ-ষড়যন্ত্রে বিমাতার বিদ্বেষ রামচন্দ্রের বনবাসের হেতু, কিষ্কিন্ধ্যায় বালী-সুগ্রীবের বিরোধ ও লঙ্কায় বিভীষণের পক্ষে জ্যেষ্ঠের আনুগত্য ত্যাগ, ব্যতিক্রমী ঘটনা বলতে এই ক’টিই। না হলে দশরথের চারটি পুত্রের মধ্যে আদর্শ সৌভ্রাত্র্য, মৃত্যুকালে বালী ও সুগ্রীবের পুনর্মিলন ও সুগ্রীবের হাতে বালীর নিজপুত্র অঙ্গদকে সমর্পণ, লঙ্কায় রাবণ, শূর্পণখা, কুম্ভকর্ণের সৌভ্রাত্র (যেমন জটায়ু সম্পাতিরও), এবং সর্বত্রই স্বামীর প্রতি স্ত্রীর আনুগত্য, পিতার প্রতি পুত্রের বাধ্যতা— বন্ধুদের মধ্যে সখ্য, গুরুজনদের প্রতি বশ্যতা, এ সব নৈতিক আদর্শ অনুসারেই চিত্রিত হয়েছে। মহাভারতে প্রাথমিক বিরোধই হল এক বংশের দুই ধারার মধ্যে তৎকালীন সম্পর্কে যারা ভাই। বিরোধ সম্পত্তি অর্থাৎ সিংহাসনে অধিকার নিয়ে এবং বিষয়টি সত্যিই জটিল, সহজে সমাধেয় নয়। যুধিষ্ঠিরের জন্ম আগে, সে দিক থেকে সিংহাসনে তাঁর অগ্রাধিকার; কিন্তু তাঁর জন্ম পাণ্ডুর ঔরসে নয়, এবং পাণ্ডুর প্রজনন ক্ষমতা না থাকা তাঁর অধিকারকে বিসংবাদিত করে। তেমনই ধৃতরাষ্ট্রের অন্ধত্বও তৎকালীন আইনে সিংহাসনে তার অধিকারকে সংশয়িত করে। কাজেই বিষয়টি জটিল ও সমস্যাসংকুল।

রামায়ণে সীতাকে হরণ করে কামুক এক রাক্ষস; মহাভারতে দ্রৌপদীর ওপরে কামনা ছিল দুর্যোধন ও কর্ণের। হরণ না করলেও প্রকাশ্য সভায় তাঁর অকথ্য অসম্মান ঘটায় যারা, তারা সম্পর্কে তাঁর ভাসুর; এবং জড়বৎ আচরণ করে সে অসম্মানকে সহ্য করেন যাঁরা তাঁরা তাঁর শ্বশুর। রামায়ণে সম্পর্কে শ্বশুর-স্থানীয় (দশরথের সখা) জটায়ু বন্ধুপুত্রের বধূকে অবমাননা থেকে রক্ষা করতে চেয়ে প্রাণই দিলেন। দ্রৌপদীকে একবার জয়দ্রথ হরণ করে, কিন্তু স্বল্প কালের মধ্যেই সে দণ্ডিত হয় এবং ওই হরণের অভিযোগে— পরপুরুষের স্পর্শের দোষে— সীতাকে রাম যেমন প্রত্যাখ্যান করেন, পঞ্চপাণ্ডবের মনে কিন্তু দ্রৌপদীহরণের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র বৈকল্য দেখা দেয়নি।

রামায়ণের যুদ্ধ দূরদেশবাসী অনাত্মীয়, অপরিচিত, শত্রুপক্ষ রাক্ষস রাবণের সঙ্গে; মহাভারতে তা নয়। ওখানে কারণটা খুব সঙ্গত ছিল; রাবণ রামের স্ত্রীকে হরণ করেছিল। মহাভারতে যুধিষ্ঠির পৈত্রিক অধিকারে সিংহাসন দাবি করলে শকুনির পরামর্শে যুধিষ্ঠিরকে দ্যুতক্রীড়ায় আহ্বান করা হয়। যুধিষ্ঠির খেলায় দক্ষ ছিলেন না, কিন্তু রাজি না হলে সম্মানহানি হবে এ আশঙ্কায় রাজি হন এবং একে একে সব কিছু পণ রেখে হারিয়ে সর্বস্বান্ত হলেন। পরে ধৃতরাষ্ট্র দ্রৌপদীকে বর দিলে তিনি একে একে স্বামীদের মুক্তি চেয়ে নিলেন। তখন আবার শকুনিকে দিয়ে কর্ণ ও দুর্যোধনের পরামর্শে যুধিষ্ঠিরকে দ্যুতক্রীড়ায় আহ্বান জানান এবং দ্বিতীয় বারেও একে একে সমস্ত সম্পত্তি, চার ভাইকে, নিজেকে ও দ্রৌপদীকে পণ রেখে হারিয়ে শর্ত অনুসারে দ্বাদশ বর্ষ বনবাস ও এক বৎসর অজ্ঞাতবাস স্বীকার করে বনে চলে যান।[১]

এই উপাখ্যানের মধ্যেই নিহিত আছে মহাভারত সম্পর্কে জনসাধারণের সংবেদনে একটা গুরুতর প্রত্যবায়। দ্রৌপদী যে প্রকাশ্য রাজসভায় লাঞ্ছিত হলেন এ ব্যাপারটার কোনও সরব প্রতিবাদ তেমন হল না। প্রথম দ্যূতসভায় বিদুর প্রতিবাদ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর তো কোনও সামাজিক, রাষ্ট্রিক বা এমনকী পারিবারিক প্রতিপত্তিও ছিল না, যার বলে লোকে তাঁর কথায় কর্ণপাত করবে; ফলে সে কথা উচ্চারিত হল বটে, কিন্তু উপেক্ষিত হল সম্পূর্ণ ভাবে। দ্বিতীয় দ্যূতসভায় বিকর্ণ সকলের বিবেকের কাছে আবেদন করলেন এই বলে যে, কাজটা ক্ষত্রিয় নীতি, রাষ্ট্রনীতি ও ন্যায়নীতিরও বিরুদ্ধ। কিন্তু বিকর্ণ এমন কেউ নন যে, লোকে তার কথায় সাড়া দেবে। বলা বাহুল্য, বিদুর ও বিকর্ণ পাঠক শ্রোতার প্রতিবাদই উচ্চারণ করছেন এবং জীবনে যেমন প্রায়শই ঘটে তেমনই, এখানেও সুবিচারের জন্য আবেদন উপেক্ষিত হল। এক অর্থে এই-উপেক্ষার মধ্যেই দ্রৌপদীর লাঞ্ছনার অভিঘাত পাঠকের বিবেক ও বোধের কাছে তীব্রতর হল এবং সমস্ত ব্যাপারটিকে জটিল করে তুলল। এখানে মহাভারতের পাঠক বা শ্রোতা কী দেখছে? ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপ, সঞ্জয়, ধৃতরাষ্ট্র এঁরা চুপ করে রইলেন, ন্যায়নীতির কোনও প্রশ্ন তুললেন না। বনবাস ও অজ্ঞাতবাস পাণ্ডবদের, কিন্তু অপমান ও লাঞ্ছনা প্রধানত দ্রৌপদীর।

দ্রৌপদী কে? একজন বিবাহিতা নারী, যাঁর স্বামী তাঁকে পণ রেখে জুয়া খেলে হেরেছেন। অর্থাৎ যে স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীকে রক্ষা করা বিপদ অসম্মান থেকে, সেই স্বামীই স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে ঠেলে দিলেন তাঁকে মর্মন্তুদ অপমানের মধ্যে। নারীকে অপমান করা এমন কিছু অভাবনীয় ব্যাপায় নয়। শ্রোতা-পাঠকদের খানিকটা বিস্ময় উদ্রেক করলেও ব্যাপারটা বিবমিষা উৎপাদন করেনি। কিন্তু অবচেতনে সকলেরই একটা অস্বস্তি ছিল: দ্রুপদরাজকন্যা অপূর্ব রূপবতী, বহুগুণবতী, অসামান্য ব্যক্তিত্বসম্পন্না এই নারী যে প্রকাশ্য রাজসভায় অবমানিত এবং কেশাকর্ষণ, বেশাকর্ষণের মতো জঘন্য নির্যাতন ভোগ করলেন, এতে পুরুষশাসিত ও পুরুষপ্রধান সমাজের মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবে এর কোনও প্রতিবাদ না দেখেও অন্তরের অন্তঃ স্থলে অবশ্যই কতকটা বিচলিত বোধ করেছিলেন। কারণ সমস্তটাই ছিল প্রথম থেকে নিবার্য : যুধিষ্ঠির জানতেন জুয়াখেলা পাপ, একবার হেরেও তাঁর চৈতন্য হয়নি, দ্বিতীয় বার সে পাপে যোগ দিলেন শকুনির মতো দুরাত্মার আহ্বানে। তার পর পাঁচ ভাইয়ের স্ত্রীকে একা যুধিষ্ঠির পণ রাখেন কোন অধিকারে? বড় ভাই পিতার মতো মাননীয়, কিন্তু বড় ভাই যেখানে বাকি চার ভাইয়েরও স্ত্রীর স্বামী, সেখানে তাঁর অন্য এক দায়িত্ব; জ্যেষ্ঠাধিকারের একটা সীমা আপনিই সংকুচিত হয়, তাই সেখানে যুধিষ্ঠির অন্যায় করেছেন। দ্বিতীয়ত, দ্রৌপদীর লাঞ্ছনা ছিল প্রতিকার্য, এবং সেটা নিবারণ করার দায় ছিল স্বামী, শ্বশুর, ভাসুর, গুরু-আচার্যদের, সমগ্র ক্ষত্রিয় সমাজের এবং সমগ্র পুরুষ সমাজের। বিদুর, বিকর্ণ, আর ভীম ছাড়া ক্ষত্রিয়োচিত, পুরুষোচিত এবং মানবোচিত প্রতিক্রিয়া কারও কাছেই পাওয়া যায়নি। পাঠক এতে কী ভাবে সাড়া দেবেন? সাহিত্যের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা চিত্তবিনোদন, রামায়ণ তা স্পষ্টতই স্বীকার করেছে; এ কাব্যে মনোরঞ্জনের উপকরণ প্রচুর। কিন্তু যেহেতু মহাকাব্য একটা যুগের, একটা জাতির অভিজ্ঞতার স্বাক্ষর বহন করে, তাই তার মধ্যে মহত্ত্বের উপাদান সঞ্চার করে ধর্মসংকট। দশরথ, রাম, রাবণ, ভরত, মারীচ, বিভীষণ, লক্ষ্মণ ও সীতার জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এ সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু সমগ্র কাব্যের কলেবরের অনুপাতে তার পরিমাণ কম। তীব্রতাও স্বল্পস্থায়ী, তাই চিত্তবিনোদনই অনেক বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। মহাভারতে এই অনুপাত ঠিক বিপরীত; মনোরঞ্জনের তুলনায় আপাত বিভ্রান্তি ও সংকটই প্রাধান্য পেয়েছে।

এই ঘটনাটি মহাভারতকে দুটি স্পষ্ট ভাগে খণ্ডিত করে দেয়; এর আগে কৌরবরা বহু অন্যায় করেছে ঠিকই, কিন্তু পাণ্ডবরা কৌশলে সেগুলি থেকে মুক্ত হয়েছেন। ধৃতরাষ্ট্র ন্যায়নীতি সম্বন্ধে দোলাচলচিত্ত ছিলেন, কখনও গান্ধারী, বিদুর বা কৃষ্ণের কথায় আত্মগ্লানি বোধ করেছেন, কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই কর্ণ শকুনি দুর্যোধনের মতে সায় দিয়েছেন।[২] কিন্তু প্রকাশ্য রাজসভায় রাজনন্দিনী, রাজকুলবধূ, পুত্রবধূর এই নির্যাতন, দুঃশাসনের প্রকাশ্য অন্যায্য আচরণ, দুর্যোধনের অসহ্য অপমানকর কটূক্তি, কর্ণের নীচ, অশালীন ইঙ্গিত, এই সব জেনেশুনেও সিংহাসনে স্থির ভাবে বসে থাকা, ন্যায়নীতিবোধের সমস্ত প্রেরণা উপেক্ষা করা, এর দ্বারাই ধৃতরাষ্ট্র এবং কৌরবরা পরম পাপিষ্ঠ ও অত্যাচারী বলে চিহ্নিত হয়ে গেলেন। অত্যাচারিত পাণ্ডবরা যুধিষ্ঠিরের প্রথম অন্যায় (পাশা খেলায় রাজি হওয়া) সত্ত্বেও, ছলনার দ্বারা সর্বস্বান্ত হয়ে অসহায় ভাবে স্ত্রীর লাঞ্ছনা দেখতে বাধ্য হওয়ায়, এবং প্রতিজ্ঞা অনুসারে সুদীর্ঘকালের জন্য বনে যেতে বাধ্য হওয়ায় সাধারণ শ্রোতাপাঠকের সহানুভূতি উদ্রেক করে। একা ধৃতরাষ্ট্র নন, ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপ এঁরাও এই কলঙ্কে কলঙ্কিত হলেন। গান্ধারী, বিকর্ণ ও বিদুর বাদে কেউই মনুষ্যত্বের ন্যূনতম সাক্ষ্য রাখতে পারলেন না। অথচ ব্যাপারটা সত্যিই তো জটিল। যুধিষ্ঠির ধর্মপুত্র, তিনি জানতেন অক্ষক্রীড়া পাপ, তবু খেলেছেন। জানতেন, খেলায় তাঁর দক্ষতা নেই, জানতেন শকুনি শঠ ও চতুর প্রতিপক্ষ, কাজেই জয়ের সম্ভাবনা নেই, তবুও খেলেছেন। কাজেই এখানে শ্রোতা বা পাঠকের পক্ষে কৌরব-পাণ্ডব সম্বন্ধে পাপ-পুণ্য ভাল-মন্দ-ন্যায়-অন্যায় কোনও পক্ষ সুনিশ্চিত ভাবে স্থির করা যতটা কঠিন, কোনও পক্ষে রায় দেওয়াও সেই কারণে ততটাই কঠিন। ঘটনা এখানে জটিল, জটিলতর নৈতিক মূল্যবোধের আপাত-বিপর্যাস। জনসাধারণ চায় ভালমন্দ সাদা-কালোর মতো সহজে বিভাজ্য হোক, তা হলে শ্রোতা বা পাঠকের সাড়া দেওয়াতে কোনও সমস্যা থাকে না। যেখানে তেমনটি হয় না, সেখানে পাঠকের দ্বিধা ও অস্বাচ্ছন্দ্য তার প্রতিক্রিয়াকে সংশয়িত করে তোলে। এমন সাহিত্য আর যাই হোক, সাধারণ ভাবে জনপ্রিয় হয় না।

এ ছাড়াও মহাভারতে পদে পদে নৈতিক মূল্যবোধে নানা সংঘাত ও সংঘর্ষ চোখে পড়ে। দুর্যোধন যখন পুরোচনের সাহায্যে গূঢ় ভাবে জতুগৃহ নির্মাণ করে পাণ্ডবদের সেখানে বাস করতে পাঠালেন তখন বিদুর কৌশলে যুধিষ্ঠিরকে এ খবরটি পাঠান। যে রাত্রে তাঁরা পালাবেন সে রাত্রে কুন্তী এক নিষাদী ও তাঁর পাঁচটি পুত্রকে নিমন্ত্রণ করে সুখাদ্যে ও সুরায় মত্ত অবস্থায় নিদ্রিত রেখে অগ্নিসংযোগের পূর্বেই পাঁচ পাণ্ডব পুত্রসহ পূর্বনির্মিত ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ দিয়ে নিরাপদ জায়গায় পালিয়ে যান।[৩] মহাকাব্যের পক্ষে পাণ্ডবদের বেঁচে থাকা দরকার, কারণ তারা দুর্বৃত্ত ও পাপিষ্ঠ কৌরবদের ধ্বংস করবে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে। কিন্তু পাঠক কি কোনও মতে ভুলতে পারে কুন্তীর নিজের সন্তানদের বাঁচানোর এই অপকৌশলের ফলে নিরীহ ছ’টি নিষাদ প্রাণ দিতে বাধ্য হল?[৪] আবার দেখুন, সমাজে নিষাদের অবস্থিতি আর্যদের নিচে। কাজেই এখানে প্রাণের যে আপেক্ষিক মূল্যবোধ প্রতিফলিত একান্ত মানবিক নীতির নিরিখে তাকে মেনে নেওয়া কঠিন। নিষাদ নিচুস্তরের মানুষ, পাণ্ডবদের বাঁচাবার জন্যে ছলনার সাহায্যে যদি তাদের মরতে হয় তো ক্ষতি কী? ক্ষতি জাতিবর্ণবিভক্ত সমাজ হয়তো সহসা নির্ণয় করতে পারে না, কিন্তু অবচেতনের মনুষ্যত্ব নিশ্চয়ই বোঝে, সম্পূর্ণ নিরীহ মানুষ শুধু নিম্নবর্ণে জন্মানোর দাম দেবে উচ্চবর্গীয় মানুষকে প্রাণ দিয়ে বাঁচানোর জন্য- এটা ন্যায়নীতির সীমা লঙ্ঘন করে। আবারও দেখি, পরিস্থিতি এমন যে পাণ্ডবদের অগ্নিদাহে মৃত্যু থেকে বাঁচাতে গেলে এ ছাড়া পথও ছিল না। অথচ এ পথটি পঙ্কিল, অতএব নীতির দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য পথ নয়। সাধারণ পাঠক এখানে এই মুহূর্তে কী ভাবে সাড়া দেবে? মূল মহাকাব্যের তাৎপর্যের প্রতি দৃষ্টি রেখে বলতে বাধ্য হবে কুন্তীর কৌশলটির বিকল্প ছিল না, অথচ সাধারণ মানুষের বিবেকেও একটি কাঁটা ফুটে থাকে: কাজটা সত্যিই ঠিক হল কি? এই কাঁটা রামায়ণের তিনটি ব্যাপারে— বালী-বধ, সীতাপরিত্যাগ ও শম্বুকবধেও বড় করেই ফোটে, অন্তত ফোটা উচিত। কিন্তু রামায়ণ তিনটি ক্ষেত্রেই নানা বাগ্‌জাল বিস্তার করে তখনকার সামাজিক মূল্যবোধকে সমর্থন করেছে: ঊনমানব বালীর বধ রামচন্দ্রের নিজের স্বার্থসিদ্ধির (সীতা উদ্ধারের) জন্যে, পরপুরুষস্পর্শে দুষ্ট নারী স্বামীর পক্ষে ‘অভোগ্যা’ বলে সীতাপরিত্যাগ ও ব্রাহ্মণপুত্রের প্রাণদানের জন্যে চণ্ডাল শম্বুকের অনিবার্য প্রাণহরণ। এতে রামায়ণ সরল হয়েছে; কিন্তু মহাভারতে পদে পদে দ্বন্দ্ব; জটিল তার পথ।

***

১. সভাপর্ব; (৫৩:২৮-৩৩)

২. সভাপর্ব; (৬৮:১, ২)

৩. আদিপর্ব; (১৩৬:৭-১৩)

৪. আদিপর্ব; (১৩৭:৭-৯)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *