অন্তানন্তবাদ
৫৩। “ভিক্ষুগণ, কোনো কোনো শ্রমণ-ব্ৰাহ্মণ অন্তানন্তবাদী। তাঁহারা চারিটি কারণে লোক সান্ত-অনন্ত বলিয়া প্রচার করেন। তাঁহারা কী বিশেষাধিগমে, কী লক্ষ্য করিয়া অন্তানন্তবাদী চারি কারণে লোক সান্ত-অনন্ত বলিয়া প্ৰজ্ঞপ্তি করেন?”
৫৪। “ভিক্ষুগণ, ইহ লোকে কোনো শ্রমণ বা ব্ৰাহ্মণ প্রবলতম বীৰ্যে, একনিষ্ঠ সাধনায়, অপতন চেষ্টাশীলতায়, অপ্ৰমাদ পরায়ণতায় সম্যক সঙ্কল্পানুরূপ চিত্তসমাধি প্ৰাপ্ত হন, যেইরূপ সমাধিতে চিত্ত স্থিত হইলে লোক সান্ত পরিচ্ছিন্ন বলিয়া সংজ্ঞা লাভ করিয়া অবস্থান করেন।”
“ইহার ফলে তিনি এইরূপ বলেন, “এই লোক সান্ত পরিচ্ছিন্ন’। এইরূপ বলিবার হেতু? আমি প্রবলতম বীর্যে . . . চিত্তের তাদৃশ সমাধি লাভ করি, যেই সমাহিত চিত্তের বলে লোক সান্ত পরিচ্ছিনড়ব বলিয়া জ্ঞাত হইতে পারিয়াছি। ভিক্ষুগণ, ইহার প্রথম কারণ; যাহা অধিগত হইয়া যাহাকে লক্ষ্য করিয়া কোনো কোনো শ্রমণ-ব্ৰাহ্মণ অন্তানন্তবাদী এবং লোক সান্ত-অনন্ত বলিয়া প্রচার করেন।”(১-৯)
৫৫। “দ্বিতীয় শ্রেণীর ভদন্ত শ্রমণ-ব্ৰাহ্মণগণ কী বিশেষাধিগমে, কী লক্ষ্য করিয়া অন্তানন্তবাদ গ্রহণ করিয়া লোক অন্তানন্ত বলিয়া প্রচার করেন?”
“ভিক্ষুগণ, ইহ লোকে কোনো শ্রমণ বা ব্ৰাহ্মণ প্রবলতম বীৰ্যে, একনিষ্ঠ সাধনায়, অপতন চেষ্টশীলতায়, অপ্ৰমাদ পরায়ণতায়, সম্যক সঙ্কল্পানুযায়ী অপরিচ্ছিন্ন বলিয়া সংজ্ঞা লাভ ঘটে।”
“তদ্ধেতু তিনি এইরূপ বলেন, ‘এই লোক অনন্ত অসীম’। যে সকল শ্রমণ-ব্ৰাহ্মণ বলিয়াছেন, লোক সান্ত-পরিচ্ছিন্ন তাঁহাদের উক্তি মিথ্যা। এই লোক অনন্ত অসীম। তাহা কেন বলি? আমি প্রবলতম বীর্যে . . . তাদৃশ চিত্তসমাধি লাভ করি, যেই সমাহিত চিত্তের বলে, এই লোক অনন্ত অসীম বলিয়া জ্ঞাত হইয়া অবস্থান করিতেছি। এই বিশেষত্ব অধিগমহেতু আমি ইহা প্রত্যক্ষ ভাবে জানিতেছি যে এই লোক অনন্ত অসীম। ভিক্ষুগণ, ইহা দ্বিতীয় কারণ; যাহা অধিগত হইয়া যাহা লক্ষ্য করিয়া কোনো কোনো শ্রমণ-ব্ৰাহ্মণ অন্তানন্তবাদ গ্ৰহণ করিয়া লোক সান্ত-অনন্ত বলিয়া প্ৰজ্ঞপ্তি করেন।” (২-১০)
৫৬। “তৃতীয় শ্রেণীর ভদন্ত শ্রমণ-ব্ৰাহ্মণগণ কী বিশেষাধিগমে, কী সাধনায়, অপতন চেষ্টাশীলতায়, অপ্ৰমাদ পরায়ণতায়, সম্যক সঙ্কল্পানুরূপ চিত্তসমাধি লাভ করেন। যেইরূপ সমাধিতে চিত্ত স্থিত হইলে লোক উধ্বঅধঃ সান্ত চতুর্দিকে অনন্ত বলিয়া ধারণা (সংজ্ঞা) লাভ করেন। ইহার ফলে তিনি এইরূপ বলেন— “এই লোক সান্ত-অনন্ত দুই বটে। যে সকল শ্রমণব্ৰাহ্মণ বলেন যে—“লোক সান্ত পরিচ্ছিন্ন তাঁহাদের উক্তি মিথ্যা। আর যাহারা বলেন যে—‘লোক অনন্ত অপরিসীম’ তাহাদের মতবাদও মিথ্যা। বস্তুত লোক সান্তও বটে, অনন্তও বটে। কারণ আমি প্রবলতম বীৰ্যে, একনিষ্ঠ সাধনায় . . . যে চিত্তসমাধি লাভ করিয়াছি, তাহাতে দেখিতে পাইতেছি। উর্ধ্ব-অধঃ লোক সান্ত, সমন্তত অনন্ত। ভিক্ষুগণ, ইহা তৃতীয় কারণ; কোনো কোনো শ্রমণ-ব্রাহ্মণ যাহা অধিগত হইয়া যাহা লক্ষ্য করিয়া অন্তানন্তবাদ গ্ৰহণ করিয়া লোক অন্তানন্ত বলিয়া প্ৰজ্ঞপ্তি করেন।” (৩-১১)
৫৭। “চতুর্থ শ্রেণীর ভদন্ত শ্রমণ-ব্ৰাহ্মণগণ কী বিশেষাধিগমে, কী লক্ষ্য করিয়া অন্তানন্তবাদ গ্রহণ করিয়া লোক অন্তানন্ত বলিয়া প্রচার করেন?”
“ভিক্ষুগণ, ইহ লোকে এমনো কোনো শ্রমণ-ব্ৰাহ্মণ আছেন যিনি তর্ককারী মীমাংসাচারী। তিনি স্বীয় প্রতিভা বলে স্বয়ং তর্ক-বিতর্ক করিয়া এমন সিদ্ধান্তে উপস্থিত হন, এমন মীমাংসায় পৌছেন এবং বলেন, “এই লোক সান্তও নহে, অনন্তও নহে। যে সকল শ্রমণ-ব্ৰাহ্মণ বলেন যে, “লোক সান্ত পরিচ্ছিন্ন তাঁহাদের উক্তি মিথ্যা এবং যাহারা এইরূপ বলেন, “লোক অনন্ত অসীম’ তাঁহাদের উক্তিও মিথ্যা। আর যে সকল শ্রমণ-ব্ৰাহ্মণ লোক সান্ত এবং অনন্ত দুইই বলেন তাঁহাদেরও উক্তি মিথ্যা। এই লোক না। সান্ত, না অনন্ত। ভিক্ষুগণ, ইহা চতুর্থ কারণ; যাহা অধিগত হইয়া, যাহা লক্ষ্য করিয়া কোনো কোনো শ্রমণ-ব্রাহ্মণ অন্তানন্তবাদ গ্রহণ করিয়া লোক অন্তানন্ত বলিয়া প্রচার করেন।” (৪-১২)
“ভিক্ষুগণ, সেই অন্তানন্তবাদী শ্ৰামণ-ব্ৰহ্মণগণ এই কারণ চতুষ্টয়েই লোক অন্তানন্ত বলিয়া প্রচার করেন। শ্রমণ-ব্ৰাহ্মণদিগের মধ্যে যাহারা অন্তানন্তবাদী, লোক অন্তানন্ত বলিয়া প্রচার করেন তাহারা সকলেই এই কারণ চতুষ্টয়ে অথবা ইহাদের যে কোনটি দ্বারাই করিয়া থাকেন; ইহার বাহিরে অন্য কোনো কারণ নাই।”
৫৯। “ভিক্ষুগণ, তথাগত প্রকৃষ্টরূপে জানেন যে এই সমুদয় মিথ্যাদৃষ্টি, ইহা এইরূপে গৃহীত, এইরূপে স্পশীত, এইরূপ ইহার গতি এবং পারলৌকিক অবস্থা এইরূপ হইবে ইহাও তথ্যাগতের সুবিদিত। শুধু ইহাই জানেন এমন নহে, এতদুত্তরতর (শীল-সমাধি, সর্বজ্ঞতাজ্ঞান) ও প্রকৃষ্টরূপে তিনি জানেন, কিন্তু ঐ জ্ঞান তাঁহাকে স্ফীত করে না, উহা দ্বারা অস্পৃষ্ট হইয়া তিনি স্বীয় অন্তরে মুক্তি অনুভব করেন। ভিক্ষুগণ, তথাগত বেদনা সমুহের উদয়, অস্তগমন, আস্বাদ, আদীনব এবং নিঃসরণ যথাযথারূপে বিদিত হইয়া উহাদের প্রতি আসক্তিবর্জন করায় বিমুক্ত হইয়াছেন।”
৬০। “ভিক্ষুগণ, এই সকলই যেই গভীর দুর্দর্শ . . . পণ্ডিত বেদনীয় ধর্ম . . . এ সমুদয় দ্বারা প্রশংসা করিলে তথাগতের প্রকৃত প্রশংসা করা হইবে।”
Leave a Reply