আমি আমার বাড়িতে প্রত্যহ আসা-যাওয়ার পথে
একটি গাছকে দেখি। অসামান্য কিছুই নয়,
ফুলটুলও তেমন ফোটে না
তার ডালে। সবুজ পাতাগুলি
ঝলমলিয়ে ওঠে রোদে,
পান করে জ্যোৎস্নাধারা।
সবুজ পাতাগুলি কখনো হলদে হয়,
তারপর পাতা
ঝরতে থাকে,
ঝরতে থাকে,
ঝরতে থাকে
গাছটিকে উলঙ্গ ক’রে।
আমি তার ছায়ায় দাঁড়িয়ে আমার মধ্যবয়সের
ক্লান্তি মুছে ফেলতে যাই না,
ওকে দেখি দূর থেকে, বাড়ি ফেরার পথে,
বাড়ি থেকে বেরুবার সময়। কখনো কখনো শুনি
কী একটা পাখি
ডাকতে থাকে,
ডাকতে থাকে
ডাকতে থাকে
গাছটিকে সঙ্গীতময় ক’রে।
একদিনের কথা,
কোত্থেকে এক ছন্নছাড়া উদ্ভ্রান্ত ফকির সেই
গাছতলায় আস্তানা গাড়লো
কদিনের জন্যে, তারপর বলা-কওয়া নেই
হঠাৎ নিরুদ্দেশ। মাঝে-মধ্যে
পাড়ার দু-একজন মাস্তান সময়ের তোয়াক্কা না করে আড্ডা দেয় সেখানে,
ওদের মধ্যে কেউ গাঁজেল, কেউ তাড়ি টানে,
কেউ নারীর আঁচল,
কেউবা পাকিয়েছে হাত
ছোরা খেলায়।
ছাপোষা মানুষ আমি, বেসরকারি
স্কুলের শিক্ষকের অক্ষম সন্তান। ইদানীং
বয়সের ভারে ভয়ানক নুয়ে পড়েছেন আমার পিতা,
অবসর তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছে, জীবনের
হাতে মার খেতে খেতে তিনি ভীষণ অবনত।
যখন তিনি জায়নামাজ বিছিয়ে
নামাজ পড়েন, তখন তাঁকে শাদাসিধে
আলমগীরের মতো মনে হয় আমার নিজস্ব
স্বপ্নের খোয়ারিতে।
আমি এখনো মাথা নত করিনি।
যা আমার শিক্ষক জনক আমাকে শেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন
সেই উজ্জ্বল সবকটি আমি
শিখে নিয়েছি
শান-বাঁধানো পথের ধারের
সেই গাছ থেকে,
শিখে নিয়েছি তুমুল ঝড়-বাদলেও
কী করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
পূর্ববর্তী:
« সকলেই গ্যাছে
« সকলেই গ্যাছে
পরবর্তী:
হাতেম তাই কিংবা শের আফগান »
হাতেম তাই কিংবা শের আফগান »
Leave a Reply