• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

পরানসখা বন্ধু হে আমার

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » স্মৃতিচারণ » পরানসখা বন্ধু হে আমার

১৪ জানুয়ারি বাংলা ভাষার একজন প্রধান নাট্যকার সেলিম আল দীন মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন তাঁরই সহকর্মী, বন্ধু কবি মোহাম্মদ রফিক।

সেলিম বারডেমের হিমঘরে ঘুমিয়ে। ও কি সত্যিই ঘুমিয়ে, ওর পক্ষে কি ঘুমিয়ে থাকা সম্ভব। হয়তো মিটি মিটি হাসছে এবং দেখছে, ওকে নিয়ে লিখতে বসেছি আমি। না, নিশ্চয় মৃত্যু হয়নি সেলিমের।

এমনকি সেলিম নিয়ে ্নৃতিচারণাও করা যায় না। শুধু কারও ্নৃতিতে পর্যবসিত হওয়ার জন্য জ্ন হয়নি সেলিমের। সর্বক্ষণ সৃষ্টিতে-ভালোবাসায় এতই জীবন্ত ছিল সে। ক্রোধে বা বৈরাগ্যে সর্বপ্রকার বন্ধন ও জটাজল ছিঁড়েখুঁড়ে উ্নুক্ত জীবনযাপনে বেরিয়ে পড়াই ছিল তার চরিত্র। এই তো গত বুধবার সন্ধ্যায় কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে বসেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক প্রান্তিকে। হঠাৎ মনে হলো, পেছনে সেলিম দাঁড়িয়ে। পেছনে ফিরে দেখি, দুজন ছাত্রীর মাঝখানে সেলিম। চা পান করছে তারা। এতই উজ্জ্বল ছিল তার উপস্থিতি, কী বাস্তবে, কী শিল্পে! উপেক্ষা করার বা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো পথই খোলা রাখেনি, এমনই জমাটবাঁধা তার কাজ ও সাধনার ভুবন। সেই সন্ধ্যায় অবশ্য কথা হয়নি আমাদের। টেলিফোনে কথা হয়েছিল গত মাসের ১০ কি ১১ তারিখে। সে জানাল, ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাবে। তার শ্যালিকার মেয়ে ভীষণ অসুস্থ। দীর্ঘদিন ধরে ভুগছে মেয়েটি। মেয়েটির কষ্ট আর সহ্য করতে পারছে না, সে এবার পালিয়ে বাঁচতে চায়। সেলিমের আবেগ, বেদনা ও উৎকণ্ঠার কাছে বারবার হার মানছিলাম আমি। হয়তো তাই খেইও হারিয়ে ফেলছিলাম কথায় কথায়। এখন ভাবছি, এভাবেই কি পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল সেলিম। পালিয়ে কি আদৌ বাঁচা যায়, সর্বোপরি একটি প্রশ্ন তো থেকেই যায়, সৃষ্টির বিষমযজ্ঞে কে বা পালায় কার কাছ থেকে।

মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতার পরপর আমরা দুজনেই যোগ দিই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেলিম অবশ্য যোগ দেয় কয়েক মাস পরে। আমি তত দিনে কিছুটা পুরোনো হয়ে গেছি। হুমায়ুন আজাদও ছিলেন আমাদের সহকর্মী। আমাদের বসার ঘর ছিল পাশাপাশি, সেকালের কলাভবনের দোতলায়। সেলিম তখন বাংলা বিভাগের তরুণতম প্রভাষক। তারুণ্যের উদ্দীপনা ও উৎসাহ কখনোই সেলিমকে ছেড়ে যায়নি, তবে তখন তার জৌলুশই ছিল আলাদা। সেলিম শুরু থেকেই ক্যাম্পাসনিবাসী। আমি ক্যাম্পাসে আস্তানা গাড়ি চার-পাঁচ বছর বাদে। তত দিনে হুমায়ুন পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে এবং সেখান থেকে ফিরে আর থিতু হয়ে বসেননি সেদিনের আধামফস্বলি পরিবেশবেষ্টিত বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমিও তখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডে তেমন একটা আগ্রহ বোধ করতে শুরু করিনি। সেলিম কিন্তু বুক দিয়ে নেমে পড়েছিল ক্যাম্পাসে পা রেখেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নাট্যোৎসব আয়োজনে এবং পরিকল্পনায় তার ছিল মূল ভূমিকা। এসব খবরাখবর আমি দূর থেকে শুনতাম এবং ওর গলদঘর্ম অবস্থা উদাসীন সহমর্মিতায় উপভোগও হয়তো করেছি। অথচ সেই উৎসব থেকেই বেরিয়ে এসেছে দেশে দু-চারজন প্রখ্যাত নাট্যজন। তার মধ্যে হুমায়ুন ফরীদির নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

আমি ক্যাম্পাসে বসবাস শুরু করি ১৯৭৮-৭৯ থেকে। আমার ঘরের পেছন দিকের জানালা খুললেই দেখা যেত সেলিমের বাসা। খোঁজ পাওয়া যেত, ও কী করছে? মধ্যরাতে দুই-দশটা খেঁকশিয়াল আমাদের ব্যালকনির নিচে ঘুরে বেড়াত খাবারের খোঁজে। প্রতি রাতেই ঘটত এমন ঘটনা। শেয়ালের চেঁচামেচিতে উঠে পড়তে হতো টেবিল ছেড়ে। জানালা খুলতেই টের পেয়ে যেতাম যে সেলিমও ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ওদের কর্মচাঞ্চল্য একাগ্র মনে অবলোকন করছে। তা হলে, সেলিম এতক্ষণ জেগেছিল! কী করছিল সে! নিশ্চয়ই লিখছিল বা পড়ছিল। আমিও ফিরে আসতাম টেবিলে। তবে কি, এভাবেই শুরু হয়েছিল এই প্রায় ৩০-৪০ বছরের সম্পর্ক, দেওয়া-নেওয়া! প্রতিটি সম্পর্কের ঔরসেই জ্ন নেয় সম্পর্কের টানাপোড়েন। না, সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ সেই ষাটের সূর্যাস্তের কাল থেকেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের বিভাগসমূহ উঠে এসেছে নতুন ভবনে। মধুর ক্যান্টিনও একই পথে সরগরম হয়ে উঠেছে বর্তমানের আস্তানায়। ওখানেই কণ্ঠস্বর-এর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ নিয়মিত প্রতি সপ্তাহে এক দিন সন্ধ্যাবেলা সাহিত্যের আসর বসাতেন। তরুণ, উজ্জ্বল, উচ্ছল সেলিম ফেনীর সেনেরখিল গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সৃষ্টিযজ্ঞে নিজকে উৎসর্গিত করতে বদ্ধপরিকর সেলিম, সে আসরের আহ্বানে তো সাড়া দেবেই। সেটাই স্বাভাবিক এবং অবধারিত। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এলে আমিও দু-একবার উপস্থিত হয়েছি সে আসরে। সেই শুরু সেলিমের সঙ্গে আলাপ-পরিচয়ের। সেই নাড়ির বন্ধন, আজ ৪০ বছর পর, কেটে ফেলা কী দুরূহ, আমি টের পাচ্ছি লেখাটি নিয়ে বসার পর। প্রকৃতপক্ষে যা কাটার নয়, তা কাটেও না। এই নির্মম কিন্তু উজ্জীবক বোধকে ধারণ করেই কাগজ-কলম সামনে নিয়ে বসে হাত ও কলমকে বলছি, তুমি নিজের তালে চলো। এ লেখাটি তো প্রস্তুত করার কথা ছিল সেলিমের। সে ছিল তার দায়। আমি হয়তো অন্য পার থেকে মিটিমিটি হাসতামও।

তখন সেলিমের সহযাত্রী বা সহমর্মী ছিল ষাটের তরুণতর লেখক-কবিরা। নির্মলেন্দু গুণ-আবুল হাসান-সাযযাদ কাদিরদের ভিড়েই ওকে দেখতাম প্রায়ই ঘুরেফিরে। ফরহাদ মজহার বা হুমায়ুন কবিরও ছিল সেলিমের নিকটজন। এমন কথা, পরবর্তীকালে, ওর মুখ থেকেই শুনেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেলিম ঝুঁকে পড়ল নাটকের দিকে। এর আগে সেলিম কবিতাই লিখত। সেলিম নিজকে সারা জীবন কবিই ভেবেছে। এবং কবির অধ্যবসায় ও সহৃদয়তা নিয়ে আত্মনিয়োগ করেছে নাট্যচর্চায়। মূলত সে কারণেই তার হাতে বাংলা নাটক লাভ করেছে সীমাহীন সমৃদ্ধি।

সেলিমের এক নিকট-পরিজন মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী ভর্তি হয় ইংরেজি বিভাগে। অসাধারণ সুপুরুষ এবং উজ্জ্বল তরুণ আরসালান রব্বানী নামে শুরু করে কবিতাচর্চা। তার রচনা সে সময়ে আমাকে দারুণ আকৃষ্ট করেছিল। কিন্তু এই অমিত সম্ভাবনাময় যুবক হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। মানসিক রোগাক্রান্ত এই কবির দেখভালের দায়িত্ব বর্তায় আমারই স্কন্ধে। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, তার ঘর-বিছানা পরিষ্কার রাখা, তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া ইত্যাদি নানা প্রক্রিয়ায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে সেলিম। রব্বানীকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার সুবাদে সেই আমার সেলিমের গ্রামের বাড়িতে যাওয়া। ছেলেটি আর সুস্থ হয়ে ওঠেনি। সেও মারা গেছে কয়েক সাল আগে। কিন্তু দুঃখজনক এবং বেদনাদায়ক ্নৃতি রেহাই দেয়নি আমাদের দুজনের কাউকেই। সেলিমের সঙ্গে দেখা হলেই রব্বানী প্রসঙ্গ বারবার উঠে আসত আলাপচারিতার সূত্র ধরে।

ফজল মাহমুদ, সুনীল সাইফুল্লাহ ও মেহেদী মঞ্জু একে একে ছেড়ে চলে গেছে আমাদের। কেউ কেউ ইহধাম পরিত্যাগ করেছে স্বইচ্ছায়, কাউকে তুলে নিয়েছে কালের নিয়তচক্র। কিন্তু আমাদের দুজনের বুকে বেদনা তো জমেছে সমপরিমাণে। এক অব্যক্ত বেদনা শরণ মেগেছে অন্য আরেক বুকে বেজে চলা মুহুমুêহু বেদনার কাছে। একমাত্র তখনই সমব্যথী খোঁজ নেয় সমব্যথীর এক অকাল কালসমুদ্রের তটছুঁয়ে। প্রায় সেই কালে ক্যাম্পাসে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই আসা-যাওয়া শুরু করে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। তার প্রেম, তার উ্নাদনা, তার কাব্যিক অভীপ্সা ও ব্যক্তিক টানাপোড়েন অগ্নিতে, ভ্নে মাখামাখি করে নিয়েছিল আমাদের। মোহময় রাতের পর রাত কেটেছে সুনসান রাস্তায়। ভোর আমাদের আবিষ্কার করত পুকুর ধারের কালভার্টে বা শালগাছের গোড়ায়। সেলিম শোনাত তার রাত জেগে লেখালেখির কাহিনী। জানেন, গতকাল কেরামতমঙ্গল শেষ করেছি। সর্বমোট দাঁড়িয়েছে হাতেলেখা নয় শ পৃষ্ঠা। এখন কমাতে হবে। বাদ দিতে হবে নয় ভাগের আট ভাগ।

অবাক হয়ে ভাবতাম, এই কাজ ও করে কী করে! আমি তো একটি কবিতা লিখে ওঠার পর এক লাইনও পাল্টাতে পারি না। বড় জোর হয়তো দু-চারটে শব্দ এদিক-ওদিক করা যেতে পারে। এস এম সুলতান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-এঁদেরকে ঘিরেই আবর্তিত হতো আমাদের দিন-রাত। সিকদার আমিনুল হক, আবু কায়সার, হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ুন কবির, শশাঙ্ক পাল, আবুল হাসান কত নাম লিখে যাব একের পর এক। আমি যে আর বইতে পারি না সেলিম। সইতেও যে পারি না মৃত্যুর এই দায়ভার। তুই কি এখন পারছিস। রাইনার মারিয়া রিলকের এমন একটি পঙ্‌ক্তি আছে, যেখানে তিনি বলছেন, কখনো-কখনো মৃতেরাও জীবিতকে সাহায্য করে। জানি, তুই সর্বক্ষণ হাত বাড়িয়েই আছিস, অন্ততপক্ষে তোর রচনাশৈলীতে।

প্রথম যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা ছিল ছয়-সাত শ। এখনকার ট্রান্সপোর্ট অফিস ছাড়িয়ে এম এইচ হল পর্যন্ত ছিল ধু ধু বিরান প্রান্তর। ডান দিকের দুটি পুকুরের মাঝামাঝি জায়গায় ছিল বেশ কিছু সুপারিগাছের ঝাড়। ধুলোমাটির আস্তরণ তৃণের মোজাইকে ঢাকা। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে বা ক্লাসের পর দুপুরে বা বিকেলে আমাদের আড্ডা বসত সুপারিতলায়। সেলিমও যোগ দিত প্রায়শ।

একদিন কথা হচ্ছিল সংগীত নিয়ে। ভারতীয় মার্গ সংগীতের কথা উঠতেই সেলিম কী যেন বলে উঠল আগ বাড়িয়ে। পাল্টা বক্তব্য ছুড়ে দিলাম আমি। আমার মন্তব্যের গভীরে হয়তো বিরক্তি বোধ ছিল যা অপ্রচ্ছন্ন থাকেনি। দেখি ওর মুখ-চোখ থমথম করছে। ও ঠিকই মুহূর্তে আঁচ করতে পেরেছে বিষয়টি। কিন্তু ততক্ষণে আমার উক্তিটিও ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো উপায় নেই। এরপর দেখা হলেই ও বলত, আমি হারমোনিয়াম কিনেছি। সপ্তাহ বাদে হয়তো তবলা কেনার প্রসঙ্গও তুলেছিল সে। কিন্তু আমি তেমন একটা পাত্তা দিইনি। একদিন জোর দিয়ে বলল, আমি গান শিখছি। দু-একজন গানের লোকের সমভিব্যাহারে চলতে-ফিরতেও দেখেছি তাকে।

আশির দশকের শুরুতে স্বৈরাচারের আমলে আমার একটি দীর্ঘ কবিতা প্রকাশিত হয়। প্রকাশকও আমি। আয়োজন চলছিল কবিতাটি নিয়ে একটি অনুষ্ঠান নির্মাণের। একদিন রিহার্সেলে এসে উপস্থিত সেলিম। নিজের থেকেই দুটি অংশে সুরারোপ করার প্রস্তাব উপস্থাপন করল সে। আমি তো অবাক। রাজিও হলাম। শেষের অংশটিকে কীর্তনের সুরে ও ঢংয়ে ঢেলে সাজাল সেলিম। ভাবলাম, তবে কি মৃদু প্রতিশোধ নিচ্ছে সে। হয়তো নিয়েছিলও, কিন্তু কী বা এসে-যায়, এমন মধুর প্রতিশোধের চমৎকারিত্বে বাঁধা পড়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না তখন। এভাবে, ঋণে ও দেনায় শোধবোধে গড়ে উঠেছে আমাদের দুটি ভুবন, একই ভুবনের অন্তরালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আপাত বিরান-বিমুখ প্রান্তরে বসবাস করেই সেলিম লিখে গেছে অনন্যসাধারণ সব নাটক, একের পর এক। এরপর থেকে বাংলা নাটক নিশ্চয় অন্যভাবে ধরা দেবে পাঠক, লেখক ও দর্শক সমীপে।

বয়স ৫৮/৫৯ অত্যন্ত মারাত্মক সময়। রক্তের সোঁতা মরে আসার প্রাক্কালে একবার ফের আদিতম বান ডাকে মরা কোটালের উ[&ৗ৬৫৫৩৩;][&ৗ৬৫৫৩৩;]ান্ত জোয়ারে। তাকে সামলে রাখা দায়। জ্যা থেকে একবার মুক্ত হলে তীর, তাকে ফিরিয়ে আনবে কে। এমন সাধ্য কার?

বহু বেদনায়, প্রাণপণে চাই, বঞ্চিত করে বাঁচালে মোরে। আবেগকে, অভিমানকে, ক্ষোভ-রাগ-দ্বেষকে বশ মানাতে জানত সেলিম। সাপুড়ের থেকেও অধিক দক্ষতায় দংশনের বিষ আত্মস্থ করতে শিখেছে সেলিম, শিখিয়েছে অন্যকে। হয়তো, কোথাও কোনো অপরূপ মোহময় যন্ত্রণার কাছে অবশেষে ধরা দিতে হয়েছে অসাধারণ শিল্পী সেলিমকেও। কে জানে! হয়তো সেই চরম বি্নয়েরই অপর নাম জীবন।

স্বীয় কর্মকে ভালোবাসা ভালো। স্বীয় সৃষ্টিতে বিশ্বাস করা, আরও উত্তম। তাই হয়তো, কোনো কোনো স্রষ্টা বুঝে নিতে চান সৃষ্টি তত্ত্বকেও। বিশ্বসৃষ্টির আধারে সংস্থাপন করে দেখে নিতে চান নিজস্ব সৃষ্টিকে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয় অন্যত্র। সৃষ্টি তো ধাবমান জল, বিলীয়মান স্রোত। তত্ত্বের বালুময়তটে আটকা পড়ে তার উঠতে পারে নাভিশ্বাস। একমাত্র একজন মেধাবী দক্ষ শিল্পী বা স্রষ্টা চেনেন এই সমস্যা সমাধানের সঠিক নিদান ও দাওয়াই। সে ক্ষেত্রে জগৎবিশ্বের অনুকরণে তত্ত্ববিশ্বও রূপান্তরিত হয় প্রণোদনার ও উত্তরণের মূলমন্ত্রে। সেলিমের সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রেও ঘটেছে এমনটাই। প্রশ্ন উঠতে পারে, সেলিম কি নাট্যকার, সেলিম কি কবি, সেলিম কি ঔপন্যাসিক এবং সেলিম কি শুধুই একজন আখ্যান রচয়িতা? আমি বলব, সেলিম নয় শুধু নাট্যকার, বা কবি, বা ঔপন্যাসিক, বা আখ্যান রচয়িতা। সে নাট্যকার, সে কবি, সে ঔপন্যাসিক, সে আখ্যান রচয়িতা। সব প্রচলিত ব্যাকরণকে একসঙ্গে মেলানোর প্রয়াস নিয়েছে তার সে একেকটি রচনায়। হয়তো সেগুলো মঞ্চস্থ হতে পারে নাটকের প্রচলিত আয়োজনের ভেতর দিয়ে, আবার সেগুলোকে পড়া যেতে পারে সমৃদ্ধ উপন্যাস হিসেবে। ভেতর থেকে ঝলক দিয়ে যায় কবিতার ভাস্বর চিত্রকল্পের ওপরে চিত্রকল্প, আখ্যানের চিত্র-বিচিত্র বর্ণনাভঙ্গি, রূপময়তা। একজন স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির গৌরবে ফেটে পড়তে পারেন আনন্দে, উল্লাসে। কেউবা হয়ে পড়েন বিমর্ষ, ব্যথিত, বেদনাবিধুর। অন্যকে স্পর্শও করতে পারে শিল্পীর আত্মতৃপ্তির বা অতৃপ্তির বোধ। তাতে করে কী এসে যায় একজন স্রষ্টার?

তার বি্নয়, বিমুগ্ধতা তাকে ডোবায়, ভাসায়, পোড়ায় আগুনে, ঢেউয়ে। সেই নাড়িছেঁড়া গৃহহারা কল্পনার হাত থেকে তোর মুক্তি মিলল না, সেলিম! কারও কি মেলে! তোর অতিপ্রিয় গানের একটি পঙ্‌ক্তি চুরি করে নাম দিলাম লেখাটির। ক্ষমা করিস।

সূত্রঃ প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৮, ২০০৮।

Category: স্মৃতিচারণTag: মোহাম্মদ রফিক, সেলিম আল দীন
Previous Post:আচার সংরক্ষণ
Next Post:গৌড়জন অভ্যাগতেষু – সেলিম আল দীন

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑