৪৯. শ্রীরামের নিকট মহামুনি ভার্গবের আগমন এবং লবণাসুর বধের নিমিত্ত কথন

শ্রীরামের নিকট মহামুনি ভার্গবের আগমন এবং লবণাসুর বধের নিমিত্ত কথন

সভাসনে রঘুনাথ বসিয়া দেওয়ানে।
পাত্র মিত্র সভাজন আছে বিদ্যমানে।।
উপনীত লক্ষ্মণ রামের বিদ্যমান।
প্রণিপাত করি কহে শ্রীরামের স্থান।।
মহামুনি ভার্গব বৈসেন গঙ্গাতীরে।
তোমা দরশনে মুনি আইলেন দ্বারে।।
রাম কহে ঝাট আন দ্বারে কি কারণে।
বড় ভাগ্য আজি মোর মুনি দরশনে।।
শ্রীরামের আজ্ঞা পেয়ে লক্ষ্মণ সত্বরে।
শিষ্য সহ মুনি আনে শ্রীরাম গোচরে।।
নমস্কার করি রাম বন্দিলা চরণ।
পাদ্য অর্ঘ্য দিলা রাম বসিতে আসন।।
ভার্গব বলেন রাম কর অবধান।
মহোদুঃখ নিবেদিতে আসি তব স্থান।।
পূর্ব্বে রাজগণে দিলাম যত যত ভার।
রাজগণ পালিল আমার অঙ্গীকার।।
ত্রিভুবন রাখিলে হে মারিয়া রাবণ।
রাবণ হইতে এক আছে ত দুর্জ্জন।।
সত্যযুগে ছিল মধু দৈত্যের প্রধান।
হিরণ্যকশিপু পুত্র বড় বলবান।।
সদাশিবের প্রিয় ভক্ত দৈত্য মহাবল।
শিবের বরেতে জিনিয়াছে ভূমণ্ডল।।
জাঠা এক শিব তারে দিয়াছেন দান।
জাঠার তেজের কথা কি কব বাখান।।
মন্ত্র পড়ি মধুদৈত্য জাঠা যদি এড়ে।
জাঠামুখে ত্রিভুবন ভস্ম হয়ে উড়ে।।
হইল মধুর পুত্র লবণ মহাবল।
জিনিল জাঠার তেজে পৃথিবী-মণ্ডল।।
কুম্ভনশী-গর্ভে জন্ম রাবণ-ভাগিনে।
তাহার সমান বীর নাহি ত্রিভুবনে।।
মহাদুষ্ট লবণ সে মথুরাতে ঘর।
জন্মাবধি মহাপাপ করে নিরন্তর।।
মধুদৈত্য মহাবীর হইল পতন।
তাহার সে জাঠাগাছ পাইল লবণ।।
জাঠার তেজে লবণ জিনে ত্রিভুবন।
লবণ মারিতে যুক্তি করহ এখন।।
জাঠাগাছ লয় লবণ যদি আসে রণে।
তাহারে রণেতে জিনি নাহি ত্রিভুবনে।।
লবণের সঙ্গে হবে দুর্জ্জয় সংগ্রাম।
তার কথা কহি কিছু শুনহ শ্রীরাম।।
মান্ধাতা নামেতে রাজা জন্ম সূর্য্যবংশে।
অযোধ্যাতে রাজ্য করে ত্রিভুবন শাসে।।
ইন্দ্রে জিনিবারে গেল অমর-ভুবন।
ভয়ে ইন্দ্র পলাইয়া হইল অদর্শন।।
মান্ধাতার প্রতি তবে কহে দেবগণে।
অর্দ্ধ রাজ্য ভোগ কর পুরন্দর সনে।।
ধনেতে অর্দ্ধেক লহ এ অমরাবতী।
ইন্দ্রের সহিত যাহ করিয়া পিরীতি।।
মান্ধাতা বলেন, চাহি করিবারে রণ।
ইন্দ্রে জিনি স্বর্গ লব শুন দেবগণ।।
পুরন্দরে জিনি আমি রাখিব পৌরুষ।
ত্রিভুবনে লোক যেন ঘোষে এই যশ।।
দেবগণে লয়ে ইন্দ্ররাজা যুক্তি করে।
বিনাযুদ্ধে পাঠাইব যমের দুয়ারে।।
ইন্দ্র বলে শুনহ মান্ধাতা মহারাজ।
পৃথিবী জিনিতে নার বীরের সমাজ।।
পৃথিবী জিনিতে যেই রাজা নাহি পারে।
লজ্জা নাই আসিয়াছে স্বর্গ জিনিবারে।।
আছয়ে লবণ-দৈত্য বড়ই কর্কশ।
রাক্ষসী-গর্ভেতে জন্ম জাতিতে রাক্ষস।।
নিষ্কণ্টকে রাজ্য করে মথুরার দেশে।
তারে জিনি তবে স্বর্গ জিন আসি শেষে।।
ইন্দ্রের বচনে লাজ পাইয়া মান্ধাতা।
মনোদুঃখে মান্ধাতা করিল হেঁট মাথা।।
স্বর্গ ছাড়ি আইল লবণে জিনিবারে।
দূত পাঠাইল সে লবণে জানাবারে।।
ত্বরা করি গেল দূত লবণ গোচরে।
মান্ধাতা রাজন আসে তোমা জিনিবারে।।
লবণ শুনিয়া এত ক্রোধেতে কহিল।
লবণের ক্রোধ দেখি দূত চলি গেল।।
দূতের অপেক্ষা দেখি মান্ধাতা ভূপতি।
যুঝিবারে গেল বীর কটক সংহতি।।
মান্ধাতার তেজ যেন সূর্য্যের কিরণ।
মান্ধাতার তেজ দেখি রুষিল লবণ।।
মান্ধাতার সেনাপতি যতেক যুঝার।
লবণ উপরে করে বাণ-অবতার।।
জাঠা হাতে করিয়া লবণ বীর রোষে।
এড়িলেন জাঠাগাছ মান্ধাতা উদ্দেশে।।
রথ অশ্ব কটক জাঠার তেজে পুড়ে।
মান্ধাতা জাঠার তেজে ভস্ম হয় উড়ে।।
পুনর্ব্বার জাঠা গেল লবণের হাতে।
পড়িল মান্ধাতা যত রাজা ভয়ে চিন্তে।।
পূর্ব্বপুরুষ তোমার সে মান্ধাতা ভূপতি।
মান্ধাতা মারিয়া লবণ রাখিল খেয়াতি।।
কত শত রাজগণে করিল সংহার।
লবণে মারিয়া তুমি কর প্রতিকার।।