৩১. রাবণ কর্ত্তৃক বরুণপুরী বিজয়

রাবণ কর্ত্তৃক বরুণপুরী বিজয়

লঙ্কার অধিক ভোগ ভুঞ্জি তার ঘর।
বরুণেরে জিনিতে চলিল লঙ্কেশ্বর।।
রত্নেতে নির্ম্মিত পুরী দিক্ আলো করে।
সুরভী আছেন সেই বরুণ-নগরে।।
রাবণ করিল সুরভীরে দরশন।
ক্ষীরধারা বহিতেছে তাঁর অনুক্ষণ।।
যাঁর ক্ষীরে ভরিয়াছে ক্ষীরোদ-সাগর।
হেন ধেনু প্রদক্ষিণ করে লঙ্কেশ্বর।।
সুরভীকে দেখিয়া রাবণ মনে ভাবে।
যে যা চায় তাই পায় আমি চাই তবে।।
বরুণে জিনিয়া যেন আসি শীঘ্রগতি।
গমন সময়ে তোমা লইব সংহতি।।
বরুণে জিনিতে করে রাবণ পয়ান।
হেনকালে সুরভী হইল অর্ন্তদ্ধান।।
বরুণের দ্বারে গিয়া ডাকিল রাবণ।
কোথা গেলে বরুণ আসিয়া দেহ রণ।।
বরুণের পাত্র বলে তিনি নাহি ঘরে।
কার ঠাঁই যুদ্ধ চাহ এ শূণ্য নগরে।।
রাবণ বলিছে কোথা গিয়াছে বরুণ।
তথা গিয়া আজি আমি করি মহারণ।।
বরুণের পুত্রগণ সবে মহাবীর।
লইয়া সামন্ত সৈন্য হইল বাহির।।
তা সবারে রাবণ যে আকাশে নিরখে।
রাবণ চড়িয়া রথে যায় অন্তরীক্ষে।।
বরুনের পুত্র করে বাণ বরিষণ।
বাণে বিদ্ধ রাবণ হইল অচেতন।।
বাণেতে হইয়া বিদ্ধ হলেন কাতর।
তাহা দেখি রুষিল রাক্ষস মহোদর।।
মহোদরের বাণ যেন মদমত্ত হাতী।
বাণেতে বিন্ধিয়া পাড়ে রথের সারথি।।
পড়িল সারথি তার বাণ বিন্ধে বুকে।
তিন ভাই পলাইয়া যায় অন্তরীক্ষে।।
অন্তরীক্ষে থাকি করে বাণ বরিষণ।
বাণে বিদ্ধ মহোদর হল অচেতন।।
অচেতন মহোদরে দেখি লঙ্কেশ্বর।
সন্ধান পূরিয়া বাণ এড়িছে বিস্তর।।
আকাশে রহিতে নারে তিন সহোদর।
ভূমিতে পড়িয়া তিতে ধূলায় ধূসর।।
তিন ভায়ে ধরিল অনেক অনুচর।
ধরিয়া আনিল তারে পুরীর ভিতর।।
রণ জিনি রাবণের হরিষ অন্তর।
বরুণেরে অন্বেষণ করে লঙ্কেশ্বর।।
বরুণের পুত্রে জিনি বরুণেরে চাহে।
প্রভাস নামেতে পাত্র রাবণেরে কহে।।
ব্রহ্মলোকে গীত গায় শুনিতে সুন্দর।
গিয়াছেন সেখানে বরুণ জলেশ্বর।।
এত শুনি গেল রাজা ভিতর আবাস।
পালঙ্কে পাইল বরুণের নাগপাশ।।
নাগপাশ পাইয়া সে সিংহনাদ ছাড়ে।
বিদায় হইয়া রাবণ তথা হতে নড়ে।।