২৬. পুলস্ত্য কর্ত্তৃক কার্ত্তবীর্য্যার্জ্জুনের কারাগার হইতে রাবণের মুক্তিলাভ

পুলস্ত্য কর্ত্তৃক কার্ত্তবীর্য্যার্জ্জুনের কারাগার হইতে রাবণের মুক্তিলাভ

দশাস্যকে বন্দী করি থুইল অর্জ্জুন।
ঘরে ঘরে বার্ত্তা কহে যত দেবগণ।।
পুলস্ত্য যে মহামুনি স্বর্গলোকে বৈসে।
শুনিয়া নাতির বার্ত্তা মর্ত্ত্যলোকে আসে।।
দশদিক আলো করে মুনির কিরণ।
অর্জ্জুনের ঘরে আসি দিল দরশন।।
পাত্র মিত্র সহ রাজা আইল সত্বরে।
পাদ্য অর্ঘ্য দিয়া সে মুনির পূজা করে।।
সহস্র হস্তেতে পঞ্চশত পুটাঞ্জলি।
ভূমিতে পড়িয়া রাজা করে কুতূহলী।।
ছাড়িয়া অমরাবতী কেন আগমন।
কি আছে আমার কাছে প্রভু প্রয়োজন।।
আজি হৈতে বংশ মোর হইল নির্ম্মল।
আজি হৈতে রাজ্য মোর হইল উজ্জ্বল।।
দেবগণ বন্দে গিয়া যাঁহার চরণ।
আমার আলয়ে আজি তাঁর আগমন।।
পুত্র পৌত্র আছে প্রভু, তোমা বিদ্যমান।
কি কার্য্য করিব মুনি কহ সম্বিধান।।
মুনি বলে, রাজা তব সফল জীবন।
তোমার সদৃশ প্রিয় আছে কোন্ জন।।
ঘুষিবে তোমার যশ এ তিন ভুবনে।
আমার গৌরব রাখ ছাড়িয়া রাবণে।।
রাবণ আমার হয় সম্বন্ধেতে নাতি।
নাতিদান দিলে তবে পাই অব্যাহতি।।
রাখিয়াছ বন্দী করি শুনি বন্দীশালে।
হস্ত পদ বদ্ধ তার লোহার শিকলে।।
আমার গৌরব রাখ করহ সম্মান।
আমারে করিয়া ক্ষমা দেহ নাতিদান।।
এতেক শুনিয়া রাজা মুনির বচন।
পাত্রেরে বলিল ঝাট আনহ রাবণ।।
দুই পাত্র কারাগারে গেল দিয়া রড়।
খসাইল রাবণের গলার নিগড়।।
কুড়ি হাত রাবনের বদ্ধ যোড়ে যোড়ে।
রাজার আজ্ঞায় সে সমস্ত বদ্ধ ছাড়ে।।
খসাইল পায়ের দাড়াকু দৃঢ়তর।
ঘুচাইল রাবণের বুকের পাথর।।
কুড়ি হাত ফুঁড়িয়া বান্ধিয়া ছিল চামে।
করিল বন্ধন-মুক্ত সে সকল ক্রমে।।
রাবণে আনিয়া দিল মুনি বিদ্যমানে।
মাথা তুলি না চাহে রাবণ অপমানে।।
স্নান করাইয়া পরাইল দিব্য বাস।
দিব্য অলঙ্কার দিল মাণিক্য প্রকাশ।।
সুগন্ধি চন্দন পুষ্প দিয়া বিভূষণ।
পুলস্ত্য-মুনির করে করে সমর্পণ।।
মুনির বচনে তথা ধর্ম্ম-অগ্নি জ্বালি।
অর্জ্জুনে রাবণে যে করাইল মিতালি।।
পুলস্ত্য গেলেন স্বর্গে দশানন লঙ্কা।
মুনির প্রসাদে দূরে গেল তার শঙ্কা।।
অগস্ত্য বলেন মন দেহ রঘুবর।
অর্জ্জুনের পিতা তপ করিল বিস্তর।।
আপনি দিলেন বর তারে নারায়ণ।
অর্জ্জুন স্বরূপ আমি তোমার নন্দন।।
তোমার অর্জ্জুন সে সহস্র হাত ধরে।
হেন অর্জ্জুনেরে কেহ জিনিতে না পারে।।
বলাবল নাহি তথা নাহি ডাকা চুরি।
রাজ্যেতে কোটাল নাহি আপনি প্রহরী।।
হারাইলে ধন পায় অর্জ্জুন-স্মরণে।
চন্দ্রবংশে রাজা নাহি সম তাঁর গুণে।।
বিষ্ণু-অংশধর মহাবীর চরাচরে।
ভৃগুরাম মারেন সেই অর্জ্জুন রাজারে।।
অনিত্য শরীর নিত্য জ্ঞান করা বৃথা।
অর্জ্জুনের এই দশা অন্যে কিবা কথা।।
অর্জ্জুনের কীর্ত্তিতে আবৃত এ সংসার।
কৃত্তিবাস রচিল অর্জ্জুন-অবতার।।