০৫০. তরণীসেনের যুদ্ধ ও পতন

ভগ্নপাইক কহে গিয়া রাবণ গোচর।
মকরাক্ষ পড়ে রণে শুন লঙ্কেশ্বর।।
শোকের উপর শোক হৈল বিপরীত।
সিংহাসন হৈতে পড়ে হইয়া মূর্চ্ছিত।।
পাত্রমিত্র আসিয়া বুঝায় বহুতর।
ধরাসনে বসি রাজা কান্দিল বিস্তর।।
মরিয়া না মরে রাম বিপরীত বৈরী।
বীরশূন্যা হইল কনক লঙ্কাপুরী।।
কুম্ভকর্ণ অতিকায় বীর অকম্পন।
নর বানরের যুদ্ধে হইল নিধন।।
কে আছে এমন বীর পাঠাইব কারে।
রাম লক্ষ্মণেরে মারে সুগ্রীব বানরে।।
মন্ত্রণা করয়ে রাজা লয়ে মন্ত্রিগণ।
তরণীসেনেরে তখন হইল স্মরণ।।
রাজার আদেশে বীর আইলা তরণী।
প্রণমিল দশাননে লোটায়ে ধরণী।।
আলিঙ্গন করে রাজা বাড়ায় সম্মান।
যুঝিতে আরতি কৈল দিয়া পুষ্প পান।।
রাবণ বলে, লঙ্কাপুরী রাখহ তরণী।
এতেক প্রমাদ হবে আগেতে না জানি।।
তব পিতা বিভীষণ ধর্ম্মেতে তৎপর।
হিত উপদেশ ভাই বুঝালে বিস্তর।।
অহঙ্কারে মত্ত আমি ছন্ন হৈল মতি।
বিনা অপরাধে আমি মারিলাম লাথি।।
আমারে ছাড়িয়া গেল ভাই বিভীষণ।
অনুরাগে ছাড়িয়া গেল ভাই বিভীষণ।।
অনুরাগে লইয়াছে রামের শরণ।।
সন্ধি উপদেশ কথা সেই দেয় কয়ে।
শ্রীরাম আছয়ে বসে কালরূপী হয়ে।।
শত্রুর সপক্ষ হইয়াছে তব পিতে।
মজিল কনক-লঙ্কা তার মন্ত্রণাতে।।
তুমি তার পুত্র বট নহ তার মত।
চিরদিন জানি তুমি মম অনুগত।।
রাজ্য দন লহ বাপু স্বর্ণ-লঙ্কাপুরী।
রাখহ রাক্ষসকুল বৈরিগণে মারি।।
কহিছে তরণীসেন করি যোড়হাত।
ত্রৈলোক্য-বিজয়ী তুমি রাক্ষসের নাথ।।
মহাগুরু পিতা মাতা সর্ব্ব শাস্ত্রে কয়।
কহিতে পিতার কথা উচিত না হয়।।
দশানন বলে, তুমি কুলে সুসন্তান।
নর বানরের হাতে কর পরিত্রাণ।।
সংগ্রাম জিনিবে তুমি হেন লয় মনে।
তোমার সমান বীর নাহি ত্রিভুবনে।।
যুদ্ধে যোদ্ধৃপতি তুমি বুদ্ধে বিচক্ষণ।
হাতে গলে বান্ধি আন শ্রীরাম লক্ষ্মণ।।
এত শুনি কহে বিভীষণের কুমার।
যথাশক্তি সংগ্রামে করিব মহামার।।
কুলক্ষয় করিবার মুলাধার পিতে।
উপরোধ না করিব উপস্থিত মতে।।
নানা জাতি পুরাণ শাস্ত্রেতে এই কয়।
শ্রেষ্ঠ জ্যেষ্ঠ বিবেচনা যুদ্ধকালে নয়।।
বড় প্রীতি পাইল রাজা তরণীর বোলে।
শিরে চুম্ব দিয়া রাজা করিলেক কোলে।।
রত্নময় হার দিল বলয় কঙ্কণ।
আপনার হাতে তারে পরায় রাবণ।।
রণসাজে সাজাইয়া দিল দশানন।
সারথি আনিল রথ সংগ্রামে গমন।।
সাজন করিল রথ মনের হরিষে।
সারি সারি কত রত্ন শোভে চারি পাশে।।
অনেক বিচিত্র চিত্র রথের উপরি।
শ্বেত নীল নেতের পতাকা সারি সারি।।
বিচিত্র ধনুক তোল তূণে পূর্ণ বাণ।
জাঠা জাঠি শেল শূল খাণ্ডা খরশান।।
সৈন্যেরে সাজিতে আজ্ঞা দিলেক তরণী।
তখন পড়িল মনে সরমা জননী।।
শীঘ্রগতি গেল বীর মায়ের নিকটে।
দাণ্ডাইল প্রণাম করিয়া করপুটে।।
তরণী বলেন মাতা নিবেদি চরণে।
হয়েছে রাজার আজ্ঞা যাব আমি রণে।।
পূর্ণব্রহ্ম নারায়ণে দেখিব নয়নে।
পবিত্র হইবে দেহ রাম-দরশনে।।
নিরখিব জনকের চরণ-কমল।
দেহ অনুমতি মাতা যাব রণস্থল।।
সংগ্রামে যাইবে পুত্র শুনি এ বচন।
সরমা চমকি উঠে করিয়া রোদন।।
কি কথা কহিলে বাপ, প্রাণ কাঁপে শুনে।
যাইতে না দিব নর-বানরের রণে।।
লঙ্কা ছেড়ে তোমা লয়ে যাব স্থানাস্তর।
থাকুক রাজত্ব লয়ে রাজা লঙ্কেশ্বর।।
ধার্ম্মিক তোমার পিতা জানে সর্ব্বজন।
পাপ সঙ্গ ছেড়ে লয় রামের শরণ।।
তুমি গিয়া রামের চরণে কর স্তুতি।
শ্রীরাম মনুষ্য নহে গোলকের পতি।।
দুরাত্মা রাক্ষসকুল করিতে সংহার।
দশরথ-ঘরে বিষ্ণু রাম-অবতার।।
এক লক্ষ পুত্র যার সওয়া লক্ষ নাতি।
একজন বা থাকিবে বংশে দিতে বাতি।।
বিষম বুঝিয়া তোর পিতা বিভীষণ।
পলাইয়া নিল গিয়া রামের শরণ।।
তুমিত সুবুদ্ধি বট অতি বিচক্ষণ।
এ সব শুনিয়া যুদ্ধে যাহ কি কারণ।।
মায়ের বচন শুনি কহিছে তরণী।
বিষ্ণু-অবতার রাম আমি ভাল জানি।।
তথাপি করিব যুদ্ধ করেছি নির্য্যাস।
মরিলে রামের হাতে গোলোকে নিবাস।।
শুনিয়াছি সর্ব্ব শাস্ত্রে বেদের লিখন।
তুমি মাতা বিষাদ ভাবিছ কি কারণ।।
কে কারে মারিতে পারে, কেবা কার রিপু।
এক বিষ্ণু বিশ্বময় ভ্ন্নি ভ্ন্নি বপু।।
কালেতে করয়ে লয় উৎপত্তি প্রলয়।
মিথ্যা কেন ভাব মাতা মরণের ভয়।।
শুনেছি পিতার মুখে মহাযোগ তন্ত্র।
অনিত্য শরীর এই মিছে মায়া যন্ত্র।।
দাসের সন্তান বলে না মারেন রাম।
করিব আসিয়া পুনঃ ও পদে প্রণাম।।
কালের বিভক্ত কাল পূর্ণ হলে পরে।
ত্রিভুবনে কার সাধ্য কে রাখিতে পারে।।
মহাজ্ঞানবতী সতী সরমা-সুন্দরী।
বসিলেন সম্বরিয়া নয়নের বারি।।
চলে বীর প্রণমিয়া সরমা-জননী।
সাজে সাজ বলি সবে ডাকিছে তরণী।।
সাজ সাজ বলি সৈন্যে পড়ে গেল সাড়া।
সানাই অসংখ্য বাজে দুই লক্ষ কাড়া।।
করতাল খঞ্জনী কাঁসী ডম্ফ কোটি কোটি।
তিন লক্ষ দগড়ে সঘনে পড়ে কাঠি।।
সেতারা চৌতারা বাজে মধুর মৃদঙ্গ।
বাজে বীণা সপ্তস্বরা ভেউরি ভোরঙ্গ।।
শঙ্খ বাজে, ঘণ্টা বাজে বাজে জয়ঢোল।
প্রলয়ের কালে যেন উঠে গণ্ডগোল।।
ঢেমচা খেমচা বাজে পাখোজ পিনাক।
সহস্র সহস্র বাজে নিশাচারী ঢাক।।
উরমাল টিকারা বাজে কোটি কোটি ডম্ফ।
রণশিঙ্গা শব্দ শুনি ত্রিভুবনে কম্প।।
সাজিল তরণীসেন করিতে সংগ্রাম।
আনন্দে সকল অঙ্গে লিখে রামনাম।।
অসংখ্য কটক ঠাট সাজিল বিস্তর।
কেহ রথে কেহ গজে কেহ অশ্বোপর।।
কেহ ধরে শেল শূল কেহ ধনুর্ব্বাণ।
কার হাতে জাঠাজাঠি খড়্গ খরশাণ।।
আকাশের তারা পারি করিতে গণনা।
না পারি করিতে সংখ্যা তরণীর সেনা।।
লক্ষ লক্ষ অশ্ব গজ লক্ষ লক্ষ রথ।
ঢাকিল গগন আদি আচ্ছাদিল পথ।।
লক্ষ লক্ষ রাম নাম ধ্বজ পতাকাতে।
লিখিলেক রথে আর আপন অঙ্গেতে।।
হাতে ধনু রথে উঠে বীর-অবতার।
পশ্চিম দ্বারেতে চলে কার মার মার।।
গড়ের বাহির হয়ে দিলেক ঘোষণা।
রামজয় রামজয় বাজাও বাজনা।।
কেহ বলে মার মার কেহ বলে ধর।
বানর ধাইল লয়ে বৃক্ষ আর পাথর।।
ধনুক পাতিয়া যুঝে তরণীর সেনা।
বানর কটকে যেন পড়িছে ঝঞ্ঝনা।।
রাক্ষস বানরে যুদ্ধ হৈল মহামার।
সহিতে না পারে বানর পলায় অপার।।
শ্রীরাম বলেন, শুন মিত্র বিভীষণ।
দেখ দেখি সংগ্রামে আইল কোন্ জন।।
বিভীষণ বলে, শুন রাজীব-লোচন।
রাবণের অন্নেতে পালিত একজন।।
সম্বন্ধেতে ভ্রাতুষ্পুত্র পরিচয়ে জ্ঞাতি।
ধর্ম্মেতে ধার্ম্মিক পুত্র বড় যোদ্ধৃপতি।।
প্রকারেতে দিলেন প্রকৃত পরিচয়।
তরণী ভাবিছে কোথা রাম দয়াময়।।
কটকে কটকে যুদ্ধ হইল বিস্তর।
ভঙ্গ দিয়া পলাইল যতেক বানর।।
চারিদিক নেহারিয়া দেখিছে তরণী।
কতক্ষণে দেখা পাইব রাম রঘুমণি।।
কতক্ষণে পিতার পাইব দরশন।
জনম সফল হবে জুড়াবে জীবন।।
মনে ভাবে কত দূরে দেব নারায়ণ।
চালাইয়া দিল রথ ত্বরিত গমন।।
রঘুনাথের পানে যদি চালাইল রথ।
ধেয়ে গিয়ে নীল বীর আগুলিল পথ।।
নীল বীর বলে বেটা আর যাবি কোথা।
এক চড়ে রাক্ষস ছিঁড়িব তোর মাথা।।
যোড়হাতে বলে বিভীষণের নন্দন।
পথ ছাড়, দেখি গিয়া ম্রীরাম লক্ষ্মণ।।
নীল বলে প্রাণ লব পর্ব্বত চাপনে।
কেমনে দেখিবি কেটা শ্রীরাম লক্ষ্মণে।।
অঙ্গে লেখা রামনাম রথ চারিপাশে।
তরণীর ভক্তি দেখি কপিগণ হাসে।।
দুষ্ট নিশাচর জাতি কত মায়া জানে।
হইয়া ধার্ম্মিক-বক আসিয়াছে রণে।।
মকরাক্ষ এসেছিল বুদ্ধি বড় সরু।
যুদ্ধ জিন্তে এসেছিল রথে বেঁধে গরু।।
বৃষভেতে টানে রথ গোচর্ম্মেতে ঢাকা।
বায়ুবাণে গরু উড়ে বেটা হৈল ভেকা।।
গোরৎস গোচর্ম্ম ধেনু বাণে গেল উড়ে।
চেয়ে দেখ রাক্ষসের মুণ্ড আছে পড়ে।।
তুমি বেটা মহাদুষ্ট, তা হতে মায়াবী।
ভণ্ড তপস্যাতে তুই কাহারে ভুলাবি।।
এত বলি নীলবীর কোপে করি ভর।
উপাড়িয়া আনে এক দীর্ঘ তরুবর।।
বাহুবলে হানে বৃক্ষ তরণীর মাথে।
হাসিয়া তরণীসেন ধরে বাম হাতে।।
বৃক্ষ যদি ব্যর্থ গেল নীলবীর রোষে।
আনিল পর্ব্বত এক চক্ষুর নিমিষে।।
হানিল পর্ব্বত গোটা দিয়া হুহুঙ্কার।
তরণীর গদা ঠেকি হৈল চূরমার।।
পর্ব্বত হইল গুঁড়া গদার প্রহারে।
তরণী হাণিল বাণ নীলের উপরে।।
মুখে রক্ত উঠে বীর হইল অজ্ঞান।
নীলবীরে ভঙ্গ দেখি রোষে হনুমান।।
লাফ দিয়া হনুমান তার রথে চড়ে।
সারথির হাতের পাচনী নিল কেড়ে।।
রুষিয়া তরণীসেন মারে এক চড়।
রথ হৈতে পড়ে হনু করে ধড়ফড়।।
সম্বিত পাইয়া হনু করে মহামার।
লাফ দিয়া রতে গিয়া চড়ে আরবার।।
দুই জনে মহাযুদ্ধ রথের উপরে।
কোপেতে তরণীসেন হনুমানে ধরে।।
আছাড়িয়া ফেলে দিল ধরণী উপর।
পাছু হৈল হনুমান পাইয়া ত ডর।।
হনুমানে বিমুখ দেখিয়ে লাগে ভয়।
আতঙ্কে বানর কেহ আগু নাহি হয়।।
মহাকোপে পশ্চাৎ করিয়া হনুমানে।
বালির তনয় বীর প্রবেশিল রণে।।
হানিল পর্ব্বত এক তরণী উপর।
দেখিয়া তরণীসেন হইল ফাঁফর।।
ভয়েতে তরণী এড়ে চোখ চোখ বাণ।
বাণে কাটি পর্ব্বত করিল খান খান।।
কাটা গেল পর্ব্বত অঙ্গদে লাগে ভয়।
মুষ্ট্যাঘাতে মারিল রথের চারি হয়।।
সারথি তৎপর বড় ত্বরান্বিত হয়ে।
পুনঃ অশ্ব যুড়ে রথ দিল চালাইয়ে।।
রুষিল তরণীসেন অঙ্গদ উপর।
অঙ্গদের বুকে মারে লোহার মুদগর।।
মুদগর-আঘাতে পড়ে বালির নন্দন।
মহেন্দ্র দেবেন্দ্র আইল করিয়া গর্জ্জন।।
আর যত বানর মিলিল একবারে।
বরিষে পর্ব্বত বৃক্ষ তরণী উপরে।।
গিরি যেন বৃষ্টিধারা মাথা পাতি ধরে।
তেমনি তরণী বীর সংগ্রাম ভিতরে।।
নানা শিক্ষা জানে বীর পরম সন্ধানী।
ক্ষণেকে পর্ব্বত বৃক্ষ কাটিল তরণী।।
আগুণের শিক্ষা যেন তরণীর বাণ।
লক্ষ লক্ষ বানরের লইল পরাণ।।
চড় লাথি মুষ্ট্যাঘাত বানরের তাড়া।
লক্ষ লক্ষ রাক্ষসের মাথা করে গুঁড়া।।
বানরে রাক্ষস মারে রাক্ষসে বানর।
হস্তী ঘোড়া রথ রথী পড়িল বিস্তর।।
স্থানে স্থানে পর্ব্বত প্রমাণ গাদি গাদি।
সংগ্রামের স্থলেতে বহিল রক্তে নদী।।
বানরের ঘোর নাদ গজের গর্জ্জন।
রথের ঘর্ঘর শব্দ শুনিতে ভীষণ।।
জাঠা জাঠি গদা শেল শব্দ ঠনঠন্ ।
কেহবা পলায়ে যায় লইয়া জীবন।।
কারো গেল হস্ত পদ কারো চক্ষু কর্ণ।
মুষল-আঘাতে কেহ হয়েছে বিবর্ণ।।
তুলনা নাহিক দিতে যুদ্ধ হৈল বড়।
চারিদ্বারের বানর পশ্চিমদ্বারে জড়।।
সহিতে না পারে কেহ তরণীর বাণ।
রুষিয়া সুষেণ বুড়া হৈল আগুয়ান।।
সুষেণের প্রতাপে রাক্ষসগণ কাঁপে।
তরণীর রথে গিয়া পড়ে এক লাফে।।
তরণীর হাতের ধনুক দিল কেড়ে।
বিদারিল সর্ব্ব অঙ্গ আঁচড় কামড়ে।।
তরণীর অঙ্গে তবে রক্তধারা বয়।
পদাঘাতে মারিল রথের চারি হয়।।
সারথির মুণ্ড ছিঁড়ে করে বীরদাপ।
আপন কটকে পড়ে দিয়া এক লাফে।।
তরণীর অবস্থা দেখি কপিগণ হাসে।
আনিল সারথি হয় চক্ষুর নিমিষে।।
করিছে তরণীসেন বাণ-অবতার।
সম্মুখ সংগ্রামে রহে হেন সাধ্য কার।।
বড় বড় বানর পলায়ে গেল দূরে।
চোখ চোখ বাণ বিন্ধে সুগ্রীব-বানরে।।
বাণাঘাতে সুগ্রীব ভূপতি কোপে জ্বলে।
গর্জ্জিয়া পর্ব্বত বীর হানে বাহুবলে।।
তরণী মারিল গদা ক্রোধে কম্পমান।
প্রহারে পর্ব্বত গেল হয়ে শত খান।।
হানিল দুর্জ্জয় জাঠা সুগ্রীবের বুকে।
পড়িল সুগ্রীব রাজা রক্ত উঠে মুখে।।
সংগ্রামে পড়িল যদি সুগ্রীব রাজন।
উভলেজ করিয়া পলায় কপিগণ।।
পলায় বানরগণ ফিরিয়া না চায়।
ধর ধর বলিয়া রাক্ষস পিছে ধায়।।
প্রাণভয়ে পলাইল বড় বড় বীর।
তরণীসেনের যুদ্ধে কেহ নহে স্থির।।
মহেন্দ্র দেবেন্দ্র পলায় দ্বিবিদ কুমুদ।
রহিলেন হনুমান সুষেণ অঙ্গদ।।
সুগ্রীবের চেতন করায় তিনজন।
চালাইল রথ বিভীষণের নন্দন।।
হাতে ধনু দাণ্ডাইয়া শ্রীরাম লক্ষ্মণ।
দক্ষিণেতে জাম্ববান বামে বিভীষণ।।
সম্মুখেতে উপনীত তরণীর রথ।
রথ হৈতে নামিল থাকিতে কত পথ।।
সঙ্কেতে প্রণাম করে পিতার চরণে।
করপুটে প্রণমিল শ্রীরাম লক্ষ্মণে।।
বিভীষণ বলে, রাম দেখহ সত্বর।
তোমা দোঁহে, প্রণাম করয়ে নিশাচর।।
শ্রীরাম বলেন, শুন মিত্র বিভীষণ।
আসিয়াছে নিশাচর করিবারে রণ।।
বিপক্ষের পক্ষ হয়ে আসিয়াছে রণে।
আমা দোঁহে প্রণাম করিবে কি কারণে।।
বিভীষণ বলে, গোঁসাই না জান কারণ।
লঙ্কাপুরেও তোমার ভক্ত এজন।।
তোমার চরণ বিনা অন্য নাহি জানে।
আসিয়াছে সংগ্রামেতে রাজার শাসনে।।
রাম বলে ভক্ত যদি জানহ নিশ্চয়।
আশীর্ব্বাদ করি যেন বাঞ্ছা পূর্ণ হয়।।
লক্ষ্মণ বলেন কি কহিলে মহাশয়।
রাক্ষসের অভিলাষ রাবণের জয়।।
শ্রীরাম বলেন তুমি না জান লক্ষ্মণ।
ভক্তের বিষয়-বাঞ্ছা নহে কদাচন।।
কহিতে কহিতে কথা রাম রঘুমণি।
ধনুকে টঙ্কার দিয়া আইল তরণী।।
গভীর গর্জ্জনে বলে ছাড়ি সিংহনাদ।
দেশে ফিরে যাবে বেটা করিয়াছ সাধ।।
মহাকোপে লক্ষ্মণের অধরোষ্ঠ কাঁপে।
শমন সমান বাণ বসাইল বাপে।।
প্রহারিল তরণীরে পঞ্চশত বাণ।
কাটিয়া তরণীসেন করে খান খান।।
বাণ যদি ব্যর্থ গেল, রুষিল লক্ষ্মণ।
তরণী উপরে করে বাণ বরিষণ।।
যত বাণ লক্ষ্মণ মারিলা তরণীকে।
শ্রীরাম স্মরণে বীর কাটে একে একে।।
অমর্ত্ত সমর্ত্ত বাণ, বাণ কর্ণরেখা।
দুই জনে বাণ মারে যার যত শিক্ষা।।
লক্ষ্মণ এড়িল বাণ অগ্নি-অবতার।
তরণী বরুণ-বাণে করিল সংহার।।
পাশুপাত-বাণ মারে ঠাকুর লক্ষ্মণ।
বৈষ্ণব-বাণেতে বীর করে নিবারণ।।
হানিল পর্ব্বত-বাণ অতি ভয়ঙ্কর।
পবন-বাণেতে নিবারিল নিশাচর।।
সর্প-বাণ মারিলেন ঠাকুর লক্ষ্মণ।
লক্ষ লক্ষ অজগরে ছাইল গগন।।
বিকট দশন তুণ্ড অতি ভয়ঙ্কর।
গরুড়-বাণেতে নিবারিল নিশাচর।।
কুহ বাণে লক্ষ্মণ করিল মায়াময়।
দশদিক্ অন্ধকার, দৃষ্টি নাহি হয়।।
অন্ধকারে দেখিতে না পায় নিশাচর।
আপনা আপনি কাটাকাটি পরস্পর।।
তরণীর সৈন্যেতে হইল মহামার।
চিকুর বাণেতে বিনাশিল অন্ধকার।।
কোপেতে গন্ধর্ব্ব-বাণ মারিল লক্ষ্মণ।
তিন কোটি গন্ধর্ব্ব জন্মিল ততক্ষণ।।
গন্ধর্ব্ব রাক্ষসে যুদ্ধ হৈল ভয়ঙ্কর।
তরণীর সৈন্য সব করিল সংহার।।
পড়িল সকল ঠাট নাহি একজন।
রাখিতে নারিল বিভীষণের নন্দন।।
কোপেত তরণীসেন জাঠা নিল হাতে।
গর্জ্জিয়া মারিল জাঠা লক্ষ্মণের মাথে।।
পড়িল লক্ষ্মণ বীর হইয়া অজ্ঞান।
লক্ষ্মণেরে লইয়া পলায় হনুমান।।
ডাকিছে তরণীসেন জিনিয়া সংগ্রাম।
কোথায় তপস্বী ভণ্ড জটাধীর রাম।।
রাম বলে, অধিক বিলম্ব নাহি আর।
এখনি পাঠাব তোরে যমের দুয়ার।।
লক্ষণ পড়িল যদি আইল রঘুনাথে।
ত্রিভুবন-বিজয়ী ধনুক বাণ হাতে।।
দাঁড়াইল রঘুনাথ তরণী-সম্মুখে।
রামের সর্ব্বাঙ্গ বীর নেহারিয়া দেখে।।
বিশ্বরূপ রামের দেখিল নিশাচর।
ব্রহ্মাণ্ড একৈক লোমকূপের ভিতর।।
পর্ব্বত কন্দর দেখে কত নদ নদী।
মর্ত্ত্যলোক তপোলোক ব্রহ্মলোক আদি।।
মায়াতে মনুষ্য-লীলা গোলোকের পতি।
চরণে তরঙ্গময়ী গঙ্গা ভাগীরথী।।
যক্ষ রক্ষ দেবতা কিন্নর লাখে লাখে।
বিস্ময় হইল মনে বিশ্বরূপ দেখে।।
অষ্টাঙ্গ লোটায়ে ভূমে প্রণাম করিল।
ধনুর্ব্বাণ ফেলি স্তব করিতে লাগিল।।
কহিছে তরণীসেন করি যোড় হাত।
দেবের দেবতা তুমি জগতের নাথ।।
তুমি ব্রহ্মা তুমি বিষ্ণু তুমি মহেশ্বর।
কুবের বরুণ তুমি যম পুরন্দর।।
তুমি চন্দ্র তুমি সূর্য্য তুমি দিবা রাতি।
অনাথের নাথ তুমি অগতির গতি।।
তুমি সৃষ্টি তুমি স্থিতি তোমাতে প্রলয়।
সত্ত্ব রজঃ তমঃ গুণে তুমি বিশ্বময়।।
মৎস্য কূর্ম্ম বরাহ নৃসিংহ-রূপধারী।
হিরণ্যকশিপু-রিপু গোলোক-বিহারী।।
গভীর মহিমা বীর মিহির বংশজ।
অন্তিমে আশ্রয় দেহ ও পদ পঙ্কজ।।
বিকার বিহীন দীন দয়াময় নাম।
রঘুকুলোদ্ভব নব-দূর্ব্বাদল-শ্যাম।।
কি জানি ভকতি স্তুতি আমি অতি মূঢ়।
চিন্তিয়া না পায় চরাচর চন্দ্রচূড়।।
রক্ষ হে পুণ্ডরীকাক্ষ রাক্ষসের রিপু।
স্তবেতে অশক্ত আমি নিশাচর-বপু।।
বহু যুগ যুগান্তরে মানিয়া অসাধ্য।
জন্মেছি রাক্ষসকূলে হয়ে তব বধ্য।।
কি ছার মিছার গর্ব্ব, জয় নাহি চাই।
মুণ্ড কাট তীক্ষ্ণ খড়্গে মোক্ষমার্গে যাই।।
পদ্মহস্তে ছেদ যদি কর এই দেহ।
পুলকে গোলোকে যাব নাহিক সন্দেহ।।
তরণী করিল স্তব শুনে রঘুবর।
অশ্রুজলে ভাসিল কোমল-কলেবর।।
শ্রীরাম বলেন, শুন মিত্র বিভীষণ।
লঙ্কাতে এমন ভক্ত, জানিনু এখন।।
কেমনে মারিব অস্ত্র ইহার উপর।
এত বলি ত্যজিলা হাতের ধনুঃশর।।
রাম বলে, বিভীষণ বলি হে তোমারে।
কেমনে ধরিব প্রাণ এ ভক্তেরে মেরে।।
অকারণে করিলাম সাগর বন্ধন।
ত্যজিয়া লঙ্কার যুদ্ধ পুনঃ যাই বন।।
যত যুদ্ধ করিলাম শ্রম হৈল সার।
বুঝিলাম না হইল সীতার উদ্ধার।।
কার্য্য নাই সীতা, আমি না যাব রাজ্যেতে।
কেমনে মারিব বাণ ভক্তের অঙ্গেতে।।
কণ্টক ফুটিলে মম ভক্তের শরীরে।
শেলের সমান বাজে আমার অন্তরে।।
ভক্ত মোর মাতা পিতা, ভক্ত মোর প্রাণ।
কেমনে এমন ভক্তে প্রহারিব বাণ।।
এতেক ভাবিয়া যুদ্ধে হয়ে অবসাদ।
বসিলেন রঘুনাথ গণিয়া প্রমাদ।।
সদয় হৃদয় দেখি রাজীব-লোচনে।
তরনী বিচার করে আপনার মনে।।
আমার স্তবেতে তুষ্ট হয়ে রঘুবর।
বুঝি অস্ত্র না মারেন আমার উপর।।
কেমনে রাক্ষস-দেহ হইবে উদ্ধার।
যুদ্ধ বিনা পরিত্রাণ নাহি দেখি আর।।
এতেক ভাবিয়া তুলি নিল ধনুর্ব্বাণ।
কহিছে কর্কশ-বাক্য পূরিয়া সন্ধান।।
তরণী কহিছে রাম শুন বলি তোরে।
কহিলাম প্রিয়বাক্য বুঝিবার তরে।।
কেমনে বুঝিলে আমি না করিব রণ।
এখনি পাঠাব তোরে যমের সদন।।
তোর যে বীরত্ব তাহা জানে চরাচরে।
ভরত হইল রাজ্য দূর করে তোরে।।
তোরে মেরে লক্ষ্মণেরে মারিব সংগ্রামে।
সীতারে বসাব লয়ে রাবণের বামে।।
এত যদি কহিল তরণী মহাবীর।
ক্রোধে লক্ষ্মণের হলো কম্পিত শরীর।।
লক্ষ্মণ বলেন দুষ্ট নিশাচর-জাতি।
প্রানের ভয়েতে বেটা করিল মিনতি।।
কোথাকার ভণ্ড বেটা পাপিষ্ঠ দুর্জ্জন।
এত বলি শত বাণ যুড়িল লক্ষ্মণ।।
দেখিয়া তরণীসেন ভাবিল মনেতে।
মরিতে বাসনা মোর শ্রীরামের হাতে।।
এতেক ভাবিয়া হৈল বিষণ্ন বদন।
তরণীর অভিলাষ বুঝি বিভীষণ।।
যোড়হাতে বিভীষণ কহে রঘুনাথে।
এ বেটা দুর্জ্জয় বীর লঙ্কার মধ্যেতে।।
একবার লক্ষ্মণ মূর্চ্ছিত হৈল রণে।
আরাবার যুদ্ধে কেন পাঠাও লক্ষ্মণে।।
আপনি মারহ রণে দুষ্ট নিশাচর।
এত শুনি ধনুক ধরিলা রঘুবর।।
চোখ চোখ বাণ মারে পূরিয়া সন্ধান।
অর্দ্ধপথে তরণী করিল খান খান।।
যত বাণ মারিলেন রাম রঘুমণি।
বাণেতে রামের বাণ কাটিল তরণী।।
তরণী বাছিয়া মারে খরতর শর।
বিন্ধিয়া কোমল অঙ্গ করিল জর্জ্জর।।
দুইজনে যুদ্ধ বাজে দুজনে সমান।
কোপে রাম যুড়িলেন অর্দ্ধচন্দ্র বাণ।।
বাণ দেখি তরণীর মনে হৈল ভয়।
এক বাণে কাটিল রথের চারি হয়।।
অশ্ব কাটা গেল রথ হইল অচল।
লাফ দিয়া পড়িল তরণী মহাবল।।
পর্ব্বত পাষাণ বৃক্ষ যা দেখে সম্মুখে।
তর্জ্জন করিয়া হানে শ্রীরামের বুকে।।
অন্ধকার করে ফেলে বৃক্ষ আর পাথর।
প্রহারেতে কাতর হইলা রঘুবর।।
শুখাইল মুখ-চন্দ্র নাহি চলে বাহু।
পূর্ণিমার চন্দ্র যেন গরাসিল রাহু।।
অস্থির হইলা রণে রাম রঘুমণি।
রামেরে কাতর দেখি ভাবিছে তরণী।।
শ্রীরামের পরিশ্রম হয়েছে অধিক।
দারা সুত মিছা মায়া সকলি অলীক।।
যুগে যুগে কামনা করিয়া বহুতর।
পেয়েছি পরম রিপু পরম ঈশ্বর।।
রাজ্য দন পরিজন কিছুই না চাই।
মরিয়া রামের হাতে গোলোকেতে যাই।।
এত যদি তরণী ভাবিল মনে মনে।
বিভীষণ কহিছেন শ্রীরামের কাণে।।
শুন প্রভু রঘুনাথ করি নিবেদন।
ব্রহ্ম-অস্ত্রে হইবেক উহার মরণ।।
অন্য অস্ত্রে না মরিবে এই নিশাচর।
সদয় হইয়া ব্রহ্মা দিয়াছেন বর।।
এতেক শুনিয়া রাম কমল-লোচন।
ধনুকেতে ব্রহ্ম-অস্ত্র যুড়িলা তখন।।
রবির করিণ জিনি খরতর বাণ।
সেই বাণে রঘুনাথ পূরিলা সন্ধান।।
বাণের গর্জ্জন যেন বারিদ গরজে।
বিমানেতে আসে বাণ জয়ঘণ্টা বাজে।।
স্বর্গেতে দেবতা করে সুমঙ্গল ধ্বনি।
যোড়হাতে শ্রীরামেরে কহিছে তরণী।।
তোমার চরণ হেরে পরিহরি প্রাণ।
পরলোকে দিও প্রভু শ্রীচরণে স্থান।।
এতেক ভাবিতে বাণ অঙ্গে এসে পড়ে।
তরণীর মুণ্ড কেটে ভূমিতলে পাড়ে।।
দুই খণ্ড হয়ে বীর পড়ে ভূমিতলে।
তরণীর কাটামুণ্ড রাম রাম বলে।।
রামজয় শুভধ্বনি করে কপিগণ।
হাহাকার-শব্দে ভূমে পড়ে বিভীষণ।।
অঙ্কের দুকূল ভাসে নয়নের জলে।
ধেয়ে গিয়ে বিভীষণে রাম কৈলা কোলে।।
শ্রীরাম বলেন, শুন মিত্র বিভীষণ।
কেন হে অধৈর্য্য হয়ে করিছ রোদন।।
ইতিমধ্যে কি দুঃখ উঠিল তব মনে।
কান্দিয়া আকুল হৈলে কিসের কারণে।।
বিভীষণ বলে, প্রভু করি নিবেদন।
মরিল তরণীসেন আমার নন্দন।।
এত শুনি রঘুনাথ কান্দিতে লাগিলা।
তোমার সন্তান কেন আগে না বলিলা।।
তোমার নন্দন হেন কহিতে আগেতে।
তবে যুদ্ধ না করিতাম তরণী সঙ্গেতে।।
শোকাকুল হইয়া কান্দেন দুইজন।
শ্রীরাম লক্ষ্মণ কান্দে যত কপিগণ।।
সুগ্রীব অঙ্গদ কান্দে বীর হনুমান।
কান্দেন সুষেণ আদি মন্ত্রী জাম্ববান।।
শ্রীরাম বলেন, শুন মিত্র বিভীষণ।
না জানি হৃদয় তব কঠিন কেমন।।
ব্রহ্ম-অস্ত্র মারিতে মন্ত্রণা দিলে কাণে।
আপনি করিলে বধ আপন সন্তানে।।
আগে কেন বিবেচনা না করিলে মনে।
এক্ষণে কান্দহ মিত্র কিসের কারণে।।
শোক পরিহার মিত্র স্থির কর মন।
অনিত্য দেহের তরে কান্দ কি কারণ।।
বিভীষণ বলে, প্রভু নিবেদি চরণে।
পুত্রশোকে কান্দি হেন না ভাবিহ মনে।।
ধন্য ধন্য পুণ্যবস্ত আমার সন্তান।
মরিয়া তোমার হস্তে পাইল নির্ব্বাণ।।
কিম্বা সে বৈকুণ্ঠে গেল অথবা গোলোকে।
ত্যাজিল রাক্ষস-দেহ মুক্ত কৈলে তাকে।।
কুম্ভকর্ণ অতিকায় আদি যত বীর।
পুলকে গোলোকে গেল ত্যজিয়া শরীর।।
শত্রুভাব করে সবে হইল উদ্ধার।
শ্রীচরণ সেবা করে কি লাভ আমার।।
যদি পারিতাম দেহ করিতে পাতন।
বৈকুণ্ঠ-নগরে আমি করিতাম গমন।।
মরণ না হবে ব্রহ্মা দিয়াছেন বর।
অনেক যন্ত্রণা পাব অবনী ভিতর।।
বিষাদ ভাবিয়া কান্দি ইহার কারণ।
শ্রীরাম বলেন দুঃখ ত্যজ বিভীষণ।।
যেই তুমি সেই আমি ইথে নাহি আন।
সাধুর জীবন মৃত্যু একই সমান।।
যত দিন রবে তুমি অবনী ভিতরে।
আমার সমান দয়া এতামার উপরে।।
এত শুনি বিভীষণ ক্রন্দন সম্বরে।
ভগ্ন-পাইক কহে গিয়া রাবণ গোচরে।।
দূত কহে লঙ্কেশ্বর নিবেদি চরণে।
পড়িল তরণীসেন আজিকার রণে।।
তরণীসেনের মৃত্যু শুনি লঙ্কেশ্বর।
সিংহাসন হৈতে পড়ে ধরণী উপর।।
চৈতন্য পাইয়া রাজা করয়ে ক্রন্দন।
রাজারে প্রবোধ দেয় পাত্রমিত্রগণ।।
মৃত্তিকাতে বসে ভাবে লঙ্কা-অধিকারী।
ঘরে ঘরে কান্দে যত বীরগণের নারী।।
পুত্রশোকে অনিবার কান্দিল সরমা।
বুঝিয়া অনিত্য দেহ মনে দিল ক্ষমা।।
অশ্রুজলে সরমার কলেবর ভাসে।
জানকী প্রবোধ দেন অশেষ বিশেষে।।
এইরূপে নারীগণ কান্দে লঙ্কাপুরে।
রাবণ মন্ত্রণা করে পাঠাইব কারে।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের মধুর বচন।
লঙ্কাকাণ্ডে গাহিলেন তরণী নিধন।।