১১. হনুমান কর্ত্তৃক অশোকবনে সীতা-সন্দর্শন

কাঁদিতে কাঁদিতে বীর করে নিরীক্ষণ।
নানাবর্ণ পুষ্পযুক্ত অশোক-কানন।।
পিকগণ কুহরে ঝঙ্কারে অলিগণ।
প্রাচীরে বসিয়া বীর ভাবে মনে মন।।
অন্বেষণ করিতে হইল এই বন।
এখানে যদ্যপি পাই সীতা দরশন।।
মুছিয়া নেত্রের জল হইল সুস্থির।
প্রবেশিলা অশোক-কানরে মহাবীর।।
শিংশপার বৃক্ষ বীর দেখে উচ্চতর।
লাফ দিয়া উঠিলেক তাহার উপর।।
বৃক্ষেতে উঠিয়া বীর নেহালে কানন।
নানাবর্ণ বৃক্ষ দেখে অতি সুশোভন।।
রাঙ্গাবর্ণ কত গাছ দেখিতে সুন্দর।
মেঘবর্ণ কতগাছ দেখে মনোহর।।
ঠাঁই ঠাঁই দেখে তথা স্বর্ণ নাট্যশালা।
দেবকন্যা লইয়া রাবণ করে খেলা।।
নানাবর্ণ বৃক্ষ দেখে নানাবর্ণ লতা।
মনে চিন্তে হনুমান হেথা পাব সীতা।।
চেড়ী সবে দেখে তথা অঙ্গ ভয়ঙ্কর।
পর্ব্বত প্রমাণ হাতে লোহার মুদগর।।
কেহ কালী কেহ গৌরী, কোন চেড়ী ধলী।
খর্জ্জুর গাছের মত দেখি কেশাবলী।।
আ-উদর চুল কার, মাথা যুড়ি নাক।
কাঁকলাস মূর্ত্তি কার সব মাথা টাক।।
হাতে মুখে সর্ব্বাঙ্গে রক্তের ছড়াছড়ি।
ভয়ঙ্কর মূর্ত্তি সব রাবণের চেড়ী।।
নানা অস্ত্র ধরিয়াছে খাণ্ডা ঝিকিমিকি।
চেড়ী সব ঘিরিয়াছে সুন্দরী জানকী।।
গায়ে মলা পড়িয়াছে মলিনা দুর্ব্বলা।
দ্বিতীয়ার চন্দ্র যে দেখি হীনকলা।।
দিবাভাগে যেন চন্দ্রকলার প্রকাশ।
শ্রীরাম বলিয়া সীতা ছাড়েন নিঃশ্বাস।।
শ্রীরাম বলিয়া সীতা করেন ক্রন্দন।
সীতাদেবী চিনিলেন পবন-নন্দন।।
সীতা রূপ দেখি কান্দে বীর হনুমান।
সুগ্রীব বলিল যত, হৈল বিদ্যমান।।
ইহা লাগি মরণ এড়ায় কপি যত।
ইহা লাগি সূর্পণখার নাক কাণ হত।।
ইহা লাগি চতুর্দ্দশ সহস্র রক্ষঃ মরে।
ইহা লাগি জটায়ু প্রহারে লঙ্কেশ্বরে।।
ইহা লাগি কবন্ধের স্বর্গ-দরশন।
ইহা লাগি শ্রীরামের সুগ্রীব-মিলন।।
ইহা লাগি কপিগণ গেল দেশান্তর।
ইহা লাগি একেশ্বর লঙ্ঘিনু সাগর।।
ইহা লাগি লঙ্কায় বেড়াই রাতারাতি।
এই সে রামের প্রিয়া সীতা রূপবতী।।
দেখিয়া সীতার দুঃখ কাঁদে হনুমান।
অনুমানে যে ছিল সে দেখি বিদ্যমান।।
দশদিক আলো করে জানকীর রূপে।
ইহা লাগি ম্লান রাম দারুণ সন্তাপে।।
রাক্ষসীগণেরে মারি, কি আপনি মরি।
জানকীর দুঃখ আর দেখিতে না পারি।।
রাম সীতা বাখানে চড়িয়া বীর গাছে।
কৃত্তিবাস এ সকল রামগুণ রচে।।