৩১. সম্পাতি কর্ত্তৃক অশোকবনে সীতার উদ্দেশ কথন ও বানরদিগের সাগর পারার্থে মন্ত্রণা

সম্পাতি বলেন শুন যত বীরগণ।
সীতারে লইয়া গেল পাপিষ্ঠ রাবণ।।
যখন দক্ষিণদিকে মাথা তুলে থাকি।
অশোকের বনে দেখি সীতা চন্দ্রমুখী।।
নানাবর্ণ রাক্ষসী সীতারে করে রক্ষা।
শত যোজনের পথ সাগর পরিখা।।
একলাফে পার হও সকল বানর।
সীতাদেবী দেখিয়া সকলে যাহ ঘর।।
মহাবল ধর সবে কি কর ভাবনা।
হইয়া সাগর পার পূরাও কামনা।।
তার বাক্যে বানর দক্ষিণ মুখে চায়।
দশ যোজন বিনা আর দেখিতে না পায়।।
একদৃষ্টে কপিগণ চাহে ঊর্দ্ধশ্বাসে।
দেখিতে না পায় কিছু পক্ষিরাজ হাসে।।
জাম্বুবান উঠি বলে বুদ্ধে বৃহস্পতি।
আমার বচন শুন বিহঙ্গ সম্পাতি।।
শতেক যোজন পথ সাগর পাথার।
বানর হইয়া হব কি প্রকারে পার।।
অনেক কালের পক্ষী অনেক বয়েস।
সাগর তরিতে তুমি কহ উপদেশ।।
সম্পাতি বলেন শুন সবে সাবধানে।
অপূর্ব্ব প্রস্তাব এক পড়িল যে মনে।।
সুপার্শ্ব আমার পুত্র হিমালয়ে থাকে।
নিত্য নিত্য সে আইসে দেখিতে আমাকে।।
হিমালয়-পর্ব্বতে আমার পরিবার।
তথা হৈতে পুত্র মম যোগায় আহার।।
নিত্য আনে আহার সে প্রভাত সময়।
একদিন আনিতে বিলম্ব অতিশয়।।
ক্ষুধায় বিকল আমি দহে কলেবর।
কোপে সুপার্শ্বেরে র্ভৎসিলাম বহুতর।।
ধার্ম্মিক আমার পুত্র ধর্ম্মে বড় রত।
করিলেক আমারে বৃত্তান্ত অবগত।।
আহার লইয়া পিতা প্রভাতে আসিতে।
দেখিলাম এক নারী রাবণের রথে।।
কালবর্ণ রাবণ সে গৌরবর্ণা নারী।
মেঘের উপরে যেন বিদ্যুৎ সঞ্চারি।।
শ্রীরাম লক্ষ্মণ বলি কাঁদিছে বিস্তর।
দুই পাখে আগুলিলাম দুইটি প্রহর।।
রাখিতাম রথ সহ তাহারে উদরে।
কেবল পাইল রক্ষা স্ত্রীবধের ডরে।।
সুপার্শ্বের কথা শুনিলাম মনোনীতা।
জানিলাম তখনি সে শ্রীরামের সীতা।।
এখনি আসিবে পুত্র, মহাবল তার।
পৃষ্ঠে করি সবাকারে সে করিবে পার।।
তিন ভাগ সাগর সে ঢাকে দুই পাখে।
এক ভাগ মাত্র তার লঙ্ঘিবারে থাকে।।
এক ভাগ লঙ্ঘিতে না হবে কোন শ্রম।
স্থির হও কপিগণ নাহি ব্যতিক্রম।।
এইরূপ হইতেছে কথোপকথন।
মহাকায় সুপার্শ্ব আইল ততক্ষণ।।
দুই ঠোঁট মেলিয়া সে গিলিবারে যায়।
সম্পাতির আড়ে গিয়া কটক লুকায়।।
সম্পাতি বলেন, বাছা না কর সংহার।
পৃষ্ঠে করি সবারে সাগর কর পার।।
করিয়াছে ইহারা আমার উপকার।
করহ প্রত্যুপকার তবে পাই পার।।
সুপার্শ্ব বলেন মান্য পিতার বচন।
আমার পৃষ্ঠেতে চড় সব কপিগণ।।
অঙ্গদ বলেন, শন বীর উপদেশ।
সাগর তরিয়া করি সীতার উদ্দেশ।।
দেবতার পুত্র মোরা দেব-অবতার।
কি কারণে পক্ষী হে তোমারে দিব ভার।।
সম্পাতি বলিল, আমি রাম কার্য্য করি।
রামায়ণ-প্রসাদে নূতন পক্ষ ধরি।।
হইল উভয় পক্ষ দেখিতে সুন্দর।
রামজয় বলি ডাকে সকল বানর।।
দেখিয়া বানরগণে লাগে চমৎকার।
রামজয় স্মরণে সাগর হব পার।।
কপি সম্ভাষিয়া পক্ষী উড়িল আকাশে।
দুই পক্ষ সারি যায় আপনার দেশে।।
পুত্র সহ পক্ষিরাজ গেলেন উত্তর।
অঙ্গদ কটক সহ দক্ষিণ সাগর।।
কৃত্তিবাস রচে কবি ‍অমৃতের ভাণ্ড।
সমাপ্ত হইল এই কিষ্কিন্ধ্যার কাণ্ড।।