১৯. জটায়ুর মুখে সীতার বার্ত্তা শ্রবণ ও জটায়ুর স্বর্গলাভ

এইরূপে শ্রীরাম ভ্রমেণ চতুর্দ্দিকে।
রক্তে রাঙ্গা জটায়ুকে দেখেন সম্মুখে।।
পক্ষীকে কহেন রাম করি অনুমান।
খাইলি সীতারে তুই বধি তোর প্রাণ।।
পক্ষীরূপে আছিস রে তুই নিশাচর।
পাঠাইব এক বাণে তোরে যমঘর।।
সন্ধান পূরেন রাম তাকে মারিবারে।
মুখে রক্ত উঠে, বীর বলে ধীরে ধীরে।।
অন্বেষিয়া সীতারে পাইলে বহু ক্লেশ।
এই দেশে না পাইবে সীতার উদ্দেশ।।
সীতার লাগিয়া রাম আমার মরণ।
সীতাকে লইয়া লঙ্কা গেল সে রাবণ।।
দু ভাই তোমরা যবে নাহি ছিলা ঘর।
শূন্যঘর পাইয়া হরিল লঙ্কেশ্বর।।
আমি বৃদ্ধ যুদ্ধ করি রুদ্ধ করি তায়।
রাখিয়া ছিলাম রাম তোমার আশায়।।
দুই পাখা কাটিলেক পাপিষ্ঠ রাবণ।
মুখে রক্ত উঠে রাম যায় এ জীবন।।
ইতস্ততঃ ভ্রমণে নাহিক প্রয়োজন।
চিন্তা কর রাম যাতে মরিবে রাবণ।।
তোমার পিতার মিত্র, তোমা লাগি মরি।
আপনি মারিলে রাম কি করিতে পারি।।
প্রাণ আছে তোমারে করিতে দরশন।
সম্মুখে দাঁড়াও রাম দেখি একক্ষণ।।
আপনা নিন্দেন রাম জানি পরিচয়।
দুই ভাই রোদন করেন সাতিশয়।।
জটায়ু বলেন যত, লিখিব তা কত।
রামের নয়নে বহে বারি অবিরত।।
শ্রীরাম বলেন, পক্ষী তুমি মম বাপ।
কহিয়া সীতার বার্ত্তা দূর কর তাপ।।
রাবণের সঙ্গে মম নাহিক বৈরিতা।
বিনা দোষে হরিলেক আমার বনিতা।।
কোন্ বংশে জন্মে তার, বৈসে কোন্ পুরে।
কোন্ দোষে হরিলেক বল জানকীরে।।
অনেক শক্তিতে পক্ষী তুলিলেক মাথা।
কহিতে লাগিল শ্রীরামের সর্ব্বকথা।।
সংহারিলে চতুর্দ্দশ সহস্র রাক্ষস।
লক্ষ্মণ করেন সূর্পণখার অযশ।।
এই কোপে রাবণ হরিল জানকীরে।
রাখিল লঙ্কায় লয়ে সমুদ্রের তীরে।।
বিশ্বশ্রবা পুত্র সে রাবণ বড় রাজা।
বিধাতার বরেতে হইল মহাতেজা।।
কোন চিন্তা না করিহ, সম্বর ক্রন্দন।
জানকীরে উদ্ধারিবে মারিয়া রাবণ।।
তব পাদোদক রাম দেহ মোর মুখে।
সকল কলুষ নাশি যাই পরলোকে।।
এত বলি পক্ষীর মুখেতে রক্ত ভাঙ্গে।
কহিল সীতার বার্ত্তা শ্রীরামের আগে।।
মৃত্যুকালে বন্দে পক্ষী শ্রীরাম লক্ষ্মণ।
দিব্যরথে চাপি স্বর্গে করিল গমন।।
জটায়ুর মরণ শ্রবণে ধর্ম্মজ্ঞান।
কৃত্তিবাস গান ইহা শুনিয়া পুরাণ।।