• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

স্বাধীনতার রস

লাইব্রেরি » শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় » গল্পসংগ্রহ (শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়) » স্বাধীনতার রস

স্বাধীনতার রস

পনেরোই আগস্ট তোরবেলা একটা চায়ের দোকানে বসিয়া চা পান করিতেছিলাম। সারারাত্রি ছাপাখানার কাজ গিয়াছে; এই খানিকক্ষণ আগে খবরের কাগজ বাহির করিয়া দিয়া বাড়ি যাইতেছি; পথে এক পেয়ালা চা সেবন করিয়া লইতেছি।

রাত্রি বারোটায় যে মহোৎসব আরম্ভ হইয়াছিল তাহা এখনও নিঃশেষ হয় নাই, আকাশে বাতাসে তাহার রেশ লাগিয়া আছে। সারারাত্রি দারুণ উত্তেজনা গিয়াছে, তাই ক্লান্ত মস্তিষ্ক লইয়া ভাবিতেছিলাম, আজ যদি বঙ্কিমচন্দ্র বাঁচিয়া থাকিতেন। দেশবন্ধু বাঁচিয়া থাকিতেন! রবীন্দ্রনাথ বাঁচিয়া থাকিতেন!

বল হরি হরি বোল শব্দে চটকা ভাঙ্গিয়া দেখি রাস্তা দিয়া মড়া লইয়া যাইতেছে। আমার পাশের একটি টেবিলে দুইটি ছোকরা মুখোমুখি বসিয়া চা পান করিতেছিল। একজন দুঃখিতভাবে মাথা নাড়িয়া বলিল, ভদ্দরলোকের সইল না হে।

বাহিরের দিকে তাকাইয়া সচকিত হইয়া উঠিলাম। আমাদের কেষ্ট গামছা কাঁধে মড়ার অনুগমন করিতেছে। কেষ্ট ছাপাখানায় আমার অধীনে কাজ করে। কাল রাত দেড়টার সময় বাপের অসুখ বাড়ার খবর পাইয়া বাড়ি চলিয়া গিয়াছিল। তবে কি কেষ্টর বাবাই গেলেন নাকি?

তাড়াতাড়ি চায়ের দোকানের পাওনা চুকাইয়া রাস্তায় বাহির হইলাম। একটু পা চালাইয়া কেষ্টকে ধরিয়া ফেলিলাম, কি হে কেষ্ট?

কেষ্টর বাবাই বটে। দীর্ঘকাল পঙ্গু থাকিয়া কাল শেষ রাত্রে মুক্তিলাভ করিয়াছেন।

কেষ্ট ছেলেটা ভাল। তাহার সঙ্গে সঙ্গে শ্মশান অভিমুখে চলিলাম। যাইতে যাইতে কেষ্টর মুখে তাহার বাবা নবগোপালবাবুর জীবন ও মৃত্যুর যে ইতিহাস শুনিলাম তাহাই সংক্ষেপে বিবৃত করিতেছি।

.

আঠারো বৎসর পূর্বে নবগোপালবাবু এক বিলাতী সওদাগরী আপিসে বড়বাবু ছিলেন, সাংসারিক অবস্থা ভালই ছিল। তারপর তাঁহার রাহুর দশা পড়িল। একদিন আপিসের বড় সাহেবের সঙ্গে তাঁহার কথা কাটাকাটি হইল। সাহেব অত্যন্ত বদমেজাজী, উপরন্তু সেদিন দিনের বেলাই প্রচুর হুইস্কি টানিয়াছিল, সে নবগোপালবাবুকে লাথি মারিতে মারিতে বাহির করিয়া দিল।

নবগোপালবাবুর ব্লাডপ্রেসার ছিল। বাড়ি ফিরিয়া আসিয়া তিনি অজ্ঞান হইয়া পড়িয়া গেলেন। পক্ষাঘাতের প্রথম আঘাত। নবগোপালবাবু মরিলেন না বটে কিন্তু তাঁহার বাম অঙ্গ অসাড় হইয়া গেল। কিছুদিন বিছানায় কাটিল। তারপর ক্রমে তিনি লাঠিতে ভর দিয়া ঘরের মধ্যে অল্পস্বল্প ঘুরিয়া বেড়াইতে পারিলেন বটে কিন্তু তার বেশী নয়।

ছেলেরা তখন নাবালক, প্রথম কয়েক বছর খুবই দুর্দশা গেল। তারপর কেষ্ট ও তাহার বড় ভাই চাকরি পাইল। কায়ক্লেশে সংসার চলিতে লাগিল।

নবগোপালবাবু একটি ঘরে থাকিতেন। এই ধরনের রোগীরা যেরূপ হাঙ্গামা করে তিনি সেসব কিছুই করিতেন না। খাইতে দিলে খাইতেন, পঙ্গু শরীর লইয়া নিজের কাজ যতদূর সম্ভব নিজেই করিতেন। কেবল তাঁহার একটি অভ্যাস ছিল, পাশের বাড়ি হইতে ধার করা খবরের কাগজটি প্রত্যহ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পড়িতেন। কোনও দিন কাগজ না পাইলে তাঁহার ক্ষোভের সীমা থাকিত না।

কথা তিনি বড় একটা কাহারও সহিত বলিতেন না; কিন্তু মাঝে মাঝে রক্তের চাপ বাড়িলে একটু বকাবকি করিতেন। তাহাও ব্যক্তিগত নালিশ নয়, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। তাঁহার রাজনৈতিক বুদ্ধি খুব পাকা ছিল না, তাই মাথায় রক্ত চড়িলে বলিতেন, ভালমানুষের কাজ নয়, অহিংসাতে চিড়ে ভিজবে না—মেরে তাড়াতে হবে–ওদের লাথি মেরে তাড়াতে হবে

ক্রমে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ আসিয়া উপস্থিত হইল। নবগোপালবাবু কাগজ পড়িয়া উত্তেজিত হইয়া উঠিলেন—এইবার শালারা প্যাচে পড়েছে মারো মারো–লাথি মেরে দূর করে দাও

মহাযুদ্ধের ঘোলাটে বন্যা অনেক সাম্রাজ্যের ভিত ঢিলা করিয়া দিয়া চলিয়া গেল। ইংরেজ ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা দিতে প্রস্তুত হইল; যে ঐশ্বর্য শিথিল হস্ত হইতে আপনি খসিয়া পড়িতেছে। তাহাই দান করিয়া যশস্বী হইতে চাহিল।

নবগোপালবাবু কিন্তু ভয় পাইয়া গেলেন। ইংরেজ সত্যই স্বাধীনতা দিবে ইহা বিশ্বাস করা শক্ত। হয়তো ভিতরে কোনও শয়তানি আছে। স্বেচ্ছায় চলিয়া যাইতেছে ইহাও তাঁহার মনঃপূত নয়…

তারপর বহু বাধা-বিপত্তির ভিতর দিয়া চৌদ্দই আগস্ট আসিল। নবগোপালবাবু তন্নতন্ন করিয়া খবরের কাগজ পড়িলেন। না, স্বাধীনতাই বটে। কিন্তু—

রাত্রি বারোটার সময় চারিদিকে শাঁখ বাজিয়া উঠিল, মেয়েরা হুলুধ্বনি দিতে লাগিল। রাস্তায় রাস্তায় লোক গমগম করিতেছে, বিদ্যুতের আলোয় চারিদিক দিনের মতো হইয়া গিয়াছে।

নবগোপালবাবু নিজের ঘরে জাগিয়া শুইয়া ছিলেন। হঠাৎ তিনি শয্যা হইতে উঠিয়া লাঠি হাতে ঠক্ ঠক্ করিয়া রাস্তায় বাহির হইলেন।

রাস্তায় দলে দলে লোক চলিয়াছে, চিৎকার করিতেছে—জয় হিন্দ! বন্দে মাতরম্! গান গাহিতেছে কদম কদম বাড়ায়ে যা—

নবগোপালবাবু লাঠিতে ভর দিয়া ফুটপাথে দাঁড়াইয়া দেখিতে লাগিলেন, তাঁহার গাল বাহিয়া চোখের জল গড়াইয়া পড়িতে লাগিল।

বাড়ির ভিতর হইতে তাঁহার স্ত্রী তাঁহাকে ফিরিয়া আসিবার জন্য অনুনয় করিতে লাগিলেন, কিন্তু নবগোপালবাবু কর্ণপাত করিলেন না।

হঠাৎ তিনি দেখিলেন, নাবিকের বেশ পরিহিত একটা গোরা রাস্তা দিয়া আসিতেছে। নবগোপালবাবুর মাথায় রক্ত চড়িয়া গেল। নাবিকটা পাশ দিয়া যাইবার সময় তিনি তাহাকে একটা লাথি মারিলেন।

লাথিতে বিশেষ জোর ছিল না, নবগোপালবাবু নিজেই পড়িয়া গেলেন। গোরা নাবিক লাথি খাইতে অভ্যস্ত নয়, সে ঘুষি বাগাইয়া ফিরিয়া দাঁড়াইল। কিন্তু এই সময় রাস্তার কয়েকজন লোক দেখিতে পাইয়া হৈ হৈ করিয়া ছুটিয়া আসিল। নাবিক বেগতিক বুঝিয়া হাতের ঘুষি সম্বরণপূর্বক দ্রুতবেগে প্রস্থান করিল।

নবগোপালবাবুকে ধরাধরি করিয়া বাড়ির ভিতর আনা হইল। কিন্তু তিনি তখন অজ্ঞান।

তাঁহার আর জ্ঞান হইল না; শেষ রাত্রির দিকে তিনি মারা গেলেন।…

চায়ের দোকানের আক্ষেপ মনে পড়িল,—ভদ্দরলোকের সইল না হে! নূতন স্বাধীনতার রস বড় উগ্র। নবগোপালবাবু সহ্য করিতে পারেন নাই। এখন আমাদের সহ্য হইলে হয়।

১ চৈত্র ১৩৫৪

Share on FacebookShare on TwitterShare on WhatsAppShare on TelegramShare on SMS
Category: গল্পসংগ্রহ (শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়)
পূর্ববর্তী:
« স্বর্গের বিচার
পরবর্তী:
স্মর-গরল »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑