• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

২১. সান্তাক্রুজ এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করে

লাইব্রেরি » নিমাই ভট্টাচার্য » ডিপ্লোম্যাট » ২১. সান্তাক্রুজ এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করে

অনেক দিন পর সান্তাক্রুজ এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করে বেশ ভালো লাগল। হাজার হোক ভারতবর্ষ! নিজের দেশ! বহুদিন ধরে বহু দেশ ঘুরে নিজের দেশে ফিরে এলে সবারই ভালো লাগে।

কেবিনের অন্যান্য প্যাসেঞ্জারেরা চলে যাবার পর আস্তে আস্তে তরুণ উঠল। উপরের র‍্যাক থেকে ওভারকোটটা হাতে নিল। ব্রিফকেসটাও তুলে নিল আরেক হাতে।

গ্যাংওয়ের মুখে এয়ার হোস্টেস সারা রাত্রির ক্লান্তি সত্ত্বেও একটু হাসল। গুডবাই স্যার।

তরুণ অন্যমনস্কভাবেই উত্তর দিল, বাই।

যমুনা এসেছিল এয়ারপোর্টে।

কাস্টমস এনক্লোজারের বাইরে দাঁড়িয়েছিল কিন্তু তরুণ চিনতে পারেনি। চিনবে কেমন করে? সেই ছোট্ট যমুনা যে এত বড় হয়ে গেছে, ভাবতে পারেনি।

যমুনাই দৌড়ে গিয়ে ডাকল, আংকেল, আই অ্যাম হিয়ার।

তুমি যমুনা?

যমুনা হাসতে হাসতে বললো, কেন, সন্দেহ হচ্ছে?

না। তবে তুমি কত বড় হয়ে গেছ!

যাদের ছোট্ট দেখা যায়, দেখা যায় হামাগুড়ি দিতে, টফি চকোলেট-আইসক্রীম নিয়ে মারামারি করতে, অনেক দিনের অদর্শনের পর তাদের বড় দেখলে ভালো লাগে। সেই বহু দূরের একটা ছোট্ট স্বপ্ন যেন বাস্তবে দেখা দেয়।

যমুনাকে দেখতে দেখতে তরুণের সারা মুখে একটা তৃপ্তির হাসি ছড়িয়ে পড়ল।

নো আংকেল, আই ওয়াজ নট এ কিডি হোয়েন ইউ স মি লাস্ট। আমি তখন ক্লাস এইটে পড়তাম।

শুধু দুপুরটা বোম্বেতে কাটিয়েই আফটারনুন ফ্লাইটে যমুনাকে নিয়ে দিল্লি এলো তরুণ। পালাম থেকে সোজা গেল পুসা রোডে, যমুনার দাদুর বাড়িতে! বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নাতনীকে পেয়ে ভীষণ খুশি হলেন। তরুণকে ধন্যবাদ জানালেন। ওদের ওখানেই থাকবার জন্য বার বার অনুরোধ করলেন।

কাইন্ডলি অত অনুরোধ করবেন না। আই অ্যাম কমিটেট টু স্টে উইথ এ ফ্রেন্ড অফ মাইন।

বিদায় নেবার আগে যমুনাকে বললে, দাদু-দিদিমাকে বেশি জ্বালাতন করো না। দরকার হলে আমাকে টেলিফোন করো!

তরুণ আর দেরি করল না। সোজা চলে গেল বড়ুয়ার ওখানে।

বড়ুয়া বড় পুরনো বন্ধু। বার্লিনে বসেই ওর অ্যাকসিডেন্টের খবর পেয়েছিল। শুধু উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে চিঠি লিখেছিল, আর কিছু করতে পারেনি।

বড়ুয়া একটা গার্ডেন চেয়ারে বসে লনে অপেক্ষা করছিল তরুণের জন্য। ট্যাক্সি এসে থামতেই চিৎকার করল, রানি, এসে গেছে।

রানি ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে এসে বলল, মাই গড! এত দেরি করলেন?

এত দেরি কোথায়? যমুনাকে নামিয়ে দিয়েই তো চলে এলাম।

তরুণ তাড়াতাড়ি গিয়ে বড়ুয়াকে জড়িয়ে ধরল। এখন কেমন আছ?

একটু একটু হাঁটা-চলা করছি।

রানি বলল, ও তো এয়ারপোর্টে যাবে বলে ভীষণ জিদ ধরেছিল…

তরুণ বলল, যেতে দাওনি তো?

আমার কথা কি শোনে? ডক্টর স্টপড় হিম গোয়িং।

পম্পি কোথায়?

বড়ুয়া বলল, এক্সকারসানে গেছে। তিন-চারদিন পর ফিরবে।

রাত্রে ডিনারের পর অনেক গল্প হলো। কলহান, মিশ্র, ট্যান্ডন, হাবিব, দেশাই ও কতজনের কথা।

অনেক কথার শেষে বড়ুয়া বলল, এখন তো তুমিই সব চাইতে ওয়াইডলি ডিসকাসড় ডিপ্লোম্যাট।

তার মানে?

রানি মাঝখান থেকে মন্তব্য করল, সত্যি দাদা, সারা মিনিস্ট্রি আপনাকে নিয়েই মেতে উঠেছে।

বড়ুয়া বলল, হ্যাটস্ অফ টু ইন্দ্রাণী। একটা বাঙালি মেয়ে দুটো গভর্নমেন্টকে নাচিয়ে দিল।

হোয়াট ডু ইউ মিন?

আর হোয়াট ডু ইউ মিন-এর টাইম নেই। গেট রেডি ফর এ গ্রেট সেলিব্রেশন।

তরুণ অত আশাবাদী হতে পারে না, ডোন্ট বি ওভার-অপটিমিসটিক।

ডান পা-টা আস্তে আস্তে একটা ছোট্ট মোড়ার উপর তুলে বড়ুয়া বলল, তরুণ, আই নো পাকিস্তান বেটার দ্যান ইউ।

তা তো বটেই।

ইন্দ্রাণীর খবর যদি খারাপ হতো, তাহলে পাকিস্তান এত ঝামেলার মধ্যে যেত না…

উদগ্রীব হয়ে বড়ুয়ার কথা শোনে তরুণ। তার মানে?

ইফ ইট ওয়াজ এ হোপলেস কেস, তাহলে ওরা সোজা বলে দিত ইন্ডিয়াতে চলে গেছে। দেন দি বল উড হ্যাভ বিন ইন আওয়ার কোর্ট।

নানা কারণে ইন্দ্রাণীর কেসটায় ওরা ইন্টারেস্ট নিচ্ছে কিন্তু…

ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া হাউ সুইটলি দে ক্যান অ্যাক্ট ইন সাম কেসেস।

তাতে কি হলো?

আমার মনে হয় ওরা ইন্দ্রাণীর সব খবর পেয়ে গেছে এবং এখন আস্তে আস্তে আমাদের সব খবর জানবে।

তাতে কি লাভ?

ওরা বোঝাবে যে আমাদের একজন ডিপ্লোম্যাটের জন্য কত কি করল।

ডু ইউ থিংক সো?

একশোবার।

পরের দিন সকালে সাউথ ব্লকে মিনিস্ট্রিতে গেলে পাকিস্তান ডেস্কের অনেকেই একথা বললেন।

ওয়েস্টার্ন ইউরোপিয়ান ডেস্কে তরুণ নিজের কাজকর্ম নিয়ে বেশ একটু ব্যস্ত হলেও পাকিস্তান ডেস্কে যাতায়াত করতে হতো নানা কারণে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জয়েন্ট ডিকাসনও হতো।

একদিন এমনি ডিকাসনের সময় জয়েন্ট সেক্রেটারি বললেন, ইন্দ্রাণীকে পাবার পরই নিজেদের বোনাফাইডি প্রমাণ করার জন্য পাকিস্তান নিশ্চয়ই একটা দারুণ প্রোপাগাণ্ডা শুরু করবে।

উপস্থিত অফিসাররা অস্বীকার করতে পারলেন না এমন সম্ভাবনা।

তরুণ ওদের আলাপ-আলোচনায় বেশ একটু অবাক হয়। সারা মিনিস্ট্রির প্রায় সবাই ধরে নিয়েছে, ইন্দ্রাণীকে পাওয়া যাবেই।

কিন্তু?

তরুণের অনেক প্রশ্ন, অনেক সংশয়। ইন্দ্রাণীকে পাওয়া গেলেও কি তাতে গ্রহণ করা সম্ভব হবে? তরুণ গ্রহণ করতে চাইলেও তার পক্ষে অসম্ভব হবে না তো?

জয়েন্ট সেক্রেটারি তো দূরের কথা, অন্যান্য কাউকেই এসব কথা বলতে পারে না, জানাতে পারে না, বোঝাতে পারে না। চুপ করে ওদের কথা শোনে, মুখে কিছু বলে না।

মনের মধ্যে অনেক সংশয়, অনেক দ্বিধা সত্ত্বেও দিল্লিতে আসার পর তরুণের মনটা একটু যেন জড়তামুক্ত হলো। একটু যেন আশাবাদী হলো।

হবে না? হাজার হোক এতগুলো মানুষ যে ইন্দ্রাণীকে খুঁজে বার করার কাজে মেতে উঠেছে তা দেখে তরুণ একটু স্বস্তি পায়। বহুদিন বহুজনের সেবাযত্ন পাবার পরও যদি কোনো রোগী রোগমুক্ত না হয়, যদি সে এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে বিদায় নেয়, তবুও একটা সান্ত্বনা থাকে। তেমনি এতগুলো মানুষের এত দিনের প্রচেষ্টার পরও যদি ইন্দ্রাণীকে…

না না, তা হয় না। যুক্তি-তর্ক করে অন্যকে বোঝান যায়, সান্ত্বনা জানান যায়। নিজের বেলায়? নৈব নৈব চ।

ইতিমধ্যে করাচি থেকে আর একটা মেসেজ এলো দিল্লিতে।…উই হ্যাভ চেক আপ আওয়ার রেকর্ডস…। পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টে তদন্ত করে জানা গেল আজ পর্যন্ত সাতজন মৈনুল ইসলামকে পাশপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে ও তাদের মধ্যে পাঁচজন বিদেশ গিয়েছেন। দু জন মৈনুল ইসলাম পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে আছেন এবং এদের একজন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের, বাট কারেন্টলি ওয়ার্কিং ইন ফরেন সার্ভিস। উই আর কনটাকটিং অল অফ দেম।…

ওই মেসেজেই আর একটা খবর ছিল।…মিস গুহের পাশপোর্টের রেকর্ড থেকে জানা গেছে ওঁর পায়ের পাতায় নাকি স্টি করার চিহ্ন আছে। কাইন্ডলি চেক আপ উইথ মিঃ সেনগুপ্ত এবং একটু তাড়াতাড়ি খবরটার সত্যতা আমাদের জানালে ভালো হয়।

মেসেজটা ডি-সাইফার হয়ে পাকিস্তান ডেস্কে এসেছিল সন্ধ্যার দিকে। ডেপুটি সেক্রেটারি সঙ্গে সঙ্গে মিনিস্ট্রিতে তরুণের খোঁজ করেছিলেন কিন্তু পাননি। একটু পরেই বড়ুয়া ওখানে ফোন করলেন।

তরুণ, হিয়ার ইজ অ্যান আর্জেন্ট মেসেজ ফ্রম করাচি এবং আজ রাত্রেই উত্তর দিতে হবে।

করাচি থেকে আর্জেন্টে মেসেজের কথা শুনতেই তরুণ যেন একটু অস্থির হয়ে উঠল। সারা শরীরের রক্ত যেন হুড়মুড় করে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিল! কিছু বুঝতে দিল না। ডেপুটি সেক্রেটারিকে বলল, হ্যাঁ, ওর ডান পায়ে স্টি করার চিহ্ন ছিল।

থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।

নট অ্যাট অল। বরং কষ্ট করে আমাকে ফোন করার জন্য আমিই আপনাকে ধন্যবাদ জানাব।

মেসেজটা শোনার পর আবার পুরনো দিনের কথা মনে পড়ল।

তখন ও ক্লাস টেন-এ পড়ে। নতুন শাড়ি পরা শুরু করেছে। ব্লেড দিয়ে পায়ের নখ কাটতে কাটতে হঠাৎ হাওয়ায় শাড়ির আঁচলটা বুঝি উড়ে পড়ে সামনের দিকে। এক ঝাঁকুনি দিয়ে শাড়িটা সরাতে গিয়ে ব্রেডটা বসে যায় পায়ের পাতায়। উঃ! কি রক্ত পড়েছিল। পাঁচটা কি ছটা স্টি করতে হয়েছিল।

ইন্দ্রাণী তখনও বিছানায় শুয়ে। ওঠা-নামা একেবারেই বন্ধ। একদিন তরুণ বলেছিল, তোমার শাড়ি পরার কি দরকার?

সে কথা তোমাকে বোঝাতে হবে? পাল্টা প্রশ্ন করেছিল ইন্দ্রাণী।

আমাকে ছাড়া আর কাকে বোঝাবে?

তোমাকে কোনোদিনই বুঝতে হবে না।

অনেক দিন পর আজ আবার সেসব কথা মনে পড়ল। একটু বিবর্ণ হয়ে গেল তরুণের মন।

রানি একটু ইসারা করল বড়ুয়াকে।

কে ফোন করল? জানতে চাইল বড়ুয়া।

ডি-এস (পাকিস্তান)।

আইডেনটিফিকেশন মার্ক ভেরিফাই করল বুঝি?

হ্যাঁ।

বড়ুয়া একটু হাসল। আপন মনেই বলল, পাকিস্তানিদের ঢং দেখে হাসি পায়!

তার মানে?

সব খবর-টবর হাতের মুঠোয় থাকার পরও এইসব ন্যাকামির কোনো মানে হয়?

একটু হেসে বড়ুয়া আবার বলে, ব্রাদার, গেট রেডি। শুধু প্রভিডেন্ট ফান্ডের কয়েক হাজার টাকা অ্যাভান্স নিলেই চলবে না। বেশ কিছু খসাতে হবে। নইলে কেউ তোমাকে ছাড়বে না।

শুধু বড়ুয়া বা রানি নয়, মিনিস্ট্রির অনেকেই সে কথা বললেন, তরুণ, আমাদের ফাঁকি দেবার চেষ্টা করো না কিন্তু।

না না, ফাঁকি দেব কেন?

ডোন্ট প্রমিস্ লাইক এ প্রমিসিং ডিপ্লোম্যাট।

শুধু অফিসাররাই নয়, মিনিস্ট্রির নানা ডিপার্টমেন্টের অনেক পরিচিত কর্মচারীও বললেন, দাদা, শুধু আপনি বলেই আমরা এত খাটছি।

থ্যাংক ইউ।

নো নো দাদা, শুধু থ্যাংক ইউ বললেই চলবে না।

সবার মুখেই ওই এক কথা। শুনতেও যেন ভালো লাগে।

দিনগুলো বেশ ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কেটে গেল। যমুনাকে দেখতে যেতেও পারেনি। আর মাত্র দুটি দিন হাতে। সেদিন মিনিস্ট্রি থেকে যমুনাকে টেলিফোনে জানিয়ে দিল, বিকেলের দিকে ঠিক হয়ে থাকবে। আমি গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসব।

লাঞ্চের সময় রানিকে বলল, আজ বিকেলে যমুনাকে নিয়ে আসব। একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ডিনার খাইয়ে দিয়ে আসব।

রানি বলল, ঠিক আছে।

আমি তোমাদের গাড়িটা রেখে যাচ্ছি। তুমি পম্পিকে আনার পর চলে এসো অফিসে। তারপর দুজনে মিলে যমুনাকে আনতে যাব।

রানি কিছুতেই গাড়ি রাখতে রাজি হলো না। বড়ুয়াও বারণ করল, না না, তুমি গাড়ি নিয়ে যাও। যমুনাকে আনতে যাবার আগে রানিকে তুলে নিও অথবা ও ট্যাক্সি নিয়েই সাউথ ব্লকে পৌঁছে যাবে।

সেদিন যমুনাকে নিয়ে আর পরের দিন মিনিস্ট্রির সবার কাছ থেকে বিদায় নিতে নিতেই কেটে গেল। একবার ফরেন সেক্রেটারির সঙ্গেও দেখা করল। রাত্রে তরুণের অনারে বড়ুয়া আর রানি ডিনার দিল।

.

দিল্লি ত্যাগ করার সময় মনটা ভীষণ খারাপ লাগছিল তরুণের। এত বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী, সহকর্মী ছেড়ে যেতে বড় কষ্ট হচ্ছিল। তাছাড়া মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই বেশ বুঝতে পেরেছে, ওরা সবাই ওকে কত ভালোবাসে, শুভ কামনা করে।

বড়ুয়া পর্যন্ত এসেছিল পালামে বিদায় জানাতে। অনেক বারণ করা সত্ত্বেও বাধা মানেনি। বলেছিল, রানিই তো ড্রাইভ করবে, সুতরাং আমার যেতে আপত্তি কি?

বড়ুয়ার হাত দুটো জড়িয়ে ধরে তরুণ বিদায় নিল। পম্পিকে একটু বুকের মধ্যে টেনে নিল। রানির মাথায় একটু হাত বুলিয়ে শুধু বলেছিল, চলোম। চিঠি লেখো।

সবার চোখই ছলছল করছিল! কথাবার্তা বিশেষ কেউই বলতে পারল না।

যমুনা পাশে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিল কিন্তু মুখে কিছু বলেনি।

প্লেনটা পালামের মাটি ছেড়ে অনেক দূরে উড়ে যাবার পরও তরুণ উদাস দৃষ্টিতে বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েছিল। কেবিন হোস্টেস কফি দেবার পর দৃষ্টিটা গুটিয়ে আনল ভিতরে।

যমুনা বলেছিল, আপনি ওদের সবাইকে খুব ভালোবাসেন তাই না?

মাথাটা একটু নাড়িয়ে তরুণ বলল, ওরাই আমাকে ভালোবাসে।

কফি শেষ করে যমুনা আবার জিজ্ঞাসা করে, আংকেল, আপনি তো লন্ডনে ট্রান্সফার হচ্ছেন।

হ্যাঁ!

আমি কিন্তু উইক-এন্ডে আপনার কাছে চলে আসব।

তুমি এলে তো আমি খুশিই হবো।

আপনি একটু বাবাকে বলে রাখবেন।

তরুণ হাসে। বলব।

পম্পি, যমুনার মতো বন্ধু-বান্ধব-সহকর্মীদের ছেলেমেয়েদের কাছে পেলেই তরুণের মনে আসে অনেক কথা, অনেক স্বপ্ন। ইন্দ্রাণীকে পেলে ওরও ছেলেমেয়ে এতদিনে বড় হতো, লেখাপড়া করত। ভাবে, ইন্দ্রাণীর মেয়ে হলে এই পম্পি-যমুনার মতোই দেখতে সুন্দর হতো, বুদ্ধিমতী হতো।

স্বপ্ন দেখতে দেখতে মন উড়ে যায় সীমাহীন অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে। প্লেন ছুটেছে তেহেরানের দিকে। ফ্রাঙ্কফুর্টের আগে এই একটাই স্টপেজ। সেই তেহেরানও পার হয়ে গেল। পার হলো আরো কত দেশ-দেশান্তর।

অ্যাম্বাসেডর সস্ত্রীক ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্টে এসেছিলেন যমুনাকে রিসিভ করতে। দুজনেই বার বার ধন্যবাদ জানালেন তরুণকে।

একথা বলে লজ্জা দেবেন না, স্যার। দিল্লিতে এত ব্যস্ত ছিলাম যে যমুনাকে নিয়ে একটুও ঘুরতে পারিনি।

হঠাৎ মাঝখান থেকে যমুনা বলে উঠল, বাট আংকেল, দ্যাট ডে উই অল এনজয়ে ভেরি মাচ।

অ্যাম্বাসেডর হাসতে হাসতে বললেন, তরুণ, ডিপ্লোম্যাট হয়েও হেরে গেলে। ক্যাট ইজ আউট অফ দি ব্যাগ।

একটু পরেই প্যান অ্যামেরিকানের বার্লিন ফ্লাইট। তরুণ সেই প্লেনেই যাবে। অ্যাম্বাসেডরের পার্সেন্যাল অ্যাসিসট্যান্ট তরুণের লগেজ ট্রান্সফার চেক করতে ও বোর্ডিং কার্ড আনতে চলে গেল। সেই অবসরে অ্যাম্বাসেডর আর তরুণ একটু দূরে গিয়ে কিছু গোপন কথাবার্তা বললেন।

তরুণের প্লেন ছাড়ার আগে অ্যাম্বাসেডর বললেন, যমুনাকে পৌঁছে দিতে হয়তো আমিই লন্ডন আসব! আই মাইট স্টে উইথ ইউ।

আই উইল বি গ্রেটফুল ইফ ইউ প্লিজ।

বার্লিন বাসের মেয়াদ মাত্র দুটি দিন। ফেয়ারওয়েল লাঞ্চ-ডিনারের জন্যই ওই দুটো দিন হাতে রেখেছিল তরুণ। আর কোনো কাজ নেই। লগেজের ঝামেলা ওর কোনো কালেই নেই। কিছু জামা-কাপড়, বই-পত্তর আর একটা মুভি ছাড়া আর কিছু নেই ওর। মিঃ দিবাকর সেসব কদিন আগেই পাঠিয়ে দিয়েছেন লন্ডনে।

প্রথম দিন দুপুরে কলিগদের লাঞ্চ, রাত্রে ট্যান্ডন সাহেবের ডিনার হলো। পরের দিন তরুণ ঘুরে ঘুরে সমস্ত কলিগদের বাড়ি গেল, বিদায় নিল, শুভেচ্ছা বিনিময় করল। রাত্রে কনসুলেটেই ও ডিনার দিল ট্যান্ডনদম্পতি ও অন্যান্য সব কলিগদের জন্য।

সমস্ত কর্মজীবন ধরে বার বার যে দৃশ্যটির মুখোমুখি হতে হয়, সেই দৃশ্যটি আবার হাজির হলো। সবার মনই ভারি, চোখগুলো সবারই যেন একটু চচক করছে। মুখে কারুরই বিশেষ কথাবার্তা নেই। একেবারে শেষ মুহূর্তে তরুণের কাঁধে একটা ছোট ঝাঁকুনি দিয়ে মিঃ ট্যান্ডন বললেন, বেস্ট অফ লাক।

থ্যাংক ইউ স্যার। কলিগদের দিকে ফিরে বলল, থ্যাংক ইউ অল।

.

ব্রিটিশ ইউরোপীয়ন এয়ারওয়েজের প্লেনটা লন্ডন এয়ারপোর্টের উপর ঘুরবার সময় বন্দনা-বিকাশের কথা মনে হতেই একটু ভালো লাগল। ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়েই যেমন সূর্যরশ্মি বেরিয়ে আসে, তেমনি অনেক খুশির মধ্যেও দিল্লি বার্লিনে এয়ারপোর্টের দৃশ্য বার বার মনে পড়ল।

টার্মিনাল বিল্ডিং-এ ঢুকতে গিয়েই তরুণ উপরে ভিজিটার্স গ্যালারীর দিকে তাকাল। হ্যাঁ, বন্দনা আর বিকাশ আনন্দে উল্লাসে হাসতে হাসতে দু হাতই নাড়ছে। হাই-কমিশনের কয়েকজন বন্ধু ও কর্মচারীও এসেছিলেন।

হাই-কমিশনের একজন স্টাফ কাস্টমস এনক্লোজারে গিয়ে ফার্স্ট সেক্রেটারি-ডেজিগনেট এসেছেন জানাতেই সঙ্গে সঙ্গে তরুণের মালপত্র ছেড়ে দিলেন ওঁরা।

বাইরে আসতেই বন্দনা টিপ করে একটা প্রণাম করল। দেখলে দাদা, শেষ পর্যন্ত আমার কথাই ঠিক হলো।

পুরনো বন্ধু মিঃ মানি বললেন, ফিরে এসে বাঁচালে!

কেন?

ছেলেমেয়েকে তোমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে একটু ফুর্তি করা যাবে।

তরুণ হাসতে হাসতে জবাব দেয়, সারা জীবনই কি তোমাদের আয়াগিরি করব?

হাই-কমিশনের একজন স্টাফ জিজ্ঞাসা করলেন, স্যার, লগেজ গাড়িতে রেখে দিয়েছি। আপনি এখন আপনার অ্যাপার্টমেন্টে যাবেন তো?

হ্যাঁ।

বন্দনা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করল, সে কি দাদা? আগে আমার ওখানে চলো।

তার চাইতে তোমরা আমার সঙ্গে চলো। একটু দেখে শুনে নিয়ে তারপর তোমার ওখানে যাব।

বিকাশ বলল, হ্যাঁ, তাই ভালো।

তরুণ বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠল। বন্দনা বিকাশও উঠল।

লন্ডনের জীবনটা বেশ ভালোই শুরু হলো। অফিসে কাজকর্মের চাপ বেশি হলেও ভালো লাগে। তাছাড়া বেশ ইন্টারেস্টিং। প্রথম তিন চারদিন তো নিশ্বাস ফেলার অবকাশ পেল না। লাঞ্চেও বেরুত না, উপরের রেস্তোরাঁ থেকে কিছু আনিয়ে খেত! অফিস থেকে বেরুতে বেরুতেও অনেক দেরি হতো। সাড়ে সাতটা-আটটা বেজে যেত।

টুকটাক কিছু মার্কেটিং করার ছিল। সেদিন একটু তাড়াতাড়ি বেরুবে বলে ঠিক করেছিল। কিন্তু অফিস থেকে বেরোবার আগেই হঠাৎ একটা টেলিফোন এলো, তরুণ, আমি ওবেদুর।

ওবেদুর যে এখনও লন্ডনে আছে, তা ও ভাবতে পারেনি। অপ্রত্যাশিত এই টেলিফোন পেয়ে ভীষণ খুশি হলো, আমি ভাবতেই পারিনি তুমি এখনই লন্ডনেই আছ।

হালারা ট্রান্সফার করার চেষ্টা করছিল।

এতদিন পরেও পূর্ববঙ্গের পোলাদের ওরা চেনেনি?

হালারা চেনে বলেই তো আমাদের একটু দূরে দূরে রাখে।

ওবেদুর একটু থেমে বলে, আজ আমাদের এক বন্ধুর বাড়িতে গান-বাজনা আছে। তুমি নিশ্চয়ই যাবে। আইদার ইউ কাম টু মাই অফিস অর আই উইল কাম ডাউন টু পিক ইউ আপ।

ভাই আজকে মাপ করো। আজকে আমার একটু জরুরি কাজ আছে, কদিন একেবারেই সময় পাইনি।

এক্ষুনি একজনের কাছে শুনলাম তুমি এসেছ এবং সঙ্গে সঙ্গেই টেলিফোন করেছি। আর তুমি আমার ফার্স্ট রিকোয়েস্টই…

তরুণ বাধা দিয়ে বলল, আঃ! এসব কথা বলছ কেন? তোমার সঙ্গে আমার সেই সম্পর্ক?

এবার ওবেদুর সোজা হুকুম করে, দেন প্লিজ ডোন্ট আরণ্ড এনি মোর। তুমি সাতটা নাগাদ আমার এখানে আসছ তো?

ওবেদুর রহমান ময়মনসিং-এর ছেলে। তবে তরুণের সমসাময়িক। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার লাইনসের লন্ডন অফিসের ম্যানেজার বহুদিন ধরে। বাঙালি ছেলেমেয়েদের নিয়ে পাগলামি করতে ওর জুড়ি নেই লন্ডনে। তরুণের সঙ্গে বেশ গভীর বন্ধুত্ব হয়েছিল গতবার। এমন বন্ধুবৎসল উদার মানুষ টেম-এর পাড়ে দুর্লভ। কিছুতেই না করতে পারল না। তাছাড়া এতকাল বার্লিনে থেকে বাঙালির আড্ডাখানা ভুলতে বসেছে।

একে আড্ডার লোভ, তারপর ওবেদুরের অনুরোধ। তরুণ রাজি হয়ে গেল।

ঠিক আছে।

অফিস থেকে বেরুবার আগে বন্দনাকে টেলিফোন করে বলল, আমি ওবেদুরের সঙ্গে এক ঘরোয়া জলসায় যাচ্ছি। নিশ্চয়ই রাত হবে। তুমি আমার জন্য কিছু খাবার-দাবার রেখো।

কোথায় যাচ্ছ, দাদা?

ঠিক জানি না। ওবেদুরেরই এক বন্ধুর বাড়ি।

অফিস থেকে বেরুবার মুখে হঠাৎ একটা কাজ এসে গেল।

বেরুতে বেরুতেই সাতটা বেজে গেল। ওবেদুরের ওখানে পৌঁছতেই ও চিৎকার শুরু করে দিল, আড্ডা দিতেও কেউ লেট করে?

একটা মুহূর্ত দেরি করল না ওবেদুর। চলো চলে, গাড়িতে ওঠ। আরেক দিন এসে কফি খেও।

উঠতে না উঠতেই ওবেদুরের অস্টিন-কেম্ব্রিজ টপ গিয়ারে ছুটতে শুরু করল। আশেপাশের আর সব গাড়িকে ওভারটেক করে এমন স্পিডে গাড়ি ছুটছিল যে তরুণ ওবেদুরের সঙ্গে বিশেষ কথাবার্তা বলারই কোনো সুযোগ পেল না। টটেনহাম কোর্ট ছাড়াবার পর তরুণ শুধু জানতে চাইল, আমরা কোথায় যাচ্ছি?

ওবেদুর শুধু বলল, এইত সামনেই হোবনে।

হোবর্ন টিউব স্টেশন পার হবার পরই ডানদিকে গাড়ি ঘুরল। আবছা আলোয় তরুণ বুঝতে পারল না কোন রাস্তায় ঢুকল। শত খানেক গজ যাবার পরই অনেকগুলো গাড়ি নজরে পড়ল। ওই গাড়িগুলোরই একটু ফাঁকে ওবেদুর গাড়ি ঢুকিয়ে ব্রেক করল।

দুজনেই নেমে পড়ল। গাড়ির চাবিটা পকেটে পুরেই সিগারেট বের করল ওবেদুর। দুজনেই সিগারেট ধরিয়ে দু-চার পা এগিয়েই একটা কর্নারের বাড়িতে এলো। সামনের ঘরেই একদল বাঙালির জটলা। দরজার গোড়াতেই ভিতরের দিকে মুখ করে আরেকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন এক ভদ্রলোক।

ওবেদুর ডাক দিল, মৈনুল, তোমাগো ঢাকার এক পুলাকে লইয়া…

ঢাকার মৈনুল শুনতেই তরুণের সারা শরীরের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎপ্রবাহ বয়ে গেল।

মৈনুল এদিকে মুখ ফেরাতেই তরুণ ওর মুখের আঁচিলটা দেখেই চিৎকার করে উঠল, মৈনুল!

এক পলকের জন্য মৈনুল হকচকিয়ে থতমত হয়ে গেল। পর মুহূর্তেই সারা লন্ডন শহরটাকে চমকে দিয়ে চিৎকার করল, আম্মাজান, ইন্দ্রাণী! তরুণ আইছে।

দুজনে দুজনকে জাপটাজাপটি করে জড়িয়ে ধরল।

মৈনুলের চিৎকার শুনে ওবেদুর থেকে শুরু করে সারা ঘরভর্তি মানুষগুলো মুহূর্তের জন্য প্রাণহীন পাথরের স্ট্যাচুর মতো স্তব্ধ হয়ে গেল। ভিতর থেকে ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে এলেন বুড়ী আম্মাজান আর ইন্দ্রাণী।

ইন্দ্রাণী!

আম্মাজান!

তরুণ যেন বিশ্বাস করতে পারে না নিজের চোখ দুটোকে।

আম্মাজান হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে তরুণকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ভাবি নাই তোমার দেখা পামু। মাইয়াটাকে লইয়া সারা দুনিয়া ঘুরছি তোমার দেখা পাওনের জন্য।

তরুণ স্তব্ধ হয়ে আম্মাজানকে জড়িয়ে ধরে।

হঠাৎ আম্মাজান নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ইন্দ্রাণীর হাতটা ধরে একটা টান দিয়ে তরুণের পায়ের কাছে ফেলে দিয়ে বললেন, বাবা, মাইয়াটাকে তুইলা লও। ওর কষ্ট আর চোখে দেখা যায় না।

তরুণ মাটিতে বসে পড়ে। ইন্দ্রাণীকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগল। সব কিছু কয়েকটা মুহূর্তের মধ্যে ঘটে গেল।

মৈনুল আবার হঠাৎ চিৎকার করে উঠল, ওরে তোরা চুপ কইরা থাকিস ক্যান? গান শুরু কর। মিষ্টি লইয়া আয়। আজ আমার ইন্দ্রাণীর বিয়া হইব।

Category: ডিপ্লোম্যাট
পূর্ববর্তী:
« ২০. কিছু কিছু চরম মুহূর্ত

Reader Interactions

Comments

  1. kibriya

    October 27, 2019 at 11:05 pm

    harry potter er boi chai

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑