১৬. অ্যাম্বাসেডরের টেলিফোন পেয়ে

অ্যাম্বাসেডরের টেলিফোন পেয়ে কাউকে খবর না দিয়েই বার্লিন ত্যাগ করেছিল তরুণ। বন-এ থাকবার সময়ও অবসর পায়নি কাউকে চিঠিপত্র দেবার। বন্দনাকেও নয়। ফিরে এসে দেখল অনেক চিঠিপত্র এসেছে। একটা খামে পাকিস্তানী স্ট্যাম্প দেখে চমকে উঠল। ঢাকা থেকে মণিলাল দেশাই?

সবার আগে ঐ চিঠিটাই খুলল। চিঠিটি দীর্ঘ নয়। চটপট পড়ে ফেলল। তারপর আবার পড়ল।…পাকিস্তান গভর্নমেন্ট বেশ সিরিয়াসলি কেসটা টেক-আপ করেছে বলেই মনে হচ্ছে। শুনছি পার্টিশানের সময় যেসব সরকারি কর্মচারী ঢাকায় ছিলেন তাদের কাছে একটা সার্কুলার পাঠিয়ে ইন্দ্রাণীর খবর জানবার চেষ্টা করা হবে। মাইনরিটি কমিশন এইভাবে বহু লোকের খবর জেনেছেন এবং মনে হয় এক্ষেত্রেও কিছু খবর পাওয়া যাবে। তবে এসব ব্যাপারে সময় লাগবেই।

দেশাই যে ঢাকায় আমাদের ডেপুটি হাই কমিশনে আছে, একথা তরুণ জানত না। মণিলাল। গুজরাটী হলেও জন্মেছে কলকাতায়, ভবানীপুরে। লেখাপড়াও শিখেছে কলকাতায়। মণিলালের বাবা সৌরাষ্ট্রে বিশেষ সুবিধে করতে না পেরে যৌবনে চলে আসেন কলকাতায়। নগণ্য পুঁজি, সামান্য বিদ্যাবুদ্ধি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু পরিশ্রম ও সতোর জন্য কয়েক বছরেই নিজের অদৃষ্ট ঘুরিয়ে ফেলেন।

মণিলালের বাবা ছেলেকে ব্যবসায় ঢুকতে দেননি। তুমি লেখাপড়া শিখে মানুষ হও। আমার মতো দোকানদারি করো না।

মণিলাল ব্যর্থ করেনি তার বাবার আশা। কলকাতার রাস্তাঘাটে, বাসে-ট্রামে অবাঙালিদের প্রতি বাঙালিদের বিতৃষ্ণার প্রকাশ দেখেছে বহুদিন কিন্তু বিরক্ত বোধ করেনি। সে তো বোম্বে, আমেদাবাদ, সুরাট ও বরোদার গুজরাটী নয়। সুরাটের আত্মীয়-বন্ধুরা তো ওদের বাঙালি বলে। মণিলাল তার জন্যে গর্ব অনুভব করে। দেশে গেলে ওদের সঙ্গে তর্ক করে, ঝগড়া করে বাঙালির হয়ে।

মণিলালের সঙ্গে তরুণ বছর খানেক মাত্র কাজ করেছিল দিল্লিতে। তারপর আর দেখা হয়নি কোনোদিন। সেই মণিলাল দেশাই চিঠি লিখেছে।

মুগ্ধ বিস্মিত তরুণ রাইটিং ডেস্কের ওপর রাখা ইন্দ্রাণীর ফটোটা একবার দেখে নেয়। তারপর আপন মনে প্রশ্ন করে, এত লোকের প্রচেষ্টাও কি তুমি ব্যর্থ করে দেবে?

দেশাই-এর চিঠিটায় আরেকবার চোখ বুলিয়ে উঠে যায় রাইটিং ডেস্কের কাছে। হাতে তুলে নেয় ইন্দ্রাণীর ফটোটা।

…অনেক দিন পর আমাকে দেখলে? তাই না?

নিজের প্রশ্নের কৈফিয়ত নিজেই দেয়, কি করব বল? তুমি তো জান ডিপ্লোম্যাটের জীবন!

একটু থামে। একটু হাসে। আমার মতো ঘরকুনো কুঁড়ে ছেলে কি এমনি এমনি বেরুতে চায়? একলা একলা থাকতে কি ভালো লাগে? এই এত বড় অ্যাপার্টমেন্টে একলা একলা থাকতে বুকটা বড় জ্বালা করে, বড় বেশি করে তোমাকে মনে পড়ে…

চোখের দৃষ্টিটা যেন একটু ঝাঁপসা হয়ে ওঠে। তাড়াতাড়ি ফটোটা নামিয়ে রেখে ফিরে আসে কৌচে। চিঠিপত্রের বান্ডিল হাতে তুলে নেয়। বন্দনা দুটো চিঠি লিখেছে?…কি আশ্চর্য লোক বলো তো তুমি! কদিন তোমার খবর পাই না। দুটো-তিনটে চিঠি লিখেও কোনো জবাব পেলাম। তোমার জন্যে যে আমার কত ভাবনা-চিন্তা হয়, তা হয়তো বিশ্বাস কর না বা জান না। জানলে কখনও তুমি আমাকে এমন কষ্ট দিতে না…

এতক্ষণ পর্যন্ত তবু সহ্য করেছিল তরুণ কিন্তু তারপর কি লিখেছে?

…আমি না হয় মার পেটের বোন নই, কিন্তু তাই বলে আমাকে এমন দুঃখ দেবে কেন? আমার ভালোবাসার এমন অমর্যাদা করবে কেন?…

পাগলি মেয়েটা দ্বিতীয় চিঠিটায় শুধু দুটো লাইন লিখেছে, দয়া করে শুধু জানাও তুমি সুস্থ আছ, ভালো আছ। সম্ভব হলে বার্লিন গিয়ে তোমার খোঁজ করে আসতাম। কিন্তু তুমি। জান, সে সামর্থ্য আমার নেই।

বড় অপরাধী মনে হলো নিজেকে। বন-এ যাবার পর অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে দিন কেটেছে, ঘুরতে হয়েছে কয়েক হাজার মাইল। সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর লিখতে হয়েছে লম্বা লম্বা রিপোর্ট। কিন্তু তবুও বন্দনাকে একটা চিঠি লেখা উচিত ছিল। বড় অন্যায় হয়ে গেছে।

আরো একটা অন্যায় হয়ে গেছে। বন্দনা সামান্য চাকরি করে। তাছাড়া প্রতি মাসেই দেশে বেশ কিছু পাঠাতে হয়। বিকাশেরও একই অবস্থা। সুতরাং কদিনের জন্য বার্লিন বেড়াতে আসা। ওদের পক্ষে সম্ভব নয়। তরুণেরই উচিত ছিল একবার ওদের নিয়ে আসা। ওরা ছাড়া তরুণের আর কে আছে?

বেশ ক্লান্তবোধ করছিল। কোনোমতে জামা কাপড় চেঞ্জ করে কয়েকটা স্যান্টউইচ আর এক কাপ কফি খেয়ে নিল। তারপর একটা দীর্ঘ চিঠি লিখল বন্দনাকে।

শেষে লিখল, কিছুদিনের জন্য তোমরা দুজনে নিশ্চয়ই আমার কাছে আসবে। বিকাশকে বোলো ডেপুটি হাই কমিশনারকে আমার কথা বলতে। তাহলে ওর ছুটির কোনো অসুবিধা হবে না। আর তোমার ছুটি নেবার তো কোনো ঝামেলাই নেই! অ্যাপ্লিকেশন লেখ না বলেই তো ছুটি পাও না। প্যান আমেরিকান অফিসে খোঁজ করে তোমাদের ওপন টিকিট দুটো নিয়ে নিও।

চিঠি শেষ করার আগে আরো দুটো লাইন জুড়ে দিল, যদি আমার এ অনুরোধ রক্ষা করতে না পার তবে এ চিঠির জবাব দিও না। আর আমাকে দাদা বলেও কোনোদিন ডাকবে না।

পরের দিন সকালে অফিসে গিয়েই প্যান অ্যামেরিকান অফিসে ওদের দুজনের ভাড়া পাঠিয়ে দিল।

চিঠির জবাব এলো না। চারদিন পর এলো টেলিগ্রাম, রিচিং ফ্রাইডে প্যান অ্যাম ফ্লাইট ফাইভ-সেভেন-

সিক্স বন্দনা-বিকাশ। তরুণ জানত এমনি একটা কিছু হবে। বন্দনা যতই রাগ করুক চিঠি পাবার পর আর রাগ করে থাকতে সাহস করবে না। কেবল্টা পাবার পর তরুণ আনন্দে উল্লসিত হয়ে উঠল।

কেবলটা হাতে নিয়ে চলে গেল কন্সাল জেনারেল ট্যাভনের ঘরে। কোনো ভূমিকা না করেই বলল, হ্যাভ আই টোন্ড ইউ অ্যাবাউট বন্দনা?

ট্যান্ডন সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, কতবার বলেছ তার কি ঠিক-ঠিকানা আছে?

বন্দনা আর বিকাশ আমার এখানে আসছে।

দ্যাট ইজ হোয়াই ইউ লুক লাইক এ ম্যাড চ্যাপ।

তরুণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসে।

ওরা কবে আসছে?

এই শুক্রবার।

তাহলে তো সময় নেই। বাড়ি ঘরদোর তো একটু ঠিকঠাক করতে হবে।

হ্যাঁ, কিছু তো করতেই হবে।

তাহলে তুমি বরং বাড়ি যাও। আমি অফিসে আছি।

না না, তা কি হয়? কৃতজ্ঞ তরুণ বলে।

আই সে গো হোম! এরপর তর্ক করলে বকুনি খাবে।

আর একটি কথাও না বলে তরুণ চলে এলো নিজের ঘরে। টুকটাক কাগজপত্র সামলে নিয়ে অফিস থেকে বিদায় নিল।

অ্যাপার্টমেন্টে একবার ঘরদোর ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে ভাবছিল ওদের জন্যে স্পেশ্যাল কি করা যায়। আর এক চক্কর ঘুরতে গিয়ে রাইটিং ডেস্কের উপর রাখা ইন্দ্রাণীর ফটোটা বড় বেশি চোখে লাগল। আলতো করে ফটোটা তুলে নিল নিজের হাতে। একটু অন্যমনস্ক হয়ে। কি যেন ভাবছিল। হঠাৎ মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ল, শুনছ, বন্দনারা আসছে। তুমি আসবে না?

মনে হল ইন্দ্রাণী জবাব দিল, আসব বৈকি। তোমাকে ছেড়ে আর কতকাল থাকব বল।…

টেলিফোনটা বেজে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে ইন্দ্রাণী কোথায় লুকিয়ে পড়ল। ফটোটা নামিয়ে রেখে তরুণ টেলিফোনের রিসিভারটা তুলে নিল, টরুণ হিয়ার…কি ভাবিজী? কি ব্যাপার?

হঠাৎ এমন সময় মিসেস ট্যান্ডনের টেলিফোন।

বন্দনা আসছে?

এর মধ্যে সে খবর আপনার কাছে পৌঁছে গেছে?

উনি এক্ষুনি অফিস থেকে টেলিফোন করে জানালেন।

তা তো বুঝতেই পারছি।

শুক্রবার মানে পরশু আসছে?

হ্যাঁ ভাবিজী।

এবার ভূমিকা ত্যাগ করে কাজের কথায় এলেন ভাবিজী, তোমার অ্যাপার্টমেন্ট ছোট হলেও ওদের তো আমার কাছে থাকতে দেবে না। তা যাই হোক সারাদিন তো তোমরা ঘোরাঘুরি করবেই এবং রোজ সন্ধ্যার পর ঠিক হোটেল-রেস্তোরাঁয় ঢুকবে…।

না না, ভাবিজী, বন্দনা আবার ওসব পছন্দ করে না।

তা না করুক। মোট কথা রোজ সন্ধ্যার পর তোমরা তিনজনে আমার এখানে আসবে। গল্পগুজব-খাওয়া-দাওয়া করে ফিরে যাবে, বুঝলে?

বেশ একটু সঙ্কোচের সঙ্গে তরুণ বলল, রোজ কি সম্ভব হবে?

তবে কি একদিন ডিনার খাইয়ে ভদ্রতা করতে বলছ?

আর কি বলবে তরুণ? আচ্ছা ভাবিজী, আপনার সঙ্গে তর্ক করার সাহস তো আমার হবে না।

বিকেলবেলার দিকে মিঃ দিবাকর এলেন।

কি ব্যাপার? কোনো জরুরি খবর আছে নাকি? তরুণ জানতে চায়।

সি-জি পাঠিয়ে দিলেন। আপনার বোন-ভগ্নীপতি আসছেন, তাই যদি কোনো দরকার থাকে।

থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ।

সি-জি জিজ্ঞাসা করছিলেন আপনার কি ড্রাইভার লাগবে? যদি লাগে তাহলে…

না না, আমি তো নিজেই ড্রাইভ করি। ড্রাইভার লাগবে কেন?

বন্দনারা আসছে শুনে মি: ও মিসেস ট্যান্ডন অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। আপনজন বলতে তরুণের কেউ নেই। মা-বাবা ভাই-বোন কেউ না। যারা সহজ পথে প্রথম প্রেম ভুলতে পারে তরুণ তাদের মধ্যেও পড়ল না। জীবনে আর কোনো মেয়েকে সে আপন ভাবতে পারল না। বন্দনারা এলে অন্তত কদিনের জন্য ওর নিঃসঙ্গতা ঘুচবে ভেবেই মিঃ ও মিসেস ট্যান্ডন অত্যন্ত খুশি।

দুটো দিন কোথা দিয়ে যে কেটে গেল তা টের পেল না তরুণ। শুক্রবার সকালে অফিস করে লাঞ্চ টাইমেই বেরিয়ে পড়ল। আনন্দে উত্তেজনায় লাঞ্চই খেল না। প্লেন ল্যান্ড করবে। সওয়া তিনটেয়। প্লেনেই বন্দনাদের লাঞ্চ খাওয়া হয়ে যাবে। তবুও তরুণ ভাবল, ওরা এলেই খাব।

প্লেন ল্যাভ করার বেশ খানিকটা আগে পৌঁছে গেল এয়ারপোর্টে। দেখেশুনে বেশ একটা ভালো জায়গায় গাড়িটা পার্ক করল, যাতে বেরুতে না দেরি হয়। একটি মুহূর্তও যেন অপব্যয় না হয়।

এয়ারপোর্টে লাউঞ্জে পায়চারি করতে করতে আর একবার মনে মনে রিহার্সাল দিয়ে নিল ওরা এলে কি করবে। ইতিমধ্যে কখন যে ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে প্যান আমেরিকান প্লেন এসে গেছে, সে হুঁশ নেই। অতগুলো সাহেবসুবোর ভিড়ের মধ্যে ঢিপ করে বন্দনা প্রণাম করতেই হুঁশ ফিরে এল তরুণের।

বন্দনার হাত দুটো ধরে তুলে নিতে নিতে বলল, আরে থাক থাক, এখানে নয়।

কে কার বাধা মানে? কথা শেষ করতে না করতেই বিকাশও একটা প্রণাম করল। মালপত্র নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বেরুতে বেরুতে তরুণ বিকাশকে জিজ্ঞাসা করল, কোনো কষ্ট হয়নি তো?

বন্দনা বলল, ওর আবার কি কষ্ট হবে? বিনা পয়সায় বার্লিন ঘুরিয়ে দিচ্ছি, তাতে আবার কষ্ট কিসের?

আঃ বন্দনা! কি যা তা…

এত সহজে কি বিকাশ হার মানে? তোমার টি বোর্ডের পয়সায় বার্লিন দেখছি?

তরুণ থামিয়ে দেয়, বাড়িতে গিয়ে সারারাত ঝগড়া করা যাবে, এখন তাড়াতাড়ি চলো তো।

অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছতে পৌঁছতে সাড়ে চারটে বেজে গেল। সামনে লিভিং রুমে মালপত্র নামিয়ে রেখেই তরুণ বলল, নাও নাও, চটপট হাত-মুখ ধুয়ে নাও; ভীষণ খিদে পেয়েছে।

বিকাশ অবাক হয়ে বলল, সেকি দাদা, আমরা তো আজ দুবার লাঞ্চ খেয়েছি।

কন্টিনেন্টাল ফ্লাইট যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, ভুরিভোজনের ব্যবস্থা থাকেই-একথা তরুণ জানে। তবুও ওদের নিয়ে একসঙ্গে লাঞ্চ খাবার লোভে বেশ কিছু ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু ও কিছু বলবার আগেই বন্দনা বলল, তুমি কি বলল তো দাদা! সারাদিন না খেয়ে বসে আছ?

আঃ! কি বকবক করছ। হাতমুখ ধুয়ে নাও, সবাই মিলে একটু কিছু মুখে দেওয়া যাক।

বন্দনা আর তর্ক করে না। কোথায় কি আছে, একটু দেখিয়ে দাও তো দাদা। বিকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, একটু তাড়াতাড়ি নাও। দেখছ না, দাদা না খেয়ে আছেন।

সংসারধর্ম বুঝে নিতে মেয়েদের সময় লাগে না, বন্দনারও লাগল না। লিভিং রুমে কৌচে বসে সেন্টার টেবিল টেনে নিয়ে মহানন্দে খাওয়া-দাওয়া মিটল। বন্দনাকে পেয়ে তরুণ হঠাৎ মহাকুঁড়ে হয়ে গেল, হাত ধুতেও উঠে গেল না।

বন্দনা, একটু হাত ধোবার জল…।

এমন সুরে কথাটা বলল যে বন্দনার বড় মায়া লাগল। তোমাকে কে উঠতে বলেছে?

ওই কৌচে বসেই শুরু হলো আড্ডা।

সব চাইতে আগে বল, তোমাদের ছুটি কদিন?

তরুণের এই প্রশ্ন শুনেই বন্দনা আর বিকাশ একবার দৃষ্টিবিনিময় করল। ওরা ভেবেছিল, এয়ারপোর্টেই এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। লন্ডন থেকে রওনা হবার আগেই তাই শলা-পরামর্শ করে উত্তরদাতাও উত্তর ঠিক করে রেখেছিল।

বিকাশ চিবুতে চিবুতে বলল, নেকসট উইক থেকে আমাদের অডিট!

চিমটি কেটে তরুণ জানতে চাইল, তিন চারদিন আছো তো?

না-না, দাদা, তিন-চারদিনের জন্য কি এত খরচা করে এতদূর আসে?

বন্দনা চুপটি করে বসে মিটমিট করে হাসছিল। এবার তরুণ ওকে জিজ্ঞাসা করল, বন্দনা, তোমার অডিট কি এই উইকেই শুরু হচ্ছে?

আচ্ছা দাদা, অমন করে কথা বলছ কেন? আমি কি বলেছি–?

আর এগুতে হলো না।-তোমার হয়ে আমিই না হয় বলে দিলাম।

হাসি-খুশিতে ডগমগ হয়ে বন্দনা বলল, ও চলে যাবে যাক। আমি এত সহজে যাচ্ছি না।

ফরেন সার্ভিসের কর্মচারীরা ফরেন সেক্রেটারির চাইতে অডিট পার্টির নিম্নতম কর্মচারীকে যে বেশি ভয় করে, তা তরুণ জানে। তাছাড়া বিকাশের সেকশনের উপরেই যে অডিট করাবার ভার, সে খবরও তরুণ রাখে। তাহলে ছুটি পেলে কেমন করে?

ডেপুটি হাই-কমিশনারকে আপনার কথা বলাতেই এক উইকের ছুটি পেয়েছি। আদারওয়াইজ…!

তরুণ একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলল, ঠিক আছে। কি করা যাবে!

সঙ্গে সঙ্গেই বন্দনা বলল, আমি কিন্তু দাদা, মাসখানেক থাকব।

বিকাশের খাওয়া-দাওয়ার কি হবে?

একি একটা প্রশ্ন? অত্যন্ত সহজ হয়ে বন্দনা উত্তর দেয়, কেন? দিনে ইন্ডিয়া হাউসের বিখ্যাত ক্যান্টিন, আর রাত্রে স্বহস্তে সাত্ত্বিক আহার, অথবা ইতালিয়ান কাফে!

এতদিন ওই হোটেল-রেস্তোরাঁয় খেয়ে কাটাবে?

বিকাশ বলে, না না, তাতে কি হয়েছে!

মফঃস্বলের ফৌজদারি কোর্টের উঁকিলের মতো বন্দনার কাছে অফুরন্ত আগুমেন্টের রসদ। এতকাল কিভাবে কাটিয়েছে?

তরুণ একটু শাসন করে, আঃ! বন্দনা! বিয়ের পর যেন একটু মুখরা হয়েছ!

ছুটি-ছাটা নিয়ে বেশ তর্কটা জমে উঠেছিল, কিন্তু হঠাৎ টেলিফোনটা বেজে উঠতেই ছেদ পড়ল।

দ্যাখ তো বন্দনা, কে? হয়তো ভাবিজী।

কে ভাবিজী?

আমার কন্সাল জেনারেলের স্ত্রী।

ঠিক যা সন্দেহ করেছিল তাই। সবাই তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে রওনা দিল মিঃ ট্যান্ডনের বাড়ির দিকে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *