প্রমথনাথ বিশী (১১-৬-১৯০১ – ১০-৫-১৯৮৫) জোয়াড়ী-রাজশাহী। পিতা নলিনীনাথ বনেদী জমিদার হয়েও ১৯৩০ ও ১৯৪২ খ্রী. স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ গ্ৰহণ করে বছর তিনেক কারারুদ্ধ থাকেন। খ্যাতনামা সাহিত্যিক। বালক বয়সে শান্তিনিকেতনের ব্ৰহ্মচর্য বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে ভর্তি হন। সেখানে অভিভাবক, শিক্ষক ও প্রেরণাদাতা-রূপে পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথকে। ১৯১৯ খ্রী. শান্তিনিকেতন থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন এবং প্রাইভেটে আইএ পরীক্ষা দেন। পরে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯২৯ খ্রী. বি-এ এবং প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসাবে ১৯৩২ খ্রী. প্ৰথম শ্রেণীতে প্ৰথম হয়ে বাংলায় এম.এ. পাশ করেন। ১৯৩৬ খ্রী. থেকে দশ বছর রিপন কলেজে পড়িয়েছেন। ১৯৪৬ খ্রী. সাংবাদিকতায় চলে আসেন। ১৯৫০ খ্রী. লেকচারার হিসাবে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে পরে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হন। কবিতা, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ, সমালোচনা প্রভৃতি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর পারদর্শিতা ছিল। তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘দেওয়ালী’ (১৯২৩)। নাটকের ব্যাপারে তিনি জর্জ বার্নার্ড শ’-র অনুগামী। জি.বি.এস নামের অনুকরণে প্ৰ.ণা.বি নাম দিয়ে নাটক লিখতেন। ‘কেরী সাহেবের মুন্সী’ উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৬০ খ্ৰী. রবীন্দ্র পুরস্কার পান। রবীন্দ্ৰ সাহিত্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি তাঁর সমালোচনা-গ্রন্থে বহু অজ্ঞাত তথ্যের সন্ধান দিয়েছেন। দৈনিক পত্রিকায়। ‘কমলাকাস্তের দপ্তর-প্রকাশিত তাঁর রসরচনা ও লঘু প্ৰবন্ধ বঙ্কিমচন্দ্রের কমলাকাস্তের পরাধীনতাঁর চেতনা ও গ্লানিবোধকে স্মরণ করিয়ে দেয়। স্বাধীনতা আন্দোলনে কংগ্রেসের নানা কাজের সঙ্গে নানা সময়ে তিনি জড়িত ছিলেন। এককালে পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদের সদস্য এবং ১৯৭২ খ্রী. রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর অভিনয়ের শিক্ষা রবীন্দ্রনাথের কাছে। তাঁর লেখা। কয়েকটি যাত্রাপালা শান্তিনিকেতনে অভিনীত হয়েছে। ‘বুধবার’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা সেখানে সম্পাদনা করতেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ : কাব্য—উত্তরমেঘ, অকুন্তলা, প্রাচীন পারসিক হইতে, প্রাচীন আসামী হইতে, বিদ্যাসুন্দর, মুক্তবেণী, ‘আত্মঘাতিনী, হিংসমিথুন’, ‘কিংশুকবহ্নি প্রভৃতি; নাটক-’ঝণং কৃত্বা’, ‘ভূতপূর্ব স্বামী’, ‘ঘূতং পিবেৎ’, মৌচাকে ঢিল, পারমিট, ডিনামাইট, গভর্ণমেন্ট ইন্সপেক্টর প্রভৃতি; উপন্যাস-’কেশবতী’, ‘লালকেল্লা, ‘জোড়া দীঘির চৌধুরী পরিবার প্রভৃতি; সমালোচনা গ্ৰন্থ-’রবীন্দ্ৰ কাব্য প্রবাহ’, ‘রবীন্দ্ৰ নাট্য প্রবাহ, ‘রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্প’, ‘রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন’, ‘বাংলার কবি’, ‘বাঙালী ও বাংলা সাহিত্য’, ‘নানারকম, ‘চিত্র চরিত্র প্রভৃতি। বিভিন্ন সাহিত্যিকের রচনাবলী সম্পাদনা তাঁর একটি প্রশংসনীয় উদ্যম। ‘নেহেরু ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব’ নামে তিনি একটি রাজনৈতিক গ্ৰন্থও লিখেছেন।
Leave a Reply