কৃষ্ণচন্দ্র রায় (১৭১০ – ১৭৮২) কৃষ্ণনগর-নদীয়া। রঘুনাথ। কূটকৌশলী রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রাজ্যলাভের সূচনায় পিতৃব্যকে বঞ্চিত করে সম্পত্তি অধিকার করেন। তার রাজত্বকালে বাঙলায় মুসলমান শাসন থেকে ইংরেজ শাসন প্রবর্তিত হয়। এই রাজনৈতিক পরিবর্তনে তিনি ইংরেজদের সঙ্গে মিত্ৰতা করেন এবং সিরাজ-বিতাড়ন পর্ব সমাধা করে ‘রাজা’ থেকে ‘মহারাজা’র পদবীতে। উন্নীত হন। পরে খাজনা আদায়ের গাফিলতির অভিযোগে নবাব মীরকাশিমের আদেশে মুঙ্গের দুর্গে অন্যান্য ষরযন্ত্রীর সঙ্গে বন্দী হলে ইংরেজদের সহায়তায় তার প্রাণরক্ষা হয়। গুণগ্ৰাহী কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় গোপাল ভাঁড়, ভারতচন্দ্ৰ প্ৰভৃতি গুণিজনের সমাবেশ ছিল। এছাড়া হরিরাম তর্কসিদ্ধান্ত, কৃষ্ণানন্দ বাচস্পতি, বাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কার, জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন, রাধামোহন গোস্বামী, কবি রামপ্রসাদ সেন প্রভৃতি গুণিজনকে বৃত্তি অথবা নিষ্কর জমি দান করেন। তার ইচ্ছায় ভারতচন্দ্ৰ ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্য রচনা করেন। তিনি নাটোর থেকে কয়েকজন মৃৎ-শিল্পীকে আনেন। তাদের দ্বারাই পরবর্তী কালে কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পের খ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বাঙলা দেশে জগদ্ধাত্রী পূজার প্রচলক। বর্গীর ভয়ে ‘শিবনিবাস’ নামে নূতন রাজধানী নির্মাণ করেন। রক্ষণশীল এই হিন্দু রাজা সংস্কৃত ও ফারসী ভাষায় শিক্ষিত এবং সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন।
Leave a Reply