গৌরীশঙ্কর ভট্টাচাৰ্য, তর্কবাগীশ (১৭৯৯ – ৫.২.১৮৫৯)। শ্ৰীহট্ট। জগন্নাথ। খর্বাকৃতির জন্য ‘গুড়গুড়ে ভট্টচাজ’ নামে পরিচিত ছিলেন। বাল্যে মাতাপিতৃহীন হয়ে নৈহাটিতে নীলমণি ন্যায়পঞ্চাননের চতুষ্পাঠীতে শিক্ষাগ্ৰহণ করেন। সংস্কৃতে পাণ্ডিত্যের জন্য খ্যাতি ছিল। ভাগ্যান্বেষণে কলিকাতা এসে অচিরেই সাংবাদিক হিসাবে প্ৰতিষ্ঠা লাভ করেন। ইয়ং বেঙ্গলের মুখপত্র ‘জ্ঞানান্বেষণ’ পত্রিকার কার্যত সম্পাদক, ‘সম্বাদ ভাস্কর’ ও ‘সম্বাদ রসরাজ’ পত্রিকার পরিচালক এবং ‘হিন্দুরত্ব কমলাকর’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি ‘সম্বাদ রসরাজ’ পত্রিকা মারফত ঈশ্বর গুপ্তের ‘পাষণ্ড পীড়ন’ পত্রিকার সঙ্গে তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন। এই সকল পত্রিকা সম্পাদনায় অসাধারণ খ্যাতি অর্জন করেন। আবার অশ্লীল রচনা ও ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক নিবন্ধ প্ৰকাশের জন্য তার অর্থদণ্ড ও একাধিকবার কারাবাসও ঘটেছে। ১৮৩৬ খ্রী. ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন ‘বঙ্গভাষা প্ৰকাশিকা সভা’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং কিছুদিন তার সভাপতি ছিলেন। রামমোহনের ‘ব্ৰাহ্মসভা’ ত্যাগ করে রাধাকাম্ভের ধৰ্মসভায় যোগ দিলেও রক্ষণশীল ছিলেন না। তীব্ৰ শ্লেষাত্মক (সময়বিশেষে অশ্লীল) রসরচনার সাহায্যে স্বজাতীয় ইংরেজ নকলনবীস ও বিদেশী দুর্নীতিপরায়ণ শাসকদের আক্রমণ করতেন। সতীদাহ-প্রথার বিপক্ষে এবং বিধবা-বিবাহের পক্ষে লেখনী ধারণ করেন। সে যুগের আলোড়ন-সৃষ্টিকারী ঘটনা—দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় ও বর্ধমানের বিধবা রাণী বসন্তকুমারীর রেজিষ্টি বিবাহে সাক্ষী ছিলেন। রচিত ও সম্পাদিত গ্ৰন্থ : ‘ভগবদগীতা’, ‘জ্ঞানপ্ৰদীপ, ভূগোলসার, ‘নীতিরত্ন’, ‘কাশীরাম দাসের মহাভারত’ প্রভৃতি।
Leave a Reply