সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।
লালন বলে জাতের কি রূপ
দেখলাম না এই নজরে।।
কেউ মালায় কেউ তসবি গলায়,
তাইতে যে জাত ভিন্ন বলায়।
যাওয়া কিম্বা আসার বেলায়,
জাতের চিহ্ন রয় কার রে।।
যদি ছুন্নত দিলে হয় মুসলমান,
নারীর তবে কি হয় বিধান?
বামন চিনি পৈতা প্রমাণ,
বামনী চিনি কিসে রে।।
জগত্ বেড়ে জেতের কথা,
লোকে গৌরব করে যথা তথা।
লালন সে জেতের ফাতা
ঘুচিয়াছে সাধ বাজারে।।
—————————————
‘মহাত্মা লালন ফকির’, হিতকরী, ১৫ই কার্তিক ১২৯৭ (৩১শে অক্টোবর ১৮৯০)।
১৮৯০ সালের ১৭ই অক্টোবর লালন শাহ মৃত্যুবরণ করেন। এর ১৪ দিন পরে হিতকরী’ পত্রিকায় লালন সম্পর্কিত এই লেখাটি প্রকাশিত হয়। লালনের জীবনীসহ এই গানটি প্রকাশিত হয়। এজন্য এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। প্রকাশের দিক থেকে এটি দ্বিতীয় গান। লালনের গান (“কে বোঝে সাঁইয়ের লীলাখেলা”) প্রথম প্রকাশ করেন কাঙাল হরিনাথ মজুমদার কাঙ্গালের ব্রহ্মাণ্ডবেদ’ (১ম ভাগ, ১ম সংখ্যা, ১২৯২) গ্রন্থে।
হিতকরী পত্রিকার প্রবন্ধকারের নাম নেই, তবে সহকারী সম্পাদক হিসাবে পত্রিকার সাথে জড়িত কুমারখালীনিবাসী রাইচরণ দাস তা রচনা করেন বলে অনুমান করা হয়। ভারতী’র ১৩০২ সনের ভাদ্র সংখ্যায় পত্রিকার সম্পাদক সরলাদেবী ফকির লালন ও গগন শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ঐ প্রবন্ধের সঙ্গে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় রচিত লালনের জীবনীও প্রকাশিত হয়। তাঁরা উভয়ে লালনের এই গানের উদ্ধৃত করেন। অক্ষয়কুমার কুমারখালীর অধিবাসী লালনের সাক্ষাৎ শিষ্যের নিকট থেকে গানটি সংগ্রহ করেন বলে জানান। হিতকরীতে প্রকাশিত এই গানের সাথে অক্ষয়কুমার সংগৃহীত গানের কোন পাঠভেদ নেই। তবে সরলাদেবীর সংগ্রহে ৩য় স্তবকটি নেই। সম্ভবত নারী : প্রসঙ্গের ঐ অংশটি তিনি স্বেচ্ছায় বাদ দিয়েছেন। ভনিতাযুক্ত শেষ চরণটি এভাবে মুদ্রিত হয়েছে : “লালন সে জেতের ফাতায় ডুবেছে সাত বাজারে।” ‘ফাতা’ শব্দের অর্থ ঝগড়া, গোঁড়ামি। ফাতা আরবি ‘ফতুয়া’ শব্দজাত। সাত বাজারে অপেক্ষা সাধ বাজারে পাঠটি অধিক সঙ্গত ও অর্থপূর্ণ। লালন জাতিভেদ মানতেন না, তার উজ্জ্বল স্বাক্ষর আছে এই গানে। বসন্তকুমার পাল প্রবাসী’র শ্রাবণ ১৩৩২ সংখ্যায় প্রকাশিত ফকির লালন সাহ’ প্রবন্ধে গানটির অন্তরা-সঞ্চারী স্তবক-বিন্যাসে ওলট পালট করেছেন। তাঁর সংগৃহীত গানের ভনিতার চরণটি এরূপ : “লালন সে জেতের ফাতা বিকিয়েছে সাধ বাজারে”। আমাদের মনে হয়, ঘুচিয়াছে, ডুবেছে ও বিকিয়েছে– এই তিনটি ক্রিয়াপদের মধ্যে ‘বিকিয়েছে’ অধিক সংগত, বাজার শব্দ থাকায় এরূপ পাঠ সঠিক বলে ধরা যায়। সাধ ও সাত– এর মধ্যে কোনটি মৌলিক পাঠ? সাধ বাজারে ও সাত বাজারে উভয়ই অর্থবাচক; তবে সাধ বাজারে শব্দবন্ধের ভাবাত্মক ও সাঙ্গীতিক গুণ বেশি। উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বাংলার বাউল ও বাউল গান’ (১৯৫৭) গ্রন্থে গানটি সংকলিত করেন। এতে নিম্নরূপ একটি অতিরিক্ত স্তবক আছে :
গর্তে গেলে কূপজল হয়
গঙ্গায় গেলে গঙ্গাজল হয়
মূলে এক জল, সে যে ভিন্ন নয়
ভিন্ন জানায় পাত্র অনুসারে– পৃ. ১২৩
এটি সঞ্চারী ও আভোগের মাঝে বিন্যস্ত হয়েছে। এতে নতুন উপমা দ্বারা মূল ভাবের বিস্তার ঘটলেও আমাদের মনে হয়, এটি প্রক্ষিপ্ত। কূপজল-গঙ্গাজলের উপমাটি একাধিক গানে আছে।
amar mone hoi prithibite laloner ganer upore kono gan hoi na.
i thing lalon is right we should be follow the sketch of lalon
lalon is great.he is a valuable for all the poelpe he is a real Human.
” Ami mokkor korne owala, ar amar che mokkor baj ar ke ache” Al Quran
” Ami mokkor korne owala, ar amar che mokkor baj ar ke ache” Al Quran
উনি সেই সময়ে যে গান লিখে গেলেন তা এখনো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আমরা কতটা অযথা অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনো সময় নষ্ট করি।