০২. প্রাণের রবি

প্রাণের রবি,

এই সবে শুরু হয়েছে আমার জীবনের শেষ দিন। পুবের আকাশ সবে লাল হচ্ছে। আজকাল তোমার ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়। সেটাই তো স্বাভাবিক। মাত্র চারমাস বিয়ে হয়েছে তোমার।

আগে তো সূর্য ওঠার আগে তুমি উঠতে। আমার ঘুম ভাঙাতো তোমার সকালবেলার গান। আমরা একসঙ্গে যেতাম নন্দনকাননে। আমার ঘরের পাশে ছাদের উপর যে-বাগানটি একসঙ্গে করেছিলাম আমরা, তুমি তার নাম দিলে নন্দনকানন, তারপর একদিন সেই বাগানে ভোরের প্রথম আলোয় আমাকে চুমু খেয়ে জিগ্যেস করলে—’নতুন বউঠান, নামটা তোমার পছন্দ হয়েছে?’ আমার সমস্ত শরীর তখন কাঁটা দিচ্ছে। আবার ভয়ে বুক করছে দুরদুর।

ঠাকুরপো, ‘এমন দুঃসাহস ভালো নয়, কেউ দেখে ফেললে কী হবে জানো?’ বললাম আমি। তোমার বয়েস তখন উনিশ। সবে ফিরেছ বিলেত থেকে। আমি একুশ।

তুমি হেসে উত্তর দিয়েছিলে, ‘এ তো নন্দনকানন। মর্ত্যলোকের দৃষ্টি এখানে এসে পৌঁছয় না নতুন বউঠান। ‘

আমি বললাম, ‘তোমার সঙ্গে কথায় পারব না রবি। কিন্তু তোমার-আমার সম্পর্ক তো শুধুই আমাদের, তাকে প্রকাশ কোরো না তুমি। আমার ভয় করে। ‘

‘কীসের ভয়?’

‘তোমাকে হারানোর ভয়। এ-বাড়িতে তুমি ছাড়া আমার আর কোনও বন্ধু নেই। একমাত্র বন্ধু তুমি। কেউ কারও মন বোঝে না এ-বাড়িতে। শুধু তুমি বোঝো আমার মন। ‘

‘তুমি ভাব আমি বুঝি তোমার মন। কিন্তু কেউ কারও মন কি সত্যি বোঝে নতুন বউঠান? কিছুটা হয়তো অনুভব করি। কিন্তু তোমার সমস্ত মন—অসম্ভব, অসম্ভব। ‘

ঠাকুরপো, তোমার এরকম কথায় আমার খুব কষ্ট হয়। এসব তোমার সাজানো কথা। আমার সমস্ত মনটাই তোমাকে দিয়ে দিয়েছি ঠাকুরপো। কারও জন্যে কিছু রাখিনি। সেই মনের সবটুকু তুমি বোঝো না! তুমি যখন আমার চোখের দিকে তাকাও, আমি বুঝতে পারি, তুমি অনুভব করছ আমার হৃদয়ব্যথা। তুমি জানো কোথায় আমার কষ্ট, আমার দহন।

তুমি কি সত্যি বোঝো না ঠাকুরপো বুকের মধ্যে তোমার জন্যে যে-মনকেমন, যে-কষ্ট আমি দিনরাত চেপে রাখি? আমি জানি ঠাকুরপো, তুমি বোঝো। অন্তত একদিন বুঝতে…ক’মাস আগে পর্যন্তও…

তুমি যে আমার ছেলেবেলার খেলার সাথি।

রবি, তোমাকে চিরদিনের জন্যে ছেড়ে যাওয়ার আগে মনের কথাটি জানিয়ে যাই। কোনও মিথ্যে নেই এ-কথার মধ্যে। আমি বানানো কথা বলতে শিখিনি।

তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি।

তোমার মতো আর কোনও পুরুষ যে আমি দেখিনি ঠাকুরপো। রূপে গুণে, গান আর প্রাণের প্লাবনে তুমি যে অনন্য।

তোমার এই পঁচিশ বছরের বউঠাকরুণটি তোমাকে চিরদিনের জন্য ছেড়ে যাওয়ার আগে তোমাকে বলে যাচ্ছে—তুমিই তার একমাত্র অবলম্বন ছিলে এ-সংসারে। একমাত্র ভালোবাসার পুরুষ।

ঠাকুরপো, সেদিন ছিল জ্যোৎস্নারাত। জোড়াসাঁকোর বাড়ির ছাদে শুধু তুমি আর আমি। তুমি গাইছিলে গান। আমার সেদিন মন ভালো ছিল না। তোমাকে বলিনি সেকথা। তবু তুমি বুঝতে পারলে আমার মনের কষ্ট। তুমি যে আমার দোসর ঠাকুরপো। আমার কানের কাছে মুখ এনে গাঢ় স্বরে বললে, ‘নতুন বউঠান, কী হবে ছোটখাটো দুঃখের কথা মনে রেখে? ভুলে যাও, সব ভুলে যাও। ‘

‘ভুলতে বললেই কি ভুলতে পারা যায়? কতদিনের কত অপমান, কত কষ্ট, সেই ন’বছর বয়সে তোমাদের বাড়ি বউ হয়ে এসে পর্যন্ত সহ্য করছি’ বলেছিলাম আমি।

তুমি আমার হাতের উপর হাতটি রেখে শুনশান বিশাল ছাদটির এক কোণে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে। তারপর বললে, ‘নতুন বউঠান, জ্যোতিদাদা এখনও আসেনি বুঝি?’

‘আজকাল তোমার জ্যোতিদাদার বাড়ি আসার কোনও সময় নেই। কখন আসেন কখন যান, আমার সঙ্গে দেখা হয় কতটুকু। কাল রাত্রে তো…’

‘জানি, মেজবউঠাকরুণের ওখানে গানবাজনার আসর বসেছিল। আমিও ছিলাম কিছুক্ষণ। জ্যোতিদাদাই তো সেই আসরের প্রাণপুরুষ। জ্যোতিদাদা যে সেই মজলিশ ছেড়ে আসতে

পারবে না, সেটা বুঝতে পেরেছিলুম। ‘

‘জ্যোতিদাদার দিনরাত আজকাল মেজবউঠাকরুণের কাছেই কাটে। ‘

কথাটা তোমাকে বলতে খুব কষ্ট হয়েছিল আমার ঠাকুরপো। তুমি কোনও উত্তর দিলে না।

আমি বললাম, ‘শুধু তোমার জন্যে বেঁচে আছি ঠাকুরপো।

আমার বেঁচে থাকার আর কোনও কারণ নেই। ‘

ঠাকুরপো, একথা শুনে তুমি আমার দিকে তাকালে। তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার ভয় করল।

আমার মনে পড়ছে, চাঁদের আলোয় তোমার সেই রূপ। যেন এক তরুণ দেবদূত। কিন্তু তোমার চোখের দৃষ্টি আমাকে শান্তি দিল না। মনে হল, আমার শেষ আশ্রয়টুকুও চলে যাবে। ঠাকুরপো, সেই রাত্রে চাঁদের আলোর মধ্যে তোমার বুকে মাথা রেখে আমি আরও একবার নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারলাম, তুমি আমার জীবন থেকে চলে গেলে আমি বাঁচব না, বাঁচতে পারব না।

তুমি আমাকে নিবিড় করে জড়িয়ে ধরলে। কিন্তু সেই আলিঙ্গনের মধ্যে কোনও আশ্রয় পেলাম না —যে-আশ্রয় আমি চেয়েছিলাম। আমি কেঁদে তোমার বুক ভাসিয়ে ছিলাম। চাঁদের আলো মিশে গেল আমার কান্নায়।

তোমার দিকে মুখ তুলে দেখি তোমার চোখেও জল—সেই প্রথম তোমার চোখে জল দেখলাম ঠাকুরপো। চাঁদের আলোয় চিকচিক করছে তোমার চাপা কান্না।

আমি বললাম, ‘ঠাকুরপো, তোমার জন্যে আমার মন এতদিন ধরে যে-মালা গেঁথে রেখেছে, আজ এই চাঁদকে সাক্ষী করে সেই মালা তোমার গলায় পরিয়ে দিলাম। তুমি তোমার জীবনে আমাকে বরণ করে নাও। ‘

তোমার চোখের জল নিঃশব্দে ঝরে পড়ল আমার কপালে, আমার গালে, আমার বুকের ওপর।

প্রাণের ঠাকুরপো, জীবনের এই শেষ দিনে, তোমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে, অনেক কথা মনে পড়ছে। কত কথা, স্মৃতি, হতাশা, অপমানের বেদনা, একাকিত্বের কষ্ট—সব জমে আছে বুকের মধ্যে। অনেক কথা তুমিও জানোনা।

কিন্তু মৃত্যু যতই কাছে এগিয়ে আসছে, বিদায়ের ঘণ্টা যতই শুনতে পাচ্ছি, ততই যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে মন, ভাবনারা সব ছড়িয়ে যাচ্ছে, তাদের ওপর আমার শাসন ক্রমশই আলগা হয়ে যাচ্ছে। মনের এই অবস্থায় গুছিয়ে লেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ঠাকুরপো। কিন্তু তবু। লিখতে আমাকে হবেই। না লিখেও আমার মুক্তি নেই গো।

কোথা থেকে শুরু করব বলো তো? ১৮৫৯-এ ৫ জুলাই আমার জন্ম থেকে? ঠাকুরপো, কেন তোমাদের মতো অভিজাত ধনী পরিবারে জন্ম হল না আমার? তাহলে তো এত অপমান সহ্য করতে হত না।

ঠাকুরপো, আমার অপমানের গল্প কিন্তু শুরু হয়েছিল আমার জন্মের আগে থেকেই। সেকথা হয়তো তুমিও জানো, কিন্তু কোনওদিন কোনওভাবে বুঝতে দাওনি, পাছে আমি কষ্ট পাই। একদিন শোওয়ার ঘরে দুপুরবেলা একাই শুয়েছিলাম আমি। শুধু মনে আসছিল পুরোনো কষ্টের কথা। কান্না কিছুতেই রাখতে পারছিলাম না। হঠাৎ এলে তুমি। হাতে তোমার কবিতার খাতা। নিশ্চয় নতুন কোনও কবিতা বা গান লিখেছ। শোনাতে চাও আমাকে। আমিই তো সব সময়ে ছিলাম তোমার প্রথম শ্রোতা, এই সেদিন পর্যন্ত। তুমি আমার চোখে জল দেখে থমকে দাঁড়ালে। খাতাটি খাটের পাশে টেবিলটার ওপর রেখে বসলে আমার পাশে। অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলে। আমার চোখের দিকে। আমি আলতো করে হাত রাখলাম তোমার বুকের ওপর। মনে হল, ভেতরটা আমার জুড়িয়ে গেল।

তুমি আমার কপালে হাত রেখে বললে, ‘নতুন বউঠান, পুরোনো চিঠির মতো পুরোনো কষ্টও ধুলায় হোক ধূলি। ‘ সেই মুহূর্তটি আজ জীবনের শেষ দিনে মনে পড়ছে বারবার। ঠাকুরপো, আর কেনওদিনই কি ফিরে আসবে না আমার প্রতি তোমার প্রেম, তোমার মনের আদর, ফিরে আসবে না তোমার সঙ্গে নন্দনকাননে সেই সব অমল সকাল, শোওয়ার ঘরে সেইসব নিঝুম দুপুর, দক্ষিণের বারান্দায় সেইসব বর্ণিল বিকেল, ছাদের ওপর স্নিগ্ধ সন্ধে থেকে মগ্ন রাত? ফিরে আসবে না তোমার আমার এক সঙ্গে কবিতা পাঠ, গান গাওয়া? তুমি আরও একবার আমার হবে আমার সব হারানোর মধ্যে? যা ভাঙল তা ভেঙেই গেল?

ঠাকুরপো, কথায়-কথায় খেই হারিয়ে কোথায় চলে এলাম! তোমাকে তো বলেইছি, মনটা বড় এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারছি না। বলতে যাচ্ছিলাম আমার জন্মের আগের কথা। সেকথা বলতে গিয়ে কোথায় চলে এলাম। ঠাকুরবাড়িতে, বিশেষ করে এ বাড়ির মেয়েমহলে, আমার সে অপমান, তার সূত্র ধরে চলে যাওয়া যায় আমার জন্মের আগের ঘটনায়–আমার ভাগ্য সেইসব ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

প্রাণের রবি, ঠাকুরবাড়ির বউ হওয়ার আগে তোমাদের কাছে—না না তোমার কাছে নয়, তুমি তো আমার ভালোবাসার মানুষ—আর সকলের কাছে বিশেষ করে তোমার আইসিএস

সেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর আর তাঁর বিলেতফেরত স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনীর কাছে আমার পরিচয় ছিল, আমি তোমাদের বাজারসরকার শ্যাম গাঙ্গুলির তিন নম্বর মেয়ে। সেটাই অবিশ্যি আমার সম্পর্কে শেষ কথা নয়। আরও একটু আছে—এমন এক পরিবারে জন্ম আমার যে-পরিবারের থাকা-খাওয়া জোটে তোমাদের, অর্থাৎ ঠাকুরবাড়ির দাক্ষিণ্যে।

আমার ঠাকুরদা জগন্মোহন গঙ্গোপাধ্যায় এক গুণী সঙ্গীতশিল্পী। সে কথা তুমি তো জানো ঠাকুরপো। কতবার তুমি আমাকে বলেছ, আমি আমার গানের গলা পেয়েছি আমার ঠাকুরদার। কাছ থেকে। কিন্তু তাঁর গুণের কোনও স্বীকৃতি ছিল না অভিজাত, ধনী ঠাকুরবাড়িতে তিনি যে গরিব, তোমাদের দাক্ষিণ্যে বেঁচে আছেন।

তোমরাই তাঁকে মাথা গোঁজার জন্যে একটা বাড়ি দিয়েছিলে—কলকাতার খারাপ পাড়া হাড়কাটা গলিতে। আমি হয়তো সেই হাড়কাটা গলির মেয়ে। তাই জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির মহিলামহল আমাকে সারাজীবন এত হেয় করল, কষ্ট দিল।

হাড়কাটা গলির ওই বাড়িটা আমার ঠাকুরদা পেয়েছিলেন দান হিসেবে। কিন্তু সে ছিল করুণার দান। সেই দান গ্রহণ করার মধ্যে কোনও সম্মান ছিল না।

ঠাকুরপো, আমি জানি না ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে আমার বাড়ির সম্পর্ক তুমি কতটা জানো। জানলেও, আমাকে জানতে দাওনি যে তুমি জানো। এক অর্থে আমিও কিন্তু ঠাকুরবাড়ির মেয়ে। কিন্তু সেকথা ভাববার অধিকার আমাকে কেউ কোনওদিন দেননি। আমি ঘাটেরও নই, পারেরও নই। এইভাবে কেটে গেল আমার জীবনের পঁচিশটা বছর।

আমার পরিবারের গল্প, আমার জন্মের কাহিনি আজ তোমাকে কিছুটা বলে যাই। তা হলে হয়তো কিছুটা বুঝবে, কী আমাকে দহন করেছে এত বছর ধরে। আমার মৃত্যু কী জুড়াবে!

আমার ঠাকুরদা জগন্মোহনের সঙ্গে বিয়ে হয় তোমার ঠাকুরদা দ্বারকানাথের মামাতো বোন শিরোমণির। এসব কথা তোমাকে দু-একদিন বলবার চেষ্টা করেছিলাম। তুমি বলতে, থাক না সেই সব দূরের কথা, কিছুতেই বলতে দিতে না তুমি, পাছে এসব কথা বলতে গিয়ে আমি ভিতরে-ভিতরে কষ্ট পাই।

একদিন বললে—আমার বেশ মনে আছে, দুপুরবেলা আমার শোবার ঘরের খাটে আমার পাশেই শুয়েছিলে তুমি—চুপচাপ ছিলে অনেকক্ষণ, জানলা দিয়ে দেখছিলে আকাশে মেঘের ঘনঘটা— আমি সেই সুযোগে তোমাকে শোনাতে চাইলাম আমার পরিবারের পূর্বকথা—তুমি বললে, ‘নতুন বউঠান, কী হবে পুরোনো দুঃখ-কষ্টের কথা ভেবে ভুবন জুড়ে এত আনন্দ, সেই আনন্দধারাকে অন্তরে গ্রহণ করো, দেখবে ঝরা পাতার মতো পুরোনো দুঃখ সেই আনন্দস্রোতে ভেসে গিয়েছে। ‘

আমি তোমার হাতটি এনে রাখলাম আমার বুকের ওপর। বললাম, ‘শত দুঃখের মধ্যেও সেই আনন্দকে আমি ধরে আছি এই মুহূর্তে আমার বুকের মাঝখানটিতে। ‘

ঠাকুরপো, আমার মনে হল যেন চিরকাল তোমার হাতটিকে আমার বুকের মাঝখানটিতে এইভাবে ধরে রাখতে পারি—তুমি আর কারও নও ঠাকুরপো, শুধুই আমার।

আজ পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার আগে বুকের মাঝখানটা বড্ড খালি হয়ে গেছে। কিছু নেই। সেখানে। শুধু শূন্য। কোথায় তোমার হাত? কোথায় তোমার সেই সুধাময় স্পর্শ ঠাকুরপো? সব হারিয়ে গেল? সব তুমি কেড়ে নিলে?

তুমি হঠাৎ বললে, ‘চলোতো নাটকের মহড়াটা আরও একবার শুরু করা যাক। তোমার মন এখুনি ভালো হয়ে যাবে বউঠান। ‘ তখন তোমার জ্যোতিদার লেখা ‘অলীকবাবু’ নাটকের মহড়া চলছে। রোজ বিকেল থেকে সন্ধে পর্যন্ত। সেই নাটকের নায়ক-নায়িকা তুমি আর আমি। নায়ক অলীকবাবু তুমি, নায়িকা হেমাঙ্গিনী আমি। যার পর থেকে তুমি আমাকে চুপিচুপি ‘হে’ বলে ডাকতে শুরু করলে।

আমি তোমার হাতখানি বুকের মাঝে ধরে সেই দুপুরবেলা আমার খাটে শুয়ে-শুয়ে শুরু করলাম নাটকের মহড়া :

‘আমি জগতের সমক্ষে, চন্দ্রসূর্যকে সাক্ষী করিয়া, মুক্তকণ্ঠে বলিব, লক্ষবার বলিব, তুমিই আমার স্বামী, শতবার বলিব, সহস্রবার বলিব, লক্ষবার বলিব, আমিই তোমার স্ত্রী। ‘

তুমি চুপ করে শুনলে, কোনও কথা বললে না অনেকক্ষণ। তোমার হাতটিকে আমার বুকের ওপর থেকে সরিয়ে নিলে না। পাশ ফিরে শুধু তাকালে আমার মুখের দিকে।

ঠাকুরপো, আজও ভুলতে পারিনি তোমার সেই আর্তিময় আঁখিপাতের মায়া।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *