2 of 2

প্রশ্নের পর প্রশ্ন

প্রশ্নের পর প্রশ্ন

জীবনে কী করলে? কী পেলে? সফল মানুষ কাদের বলে জানো? ইউরোপ, আমেরিকা, পদমর্যাদা। সেমিনার। ফাটাফাটি নাম। খেতাবের পর খেতাব। হইহই রইরই। তুমি কী করলে?

ঠাকুর! ওরা যে এইসব বলছে ঠাকুর।

আমার কাছে পালিয়ে আয়। তোর ভেতরে বুকের কাছটিতে আমাদের দুজনকে ঠাস করে বসিয়ে রাখ। যেন কোনও ফাঁকফোকর না থাকে। সারদা বলেছেন, আমি আর তোমাদের ঠাকুর অভেদ। যেন যা বলছে বলুক। দেখে যা, আর শুনে যা। শুনিসনে তুই ভবের কথা সে যে বন্ধ্যার প্রসব ব্যথা। তুই চল, এগিয়ে যা, এগিয়ে যা, আমরা তোর সঙ্গে আছি।

ঠাকুর! ওদের একটু বিজ্ঞানের কথা দিয়ে গর্ব হরণ করব! ওই উন্নাসিক, সবজান্তাদের। পৃথিবীর জায়গীরদার!

পারবি?

আপনিও শুনুন না। পৃথিবীর এক বিখ্যাত বিজ্ঞানী, আমেরিকান, মানুষের কত দাম খতিয়ে বের করেছেন। মানবদেহের মূল্য। মাত্র দশ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় শ-পাঁচেক টাকার বেশি নয়।

কী হিসেবে?

একটা মানুষের দেহ কী কী উপাদানে তৈরি? আমাদের দেহের বেশির ভাগটাই হল জল। পৃথিবীতে জলের কোনও দাম নেই। দ্বিতীয় উপাদান কার্বন। কার্বন আর কয়লা মোটামুটি একই বস্তু। কয়লার দাম খুব বেশি নয়। মণখানেক কয়লার দাম বড়জোর পঞ্চাশ টাকা। এইবার হাড়ের কাঠামোটা! হাড় হল চক বা খড়ি। তারই বা কত দাম? এর পর আছে শরীরের প্রোটিন বস্তুতে নাইট্রোজেন। নাইট্রেজেনও সস্তা, এমন কিছু দামি বস্তু নয়। এর পর খানিকটা লোহা চাই রক্তের জন্যে। গোটাকতক মরচে ধরা পেরেক হলেই হবে। অতএব বৎস! কীসের তোমার এত হম্বিতম্বি? তোমাকে মানুষ না বলে যদি মাল বলি, সেই মালের দাম চারশো কি পাঁচশো টাকা। বড় কোম্পানির একজোড়া জুতোর দাম তোমার চেয়ে বেশি।

কেমন হল?

বেশ হল। এইবার উদ্ধার করো। এদিকের হিসাব হল, এইবার ওদিকের।

হ্যাঁ, ওদিকের! একজন বিজ্ঞানীকে এইসব উপাদান দিলে তিনি কি মানুষ তৈরি করতে পারবেন? যাঁরা রাসায়নিক পদার্থ বিক্রি করেন, তাঁদের কাছে গিয়ে বলা হল, মানুষ তৈরির উপাদান দিন। অণুর আকারে জল, কার্বন, নাইট্রোজেন, আয়রন আর ক্যালসিয়াম। কত দাম পড়বে? দশ মিলিয়ন ডলার। সে কী! মানুষের ছাইয়ের দাম পাঁচশো টাকা, আর সেই উপাদান পৃথিবীর দোকানে কিনতে গেলে পাঁচ কোটি টাকা!

যাক, মানুষের দেহগৌরব অনেকটাই বাড়ল।

আরও বাড়বে। এইবার একটা কাচের জারে পরিমাণমতো ওই উপাদানগুলি ঢালা হল। এইবার যন্ত্রের সাহায্যে আচ্ছা করে মেশানো হল। এইবার অপেক্ষা। দিন যায়, মাস যায়। বছর ঘুরে ঘুরে আসে, কই জার থেকে একটা মানুষ তো বেরিয়ে আসে না! কোনওদিনই আসবে না।

অনন্ত, অনন্ত, অনন্ত সমুদ্রের তটভাগ যেন এই ছোট্ট পৃথিবী।

The surface of the Earth is the share of the cosmic ocean. 01199 onlara আমাদের সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি তা এইখান থেকেই জেনেছি। হেঁটে হেঁটে ওই সীমাহীন সমুদ্রের কিনারা পেরিয়ে সাহস করে যতটুকু গেছি, তাতে আমাদের পায়ের গোড়ালিটুকু ভিজেছে মাত্র। এই অনন্তের বড় মায়া। অবিরত তার আহ্বান, আয়, আয়, চলে আয়। দেখবি আয়, কোথা থেকে গেছিস কোথায়? তুই কোন কাননের ফুল! The oecan calls. Some part of our। being knows this is from where we came. We long to return.7966919 নিকেতনে।

মহাবিশ্বে মহাকাশে We float like a mote of dust in the morning sky ভোরের আকাশে তুচ্ছ এক ধূলিকণা আমাদের এই রংদার পৃথিবী। আমাদের যত কলরব, যত হুঙ্কার, জ্ঞানের বড়াই, অহংকার—সব তুচ্ছ। অনন্ত এর কোনও খবরই রাখে না। আমাদের পৃথিবীর মাপ, সময়, ঘড়ি সেখানে অচল। একমাত্র মাপ আলোকবর্ষ। আলোর গতি সেকেন্ডে। ১,৮৬,০০০ মাইল। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসতে আট মিনিট লাগবে। অর্থাৎ পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব আট আলোক মিনিট। এইবার এই আলো এক বছরে যতদূর যেতে পারে, সেইটাই আমাদের মাপক। আলোকবর্ষ—ছয় ট্রিলিয়ান মাইল। এই হল অনন্তকে মাপার বিজ্ঞানীদের ফিতে।

(ও) তুই যেদিক যাবি দেখতে পাবি জলে জলাকার / (ও তার) নাহি অন্ত দিগদিগন্ত অপার পাথার। তা হলে We are like butterflies who flutter for a day and think it is forever. হায় প্রজাপতি! তোমার একটা দিনকেই চিরদিন ভাবলে! গতকাল সে কতকাল? আগামীকাল সে-ই বা কতকাল!

সাত কোটি বছর পার হয়ে গেছে!

প্রাচীন, প্রাচীন, কত প্রাচীন!

মাথা ঘুরে যায়! কোথা থেকে এলাম! কোথা ভেসে যাই? পনেরো থেকে কুড়ি বিলিয়ন বছর। বিলিয়ানের আভিধানিক বাংলা হল মহাপদ্ম। গণিতে ১,০০,০০০,০০০,০০০। আপনি ঠাকুর কী অসাধারণ একটি সত্য বললেন, যা বিজ্ঞানীর বিজ্ঞান—ওই ১ খুলে নাও। সব শূন্য। সেই এক-এর সন্ধান। নাহি সূর্য, নাহি জ্যোতিঃ। কেউ নেই, কিছু নেই। নিস্তরঙ্গ সমাধি। ঘোষ, বোস, মিত্তির, টম, ডিক, হ্যারি, কেঁচো, ব্যাঙ, বনমানুষ, হাতি, ছুঁচো, পণ্ডিত, মূর্খ, তোলাবাজ, মামলাবাজ, কেউ নেই, কিছু নেই। আছেন শুধু Absolute স্বয়মাত্মা। আছেন সেই এক। এক না থাকলে দুই আসে কোথা থেকে। আবার দুই আছে বলেই না এককে নিয়ে টানাটানি। প্রথম আদি।

নেই, নেই হঠাৎ আছে আছে। এই যে ক্ষণ—একটি চমক, একটি ঝলক, একটি বিস্ফোরণ, একটি শব্দ—অউ ম, ওঁ। বিজ্ঞানীরা বললেন, A remarkable explosive event exelled the big Bang প্রথম আদি তব শক্তি। বিশাল, বিশাল, বিপুল এক অগ্নি গোলক।

সর্বকালের মানবগোষ্ঠীর ভাবুক অংশ নিজেদের মতো করে ভেবেছে—বিশ্ব এল কোথা থেকে? নরওয়ের রূপকথার একটি সংকলনের নাম Younger Edas। প্রাচীন একটি গ্রন্থ প্রায় আটশো বছর আগে ১২২০ সাল নাগাদ সংকলিত। তৎকালীন আইসল্যান্ডের এক মহৎ ব্যক্তি মরি স্টারলেসন কর্তৃক সংকলিত। এডডা বলেছেন—শুরুতে কিছু ছিল না। পৃথিবী নেই, মাথার ওপর স্বর্গও নেই। বিশাল এক শূন্যতা। কোথাও ঘাস নেই। উত্তরে হিমাঞ্চল, তার নাম। নিফলহেইম। আর দক্ষিণে অগ্নির অঞ্চল, তার নাম মাসপেনহেইম, দক্ষিণের অগ্নিবলয়ের উত্তাপে উত্তরের হিমমণ্ডলের বরফের কিছুটা গলে জল তৈরি হল। সেই জলবিন্দুতে জন্মাল এক দৈত্য, তার নাম ওয়াইমের। এই দৈত্য কী খেয়ে বাঁচবে। তাহলে একটা গরুও ছিল, তার নাম আউধুমলা। এখন সেই গরু কী খাবে! তাহলে কিছু লবণও ছিল। সৃষ্টিতত্বের এই সরল গতি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *