অনুরাগ
প্রথমজন ভালোবাসে মদ্যপান। আর তাই তার লিভার ও কিডনি প্রায়ই ব্যথা করে।
দ্বিতীয়জন ভালোবাসে ধূমপান। তাই তার হার্ট আর ফুসফুসে সমস্যা। প্রথমজনের সঙ্গে দ্বিতীয়জনের দেখা হয় যখন, তাদের দেখা হয় সচরাচর ক্লিনিকে, তখন তাদের দুজনের একত্রে ব্যথা করে লিভার, হার্ট, কিডনি আর ফুসফুস।
তৃতীয়জন মদ্যপান ও ধূমপান দুটোই ভালোবাসে। প্রথম দুজনের যত রোগবালাই আছে, তার চেয়ে ঢের বেশি আছে তার একার। ক্লিনিকে তৃতীয়জনকে দেখলে প্রথম দুজন শ্রদ্ধাভরে লাইন ছেড়ে দেয়।
চতুর্থজন ভালোবাসে নারীদের। তার হার্ট, ফুসফুস, কিডনি ও লিভার ব্যথা করে। কখনো কখনো শরীরের দুই পাশেও। কারণ, তাকে প্রথম তিনজন পছন্দ করে না। তাকে তারা ক্লিনিকে দেখে না কখনোই। তবে কখনো কখনো দেখে ফেলে নিজেদের ফ্ল্যাটে। তখনই তার শরীরের দু’পাশে ব্যথা শুরু হয়।
পঞ্চমজন তীব্রভাবে ভালোবাসে অর্থকড়ি। মাঝেমধ্যে তার মাথাব্যথা করে। কারাগারে।
ষষ্ঠজন ভালোবাসে প্রকৃতি। প্রথম পাঁচজনের যা কিছু ব্যথা করে, তার সব কটিই তাকে ভোগায়। কারণ, আমাদের প্রকৃতিকে ভালোবাসা আর মদ্যপান, ধূমপান এবং মদ্যপায়ী ও ধূমপায়ী মেয়েকে ভালোবাসা, একই কথা।
সপ্তমজন কাউকে এবং কোনো কিছুই ভালোবাসে না। প্রথম ছয়জনের কোনো রোগেই তাকে ভুগতে হয় না। তবে মাঝেমধ্যে মাথার ভেতরে কী যেন হয় এবং চিন্তাভাবনাগুলো তার জট পাকিয়ে যায়।
শুধু ইভান কুজমিন সম্পূর্ণ সুস্থ এক মানুষ। কারণ, তিন বছর আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
বিরাগ
প্রথমজন মদ্যপান ছেড়ে দিল। ব্যথা তার তো কমলই না, বরং বন্ধুরা তাকে ঘৃণা করতে শুরু করল। রগচটা হয়ে উঠল সে।
দ্বিতীয়জন ধূমপান ছেড়ে দিল। হার্ট আর ফুসফুস তবু আগের মতোই ব্যথা করে। এ ছাড়া সে-ও রগচটা হয়ে উঠল প্রথমজনের মতোই। প্রথমজনের সঙ্গে যখন দ্বিতীয়জনের দেখা হয় ক্লিনিকে, তখন তারা দুজনে মিলে রগচটা হয়ে ওঠে।
তৃতীয়জন একসঙ্গে মদ্যপান ও ধূমপান ছেড়ে দিল। এখন ক্লিনিকে প্রথম দুজনকে দেখলে সে তাদের কনুই দিয়ে গুঁতিয়ে লাইন ভেঙে এগিয়ে যায় সামনে সাইকিয়াটিস্টের কেবিনের দিকে। কারণ, প্রথম দুজন একত্রে যতটা রগচটা, সে এখন একাই তেমন।
চতুর্থজন চুকিয়ে দিল নারী-ভালোবাসার পাট। সে এখন পুরুষদের ভালোবাসে। তার এখন ফুসফুস, কিডনি, লিভার ও নার্ভের সমস্যা। মাঝেমধ্যে শরীরের দুই পাশেও ব্যথা করে। কারণ, প্রথম তিনজন তাকে পছন্দ করে না। তাকে তারা ক্লিনিকে তো দেখেই না, দেখে না এখন তাদের ফ্ল্যাটেও। তবে পুরুষদের টয়লেটে তাকে তারা প্রায়ই দেখে। সেখানেই তারা তাকে বেদম মারধর করে। তখনই তার শরীরের দুই পাশে ব্যথা শুরু হয়।
পঞ্চমজন অর্থ ঘৃণা করতে শুরু করল। মাথাব্যথা প্রচণ্ডতর হলো তার। সেই কারাগারেই।
ষষ্ঠজন প্রকৃতি ঘৃণা করতে শুরু করল। এখন তার ব্যথা করতে শুরু করল সবকিছু, যেসব ব্যথা করত প্রথম পাঁচজনের, যখন তারা তাদের ভালোবাসায় মগ্ন ছিল এবং সেসব, যেসব তাদের ব্যথা করতে শুরু করেছে ভালোবাসা প্রত্যাহার করার পর। কারণ, আমাদের প্রকৃতি হলো মদ্যাসক্তা ও ধূমপায়ী নারীর মতো, যার কোনো মাথাব্যথাই নেই, তাকে কেউ ভালোবাসে কি না, তা নিয়ে।
সপ্তমজন সবাইকে ও সবকিছু ভালোবাসতে শুরু করল। তবে বলে রাখা উচিত, মানসিক হাসপাতালে।
শুধু ইভান কুজমিন সম্পূর্ণ সুস্থ এক মানুষ। কারণ, তিন বছর আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
এ করিয়াগিন: রুশ রম্যলেখক।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ১৩, ২০১১
Leave a Reply