০৭. লীনা তীক্ষ্ণ গলায় বলল

লীনা তীক্ষ্ণ গলায় বলল, উইল ইউ প্লিজ স্টপ কাউন্টিং মিস্টার রায়?

কাউন্টিং হেল্পস, ইউ নো। সবকিছুই কাউন্ট করা ভাল। নাউ, আউট উইথ ইয়োর স্টোরি।

লীনা ভিতরকার দুর্দম রাগটাকে ফেটে পড়া থেকে অতি কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করল, চোখ বুজে এবং ভীষণ জোরে টেলিফোনটা চেপে ধরে। সবেগে একটা শ্বাস ছেড়ে বলল, অল রাইট। বলছি।

লীনা বলল এবং ওপাশে ববি রায় একটি শব্দ না করে শুনে গেলেন। শব্দহীন ফোনে কথা বলতে বলতে লীনার মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল, লাইন কেটে গেল নাকি!

শুনছেন?

শুনছি। বলে যান।

বিবরণ শেষ হওয়ার পর ববি রায় বললেন, লোকটার মরা উচিত ছিল অনেক আগেই। এ ডাউনরাইট স্কাউন্ড্রেল। সেই খাতাটা এখন কোথায় বলতে পারেন?

কেন?

খাতাটার জন্য কেউ আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে পারে।

দ্যাট উইল ড্র এ লট অফ গুড টু ইউ। লোকটাকে আপনি আমার পিছনে লাগিয়েছিলেন কেন তা জানতে পারি?

ওনলি অ্যাকাডেমিক ইন্টারেস্ট, মিসেস ভট্টাচারিয়া। আমার সেক্রেটারি যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য কি না তা জানার দরকার ছিল।

আমার পার্সোনাল লাইফ সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার মধ্যে কোন অ্যাকাডেমিক ইন্টারেস্ট থাকতে পারে মিস্টার নোজি পারকার?

আমি আপনার পার্সোনাল লাইফে ইন্টারেস্টেড নই মিসেস ভট্টাচারিয়া। ইন ফ্যাক্ট আপনার পাসোনাল লাইফটা খুবই ডাল, ড্রাব, আড্রামাটিক এবং শেমফুল।

ইউ… ইউ…

কিন্তু আপনার লাইফটা হঠাৎ একটা ড্রামাটিক টার্ন নিতে পারে মিসেস ভট্টাচারিয়া। ড্রামাটিক অ্যান্ড ডেঞ্জারাস। আপনার সেই রোমিওটি কোথায়? তার যদি অন্য কোনও কাজ না জুটে গিয়ে থাকে, ইফ হি ইজ স্টিল এ ভ্যাগাবন্ড, তা হলে ওকে আপনার বডিগার্ড হিসেবে ইউজ করুন না কেন! নিতান্ত কাওয়াড়রাও প্রেমে পড়লে অনেক সাহনের কাজ করে ফেলে।

কথায় আছে অধিক শোকে পাথর। লীনার এখন সেই অবস্থা। এইসব গা-জ্বালানো কথায় সে যতখানি রাগবার বেগেছে। আরও রেগে যাওয়া কি তার পক্ষে সম্ভব! প্রত্যেক মানুষেরই তো একটা বয়লিং পয়েন্ট থাকে, তারপরে আর গরম হওয়া তো ওর পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং লীনা পাথর হয়ে এল। এবং খুব শান্ত হিমেল গলায় বলল, হোয়াই শুড আই নিড এ বডিগার্ড?

বিজ ইউ আর ইন মরটাল ডেঞ্জার, মাই ডিয়ার।

ড্রপ দি ডিয়ার বিট। তানি আপনার একটি কথাও বাস করছি না। আমি আজই রিজাইন। কবছি, এক্ষুনি।

তাতেই কি বাঁচবেন?

আপনার মতে অভদ্র, বর্বরের সঙ্গে কাজ করতে আমি ঘেন্না করি। আপনি আমাকে ভয় দেখানোর ছেলেমানুষি চেষ্টা করছেন। আমি ফোন ছেড়ে দিচ্ছি।

আর কয়েক সেকেন্ড পরে থাকুন এবং শুনুন প্লিজ।

আমি আপনার কোনও ব্যাপারেই থাকতে চাই না। আপনি আমাকে একগাদা ভুল কোড দিয়েছেন এবং আমাকে নিয়ে মজা করেছেন। ইয়ারকির একটা শেষ থাকা উচিত মিস্টার রায়।

তিন মিনিটের ওয়ার্নিং হল এবং ববি এক্সটেনশন চেয়ে নিলেন। তারপর ঠাণ্ডা গলায় বললেন, ভুল কোড নয়। দেয়ার ইজ এ কোড অলরাইট। তবে পারমুটেশন কম্বিনেশন করে বের করতে হবে। একটু মাথা খাটাতে হয় মিসেস ভট্টাচারিয়া, একটু মাথা খাটালেই…

ঝপাং করে টেলিফোন রেখে দিল লীনা। তারপর রাগে ক্ষোভে আক্রোশে একা একা ফুঁসতে লাগল।

ফোনটা রেখে ববি রায় একটু কাঁধ ঝাঁকালেন।

পিছন থেকে একটি কণ্ঠস্বর বলে উঠল, কাজটা ভাল হচ্ছে না স্যার।

ববি বিদ্যুৎগতিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, তুমি যে চিংড়ি মাছটা খাচ্ছ তার দাম কত জানো?

না স্যার।

আমিও জানি না। কিন্তু দেড়শো টাকার কম হবে না।

ও বাবা! বাকিটুকু কি খাব স্যার? দাম শুনে যে ভারী লজ্জা হচ্ছে।

ববি রায় চিন্তিতভাবে লোকটার দিকে চেয়ে থেকে বললেন, শুধু কি চিংডি? চিকেন ছিল না? রুমালি রোটি? চিকেন অ্যাসপ্যারাগাস স্যুপ?

ভারী লজ্জা করছে স্যার।

করছে তো?

করছে।

তা হলে আমি যা বলি না করি তা মুখ বুজে মেনে নেবে। বুঝলে?

ইন্দ্রজিৎ সেন চিংড়ির আর-একটা টুকরো মুখে দিয়ে বলল, মেনে না নিয়ে উপায় কী? তবু বলছি মেয়েটাকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়ে আপনি ভাল কাজ করছেন না। আপনার মর‍্যালে একটু লাগা উচিত ছিল।

ফের?

ভেবে দেখুন স্যার, আপনার আডভারসারিরা মোটেই সুবিপের লোক নয়। তারা ইনফরমেশনের জন্য খুন অবধি করতে পারে।

কাউকে না কাউকে তো বিপদে পড়তেই হবে। সবাইকে বাঁচিয়ে কি চলা যায়?

তবু উনি আফটার অল একজন মহিলা।

আমার কাছে মহিলাও যা, পুরুষও। ওনলি পার্সন।

আপনি কিন্তু স্যার, একটু জুয়েল-হাটেড আছেন। ওই যে ফোনে বললেন, আমার অনেক আগেই মরা উচিত ছিল এটা থেকেই বোঝা যায় আপনার মায়া-দা নেই।

ইন্দ্রজিৎ, ইউ আর স্টিল ইটিং দ্যাট চিংড়ি। টেস্টফুল, হেলথ গিভিং, কস্টলি। তোমার কৃতজ্ঞতাবোধ নেই?

আমি চিংড়িটার আর কোনও স্বাদ পাচ্ছি না স্যার।

তোমার মুখ দেখে তা মনে হচ্ছে না ইন্দ্রজিৎ! মনে হচ্ছে, ইউ আর ইম্‌মেনসলি এনজয়িং ইয়োর মিল।

ইন্দ্রজিৎ আর-একটা টুকরো মুখে চিবোতে চিবোতে চিবোতে বলল, এদের রান্না যে ভীষণ ভাল স্যার। এনজয় করতে চাইছি না, তবু খাওয়াটা থামাতে পারছি না। ক্যালকাটা টু বম্বে ফ্লাইটে কিছুই খাওয়াল না স্যার। শুধু দু’খানা প্লাস্টিকে মোড়া বিস্কুট আর কফি। বড্ড খিদেও পেয়েছিল। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স যে কী কেপ্পন হয়ে গেছে কী বলব স্যার! তাই খিদের মুখেই খাচ্ছি। তবে স্বাদ অনেকটাই কম লাগছে স্যার।

ববি বায় ভ্রু কুঁচকে ইন্দ্রজিতে দিকে ক্ষণকাল চেয়ে থেকে বললেন, ইজ শি স্মার্ট?

বেশ স্মার্ট।

তুমি মার্ডারটা যেভাবে সাজিয়েছ তা কি ফলপ্রুফ?

ইন্দ্রজিৎ মাথা নেড়ে দুঃখিতভাবে বলল, পৃথিবীতে কিছুই ফুল না স্যার।

মেয়েটা সন্দেহ করবে না তো?

এখনও তো করেনি। কিন্তু আমার খুন হওয়াটা কে সাজাতে হল সেটাই তো বুঝতে পারছি না, স্যার।

তোমার খুব বেশি বুঝবার দরকার কী?

তা অবশ্য ঠিক স্যার। তবে সকালে যে আমি লীনা দেবীর কাছে ধরা পড়ে গিয়েছিলাম, সেটা কিন্তু পুরোপুরি আমার দোষ নয় স্যার। উনি একটু তাড়াতাড়ি অফিসে এসে পড়েছিলেন।

সেইজন্যই তোমার খুন হওয়াটা দরকার ছিল হাঁদাবাম।

কিন্তু খাতাটা ওকে দেখালেন কেন স্যার? ব্যাপাবটা ফাঁস হয়ে গেল যে, আমিই ওর পিছনে স্পাইং করছি।

সেটারও দরকার ছিল। তুমি বুঝবে না। খাচ্ছ খাও।

ইন্দ্রজিৎ চিংড়ি শেষ করে পুডিং খেতে খেতে বলল, কাজটা ঠিক হল না স্যার।

কোন কাজটা?

মেয়েটাকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দেওয়াটা।

ইন্দ্রজিৎ, তুমি একটা সত্যি কথা বলবে?

বরাবরই বলে আসছি।

তুমি মেয়েটার প্রেমে পড়োনি তো?

ইন্দ্রজিৎ চোখ বুজে বলল, এদের পুডিংটা রাজা। ওফ, কী স্বাদ!

আর ইউ ইন লাভ উইথ দ্যাট গার্ল?

ইন্দ্রজিৎ চোখ নামিয়ে বলল, মেয়েটার চোখ দুটো ভারী ভাল। বু

ঝেছি।

ববি রায় কিছুক্ষণ ঘরের মধ্যে পায়চারি করলেন। তারপর ইন্দ্রজিতের দিকে চেয়ে বললেন, ক্রাইসিসটা যদি কাটে, তা হলে ইউ মে গো অ্যাহেড উইথ দ্যাট গার্ল।

থ্যাংক ইউ স্যার।

কিন্তু ক্রাইসিসটা কাটবে কী করে? ববি রায় আবার চিন্তিতভাবে ঘরজোড়া নরম কার্পেটের ওপর পায়চারি করতে করতে বললেন, আমি মৃত্যুকে এড়াতে পারি না আর। কিছুতেই না। জাল অনেক ছড়িয়ে পাতা হয়েছে। শোনো ইন্দ্রজিৎ…

বলুন স্যার।

আমার মৃত্যুর আগে ইনফরমেশনটা কিল করা চলবে না। কিন্তু আমার মৃত্যু ঘটবার সঙ্গে সঙ্গেই তা কি করতে হবে। ব্যাপারটা বুঝতে পারছ?

পারছি স্যার।

ভুল করলে চলবে না ইন্দ্রজিৎ।

ভুল হবে না স্যার।

আমাকে খুন করার পর মেয়েটাকে ওরা খুন করার চেষ্টা করতে পারে। অন্তত দে উইল পাম্প হার ফর ইনফরমেশন টেক কেয়ার ইন্দ্রজিৎ। মেয়েটা যেন খামোখা না মরে।

কিন্তু আপনি কখন খুন হবেন স্যার?

ববি রায় অসহায়ভাবে মাথা নাড়লেন। জানলার পরদা সরিয়ে বাইরে চেয়ে বললেন, ওই যে সব দূরে দূরে বাড়ি রয়েছে, ওখান থেকে টেলিস্কোপিক রাইফেল তাক করে গুলি চালানো হতে পারে।

ও বাবা!

ববি রায় ফিরে তাকিয়ে বললেন, আমার খাবারে বিষ মেশানো হতে পারে।

মাই গড!

ইন ফ্যাক্ট, ইন্দ্রজিৎ, তুমি এতক্ষণ ধরে যেসব সুস্বাদু খাবার খেলে তার মধ্যে সায়ানাইড থাকলে আমি অবাক হব না।

ইন্দ্রজিৎ করুণ মুখ করে বলল, স্যার, এইভাবেই কি প্রতিশোধ নিচ্ছেন! খাইয়ে, তারপর ভয় দেখিয়ে?

ববি রায় আনমনে পায়চারি করতে করতে বললেন, আরও কতরকম পথ খোলা আছে ওদের কাছে। শুধু সময়টা জানতে পারলে ভাল হত।

হ্যাঁ স্যার। আমাদেরও কত কাজের সুবিধে হয়ে যায় তা হলে। একটা কথা বলব সার?

বলো।

ডিটেকটিভদের রিভলভার বা পিস্তল না থাকলে ভাল দেখায় না।

তুমি আমার পিস্তলটা চেয়েছিলে, না?

হ্যাঁ সার। যদি মরেই যান তা হলে পিস্তলটা অন্তত…

তোমার তো লাইসেন্স নেই ইন্দ্রজিৎ।

থাক। ওটা আমি লুকিয়ে রাখব।

আমার মৃত্যু অবধি অপেক্ষা করো, ইন্দ্রজিৎ।

তাতে কী লাভ স্যার? আপনি মরলে পুলিশ ডেডবডি সার্চ করে ওটা নিয়ে যাবে।

এবার কাকে ক্রুয়েল-হার্টেড মনে হচ্ছে ইন্দ্রজিৎ?

আপনাকেই স্যার।

কেন?

যে নিজের মৃত্যুটাকেও ওরকম হেলাফেলা করে তার মতো নিষ্ঠুর আর কে আছে?

তুমি আঁচিয়ে এসো, ইন্দ্রজিৎ।

যাচ্ছি স্যার। একটা কথা জিজ্ঞেস করব? আপনার গলায় ওই অদ্ভুত সোনার চেনটা কেন স্যার?

ওটা চেন নয়।

তা হলে?

স্যাক্রেড থ্রেড। পৈতে।

তার মানে?

ছেলেবেলায় আমার একবার পেতে দেওয়া হয়েছিল। মা বলেছিল, এ ছেলে তোত পৈতে গলায় রাখবে না, ছিঁড়ে গেলে ফেলে দেবে। তাই সোনার পৈতে গলায় পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই থেকে আছে। কিন্তু আর সময় নেই ইন্দ্রজিৎ, আমাদের এবার উঠতে হচ্ছে।

 

বাথরুমে গিয়ে চোখে-মুখে অনেকক্ষণ ধরে জলের ঝাপটা দিয়ে এল লীনা। তারপর স্টিরিয়োতে গান শুনল বহুক্ষণ। ইংরিজি, রবীন্দ্রসংগীত, সরোদ।

অস্থিরতা তবু কমল না।

সে ডাল, ড্রাব, আনড্রামাটিক এবং শেমফুল জীবন যাপন করে? সে এতই সস্তা? এত খেলে? লোকটা তাকে ভাবে কী?

ফ্রিজ খুলে ঠান্ডা জল খেল লানা। তারপর পেপারব্যাক থ্রিলার খুলে বসল। কোনও লাভ নেই এসব করে, সে জানে। কিন্তু বিছানায় শুয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোনো এখন অসম্ভব।

বই রেখে বারান্দায় এসে দাঁড়াল লীনা। বেশ ঠান্ডা লাগছে। গায়ের গরম চাদরটা ভাল করে জড়িয়ে নিল সে! ভুতুড়ে নিস্তব্ধ বাড়িতে সে একা জেগে। কোনও মানে হয় না।

ববি রায়? ববি রায়কে সে এতটুকু সহ্য করতে পারছে না। ওই বাফুন, ওই ক্লাউন, ওই বর্বরটাকে আর সহ্য করা সম্ভবও নয় তার পক্ষে। বলে কিনা, তার মরটাল ডেঞ্জার আসছে!

হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গেল লীনা। মাথার ভিতরে টিক টিক করে উঠল। আজ বিকেলে কি তাকে সত্যিই কেউ অনুসরণ করেছিল? যদি করে থাকে, কেন? কেনই বা খুন হল ইন্দ্রজিৎ সেন?

এসব প্রশ্নের কোনও জবাব নেই।

কিন্তু জবাব তো একটা লীনার চাই।

ঘরে এসে লীনা টেবলল্যাম্প জ্বেলে বসে গেল। একটা কাগজে পূর্বাপর ঘটনাবলী সে সাজিয়ে লিখতে লাগল। বড্ড অ্যাবরাপ্ট। হঠাৎ করে ববি বায়ের তাকে ডেকে পাঠানো এবং তারপর থেকে যা কিছু ঘটেছে সবই অস্বাভাবিক এবং দ্রুতগতি। কিন্তু একটা প্যাটার্ন কি ফুটে উঠছে?

সে ববি রায়ের দেওয়া কোডগুলো পরপর লিখল। বয়ফ্রেন্ড থেকে শুরু করে বার্থ ডে, আই লাভ ইউ। পারমুটেশন কম্বিনেশা করতে বলেছিল লোক্টা! কী ছাই পারমুটেশন কম্বিনেশন করবে সে? এর কোনও মানে হয়?

তবে লীনা বুঝতে পারল, রহস্য যদি কিছু থেকেই থাকে তবে তা আছে ওই কম্পিউটারের গর্ভেই। কিন্তু সঠিক কোড না পেলে কম্পিউটার তো মুখ খুলবে না।

তা হলে?

টেবিলের ওপর হাতে মাথা রেখে ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত লীনা কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল। সকালে উঠে টের পেল, দাড় টনটন করছে, হাত ঝনঝন করছে।

নিয়মমাফিক ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম আর আসন করে সে খুব গরম জলে গা ড়ুবিয়ে বসে রইল অনেকক্ষণ।

সাজগোজ সেরে আজ অনেক আগেই অফিসে বেরিয়ে পড়ল সে।

ববি রায়ের ঘরে ঢুকে সাবধানে দরজা লক করল লীনা। তারপর কম্পিউটার টার্মিনালের সামনে এস।

রয় লাভ।

নো অ্যাকসেস।

দাঁতে দাঁত টিপে ভাবতে লাগল লীনা। বয়ফ্রেন্ড। আই লাভ ইউ। বার্থ ডে। কী বদমাশ লোকটা। কী অসভ্য! এ মা! বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে আই লাভ ইউ করে তারপর বার্থ ডে মানে বাচ্চাকাচ্চা হওয়ার সংকেত! ছিঃ ছিঃ।

আনমনে লীনা কিছুক্ষণ বসে রইল। লোকটা কি পারভার্ট?

সারা সকাল নানারকম কম্বিনেশন করে দেখল লীনা। কম্পিউটার কোনও সংকেতই দিতে পারল না।

তা হলে কি চিট করেছে লোকটা? তাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে?

ববি রায়ের ঘরে অনেকবার টেলিফোন বাজল। সুভদ্র সেক্রেটারির মতো লীনাকে কোকিলকণ্ঠ নজনকে জানাতে হল যে উনি আউট অব স্টেশন। কবে ফিরবেন ঠিক নেই।

বিকেলের দিকে আজও আসবে দোলন।

তারা বেড়াবে। কোথাও যাবে। সিনেমা দেখবে গ্রোবে।

কিন্তু রোম্যান্টিক বিকেলটা টানছিল না আজ লীনাকে! টানছিল বলি রায়ের ভিডিয়ো ইউনিট। তার কোড।

কিন্তু কোড আর কিছু বাকি নেই।

লীনার মাথাটা একটু পাগল-পাগল লাগছিল শেষ দিকে। ভিডিয়ো ইউনিটটার দিকে চেয়ে সে বলল, আই হেট ইউ, আই হেট ইউ ববি রায়।

বিদ্যুৎচমক! ববি রায়! আট অক্ষর।

লীনা দ্রুত চাবি টিপল। ববি রায়।

ভিডিয়ো ইউনিটে প্রাণের স্পন্দন দেখা দিল।

লীনা অবাক হয়ে দেখল, ইংরিজি অক্ষরে লেখা, বম্বে রোড ধরে ঠিক পঁচিশ মাইল চলে যাও। বাঁদিকে একটা মেটে রাস্তা। গাড়ি যায়। তিন মাইল। একটা বাড়ি। নাম নীল মঞ্জিল। খুব সাবধান। রিপিট, খুব সাবধান। কেউ যেন তোমাকে অনুসরণ না করে। এই মেসেজটা এক্ষুনি কি করে দাও, প্লিজ।

লীনা মুখস্থ করে নিয়ে, মেসেজটা কিল করে ভিডিয়ো ইউনিট বন্ধ করল।

দোলন এসেছে। রিসেপশন থেকে ফোনে জানাল।