০৩. মহুগ্রাম বা মহাগ্রাম

মহুগ্রাম বা মহাগ্রাম এককালে সমৃদ্ধিশালী গ্রাম ছিল। বহুসংখ্যক মাটির এবং ইটের বাড়ির পড়ো-ভিটা গ্রামখানির প্রাচীনত্ব এবং বিগত সমৃদ্ধির প্রমাণ হিসাবে আজও দেখা যায়। গ্রামখানি এখনও আকারে অনেক বড়, কিন্তু বসতি অত্যন্ত ইতস্তত বিক্ষিপ্ত। মধ্যে মধ্যে বিশ-পঁচিশ, এমনকি পঞ্চাশ-ষাট ঘর বসতির উপযুক্ত স্থান পতিত হইয়া আছে; খেজুর, কুল, অ্যাঁকড়,। শ্যাওড়া প্রভৃতি গাছে ও ছোট ছোট ঝোপজঙ্গলে ভরিয়া উঠিয়াছে। এগুলি এককালে নাকি বসতি-পরিপূর্ণ পাড়া ছিল। বসতি নাই কিন্তু এখনও দুই-চারিটার নাম বাঁচিয়া আছে। জোলাপাড়া ধোপাপাড়ায় এক ঘরও বসতি নাই; পালপাড়ায় মাত্র দুই ঘর কুমোর অবশিষ্ট; খায়ের পাড়ায় খাঁ উপাধিধারী হিন্দু পরিবার এককালে রেশমের দালালি করিয়া সম্পদশালী হইয়াছিল; রেশমের ব্যবসায়ের পতনের সঙ্গে তাহাদের সম্পদ গিয়াছে, খয়েরাও কেহ নাই; আছে কেবল

মহাজনদের ভাঙা বাড়ির ইটের বনিয়াদের চিহ্ন। খায়ের পাড়া পার হইয়া বিশ্বনাথ আপনাদের বাড়িতে আসিয়া উঠিল।

ন্যায়রত্ন-শিবশেখরেশ্বর ন্যায়রত্ন—এ অঞ্চলের মহামাননীয় ব্যক্তি, মহামহোপাধ্যায়। পণ্ডিত। বহুকাল হইতেই বংশটি পাণ্ডিত্য এবং নিষ্ঠার জন্য এ অঞ্চলে বিখ্যাত। দেশ-দেশান্তর হইতে তাহাদের টোলে বিদ্যার্থী-সমাগম হইত। এখনও টোল আছে, ন্যায়রত্নের মত। মহামহোপাধ্যায় গুরুও আছেন কিন্তু একালে বিদ্যার্থীর সংখ্যা নিতান্তই অল্প। বাড়ির প্রথমেই নারায়ণশিলার খড়ো-ঘরের সম্মুখে খড়ের আটচালায় টোল বসে। এক পাশে লম্বা একখানি ঘরে ছাত্রদের থাকিবার ব্যবস্থা। ঘরখানি প্রকাণ্ড; সুদৃশ্য এবং মনোরম না হইলেও বাস করিবার স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব নাই; সেকালে কুড়ি জন পর্যন্ত ছাত্র এই ঘরে বাস করিত, এখন থাকে মাত্র দুই জন। বিশ্বনাথ যখন আসিয়া আটচালায় ঢুকিল তখন তাহারাও কেহ ছিল না; বৃদ্ধ ন্যায়রত্ন তাহাদের দুই জনকেই চাষের কাজ দেখিতে মাঠে পাঠাইয়াছেন। কেবল একটা কুকুর ন্যায়রত্নের বসিবার আসন ছোট চৌকিটার উপর কুণ্ডলী পাকাইয়া বসিয়া বাদলের দিনে পরম আরাম উপভোগ করিতেছিল। বিশ্বনাথ দেখিয়া শুনিয়া বিষম চটিয়া গেল। দাদুর প্রতি তাহার প্রগাঢ় ভক্তি, সেই দাদুর আসনে আসিয়া বসিয়াছে একটা রোয়া ওঠা কুকুর! এদিক-ওদিক চাহিয়া কিছু না পাইয়া সে হাতের ছাতাটা উদ্যত করিয়া কুকুরটার পিছন দিক হইতে অগ্রসর হইল। ঠিক সেই মুহূর্তটিতেই ভিতরবাড়ির দরজায় ন্যায়রত্নের কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হইয়া উঠিল–ভো ভো রাজ আশ্রমমূগোহয়ং ন হন্তব্যো ন হন্তব্যাঃ!

মুখ ফিরাইয়া দাদুর দিকে চাহিয়া বিশ্বনাথ বলিল—এ ব্যাটা যদি আপনার কৃষ্ণসার আশ্ৰমমৃগ হয় তবে ঋষিবাক্যও আমি মানব না। ব্যাটা ঘেয়ো কুকুর–

হাসিয়া ন্যায়রত্ন বলিলেন–ও আমার কাঙালীচরণ।

কাঙালী আপন নাম শুনিয়া মুখ তুলিয়া ছত্রপাণি বিশ্বনাথকে দেখিয়াও নড়িবার নাম করিল না, শীর্ণ কাঠির মত লেজটা জলচৌকির উপর আছড়াইয়া পটপট শব্দ-মুখর করিয়া তুলিল। ন্যায়রত্ব অগ্রসর হইয়া আসিতেই সে চিৎ হইয়া শুইয়া পা চারিটা উপরের দিকে তুলিয়া দিল। এবার বিশ্বনাথ না হাসিয়া পারিল না। ন্যায়রত্ব হাসিয়া বলিলেন—এক ঘা খেলেই তো মরে যেত। যা ছাতা তুমি তুলেছিলে!

বিশ্বনাথ উদ্যত ছাতাটা নামাইয়া বলিল—মাথা রাখবার জন্য ছাতার ব্যবস্থা দাদু, ওর বট আর। শিক যতই মজবুত হোক মাথা ভাঙবার পক্ষে পর্যাপ্ত নয়। মাথা ওর ভাঙত না, এক ঘা ওটাকে দেওয়াই আমার উচিত ছিল। যাক্ গে—হঠাৎ ও ব্যাটা জুটল কি করে? কি নাম বললেন– ওর?

—কাঙালীচরণ। নামটা দিয়েছি আমিই। নামেই পরিচয়, কেমন করে কোথা থেকে এসে। জুটলেন উনি। কিন্তু এই বাদলা মাথায় করে গিয়েছিলে কোথায়?

–গিয়েছিলাম দেবুর সঙ্গে। বলছি। দাঁড়ান আগে জামা গেঞ্জি খুলে আসি আমি।

বিশ্বনাথ ভিতরে চলিয়া গেল।

দেবুর নামে ন্যায়রত্নের মুখ ঈষৎ গম্ভীর হইয়া উঠিল। কিন্তু সে মুহূর্তের জন্য। পরমুহূর্তেই তিনি স্বাভাবিক প্রসন্নমুখে বাড়ির ভিতরেই চলিয়া গেলেন।

ভিতরে প্রবেশ করিতেই ন্যায়রত্ন শুনিলেন নারীকন্ঠের কথা—আর বোলো না, বুড়ির। জ্বালায় অস্থির হয়ে উঠেছি। কানে বদ্ধ কালা—বকলেও শুনতে পায় না; একবার কাপড় নিলে পর দিনের আগে দেবে না। জবাব দিতেও মায়া লাগে।

বিশু বলিল—তাই বলে এই রকম ময়লা কাপড় পরে থাকবে! ছি!

–তা বটে। লোকজনের সামনে বেরুতে লজ্জা।

ন্যায়রত্ব হাসিয়া বাড়ির উঠানে উপস্থিত হইয়া বলিলেন–

সরসিজমনুবিদ্ধং শৈবলেনাপি রম্যং
মলিনমপি হিমাংশোর্লক্ষ্মলক্ষ্মীং তনোতি।

সখি শকুন্তলে, মধুরাণ্যং আকৃতিনাং মণ্ডনং শোভনং কিমিব ন! তোমার সুন্দর বরতনুতে এই ময়লা কাপড়খানিই অপরূপ শোভন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তোমার দুষ্মন্ত ওতেই মুগ্ধ হয়েছেন।

বিশ্বনাথ কথা বলিতেছিল স্ত্রীর সঙ্গে। সুন্দর একটি খোকাকে কোলে করিয়া তরুণী জয়া রান্নাঘরের দাওয়ায় দাঁড়াইয়া ছিল; সেও লজ্জিত হইয়া দ্রুতপদে রান্নাঘরের ভিতর গিয়া ঢুকিল। বিশ্বনাথও হাসিতে হাসিতে বাহিরে চলিয়া গেল।

শূন্য উঠানে দাঁড়াইয়া ন্যায়রত্ন আবার গম্ভীর হইয়া উঠিলেন। ইতিমধ্যে টলিতে টলিতে বাহির হইয়া আসিল খোকাটি। সুন্দর খোকা! মনোরম একটি লাবণ্য যেন সর্বাঙ্গ হইতে ঝরিয়া পড়িতেছে। বছরখানেক বয়স, সে আসিয়া বলিল—ঠাকুল!

জয়া তাহাকে শিখাইয়াছে কথাটি; প্রপিতামহ ন্যায়রত্নকে সে বলে ঠাকুর।

ন্যায়রত্ন পৌত্রের সহিত ভাই সম্বন্ধ ধরিয়া প্রপৌত্রকে বলেন-বাবা, বাপি।

ছেলেটি আবার ডাকিল—ঠাকুল!

মুহূর্তে ন্যায়রত্নের মুখ প্ৰসন্ন হাসিতে ভরিয়া উঠিল—তিনি দুই হাত প্রসারিত করিয়া তাহাকে বুকে তুলিয়া বলিলেন-বাপি!

—আবা কোলো, আবা গান কোলো। অর্থাৎ আবার গান কর। ন্যায়রত্নের শ্লোক আবৃত্তির মধ্যে যে সুরটি থাকে শুনিয়া শুনিয়া শিশু সেই সুরের মাধুর্যটিকে চিনিয়াছে, একবার শুনিয়া তাহার তৃপ্তি হয় না, সে বলে—আবা গান কোলো। ন্যায়রত্ন শিশুর অনুরোধ উপেক্ষা করেন না, আবার তিনি শ্লোক আবৃত্তি করেন। শিশুটির নাম অজয়, অজয় আবারও বলে—আবা কোলো।

ন্যায়রত্ন তাহাকে বুকে চাপিয়া ধরেন। আনন্দে তাহার চোখ জলে ভরিয়া ওঠে। তাহার মনে হয়—এ সেই। হারানো ধন তাহার ফিরিয়া আসিয়াছে।

ন্যায়রত্বের হারানো ধন, তাহার একমাত্র পুত্র শশিশেখর, বিশ্বনাথের বাপ। সৌম্যকান্তি সুপুরুষ শশিশেখর এমনি তীক্ষ্ণধী ছিলেন এবং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দর্শনশাস্ত্রে প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য অর্জন করিয়াছিলেন। শুধু হিন্দুদর্শন নয়, বৌদ্ধদৰ্শন, এমনকি বাপকে লুকাইয়া ইংরাজি শিখিয়া পাশ্চাত্য দর্শনও তিনি আয়ত্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহাই হইয়াছিল সর্বনাশের হেতু।

সে আমলে শিবশেখরেশ্বর ন্যায়রত্ন ছিলেন আর এক মানুষ। প্রাচীনকাল এবং সনাতন ধর্মকে রক্ষা করিবার জন্য তিনি মহাকালের তপোবনরক্ষী শূলহস্ত নন্দীর মত ভঙ্গি করিয়া তৰ্জনী উদ্যত করিয়া সদাজাগ্রত ছিলেন। সেই হিসাবে তিনি স্লেচ্ছ ভাষা ও বিদ্যা শিক্ষার বিরোধী ছিলেন। শশিশেখরও আপনার ইংরাজি শিক্ষার কথা সযত্নে লুকাইয়া রাখিয়াছিলেন। কিন্তু অকস্মাৎ সে কথা একদিন প্রকাশ হইয়া পড়িল। সে সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন একজন ইংরেজ। ভদ্রলোক আইসিএস কর্মচারী হইলেও রাজনীতি অপেক্ষা বিদ্যানুশীলনেই বেশি অনুরাগী ছিলেন। আপন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি ছিলেন দর্শনশাস্ত্রের কৃতী ছাত্র। ভারতবর্ষে আসিয়া ভারতীয় দর্শনশাস্ত্রের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হইয়াছিলেন। এই জেলায় আসিয়া তিনি মহামহোপাধ্যায় শিবশেখরেশ্বর ন্যায়রত্নের নাম শুনিয়া একদা নিজেই আসিয়া উপস্থিত হইলেন ন্যায়রত্নের টোলে। সাহেবের সঙ্গে ছিলেন জেলা স্কুলের হেডমাস্টার। দোভাষীর কাজ করিবার জন্যই সাহেব তাহাকে সঙ্গে আনিয়াছিলেন। শশিশেখর তখন সবে নবদ্বীপ হইতে দর্শনশাস্ত্র পড়া শেষ করিয়া বাড়ি ফিরিয়াছেন। ন্যায়রত্ন সাদর অভ্যর্থনার ক্ৰটি করিলেন না। শশীর কিন্তু এতটা ভাল লাগিল না। তবু সে চুপ করিয়াই রহিল। সাহেবও একটু সংকুচিত হইয়াছিলেন। জেলা স্কুলের হেডমাস্টার ন্যায়রত্নকে বলিল—আপনি ব্যস্ত হবেন না ন্যায়রত্ন মশায় সাহেব ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে আপনার এখানে আসেন নি। উনি এসেছেন আপনার সঙ্গে আলাপ করতে।

ন্যায়রত্ব হাসিয়া বলিলেন—আলাপের ভূমিকাই হল অভ্যর্থনা। আর এটা আমার আতিথ্যধর্ম। রাজার দরবারে পণ্ডিত ব্যক্তির সম্মান যেমন প্রাপ্য পণ্ডিতের কাছে রাজা রাজপুরুষের সম্মানও তেমনি প্রাপ্য। এ আমার কর্তব্য।

অতঃপর আরম্ভ হইল আলাপ। আলাপ আলোচনা শেষ করিয়া সাহেব উঠিয়া হাসিয়া ইংরাজিতে হেডমাস্টারকে কি বলিলেন। মাস্টারটি ন্যায়রত্নকে কথাটা অনুবাদ করিয়া না শুনাইয়া পারিলেন না। বলিলেন সাহেব কি বলছেন জানেন?

ন্যায়রত্ন কোনো আগ্রহ প্রকাশ করিলেন না, শুধু একটু হাসিলেন।

হেডমাস্টার বলিলেন–গ্রিক বীর আলেকজান্দার আমাদের দেশের এক যোগী-পুরুষকে দেখে বলেছিলেন, আমি যদি আলেকজান্দার না হতাম তবে এই ভারতের যোগী হবার কামনা করতাম। সাহেবও ঠিক তাই বলছেন। বলছেন যে, ইংলন্ডে না জন্মালে আমি ভারতবর্ষে এমনি শিবশেখরেশ্বর হয়ে জন্মগ্রহণের কামনা করতাম।

ন্যায়রত্ব হাসিয়া বলিলেন আমার এ ব্রাহ্মণজন্ম না হলেও আমি কিন্তু এই দেশের কীটপতঙ্গ হয়ে জন্মাতে কামনা করতাম, অন্যত্র জন্ম কামনা করতাম না।

ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব ন্যায়রত্নের কথার মর্ম শুনিয়া হাসিয়া ইংরেজিতে মাস্টার মহাশয়কে বলিলেন ইনফিরিয়রিটির এ এক ধারার বিচিত্র প্রকাশ! এটা যেন ভারতবাসীর প্রকৃতিগত।

মাস্টারটির মুখ লাল হইয়া উঠিল কিন্তু সাহেবের কথার প্রতিবাদ করিবার সাহস তাহার হইল না। ন্যায়রত্ন ইংরাজি বুঝিলেন না, কিন্তু বার হাসির রূপ ও কথার সুর শুনিয়া ব্যঙ্গের শ্লেষ অনুভব করিলেন। তবুও তিনি চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন। কিন্তু শশিশেখর দৃঢ়স্বরে ঈষৎ উষ্ণতার সহিত ইংরাজিতেই বলিয়া উঠিলেন না, ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স এ নয়। এই তার এবং ভারতীয় মনীষীদের অন্তরের বিশ্বাস। তোমাদের পাশ্চাত্য বিদ্যা মনের অতিরিক্ত কিছু বোঝে না-বিশ্বাস করে না, আমরা মনের সীমানা অতিক্রম করে অন্তর এবং আত্মাকে বিশ্বাস করি। মন ও চিত্তকে জয় করে আত্মোপলব্ধির সাধনাই আমাদের সাধনা। আমাদের আত্মাকে মন পরিচালিত করে না, আত্মার নির্দেশে মনকে চলতে হয় বাহনের মত। সুতরাং তোমাদের মনোবিশ্লেষণে আমাদের ভারতীয় সাধক মনীষীদের কমপ্লেক্স-বিচার মূঢ়তা ছাড়া আর কিছু নয়।

সাহেব সপ্রশংস দৃষ্টিতে শশীর মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন; মাস্টারটি ত্রস্ত হইয়া উঠিলেন, রাজপুরুষের সপ্রশংস দৃষ্টিকেও তিনি বিশ্বাস করেন না। ন্যায়রত্ন বিপুল বিস্ময়ে বিস্মিত হইয়া পুত্রের দিকে চাহিয়া রহিলেন। শশী ম্লেচ্ছভাষায় অবলীলাক্রমে কথা বলিয়া গেল। শশীর মুখে ম্লেচ্ছভাষা!

এই লইয়াই পিতা-পুত্রে বিরোধ বাঁধিয়া গেল।

ন্যায়রত্ব কালধর্মকে শিবের তপোবনে ঋতুচক্রের আবর্তনকে ঠেকাইয়া রাখার মত দূরে রাখিয়া সনাতন মহাকালধর্মকে অ্যাঁকড়াইয়া ধরিয়া থাকিতে চাহিয়াছিলেন; কিন্তু অকস্মাৎ দেখিলেন কখন কোন এক মুহূর্তে সেখানে অকাল বসন্তের মত কালধৰ্ম বিপর্যয় বাঁধাইয়া তুলিয়াছে। তাহারই ঘরে শশীর মধ্য দিয়া ম্লেচ্ছবিদ্যার ভাবধারা সনাতন মহাকালধর্মকে ক্ষুণ্ণ করিতে উদ্যত হইয়াছে। অপর দিকে শশিশেখর, এই আকস্মিক আত্মপ্রকাশের ফলে, সঙ্কোচশূন্য হইয়া আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসংস্কৃতিমত জীবন নিয়ন্ত্রণে বদ্ধপরিকর হইয়া উঠিল।

তারপর সে এক ভয়ঙ্কর পরিণতি। ন্যায়রত্ন শূলপাণি নন্দীর মতই কঠিন নির্মম হইয়া উঠিলেন। শশিশেখর স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জনের জন্য গৃহত্যাগ করিল। ন্যায়রত্ন তাহাকে বাধা দিলেন না। কিন্তু বংশধারা অক্ষুণ্ণ রাখিবার জন্য পুত্রবধূ ও পৌত্রকে লইয়া যাইতে দিলেন না। সংকল্প করিলেন, শশী যে সংস্কৃতির ধারাকে ক্ষুণ্ণ করিয়াছে সেই ধারাকে সংস্কার করিবার উপযুক্ত করিয়া গড়িয়া তুলিবেন ওই পৌত্রকে; এক বৎসর পরে ঘটিল এই ঘটল চরম পরিণতি। এক পণ্ডিত-সভায় পিতা-পুত্রে শাস্ত্রবিচার লইয়া বিতর্ক উপলক্ষ করিয়া প্রকাশ, বিরোধ বাঁধিয়া গেল। শশিশেখরের সেই দীপ্ত চক্ষু, স্কুরিত অধর, প্রতিভার বিস্ফোরণ আজও ন্যায়রত্নের চোখের ওপর ভাসে। তাহার চোখে জল আসে।

সভার শেষে পিতা পুত্ৰকে বলিলেন আজ থেকে জান আমি পুত্ৰহীন। সনাতন ধর্মকে যে আঘাত করতে চেষ্টা করে, সে ধর্মহীন। ধর্মহীন পুত্রের মৃত্যু অপেক্ষা করণীয় কল্যাণ আর কিছু কামনা করতে পারি না আমি।

শশীর চোখ জ্বলিয়া উঠিল, সে বলিলতা হলেই কি সনাতন ধর্ম রক্ষা হবে আপনার?

–হবে।

সেই দিনই শিবশেখরেশ্বর ন্যায়রত্ন পুত্ৰহীন হইয়া গেলেন। শশিশেখর আত্মহত্যা করিল।

শিবশেখরেশ্বর স্তম্ভিত হইয়া কিছুকালের জন্য যেন সংজ্ঞা হারাইয়া ফেলিলেন। মদনকে ভস্ম করিয়া মহাকাল অন্তৰ্হিত হইলে নন্দীর যেমন অবস্থা হইয়াছিল ন্যায়রত্নেরও তেমনি অবস্থা হইল। তারপর অকস্মাৎ একদা তিনি মহাকালকে ওই নন্দীর মতই গিরিভবন-পথে বরবেশী মহাকালকে আবিষ্কারের মতই আবিষ্কার করিলেন। কালের পরিবর্তনশীলতাকে মহাকালের লীলা বলিয়া যেন প্রত্যক্ষ করিলেন। সতীপতি মহাকাল সেই লীলায় গৌরীপতি; কিন্তু সেইখানেই কি তাহার লীলার শেষ হইয়া গিয়াছে? এককালে তাই তিনি বিশ্বাস করিতেন বটে। কিন্তু আজ অনুভব করেন—সতী-গৌরীরূপিণী মহাশক্তি কত নূতন রূপে মহাকালকে বরণ করিয়াছেন, কিন্তু সে লীলা প্রত্যক্ষ করিবার মত দিব্যদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যাসদেব আবির্ভূত হইয়া আর নব-পুরাণ রচনা করেন নাই।

বিশ্বনাথের পড়িবার বয়স হইতেই তিনি বিশ্বনাথকেই প্রশ্ন করিয়াছিলেন—দাদুর কোথায় পড়তে মন? আমার টোলে—না কঙ্কণার ইস্কুলে?

ছয়-সাত বৎসর বয়সের বিশ্বনাথ বলিয়াছিল–বাড়িতে তোমার কাছে পড়ব দাদু আর ভাত খেয়ে ইস্কুলে যাব। টোলের নামও করে নাই।

ন্যায়রত্ন সেই ব্যবস্থাই করিয়াছিলেন।…বিশ্বনাথ আজ এম. এ পড়ে। ন্যায়রত্নের স্ত্রী মারা গিয়াছেন, পুত্রবধূ বিশ্বনাথের মা-ও নাই। বিশ্বনাথের বিবাহ দিয়া ন্যায়রত্ন আজ সংসার করিতেছেন, আর কালধর্মকে প্রণাম করিয়া মুগ্ধ দ্রষ্টার মত তাহার চরণক্ষেপের দিকে চাহিয়া আছেন।

কিন্তু তবু আজ দুই দুইবার তাহার মুখ গম্ভীর হইয়া উঠিল, জ্ব কুঞ্চিত হইল। বিশ্বনাথ এ কি করিতেছে? স্থানীয় বৈষয়িক গণ্ডগোলে আপনাকে জড়াইতেছে কেন? নিরস্ত হইবার জন্যই তিনি ঘরে গিয়া পুঁথি লইয়া বসিলেন।

 

সমস্ত দুপুর চিন্তা করিয়াও তিনি নিরস্ত এবং নিস্পৃহ হইতে পারিলেন না। অপরাহ্নে পৌত্রের ঘরের দরজায় আসিয়া ডাকিলেন বিশু!

ঘরের ভিতর হইতে উত্তর দিল শিশু অজয়ঠাকুল! কোলে চাপি বাড়ি যাই।বাড়ি যাই অর্থাৎ বাহিরে যাই।

হাসিয়া ন্যায়রত্ব ভিতরে ঢুকিয়া দেখিলেন বিশ্বনাথ ঘরে নাই। অজয়কে কোলে তুলিয়া লইয়া পৌত্রবধূকে প্রশ্ন করিলেন-হলা রাজ্ঞী শউলে! রাজা দুষ্মন্ত কোথায় গেলেন?

হাসিয়া মাথার ঘোমটা অল্প বাড়াইয়া দিয়া জয়া বলিল—কি জানি কোথায় গেলেন।

ন্যায়রত্ন অজয়কে আদর করিয়া একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন; তারপর অকস্মাৎ গম্ভীর হইয়া বলিলেন—তোমার সংসার-জ্ঞান আর কখনও হবে না।—বলিয়া প্রপৌত্রকে পৌত্রবধূর কোলে দিয়া বাহির হইয়া আসিলেন চণ্ডীমণ্ডপে। বিশ্বনাথ নাটমন্দিরেই বসিয়া ছিল।

ন্যায়রত্ন ডাকিলেন–বিশ্বনাথ!

বিশ্বনাথ ডাকে বিশ্বনাথ চকিত হইয়া উঠিল। দাদু তাহাকে ডাকেন দাদু বা বিশু নামে অথবা সংস্কৃত নাটক-কাব্যের নায়কদের নামে কখনও ডাকেন রাজন্, কখনও রাজা দুষ্মন্ত, কখনও অগ্নিমিত্র ইত্যাদি—যখন যেটা শোভন হয়। বিশ্বনাথ নামে দাদু কখনও ডাকিয়াছেন বলিয়া তাহার মনে পড়িল না। চকিত হইয়া সে সসম্ভ্ৰমেই উত্তর দিল—আমাকে ডাকছেন?

ন্যায়রত্ন বলিলেন–হ্যাঁ। খুব ব্যস্ত আছ কি?

ন্যায়রত্ন অকস্মাৎ আজ চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছেন। পুত্র শশিশেখরের আত্মহত্যার পর হইতে তিনি নিরাসক্তভাবে সংসারে বাস করিবার চেষ্টা করিয়া আসিতেছেন। স্ত্রী বিয়োগে তিনি একফোঁটা চোখের জল ফেলেন নাই, এমনকি মনের গোপনতম কোণেও একবিন্দু বেদনাকে জ্ঞাতসারে স্থান দেন নাই। তারপর পুত্রবধূ মারা গেলে—সেদিনও তিনি অচঞ্চলভাবেই আপনার কৰ্তব্য করিয়াছিলেন। নিজে হাতে রান্না করিয়া দেবতার ভোগ দিয়াছেন, পৌত্র বিশ্বনাথকে খাওয়াইয়াছেন, গৃহকৰ্ম করিয়াছেন; স্থিরতা কখনও হারান নাই। আজ কিন্তু অন্তরে অস্থির বাহিরে চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছেন।

এখানে যে প্রজা-ধর্মঘট লইয়া আন্দোলন উঠিয়াছে সে সংবাদ বিশ্বনাথ কলিকাতায় বসিয়া কেমন করিয়া পাইল? এবং প্রজা-ধর্মঘটে সে কেন আসিল?

তাহার এই আসা রথযাত্রা উপলক্ষে হইলেও ধর্মঘটের ব্যাপারটাই যে এই আগমনের মুখ্য উদ্দেশ্য একথা স্পষ্ট। দেশ-কালের পরিচয় তাঁহার অজ্ঞাত নয়, রাজনীতিক আন্দোলনের সংবাদ তিনি রাখিয়া থাকেন; দেশের বিপ্লবাত্মক আন্দোলন ধীরে ধীরে প্রজা-জাগরণের মধ্যে কেমন করিয়া সঞ্চারিত হইতেছে—তাহাও তিনি লক্ষ্য করিয়াছেন। তাই আজ দেবু ঘোষের সহিত বিশ্বনাথের এই যোগাযোগে তিনি চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছেন। অকস্মাৎ অনুভব করিলেন যে, এতকালের নিরাসক্তির খোলসটা আজ যেন খসিয়া পড়িয়া গেল; কখন আবার ভিতরে ভিতরে আসক্তির নূতন ত্বক সৃষ্টি হইয়া নিরাসক্তির আবরণটাকে জীর্ণ পুরাতন করিয়া দিয়াছে।

ন্যায়রত্ন পৌত্রের মুখের দিকে কিছুক্ষণ চাহিয়া রহিলেন; তারপর ধীরে ধীরে প্রশ্ন করিলেন-বাঁকা কথা কয়ে লাভ নেই দাদু-আমি সোজা কথাই বলতে চাই। প্রজা-ধর্মঘটের সঙ্গে তোমার সম্বন্ধ কি? দেবু ঘোষের এই হাঙ্গামার খবর তোমাকে জানালেই বা কে?

বিশ্বনাথ হাসিয়া বলিল-আজকাল টেলিগ্রাফের কল এখানে টিপলে হাজার মাইল দূরের কল সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেয়, আর কলকাতায় খবরের কাগজ বের হয় দুবেলা। তা ছাড়া আপনি তো জানেন যে, দেবু আমার ক্লাসফ্রেন্ড।

–আমি তো বলেছি বিশ্বনাথ, আমি সোজা কথা বলছি, উত্তরে তোমাকেও সোজা কথা বলতে অনুরোধ করছি। আর আমার ধারণা তুমি অন্তত আমার সামনে সত্য কখনও গোপন কর না।

ন্যায়রত্নের কণ্ঠস্বর আন্তরিকতায় গভীর ও গম্ভীর। বিশ্বনাথ পিতামহের দিকে চাহিল–দেখিল মুখখানা আরক্তিম হইয়া উঠিয়াছে। বহুকাল পূর্বে ন্যায়রত্নের এ মুখ দেখিলে এ অঞ্চলের সকলেই অন্তরে অন্তরে কাঁপিয়া উঠিত। তাঁহার বিদ্রোহী পুত্র শশিশেখর পর্যন্ত এ মূর্তির সম্মুখে চোখে চোখ রাখিয়া কথা বলিতে পারিতেন না। পিতার সহিত, তিনি বিদ্রোহ করিয়াছেন, তর্ক করিয়াছেন, কিন্তু সে সবই করিয়াছেন নতমুখে মাটির দিকে চোখ রাখিয়া। ন্যায়রত্নের সেই মুখের দিকে চাহিয়া বিশ্বনাথ ক্ষণেকের জন্য স্তব্ধ হইয়া গেল। ন্যায়রত্ন আবার বলিলেন-কথার উত্তর দাও ভাই!

বিশ্বনাথ মৃদু হাসিয়া বলিল আপনার কাছে মিথ্যে কখনও বলি নি, বলবও না। এখানে মানে, ওই শিবকালীপুর গ্রামে—একজন রাজবন্দি ছিল জানেন? যাকে এখান থেকে কদিন হল সরিয়ে দিয়েছে? খবর দিয়েছিল সে-ই।

–তার সঙ্গে তোমার পরিচয় আছে?

–আছে।

—তা হলে—ন্যায়রত্ন পৌত্রের মুখের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চাহিয়া থাকিয়া বলিলেনতোমরা তা হলে একই দলভুক্ত?

–এককালে ছিলাম। কিন্তু এখন আমরা ভিন্ন মত ভিন্ন আদর্শ অবলম্বন করেছি।

অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া ন্যায়রত্ন বলিলেন তোমাদের মত, তোমাদের আদর্শটা কি আমাকে বুঝিয়ে দিতে পার বিশ্বনাথ?

পিতামহের মুখের দিকে চাহিয়া বিশ্বনাথ বলিল—আমার কথায় আপনি কি দুঃখ পেলেন দাদু?

-দুঃখ? ন্যায়রত্ন অল্প একটু হাসিলেন, তারপর বলিলেন—সুখ-দুঃখের অতীত হওয়া সহজ সাধনার কাজ নয় ভাই। দুঃখ একটু পেয়েছি বৈকি।

—আপনি দুঃখ পেলেন দাদু! কিন্তু আমি তো অন্যায় কিছু করি নি। সংসারে যারা খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়, তাদেরই একজন হবার আকাঙ্ক্ষা আমার নেই বলে দুঃখ পেলেন?

বিশ্বনাথ, দুঃখ পাব না, সুখ অনুভব করব না, এই সংকল্পই তো শশীর মৃত্যুর দিন গ্রহণ। করেছিলাম। কিন্তু জয়াকে যেদিন তোমার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ঘরে আনলাম, আজ মনে হচ্ছে সেইদিন শৈশবকালের মত গোপনে চুরি করে আনন্দরস পান করেছিলাম তারপর এল অজুমণি, অজয়। আজ দেখছি শশীর মৃত্যুদিনের সঙ্কল্প আমার ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। জয় আর অজয়ের জন্যে চিন্তার, দুঃখের যে সীমা নেই।

বিশ্বনাথ চুপ করিয়া রহিল।

ন্যায়রত্নও কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া বলিলেন—তোমার আদর্শের কথা তো আমাকে বললে না ভাই?

—আপনি সত্যিই শুনতে চান দাদু?

–হ্যাঁ, শুনব বৈকি।

বিশু আরম্ভ করিল—তাহার আদর্শের কথা, অর্থাৎ মতবাদের কথা। ন্যায়রত্ন নীরবে সমস্ত শুনিয়া গেলেন, একটি কথাও বলিলেন না। রুশ দেশের বিপ্লবের কথা, সে দেশের বর্তমান অবস্থার কথা বৰ্ণনা করিয়া বিশ্বনাথ বলিল—এই আমাদের আদর্শ দাদু। কম্যুনিজম, মানে সাম্যবাদ।

ন্যায়রত্ন বলিলেন—আমাদের ধর্মও তো অসাম্যের ধর্ম নয় বিশ্বনাথ। যত্র জীব তত্র শিব, এ তো আমাদেরই কথা, আমাদের দেশের উপলব্ধি।

বিশ্বনাথ হাসিয়া বলিল—আপনার সঙ্গে কাশী গিয়েছিলাম দাদু, শুনেছিলাম শিবময় কাশী। দেখলাম সত্যই তাই। বিশ্বনাথ থেকে আরম্ভ করে মন্দিরে, মঠে, পথে, ঘাটে, কুলুঙ্গিতে শিবের আর অন্ত নাই, অগুনতি শিব। কিন্তু ব্যবস্থায় দেখলাম বিশ্বনাথের বিরাট রাজসিক ব্যবস্থা ভোগে, শৃঙ্গারবেশে, বিলাসে, প্রসাধনে—বিশ্বনাথের ব্যবস্থা বিশ্বনাথের মতই। আবার দেখলাম কুলুঙ্গিতে শিব রয়েছেন—গুনে চারটি আতপ চাল আর একটি বেলপাতা তার বরাদ্দ। আমাদের দেশের যত্র জীব তত্র শিব ব্যবস্থাটা ঠিক ওই রকম ব্যবস্থা। সেইজন্যেই তো এখানে-ওখানে ছড়ানো ছোটখাটো শিবদের নিয়ে বিশ্বনাথের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান!

—থাক বিশ্বনাথ ধর্ম নিয়ে রহস্য কারো না ভাই; ওতে অপরাধ হবে তোমার।

–অঙ্কশাস্ত্ৰ আর অর্থশাস্ত্ৰই আমাদের সর্বস্ব দাদু, ধর্ম আমাদের।

উচ্চারণ কারো না বিশ্বনাথ উচ্চারণ কারো না!

ন্যায়রত্নের কণ্ঠস্বরে বিশ্বনাথ এবার চমকিয়া উঠিল। ন্যায়রত্নের আরক্তিম মুখে-চোখে। এবার যেন আগুনের দীপ্তি ফুটিয়া উঠিয়াছে। বহুকালের নিরুদ্ধ আগ্নেয়গিরির শীতল গহ্বর হইতে যেন শুধু উত্তাপ নয়, আলোকিত ইঙ্গিতও ক্ষণে ক্ষণে উঁকি মারিতেছে।

নারায়ণ, নারায়ণ!—বলিয়া ন্যায়রত্ন উঠিয়া পড়িলেন। বহুকাল পরে তাহার খড়মের শব্দ কঠোর হইয়া বাজিতে আরম্ভ করিল। ঠিক এই সময়েই জয়া অজয়কে কোলে করিয়া বাড়ি ও নাটমন্দিরের মধ্যবর্তী দরজায় আসিয়া দাঁড়াইয়া বলিল-নাতি-ঠাকুরদায় খুব তো গল্প জুড়ে দিয়েছেন, এদিকে সন্ধে যে হয়ে এল!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *