1 of 2

৪৪. শ্রমবিধি

অধ্যায় : ৪৪ শ্রমবিধি

ধারা-১০৬৩

শ্রমিকের সংজ্ঞা (ক) যে ব্যক্তি মালের বিনিময়ে অনন্যর নিকট নিজের শ্রম বিক্রয় করে তাহাকে “শ্রমিক” বলে এবং যাহার নিকট বিক্রয় করে তাহাকে

‘নিয়োগকতা” বলে।

(খ) যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য অন্য ব্যক্তির নিকট নিজের শ্রম বিক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় তাহাকে ব্যক্তিগত শ্রমিক” বলে।

(গ) যে ব্যক্তি সর্বসাধারণের নিকট নিজের শ্রম বিক্রয় করে তাহাকে ‘যৌথ শ্রমিক” বলে।

(ঘ) দৈহিক ও মানসিক শক্তি ব্যবহার করিয়া যাহা করা হয় তাহাকে ‘কর্ম’ বলে।

(ঙ) কম’ সম্পাদনের জন্য দৈহিক ও মানসিক প্রক্রিয়াকে শ্রম’ বলে।

(চ) শ্রমিকের কর্মের বিনিময়ে তাহাকে যে মাল প্রদান করা হয় উহাকে “মজুরী” বলে।

(ছ) চুক্তি সম্পাদনকালে আলোচনা পূর্বক ধার্যকৃত মজুরীকে নির্ধারিত মজুরী (

) বলে। (জ) নিরপেক্ষ বা স্বার্থ সংশ্লিষ্টহীন ব্যক্তিগণ কর্তৃক ধার্যকৃত মজুরীকে যথােপযুক্ত মজুরী (0 ) বলে।

বিশ্লেষণ

শ্ৰম শব্দ হইতে শ্রমিক শব্দ গঠিত হইয়াছে। পরিভাষায় যে ব্যক্তি অর্থের বিনিময়ে অপরের কাজ করিয়া দিতে চুক্তিবদ্ধ হয় তাহাকে শ্রমিক (vi) বলে।  -৩১

৪৮২

এই দৃষ্টিকোণ হইতে কলে-কারখানায়, হােটেল-রেস্তোরায় কর্মরত ব্যক্তিও শ্রমিক এবং অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে কর্মরত ব্যক্তিও শ্রমিক। মুফতী আমীমুল ইহসান বলেন, “যে ব্যক্তি নিজের সত্তাকে ভাড়ায় প্রদানে চুক্তিবদ্ধ হয় তাহাকে শ্রমিক বলে”।

সকল শ্রেণীর শ্রমিক আবার দুই শ্রেণীতে বিভক্তঃ ব্যক্তিগত শ্রমিক ও যৌথ শ্রমিক। মুফতী আমীমুল ইহসান বলেন, “যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নিজ সত্তাকে অপরের নিকট সোপর্দ করার কারণে মজুরী প্রাপ্তির অধিকারী হয়, চাই সে কর্ম করুক বা না করুক, তাহাকে “বিশেষ শ্রমিক” বলে। যেমন গবাদি পশুর রাখাল, ব্যক্তিগত খাদেম ইত্যাদি। যে ব্যক্তি একাধিক ব্যক্তির জন্য বা

সর্বসাধারণের জন্য নিজের শ্রম বিনিয়োগ করে তাহাকে যৌথ শ্রমিক বলে। যেমন ডাক্তার, সূতার, দর্জি ইত্যাদি।

আমল অর্থাৎ কর্ম সম্পর্কে মুফতী আমীমুল ইহসান বলেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও অন্তরের যৌথ তৎপরতাই কর্ম অথবা বলা যায়, দেহের অথবা অন্তরের ব্যস্ততাই কর্ম। এই কর্ম সাধারণত দেহ ও মনের যৌথ প্রক্রিয়ায় সম্পাদিত হইয়া থাকে এবং এই প্রক্রিয়াকেই শ্রম বলা হয়। অর্থাৎ কর্ম সম্পাদন করিতে যে কষ্ট স্বীকার করিতে হয় তাহাই শ্রম। কর্ম সম্পাদন বা শ্রম স্বীকার করার কারণে শ্রমিককে যে পারিতোষিক প্রদান করা হয় তাহাই মজুরী (ii)। মুফতী আমীমুল ইহসান বলেন, “পার্থিব অথবা পরকালীন কর্মের প্রতিদানকে পারিতোষিক বা মজুরী বলে”। লুগাতুল ফুকাহা গ্রন্থে বলা হইয়াছে, “কর্মের বিনিময় মূল্যকে মুজরী বলে”। মজুরীকে আবার দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা হইয়াছে, যথা উজরাতুল মিছল ) (JAJI তথা যথােপযুক্ত মজুরী এবং উজরাতুল মুসাম্মা ( JII) তথা নিদ্ধারিত মজুরী। শ্রমিক নিয়োগের সময় মজুরীর বিষয়টি মীমাংসিত না হইয়া থাকিলে সেই অবস্থায় নিরপেক্ষ বা স্বার্থ সংশ্লিষ্টহীন ব্যক্তিগণ যে মজুরি নির্ধারণ করেন, তাহাই আজরুল মিছল বা মানসম্পন্ন মজুরি। এই মজুরি নির্ধারকগণ কর্তৃক কাজের ধরন ও মান, বাজারে শ্রমের চাহিদা, দৈনন্দিনের ব্যবহার্য জিনিসপত্রের দাম ইত্যাদি বিবেচনা করিয়া মান সম্মত মুজরী নির্ধারণ করেন।

চুক্তি সম্পাদনকালে মজুরী নির্ধারিত হইয়া থাকিলে তাহা নির্ধারিত মজুরী হিসাবে গণ্য।”

পক্ষবৃন্দের পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে মজুরীর হ্রাস-বৃদ্ধি বৈধ। অবশ্য নিয়োগকারী পক্ষ একাই মজুরী বৰ্দ্ধিত করিতে পারে।

৪৮৩

ইসলামী আইনে বাড়ি-ঘর, জায়গা-জমি, যানবাহন, আসবাবপত্র, পোশাক পরিচ্ছদ ইত্যাদি ভাড়ায় প্রদান যেমন বৈধ, দ্রুপ মানবিক শ্রমও ভাড়ায় প্রদান বৈধ। মহান আল্লাহর বাণী :

ان خیر من استأجرت القوى الأمين .

“তোমার শ্রমিক হিসাবে উত্তম হইবে সেই ব্যক্তি যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত”। মহানবী (সা) বলেনঃ

اعطوا الأجير اجره قبل أن يجف عرقه .

“শ্রমিকের দেহের ঘাম শুকাইবার আগেই তোমরা তাহার মজুরী পরিশোধ কর”।১০।

استاجر رسول الله صلى الله عليه وسلم وأبو بكر رجلا من

بني الديل هاديا خريئا .

“রাসূলুল্লাহ (সা) ও আবু বাকর (রা) দীল গোত্রের এক বিচক্ষণ পথপ্রদর্শককে শ্রমিক নিয়োগ করেন”।১১

ধারা-১০৬৪

শ্ৰম চুক্তি ও উহার শর্তবলী

(ক) শ্রমিক ও নিয়োগকারীর পারস্পরিক ঈজাব ও ককূল অর্থাৎ প্রস্তাব ও সম্মতির মাধ্যমে শ্রমচুক্তি সম্পাদিত হইবে।

(খ) শ্রমিক অথবা নিয়োগকারী যে কোন পক্ষ প্রস্তাব বা সম্মতি (ঈজাব বা কবুল) প্রদান করিতে পারে।

(গ) ঈজাব-ককূল অর্থাৎ প্রস্তাব ও সম্মতি স্বেচ্ছাপ্রণােদিত হইতে হইবে। (ঘ) পক্ষবৃন্দকে বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন হইতে হইবে।

(ঙ) যাহা সম্পাদনের জন্য চুক্তি করা হইবে তাহা বিদ্যমান থাকিতে হইবে।

(চ) বিপরীত চুক্তি না থাকিলে কর্ম সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ শ্রমিকের নিকট হস্তান্তর করিতে হইবে।

৪৮৪

(ছ) কর্মের সময়-কাল সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে অথবা সুনির্দিষ্ট কাজ সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করিতে হইবে।

(জ) কর্মের পরিচয় সুর্নিদিষ্ট হইতে হইবে এবং কর্মটি বৈধ ও সম্পাদনযোগ্য হইতে হইবে।

(ঝ) যে কর্মের জন্য নিয়োগ করা হইবে, শ্রমিকের সেই কর্ম করার যোগ্যতা থাকিতে হইবে।

(ঞ) কর্মটি এমন হইতে হইবে যাহা সম্পাদন করা পূর্ব হইতেই শ্রমিকের জন্য আইনত বাধ্যতামূলক নহে।

(ট) ধারা ……. মোতাবেক মজুরির বিষয়টি মীমাংসীত হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

অন্যান্য চুক্তির ন্যায় শ্রমচুক্তি পক্ষবৃন্দের ঈজাব-ককূল অর্থাৎ পারস্পরিক প্রস্তাব ও সম্মতি দ্বারা সম্পাদিত হয়। তবে প্রস্তাব ও সম্মতি স্বেচ্ছামূলক হইতে হইবে। জোরপূর্বক বা বলপ্রয়োগে প্রস্তাব বা সম্মতি আদায় করা হইলে চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে। যে কোন পক্ষ প্রস্তাব বা সম্মতি প্রদান করিতে পারে।

পক্ষবৃন্দকে বুদ্ধিজ্ঞানের অধিকারী হইতে হইবে। অতএব পাগল ও বুদ্ধিজ্ঞানশূন্য নাবালেগ কর্তৃক কৃত চুক্তি অনুষ্ঠিত (a.) হইবে না। পক্ষবৃন্দের বালেগ হওয়া চুক্তি সম্পাদনের জন্য শর্ত নহে এবং হানাফী মতে চুক্তি কার্যকর (at) করারও শর্ত নহে। সুতরাং পক্ষবৃন্দের সগীর মুমায়িয হওয়াই যথেষ্ট।

অনুরূপভাবে শ্রমচুক্তি সম্পাদনের জন্য পক্ষবৃন্দের মুসলমান হওয়াও শর্ত নহে। সুতরাং মুসলিম ও অমুসলিমগণ পরস্পর যে কোন প্রকারের আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হইতে পারে। এমনকি অমুসলিম রাষ্ট্রের কোন অমুসলিম নাগরিক ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা লাভ করিয়া তথায় বসবাস করিলে তাহার সহিতও আর্থিক বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হওয়া বৈধ। তবে ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে মুরতাহাদের সহিত চুক্তিবদ্ধ হওয়া বৈধ নহে, যদিও ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে বৈধ।

পক্ষবৃন্দকে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কর্তৃত্বসম্পন্ন হইতে হইবে। কর্তৃত্বহীন ব্যক্তির চুক্তি তাহার অভিভাবকের সম্মতির উপর নির্ভরশীল হইবে। ইমাম মালেক (র)-এর মতে অভিভাবকের সম্মতিতেও তাহা বলবৎ হইবে না।

৪৮৫

যাহা করিবার জন্য চুক্তি করা হইবে তাহা বিদ্যমান থাকিলেই চুক্তি কার্যকর (26) হইবে, অন্যথায় বালিত গণ্য হইবে। যেমন এক ব্যক্তি একটি পুকুরের পানি নিষ্কাশনের জন্য কয়েকজন শ্রমিকের সহিত চুক্তিবদ্ধ হইল। কিন্তু যে পুকুর নিষ্কাশনের জন্য তাহাদের নিয়োগ করা হইয়াছে তাহা পানিশূন্য। এই অবস্থায় চুক্তি সরাসরি বাতিল হইয়া যাইবে।

কর্ম সম্পাদনের জন্য যেসব উপকরণের প্রয়োজন তাহা শ্রমিকের নিকট হস্তান্তর বা সরবরাহ করিতে হইবে। যেমন চাষাবাদের জন হাল-গরু, দালান-কোঠা নির্মাণের জন্য ইট, সিমেন্ট, রড ইত্যাদি সরবরাহ করিতে হইবে।

শ্রমিক কত দিন বা মাস বা বত্সরের জন্য নিয়োগ করা হইবে এবং দৈনিক কত ঘণ্টা কাজ করিতে হইবে তাহাও চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকিতে হইবে। কুরআন মজীদে শুআয়ব (আ) ও মূসা (আ)-এর প্রসংগে বলা হইয়াছে?

قال اني أريد أن أنكحك احدى ابنتى هتين على أن تاجرنی ثمنی

حجج ط فان اثممت عشرا من عندك ج وما أريد أن أشق عليك .

“সে বলিল, আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সহিত বিবাহ দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বৎসর আমার কাজ করিবে। যদি তুমি দশ বৎসর পূর্ণ কর তাহা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাহি না “ (সূরা কাসাসঃ ২৭)।

কি ধরনের কাজ করিতে হইবে, কাজটি কোন স্থানে করিতে হইবে তাহাও সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে। সাথে সাথে কাজটি বৈধ ও সম্পাদনযোগ্য হইতে হইবে। অবৈধ কাজের জন্য চুক্তি করা হইলে তাহা বাতিল গণ্য হইবে। কাজটি বৈধ হওয়ার সংগে সংগে তাহা করা মানবীয় সামর্থ্যের আওতাভুক্ত হইতে হইবে। যে কাজ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নহে সেই কাজ বৈধ হওয়া সত্ত্বেও শ্রমিক করিতে বাধ্য নহে এবং এই ধরনের চুক্তিও অকার্যকর। যে কর্মটির জন্য শ্রমিক চুক্তিবদ্ধ হইবে তাহা করিবার যোগ্য তা তাহার থাকিতে হইবে। মহান আল্লাহ বলেনঃ

ان خير من استأجرت القوى الأمين .

“তোমার শ্রমিক হিসাবে উত্তম হইবে সেই ব্যক্তি যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত (সূরা কাসাসঃ ২৬)।

কাজটি এমন প্রকৃতির হইতে পারিবে না যাহা করিতে শ্রমিক ব্যক্তিগতভাবেই আইনত বাধ্য। যেমন নামায, রোযা ইত্যাদি। শ্রমিক বালেগ হইলে এইসব ইবাদত

৪৮৬

করিতে সে বাধ্য। অতএব এই জাতীয় ইবাদতের জন্য শ্রমিক নিয়োগ বৈধ নহে। কারণ ইহা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য নিবেদিত কাজ এবং ইহার দ্বারা ইবাদতকারীই উপকৃত হইয়া থাকে।

মজুরির প্রসংগটিও মীমাংসিত হইতে হইবে। এই বিষয়টি ভিন্ন একটি ধারায় আলোচনা করা হইবে। কোন চুক্তি তখনই বলবৎযোগ্য হইবে যখন ইহা যাবতীয় শর্তসহ নির্ভুলভাবে সম্পাদিত হইবে। চুক্তি সহীহ অর্থাৎ নির্ভুলভাবে সম্পাদিত না হইলে উহা বলবৎযোগ্য হয় না, তাহা ফাসিদ গণ্য হয়। ফাসিদ চুক্তি বলবৎযোগ্য নয়।

ধারা-১০৬৫

মজুরী নির্ধারণ (ক) মজুরির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে। (খ) নগদ অর্থ বা হালাল মাল দ্বারা মজুরি পরিশোেধযোগ্য হইবে। (গ) পক্ষবৃন্দের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে মজুরী নির্ধারিত হইবে। (ঙ) মজুরী নির্ধারিত না হইয়া থাকিলে “সংগত পরিমাণ মজুরি” (ন। .) প্রদান বাধ্যকর হইবে। (চ) মজুরী শ্রমের বিনিময়ে শ্রম হইতে পারিবে না।

(ছ) শ্রমিককে আহার প্রদানের শর্ত অথবা স্থানীয় প্রথা থাকিলে নিয়োগকর্তা তাহাকে আহার প্রদান করিতে বাধ্য।

(জ) শ্রমিক বখশিশ পাইলে তাহা মজুরির অন্তর্ভুক্ত হইবে না। (ঝ) যেখানে শ্রম দেওয়া হইয়াছে সেখানে মজুরি প্রদেয় হইবে। (ঞ) কাজ সমানপান্তে মজুরি প্রদানে গড়িমসি করা বৈধ নহে।

বিশ্লেষণ

মজুরী নির্দিষ্ট না করিয়া চুক্তি সম্পাদন করিলে তাহা সহীহ হইবে না। মহানবী (স) বলেন :

من استأجر أجيرا فليعلمه أجره .

L

৪৮৭

“কোন ব্যক্তি শ্রমিক নিয়োগ করিলে সে যেন তাহাকে তাহার মজুরি সম্পর্কে অবহিত করে”।১২

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن استجارة الأجر

حتى يبين له اجره .

“রাসূলুল্লাহ (স) মজুরী নির্ধারণ না করিয়া শ্রমিকের দ্বারা কাজ করাইতে নিষেধ করিয়াছেন”।১৩

অতএব চুক্তি সম্পাদনকালে মজুরীর পরিমাণ নির্দিষ্ট করিয়া লওয়া জরুরী। তাহা ছাড়া কাজ শেষ করার সংগে সংগে মজুরী প্রদেয় হইবে, না নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে প্রদেয় হইবে তাহাও সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে। যদি কাজ শেষ করার সংগে সঙ্গে মজুরী প্রদানের শর্ত থাকে তবে তদনুযায়ী তাহা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করিতে হইবে। মহানবী (সা) বলেনঃ

اعطوا الأجير أجره قبل أن يجف عرقه .

“শ্রমিকের দেহের ঘাম শুকাইবার পূর্বেই তাহার মজুরী প্রদান কর”।১৪

মেয়াদান্তে, যেমন সপ্তাহ, পক্ষ বা মাসান্তে মজুরী প্রদেয় হইলে তদনুযায়ী তাহা পরিশোধ করিতে হইবে। অবশ্য নিয়োগকর্তা ইচ্ছা করিলে মজুরি অগ্রিম প্রদান করিতে পারে।

মজুরি নগদ অর্থে না মালের দ্বারা প্রদান করা হইবে তাহাও মীমাংসিত হইতে হইবে। মাল দ্বারা প্রদেয় হইলে তাহা হালাল মাল এবং অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য বা বিনিময় যোগ্য হইতে হইবে। হারাম জিনিস, যেমন মদ, শূকর ইত্যাদি শ্রমের বিনিময় হওয়ার যোগ্য নহে। কেহ হারাম জিনিস দ্বারা মজুরি পরিশোধের শর্ত করিলে উক্ত শর্ত বাতিল গণ্য হইবে এবং হালাল মালই প্রদেয় হইবে।

মজুরি “কিয়ামী মাল” দ্বারা প্রদানের শর্ত থাকিলে এবং উহার প্রকার নির্দিষ্ট না করিয়া থাকিলে সংগত পরিমাণ মজুরি প্রদান বাধ্যকর হইবে। যে মালের সমতুল্য মাল সহজলভ্য নহে অথবা সহজলভ্য হইলেও দুইটির মূল্যের মধ্যে যথেষ্ট ব্যবধান আছে তাহাকে “কিয়ামী মাল” বলে। যেমন দুইটি গরুর মূল্যের মধ্যে যথেষ্ট ব্যবধান থাকিতে পারে।

মজুরির পরিমাণ পক্ষবৃন্দের পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারণ করিতে হইবে। এই ক্ষেত্রে দর কষাকষি বৈধ। নিয়োগকর্তা ইচ্ছা করিলে মজুরির পরিমাণ বাড়াইয়া দিতে পারিবে, কিন্তু প্রতিপক্ষের সম্মতি ব্যতীত কমাইতে পারিবে না।

৪৮৮

মজুরির পরিমাণ নির্ধারণ না করিয়া শ্রমিক নিয়োগ করা হইলে সেই ক্ষেত্রে সংগত পরিমাণ (Jalal) মজুরি প্রদান বাধ্যকর হইবে। ইহা দুইভাবে নির্ধারিত হইতে পারে। (১) বিশেষজ্ঞগণের একটি কমিটি কাজের প্রকৃতি, পরিমাণ ও বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বিবেচনা করিয়া মজুরির পরিমাণ নির্ধারণ করিবেন। (২) সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য স্থানীয়ভাবে যে মজুরি প্রচলিত আছে অর্থাৎ উরফ (৮৫) অনুযায়ীও মজুরী নির্ধারিত হইতে পারে।

কাজের বিনিময়ে কাজ মজুরি হইতে পারিবে না। অর্থাৎ দুই ব্যক্তি পরস্পর এই মর্মে চুক্তিবদ্ধ হইল যে, একজন অপরজনের একটি নির্দিষ্ট কাজ করিয়া দিবে এবং অপরজন উহার বিনিময়ে তাহার একটি নির্দিষ্ট কাজ করিয়া দিবে। এইভাবে কাজের বিনিময়ে কাজ মজুরি হইতে পারে না। বরং এই ক্ষেত্রে উভয়কে নিজ নিজ কাজের মজুরি পৃথক পৃথকভাবে নির্ধারণ করিতে হইবে। অন্যথায় চুক্তি সহীত হইবে না। ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে এই জাতীয় চুক্তি বৈধ।

শ্রমিককে নিয়োগকর্তা বা অপর কেহ বখশিশ প্রদান করিলে তাহা তাহার মজুরি হইতে বিয়োগ হইবে না। যেমন হােটেল শ্রমিকের পরিবেশনে বা সেবায় সন্তুষ্ট হইয়া হােটেলে আহার গ্রহণকারী বা অবস্থানকারী তাহাকে কিছু উপহার বা বখশিশ প্রদান করিলে তাহা তাহার মুজরি হিসাবে গণ্য হইবে না।

ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে যেখানে চুক্তি অনুষ্ঠিত হইয়াছে সেই স্থানেই মুজরী প্রদেয় হইবে। যদি চুক্তিপত্রে মজুরি প্রদানের স্থানের উল্লেখ না থাকে। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে বােঝা বহনের জন্য শ্রমিক নিয়োগ করা হইলে সেই ক্ষেত্রে চুক্তিপত্রে মজুরি পরিশোধের স্থান নির্দিষ্ট করা জরুরী, অন্যথায় চুক্তি সহীহ হইবে না।

শ্রমিকের যেমন কাজে ফাঁকি দেওয়া বৈধ নহে, কাজশেষে তাহার মজুরি পরিশোধে গড়িমসি করা বা চুক্তির তুলনায় কম মজুরি প্রদান করা বা মজুরি মোটেই প্রদান না করা নিয়োগকর্তার জন্য বৈধ নহে। শ্রমিক তাহার কাজের বিনিময়ে মজুরি আকারে অপরের মালের মালিক হয়, আবার নিয়োগকর্তা মজুরি প্রদানের বিনিময়ে অপরের শ্রম দ্বারা কোন মাল অথবা সেবা লাভ করিয়া থাকে। পারস্পরিক সন্তোষ ব্যতীত কাহারও মাল হস্তগত করা বৈধ নহে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

أيها الذين أما لا تكلوا أموالكم بينم بالباطل .

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের মাল অন্যায়ভাবে গ্রাস করিও না” (সূরা নিসা ২৯; আরও দ্র. সূরা বাকারা : ১৮৮)।

৪৮৯

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ

لا يحل مال امري مسلم الا بطيبة نفسه .

“কোন মুসলমানের মাল তাহার সম্মতি ব্যতীত বৈধ নহে।”১৬

নের আe

قال الله تعالی لئة أنا خصمهم يوم القيامة ……………….. ورجل

استأجر أجيرا فاستوفي منه ولم يعطه أجره .

“আল্লাহ তায়ালা বলিয়াছেন, কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হইব …… যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে শ্রমিক নিয়োগ করিল এবং তাহার নিকট হইতে পূর্ণরূপে কাজ আদায় করিল, কিন্তু তাহার পূর্ণ পারিশ্রমিক প্রদান করিল

“।১৭

مط الفني ظلم.

“স্বচ্ছল ব্যক্তির টালবাহানা জুলুম হিসাবে গণ্য”।

ধারা-১০৬৬

অবৈধ কাজে শ্রম বিনিয়োগ অবৈধ কাজ করাইবার জন্য শ্রমিক নিয়োগ করা হইলে চুক্তি বাতিল ও কর্ম সম্পাদন নিষিদ্ধ গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

আইনত যেইসব কাজ নিষিদ্ধ সেই জাতীয় কোন কাজের জন্য চুক্তি করা হইলে তাহা বাতিল গণ্য হইবে এবং শ্রমিককেও স্বউদ্যোগে উক্ত কাজ হইতে বিরত থাকিতে হইবে। কারণ বেআইনি কাজে লিপ্ত হইলে উহার শাস্তি তাহাকেই। ভোগ করিতে হইবে।১৯ মহান আল্লাহর বাণী :

تعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان :

“সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা করিবে এবং পাপ ও সীমালংঘনে তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা করিবে না” (সূরা মাইদা : ২)।

৪৯০

ধারা-১০৬৭ বিব্রতকর কাজে শ্রম বিনিয়োগ চুক্তি সহীহ ও কর্মটি সম্পাদন বাধ্যকর হইবে।

বিশ্লেষণ

এমন অনেক কাজ আছে যাহা রুচিবিরুদ্ধ ও নীচ মানের হইলেও তাহা সম্পাদন করা অপরিহার্য হইয়া পড়ে। যেমন ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা, লাশ বহন করা, ঝাড়ু দেওয়া ইত্যাদি। আবর্জনা পরিষ্কার না কার হইলে বা মৃত জীবজন্তু দূরে নিক্ষেপ না করা হইলে স্বাভাবিক জনজীবন দুর্বিসহ হইয়া পড়িবে। তাই এইসব কাজ করানোর জন্য চুক্তি করা হইলে তাহা আইনত বলবৎ হইবে এবং যাহারা শ্রম প্রদানের জন্য চুক্তিবদ্ধ হইবে তাহাদের জন্য উক্ত কাজ করা বাধ্যকর হইবে।২০

ধারা-১০৬৮

মুসলিম-অমুসলিমের শ্রমচুক্তি অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম ব্যক্তিকে অথবা মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিম ব্যক্তিকে শ্রম প্রদানের জন্য চুক্তিবদ্ধ হইতে পারে, তবে কাজটি অবশ্যই আইনত বৈধ হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

মুসলিম ও অমুসলিমের পরস্পর শ্রমচুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া বৈধ। অমুসলিমের অধীনে মুসলিম ব্যক্তির শ্রমে নিয়োজিত হওয়া বৈধ হইলেও তাহা পছন্দনীয় নহে। ইহা তাহার ধর্মীয় মর্যাদার পরিপন্থী। তাই ফকীহগণ যতদূর সম্ভব মুসলিম ব্যক্তিকে অমুসলিম ব্যক্তির অধীনে শ্রমে নিয়োজিত হওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ প্রদান করিয়াছেন।

ধারা-১০৬৯

নারীর সহিত শ্রমচুক্তি কোন নারীর অপর কোন নারী বা পুরুষের সহিত শ্ৰম চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া বৈধ, তবে কোন পুরুষের সহিত একা শ্রম প্রদানের চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া মাকরূহ।

৪৯১

বিশ্লেষণ

ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে কোন নারীকে একাকিত্বে কোন পুরুষের শ্রমে নিয়োগ করা মাকরূহ। নারী বা পুরুষ কাহারও পক্ষে এইরূপ শ্রম গ্রহণ ও প্রদানের চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া উচিৎ নহে। তবে মাহরাম নারী পুরুষের অনুরূপ শ্রম প্রদানের চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া দূষণীয় নহে। একান্তে শ্ৰম নেওয়া এইজন্য মাকরূহ যে, দুইজন অ-মাহরাম নারী-পুরুষের একান্তে অবস্থান শরীআত কর্তৃক নিষিদ্ধ। মহানবী (স) বলেনঃ

لا يخلون رجل بامرأة انه كان ثالثهما الشيطان .

“কোন পুরুষ কোন নারীর সহিত একান্তে একত্র হইলেই শয়তান তাহাদের সহিত তৃতীয়জন হিসাবে যোগ দেয়”।২২।

তাহাদের একান্তে অবস্থানের কারণে পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া গুনাহে লিপ্ত হওয়ার আশংকা রহিয়াছে। ২৩

ধারা-১০৭০

পিতা-পুত্র ও স্বামী-স্ত্রীর শ্রমচুক্তি পিতা কর্তৃক পুত্রকে, পুত্র কর্তৃক পিতাকে এবং স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে নিজ নিজ সেবায় শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ করা বৈধ নহে।

বিশ্লেষণ

পিতা কর্তৃক পুত্রকে নিজ সেবায় শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ করার চুক্তি এইজন্য বৈধ নহে যে, নীতিগতভাবেই পিতার খেদমত করা সন্তানের কর্তব্য। অতএব কোন সন্তান কোনরূপ চুক্তি ব্যতীতই পিতা-মাতার সেবা করিতে বাধ্য।২৪

পুত্র কর্তৃক পিতাকে নিজ সেবায় শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ করাও বৈধ নহে। কারণ সন্তান পিতা-মাতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিতে আল্লাহ ও তাঁহার রাসূল (স) কর্তৃক নির্দেশিত, তাহারা অমুসলিম হইলেও। অতএব পিতাকে পুত্রের সেবায় নিয়োগ করা তাহাকে অপমান করার নামান্তর। ২৫

স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে নিজ সেবায় শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ করার চুক্তিও বৈধ নহে। কারণ সংসারের দেখাশুনা করা স্ত্রীর কর্তব্য। বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) আলী

৪৯২

ও ফাতিমা (রা)-র মধ্যে কর্ম বণ্টন করিয়াছিলেন। তিনি সংসারের বাহিরের কাজকর্মের দায়িত্ব আলী (রা)-এর উপর অর্পণ করেন। তবে স্বামীর সংসারের বাহিরের কাজে স্ত্রীকে নিয়োগ করা হইলে সেই ক্ষেত্রে সে পারিশ্রমিক দাবি করিতে পারিবে। কারণ সংসারের বাহিরের কাজ করিয়া দেওয়া স্ত্রীর কর্তব্যভুক্ত নহে।৬

ধারা-১০৭১

ধাত্রী নিয়োগ (ক) শিশুকে দুধ পান করানোর জন্য দুধমাতা নিয়োগ করা বৈধ। (খ) অমুসলিম নারীকে দুধমাতা নিয়োগ করা বৈধ।

(গ) যেনাকারিনীকে তাহার গর্ভজাত সন্তানের দুধমাতা নিয়োগ করা বৈধ।

(ঘ) নির্বোধ নারীকে দুধমাতা নিয়োগ করা নিষিদ্ধ

বিশ্লেষণ

তকালীন আরব সমাজে অন্য নারীর দুধ পান করাইয়া শিশুর লালন-পালন করা হইত। রাসূলুল্লাহ (স)-ও তাঁহার দুধমাতা হালীমা (রা)-র দুধপান করিয়াছিলেন। ইসলাম এই প্রথাকে অনুমোদন করিয়াছে এবং দুধমাতাকে প্রায় আপন মাতার সমতুল্য মর্যাদা দান করা হইয়াছে। যদিও এতদঞ্চলে এই প্রথার প্রচলন নাই, তথাপি ক্ষেত্রবিশেষে অনুরূপ ঘটনা ঘটিতে দেখা যায়। যেমন কোন শিশুর মাতা মারা গেলে তাহার খালা বা ফুফু বা অন্য কোন নিকটাত্মীয় তাহাকে নিজ দুধ পান করাইয়া লালন-পালন করিয়া থাকে। কুরআন মজীদেই বিষয়টি অনুমোদন করা হইয়াছে।

তবে নির্বোধ নারীকে দুধমাতা নিয়োগ করিতে রাসূলুল্লাহ (স) নিষেধ করিয়াছেনঃ

الأرض لكم الحمقاء .

“নির্বোধ নারীরা যেন তোমাদের শিশুদের দুধপান না করায়”।২৯

৪৯৩

ধারা-১০৭২ ইমাম, মুআযযিন ও শিক্ষকের পারিশ্রমিক পারিশ্রমিক প্রদানের চুক্তিতে ইমাম, মুআযযিন এবং ধর্মীয় ও পার্থিব জ্ঞান শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা বৈধ।

বিশ্লেষণ

হানাফী মাযহাবের পূর্বকালের ফকীহগণের মতে নামাযের ইমামতি করিয়া, আযান দিয়া এবং ধর্মীয় শিক্ষা, বিশেষ করিয়া কুরআন শিক্ষা দিয়া পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ নহে। এই বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (স) কঠোর নিষেধবাণী উচ্চারণ করিয়াছেন।

ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে যে কাজ কোন ব্যক্তির জন্য শরীআতের বিধান অনুযায়ী বাধ্যতামূলক নহে ( us! – L.) সেই ধরনের কাজ করিয়া পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ। যেমন কোন ব্যক্তির জন্য নামায পড়া বাধ্যতামূলক হইলেও ইমামতি করা বা আযান দেওয়া বাধ্যতামূলক নহে। তাই এই জাতীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ।

ইমাম মালেক ও আহমাদ ইবন হাম্বল (র)-ও অনুরূপ মত ব্যক্ত করিয়াছেন, যদিও শেষোক্তজনের ভিন্নমতও উল্লেখিত আছে।

হানাফী মাযহাবের পরবর্তী কালের ফকীহগণ (১-১২ali) যুগের প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করিয়া ইমাম শাফিঈ (র)-এর মত গ্রহণ করিয়াছেন এবং তদনুযায়ী ফতোয়া দিয়াছেন। ইমাম শাফিঈ (র) আরও বলিয়াছেন যে, কোন এলাকায় কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি ব্যতীত ইমামতি করার বা কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য অন্য কোন যোগ্য লোক না থাকিলে তথায় তাহার জন্য ইমামতি করা এবং কুরআন শিক্ষা দেওয়া বাধ্যতামূলক এবং এজন্য সে পারিশ্রমিক দাবি করিতে পারিবে না।৩২

ধারা-১০৭৩

নাবালেগের শ্রম বিনিয়োগ (ক) নাবালেগ শ্রম প্রদানের চুক্তিতে আবদ্ধ হইতে পারে, যদি সে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার অনুমতিপ্রাপ্ত হইয়া থাকে; অন্যথায় অভিভাবকের সম্মতি সাপেক্ষে চুক্তি কার্যকর হইবে।

৪৯৪

(খ) শ্রম প্রদানের পর কোন কারণে নাবালেগের চুক্তি অকার্যকর হইলেও কৃত কর্মের মজুরি সে পাইবে।

(গ) অভিভাবক অথবা ওলী নাবালেগের পক্ষে তাহার শ্রম বিনিয়োগের চুক্তি করিতে পারে?

তবে শর্ত থাকে যে, নাবালেগকে শ্রমে নিয়োগে অনুমতি দিবার ক্ষেত্রে অভিভাবক এই বিষয়ে নিশ্চিত হইবেন যে, যে কর্মে তাহাকে নিয়োগ করা হইবে সেই কর্মে তাহার শারীরিক ও মানসিক কষ্ট হইবে না বা তাহার প্রবৃত্তিতে বাধা পড়িবে না;

আরও শর্ত থাকে যে, যে শিশু বা নাবালেগ মুমায়্যিয হয় নাই তাহাকে শ্রমে নিয়োগ করা হয় নাই। সে সুমায়্যিয হইলে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাহাকে শ্রমে নিয়োগ করা যাইবে না।

(ঘ) নাবালেগ তাহার কোন নিকটাত্মীয়ের তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় শ্রম প্রদান করিলে উক্ত তত্ত্বাবধায়ক তাহার মজুরি গ্রহণ করিতে পারিবে কিন্তু খরচ করিতে পারিবে না।

(ঙ) পিতা বা অভিভাবক অপেক্ষাকৃত কম মজুরিতে নাবালেগের পক্ষে শ্রমচুক্তি করিলে তাহা কার্যকর হইবে না।

(চ) বালেগ হওয়ার সংগে সংগে নাবালেগ তাহার অভিভাবক অথবা ওলীর কৃত চুক্তি বহাল রাখিবার অথবা বাতিল করিবার এখতিয়ার লাভ করিবে।

বিশ্লেষণ

শ্রমচুক্তি সম্পাদনের জন্য পক্ষবৃন্দের বালেগ হওয়া শর্ত নহে, সগীর মুমায়্যিয় হওয়াই যথেষ্ট। তবে সগীর মুমায়্যিযকে তাহার অভিভাবক অথবা আদালত কর্তৃক চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত হইতে হইবে। সে অনুমতিপ্রাপ্ত মা হইলে তাহার কৃত চুক্তি তাহার অভিভাবকের সম্মতি সাপেক্ষে কার্যকর হইবে।

শ্রম প্রদানের পর কোন কারণবশত, যেমন সে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার যোগ্য নয়, নাবালেগের চুক্তি অকার্যকর সাব্যস্ত হইলেও সে তাহার শ্রমের বিনিময় পাইবে। কারণ নাবালেগের বয়স বিবেচনা করিয়াই তাহার কল্যাণার্থে তাহাকে শ্রমচুক্তি সম্পাদন হইতে বিরত রাখা হইয়াছিল। কিন্তু সে যখন শ্রম প্রদান করিয়াছে তখন তাহার কল্যাণার্থেই (আর্থিক স্বার্থে) উক্ত চুক্তি কার্যকর গণ্য করা হইবে, যাহাতে তাহার শ্রম বিফলে না যায়।

৪৯৫

নাবালেগের অভিভাবক অথবা ওসী তাহার পক্ষে শ্রমচুক্তিতে আবদ্ধ হইতে পারে। তবে প্রচলিত মজুরির কম পরিমাণে চুক্তিবদ্ধ হওয়া তাহাদের এখতিয়ার বহির্ভূত, তিনি পিতা হইলেও। এইরূপ চুক্তি অকার্যকর থাকিবে। কারণ ক্ষতি করার জন্য কোন ব্যক্তিকে অভিভাবকত্বের এখতিয়ার দেওয়া হয় নাই।

নাবালেগ তাহার মাতা অথবা কোন নিকটাত্মীয়ের (যেমন চাচা) তত্ত্বাবধানে থাকাকালে তাহার অনুকূলে তাহাদের শ্রমচুক্তি কার্যকর হইবে। ইহা ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর অভিমত, কিন্তু ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর মতে কার্যকর হইবে না। তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগকর্তার নিকট হইতে নাবালেগের প্রাপ্য মজুরি আদায় করিতে পারিবে, কিন্তু তাহা খরচ করিতে পারিবে না।

অন্যান্য ক্ষেত্রের মত শ্রমচুক্তির বেলায়ও নাবালেগ তাহার অনুকূলে তাহার অভিভাবক বা ওলীকৃত চুক্তি বালেগ হওয়ার সংগে সংগে প্রত্যাখ্যান করার এখতিয়ার লাভ করিবে। ইমাম আবু হানীফা (র) এই অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন যে, সে এইজন্য চুক্তি রদ করার অধিকারী হইবে যে, কোন নাবালেগ শ্রমে নিয়োজিত থাকিলে তাহা তাহার প্রতিভা বিকাশে প্রতিবন্ধক হইতে পারে। যে ক্ষেত্রে একটি শিশু লেখাপড়া শিখিয়া কোন সম্মানজনক পেশায় (যেমন বিচারকের পদে) নিয়োজিত হইয়া অধিক সম্মান ও মর্যাদার পাত্র হইতে পারে, সেই ক্ষেত্রে তাহাকে অপরের শ্রমে নিয়োজিত রাখা সংগত নহে, তাহার পক্ষে তাহার পিতাই চুক্তিবদ্ধ হইয়া থাকুক না কেন।

ইসলাম শিশুশ্রম নিষিদ্ধ না করিলেও ইহাকে উৎসাহিত করে নাই। বরং বাল্যাবস্থায় শিশুর মানসিক গঠনের প্রতি ইসলাম অপরিসীম গুরুত্ব প্রদান করিয়াছে। জ্ঞানার্জনকে ইসলাম অপরিহার্য ঘোষণা করিয়াছে। সাত বৎসর বয়সে শিশুকে নামায পড়ার নির্দেশ প্রদান এবং দশ বৎসরে পদার্পণের পরও নামাযে অবহেলার ক্ষেত্রে অভিভাবকের শাসন সম্পর্কিত হাদীসে শিশুকে জ্ঞানার্জনেও প্রবৃত্ত করার ইংগিত বিদ্যমান রহিয়াছে। যে শিশুর অভিভাবক তাহার লেখাপড়ার খরচ বহন করিতে অক্ষম, সেই শিশু যদি নিজ শ্রমে অর্থ উপার্জন করিয়া অবসর সময়ে লেখাপড়ায় প্রবৃত্ত হয় তবে তাহাকে শিশুশ্রম হইতে বিরত রাখা যাইতে পারে

। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করার বিষয়টি শিশুর অভিভাবক ও রাষ্ট্রের আর্থিক অবস্থার সহিত সম্পৃক্ত।

৪৯৬

ধারা-১০৭৪ চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক কর্তৃক শ্রমিক নিয়োগ কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কোন কাজ করিয়া দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হইলে উক্ত কাজ সমাপনের জন্য সে শ্রমিক নিয়োগ করিতে পারিবে, যদি চুক্তিতে তাহাকেই কাজটি করিতে হইবে এইরূপ কোন শর্ত না থাকে?

তবে শর্ত থাকে যে, চুক্তির বিষয়ভুক্ত কর্মটি ব্যক্তিগত শ্ৰমশৈলীর উপর নির্ভরশীল হইবে না।

বিশ্লেষণ

কোন শ্রমিক অপর ব্যক্তির কোন কাজ করিয়া দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হইলে সে উক্ত কাজের জন্য অন্য শ্রমিক নিয়োগ করিতে পারিবে। কারণ কোন কাজ মানুষ কখনও নিজেই করে, আবার কখনও অন্যের দ্বারা করায়। যেমন কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোন কারিগরী বা নির্মাণ কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হইলে উক্ত কাজ সাধারণত কারিগরী ও নির্মাণকাজে দক্ষ ব্যক্তিগণের দ্বারাই করানো হয়। সাধারণ কার্যাবলীর ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য। যেমন কোন ব্যক্তি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অপরের জমি চাষাবাদ করিয়া দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হইয়াছে। এই ক্ষেত্রে সে নিজে কাজ না করিয়া বরং শ্রমিক নিয়োগ করিয়া চাষাবাদ করাইতে পারে। কিন্তু কাজটি সে নিজে করিয়া দিবে বলিয়া চুক্তিবদ্ধ হইলে সেই ক্ষেত্রে উক্ত কাজ অন্যের দ্বারা করানো যাইবে না।

চুক্তি অনুষ্ঠানের পর শ্রমিক কোন কারণে কাজ করিতে অপারগ হইয়া পড়িলে সেই অবস্থায় সে অন্যের দ্বারা কাজটি করাইয়া দিতে বাধ্য নহে। যেমন কোন ব্যক্তি বােঝা বহনের জন্য তাহার ঘোড়াটি ভাড়ায় প্রদান করিল। পথিমধ্যে ঘোড়াটি কোন কারণে বোেঝা বহনে অক্ষম হইয়া পড়িলে, মালিক অন্য একটি ঘোড়া সংগ্রহ করিয়া দিতে বাধ্য নহে।

এমন কিছু কাজ আছে যাহা ব্যক্তিগত দক্ষতার উপর নির্ভরশীল। চিকিৎসা, শিল্প প্রভৃতির ক্ষেত্রে ব্যক্তি এতই মূল্যবান যে, সেখানে প্রতিনিধিত্ব অচল। একজন চিকিত্সককে নিয়োগ করা হইলে সে অন্য চিকিৎসককে দিয়া চিকিৎসা করাইতে পারে না।

৪৯৭

ধারা-১০৭৫ মজুরি আদায়ের জন্য মাল আটক রাখা (ক) শ্রমিক তাহার কর্মের দ্বারা তাহাকে প্রদত্ত মালের মধ্যে কোনরূপ পরিবর্তন আনয়ন না করিলে, সে তাহার মজুরি আদায়ের জন্য উক্ত মাল আটক রাখিতে পারিবে না, যদি আটক রাখে এবং সেই অবস্থায় তাহার নিকট মাল নষ্ট বা ধ্বংস হইয়া যায় তাহা হইলে সে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকিবে?

তবে শর্ত থাকে যে, মালিক ইচ্ছা করিলে ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করিয়া মজুরি প্রদান করিতে পারে অথবা ক্ষতিপূরণ না লইয়া মজুরি প্রদান না করিতে পারে।

(খ) মজুরি বিলম্বে প্রদানের শর্ত না থাকিলে কারিগরকে প্রদত্ত মাল, যাহার মধ্যে সে স্বীয় কর্মের দ্বারা পরিবর্তন আনয়ন করিয়াছে, মজুরি

পরিশোধ না করা পর্যন্ত আটক রাখিতে পারে।

(গ) মাল’ আটক রাখা অবস্থায় তাহা কারিগরের নিকট আমানত হিসাবে গণ্য হইবে এবং এই অবস্থায় তাহা ধ্বংস বা নষ্ট হইয়া গেলে উহার

ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যকর হইবে না এবং মজুরিও প্রাপ্য হইবে না।

বিশ্লেষণ

শ্রমিকের কর্মের দ্বারা মালের মধ্যে কোনরূপ পরিবর্তন না আসিলে মজুরী আদায়ের জন্য সে নিয়োগকর্তার মাল আটক রাখিতে পারে না। যেমন মাঝি, কুলি, মজুর প্রভৃতির কর্মের দ্বারা মালের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসে না। এই ধরনের শ্রমিক তাহার মজুরি আদায়ের জন্য শ্রম গ্রহণকারীর মাল আটক রাখিতে পারে না। যদি সে মাল আটক রাখে এবং তাহার নিকট উহা ধ্বংস বা ক্ষগ্রিস্ত হয় তবে তাহাকে মালের ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে। মালের মালিক তাহার নিকট হইতে ক্ষতিপূরণ আদায় করিলে তাহার শ্রমের মজুরি প্রদান করিতে বাধ্য। তবে ক্ষতিপূরণ আদায় না করিলে মজুরি প্রদানও তাহার উপর বাধ্যকর হইবে না।

তবে শ্রমিকের কর্মের দ্বারা মালের মান ও বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পরিবর্তন আসিলে মজুরি না পাওয়া পর্যন্ত তাহা আটক রাখা বৈধ, যদি বিলম্বে মজুরি প্রদানের শর্ত না থাকে। যেমন দর্জি, রংমিস্ত্রি বা সুতার প্রভৃতির কাজের দ্বারা মালের মান ও বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়।  ৩২

৪৯৮

আটককৃত মাল আটককারীর নিকট আমানত হিসাবে গণ্য হইবে। তাহা আটকাবস্থায় থাকাকালে নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে আটককারীর উপর ক্ষতিপূরণ ধার্য হইবে না এবং তাহার মজুরিও প্রাপ্য থাকিবে না।

ধারা-১০৭৬ শ্রমিকের নিকট অর্পিত মালের ক্ষতিপূরণ (ক) চুক্তি সহীহ হউক বা না হউক, শ্রমিকের নিকট তাহার কাজের জন্য প্রদত্ত মাল ‘জামানত হিসাবে গণ্য হইবে।

(খ) কোন প্রাকৃতিক বা অনিবার্য দুর্ঘটনা ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে শ্রমিকের নিকট অর্পিত মাল নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে সে উহার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য, যদি সে যৌথ শ্রমিক (আজীরে মুশতারিক) হইয়া থাকে, অন্যথায় ব্যক্তিগত শ্রমিকের (আজীরে খাস) উপর ক্ষতিপূরণ ধার্য হইবে না।

বিশ্লেষণ

যে উপকরণের সাহায্যে শ্রমিক কর্ম সম্পাদন করিবে অথবা যে উপকরণের উপর তাহার শ্রম প্রযুক্ত হইবে তাহা তাহার নিকট অর্পণ করা হইলে জামানত হিসাবে ণ্য হইবে। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে তাহা আমানত হিসাবে গণ্য হইবে, শ্রমিক উহার রক্ষক সাব্যস্ত হইবে। যেমন দর্জির নিকট জামা বা অন্য কিছু তৈরীর জন্য কাপড়, কাঠমিস্ত্রির নিকট আসবাবপত্র তৈরীর জন্য কাঠ, ধােপার নিকট ধৌত করার জন্য কাপড় অর্পণ করা হইয়া থাকে। উক্ত মাল প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা অনিবার্য দুর্ঘটনা (যেমন আগুন লাগিয়া পুড়িয়া যাওয়া, ডাকাত কর্তৃক লুণ্ঠিত হওয়া ইত্যাদি) ব্যতীত অন্য কোন কারণে বা শ্রমিকের অবহেলায় নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে সে উহার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য, যদি সে যৌথ শ্রমিক হইয়া থাকে। ইহা ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর অভিমত। উমার ফারূক ও আলী (রা)-এর সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এই মত গৃহীত হইয়াছে। তাহাদের মতে যৌথ শ্রমিকের নিকট অর্পিত জিনিসের জন্য সে জামিনস্বরূপ। যদি তাহাদের কোন দায়িত্ব না থাকে তাহা হইলে সে মালের যত্ন লইবে না, হেফাজত করিবে

। যৌথ শ্রমিক বলা হয়- যাহারা কাজ শেষ না করা পর্যন্ত মজুরি পাওয়ার অধিকারী হয় না। কিন্তু ব্যক্তিগত শ্রমিকের উপর কোন ক্ষতিপূরণ আরোপিত হইবে না।৩৭

ধারা-১০৭৭ ক্ষতিপূরণ বাধ্যতামূলক হওয়ার কারণসমূহ শ্রমিকের নিকট অর্পিত মালের ক্ষতিপূরণ বাধ্যকর হওয়ার কারণসমূহ নিম্নরূপ

(ক) শ্রমিক মালের রক্ষণাবেক্ষণের যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করিলে;

(খ) শ্রমিকের অবহেলা অথবা ইচ্ছাকৃত বা ভুল কর্মের দ্বারা মাল ক্ষতিগ্রস্ত হইলে;

(গচুক্তির পরিপন্থী কাজ করার কারণে মাল ক্ষতিগ্রস্ত হইলে;

(ঘ) চুক্তি বহির্ভূত স্থানে কাজ সম্পন্ন করার বা মাল রাখার কারণে উহা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে;

(ঙ) কাজ সমাপ্ত হওয়ার এবং মালিক কর্তৃক ফেরত চাওয়ার পরও মাল ফেরত না দেওয়ার কারণে উহা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে;

(চ) চুক্তির পরিপন্থী কাজ করার কারণে মালের কাংখিত মান অর্জিত না হইলে;

(ছ) প্রদত্ত উপকরণ দ্বারা নির্ধারিত পরিমাণ মাল উৎপাদিত না হইলে।

ব্যাখ্যা কর্তব্য কর্মের জন্য প্রদত্ত মালের প্রতি শ্রমিকের যত্নহীনতা, শিথিলতা ও অমনোেযোগিতা তাহার অবহেলা” হিসাবে গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

শ্রমিকের নিকট অর্পিত মাল মূলত ‘আমানত হিসাবে গণ্য। ইমাম আবু হানীফা, যুফার ও হাসান ইবন যিয়াদ (র)-এর মতে যৌথ শ্রমিকের নিকট অর্পিত মাল “আমানত” হিসাবে গণ্য। ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে উহা জামানত হিসাবে গণ্য এবং তাহা প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা অনিবার্য দুর্ঘটনা ব্যতীত অন্য কোন কারণে ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে যৌথ শ্রমিক উহার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, ভূমিকম্প বা অনুরূপ কোন দুর্যোগ। অনিবার্য দুঘর্টনা, যেমন অগ্নিকাণ্ড, সশস্ত্র ডাকাতদলের আক্রমণ বা অনুরূপ কোন ঘটনা।

৫০০

কিন্তু আবু হানীফা (র)-এর মতে শ্রমিকের বাড়াবাড়িমূলক কোন কর্মের দ্বারা মাল ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে সেই ক্ষেত্রেই কেবল ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যকর হইবে। তিনি তাহার মতের অনুকূলে নিম্নোক্ত আয়াত পেশ করিয়াছেন?

فلا عدوان الا على الظلمين .

“অন্যায়কারীদের ব্যতীত কাহারও উপর কঠোরতা করা যাইবে না”

(সূরা বাকারাঃ ১৯৩)। অতএব শ্রমিক তো মালিকের অনুমতি লইয়াই মাল হস্তগত করিয়াছে। উপরন্তু তাহার কোন বাড়াবাড়ির কারণে মাল ধ্বংস হয় নাই। তাই তাহার উপর ক্ষতিপূরণ চাপানো যায় না। যেমন ওয়াদিআর (নিরাপদ হেফাজতে রাখার সমj3) ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ ধার্য হয় না।

ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র) তাঁহাদের মতের সমর্থনে নিম্নেক্ত দলীল পেশ করিয়াছেন। মহানবী (সা) বলেন :

على اليد ما أخذت حتى تره .

“মানুষ তাহার হাত দ্বারা যাহা গ্রহণ করিয়াছে তাহা ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত সে উহার জন্য দায়ী।”

কিন্তু কোন জিনিস ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে হুবহু তাহা ফেরত দেওয়া সম্ভব নহে। তাই উহার ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে হইবে। উমর ফারূক (রা) ও আলী (রা) যৌথ শ্রমিকের নিকট হইতে ক্ষতিপূরণ আদায়ের রায় প্রদান করিয়াছেন এবং বলিয়াছেন যে, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা না থাকিলে মালের রক্ষণাবেক্ষণে শিথিলতা দেখা দিবে।৩৮

নিয়োগকর্তার নিকট হইতে মাল গ্রহণের সংগে সংগে উহার হেফাজতের দায়িত্ব শ্রমিকের উপর বাধ্যকর হইয়া যায়। হেফাজতের যুক্তিসংগত ব্যবস্থা না করার কারণে উক্ত মাল নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে অথবা অন্য কোনভাবে হারাইয়া গেলে শ্রমিককে উহার ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে।

শ্রমিকের অবহেলা, ভুল কর্ম অথবা ইচ্ছাকৃত কর্মের দ্বারা মাল নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে সেই ক্ষেত্রেও তাহার উপর ক্ষতিপূরণ ধার্য হইবে, যদি সে যৌথ শ্রমিক হইয়া থাকে। ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র) এই বিষয়ে একমত। অবশ্য যুফার (র)-এর মতে ক্ষতিপূরণ ধার্য হইবে না। যেমন দর্জির নিকট জামা তৈরীর জন্য এক টুকরা কাপড় প্রদান করা হইল। জামা তৈরীর জন্য

৫০১

সে এমনভাবে কাপড় কাটিল যে, তাহা দ্বারা জামা তৈরী করা সম্ভব নহে। অনুরূপভাবে ধােপ এত জোরে কাপড় কাঁচিল যে, উহা ফাটিয়া গেল। এই কাজ ইচ্ছাকৃতও হইতে পারে, ভুলবশতও হইতে পারে এবং অবহেলা ও

অসাবধানতাবশতও হইতে পারে।

চুক্তির পরিপন্থী কাজ, যেমন রংকারকে একটি কাপড় লাল রং করার জন্য দেওয়া হইয়াছে, সে উহা কালো রং-এ রঞ্জিত করিল অথবা দর্জিকে জামা তৈরীর জন্য প্রদত্ত কাপড় দ্বারা সে গেঞ্জি তৈরি করিয়াছে। চুক্তির অনুরূপ বিরোধী কাজ করার কারণে অপর পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হইলে সে ক্ষতিপূরণ পাইবে।

চুক্তি বহির্ভূত স্থানে কাজ করার বা মাল রাখার কারণে ক্ষতির উদ্ভব হইলে, যেমন সুতারকে কাঠ প্রদান করিয়া একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়া কাজ করিতে বলা। হইয়াছে, কিন্তু সে কাঠ অন্যত্র নিয়া গেল এবং তথা হইতে চুরি হইয়া গেল। এই অবস্থায় সুতার কাঠের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য।

কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর মালিক মাল ফেরতদানের দাবি করা সত্ত্বেও যদি তাহা ফেরত না দেওয়া হয় এবং এই অবস্থায় কোন ক্ষতির উদ্ভব হয় তাহা হইলে শ্রমিক উহার জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে বাধ্য। যেমন আসবাবপত্র তৈরি হওয়ার পর, জামার সেলাইকর্ম শেষ হওয়ার পর অথবা কাপড় রং বা ধৌত করার পর মালিক তাহা ফেরত চাহিল। কিন্তু শ্রমিক তাহা ফেরত দিল না। এই অবস্থায় মাল ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে তাহাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে। প্রদত্ত মাল দ্বারা সাধারণত যে পরিমাণ মাল উৎপাদিত হয়, উহার কম পরিমাণ মাল উৎপাদিত হইলেও শ্রমিকের উপর ক্ষতিপূরণ ধার্য হইবে। যেমন একজন কাপড় প্রস্তুতকারককে যে পরিমাণ সূতা প্রদান করা হইয়াছে তাহাতে স্বাভাবিকভাবেই দশ গজ কাপড় তৈরি হওয়া উচিত, কিন্তু তৈরি হইয়াছে ৬ গজ বা ৭ গজ। যুক্তিসংগত কারণ না থাকিলে এই ক্ষেত্রেও সুতার মালিক ক্ষতিপূরণ পাইবে।

ধারা-১০৭৮ মালিক ও কর্মচারীর মধ্যে মাল সম্পর্কিত মতভেদ মালিক কর্মজীবীকে যে মাল অৰ্পণ করিয়াছে তাহা ফেরত প্রদানের ব্যাপারে উভয়ের মধ্যে মতভেদ হইলে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিষয়টি মীমাংসিত হইবে।

৫০২

বিশ্লেষণ

মালিক ও কর্মজীবির মধ্যে মাল ফেরতদানের বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে ও বিভিন্নভাবে মতভেদ হইতে পারে। যেমন মালিক দাবি করিল যে, সে কর্মজীবীকে দশটি মাল দিয়াছে। কিন্তু কর্মজীবী দাবি করিতেছে যে, সে মালিকের সব মাল ফেরত প্রদান করিয়াছে। এই অবস্থায় ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে বিষয়টি সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মীমাংসিত হইবে। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে এইরূপ অবস্থায় কর্মজীবির দাবি গ্রহণযোগ্য হইবে। এই মতভেদের ভিত্তি হইল, ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে কর্মজীবীকে প্রদত্ত মাল তাহার নিকট আমানত হিসাবে গণ্য এবং ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে জামানত হিসাবে গণ্য।৪০

ধারা-১০৭৯

শম চুক্তির অবসান (ক) নিম্নোক্ত যে কোন কারণে শ্ৰম চুক্তির অবসান ঘটিতে পারে –

(১) পক্ষবৃন্দ পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে চুক্তি বাতিল করিলে; এই পদ্ধতিকে ‘ইকালা’ বলে;

(২) কোন এক পক্ষের মৃত্য হইলে; (৩) কোন পক্ষ চুক্তি মোতাবেক কর্ম করিতে অক্ষম হইয়া পড়িলে; (৪) মেয়াদ শেষ হইয়া গেলে।

(খ) উপরোক্ত কোন কারণে চুক্তির অবসান ঘটিলেও যতখানি কাজ সমাপ্ত করা হইয়াছে কর্মজীবী তাহার মজুরি পাইবে।

বিশ্লেষণ

অন্যান্য চুক্তির ন্যায় শ্রমচুক্তিতে আবদ্ধ পক্ষবৃন্দ পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বা কোন পক্ষের অনুরোধের প্রেক্ষিতে চুক্তি বাতিল করিতে পারে। এই পদ্ধতিকে ইকালা বলা হয়। চুক্তি করার পরপর বা চুক্তি মোতাবেক কিছু কাজ সম্পন্ন হওয়ার ‘পর অর্থাৎ যে কোন সময় এই পদ্ধতিতে চুক্তি বাতিল করা যায়। ইহার জন্য এক

পক্ষের প্রস্তাব এবং অপর পক্ষের সম্মতির প্রয়োজন হয়। মহানবী (সা) বলেনঃ

৫০৩

من أقال مسلما (أو ایما) أقاله عثرته يوم القيامة .

পারে। অবশ্য ইমর পক্ষবৃন্দের ওয়ারিসগক্ষের মৃত্যুর কারণেও

“যে ব্যক্তি কোন মুসলিম (বা অনুতপ্ত) ব্যক্তির (অনুরোধে) চুক্তিভংগের সুযোগ দিল, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তাহার পদস্খলন ও গুনাহ ক্ষমা করিয়া দিবেন”।১।

উপরোক্ত হাদীসের ভিত্তিতে চার মাযহাবের ফকীহগণ একমত হইয়া বলিয়াছেন যে, এই পদ্ধতিতে চুক্তি ভংগ করা বৈধ। কারণ চুক্তির সহিত সংশ্লিষ্ট পক্ষবৃন্দের স্বার্থ জড়িত রহিয়াছে।

চুক্তিভুক্ত কোন এক পক্ষের বা উভয় পক্ষের মৃত্যুর কারণেও চুক্তির অবসান ঘটিতে পারে। তবে পক্ষবৃন্দের ওয়ারিসগণ চাহিলে নূতনভাবে চুক্তিবদ্ধ হইতে পারে। অবশ্য ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে কোন পক্ষের মৃত্যুর কারণে চুক্তির অবসান হয় না। তবে প্রতিনিধির মৃত্যুতে চুক্তির অবসান ঘটিবে।

কোন পক্ষ চুক্তির শর্তাবলী পালনে অক্ষম হইয়া পড়িলেও চুক্তির অবসান ঘটিবে। যেমন এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির বাড়ি নির্মাণ করিয়া দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হইল। পরে সে দুর্ঘটনার শিকার হইয়া অন্ধ বা পঙ্গু হইয়া গেল অথবা নিয়োগকর্তা দেউলিয়া হইয়া গেল বা নির্মাণ সামগ্রী দুর্লভ হইয়া গেল। এই ওজরের কারণে চুক্তির অবসান ঘটিতে পারে।

মেয়াদ শেষ হইয়া গেলেও চুক্তির অবসান ঘটিবে। অবশ্য পক্ষবৃন্দ চাহিলে উহা নবায়ন করিতে পারে। তবে নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে নির্দিষ্ট কর্ম সমাপ্ত করিয়া দেওয়ার চুক্তি হইলে সেই ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হইলেও কাজটি শেষ না করা পর্যন্ত চুক্তির অবসান ঘটিবে না।

কোন কারণে চুক্তির অবসান হইলেও কর্মজীবী যতখানি কাজ সমাপ্ত করিয়াছে সে তাহার পারিশ্রমিক পাইবে। কর্ম সমাপ্ত করিতে না পারার অজুহাতে নিয়োগকর্তা তাহাকে পারিশ্রমিক হইতে বঞ্চিত করিতে পারিবে না।৪২

ধারা-১০৮০

শ্রমিক সংগঠন শ্রমিকগণ নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার জন্য, নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এবং পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য শ্রমিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করিতে পারিবে।

৫০৪

বিশ্লেষণ

সজ্জবদ্ধ জীবন যাপন ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাসূলুল্লাহ (স) বলেনঃ

২২il24li 55 5815/ “যখন তিনজন লোক সফরে থাকে তখন তাহাদের একজনকে নেতা নির্বাচন করা উচিৎ”।৪৩।

لايح لثلاثة يكونون بفلاة من الأرض إلا أمروا عليهم أحدهم.

. “তিন ব্যক্তি যদি জঙ্গলেও বাস করে তবুও তাহাদের মধ্যে একজনকে তাহাদের নেতা নির্বাচন না করিয়া থাকা হালাল নয়”।৪৪

উপরোক্ত হাদীসদ্বয় হইতে পরিষ্কার জানা যায় যে, নেতা নির্বাচন করিয়া তাহার নেতৃত্বে সবদ্ধ হইয়া থাকাই ইসলামের নীতি, বিচ্ছিন্নভাবে থাকা সংগত নয়। দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার প্রতিহত করিতে হইলে সঘবদ্ধ শক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। সবলের অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ-নির্যাতন প্রতিরোধ করার জন্য নির্দেশ রহিয়াছে। রাসূলুল্লাহ (স) বলেনঃ

أنصر أخاك ظالما أو مظلوما فقال رجل يا رسول الله أنصره مظلوما فكيف أنصه ظالما قال تمنعه من الظلم فذلك نصرك اياه .

“তুমি তোমার ভাইয়ের সাহায্য কর, সে জালেম বা মজলুম যাহাই হউক। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মজলুমকে তো সাহায্য করিবই, কিন্তু জালেমকে কিভাবে সাহায্য করিব? তিনি বলেন : তুমি তাহাকে অত্যাচার করা হইতে বাধা দাও। আর ইহাই হইল তাহাকে সাহায্য করা”।৫

কায়েস ইবন আবু গারাযা (রা) বলেন :

گاسمي في عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم السماسرة فمر بنا رسول الله صلى الله عليه وسلم فسمانا باسم هو أحسن منه فقال يا معشر التجار ان البيع يحضره اللغو والحلف قشوبوه بالصدقة .

“রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যুগে আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে সামাসিরাহ (দালাল) বলা হইত। একদা রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের নিকট দিয়া যাইবার সময়

৫০৫

আমাদেরকে উক্ত পদবী অপেক্ষা উত্তম পদবী প্রদান করেন। তিনি বলেনঃ “হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়”! ব্যবসার কাজে অনর্থক কথা ও নিম্প্রয়োজন শপথ করা হইয়া থাকে। তোমরা ব্যবসা করার সাথে সাথে অবশ্যই দান-খয়রাতও কর”।৪৬

উক্ত হাদীসে ব্যবসায়ীদেরকে একটি সংঘবদ্ধ সম্প্রদায় হিসাবে উল্লেখ করা হইয়াছে। অতএব পেশা ভিত্তিক সঙ্ গঠন করা ইসলামে অনুমোদিত।৪৭

ধারা-১০৮১

শ্রমিক-মালিক বিরোধ নিষ্পত্তি শ্রমিক পক্ষ ও মালিক পক্ষ বা নিয়োগকর্তার মধ্যে কোন বিষয়ে বিরোধ বাধিলে তাহা

(ক) পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে, অথবা (খ) উভয় পক্ষ কর্তৃক শালিস নিয়োগের মাধ্যমে;

অথবা (গ) আদালতে সোপর্দ করার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যাইতে পারে।

বিশ্লেষণ

পক্ষবৃন্দের মধ্যে কোন বিষয়কে কেন্দ্র করিয়া বিরোধের উৎপত্তি হইলে তাহা নিষ্পত্তির জন্য বিভিন্ন পন্থা অবম্বন করা যাইতে পারে। পক্ষবৃন্দ বা তাহাদের প্রতিনিধিগণ পারস্পরিক আলোচনা ও মত বিনিময়ের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌছাইতে পারেন। সমঝোতা স্থাপনকে কুরআন মজীদে উত্তম বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে। যেমন স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ নিষ্পত্তির কথা উল্লেখ করিয়া বলা হইয়াছে?

فلا جناح عليهما أن يصلحا بينهما متلاط والصلح خير”.

“তাহারা আপোষ-নিষ্পত্তি করিতে চাহিলে তাহাদের কোন গুনাহ নাই এবং আপোষ-নিষ্পত্তি শ্রেয়” (সূরা নিসা : ১২৮)।

وان طائفتن من المؤمنين أقتتلوا فاصلحوا بينهما .

“মুমিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হইলে তোমরা তাহার মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করিয়া দিবে” (সূরা হুজুরাত ৯)।

৫o৬

মালিক ও শ্রমিক পক্ষ পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসায় উপনীত ইহতে না পারিলে বিরোধের বিষয় সম্পর্কে উভয় পক্ষ কর্তৃক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগণকে সালিশ নিয়োগের মাধ্যমেও মীমাংসায় উপনীত হওয়া যাইতে পারে। সালিশ নিয়োগের বিষয়টিও কুরআন মজীদ কর্তৃক অনুমোদিত। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার বিবাদ মীমাংসা সম্পর্কে বলা হইয়াছে।

L

وإن خفتم شقاق بينهما فابعثوا حكما من أهله و ما من

أهلها إن يريدا إصا وفق الله بينهما .

“তাহাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধের আশংকা করিলে তোমরা তাহার (স্বামীর) পরিবার হইতে একজন এবং ইহার (স্ত্রীর) পরিবার হইতে একজন সালিশ নিযুক্ত করিবে। তাহারা উভয়ে নিম্পত্তি চাহিলে আল্লাহ তাহাদের উভয়ের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করিবেন” (সূরা নিসাঃ ৩৫)।

সূরা মাইদার ৯৫ নম্বর আয়াতেও সালিশ নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন করা হইয়াছে।

পক্ষবৃন্দ কর্তৃক সালিশ নিয়োগের মাধ্যমেও বিরোধের নিষ্পত্তি সম্ভব না হইলে তাহা আদালতে উত্থাপিত হইতে পারে। আদালত পক্ষবৃন্দের বক্তব্য ও প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিরোধের মীমাংসা করিয়া দিবে। আদালতের রায় মানিয়া নিতে আইনত সকলেই বাধ্য।

ধারা-১০৮২ শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হইলে উহার ক্ষতিপূরণ (ক) মালিকের অধীনে কর্মরত থাকা অবস্থায় সংঘটিত দুর্ঘটনার কারণে কোন শ্রমিক সংশ্লিষ্ট কাজ করিবার ক্ষমতা হারাইয়া ফেলিলে বা নিহত হইলে ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যকর হইবে; তবে তাহার নিজব সৃষ্ট কোন কারণে দুর্ঘটনা কবলিত হইলে ক্ষতিপূরণ বাধ্যকর হইবে না।

(খ) ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করা যাইবে।

(o9

তথ্যনির্দেশিকা। ১. কাওয়াইদুল ফি, পৃ. ১৬১ :

.3

الا جير هو الذي اجر نفسه بعقد الاجارة .

و داد ., الأجير الخاص هو الذي استحق الاجر بتسليم نفسه في المدة عمل او يعمل كراعي الغنم .

আরও দ্র. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ১খ, পৃ. ৩২০ঃ

الأجير الخاص هو الذي يقع العقد عليه في مدة معلومة يستحق المستأجر منفعته لمعقود عليها في تلك المدة . ويسمى بالاجير الوحد لانه لا يعمل لغير مستأجره .

আরও দ্র. বাদাই, কিতাবুল ইজারা, ৪খণ্ড। কাওয়াইদুল ফিকহ, পৃ. ১৬১ :

الأجير المشترك من يعمل لغير واحد كالصباغ

ola-alsal9a fool, 87, 9. 98

الأجير المشترك وهو من يعمل العامة الناس كالنجار والطبيب .

WISGS. In%, fe0IR?Isl, 876

العمل يعم افعال القلوب والجوارح .

8.

Israel Re, 9. 0509

نه

زد

العمل حركة الجسم او القلب .

f .

9 oاد .9,les الاجر هو ما يعود من ثواب العمل دنيويا كان او اخرويا .

lai<=

الا جر عوض العمل . 9

89 .%,hlg

و

في ماد .,Negar f الأجرة المثل هي الأجرة التي قدرها الخبرة ممن لا غرض لهم .

t

.

Please fog 3

oاد .*, الاجر المسمى هو الاجرة التي ذكرت وتعينت حين العقد .

في

৯. সূরা কাসাস, আয়াত নং ২৬; পরবর্তী আয়াতও দ্রষ্টব্য। ১০. ইবন মাজা, কিতাবুর রাহুন, বাব ৪, নং ২৪৪৩। ১১. বুখারী, বাংলা অনু. (আধুনিক), ইজারা, বাব ৪, নং ২১০৪, ২খণ্ড, পৃ. ৩৮৬।

,دهد .9,0,Raat .دد

, IIX S3

<

st

.لا

folge alsf, ن,Alsara allam

#

qat

৫o

১৪. ইন মাজা, নং ২৪৪৩।

৫. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩২০; বাদাই, ৪ খণ্ড। ১৭ বুখারী, কিতাবুল ইজারা, বাংলা অনু. (আধুনিক প্রকাশনী), ২খ, পৃ. ৩৮৯, বাব ১০, নং

২১০৯। ১৯. বাদায়ে, ৪খ, পৃ. ৪৯৬। ২১. বাদায়ে, ৪খ, পৃ. ৪৯৭। ২২. তিরমিযীর বরাতে মিশকাতুল মাসাবীহ (বাংলা অনু.), ৬ খ, পৃ. ২০৪ নং ২৯৮৫(২১)। ২৩. বাদাই, ৪খণ্ড, পৃ. ৪৯৭। ২৪. বাদায়ে, ৪খণ্ড, পৃ. ৫০৩। ২৫. বাদায়ে, ৪খও, পৃ. ৪৯৯। ২৬. বাদায়ে, ৪খণ্ড, পৃ. ৫০৪। ২৭. বাদায়ে, ৪খণ্ড, পৃ.৫০৪। ২৮. দ্র. সূরা বাকারা, আয়াত নং-২৩৩; নিসাঃ ২৩; তালাকঃ ৬।

৩০. হিদায়া, ইজারা, ২খণ্ড, পৃ. ২৮৭। ৩১. আইনুল হিদায়া, খণ্ড, পৃ. ৬৪৮-৯। ৩২. বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত দ্র. হিদায়া, ২খণ্ড, পৃ. ২৮৭; বাদায়ে, ৪খণ্ড, পৃ. ৫০২; রদুল

মুহতার, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৮-৯; আইনুল হিদায়া (হিদায়ার উর্দু অনু.), ৩ খণ্ড, পৃ. ৬৪৮-৯। ৩. বাদাইউস সানাই, ৪খণ্ড, পৃ. ৪৬৭ ও ৫২৮। ৩৪. বাদাইউস সানই, ৪ খণ্ড, উজারা। অ, বাদাউস সানাই, ৪খণ্ড, ৩৬. হিদায়া, ২য় খণ্ড, পৃ. -২৯২; বাদাই, ৪ খণ্ড, পৃ. ৫৫২-৩। ৩৭. ঐ গ্রন্থ, ২য় খণ্ড, পৃ.২৯৪; বাদাই, ৪ খণ্ড, পৃ. ৫৫২-৩। ৩৮. বাদায়ে, ৪খণ্ড, পৃ. ৫৫২০; হিদায়া, ২খণ্ড, পৃ. ২৯২। ৩৯. বাদায়ে, ৪খণ্ড, পৃ. ৫৫৫। ৪০. বাদায়ে, ৪খণ্ড, পৃ. ৫৫৪। ৪২. বাদায়ে, ৪খণ্ড, পৃ. ৫৮১। ৪১. ইবন মাজা, তিজারাত, বাবঃ ইকালা, নং ২১৯৯; আবু দাউদ, বুয়ু, বাবঃ ইকালা। ৪৩. আবু দাউদ, জিহাদ, বাব ৮০। ৪৪. আহমাদ, ২খণ্ড, পৃ. ১৭৭-৮, নং ৬৬৪৭। ৪৫. বুখারী, মুসলিম, বাব ৪; ইকরাহ, বাব ৭; মুসলিম, বির, নং ৬৫৮২ (৬২); তিরমিযী,

ফিতান, বাব ৬৮; দারিমী, রিকাক, বাব ৪০; আহমাদ, ৩খণ্ড, পৃ. ৯৯, নং ১১৯৭১। ৪৬. মিশকাতুল মাসাবীহ (বাংলা অনু.), ৬খণ্ড, পৃ. ২০, নং ২৬৭৫, আবু দাউদ, তিরমিযী,

নাসাঈ ও ইবন মাজার বরাতে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *