1 of 2

৪১. মুসলিম রাষ্ট্র ও অমুসলিম রাষ্ট্র

অধ্যায় : ৪১ মুসলিম রাষ্ট্র ও অমুসলিম রাষ্ট্র

ধারা—৯৮০ মুসলিম রাষ্ট্র ও অমুসিলম রাষ্ট্রের সংজ্ঞা (ক) যে এলাকা মুসলিম শাসকের শাসনাধীন এবং যেখানে প্রাকশ্যে ও স্বাধীনভাবে ইসলামের বিধান পালন করা যায়, তথাকার অধিকাংশ অধিবাসী মুসলমান হউক বা না হউক, সেই এলাকাকে মুসলিম রাষ্ট্র বলে।

(খ) যে এলাকা মুসলিম শাসকের শাসনাধীন নহে এবং যেখানে প্রকাশ্যে ও স্বাধীনভাবে ইসলামের বিধান পালন করা যায় না, তথাকার অধিকাংশ অধিবাসী মুসলমান হউক না কেন, সেই এলাকাকে অমুসলিম রাষ্ট্র বলে।

বিশ্লেষণ

ইসলামের বিধানাবলী কার্যকর করার বিষয়টি মুসলমানদের একচ্ছত্র শাসন কর্তৃত্বের সহিত সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ পৃথিবীর যেসব এলাকা মুসলমানদের একচ্ছত্র শাসনাধীনে আছে সেই এলাকাতেই ইসলামের বিধানাবলী কার্যকর হইতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ হইতে ফকীহগণ প্রথমত গোটা পৃথিবীকে দুই ভাগে বিভক্ত করিয়াছেন—১) দারুল ইসলাম (২১LI J১) এবং (২) দারুল হারব ( 4) অর্থাৎ মুসলিম অঞ্চল ও অমুসল্লিম অঞ্চল। যে সকল অঞ্চলের সকল অথবা অধিকাংশ অধিবাসী মুসলমান এবং যাহা মুসলমানদের শাসনাধীন, তাহা নিরঙ্কুশভাবে দারুল ইসলাম। তবে কোন দেশ অমুসলিম শাসনাধীন হওয়া সত্ত্বেও সেই দেশের কোন মুসলিম প্রধান অঞ্চলকে যদি স্বায়ত্ব শাসন দেয়া হয় এবং তথাকার মুসলমানগণ স্বাধীনভাবে ও বিনা বাধায় নিজেদের ধর্ম অনুসরণ করিতে পারে, তবে উক্ত এলাকা দারুল হারবের অধীন হওয়া সত্বেও দারুল ইসলাম গণ্য হইবে। দারুল ইসলামে একাধিক রাষ্ট্রের অস্তিত থাকিতে পারে।

আবার কোন এলাকার সকল অথবা অধিকাংশ বাসিন্দা অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদের শাসনাধীন হইলে উক্ত এলাকাও দারুল ইসলামের অংশ। আবার কোন এলাকার সকল অথবা অধিকাংশ বাসিন্দা মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও তাহারা শাসক গোষ্ঠীর বাধার কারণে স্বাধীনভাবে প্রকাশ্যে ইসলামের বিধান পালনে সক্ষম

হইলে উক্ত এলাকা দারুল ইসলামের অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লামা আল-কাসানী বলেন, “যে এলাকায়ই প্রকাশ্যভাবে ইসলামের বিধান পালন করা যায় তাহাই দারুল ইসলামের অন্তর্ভুক্ত।২ হাম্বলী হাযহাবের ফিকহ গ্রন্থে বলা হইয়াছে, “যে এলাকায় মুসলমানগণ প্রকাশ্যে ইসলামের বিধান মান্য করিয়া চলিতে সক্ষম সেই এলাকা দারুল ইসলামের অন্তর্ভুক্ত”।৩

পক্ষান্তরে যেসব অঞ্চল মুসলিম শাসনাধীন নহে অথবা যে এলাকার মুসলমানগণ প্রকাশ্যে ও বিনা বাধায় ইসলামের বিধান পালন করিতে সক্ষম নহে সেই অঞ্চলকে দারুল হারব বলে। উক্ত অঞ্চল যতগুলি রাষ্ট্রেই বিভক্ত হউক তাহা দারুল হারব-এর অন্তর্ভুক্ত গণ্য হইবে। অর্থাৎ দারুল ইসলামের মত দারুল হারবও একাধিক রাষ্ট্রে বিভক্ত হইতে পারে।

ধারা-৯৮১ মুসলিম রাষ্ট্র ও অমুসিলম রাষ্ট্রের নাগরিক (ক) মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকগণ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত – (১) মুসলিম এবং (২) যিম্মী (অমুসলিম)।

(খ) অমুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকগণও দুই শ্রেণীতে বিভক্ত- (১) মুসলিম এবং (২) অমুসলিম।

(গ) দীন ইসলামের প্রতি ঈমান আনয়নকারী জনগোষ্ঠী বা ব্যক্তিগণ মুসলমান হিসাবে স্বীকৃত।

(ঘ) মুসলিম রাষ্ট্রের যেসব নাগরিক দীন ইসলাম ভিন্ন অন্য ধর্মের অনুসারী কিন্তু জন্মসূত্রে বা অন্য কোনভাবে মুসলিম রাষ্ট্রের অধিবাসী হইয়াছে তাহারা যিম্মী হিসাবে গণ্য।

বিশ্লেষণ

দীন ইসলামের অনুসারীগণ স্বাভাবিকভাবেই মুসলমান হিসাবে পরিগণিত। অন্যদিকে মুসলিম রাষ্ট্রের সকল স্থায়ী অমুসলিম নাগরিক যিম্মী হিসাবে গণ্য, তাহারা

৩৫৭

একই ধর্মের অনুসারী হউক অথবা বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী হউক। বিশ্বাসগত ক্ষেত্রে তাহারা নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী আচার-অনুষ্ঠান পালনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। কিন্তু প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাহারা ইসলামী আইনের অধীন।

ধারা-৯৮২ নাগরিকগণের জানমালের নিরাপত্তা (ক) দীন ইসলামের অনুসারী হওয়ার সুবাদে মুসলিম নাগরিকগণের জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রু নিরাপদ থাকিবে।

(খ) মুসলিম রাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে এবং রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকার প্রতিশ্রুতির বলে অমুসলিম নাগরিকগণের জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রু নিরাপদ থাকিবে।

বিশ্লেষণ

মুসলিম রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জান-মাল নিরাপদ, তাহারা মুসলিম ও অমুসলিম যাহাই হউক। ইসলামী আইনে দুইটি বিষয় নিরাপত্তার রক্ষাকবচ ঈমান ও আমান (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি)। ঈমান অর্থ ইসলামের অনুসারী হওয়া এবং আমান অর্থ জান-মালের নিরাপত্তা লাভের চুক্তি বা প্রতিশ্রুতি।

নিরাপত্তা চুক্তি বা প্রতিশ্রুতি সাময়িক কালের জন্যও হইতে পারে। নিদিষ্ট মেয়াদের জন্য মুসলিম রাষ্ট্রে অবস্থানের অনুমতি প্রদান সাময়িক নিরাপত্তার উদাহরণ। সাময়িক কালের জন্য আগত অমুসলিম নাগরিক মুসতামান’ হিসাবে গণ্য। রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি অনুগত থাকার প্রতিশ্রুতি প্রদানের ভিত্তিতে প্রদত্ত নিরাপত্তা স্থায়ী নিরাপত্তা হিসাবে গণ্য।

এখানে অমুসলিম নাগরিক কর্তৃক ইসলামী বিধানের অনুসরণ করার অর্থ এই যে, ইসলামের যেসব বিধান তাহাদের ধর্মীয় বিশ্বাস বিরোধী নহে সেইসব বিধান মান্য করা তাহাদের জন্য বাধ্যতামূলক এবং ইহার সুবাদেই তাহারা নিজেদের জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তা লাভ করিয়া থাকে। ইসলাম ধর্মের যেসব বিষয় তাহাদের ধর্মেও নিষিদ্ধ সেইসব বিষয়ে লিপ্ত হইলে তাহাদেরকে ইসলামী আইন অনুযায়ী শাস্তি ভোগ করিতে হইবে। যেমন কোন অমুসলিম চুরি করিলে তাহার উপর হদ্দ কার্যকর হইবে। আবার যে বিষয় ইসলামে নিষিদ্ধ কিন্তু তাহাদের ধর্মে নিষিদ্ধ নহে সেই ক্ষেত্রে তাহাদের উপর হদ্দ কার্যকর হইবে না। যেমন মধ্যপান, শূকরের গোশত ভক্ষণ ইত্যাদি।

৩৫৮

ধারা-৯৮৩

অমুসলিম রাষ্ট্রের শ্রেণীবিভাগ মুসলিম রাষ্ট্রের সহিত সম্পর্কের বিবেচনায় অমুসলিম রাষ্ট্র নিম্নবর্ণিত পাঁচ শ্রেণীতে বিভক্ত

(ক) মুসলিম রাষ্ট্রকে কর প্রদানকারী অনুগত রাষ্ট্র : যে অমুসলিম রাষ্ট্র মুসলিম রাষ্ট্রকে কর প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের শাসন ব্যবস্থা বহাল রাখার

অধিকার লাভ করিয়াছে।

(খ) চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্র ও যে অমুসলিম রাষ্ট্রের সহিত মুসলিম রাষ্ট্রের চুক্তি বহাল আছে।

(গ) বিদ্রোহী রাষ্ট্র ও মুসলিম রাষ্ট্রের সহিত চুক্তিবদ্ধ যে অমুসলিম রাষ্ট্র চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করিয়া শত্রুতামূলক আচরণ করে।

(ঘ) চুক্তিহীন রাষ্ট্র ও মুসলিম রাষ্ট্রের সহিত যে অমুসলিম রাষ্ট্র আন্তর্জাতিকভাবে চুক্তিবদ্ধ নয়, কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতি শত্রুতামূলক আচরণ হইতে বিরত।

(ঙ) যুদ্ধরত রাষ্ট্র ও মুসলিম রাষ্ট্রের সহিত যে অমুসলিম রাষ্ট্রের যুদ্ধাবস্থা বা শত্রুভাবাপন্ন অবস্থা বিরাজমান।

বিশ্লেষণ

উপরোক্ত শ্রেণীবিভাগের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী অমুসিলমদের দখলিভুক্ত এলাকাকে ‘দারুল হারব’ (শত্রু এলাকা) বলার পরিবর্তে “দারুল কুফর (কুফর প্রভাবিত এলাকা) পরিভাষা ব্যবহৃত হওয়া উচিত এবং কেবল বিদ্রোহী রাষ্ট্র ও যুদ্ধরত রাষ্ট্রকেই দারুল হারব’ বলা উচিত। যে অমুসলিম রাষ্ট্র মুসলিম রাষ্ট্রের বশ্যতা স্বীকার করিয়া লইয়াছে এবং মুসলিম রাষ্ট্রকে কর প্রদানের চুক্তিতে নিজেদের শাসন কতৃত্ব বজায় রাখিয়াছে সেই রাষ্ট্রই অনুগত রাষ্ট্র হিসাবে গণ্য। ইহা দারুল কুফর হইলেও দারুল হারব নহে। কুরআন মজীদে এই সম্পর্কে বলা হইয়াছে।

فان اعتزلوم لم يقاتلوكم والقوا اليكم السلم فما جعل الله

1:

. *-~~ 

৩৫৯

“সুতরাং তাহারা যদি তোমাদের নিকট হইতে সরিয়া দাঁড়ায়, তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের নিকট শান্তির প্রস্তাব করে, তবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাহাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের পথ রাখেন না” (সূরা নিসা ও ৯০)।

উপরোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে ফকীহগণ বলেন যে, উক্ত অনুগত রাজ্যের নাগরিকগণের জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রুর উপর হস্তক্ষেপ করা যাইবে না। ইমাম সারাখসী (র) বলেন, যদি তাহাদের সহিত প্রতি বৎসর পাঁচ শত দাস সরবরাহের চুক্তি হইয়া থাকে এবং তাহা নিজেদের মধ্য হইতে সরবরাহ করে তবে তাহাদেরকে গ্রহণ করা বৈধ নহে। কারণ তাহাদের সকলের ব্যাপারে সন্ধি হইয়াছে। তাহারা নিরাপত্তা প্রাপ্ত এবং নিরাপত্তা প্রাপ্তদেরকে দাস বানানো বৈধ নহে” (আল-মাবসূত, ১০খ, পৃ. ৮৮)।

তিনি আরও বলেন, “যদি তাহাদের কোন ব্যক্তি অপর কোন অমুসলিম রাষ্ট্রে বসবাস করে এবং মুসলিম সেনাবাহিনী উক্ত রাষ্ট্র দখল করিলে সেখানেও তাহাদের উপর হস্তক্ষেপ করা যাইবে না। কারণ তাহারা মুসলমানদের পক্ষ হইতে নিরাপত্তাপ্রাপ্ত” (ঐ, পৃ. ৮৯)। তিনি আরো বলেন, “চুক্তিবলে তাহারা ইসলামী বিধান মানিতে বাধ্য নহে, তাহারা অমুসলিম হিসাবে বসবাস করিবে” (ঐ, পৃ. ৮৮)।

মুসলিম রাষ্ট্রের সহিত যে অমুসলিম রাষ্ট্রের সন্ধিচুক্তি বিদ্যমান আছে সেই রাষ্ট্র চুক্তির মেয়াদকাল পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্র হিসাবে গণ্য। এই সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

الا الذين عاهم من المشركين ثم لم ينقصوم شيئا ولم

ظاهروا عليكم أحدا فأتموا اليهم عهدهم إلى متهم .

“তবে মুশরিকদের মধ্যে যাহাদের সহিত তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ ও পরে যাহারা তোমাদের চুক্তি রক্ষায় কোন ত্রুটি করে নাই এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাহাকেও সাহায্য করে নাই, তাহাদের সহিত নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ করিবে” (সূরা তওবা ও ৪)।

فما اشتقاموا لكم فاستقيموا لهم .

“যাবৎ তাহারা তোমাদের চুক্তিতে স্থির থাকিবে তোমরাও তাহাদের চুক্তিতে স্থির থাকিবে” (সূরা তাওবা : ৭)।

৩৬০

উপরোক্ত আয়াতদ্বয় হইতে জানা যায় যে, মেয়া বিহীন চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম রাষ্ট্র যত দিন চুক্তির শর্ত মান্য করিবে, তত দিন উক্ত রাষ্ট্রের সহিত বিবাদে লিপ্ত হওয়া বৈধ নহে।

মুসলিম রাষ্ট্রের সহিত চুক্তিবদ্ধ কোন অমুসলিম রাষ্ট্র চুক্তির শর্তাবলী লংঘন করিয়া শত্রুতামূলক আচরণ করিলে উক্ত রাষ্ট্র বিদ্রোহী রাষ্ট্র হিসাবে গণ্য হইবে এবং তাহারা চুক্তি বহাল রাখার যোগ্যতা হারাইবে। এই সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

واما تخافين من قوم خيانه فانبذ اليهم على سواء ان الله لا

يحب الخائنين .

“তুমি যদি কোন সম্প্রদায়ের চুক্তিভঙ্গের আশংকা কর তবে তোমার চুক্তিও তুমি যথাযথ বাতিল করিবে। নিশ্চয় আল্লাহ চুক্তি ভঙ্গকারীদিগকে পছন্দ করেন না” (সূরা আনফাল : ৫৮)।

এই প্রসঙ্গে ইমাম সারাখসী (র) বলেন, “তবে চুক্তিভংগ যেন সমতার ভিত্তিতে হয়। অর্থাৎ তোমাদের মত তাহারাও যেন জানিতে পারে যে, তোমরাও চুক্তি বাতিল করিয়াছ। আমরা বুঝিতে পারিয়াছি যে, চুক্তিভঙ্গের ঘোষণা ব্যতীত তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বৈধ হইবে না” (আল-মাবসূত,১০খ, পৃ. ৮৭)। এই অবস্থায় উক্ত রাষ্ট্র অচুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্র অথবা ক্ষেত্রভেদে যুদ্ধরত রাষ্ট্র হিসাবে গণ্য হইবে।

মুসলিম রাষ্ট্রের সহিত যে অমুসলিম রাষ্ট্রের কোনরূপ সন্ধিচুক্তি হয় নাই এবং মুসলিম রাষ্ট্রের সহিত শত্রুতামূলক আচরণও করে না, এই রাষ্ট্রকে চুক্তিহীন রাষ্ট্র বলে। এই ক্ষেত্রে এক রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রের নাগরিক হত্যা করিলে বা সম্পদের ক্ষতিসাধন করিলে হানাফী মাযহাবমতে উহার কোন ক্ষতিপূরণ নাই (আল-মাবসূত, ১০খ, পৃ. ৩০)।

মুসলিম রাষ্ট্রের সহিত যে অমুসলিম রাষ্ট্রের যুদ্ধাবস্থা বা শত্রুতামক অবস্থা বিরাজমান সেই রাষ্ট্রকে যুদ্ধরত রাষ্ট্র বা শত্রুরাষ্ট্র বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে ইহাই হইল দারুল হারব। ইসলামের আদি যুগে Notion state ছিল বলিয়া কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে অনুমান করা যায় যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর জীবকালে যেসব এলাকা হয় ইসলাম কবুল করিয়াছিল না হয় ইসলামের বশ্যতা স্বীকার করিয়াছিল তাহাই ইসলামী রাষ্ট্র ছিল। পরবর্তী কালে আব্বাসীয় যুগের শেষ সময় পর্যন্ত ইসলামী রাষ্ট্রের এলাকা বর্ধিত হইয়াছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর যমানায় বিখ্যাত মদীনা চুক্তি (মদীনা সনদ) দ্বারা ইসলামী রাষ্ট্রের বহির্ভূত অমুসলিম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাওয়া যায়।

৩৬১

ধারা-৯৮৪

হিজরত ও অপরাধ (ক) অমুসলিম রাষ্ট্র হইতে হিজরত করিয়া মুসলিম রাষ্ট্রে আশ্রয় গ্রহণকারী মুসলমানদিগকে বল প্রয়োগে প্রথমোক্ত রাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো যাইবে না।

(খ) অমুসলিম রাষ্ট্রের কোন অমুসলিম নাগরিক ইসলাম গ্রহণ করিয়া মুসলিম রাষ্ট্রে আগমন করিলে তাহাকেও বল প্রয়োগে প্রথমোক্ত রাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো যাইবে না।

(গ) অমুসলিম রাষ্ট্রের কোন অমুসলিম নাগরিক মুসলিম রাষ্ট্রে আগমন, করিলে তাহাকে স্বদেশে ফেরত পাঠানো যাইবে, কিন্তু বল প্রয়োগে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা যাইবে না।

(ঘ) মুহাজির ইসলামী রাষ্ট্রে অপরাধ কর্মে লিপ্ত হইলে অপরাধের ধরন ও প্রকৃতি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য হইবে।

ব্যাখ্যা হিজরত ও অমুসলিম রাষ্ট্রের মুসলিম নাগরিকগণ স্বদেশে ইসলামী শরীআতের বিধান পালনে বাধাপ্রাপ্ত হইলে এবং তাহাদের জান-মালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হইলে, সেই রাষ্ট্র ত্যাগ করিয়া কোন মুসলিম রাষ্ট্রে তাহাদের চলিয়া আসাকে “হিজরত” এবং আগমনকারীকে “মুহাজির” বলে।

বিশ্লেষণ

অমুসলিম রাষ্ট্রের কোন মুসলিম নাগরিক, সে নারী বা পুরুষ যাহাই হউক, হিজরত করিয়া মুসলিম রাষ্ট্রে চলিয়া আসিলে তাহাকে পুনরায় তাহার রাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো যাইবে না। এই বিষয়ে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

ايها الذين آمنوا اذا جاء گم المؤمنت هجرت فامتحنون الله أعلم بايمانهن ج فإن علمتموهن مؤمنت فرجعون إلى الكفار طلا ه ح لهم ولا هم يحلون لهن .

৩৬২

“হে মুমিনগণ! তোমাদের নিকট মুমিন নারীরা হিজরত করিয়া আসিলে তাহাদেরকে পরীক্ষা করিও। আল্লাহ তাহাদের ঈমান সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। যদি তোমরা জানিতে পার যে, তাহারা মুমিন, তবে তাহাদেরকে কাফেরদের নিকট ফেরত পাঠাইও না। মুমিন নারীগণ কাফেরদের জন্য হালাল নহে এবং কাফিররা মুমিন নারীদের জন্য হালাল নহে” (সূরা মুমতাহিনা : ১০)।

এই ক্ষেত্রে তাহাদেরকে ফেরত পাঠানোর কোন চুক্তি থাকিলে সেই বিষয়ে ফকীহগণের মধ্যে মতভেদ আছে। মুসলিম নারীগণের বিষয়ে তাহারা একমত হইয়া বলেন যে, কোন অবস্থায়ই তাহাদেরকে জোরপূর্বক অমুসলিম রাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো যাইবে না, এমনকি সেখানে অবস্থানরত তাহাদের স্বামীগণ সন্তানগণ, বংশ বা গোত্র তাহাদেরকে ফেরত পাঠানোর দাবি করিলেও। তাহারা নিজেদের মতের সমর্থনে পূর্বোক্ত আয়াত পেশ করেন এবং সংশ্লিষ্ট চুক্তিকে বাতিল গণ্য করেন। মুসলিম পুরুষদের ক্ষেত্রে ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল (র) ও কতিপয় মাকিলী ফকীহ উক্ত চুক্তিকে বৈধ এবং উহার অনুসরণ বাধ্যতামূলক মনে করেন।

ইমাম শাফিঈ (র) বলেন, অমুসলিম রাষ্ট্রে তাহাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মত শক্তিশালী বংশ, গোত্র বা মুসলিম জনগোষ্ঠী বিদ্যমান না থাকিলে তাহাদেরকে ফেরত প্রদান করা যাইবে না। তাহার মতে এই নিষিদ্ধতার কারণ হইল নিরাপত্তাহীনতার আশংকা।

ইমাম আবু হানীফা (র) ও কতক মালিকী ফকীহর মতে তাহাদেরকে অমুসলিম রাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো যাইবে না। তাহারা কোন অবস্থায়ই মুসলমানদেরকে অমুসলিমদের কর্তৃত্বাধীনে অর্পণ করা বৈধ মনে করেন না এবং এই জাতীয় চুক্তিকে সম্পূর্ণ বাতিল গণ্য করেন।

অমুসলিম রাষ্ট্রের কোন অমুসলিম নাগরিক মুসলিম রাষ্ট্রে আগমন করিলে তাহাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেওয়া যাইবে এবং সে ইসলামী শরীআত সম্পর্কে অবহিত হইতে চাহিলে সেই বিষয়ে তাহাকে অবহিত করিতে হইবে। অতঃপর সে স্বেচ্ছায় সম্মত না হইলে ইসলাম গ্রহণের জন্য তাহাকে কোনরূপ ভীতি প্রদর্শন বা বল প্রয়োগ করা যাইবে না, বরং তাহার নিরাপদ স্থানে তাহাকে ফিরিয়া যাইতে দিতে হইবে। এই বিষয়ে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

وإن أحد من المشركين استجارك فأجره حتى يسمع كلم الله

ثم أبلغه مأمنه ط ذلك بأنهم قوم لا يعلمون .

৩৬৩

“মুশরিকদের মধ্যে কেহ তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করিলে তুমি তাহাকে আশ্রয় দিও, যাহাতে সে আল্লাহর বাণী শুনিতে পায়। অতঃপর তাহাকে তাহার নিরাপদ স্থানে পৌছাইয়া দিও। কারণ তাহারা অজ্ঞ সম্প্রদায়” (সূরা তাওবা ও ৬)।

মুহাজির ব্যক্তি অপরাধ কর্মে লিপ্ত হইলে অপরাধের ধরন ও প্রকৃতি অনুযায়ী শাস্তি ভোগ করিবে। অবশ্য তাহার ক্ষেত্রে যে পরিস্থিতিতে সে অপরাধে লিপ্ত হইয়াছে তাহাও বিবেচনা করিতে হইবে।

ধার৯৮৫

অপরাধীকে ভিন্ন রাষ্ট্রের নিকট সোপর্দ করা

(ক) মুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিক, সে মুসলিম, যিম্মী অথবা মুস্তামান যাহাই হউক, অপরাধ কর্ম করার পর অপর মুসলিম রাষ্ট্রে আশ্রয় গ্রহণ করিলে শেষোক্ত রাষ্ট্র অপরাধীকে প্রথমোক্ত রাষ্ট্রের নিকট সোপর্দ করিতে পারে।

(খ) মুসলিম রাষ্ট্র অপরাধে অভিযুক্ত তাহার কোন নাগরিককে অথবা অপর মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিককে অমুসলিম রাষ্ট্রের নিকট সোপর্দ করিতে পারিবে না, তবে নিজ রাষ্ট্রে তাহার বিচারের ব্যবস্থা করিতে পারিবে, যদি অপরাধ কর্মটি যুদ্ধরত রাষ্ট্র ভিন্ন অন্য রাষ্ট্রে সংঘটিত হইয়া থাকে।

(গ) মুস্তামানকে বিচারের জন্য তাহার নিজ রাষ্ট্র ফেরত চাহিলে মুসলিম রাষ্ট্র তাহাকে স্বরাষ্ট্রে ফেরত পাঠাইবে, যদি উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে অনুরূপ কোন চুক্তি থাকে। তবে তাহাকে অপর অমুসলিম রাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো যাইবে না।

বিশ্লেষণ

কোন মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক নিজ রাষ্ট্রে অপরাধ কর্মে লিপ্ত হওয়ার পর অপর মুসলিম রাষ্ট্রে পলায়ন করিলে তাহার বিচারের জন্য শেষোক্ত রাষ্ট্র তাহাকে তাহার নিজ রাষ্ট্রে ফেরত পাঠাইতে পারে অথবা আশ্রয় গ্রহণকারী রাষ্ট্রেও তাহার বিচার অনুষ্ঠিত হইতে পারে। তবে ন্যায়বিচারের স্বার্থে অপরাধ সংঘটনের স্থানেই বিচার অনুষ্ঠিত হওয়া শ্রেয়। কারণ অপরাধী যেখানে অপরাধ করে সেখানেই উহার আলামত ও সাক্ষ্য-প্রমাণ সহজলভ্য হইতে পারে। অপরাধীকে সোপর্দ করা অথবা করা উভয়টির কারণ এক ও অভিন্ন। তাহা এই যে, প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রই

৩৬৪

“দারুল ইসলাম”-এর একটি অংশ এবং প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রই ইসলামের প্রতিনিধি। ইসলামী শরীআতের বিধান কার্যকর করিতে প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রই নীতিগতভাবে বাধ্য।

অতএব যেখানেই অপরাধীর বিচার অনুষ্ঠিত হইবে, সেখানেই তাহা ইসলামী শরীআতের বিধান অনুযায়ী হইবে।

অপরদিকে মুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিক, সে মুসলিম অথবা অমুসলিম যাহাই হউক, অমুসলিম রাষ্ট্রে অপরাধ কর্ম করিবার পর স্বদেশে ফিরিয়া আসিলে বিচারের জন্য তাহাকে উক্ত রাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো যাইবে না, এমনকি সে অন্য মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক হইলেও। তবে যে রাষ্ট্রে অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে তাহা যুদ্ধরত রাষ্ট্র না হইলে নিজ রাষ্ট্রে উক্ত নাগরিকের বিচার অনুষ্ঠিত হইতে পারে।

অমুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিক অপরাধ কর্ম করিয়া ‘মুস্তামান হিসাবে মুসলিম রাষ্ট্রে আশ্রয় গ্রহণ করিলে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী মুসলিম রাষ্ট্র তাহাকে ফেরত পাঠাইতে বাধ্য নহে। তবে উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে অনুরূপ কোন চুক্তি থাকিলে তদনুযায়ী তাহাকে ফেরত পাঠানো যাইতে পারে। কিন্তু তাহাকে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র ব্যতীত অন্য কোন অমুসলিম রাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো যাইবে না। উহা করা হইলে তাহা হইবে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী কাজ।১০

ধারা-৯৮৬ অমুসলিম রাষ্ট্রে নরহত্যার অপরাধ মুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিক

(ক) চুক্তিভুক্ত অমুসলিম রাষ্ট্রে পৌছিয়া নরহত্যা করার পর নিজ দেশে ফিরিয়া আসিলে তাহার উপর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে;

(খ) যুদ্ধরত রাষ্ট্রে পৌছিয়া নরহত্যা করার পর নিজ দেশে ফিরিয়া আসিলে তাহার উপর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে না।

. বিশ্লেষণ

মুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিক নিরাপত্তামূলে চুক্তিভুক্ত অমুসলিম রাষ্ট্রে পৌছিয়া সেই দেশের কোন ব্যক্তিকে অথবা সেই দেশে অবস্থানরত নিজ দেশের কোন নাগরিককে হত্যা করিল, অতঃপর পলায়ন করিয়া নিজ দেশে চলিয়া আসিল। এই

অবস্থায় সে বিচারের সম্মুখীন হইবে এবং দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে। চুক্তিভুক্ত সম্প্রদায়ের লোককে হত্যার ব্যাপারে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

وإن كان من قوم بينكم وبينهم ميثاق فدية مسلمة إلى أهله .

“আর যদি সে (নিহত ব্যক্তি) এমন সম্প্রদায়ভুক্ত হয় যাহাদের সহিত তোমাদের চুক্তি বিদ্যমান, তবে তাহার পরিবারবর্গকে দিয়াত অৰ্পণ করিতে হইবে” (সূরা নিসা : ৯২)।

হানাফী মাযহাবের ফকীহগণ বলেন যে, ভুলবশত হত্যার বেলায় দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে, কিন্তু ইচ্ছাকৃত হত্যার বেলায় কিছুই বাধ্যকর হইবে না। অপরদিকে মালিকী, শাফিঈ ও হাম্বালী ফকীহগণ বলেন, অপরাধী বহিঃরাষ্ট্রে যে কোন ধরনের অপরাধই করুক, সে মুসলিম রাষ্ট্রের কর্তৃত্বাধীনে আসিলে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাহার বিচার অনুষ্ঠিত হইবে।

কিন্তু যুদ্ধরত রাষ্ট্রে সেই দেশের নাগরিক হত্যার বেলায় দিয়াত প্রযুক্ত হইবে। যুদ্ধ চলাকালে শত্রুর জান-মাল, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির ক্ষতিসাধন বৈধ হইয়া যায়। দারুল হারব (যুদ্ধরত রাষ্ট্র)-এর অপর নাম দারুল ইবাহাত। এখানে প্রয়োজনের তাগিদে ইসলামী আইনের অধিকাংশই শিথিল করিয়া দেওয়া হয়। যুদ্ধাবস্থা একটি জরুরী অবস্থা এবং জরুরী অবস্থায় ক্ষেত্রবিশেষে অবৈধ বিষয়ও বৈধ হইয়া যায়।১১

ধারা-৯৮৭ অমুসলিম রাষ্ট্রে অপরাধ ও উহার প্রতিকার (ক) কোন ব্যক্তি, সে মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক হউক অথবা অমুসলিম রাষ্ট্রের, চুক্তিভুক্ত অমুসলিম রাষ্ট্রে অপরাধ কর্ম করার পর মুসলিম রাষ্ট্রে আগমন করিলে তাহার উপর সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য নির্ধারিত শাস্তি কার্যকর করা যাইবে;

(খ) মুসলিম রাষ্ট্রের সহিত যে অমুসলিম রাষ্ট্রের চুক্তিও নাই এবং শক্রতাও নাই, সেই রাষ্ট্রে কৃত অপরাধের ক্ষেত্রে উপধারা (ক) -এর বিধান প্রযোজ্য হইবে।

(গ) মুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিক তাহার রাষ্ট্রের সহিত যুদ্ধরত বা শত্রুভাবাপন্ন অমুসলিম রাষ্ট্র কোন অপরাধ কর্ম করিয়া স্বদেশে ফিরিয়া আসিলে সে শাস্তিযোগ্য হইবে না।

বিশ্লেষণ

ইসলামী আইনের মূলনীতি এই যে, “মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকগণ নিজ রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যেও যেমন কোন অপরাধ কর্মে লিপ্ত হইবে না, দ্রুপ ভিন্ন রাষ্ট্রে পৌছিয়াও তথাকার জনগণের জন্য ক্ষতিকর ও শান্তি-শৃংখলার পরিপন্থী কোন কর্মে লিপ্ত হইবে না”। মুসলমানগণ এজন্য অপরাধ কর্মে লিপ্ত হইবে না যে, শরীআতে যেসব বিষয় নিষিদ্ধ করা হইয়াছে তাহা সর্বত্রই তাহাদের জন্য নিষিদ্ধ। আর যিম্মীগণ মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার কারণে ইসলামের প্রশাসনিক বিধান মান্য করিতে বাধ্য।১২

অতএব মুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিকের অমুসলিম রাষ্ট্রে কৃত অপরাধ কর্মটি অপরাধ হিসাবেই গণ্য হইবে। তবে অপরাধের শাস্তি বিধানের বিষয়ে ফকীহগণের মধ্যে মতভেদ আছে। যেমন মুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিক চুক্তিভুক্ত অমুসলিম . রাষ্ট্রে পৌছিয়া তথায় অপরাধকর্ম করিল এবং অতঃপর স্বদেশে ফিরিয়া আসিল। এই অবস্থায় অপরাধকর্মটি হদ্দ ও কিসাস সংশ্লিষ্টও হইতে পারে অথবা মাল সংক্রান্ত অপরাধও হইতে পারে। এই ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে অপরাধীর কোন শাস্তি হইবে না। কারণ অপরাধ সংঘটিত হওয়ার স্থানের উপর মুসলিম রাষ্ট্রের সার্বভৌম কর্তৃত্ব নাই।১৩

কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ, মালেক, শাফিঈ ও আহমাদ ইবন হাম্বল (র)-এর মতে অপরাধী শাস্তিযোগ্য হইবে। কারণ তাহাদের মতে দাবির ভিত্তিতে অধিকার জন্মায়। অতএব অপরাধ সংঘটিত হওয়ার স্থানের উপর মুসলিম রাষ্ট্রের সার্বভৌম কর্তৃত্ব না থাকিলেও, উক্ত অপরাধের প্রতিবিধানের দাবি তাহার সার্বভৌম কর্তৃত্বের এলাকার মধ্যে উত্থাপিত হইয়াছে। তাই উক্ত দাবির ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট অপরাধীর বিচার অনুষ্ঠান সম্ভব।

শেষোক্ত ইমাম চতুষ্টয়ের মধ্যে এই ক্ষেত্রে শাস্তির ধরন ও মাত্রায় মতভেদ আছে। ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে যে প্রকারের অপরাধই হউক, কেবল আর্থিক দণ্ড প্রযোজ্য হইবে, হদ্দ সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে হদ্দ কার্যকর হইবে না এবং নরহত্যার ক্ষেত্রে দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে, যাহা মূলত এক ধরনের আর্থিক শাস্তিই।১৪ ইমাম মালেক, শাফিঈ ও আহমাদ (র)-এর মতে এই ক্ষেত্রে হদ্দ, কিসাস ও তাযীরসহ সর্বপ্রকারের শাস্তি কার্যকর হইবে এবং অপরাধের প্রকৃতি অনুযায়ী তাহা কার্যকর হইবে। তাযীরের আওতাভুক্ত অপরাধ শাসক ইচ্ছা করিলে ক্ষমা করিতে পারেন।১৫

৩৬৭

মুসলিম রাষ্ট্রের সহিত যে অমুসলিম রাষ্ট্রের চুক্তিও নাই, শত্রুতাও নাই এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রু রাষ্ট্রকে সহায়তাকারীও নহে, সেই রাষ্ট্রও আচরণের দিক হইতে চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্রের অনুরূপ। এই ধরনের রাষ্ট্রের সহিত মুসলিম রাষ্ট্রের সদাচরণ বাঞ্ছনীয়। এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন :

لأنهم الله عن الذين لم يقاتلوكم في التين ولم يخرجوكم من دياركم أن تبروهم وتقسطوا اليهم ط ان الله يحب المقسطين.

“দীনের ব্যাপারে যাহারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নাই এবং তোমাদেরকে স্বদেশ হইতে বহিষ্কার করে নাই তাহাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করিতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণ লোকদেরকে পছন্দ করেন” (সূরা মুমতাহিনা : ৮)।

অতএব উক্ত প্রকৃতির রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত অপরাধের বিধান প্রযোজ্য হইবে উিপধারা (ক)-এর বিধান]।

যে অমুসলিম রাষ্ট্র মুসলিম রাষ্ট্রের সহিত যুদ্ধরত অথবা মুসলিম রাষ্ট্রের সহিত শত্রুতামূলক আচরণ করে, সেই রাষ্ট্রে মুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিক অপরাধ কর্ম করিয়া স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর কোনরূপ বিচারের সম্মুখীন হইবে না। কারণ যুদ্ধরত জাতির ক্ষতিসাধন, তাহাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে বাধা-সৃষ্টি, তাহাদের ধন-সম্পদ হস্তগত করা বৈধ (সামরিক বিধি অনুযায়ী)।

মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক কর্তৃক অমুসলিম রাষ্ট্রে কৃত অপরাধের বিচার

হানাফী মাযাহব : ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে, মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক অমুসলিম রাষ্ট্রে কোন অপরাধ করিয়া স্বদেশে ফিরিয়া আসার পর তাহার কোন বিচার অনুষ্ঠিত হইবে না। কারণ যেই স্থানে অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে, সেই স্থানের উপর মুসলিম রাষ্ট্রের সার্বভৌম কতৃত্ব বিদ্যমান নাই। বিচার অনুষ্ঠানের জন্য অপরাধ সংঘটিত হওয়ার স্থানের উপর মুসলিম রাষ্ট্রের সার্বভৌম কতৃত্ব বিদ্যমান থাকা আবশ্যক। তবে অপরাধ কর্মটি মুসলিম রাষ্ট্রের দুই নাগরিকের মধ্যে ঘটিয়া থাকিলে এবং তাহারা স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর বিচার দাবি করিলে সেই ক্ষেত্রে বিচার অনুষ্ঠিত হইতে পারে। কারণ দাবির ভিত্তিতে অধিকার সৃষ্টি হয় এবং মুসলিম রাষ্ট্রেই দাবি উত্থাপিত হইয়াছে এবং উভয় নাগরিকের উপর মুসলিম রাষ্ট্রের পূর্ণ কর্তৃত্বও বিদ্যমান আছে। অবশ্য এই ক্ষেত্রে যে ধরনের অপরাধই হউক, কেবল অর্থদণ্ড প্রযুক্ত হইবে।

৩৬৮

কেবল দুইটি বিষয়ে ইমাম আবু ইউসুফ (র) ইমাম আবু হানীফা (র)-এর সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন। (১) মুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিকই, সে মুসলিম অথবা যিম্মী যাহাই হউক, অমুসলিম রাষ্ট্রে পৌছিয়া তথাকার বাসিন্দাদের সহিত সূদ ভিত্তিক লেনদেন করিতে পারিবে না। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে তথায় এই জাতীয় লেনদেন বৈধ। (২) অমুসলিম রাষ্ট্রে মুসলিম রাষ্ট্রের বন্দী মুসলমানকে মুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগিরক হত্যা করিলে অতঃপর স্বদেশে ফিরিয়া আসিলে ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে তাহার কোন বিচার অনুষ্ঠিত হইবে না। তাহার মতে অমুসলিম রাষ্ট্রে বন্দীদশার কারণে জীবনের নিরাপত্তা বিলুপ্ত হইয়া যায়”। অতএব অপরাধী জীবনের নিরাপত্তা বিলুপ্ত ব্যক্তিকে হত্যা করায় কিসাসের দণ্ডও প্রযোজ্য হইবে না এবং দিয়াত প্রদানও বাধ্যকর হইবে না। কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে “বন্দীদশার কারণে জীবনের নিরাপত্তা বিলুপ্ত হয় না। তাই অপরাধী স্বদেশে ফিরিয়া আসার পর নিহতের ওয়ারিসগণ বিচার দাবি করিলে দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে। কারণ এই ক্ষেত্রেও মুসলিম রাষ্ট্রে বিচারের দাবি উত্থাপিত হইয়াছে এবং উভয় পক্ষের উপর তদালতের এখতিয়ার বিদ্যমান।

মালিকী, শাফিঈ ও হাম্বলী মাযহাব ও ইমাম মালেক, শাফিঈ ও আহমাদ ইবন হাম্বল (র)-এর মতে মুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিক, সে মুসলিম অথবা যিম্মী যাহাই হউক, অমুসলিম রাষ্ট্রে পৌছিয়া যে কোন প্রকারের অপরাধই করুক, স্বদেশে ফিরিয়া আসার পর তাহারা বিচারের সম্মুখীন হইবে। কারণ “ইসলামী আইন যাহা নিষিদ্ধ করিয়াছে তাহা মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকের জন্য সর্বত্রই নিষিদ্ধ, রাষ্ট্রের পরিবর্তনে তাহা কখনও বৈধ হইবে না”। তবে অমুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিক স্বদেশে অপরাধ করিয়া মুসলিম রাষ্ট্রে আগমন করিলে, এখানে তাহার স্বদেশে কৃত অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হইবে না। কারণ সে মুসলিম রাষ্ট্রে প্রবেশের পর হইতে অত্র রাষ্ট্রের আইন-কানুন মানিতে বাধ্য।

ধারা-৯৮৮ যিম্মীগণের প্রতি শরীআ আইনের প্রয়োগ (ক) যিম্মীগণের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী যে কর্ম বৈধ, কিন্তু ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ, কোন যিম্মীর অনুরূপ কোন কর্ম অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে না।

(খ) যিম্মীগণের ধর্মে যেসব কর্ম অপরাধ হিসাবে গণ্য, ইসলাম ধর্মেও উক্ত কর্ম অপরাধ হিসাবে গণ্য হইলে, কোন যিম্মীর অনুরূপ কোন কর্ম অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে এবং সে শরীআতের বিধান অনুযায়ী দণ্ডযোগ্য হইবে।

৩৬৯

(গ) কোন যিম্মী কিসাস-এর আওতাভুক্ত অপরাধ করিলে তাহার ক্ষেত্রে কিসাস প্রযোজ্য হইবে।

(ঘ) কোন যিম্মী যেনা করিলে হদ্দের আওতায় এক শত বেদণ্ড ভোগ করিবে।

(ঙ) কোন যিম্মী কাহারও প্রতি যেনার অপবাদ (কাযাফ) আরোপ করিলে সে তাযীরের আওতায় শাস্তিযোগ্য হইবে।

(চ) উপধারা (ক) হইতে উপধারা (ঙ) পর্যন্ত ক্ষেত্রসমূহ ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে যিম্মীগণের উপর শরীআর বিধান প্রযোজ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

ইসলামী আইনের একটি মূলনীতি এই যে, “যে ব্যক্তিই অপরাধ করুক, সে শাস্তিযোগ্য হইবে”। ১৬ অর্থাৎ অপরাধী মুসলিম, অমুসলিম, ধনী-দরিদ্র, শাসক শাসিত যেই হউক তাহার অপকর্মের শাস্তি তাহাকে ভোগ করিতে হইবে। অবশ্য অমুসলিম নাগরিকদের (যিম্মী) ক্ষেত্রে ইসলামী আইনের কোন কোন বিধান প্রযোজ্য নয়, আবার কোন কোন বিধান আংশিক প্রযোজ্য এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ প্রযোজ্য।

অতএব এমন কতগুলি বিষয় আছে যেইগুলি ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী মারাত্মক অপরাধ হিসাবে গণ্য হইলেও তাহা যিম্মীর ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তি অথবা তাহার ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী অপরাধ তো নয়ই, বরং অনুমোদিত। যেমন মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ইসলামী আইন অনুযায়ী ওয়ারিসগণের মধ্যে বন্টন না করা একটি অপরাধ, যদি মৃত ব্যক্তি ও তাহার ওয়ারিসগণ মুসলমান হয়, কিন্তু মৃত ব্যক্তি যিম্মী হইলে তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তি তাহার ধর্মের বিধান অনুযায়ী বণ্টিত হইবে। অনুরূপভাবে মাদক গ্রহণ, শূকর ও মৃতজীব ভক্ষণ ইসলামী আইনে মারাত্মক অপরাধ, কিন্তু যিম্মীর ধর্মে তাহা অনুমোদিত। অতএব যে যিম্মীর ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী উক্ত বিষয়গুলি বৈধ তাহাকে শূকর ভক্ষণ, মৃতজীব ভক্ষণ বা মাদক গ্রহণের অপরাধে শাস্তি প্রদান করা যায় না। অথচ মুসলমান ব্যক্তি এই ক্ষেত্রে শাস্তিযোগ্য হয়।

আবার এমন অনেক বিষয় আছে যাহা যিম্মীদের ধর্মেও নিষিদ্ধ এবং মুসলমানদের ধর্মেও নিষিদ্ধ। যেমন অন্যায়ভাবে নরহত্যা, অপরের সম্পদ হরণ, মান-ইজ্জতে হস্তুক্ষেপ, মিথ্যা কথন, জালিয়াতি, চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি গর্হিত কর্ম

७१०

কোন ধর্মই অনুমোদন করিতে পারে না। বলা যায় সব ধর্মেই অনুরূপ কর্ম পাপ হিসাবে গণ্য। এই জাতীয় অপরাধের ক্ষেত্রে যিম্মীগণ ইসলামী আইন অনুযায়ী

শাস্তিযোগ্য হইবে।

আবার এমন কতিপয় অপরাধ আছে যেই ক্ষেত্রে যিম্মী অপরাধী ইসলামী আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য হইবে কিনা অথবা তাহার প্রতি অন্যায় করা হইলে সে ইসলামী আইন অনুযায়ী প্রতিকার পাইবে কি না- এই বিষয়ে ফকীহগণের মতভেদ আছে। এই প্রকারের অপরাধ তিনটি ও নরহত্যা, যেনা ও যেনার অপবাদ আরোপ (কাফ)। অতএব কোন যিম্মী কিসাস-এর আওতাভুক্ত কোন অপরাধ করিলে সে ইসলামের কিসাস বিধি অনুযায়ী দণ্ডিত হইবে। যেমন কোন যিম্মী অপর যিম্মীকে অথবা মুসলমানকে হত্যা করিলে কিসাস স্বরূপ তাহাকেও হত্যা করা হইবে। এই বিষয়ে ফকীহগণ একমত।

কিন্তু যিম্মীকে যদি কোন মুসলমান হত্যা করে তবে ইমাম মালেক, শাফিঈ ও আহমাদ (র)-এর মতে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড হইবে না, তবে দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হইবে। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ “সাবধান! মুসলিম ব্যক্তিকে কাফেরের বদলে হত্যা করা যাইবে না।” কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (র) -এর মতে উক্ত হাদীসে কাফের বলিতে দারুল হারব (যুদ্ধরত কাফের রাষ্ট্র)-এর কাফের বুঝানো হইয়াছে, যাহাদের সহিত মুসলিম রাষ্ট্রের কোনরূপ চুক্তি বিদ্যমান নাই। চুক্তিবদ্ধ জাতির লোক হত্যা করা নিষিদ্ধ। অনন্তর কুরআনের কিসাস সম্পর্কিত আয়াতের নির্দেশ সাধারণ ও ব্যাপক।

অবিবাহিত যিম্মী যেনার অপরাধে লিপ্ত হইলে সে ইসলামী আইন অনুযায়ী এক শত বেত্ৰদণ্ড ভোগ করিবে। এই বিষয়ে ফকীহগণ একমত। কিন্তু বিবাহিত যিম্মী উক্ত অপরাধ করিলে ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে সেও এক শত বেদণ্ড ভোগ করিবে। কারণ যেনার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড তখনই কার্যকর করা যায় যখন অপরাধী ধারা (১২৮) মোতাবেক মুহসান হয়। আর মুহসান হওয়ার জন্য মুসলমান হওয়া অন্যতম শর্ত। কিন্তু ইমাম মালেক, শাফিঈ ও আহমাদ (র)-এর মতে এই ক্ষেত্রে অপরাধী যেনার সর্বোচ্চ শাস্তিই প্রাপ্ত হইবে। কারণ তাহাদের মতে মুহসান হওয়ার জন্য মুসলমান হওয়া শর্ত নহে।

যেনার অপবাদ আরোপের (কাযাফ) ক্ষেত্রেও অনুরূপ মতভেদ বিদ্যমান। মহান আল্লাহর বাণী ও

৩৭১

৩৭১

إن الذين يرون المحصنت الغفلت المؤمنت .

“যাহারা সতি-সাধ্বী (মুহসান), সরলমনা ও ঈমানদার নারীর প্রতি (যেনার) অপবাদ আরোপ করে” (সূরা নূর : ২৩)।

অতএব কোন মুসলিম ব্যক্তির প্রতি যেনার অপবাদ আরোপের ক্ষেত্রে অপরাধী যিম্মী আশি বেত্ৰদণ্ড ভোগ করিবে। এই বিষয়ে ফকীহগণ একমত। কিন্তু যিম্মীর

প্রতি উক্ত অপবাদ আরোপের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে অপরাধী তাষীরের আওতায় শাস্তিপ্রাপ্ত হইবে। এই অবস্থায় বেত্ৰদণ্ডও হইতে পারে, জেল-জরিমানাও হইতে পারে বা অন্য কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও হইতে পারে। কারণ যাহার প্রতি যেনার অপবাদ আরোপ করা হইয়াছে, সে মুহসান নয়। কিন্তু ইমাম মালেক, শাফিঈ ও আহমাদ (র)-এর মতে, এই ক্ষেত্রেও আশি বেত্ৰদণ্ড কার্যকর হইবে। কেননা তাহাদের মতে মুহসান হওয়ার জন্য মুসলমান হওয়া শর্ত নহে।

ধারা-৯৮৯

মুস্তামানের অপরাধ কর্ম (ক) মুস্তামানের অনুমোদিত মেয়াদের অধিক কাল মুসলিম রাষ্ট্রে অবস্থান অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে;

(খ) মুস্তামান কর্তৃক শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হইলে অথবা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা হইলে তাহাকে যে কোন সময় তাহার স্বদেশে ফেরত পাঠানো যাইবে;

(গ) মুস্তামান কোন অপরাধ কর্মে লিপ্ত হইলে তাহাকে বিচারের সম্মুখীন হইতে হইবে। কি।

বিশ্লেষণ

বিদেশী নাগরিক নিরাপত্তামূলে মুসলিম রাষ্ট্রে পৌছিয়া তাহাকে প্রদত্ত মেয়াদকাল পর্যন্ত তথায় অবস্থান করিতে পারিবে। পুনরানুমতি না লইয়া উহার অধিক কাল তাহার অবস্থান অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে। ইমাম আবু হানীফা, শাফিঈ এবং কোন কোন হাম্বলী ফকীহ্র মতে মুস্তামানকে এক বৎসর অবস্থানের অনুমতি প্রদান করা যাইতে পারে।১৭ কিন্তু ইমাম শাফিঈর মূল কথা এই যে, তাহাকে চার মাসের অধিক কাল অবস্থান করার অনুমতি প্রদান করা যাইবে না।

৩৭২

তবে শাসক সার্বিক কল্যাণের দিক (মুসলিহাত) বিবেচনা করিয়া ইহার অধিক কাল অবস্থানের অনুমতি প্রদান করিতে পারেন।১৮ অপরাপর হাম্বলী ফকীহ ও ইমাম মালেক (র)-এর মতে এই ক্ষেত্রে কোন মেয়াদ নির্দিষ্ট নাই।১৯

মুস্তামানের কার্যকলাপ দেশের শান্তি-শৃংখলার পরিপন্থী অথবা উহার জন্য হুমকিস্বরূপ হইলে তাহাকে দেশ হইতে বহিষ্কার করা যাইবে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে।

وانما تخاف من قوم خيانه فانبذ اليهم على سواء .

“তুমি যদি কোন সম্প্রদায়ের চুক্তিভঙ্গের আশংকা কর তবে তোমার চুক্তিও তুমি যথাযথভাবে বাতিল করিবে” (সূরা আনফাল : ৫৮)।

فما استقموا لكم استقيموا لهم.

“যাতে তাহারা তোমাদের চুক্তিতে স্থির থাকিবে তাবত তোমরা তাহাদের চুক্তিতে স্থির থাকিবে” (সূরা তওবা : ৭)।

রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় তাহাকে তাহার নিরাপদ স্থানে ফেরত পাঠাইতে হইবে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে।

وان أحد من المشركين استجارك فاجرة ….ثم أبلغه مأمنه .

“মুশরিকদের মধ্যে কেহ তোমার নিকট আশ্রয় চাহিলে তুমি তাহাকে আশ্রয় দিও …………………অতঃপর তাহাকে তাহার নিরাপদ স্থানে পৌছাইয়া দিও” (সূরা তওবা ও ৬)।

মুস্তামান অপরাধ কর্ম করিলে তাহার শাস্তির ধরন সম্পর্কে ফকীহগণের মতভেদ আছে। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে সে আল্লাহর অধিকারভুক্ত কোন অপরাধ করিলে (যেমন যেনা, মদ্যপান ইত্যাদি) উহার জন্য বিচারের সম্মুখীন হইবে না, কিন্তু মানুষের অধিকার সংশ্লিষ্ট কোন অপরাধ করিলে (যেমন নরহত্যা, মাল অপহরণ বা জবরদখল ইত্যাদি) বিচারের সম্মুখীন হইবে। ২০ ইমাম আবু ইউসুফ, মালেক, শাফিঈ ও আহমাদ ইবন হাম্বল (র)-এর মতে মুস্তামান যে কোনও অপরাধের জন্য একজন সাধারণ নাগরিকের মতই দোষী সাব্যস্ত হইবে। কারণ সে নিরাপত্তামূলে সংশ্লিষ্ট দেশে আগমনের পর হইতে প্রস্থানের পূর্ব পর্যন্ত সেখানকার প্রচলিত আইন মানিয়া চলিতে বাধ্য।২১

৩৭৩

ধারা-৯৯০ অপরাধীকে দেশ হইতে বহিষ্কার কোন নাগরিককে তাহার অপরাধের দরুন

(ক) স্বদেশ হইতে বহিষ্কার করা যাইবে না, তবে দেশের কোনও এলাকায় নির্বাসন প্রদান করা যাইবে; এবং

(খ) স্বদেশে প্রবেশে বাধা প্রদান করা যাইবে না।

বিশ্লেষণ

কোন নাগরিককে তাহার অপরাধের কারণে স্বদেশ হইতে ভিন্ন দেশে বহিষ্কার করা যাইবে না, সে মুসলিম অথবা যিম্মী যাহাই হউক। কারণ কোন মুসলিম নাগরিককে অমুসলিম রাষ্ট্রে বিতাড়িত করা হইলে তাহার দীন ও ঈমান, জীবন ও সম্পদ বিপদগ্রস্ত হইতে পারে এবং সে ইসলামের নিদর্শনাবলী প্রকাশে বাধাপ্রাপ্ত হইতে পারে। অতএব কোন মুসলমানকে মুসলিম সমাজ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া

অমুসলিম সমাজে তাড়াইয়া দেওয়া বৈধ নহে। অনুরূপভাবে যিম্মীকেও দেশ হইতে বহিষ্কার করা যাইবে না। কারণ সে মুসলিম রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার করিয়া লইয়াছে এবং তাহার জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হইয়াছে।২২ তবে দেশের যে কোন এলাকায় অপরাধীকে নির্বাসন দণ্ড প্রদান করা যাইতে পারে। শরীআতে অনুরূপ নির্বাসন দণ্ড অনুমোদিত।

ধারা—৯৯১ অমুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকের সহিত মুসলিম রাষ্ট্রের সূদী লেনদেন অমুসলিম রাষ্ট্রে পৌছিয়া মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক তথাকার নাগরিকের সহিত সূদ ভিত্তিক লেনদেন করিবে না।

বিশ্লেষণ

ইমাম আবু ইউসুফ, মালেক, শাফিঈ ও আহমাদ ইব্‌ন হাম্বল (র)-এর মতে মুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিক অমুসলিম রাষ্ট্রে পৌছিয়া সেখানকার বাসিন্দাদের সহিত সূদ ভিত্তিক লেনদেন করিতে পারিবে না। কারণ মুসলিম ব্যক্তি সর্বত্র ইসলামের বিধান অনুসরণ করিতে বাধ্য। যদি কেহ সূদ ভিত্তিক লেনদেন করে তবে

৩৭৪

স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর ইহার জন্য সে শাস্তিযোগ্য হইবে না। ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর মতে মুসলিম ব্যক্তি তথাকার অমুসলিম ব্যক্তির সহিত সূদ ভিত্তিক লেনদেন করিতে পারিবে কিন্তু মুসলিম ব্যক্তির সহিত করিতে পারিবে না। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে অমুসলিম রাষ্ট্রে মুসলমানদের জন্য সূদ ভিত্তিক লেনদেন বৈধ।২৩ ইমাম মালেক, শাফিঈ ও আহমাদ (র)-এর মতে মুসলিম রাষ্ট্রের মুসলিম ও যিম্মী অমুসলিম রাষ্ট্রে পৌছিয়া পরস্পর সূদ ভিত্তিক লেনদেন করিলে সূদ গ্রহণের জন্য তাহাদের শাস্তি না হইলেও সূদ বাবদ আদায়কৃত মাল ফেরত প্রদান করিতে হইবে।

ধারা-৯৯২ অমুসলিম রাষ্ট্রে ঋণের লেনদেন ও গসব

(ক) মুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিক নিরাপত্তামূলে অমুসলিম রাষ্ট্রে পৌছিয়া তথাকার কোন নাগরিকের নিকট হইতে ঋণ গ্রহণ করিবার পর তাহা পরিশোধ না করিয়া স্বদেশে ফিরিয়া আসিলে এবং একই সঙ্গে ঋণদাতাও নিরাপত্তামূলে মুসলিম রাষ্ট্রে পৌছিয়া ঋণ ফেরত দানের দাবি উত্থাপন করিলে তাহা পরিশোধ বাধ্যকর হইবে।

(খ) মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকগণ নিরাপত্তামূলে অমুসলিম রাষ্ট্রে পৌছিয়া একে অপরের মাল গসব করার পর অথবা একে অপরকে ঋণ প্রদানের পর তাহা অপরিশোধিত রাখিয়া স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করিলে দাবির ভিত্তিতে গসবের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ঋণ পরিশোধ বাধ্যকর হইবে।

বিশ্লেষণ

উপধারা (ক)-এ বর্ণিত অবস্থায় দাবি উত্থাপনের ভিত্তিতে ঋণ ফেরত দান বাধ্যকর হইবে। তবে ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে দুই ভিন্ন রাষ্ট্রের নাগরিকের মধ্যকার লেনদেন ও গসবের ক্ষেত্রে আদালত ঋণ ফেরত দান এবং গসবের ক্ষতিপূরণ কোনটিরই রায় প্রদান করিবে না। কারণ ঋণের লেনদেন ও গসবের অপরাধ এমন এলাকায় সংঘটিত হইয়াছে যাহার উপর মুসলিম রাষ্ট্রের কোন কর্তৃত্ব নাই। অবশ্য উপধারা (খ)-এর বেলায় আদালত ঋণ প্রত্যর্পণ ও গসবের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ প্রদান করিবে। কারণ ঋণের লেনদেন ও গসব মুসলিম রাষ্ট্রের বাহিরে সংঘটিত হইলেও দাবি উত্থাপিত হওয়ার সময় বাদী-বিবাদী উভয়ের উপর মুসলিম রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব বিদ্যমান আছে। দাবির ভিত্তিতেই অধিকার সৃষ্টি হয়। ২৪

०१९

ধারা-৯৯৩

স্বদেশে অপরাধ করিয়া পলায়ন মুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিক অথবা মুস্তামান অপরাধ কর্ম করিয়া অমুসলিম রাষ্ট্রে পলায়ন করিলেও সে শাস্তি হইতে রেহাই পাইবে না।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তি নিজ দেশে অপরাধ করিয়া শাস্তির ভয়ে অমুসলিম রাষ্ট্রে পলায়ন করিল। এই পলায়ন তাহার শাস্তি মওকুফের কারণ হইবে না। বরং স্বদেশে ফিরিয়া আসার পর তাহাকে বিচারের সম্মুখীন হইতে হইবে অথবা তাহার অনুপস্থিতিতেই সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিচারকার্য চলিবে। অনুরূপভাবে কোন মুস্তামান’ আশ্রিত দেশে অপরাধ করিয়া তার নিজ দেশে বা ভিন্ন দেশে পলায়ন করিলে সেও শাস্তি হইতে রেহাই পাইবে না। সে অপরাধ সংঘটনের এলাকায় ফিরিয়া আসিলে বিচারের সম্মুখীন হইবে। ২৫

ধারা-৯৯৪ ইসলামী রাষ্ট্রে সিদ্ধ কিন্তু অমুসলিম রাষ্ট্রে নিষিদ্ধ এ রূপ কর্ম

যেই কর্মটি ইসলামী আইনে নিষিদ্ধ নহে, কিন্তু অমুসলিম রাষ্ট্রের আইনে নিষিদ্ধ, সেই কর্মটি অমুসলিম দেশে করিলে কর্তা নিজ দেশে দোষী সাব্যস্ত হইবে না।

বিশ্লেষণ

এমন অনেক কর্ম আছে যাহা ইসলামী আইনে বৈধ হইলেও, অমুসলিম রাষ্ট্রে তাহা অপরাধকর্ম হিসাবে গণ্য। মুসলিম রাষ্ট্রের কোন নাগরিক অমুসলিম রাষ্ট্রে পৌছিয়া অনুরূপ কোন কর্ম করিয়া স্বরাষ্ট্রে ফিরিয়া আসার পর বিচারের সম্মুখীন হইবে না। কারণ বিচার অনুষ্ঠানের স্থানে উহা একটি বৈধ কর্ম। ২৬

৩৭৬

তথ্য নির্দেশিকা ১. আত-তাশরীউল জানাইল ইসলামী, ১খ, পৃ. ২৭৫, ধারা ২১১; পৃ. ২৯৫, ধারা ২২০। ২. বাদাইউস সানাই, ৭খ, পৃ. ১৩০

تشتمل دار الاسلام البلاد التي تظهر فيها احكام الاسلام .

৩. আসনাল মাতালিব, ৪খ, পৃ. ২০৪।

বাদাইউস সানাই, ৭খ, পৃ. ১০২; মাওয়াহিবুল জালীল, ৬খ, পৃ. ২৩১; আসনাল মাতালিব, ৪খ, পৃ. ২১৮; আশ-শারহুল কাবীর, ১০২, পৃ. ৬৩০।

বাদাই, ৭খ, পৃ. ১০৬; মাওয়াহিব, ৩খ, পৃ. ৩৬০-৪; আসনাল মাতালিব, ৪খ, পৃ. ২১০;

আল-মুগনী, ১০খ, পৃ. ৫৭৮। ৬. বাদাই, ৭খ, পৃ. ১১১; আশ-শারহুল কাবীর, ১০খ, পৃ. ৬১১। ৭. আল-মুগনী, ১০ খণ্ড, পৃ. ৫২৪; মাওয়াহিবুল জালী খণ্ড, ৩ খণ্ড, পৃ. ৩৮৬-এর বরাতে

আত-তাশরীউল জানাঈ, ১ খণ্ড, পৃ. ৩০০। ৮. আল-মুহায্যাব, ৩ খণ্ড, পৃ. ২৭৭; আসনাল মাতালিব, ৪খণ্ড, পৃ. ২২৭-এর বরাতে

আত-তাশরীউল জানাঈ, ১ খণ্ড, পৃ. ৩০০। ৯. শারহু ফাতহিল কাদীর,৪ খণ্ড, পৃ. ২৯৬; তাফসীরে রূহুল মাআনী, ২৮ খণ্ড, পৃ. ৬৭-৮;

মাওয়াহিবুল জালী খণ্ড, ৩ খণ্ড, পৃ. ৩৮৭-এর বরাতে আত-তাশরীউল জানাঈ, ১খণ্ড, পৃ. ৩০০। ১০. আত-তাশরীউল জানাইল ইসলামী, ১ খণ্ড, পৃ. ৩০০-৩০১। ১১. এই বিষয়ে ফিহ-এর গ্রন্থাবলীর কিতাবুস সিয়ার দেখা যাইতে পারে। ১২. আত-তাশরীউল জানাইল ইসলামী, ১ খণ্ড, পৃ. ২৮৭। ১৩. শাহরু ফাতহিল কাদীর, ৪ খণ্ড, পৃ. ১৫২-৩; আত-তাশরীউল জানাই, ১খণ্ড, পৃ. ২৮১। ১৪. আত-তাশরীউল জানাঈ, ১ খণ্ড, পৃ. ২৮৫-২৮৬। ১৫. মাওয়াহিবুল জালীল, ৩ খণ্ড, পৃ. ৩৫৫, ৩৬৫; আল-মুদাওয়ানা, ১৬ খণ্ড, পৃ. ৯১;

আল-মুহাযযাব, ২ খণ্ড, পৃ. ৩৫৮; আল-মুগনী, ১০ খণ্ড, পৃ. ৪৩৯, ৫৩৭; আশ-শারহুল

কাবীর, ৯ খণ্ড, পৃ. ৩৮৩; আত-তাশরী, ২ খণ্ড, পৃ. ২৮৭-৯।

আত-তাশরীউল জানাঈ, ১খণ্ড পৃ. ৩৩৮ ১২:, ১ ১৭. শারহু ফাতহিল কাদীর, ৪ খণ্ড, পৃ. ৩৫১; আল-মুগনী, ১০খণ্ড, পৃ. ৪৩৭। ১৮. আসনাল মাতালিব, ৪ খণ্ড, পৃ. ২০৪। ১৯. আল-মুগনী, ১০ খণ্ড, পৃ. ৪৩৬; মাওয়াহিবুল জালী খণ্ড, ৩খ পৃ. ৩৫৯। ২০. শারহু ফাতহিল কাদীর, ৪ খণ্ড, পৃ. ১৫৫-৬; আত-তাশরীউল জানাঈ, ১ খণ্ড, পৃ. ২৮০। ২১. বাদাইউস সানাই, ৭ খণ্ড, পৃ. ১৩৪; আত-তাশরীউল জানঈি, ১ খণ্ড, পৃ. ১৩৪। ২২. আত-তাশরীউল জানাঈ, ১ খণ্ড। ২৩. আত-তাশুরীউল জানাইল ইসলামী, খণ্ড, পৃ. ২৮২-৩; বাদাইউস সানাই, ৭ খণ্ড, পৃ. ১৩২। ২৪. আত-তাশরীউল জানাইল ইসলামী, ১ খণ্ড, পৃ. ২৮৪। ২৫. বাদাইউস সানাই, ৭ খণ্ড, পৃ. ১৩১; আত-তাশরীউল জানাইল ইসলামী, ১ খণ্ড, পৃ. ২৮১। ২৬. আত-তাশরীউল জানাইল ইসলামী, ১খণ্ড, পৃ. ২৮৮।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *