৫. একটু কথা আছে

রতন তোমার সঙ্গে একটু কথা আছে।

বলুন স্যার।

মার্ডারের আগের রাতে তুমি শুনেছিলে ভজনবাবু একজন মহিলার সঙ্গে কথা বলছেন।

হ্যাঁ স্যার।

তুমি কি বলতে পারো দু’জনের মধ্যে কে কাকে আপনি করে বা তুমি করে বলছিল?

স্যার, পুলিশকে তো বলেছি।

ব্যাপারটা খুব ইস্পার্ট্যান্ট। ভাল করে ভেবে বলে।

এই রে! এত খুনখারাপি মারদাঙ্গায় মাথাটাই কেমন গুলিয়ে গেছে স্যার।

সেই জন্যেই বলছি ভাল করে ভেবে বলতে। অনেক সময়ে কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর স্মৃতিটা পরিষ্কার হয়। যখন তুমি জবানবন্দি দিয়েছিলে তখন তুমি ঘাবড়ে যাওয়া অবস্থায় ছিলো।

ঠিক স্যার।

এবার শান্ত মাথায় ভেবে বলো।

দু’মিনিট সময় দেবেন। স্যার? চোখ বুজে একটু ভাবব।

দুই পাঁচ যত মিনিট খুশি সময় নাও। তবু আসল কথাটা বলো।

রতন দু’মিনিটের বেশি ভাবল না। চোখ খুলে এক গাল হেসে বলল, মনে পড়েছে স্যার। মেয়েটা বাবুকে তুমি করে বলছিল, বাবু আপনি করে বলছিল।

আরও ভেবে বলে।

না স্যার মনে পড়ে গেছে।

তুমি কিন্তু পুলিশের কাছে উলটোটাই বলেছিলো।

তা হতেই পারে স্যার। তখন যা অবস্থা। বাবুর ফাঁসি হলে তো চাকরিটাও গেল স্যার। বাবু লোকটা খারাপ ছিলেন না।

ফাঁসি নাও হতে পারে।

একটু উজ্জ্বল হয়ে রতন বলল, তবে কি বাবু ছাড়া পাবেন?

সেটা তোমার ওপরেও খানিকটা নির্ভর করছে।

কী বলতে হবে বলুন।

সেই রাতে তুমি গ্যারেজের কাছাকাছি কোনও গাড়ি বা ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলে?

হ্যাঁ স্যার। সামনে নয় ঠিক, ওই পশ্চিম দিকে একটা অ্যাম্বাসাডার দাঁড় করানো ছিল। ডার্ক কালার।

আর কিছু?

না স্যার। গ্যারেজে এসেছে কিনা ভেবে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, কী হে, গ্যারেজে এসেছ নাকি? লোকটা বলল, না, সওয়ারি আছে।

প্রাইভেট গাড়ি?

এ মার্কা গাড়ি স্যার, ওরা ভাড়া খাটে।

গাড়িটা কখন দেখলে?

ডিউটিতে আসার সময়। তারপর যখন বাবুর জন্য কোক নিয়ে এলাম তখন গাড়িটা চলে গেছে।

বাঃ, ভেরি গুড।

আর কিছু বলতে হবে স্যার?

তুমি কি জানো তোমার বাবুকে বারাসতে গ্যারেজ খুলতে কে সাহায্য করেছে?

সেটা ভাল জানি না। তবে শুনেছি বাবুর এক বন্ধু।

তার নাম জানো?

সুবীর টুবির হবে। অত মেমরি নেই স্যার।

সুজিত হতে পারে কি?

রাখাল জানে। ও পুরনো লোক।

রিঙ্কুকে কখনও মাতাল অবস্থায় দেখেছ?

না তো স্যার।

কখনও দেখোনি? ভাল করে ভেবে বলো।

না স্যার। রিঙ্কুর বন্ধুরা হয়তো খেত।

তারা কারা?

অনেক ছিল। ইদানীং

বলেই থেমে গেল। রতন।

থামলে কেন?

বলতে ভয় পচ্ছি স্যার। কথা ফাস হলে আমার জান চলে যাবে।

ফাস হবে না। বলে।

ইদানীং রিঙ্কু হাবু জগুদের সঙ্গে ঘুরত। ওরা খুব খচ্চর।

ওদের সঙ্গে মিশত কেন?

বলতে পারব না স্যার। তবে রিঙ্কু একদিন গ্যারেজে গাড়ির বনেটে বসে কুল খেতে খেতে বলেছিল, তোমাদের গ্যারেজে আর কেউ কখনও হামলা করবে না দেখো। আমি হাবু আর জগুকে হাত করেছি।

তুমি কী বললে?

আমি বললাম, খবরদার ওদের খপ্পরে যেয়ো না! তোমাকে শেষ করে দেবে।

রিঙ্কু কী বলল?

হাসল, পাত্তা দিল না। রিঙ্কু স্যার, কারও কথা শুনত না। বাবুর সঙ্গে বিয়েটা হলে বেঁচে যেত।

বিয়ে! বিয়ের কথা উঠেছিল নাকি?

না স্যার। আমার মনে হত, দু’জনকে যেন মানায়।

কেন মনে হত?

কী জানি কেন মনে হত।

রিঙ্কু কি ভজনবাবুকে ভালবাসত বলে তোমার মনে হয়?

হ্যাঁ স্যার, খুব মনে হয়। রিঙ্কু মাঝে মাঝে বাবুর জন্য খাবার নিয়ে আসত, বই আনত, আর বাবুর কাছে এলেই খুব হাসিখুশি থাকত।

আর ভজনবাবু?

বাবু তো স্যার, সবসময়ে কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সবসময়েই নানা চিন্তা। বাবু রিঙ্কুকে মাঝে মাঝে বকুনিও দিত।

কীরকম?

বলত, আড্ডা মেরে সময় নষ্ট করছ, কেন, পড়াশুনো করোগে যাও। কিংবা বলত, এত উড়নচণ্ডী হলে জীবনে কষ্ট পাবে। এইসব আর কী।

ভজনবাবুর কাছে আর কোনও মেয়ে আসত কি?

গাড়ি সারাতে অনেকে আসত।

তারা ছাড়া?

না। স্যার, বাবুর মেয়েছেলের দোষ তেমন ছিল না।

তোমার বাবুকি ঘন ঘন ট্যুরে যেত?

মাঝে মাঝে যেত স্যার।

ঠিক আছে।

 

কত বছর বয়সে আপনার বিয়ে হয় শ্যামলীদেবী?

কেন বলুন তো! এসবও কি তদন্তে দরকার হচ্ছে নাকি?

কে জানে কখন কোনটার দরকার পড়ে। বলতে না চাইলে অবশ্য—

আমার বিয়ে হয়। ষোলো বছর বয়সে।

এত কম বয়সে? দেখতে সুন্দর ছিলাম বলে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি খুব পছন্দ করে ফেলেছিলেন। পাছে হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই তাড়াহুড়ো করে বিয়ে হয়ে গেল। আর ওইটেই আমার জীবনের সর্বনাশের মূল।

সর্বনাশ কেন?

ষোলোতে বিয়ে, সতেরোয় মেয়ের মা, এই সুন্দর বয়সটা টেরই পেলাম না। কী বিচ্ছিরি ব্যাপার বলুন তো! সাধে কি এদের ওপর এত রাগ আমার!

সুজিতবাবুর সঙ্গে আপনার চেনা কত দিনের?

প্ৰায় জন্ম থেকে। ও আমার চেয়ে এক বছরের বড়। আমরা পাশাপাশি বাড়িতে থাকতাম।

আপনি কবে ওর প্ৰেমে পড়েন?

এসব জেনে কী হবে আপনার?

প্লীজ

আপনার কথাবার্তা পুলিশের মতো নয়, আর আপনি বেশ বুদ্ধিমান বলে মনে হয়। সেজন্য বোধহয় আপনি একজন বিপজ্জনক লোক। তবু আমি আপনাকে খুব একটা অপছন্দ করছি না। তাই বলছি, আমাদের শৈশব প্ৰেম।

আপনি সুজিতকে কখনও প্রেমের কথা জানিয়েছেন?

জানানোর কী? আমরা দু’জনে দু’জনকে ভালবেসেই বড় হয়েছি।

বিয়ের সময় কী রি-অ্যাকশন হল সুজিতবাবুর?

কী আর হবে? ও তো তখন সতেরো বছরের বাচ্চা ছেলে। সবে কলেজে ঢুকেছে। ওর পক্ষে কি আমাকে বিয়ে করা সম্ভব ছিল?

আপনি?

আমি! আমি কেঁদে বিছানা ভাসিয়েছি। কিন্তু রুখে দাড়ানোর মতো মন তখনও তৈরি হয়নি।

আপনি কি ভজনবাবুকে চেনেন?

শ্যামলী হঠাৎ স্থির চোখে চেয়ে বলল, হঠাৎ এ কথা কেন?

বলতে আপত্তি আছে কি?

ওকে কি আমার চেনার কথা?

বলা তো যায় না।

আমি আট বছর আগে চলে গেছি, ও তখন এখানে আসেনি।

সেটা জানি। যে জমিতে ভজনবাবুর গ্যারেজ তার মালিক ছিলেন সুজিতবাবুর কাকা বরুণ গুণ।

তা হতে পারে।

খবর হল, সুজিতবাবুই ভজন আচাৰ্যকে জমিটা কিনতে সাহায্য করেন।

আমি অত জানি না।

সুজিতবাবু ও ভজনবাবুর মধ্যে পুরনো বন্ধুত্ব ছিল।

আমি সেসবের খবর রাখি না।

ভজনবাবু কানপুরে আপনাদের বাড়িতে বেশ কয়েকবার গেছেন।

শ্যামলী স্তব্ধ হয়ে রইল কিছুক্ষণ।

কিছু বলবেন না?

শ্যামলী একটুও না ঘাবড়ে তার দিকে সপাটে চেয়ে বলল, যদি তাই হয় তাতেই বা কী হল?

কী থেকে যে কী হয় কে বলতে পারে?

ভজনকে আমি চিনতাম। এবার কি ফাঁসি দেবেন আমাকে?

না। ফাঁসির দড়ি ভজনবাবুর জন্যই থাক। আপনি তো ওকে নিজের হাতে খুন করতে চেয়েছিলেন।

এখনও চাই।

যদি ভজনবাবু নির্দোষ বলে প্রমাণিত হন?

তবুও–

বলেই থমকে গেল শ্যামলী। সুর পালটে বলল, তা হলে অন্য কথা। কিন্তু ও ছাড়া আর কেউ কালপ্রিট নয়।

ঠিক জানেন?

জানি।

খুনের রাতে আপনি কোথায় ছিলেন?

তার মানে?

কৌতূহল।

শ্যামলী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, কলকাতায়। তিলজলায় আমাদের একটা ফ্ল্যাট আছে।

রিঙ্কুর মৃত্যুর খবর কখন কীভাবে পেলেন?

প্ৰথমে খবরের কাগজে। তারপর টেলিগ্রাম পেয়ে কানপুর থেকে সুজিতও টেলিফোন করে।

আপনি তবু দু’দিন পরে বারাসতে এলেন কেন? মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েও কি মা দেরি করতে পারে?

পারে, যদি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে।

কোয়াইট পসিবল। এবং খুব সম্ভব। আপনি যে কলকাতায় আছেন তা শচীনবাবুকে জানাতে চাননি। আপনি ডিভোর্সি স্বামীর বাড়িতে উঠলেন কেন?

তাতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে?

তা নয়, তবু প্রোটোকলে আটকায় হয়তো।

বারাসতে আমার ওঠার জায়গা নেই। বাপের বাড়ি বা সুজিতের বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া এ বাড়িটা বিরাট বড়, নীচের তলার এই পোরশনটা আমার জন্য আলাদা করে করা হয়েছিল, বাড়ির অশান্তি এড়ানোর জন্য।

বুঝেছি। একটা কথা আপনাকে জানানো দরকার।

কী বলুন তো!

রিঙ্কুর পেটে অ্যালকোহল পাওয়া গেছে।

কে বলল?

পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট। একটু ডিলেইড রিপোর্ট।

তার মানে কী? কেউ ওকে মদ খাইয়ে রেপ করেছিল?

সেরকমই অনুমান।

ও।

ভজনবাবু মদ খান না।

ওতে কিছু প্ৰমাণিত হয় না।

ভজনবাবুর ফাঁসিটা দেখছি একটা পপুলার ডিমান্ড হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

 

কোন শালা রে? কোন শুয়োরের বাচ্চা?

পুলিশ। দরজা খোলো।

ফোট শালা পুলিশ। ফোট বাঞ্চোৎ, খানকির ছেলে।

সঙ্গে মদন নামে যে সেপাইটা ছিল সে চাপা গলায় বলল, স্যার, এ ডেনজারাস ছেলে। মদ খেলে কাণ্ডজ্ঞান থাকে না। ফোর্স না নিয়ে আসা ঠিক হয়নি। চলুন, ফোর্স নিয়ে আসি।

না। মদন। গন্ধ পেলে পাখি উড়ে যাবে।

ঘর থেকে জঘন্য খিস্তি ভেসে আসছিল।

শবর কাঠের দরজাটায় একটা লাথি মারল। তাতে বোম ফাটার মতো একটা আওয়াজ করে দরজার তলার দিককার প্যানেলটা কিছু অংশ ফেটে গেল।

বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। অন্ধকার রাত। শব্দ শুনে আশপাশের বাড়ি থেকে ‘কে কে’ আওয়াজ উঠল। দু-একটা দরজা খুলে টর্চ মারল কেউ কেউ।

স্যার, এ পাড়া কিন্তু খারাপ। অ্যান্টিসোশ্যালদের ডেন। সবাই ঘিরে ফেললে বিপদ

হবে।

শবর নিম্পূহ গলায় বলল, কিছু হবে না। ভয় পেয়ো না। এই সাহস নিয়ে পুলিশে চাকরি করো কী করে?

ভিতরের খিস্তি বন্ধ হয়েছে। এবার দরজার কাছ থেকে একটা মেয়ে গলা প্রশ্ন করল, কে?

দরজাটা খুলুন।

কেন খুলব?

তা হলে সরে দাড়ান। দরজা ভাঙা হবে।

হাবু বাড়ি নেই।

শবরের দ্বিতীয় লাথিতে দরজার খিল আর ছিটিকিনি উড়ে গেল। দরজাটা পটাৎ করে। খুলে হাঁ হতেই টর্চ হাতে ভিতরে ঢুকল শবর।

সামনেই একটা মেয়ে। বয়স বেশি নয়, উনিশ-কুড়ি।

তুমি কে?

আমি শেফালি, হাবুর বোন। দাদা বাড়ি নেই।

পথ ছাড়ো।

শবর তড়িৎ পায়ে দু’খানা ঘর ডিঙিয়ে উঠোনে নামল। উঠোনের পিছনে খোলা জমি। শবর মুখ ফিরিয়ে মদনকে বলল, ঘরটা সার্চ করো। ও পালিয়েছে, কিন্তু সাবধানের মার নেই।

ঠিক আছে স্যার।

শবর তার হোমওয়ার্ক করেই এসেছে। হাবুর সবরকম ঠেক তারা জানা। জমিটা পেরিয়ে সে ডান দিকের একটা কাঁচা রাস্তায় উঠে এল। রাস্তা পেরিয়ে রেললাইন। লাইন পার হয়ে সে একটা নাবালে নেমে স্বাভাবিক পদক্ষেপে হঁটিতে লাগল।

পাঁচু হালদারের বাড়িটা একতলা। সামনে ঘাসজমি আছে। সেটা পেরিয়ে দরজার সামনে দাঁড়াল শবর।

পাঁচু এবার পার্টির নমিনেশন পেয়েছে। ভোটে দাড়াবে। ক্ষমতাশালী লোক।

ভিতরে পাঁচুর গলা পাওয়া যাচ্ছিল, তা তুই এখানে এলি কেন?

কোথায় যাব?

বৃন্দাবনের কাছে চলে যা পিছন দিয়ে। পালা।

অত হুড়ো দিচ্ছেন কেন? যাচ্ছি। পুলিশ কি আর আপনার বাড়িতে আসবে?

যত্ত সব ঝামেলা। এখন গিয়ে গা-ঢাকা দে, কাল সকালে দেখা যাবে।

ফালতু আমার ওপর হামলা করছে পাঁচুদা।

এখন যা। কাল সকালে দেখব। যা।

একটা দরজা খোলার শব্দ হল পিছন দিকে।

পিছনে আধা জংলা পতিত জমি। কয়েকটা বড় গাছ। বৃষ্টি পড়ছিল। হাবু ছুটছিল প্ৰাণপণে। মাটি পিছিল, বিপজ্জনক, পেটে মদের গ্যাঁজলা, ঠিক ব্যালান্স নেই শরীরের।

পিছন থেকে ছায়ামূর্তিটা কখন এগিয়ে এল সে বুঝতেই পারেনি। একটা মজবুত হাত তার কাঁধের কাছে জামাটা চেপে ধরল। তারপর একটা প্ৰবল ঝাঁকুনি। আপনা থেকেই প্যান্টের পকেটে হাত চলে গিয়েছিল হাবুর। রিভলভারটা ধরেও ফেলেছিল। কিন্তু বের করতে পারল না। তার আগেই একটা বিদ্যুৎগতির ঘুসি তাকে শুইয়ে দিল।

মিনিট দশেক পরে দু’জনে বৃষ্টির মধ্যেই মুখোমুখি বসা। মাটির ওপরেই। জলকাদা থিকথিক করছে। ভিজে কুম্পুস হয়ে যাচ্ছে দু’জন।

শবর শান্ত গলায় বলল, বল।

কী বলব? ও আমাদের কাছে আসত। বন্ধুত্ব করতে চাইত। আমরা কী করব?

বন্ধুত্ব করতে চাইত কেন?

ও চাইত যাতে আমরা ভজন আচাৰ্যর পিছনে না লাগি।

ওর ইন্টারেস্ট কী?

কী আবার। মহব্বত।

বুঝেছি। বলো।

ঘুরেফিরে আসছিল। বারবার আসত।

টাকা পয়সা দিত?

না।

তোমরা ওকে কিডন্যাপ করে বাপের কাছ থেকে টাকা আদায়ের কথা ভেবেছিলে?

না। ওটা আমাদের লাইন নয়।

বলো।

আমার ওকে ভাল লাগত। ওকে চাইতাম। পুরুষচাটা মেয়েছেলে তো।

বুঝেছি। আগে বাঢ়ো।

মদ খেলে আমার কাণ্ডজ্ঞান থাকে না। সেই দিন বিকেলে ও গ্যারেজের কাছে আমাকে থাকতে বলেছিল।

কেন?

সেদিন ওর পাঁচুদার কাছে যাওয়ার কথা ছিল।

সেটাই বা কেন?

গ্যারেজ নিয়ে লোকালিটিতে ঝামেলা হচ্ছে তার একটা মিটমাটের জন্য।

সেটা কি ভজনবাবু জানতেন?

বোধহয় না। ভজনবাবু ত্যাঁদোড় লোক, অন্যের সাহায্য নেবে না। মেয়েটাকে পাত্তা দিত না, কিন্তু মেয়েটা ওর জন্য পাগল ছিল।

আগে বাঢ়ো।

আমি স্কুটার নিয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ ওখানে ছিলাম। রিঙ্কু সাইকেলে এসে গ্যারেজে সাইকেলটা ঢুকিয়ে দিয়ে আমার স্কুটারে ওঠে।

কেউ তোমাদের দেখেনি?

বোধহয় না। গ্যারেজ ছাড়িয়ে পশ্চিম দিকে বাঁয়ে একটা জংলা জমি দেখেছেন তো। ওটা দিয়ে শর্টকাট হয়।

রিঙ্কুকে মদ খাওয়াল কে?

ও নিজেই খেতে চাইল। আমার কাছে ছিল একটা বোতল।

ও খেত নাকি মাঝে মাঝে?

হ্যাঁ। ইদানীং খেত।

কোথায় খেলে?

ওই জঙ্গলে বসে।

পাচুবাবুর বাড়িতে যাওনি?

পাঁচুদা সেদিন ছিলেন না। কলকাতায় গিয়েছিলেন।

সেটা রিঙ্কু জানত?

না। আমি ওকে খুব চাইছিলাম।

কোথায় নিয়ে গিয়েছিলে?

ওখানেই–

রিঙ্কু বাধা দেয়নি?

হ্যাঁ। খুব চেঁচিয়ে ছিল, খিমচে দিয়েছিল। কিন্তু তখন আমি পাগল।

কখন মারলে?

প্রথমে মারিনি। ওখানে বসে বসে ঘণ্টা দুই-তিন দু’জনে ড্রিঙ্ক করি। অনেক কথা হয়।

প্রেমের কথা?

ওইরকমই সব। ও আমাকে বলছিল যে ও ভজনবাবুকে ভালবাসে, তাই কিছু করার নেই। তবে আমার কথা ওর মনে থাকবে–এইসব।

আগে বাঢ়ো। কখন রেপ করেছিলে?

রাত ন’টা সাড়ে ন’টা হবে। যখন চেঁচাল তখন মুখ চাপা দিতে হয়েছিল।

আগে বাঢ়ো।

ও বলেছিল সবকিছু বলে দেবে সবাইকে। আমি ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু তখন শালা আমিও তো মাতাল। কী কথায় কী কথা হল মাথায় কীরকম রক্ত চড়ে গেল।

গলা টিপে?

তাই হবে মনে হয়। কী করেছি। খেয়াল নেই। ওখানে বসে আরও মদ খেলাম। রাত একটা নাগাদ বৃষ্টি নামল। তখন নিয়ে গিয়ে মাঠটায় ফেললাম।

লাশটা সরালে কেন?

মনে হয়েছিল ওখানে পুলিশের কুকুর আমার গন্ধ পাবে। মদের বোতলটাও অন্ধকারে কোথায় ছুড়ে ফেলেছিলাম। মনে হল, বোতল পেলে সর্বনাশ।

পুলিশের কাছে কনফেস করবে?

না করলে?

শোনো হাবু, কনফেস করলে তোমার সাজা হবে। যদি বাইচান্স তুমি ছাড়া পেয়ে যাও তা হলেও আমার হাত থেকে বাঁচবে না। আর কনফেস যদি না করো তা হলেও বাঁচবে না। আমি তোমাকে মারবই।

যদি সাজা হয়?

তা হলে আমার কিছু আর করার থাকবে না।

আমাকে রাতটা ভাবতে দিন।

শবর হাসল, পালাবে না পাঁচুবাবুর বাড়ি যাবে? যা-ই করো, আমার হাত থেকে রেহাই নেই। শুনে রাখো, আমার চেয়ে বড় গুন্ড এখনও জন্মায়নি। থানায় চলো।

এখনই।

হ্যাঁ। পাঁচুবাবু যদি তোমাকে ছাড়ানোর জন্য কাল সকালে থানায় আসে তা হলে তাকে বোলো, আমার হাতে র্তার নির্ঘাত মৃত্যু। কেউ ঠেকাতে পারবে না।

উনি আপনার কথা শুনে ভয় পাচ্ছিলেন।

খুব ভাল। চলো।

সময় দেবেন না একটু?

না। যা বললাম মনে রেখো।