• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

২২. বিষ-মন্থন

লাইব্রেরি » শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় » ঐতিহাসিক কাহিনী সমগ্র - শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় » গৌড়মল্লার (উপন্যাস) – শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় » ২২. বিষ-মন্থন

দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ – বিষ-মন্থন

কুহুর ঘরের বাহিরে অলিন্দের প্রদীপটি নিব-নিব হইয়াছিল, তাহার অস্থির প্রতিচ্ছায়া ভৌতিক আকার গ্রহণ করিয়া প্রাচীরগাত্রে নৃত্য করিতেছিল।

কুহু কোনও দিকে না চাহিয়া নিজের দ্বারের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল, হাত তুলিয়া শিকল খুলিতে গিয়া থমকিয়া গেল। শিকল খোলা! কুহুর বুক দুরু দুরু করিয়া উঠিল, সে দ্বারে হাত রাখিয়া চাপ দিল। দ্বার খুলিল না, ভিতর হইতে অর্গল বন্ধ। কুহুর দেহের রক্ত হিম হইয়া গেল,

সে বুদ্ধিভ্রষ্টের মত দ্বারের দিকে চাহিয়া দাঁড়াইয়া রহিল।

এই সময় পিছন হইতে কেহ তাহার স্কন্ধ স্পর্শ করিল। কুহু ভীতচক্ষে ঘাড় ফিরাইয়া দেখিল— বল্লী! বল্লী হাত ধরিয়া তাহাকে দূরে টানিয়া লইয়া গেল, ফিসফিস্ করিয়া বলিল— কুহু, আজ তুমি মরেছ।

কুহু চাপা গলায় বলিল—আমার ঘরে কে দোর দিয়েছে?

তা এখনও বোঝোনি? রানী। –তোমার ঘরে কি কেউ ছিল?

ছিল কেউ।

বুঝেছি। কিন্তু তাকে আর পাবে না, রানী তাকে বশ করেছে। তোমার নাগর শক্ত মানুষ বলতে হবে, বশীকরণ-ধূপ দিয়ে তাকে বশ করতে হয়েছে।

গলা আরও নিম্ন করিয়া বল্লী যাহা দেখিয়াছিল এবং যাহা অনুমান করিয়াছিল তাহা বলিল। শুনিয়া কুহু হাত কামড়াইল।

বল্লী বলিল— হাত কামড়ালে কি হবে? এখন পালাও, রানী যদি তোমাকে পায় তোমার ধড়ে মাথা থাকবে না।

কুহু তাহা বুঝিয়াছিল। রানীর ঈপ্সিত বস্তু সে নিজের জন্য লুকাইয়া রাখিয়া রানীকে মিথ্যা কথায় ভুলাইয়া রাখিয়াছিল, রানী তাহা জানিতে পারিয়াছে। ধরা পড়িলে আর রক্ষা নাই, রানী তাহাকে তুষানলে পুড়াইয়া মারিবে। কুহু আর কাল ব্যয় না করিয়া রাজপুরীর কুটিল চক্রব্যুহের মধ্যে অদৃশ্য হইয়া গেল।

কুহু শৈশব হইতে রাজ-অবরোধে পালিত, অবরোধের অন্ধিসন্ধি তাহার নখদর্পণে। সে একটি অতি নিভৃত গৃঢ় কক্ষে গিয়া লুকাইয়া রহিল। এখানে কেহ তাহাকে খুঁজিয়া পাইবে না।

ধূলিমলিন অন্ধকার কোটরে একাকিনী বসিয়া উত্তপ্ত নিশ্বাস ফেলিতে ফেলিতে কুহু তীব্র প্রতিহিংসা-চিন্তায় মনের বগা ছাড়িয়া দিল। তাহার ইচ্ছা হইল রাজাকে গিয়া সংবাদ দিবে, অগ্নিবর্মার হাত ধরিয়া ব্যভিচার-রতা রানীকে ধরাইয়া দিবে। কিন্তু তাহাতে বজ্রের প্রাণনাশ অনিবার্য। কুহু রুদ্ধবীর্য সপিণীর মত সারা রাত্রি তর্জন করিতে লাগিল।

তৃতীয় প্রহরের ভেরী বাজিয়া গেলে কুহু নিঃশব্দে উঠিয়া গুপ্ত কক্ষের বাহিরে আসিল। রাত্রি শেষ হইয়া আসিতেছে; রাজপুরীর অলিন্দপথে শীতল বায়ু প্রবাহিত হইতেছে। চারিদিকে গাঢ় তমিস্রা, একটি দীপও জ্বলিয়া নাই।

নিজের দ্বারের কাছে আসিয়া কুহু সন্তর্পণে হাত দিয়া অনুভব করিল, দ্বার খোলা। সে কক্ষে প্রবেশ করিল, কিছুক্ষণ নিস্পন্দভাবে অন্ধকারে দাঁড়াইয়া শুনিল, শয্যা হইতে একজনের নিশ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ আসিতেছে।

কুহু দ্বার বন্ধ করিয়া দিল, ঘরের কোণে গিয়া কম্পিত হস্তে প্রদীপ জ্বালিল, তারপর ছুটিয়া গিয়া শয্যার পাশে দাঁড়াইল।

বজ্র চক্ষু মুদিয়া শুইয়া আছে, ধীরে ধীরে তাহার নিশ্বাস পড়িতেছে। কুহু তাহার বাহু ধরিয়া নাড়িল, কানে কানে নাম ধরিয়া ডাকিল মধুমথন! বজ্র কিন্তু জাগিল না। ইহা কি নিদ্রা? না মাদকজাত মোহাচ্ছন্নতা?

বজ্রের সর্বাঙ্গে দৃষ্টি বুলাইয়া কুহুর কিছুই বুঝিতে বাকি রহিল না। বল্লী না দেখিয়াও যাহা অনুমান করিয়াছিল তাহা সত্য। কুহু দন্তে অধর কাটিয়া রক্তাক্ত করিল।

এদিকে রাত্রি ফুরাইয়া আসিতেছে। রানী চলিয়া গিয়াছে বটে, কিন্তু আবার কখন তাহার কি মতি হইবে কে জানে! কুহু ত্বরান্বিত হইয়া বজ্রের পরিচর্যা আরম্ভ করিল। মারণ উচাটন বশীকরণের যেমন ঔষধ ও প্রক্রিয়া আছে তাহার প্রতিষেধক ঔষধ প্রক্রিয়াও আছে। কুহু বজ্রের মাথায় শীতল জল দিল, সিক্ত বস্ত্র দিয়া বক্ষস্থল মুছিয়া দিল, আরও নানা প্রক্রিয়া করিল।

অবশেষে বজ্র রক্তাভ চক্ষু মেলিয়া চাহিল।

তাহার দেহমনের জড়তা কাটিতে আরও কিছুক্ষণ গেল। সে উঠিয়া বসিয়া চারিদিকে চাহিয়া বলিল— আমি এখানে কেন?

কুহু তাহার গলা জড়াইয়া কানে কানে বলিল— তুমি রাজপুরীতে এসেছিলে মনে নেই? আমার বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলে।

বজ্র স্মরণ করিবার চেষ্টা করিয়া বলিল— ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু–

কুহু বলিল— তারপর বোধহয় স্বপ্ন দেখেছিলে। ও কথা ভুলে যাও। রাত আর নেই। চল, তোমাকে কোদণ্ড ঠাকুরের ঘরে পৌঁছে দিয়ে আসি।

কোদণ্ড ঠাকুর!–চল।

কুহুর হাত ধরিয়া বজ্র ঘাটে আসিল। পূর্বাকাশে তখনও ঊষার উদয় হয় নাই, শুকতারা প্রদীপ্ত মণিখণ্ডবৎ দপ্ দপ্ করিতেছে।

কুহু বর্জকে ডিঙিতে বসাইল, হাতে বৈঠা ধরাইল দিল। বজ্র যন্ত্রবৎ বৈঠা টানিতে লাগিল।

তাহারা যখন কোদণ্ড মিশ্রের কুটিরে পৌঁছিল তখনও তাঁহার ঘরে প্রদীপ জ্বলিতেছে, তিনি উষ্ণ মস্তিষ্কে কুটির মধ্যে পদচারণা করিতেছেন। এই এক অহোরাত্রের মধ্যে বৃদ্ধের দেহ আরও শীর্ণ হইয়া গিয়াছে, চক্ষু ও গণ্ডদ্বয় কোটরপ্রবিষ্ট; চক্ষে জ্বরাক্রান্ত দৃষ্টি। বজ্রকে দেখিয়া তিনি দুই হস্ত উৎক্ষিপ্ত করিয়া বলিয়া উঠিলেন— বজ্র! তুমি কোথায় গিয়েছিলে বৎস? তোমাকে খুঁজে

পেয়ে আমি ভেবেছিলাম আমার সমস্ত আয়োজন বুঝি পণ্ড হল! কোথায় ছিলে তুমি? বজ্র নিরুত্তর রহিল। কোদণ্ড মিশ্র কুহুর পানে চাহিলেন। কুহু তাঁহার কাছে সরিয়া গিয়া হ্রস্বকণ্ঠে ব্যাপার বুঝাইয়া দিল, নিজের অভিসন্ধিটুকু গোপন রাখিয়া বাকি সব সত্য কথা বলিল। শুনিয়া কোদণ্ড মিশ্র বিস্ফারিত নেত্রে বজ্রের পানে চাহিলেন, বলিলেন— কি বিপত্তি! যদি ধরা পড়ত! যদি প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ত! কিন্তু যাক, বাঘিনীর কবল থেকে ফিরে এসেছে এই যথেষ্ট। বজ্র, এখন থেকে তুমি আর কোথাও যাবে না, সময় পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সর্বদা এখানে থাকবে। কুহু, তুমিও আর অবরোধে ফিরে যেও না, বাঘিনী তোমাকে পেলে নিশ্চয় হত্যা করবে।

কুহু প্রজ্বলিত চক্ষে বলিল—আমি ফিরে যাব, এমনভাবে লুকিয়ে থাকব যে রানীর সাধ্য নেই আমাকে খুঁজে বার করে। কোকবর্মা রানীকে চুলে ধরে টেনে নিয়ে যাবে নিজের চোখে দেখব তবে আমার বুক ঠাণ্ডা হবে। বজ্রের কাছে গিয়া বলিল— অমাবস্যার পরদিন রাজপুরীতে আবার দেখা হবে।

কুহু চলিয়া গেল। বজ্র বাহিরে আসিয়া ভাগীরথীর তীরে দাঁড়াইল। নদীর ওপারে চক্রবাক-পক্ষের ন্যায় ঈষৎ রক্তিমা দেখা দিয়াছে, আর একটি নূতন দিনের সূচনা হইতেছে। সেইদিকে চাহিয়া চাহিয়া বজ্রের মস্তিষ্কের কুঙ্খটিকা কাটিয়া গেল। তাহার মনে হইল, সেই যে বটেশ্বর ও বিম্বাধরের সঙ্গে সে ভ্রমণে বাহির হইয়াছিল তাহার পর এক যুগ কাটিয়া গিয়াছে।

সূর্যোদয় হইলে বজ্র স্নান করিতে জলে নামিল। গঙ্গার স্নিগ্ধশীতল জলে অবগাহন করিয়া তাহার দেহমন সুস্থ হইল।

এতক্ষণ সে লক্ষ্য করে নাই, দুই হাতে সবেগে গাত্রমার্জন করিতে করিতে তাহার চোখে পড়িল, বাম হস্তের কনিষ্ঠ অঙ্গুলিতে একটি অঙ্গুরীয়! সোনার অঙ্গুরীয়, মাঝখানে গাঢ় নীল একটি মণি। বজ্ৰ ভ্রূ কুঞ্চিত করিয়া অনেকক্ষণ অঙ্গুরীয়টি নিরীক্ষণ করিল। কোথা হইতে আসিল অঙ্গুরীয়? কে পরাইয়া দিল? গত রাত্রে তাহার স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের এমন অবিচ্ছেদ্য জড়াজড়ি হইয়া গিয়াছিল যে কিছুই সে ধরিতে ছুঁইতে পারিতেছিল না। কিন্তু এই আংটি নিশ্চয় স্বপ্ন নয়। আংটির দিকে চাহিয়া তাহার মনে হইল ইহার সহিত যেন কোন অজ্ঞাত অশুচিতার স্পর্শ লাগিয়া আছে। সে আংটি খুলিয়া জলে ফেলিয়া দিতে উদ্যত হইল।

কিন্তু ফেলিতে গিয়া সে থামিয়া গেল। আংটি এত সুন্দর, তাহার নীলবর্ণ মণি হইতে এমন অপূর্ব জ্যোতি বিকীর্ণ হইতেছে যে সে তাহা জলে ফেলিয়া দিতে পারিল না। বিশেষত মূল্যবান কোনও বস্তু নষ্ট করা তাহার প্রকৃতিবিরুদ্ধ। সে একটু চিন্তা করিয়া আবার উহা অঙ্গুলিতে পরিধান করিল।

স্নান শেষে সে সঙ্কীর্ণ সিঁড়ি দিয়া উপরে আসিল এবং সিক্তরস্ত্রে গঙ্গার কুটিরের সম্মুখে উপস্থিত হইল।

আজও বুড়ি কানসোনার হাটে গিয়াছে। গঙ্গা পা ছড়াইয়া বসিয়া সলিতার পাঁজ কাটিতেছিল, হাসিমুখে উঠিয়া শুষ্ক বস্ত্র আনিয়া দিল, ধামিতে মুড়ি শসা কলা গুড় নারিকেল আনিয়া সম্মুখে রাখিল।

অধমুদিত চক্ষে খাইতে খাইতে বজ্র বলিল—গঙ্গা, তোমার জন্যে একটা জিনিস এনেছি। কী জিনিস? গঙ্গা উৎসুক আনন্দে চাহিল।

বজ্র আংটি খুলিয়া তাহার হাতে দিল। আংটি হাতে লইয়া গঙ্গার মুখে অপূর্ব ভাবব্যঞ্জনা ফুটিয়া উঠিল; ভয় সন্ত্রম আনন্দ সঙ্কোচ ক্ষণকালের জন্য তাহাকে নির্বাক করিয়া দিল। তারপর সে রুদ্ধশ্বাসে বলিল—এ আমার জন্যে এনেছ! এত সুন্দর আংটি! এ নিয়ে আমি কি করব?

বজ্র বলিল—এখন রেখে দেবে। যখন তোমার বিয়ে হবে তখন এই আংটি বিক্রি করে অনেক টাকা পাবে। সেই টাকা নিয়ে তুমি আর তোমার বর সুখে-স্বচ্ছন্দে ঘরকন্না করবে।

লজ্জায় আহ্লাদে গঙ্গার মুখখানি সিন্দুরবর্ণ হইয়া উঠিল।

Category: গৌড়মল্লার (উপন্যাস) – শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
পূর্ববর্তী:
« ২১. নরক
পরবর্তী:
২৩. গৌড়ের সিংহাসন »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑